#গল্পঃছদ্মবেশে_কে_সে?
#পর্বঃপঞ্চম+ষষ্ঠ।
#লেখাঃShihab Hossain(Tarajul)
মারিয়া রিকশা থেকে নেমে মার্কেটে ঢুকবে এমন সময় সামিউলের সাথে সামনাসামনি দেখা।মারিয়া সামিউলকে দেখে বেশ চমকে উঠলো।সামিউলও তাই।মারিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
->সামি তুমি এখানে কি করছো?
->তুমি এখানে কি করছো?
->আমার বিয়ে তো এখানে হয়েছে।কিন্তু তুমি এখানে কেন এসেছো?
->আমার একটা কাজের কথা হচ্ছে এখানে তাই আর কি চলে এসেছি।
->ও কি কাজ জানতে পারি?
->কাজ বলতে মার্কেটে পাইকারির ব্যবসা শুরু করছি আর কি?তো ভালোই আছো তাই না?
->হুম ভালো আছি।
এরপর দুইজন কিছু সময় চুপ করে দাড়িয়ে থাকলো।মারিয়া বলল
->আমায় ক্ষমা করে দিও সামি।আমি বলতে গেলে ইচ্ছা করেই তোমার জীবনে আসিনি।কারন তুমি মা-বাবার একমাত্র ছেলে তারা কখনো চাইবে না একজন ডিভোর্সি মেয়েকে তার ছেলের বউ করতে।
->এসব এখন থাক।তুমি যে ভালো আছো,,নিজের পরিবারের শোক কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়েছো এতে আমি অনেক খুশি।আর তুমি আমার কাছে কোন অপরাধ করো নি তাই ক্ষমার প্রশ্নই উঠেনা।
->আসলেই খুব ভালো ছেলে তুমি।দেখো তোমার জীবনসঙ্গী অনেক ভালো হবে।
সামিউল আর কিছু বললো না।মারিয়া সামিউলকে সংক্ষেপে সামি বলে ডাকে।মারিয়া মার্কেটে ভিতরে ঢুকতে যাবে কিন্তু আবার সামিউলের কাছে এসে ওকে বলল
->কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি আমি?
->হ্যাঁ বলো কি কথা?
->তুমি কি এখন এখানেই থাকো তাই না?
->হ্যাঁ এখানেই থাকি।
->আচ্ছা আমি যদি তোমায় কখনো আমার সাহায্যের জন্য ডাকি তাহলে আসতে পারবে?
->হ্যাঁ অবশ্যই।তুমি ডাকলে আসবো না এটা কোন কথা হলো।কিছু হয়েছি কি?
->না এমনি বললাম।আচ্ছা আসি থাকো।
এই বলে মারিয়া মার্কেটে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করলো।তারপর মারিয়া রিকশায় উঠে পড়লো।মারিয়া রিকশায় থাকা অবস্থায় রাস্তার ধারে এক দেয়ালের ওপর দেখলো সেই সাদা বিড়াল সেখানে বসে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।মারিয়া অবাক হয়ে ভাবলো,,সেই বিড়াল তো বাসায় তাহলে এখানে আসলো কি করে বুঝতে পারলো না।মারিয়া চিন্তিত হয়ে বাসায় আসলো।বাড়ির দরজা খুলতে দেখলো সেই বিড়াল মেঝেতে চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।মারিয়া অবাক হয়ে ভাবলো,,এই বিড়ালটি হঠাৎ এখানে আসলো কি করে,,আবার ভাবলো হয়তো এটার মতো দেখতে আরেকটাকে দেখেছে সে।তাই আর কিছু ভাবলো না।
মারিয়া পুরো বাড়ি পরিষ্কার করতে গেলো ঝাড়ু নিয়ে।যখন মারিয়ার হাতে কোন কাজ থাকে না বা ওর একা লাগে তখন সে পুরো বাড়ি পরিষ্কার করে।সব রুম পরিষ্কার হয়ে গেলে মারিয়া বাড়ির কোণার দিকে একটা রুম আছে সেটা পরিষ্কার করার জন্য গেলো।মারিয়া সেই রুমের সামনে এসে দেখলো দরজায় বিশাল বড় একটা তালা ঝুলছে।সেই তালা দেখতে একদম অদ্ভুত রকমের।তালার ওপর বিভিন্ন রকমের ডিজাইন আর অচেনা অক্ষরে কি সব লেখা।মারিয়া ভাবছে সব রুম খোলা কিন্তু এই রুম বন্ধ কেন?এটার চাবি কোথায় পাবে এখন সে?ওর কাছে যে চাবির গোছা আছে সেটা নিয়ে আসলো খোলার জন্য কিন্তু একটা চাবি তালার ভিতরে ঢুকছে।আর এই তালার চাবির গঠনটাও আলাদা রকমের।ভাবলো থাক,,অনেক পরিষ্কার করছি,,দেখে মনে হচ্ছে রুমটা অনেকদিন যাবৎ বন্ধ না জানি কত তেলাপোকা বাসা বেধেছে কে জানে?এমনিতে মারিয়া তেলাপোকা দেখে প্রচন্ড ভয় পায়।মারিয়া সেখান থেকে চলে আসবে এমন সময় ভারি কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ হলো।মারিয়ার মনে হলো আওয়াজটা বন্ধ রুম হতে আসলো।মারিয়া চুপিচুপি গিয়ে সেই বন্ধ রুমের দরজায় কান রাখলো আর তখনি এক ভয়ংকর রকমের গোঙানির শব্দ সে দ্রুত পায়ে সরে আসলো।মারিয়ার হৃৎস্পন্দন দ্রুত বেগে চলছে।মারিয়া নিজে নিজেকে বলল,,এ ভয়ংকর আওয়াজটি কিসের হতে পারে,,কি আছে এই রুমের ভিতর?মারিয়া ভয়ে ভয়ে আবার দরজায় কান রাখলো আর তখন কেউ বলে উঠলো
->সরে যা এখান থেকে নয়তো এর ফল ভালো হবে না।কাউকে কিছু বললে তুই শেষ।
মারিয়া এবার প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো।মারিয়া ভয়ে ঘামছে।এই রুমের মধ্যে আছে টা কি? মারিয়া সেখানে আর না থেকে দ্রুত রুমে এসে বসে পড়লো।
মারিয়ার কাছে এই গলার আওয়াজ কেন জানি খুব পরিচিত লাগছে।মনে হচ্ছে আগেও সেই এমন কন্ঠ শুনেছে।কিন্তু কোথায় শুনেছে মনে হচ্ছে না।হঠাৎ মনে হলো এই কন্ঠটি সে সেদিন সোফায় যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো তখন শুনেছে।মারিয়ার বেশ ভয় লাগছে।সব কিছু কেমন জানি রহস্যময় হয়ে উঠছে।এর আগে ইরফানের ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে তা না হলে আসল রহস্য ওর কাছে পরিষ্কার হবে না।
সন্ধ্যার দিকে ইরফান বাসায় এলো।মারিয়া একবার ভাবলো সব বলবে ইরফানকে তারপর কি যেন ভেবে মারিয়া আর কিছু বললো না।ইরফানকে দেখে মনে হচ্ছে ওর মন খারাপ।তাই মারিয়া বলল
->কোন কারনে আপনার কি মন খারাপ?
ইরফান মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল
->হুমম একটু মন খারাপ।
->মন খারাপের কারনটা কি জানতে পারি?
->হুমম।জানো আমার অনেক ইচ্ছা বাবা ডাক শোনার।রাস্তাঘাটে যখন দেখি বাচ্চারা তার বাবাকে বাবা বলে ডাকছে তখন আমারো ইচ্ছা হয় যে আমায় কেউ একজন বাবা বলে ডাকুক।
->হুম বুঝলাম।কিন্তু এখন পর্যন্ত তো আমার সাথে আপনার কোন সম্পর্ক হয়নি।আর না হলে কি করে বাবু হবে?
->কিন্তু সত্যিকে তো আর আমরা অস্বীকার করতে পারিনা।একজন অক্ষম পুরুষের থেকে কি করে বাচ্চা হবে তুমিই বলো?
মারিয়া ইরফানের কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না।ইরফান অনেক কষ্ট নিয়ে কথাটা বললো।মারিয়া সেটা একটু হলেও অনুভব করতে পেরেছে।মারিয়া তখন ইরফানকে বলল
->থাক এর জন্য মন খারাপ করতে হবে না।আপনি চাইলে আমরা দুইজনে সন্তানের অভাব দুর করতে পারি।তবে এর জন্য একটু কষ্ট করতে হবে।
->কি করতে হবে?
->আমরা একটা নবজাতক বাচ্চাকে অথবা এতিম খানায় রয়েছে এমন ছোট বাচ্চাকে দত্তক নিতে পারি।তাহলে আমাদের দুইজনের ইচ্ছা পূরন হবে।
->কিন্তু সে তো আর আমার বা তোমার নিজের বাচ্চা না।
->তাতে কি হয়েছে আমরা নিজের ভেবে তাকে মানুষ করবো তাহলে তো হবে।
->তারপরেও মনে হবে সে আমাদের না।
->তাহলে আর কি করার?
ইরফান আর কিছু বললো না।রাতে খাওয়া-দাওয়া করে মারিয়া শুয়ে পড়লো।ইরফান হুইল চেয়ারে বসে আছে।মারিয়ার আজ একদম ঘুম ধরছে না।বার বার ওর সাথে ঘটে যাওয়া প্রতিটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে মারিয়ার।মারিয়া চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতে সে ঘুমাতে পারলো না।এভাবে কতসময় সে শুয়ে ছিলো তা জানা নেই মারিয়ার।মারিয়া ওদের রুমের দরজার দিকে মুখ করে শুয়ে ছিলো।হঠাৎ মারিয়া দেখলো ইরফান দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।মারিয়া তখন কিছু না ভেবে ইরফানে পিছন পিছন উঠে পড়লো।ইরফান সিড়ি দিয়ে নেমে সেই বন্ধ রুমের দরজার সামনে গেলো।মারিয়া সিড়ির এক কোণায় দাড়িয়ে থেকে ব্যাপার দেখছে।বলে রাখা ভালো যে সিড়ির একপাশ একদম সমান তাই হুইল চেয়ার নিয়ে নামতে বা উঠতে কোন কষ্ট হয়না।ইরফান সেই রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো।মারিয়া সিড়ির ওপর বসে অপেক্ষা করতে লাগলো।একবার ভাবলো ওখানে গিয়ে দেখি ইরফান ভিতরে আসলে কি করে,,,আবার ভাবলো যদি হঠাৎ ইরফান বেরিয়ে আসে তাহলে সে ধরা পড়ে যাবে।তাই সিড়িতে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।প্রায় ঘন্টা দুই তিনেক পর ইরফান বের হয়ে আসলো।ইরফানকে আসতে দেখে মারিয়া দৌড়ে রুমে এসে আগের মতো শুয়ে পড়লো।এভাবে মারিয়া প্রায় দুইদিন ধরে ইরফানকে রাতের বেলা ফলো করলো।প্রতিদিন একই সময় সে ওই রুমে যায় আর দুই-তিন ঘন্টা পর বেরিয়ে আসে।ইরফান সকালে যাওয়ার পর মারিয়া সেই রুমের সামনে এসে দাড়ালো।মনে মনে ভাবলো এই দরজার পিছনে আসল গন্ডগোল আছে।তবে এর আগে দিনের বেলা ইরফান কোথায় যায় সেটা বের করতে হবে আর এর জন্য সামিউলের সাহায্য একান্ত জরুরি।মারিয়া সামিউলকে ফোন করে পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে দিলো যে ওকে কি করতে হবে।তারপর মারিয়া সামিউলকে বলল
->আমি যেভাবে বললাম সেভাবে পারবে তো তুমি?
->আরে এটা ব্যাপারই না।কাল তোমার কাজ হয়ে যাবে।একদম চিন্তা করো না।
->তোমায় অনেক ধন্যবাদ।
->হুমম।।
মারিয়া ফোন কেটে দিয়ে বাইরে এসে বাড়ির ছবি তুলে ঠিকানাসহ সামিউলকে পাঠিয়ে দিলো।পরেরদিন সকালবেলা ইরফান বের হওয়ার একটু আগে সামিউল সাইকেল নিয়ে বাড়ি হতে কিছুটা দুরে দাড়িয়ে আছে।ইরফান বের হওয়া মাত্র সামিউল গাড়ির পিছনে যেতে লাগলো।
এদিকে মারিয়া সামিউলের ফোনের অপেক্ষা করছে।ইরফান কোথায় যায় এটা দেখার জন্য মারিয়া কাল ওকে ফোন করে জানিয়েছিলো।আর আজ সকালে সে বেরিয়ে পড়েছে ইরফানে পিছু নেওয়ার জন্য।
অনেক সময় হয়ে গেলো এখনো সামিউলের কোন খোঁজখবর নেই দেখে মারিয়ার বেশ চিন্তা হচ্ছে।সেই সাদা বিড়াল আজ মারিয়ার দিকে কেমন যেন রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।ব্যাপারটা সুবিধার লাগলো না মারিয়ার।এমন সময় মারিয়ার ফোন বেজে উঠলো।মারিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সামিউল ফোন করেছে।মারিয়া রিসিভ করে বলল
->হ্যাঁ সামি বলো কি খবর কিছু জানতে পেরেছো?
->হুম তোমার স্বামীর একটা এতিম খানা রয়েছে আর উনি সেখানে এসেছেন।
->সত্যি?
->হুমম।আচ্ছা ওয়েট উনি এতিম খানা হতে বের হলো।পরে আবার ফোন করছি।
->ওকে।
সামিউল ফোন কেটে দিলো।এদিকে ইরফান এতিমখানা থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো।সামিউল আবার ইরফানের পিছনে যেতে শুরু করলো।ইরফানের গাড়ি একটা শর্টকাট রাস্তা দিয়ে যেতে শুরু করলো।এই রাস্তা দিয়ে পাশের শহরে যাওয়া সহজ হয়।আর এই রাস্তায় বেশি মানুষজন চলাচল করে না আর কি?হঠাৎ সামিউল থামলো।আর সে চোখের সামনে যা দেখলো তাতে সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।সামিউল তাড়াতাড়ি করে মারিয়াকে ফোন করলো।মারিয়া ফোন রিসিভ করতে বলল
->মারিয়া আমি এই মুহুর্তে এমন একটা জিনিস দেখেছি যা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।
->কেন কি হয়েছে?
->আমি তোমার স্বামীকে ফলো করছিলাম।আর তখন সে একটা নির্জন রাস্তা দিয়ে চলতে শুরু করে।তারপর আমি একটা আওয়াজ শুনে পিছনে তাকায় তারপর সামনে তাকিয়ে দেখি তোমার স্বামীর গাড়ি উধাও হয়ে গেছে।
->এটা কি করে সম্ভব?হতে পারে তোমার পিছনে তাকানোর সময়টাতে সে অন্য রাস্তা দিয়ে গেছে।আর তুমি এটা খেয়াল করো নি।
->কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কি করে উধাও হয়ে যাবে।না জানি এ তোমার কার সাথে বিয়ে হয়েছে।
এই বলে সামিউল ফোন রেখে দিলো।মারিয়া ভাবছে সামিউল যা বলছে এটা কি সত্যি?বাস্তবে কি হঠাৎ করে চোখের সামনে থেকে কেউ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে উধাও হয়ে যেতে পারে?
চলবে,,,,,,।
পর্বঃছয়।
প্রতিদিনের মতো আজ রাতের বেলা ইরফান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।মারিয়া এই সুযোগে ছিলো যে কখন ইরফান বেরিয়ে যায়।মারিয়া ইরফানের পিছে পিছে গেলো।ইরফান রুমে ঢোকার পর দরজা বন্ধ করে দিলো।ঠিক তখনি মারিয়া দরজার কাছে গেলো।ভিতরে কি হচ্ছে সেটা দেখার জন্য সে দরজার ফুটো খুজতে লাগলো।কিন্তু দরজায় একটা ফুটো খুজে পেলো না।হঠাৎ মারিয়ার কানে কথা বলার আওয়াজ এলো।আওয়াজটা ইরফানের।ইরফান কি সব বলছে ওর কথা একটুও বোঝা যাচ্ছে না।মারিয়া খেয়াল করলো দরজার নিচে ফাঁকা জায়গা আছে।মারিয়া মেঝেতে বসে পড়লো।তারপর দরজার নিচ দিয়ে তাকিয়ে যা দেখলো এতে ওর হৃদপিন্ড বন্ধ হওয়ার উপক্রম।ইরফান আগুনের সামনে বসে আছে।ওর দুই হাতে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে আর ওকে ঘিরে কালো ছায়ার মতো কিছু অশরীরী ঘুরাঘুরি করছে।ইরফান হুইল চেয়ার ছেড়ে নিচে বসে আছে।ইরফান চোখ বন্ধ অবস্থায় কি সব পড়ে যাচ্ছে।হঠাৎ ইরফান চোখ খুললো আর তখন মারিয়া দেখলো ওর দুই চোখে আগুন জ্বলছে।মারিয়া আর এক মুহুর্ত দেরি না করে দৌড়ে রুমে চলে আসলো।ভয়ে মারিয়ার গলা শুকিয়ে গেছে।টেবিলের ওপরে থাকা গ্লাসের পানি ঢকঢক করে গিলে ফেললো।মনে মনে ভাবছে,,এ আমি কার সাথে আছি যে কিনা একজন সাধারন মানুষ না।মারিয়া এখন কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না,,হুট করে কিছু করতে গেলে ধরা পড়ে যেতে পারে।তাই মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে।ব্যাপারটা সামিকে জানালে মন্দ হয় না।মারিয়া সামিউলকে ফোন দিলো কিন্তু সামিউলের ফোন বন্ধ।মারিয়ার একটু চিন্তা হলো সামিউলের কিছু হয়ে গেলো না তো?কেননা সামিউল কখনো ফোন বন্ধ করে রাখে না।মারিয়া চুপ করে শুয়ে পড়লো।একটু বাদে ইরফান রুমে আসলো।মারিয়া সেটা বুঝতে পারলো।হঠাৎ মারিয়া ওর মাথায় হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠলো।মারিয়া পিছন ঘুরে দেখলো ইরফান মারিয়ার মাথায় হাত দিয়ে আছে।মারিয়া সবকিছু না জানার ভান করে বলল
->একি!আপনি এখনো জেগে আছেন যে?
->হুমম।ঘুম আসছিলো না তাই বাইরে থেকে একটু ঘুরে এলাম।
->কিছু হয়েছে কি?
->জানোই তো তুমি সব যে একজন বাবা হওয়ার কত ইচ্ছা আমার।
ইরফানের কথা শুনে মারিয়ার কেমন জানি মায়া হলো।মনে মনে ভাবলো হয়তো সে বাবা হওয়ার জন্য এমন জাদু বিদ্যার আশ্রয় নিচ্ছে।মারিয়া উঠে বসলো তারপর ইরফানকে বলল
->এই জন্য তো আমি আপনাকে বললাম যে আমরা একটা বাচ্চা দত্তক নিই।।
->আমি কোন বাচ্চা দত্তক নিতে চাইনা।আমি যে সন্তান চাই সে যেন তোমার গর্ভ থেকে হয়।তাও এতে আমার কোন কষ্ট হবে না মনে হবে এটা তো নিজেরই সন্তান।নিজের স্ত্রীর সন্তান।
->এটা আপনার সাহায্যে ছাড়া কি করে হবে?আবার আপনি পারবেনও না।তাহলে কিভাবে কি হবে আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।আপনি কি বলতে চাইছেন পরিষ্কার করে বলুন।
তখন ইরফান মারিয়ার দুই হাত চেপে ধরে বলল
->আমি চাই তুমি অন্য কোন পুরুষের মাধ্যমে তোমার গর্ভে সন্তান ধারন করো।তোমার যদি কোন বয়ফ্রেন্ড থাকে তাহলে তার সাহায্য নিতে পারো।আমি কিছু মনে করবো না আর তাছাড়া আমি তো তোমায় শারিরীক ভাবে সুখি করতে পারছি না এতে তোমার আমার দুইজনের ইচ্ছা পূরন হবে।
ইরফানের মুখে এমন কথা শুনে মারিয়া রাগ বেড়ে গেলো।মারিয়া ইরফানের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রাগী গলায় বলল
->আপনি এখন যে কথা বললেন এটা যদি আপনি না হয়ে অন্য কেউ বলতো তাহলে এতক্ষণে আমি তার জিভ ছিড়ে ফেলতাম।হতে পারেন আপনি অক্ষম তাই বলে নিজের স্ত্রীকে পর পুরুষের সাথে মিশতে বাধ্য করবেন ছিঃ আপনার মন মানষিকতা এত নিচ?
->এখন হয়তো তোমার মধ্যে কোন চাহিদা নেই তবে যখন তৈরি হবে তখন আমার কথা কাজে লাগবে।ঘুমিয়ে পড়ো।
ইরফান মারিয়ার সামনে থেকে সরে গেলো।মারিয়া ভাবছে,,বিয়ে হয়ে সে নিজের মতো করে বাঁচতে পারলো না।একের পর এক অশান্তি এসেছে ওর জীবনে।মারিয়া মা-বাবা জেনে শুনে এমন একজনে ঘাড়ে ওকে চাপিয়ে দিয়েছে।মারিয়া ভাবছে সে যে কোথাও চলে যাবে এমন কোন জায়গা নেই।আর গেলেও সে কি করে বাঁচবে।কোন কাজও করতে পারবে না।পড়ালেখা মাত্র ক্লাস নাইন পর্যন্ত।মারিয়া আবার কেমন যেন ডিপ্রেশনে পড়ে গেলো।
মারিয়া আবার ভাবছে ইরফান আবার ওকে পরিক্ষা করছে না তো?সে পরিক্ষা হোক আর যাই হোক সে কখনো এমন কাজ করবে না।
পরেরদিন সকালে মারিয়াকে ইরফান বলল
->তো রাতে কি ভাবলে?
->আমি কখনো এমন খারাপ কাজ করবো না।দরকার পড়ে মরে যাবো তবু এসব করবো না।
->আচ্ছা আমি তো শুধু একটা বাচ্চা চাইছি আর কিছু তো না।তুমি শুধু আমায় একটা বাচ্চা দাও তারপর তুমি যা চাইবে তাই দিবো।
->আচ্ছা আপনার আমার থেকে এভাবে বাচ্চা নেওয়ার পিছনে নিশ্চয় কোন উদ্দেশ্য রয়েছে?
->হুম সেরকমটায়।
->কি সেই উদ্দেশ্য বলুন আমায়।আর আপনি কে আজ সব সত্যি বলবেন।আমি আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি আর সেদিন রাতে আমি মোটেও স্বপ্ন দেখিনি সব সত্যি ঘটেছে আমার সাথে কিন্তু আপনি সেটাকে মিথ্যা বলে চালিয়ে দিয়েছেন তাই তো?
->সব যখন জেনেছো তাহলে আর গোপন করে লাভ নাই।
->কে আপনি?
->আমি এমন একজন মানুষ যার মধ্যে দুই স্বত্বা রয়েছে।এক মানুষ স্বত্বা দুই পিশাচ স্বত্বা।আমরা এমন এক পিশাচ জাতি যারা শয়তানের পূজো করে।আর শয়তানের কাছে কোন বিষয় বৈধ না যা আছে সব অবৈধ।এমনকি আমার জন্ম হয়েছে অবৈধ ভাবে।আমার মা পিশাচ আর বাবা সাধারন একজন মানুষ।আর আমার বাবার সাথে মায়ের কোন এক ভাবে নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় আর কোন এক পূর্ণিমার রাতের বিয়ে ছাড়া দুইজনের মিলন হয় আর সেই মিলনের ফলে আমার জন্ম হয়।কিন্তু জন্মের পর আমাকে সেই এতিম খানায় রেখে আসে।যেটা বর্তমানে আমি পরিচালনা করি।আমার জন্ম পিশাচের গর্ভে হলেও আমি একজন পিশাচের মতো শক্তিশালী ছিলাম না।কারন আমার বাবা যদি পিশাচ হতো তাহলে আমি পূর্ন পিশাচ শক্তি লাভ করতাম।কিন্তু আমার মা পিশাচ হওয়ায় আমি পূর্ন শক্তি পাইনি।কিন্তু যখন আমি আস্তে আস্তে বড় হলাম তখনও জানতাম না আমার মধ্যে পিশাচ স্বত্বা আছে।এভাবে যখন আমার বয়স ১০ বছর তখন প্রতিদিন রাতে দেখতাম অসংখ্য কালো ছায়া আমায় চারদিক থেকে ঘিরে ফেলছে তখন প্রচন্ড ভয় পেতাম আমি।কিন্তু সেই স্বপ্নের মধ্যে একজন ছিলো যে সবসময় আমার ক্ষমতার কথা বলতো।আর মাঝে মধ্যে দুই একটা ক্ষমতা আমায় দিতো।আমি স্বপ্নের মধ্যে অনেক ক্ষমতা লাভ করেছিলাম যার সাহায্যে আমি রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাই।তারপর আমি নির্জন জায়গা খুজে শয়তানের পূজা শুরু করি।আর আমার শক্তির মাধ্যমে রক্তহরন কারী আত্মাদের দিয়ে শত শত মানুষের রক্ত শুষে নিয়ে মেরে ফেলি শুধুমাত্র শয়তানকে তুষ্ট করে নিজের আসল শক্তি লাভ করার জন্য।প্রায় ছয় যাবৎ আমি এই কাজ করতে থাকি।একসময় শয়তান আমার ডাকে সাড়া দেয়।তখন আমি আমার ক্ষমতা লাভ করার কথা বলি সে সাথে আমি অমরত্ব লাভ করার কথা বলি তখন সে বলে,,আমায় এমন একটা সন্তানের বলি দিতে হবে যে বিয়ে ছাড়ায় অবৈধ মিলনের মাধ্যমে জন্ম হবে।আর এর মাধ্যমে আমি সারা দুনিয়াতে রাজ করতে পারবো।এটা আমার কাছে অনেক সহজ মনে হয়েছিলো কিন্তু আমি অনেক চেষ্টা করে এমন একটা বাচ্চাকে খুজেও পেলাম না।তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই নিজে কারো সাথে রিলেশনে জড়াবো,,তারপর নিজে এমন সন্তানের জন্ম দিবো।আর সহজে আমি মিহি নামের একজনের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে যায়।তাকে অনেক বার রাজি করানোর চেষ্টা করেছি শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য কিন্তু সে কিছুতে রাজি হতো না।শুধু বিয়ের কথা বলতো বাধ্য হয়ে আমি ওকে সব সত্যি বলে দিই।তখন সে বলে আমি এমন একজন বাচ্চাকে জানি সে অবৈধ।তখন মিহি আমায় সেই বাচ্চাকে দেখিয়ে দেয়।তখন আমি খুশি হয়ে সেই বাচ্চাকে পূর্ণিমার রাতে শয়তানের সামনে বলি দিই কিন্তু মিহি আমায় মিথ্যা বলেছিলো সেই ছেলে অবৈধ ছিলো না।সে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এক দম্পত্তির সন্তান ছিলো।আর এটাই সফল না হওয়ায় শয়তানের অভিশাপে আমি এমন পঙ্গু হয়ে যাই।আর তারপর থেকে সেই শয়তান আর আসে না।তারপর আবার রক্তের দ্বারা শয়তানকে তুষ্ট করে ওকে হাজির।এখন যদি আমি আবার এমন সন্তানকে বলি দিতে পারি তবে আমি আমার কাজে সফল হবো আর এই পঙ্গুত্ব থেকে মুক্তি পাবো।
মারিয়া এসব শুনে একদম বাক রুদ্ধ হয়ে পড়েছে।মারিয়া তখন বলল
->শয়তানকে ডাকার জন্য যে রক্ত প্রয়োজন হয়েছিলো সেটা আপনি কোথায় পেয়েছেন?
->তোমার মা-বাবা সহ পুরো ফ্যামিলির থেকে।
এই কথা শুনে মারিয়া একেবারে চমকে গেলো।মারিয়ার মাথায় রক্ত উঠে গেলো।মারিয়া রেগে গিয়ে বলল
->আপণি তাহলে আমার মা-বাবার খুনি।আপনাকে তো আমি মেরে ফেলবো।
এই বলে মারিয়ার ইরফানের দিকে তেড়ে গেলো আর ঠিক তখন সেই সাদা বিড়াল লাফ দিয়ে এসে মারিয়ার গলায় আচর মারলো।মারিয়া মেঝের ওপর পড়ে গেলো।তখন সেই বিড়াল রুপ বদলাতে শুরু করলো।সে বিড়াল থেকে ভয়ংকর কুচকুচে এক মানুষে পরিণত হলো।ইরফান হেসে বলল
->আমায় মারা চেষ্টা করলে তোমার ভালোবাসার মানুষ সামিউল আর তার পুরো ফ্যামিলি শেষ।আর সত্যি বলতে কি যাকে আমার মামা-মামী হিসেবে জানো ওরাও এই বিড়ালের মতোই পিশাচ।
->না আপনি ওদের কিছু করবেন না।
->ঠিক আছে করবো না যদি আমার শর্তে রাজি হও।আর আমি ক্ষমতা লাভ করার পর তুমি আমার পাশে রানী হিসেবে বসতে পারো আবার তোমার ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে চলে যেতে পারো।
->আমি আপনার সব শর্তে রাজি কিন্তু আপনি সামির কোন ক্ষতি করবেন না।
->কিছু করবো না তোমাদের।বিশ বছর যাবৎ হাঁটতে পারিনা।সেখানে না হয় আর এক বছর অপেক্ষা করবো সমস্যা নেই।
ইরফান সামিউলকে আটকে রেখেছিলো।মারিয়া মনে মনে ভাবছে আমি এই কাজ জীবনেও করবো না আর তোকেও সফল হতে দিবো না।আমার মা-বাবা আর সন্তানকে হত্যার শাস্তি পাবি তুই।
চলবে,,,,,,।
(গল্প সম্পূর্ণ কাল্পনিক।বাস্তবের সাথে গল্পের কোন মিল নেই।এই গল্প গুলো শুধু লেখা হয় বিনোদনে জন্য।যাদের গল্প ভালো লাগবে না তারা এড়িযে যাবেন কিন্তু কোন বাজে মন্তব্য করবেন না।ধন্যবাদ)