ছদ্মবেশে কে সে পর্ব-০৩

#গল্পঃছদ্মবেশে_কে_সে?
#পর্বঃতৃতীয়।
#লেখাঃShihab Hossain(Tarajul)

মারিয়া রড হাতে ধীর পায়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো।তারপর আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে উপরে উঠে গেলো।মারিয়ার একটু একটু ভয় করছে,,কিন্তু তারপরেও শক্ত করে রড হাতে নিয়ে ওর রুমের দরজার সামনে গিয়ে দেখলো কালো কাপড়ে জড়ানো লোকটি আগের মতোই একই ভাবে দাড়িয়ে আছে।মারিয়া ভিতরে ঢুকে পিছন থেকে বলল
->কে আপনি?আর এই বাড়ির ভিতরে আপনার ঢোকার সাহস হলো কি করে?
মারিয়ার কথার কোন জবাব এলো না।তাই মারিয়া একটু রেগে গিয়ে আবার বলল
->কি হলো আমার কথা কি আপনার কানে যাচ্ছে না।বয়রা নাকি আপনি যে কানে শুনতে পান না।
মারিয়া এবার বিরক্ত হয়ে ওর এক হাতে লোকটির কাধে হাত দেওয়া মাত্র সে মাটিতে পড়ে গেলো।মারিয়া তখন পড়ে যাওয়া লোকটির জায়গায় কালো কাপড়ের মধ্যে থাকা একটা কঙ্কাল দেখে রড ফেলে দিয়ে জোরে চিৎকার করে উঠলো।ভয়ে মারিয়ার হাত পা থরথর করে কাঁপছে।এটা কি দেখছে সে?মারিয়া কাঁপতে কাঁপতে আবার সেটির দিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে আর কিছু নেই।মারিয়া অবাক হয়ে গেলো এমন কান্ড দেখে।এখনি সে যে জিনিসটা দেখে ভয়ে চিৎকার করলো হঠাৎ করে সেই জিনিসটা কোথায় গায়েব হয়ে গেলো।সেই কঙ্কালকে দেখতে না পেরে মারিয়ার ভয় কিছুটা দুর হয়ে গেলো।মারিয়া বেলকনিতে এসে দেখতে লাগলো যে সেটি আসলে কোথায় গেলো।কিন্তু কোন কিছু মারিয়ার নজরে আসলো না।মারিয়ার কেমন জানি ভিতরটা ভয় ভয় করছে।এমন সময় বাইরে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ হয়ে উঠলো।মারিয়া আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি রড হাতে নিচে গিয়ে দেখলো ধবধবে একটা সাদা বিড়াল রান্না ঘর হতে পাতিল ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালালো।মারিয়া রড দরজার কাছে রেখে রুমে এসে টিভি চালু করে বসে থেকে দেখছে।
মারিয়া টিভি দেখছিলো তখন ওর মনে হলো যে আবার কেউ ওকে আড়াল থেকে দেখছে।মারিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।মনে মনে ভাবলো বাড়িতে একা আছে বলে হয়তো এমন মনে হচ্ছে।আবার সে টিভি দেখায় মনযোগ দিলো।মারিয়ার চোখ হঠাৎ দরজার দিকে যেতে দেখলো ছায়ার মতো কিছু একটা সরে গেলো।যা দেখে মারিয়ার বুকের ভিতর ছ্যাৎ করে উঠলো।মারিয়া সেখানে বসা থেকে বলে উঠলো
->কে ওখানে?
কোন সাড়াশব্দ এলো না।তাই মারিয়া উঠে গিয়ে দেখলো সেই সাদা বিড়াল একটা ইদুর ধরে সেটাকে খাচ্ছে।সেটা দেখে মারিয়া হেসে উঠে বলল
->ওরে বিল্লি তুই?আমি তো ভেবেছিলাম কি না কি?যাই হোক একটা ইদুর ধরে ভালো করেছিস।আজ এর জন্য তোকে দুপুরে একটা মাছ খাওয়াবো।
মারিয়া টিভি দেখতে দেখতে সোফার ওপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লে।
হঠাৎ মারিয়ার কানের কাছে কেউ মুখ এনে বলল
->মরবি,,তুই ও মরবি।তোর মৃত্যু খুব নিকটে।বাঁচতে চাইলে আমার ইচ্ছা পূরন কর।
আর তখনি মারিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।মারিয়া ভয়ে একদম ঘামছে।মারিয়া তাকিয়ে দেখলো ওর সমনে মেঝেতে সেই বিড়াল বসে ওর দিকে তাকিয়ে ম্যাও বলে উঠলো।মারিয়াকে কে বললো কথাটা?।মারিয়া আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।তাহলে এমন কথা কে বলল?আর কিসের ইচ্ছা পূরন করার কথা বললো যেটা না করলে ওর মরতে হবে?
মারিয়া বেশ ভয় লাগছে।সকাল থেকে এসব কি হচ্ছে ওর সাথে।মারিয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো দুপুর দুইটা বাজে।প্রায় দুই ঘন্টা ঘুমিয়েছে সে।মনে মনে ভাবলো স্বপ্নে হয়তো এসব দেখেছে।কিছু কিছু স্বপ্ন বাস্তবের মতো মনে হয়।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দুপুরের খাবার খেলো।খেতে খেতে ইরফানের কথা মনে হতে ফোন বের করে নিয়ে আসলো ওকে কল করার জন্য।কিন্তু মারিয়া দেখলো একটু নেটওয়ার্ক নেই।
হঠাৎ নেটওয়ার্ক নেই দেখে একটু অবাকই হলো।যেকদিন ধরে এই বাড়িতে এসেছে সেকদিন ফোনে একদম ফুল নেটওয়ার্ক দেখেছে আজ হঠাৎ কি হলো?মারিয়া আর না ভেবে ফোন ওর পাশে টেবিলে রেখে বসে থেকে খাবার খেলো।
তারপর মারিয়া ভাবলো এবার একটু ইরফানের মামার বাড়ি থেকে ঘুরে আসা যাক।মারিয়া দরজা বন্ধ করে বাইরে এসে দেখলো আশেপাশে খুব একটা বাড়িঘর নেই।বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে সেই বাড়ি গুলোতে অনেকদিন কেউ থাকে না।ইরফানের বাড়ির থেকে ওর মামার বাড়ি দুরুত্ব মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ।মারিয়া হেঁটে হেঁটে সেই বাড়ির দিকে গেলো।মারিয়া বাড়ি আগে কখনো দেখেনি।ইরফান বলেছিলো বাড়িটার গেটের সামনে একটা বড় বটগাছ আছে আর সেটা আন্দাজ করে মারিয়া গেলো।একটু দুর যেতে আবার একটা বাংলো বাড়ি দেখতে পেলো।যে বাড়ির ভিতর একটা বিশাল বড় বটগাছ।মারিয়া মনে মনে বলল নিশ্চয় এই বাড়িটায় হবে।মারিয়া সেই বাড়ির সামনে এসে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো।বাড়ির সামনে বিশাল বড় ফাঁকা জায়গা সেখানে বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো রয়েছে।কিন্তু গাছের গোড়ায় অসংখ্য আগাছা জন্মে আছে।এমনকি বাড়ির উঠানে অনেক পাতা পড়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে কেউ পরিষ্কার করে না।দরজাটাও কেমন মরিচা ধরা।বাড়ির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না এখানে কেউ থাকে।আর পুরো বাড়িটার পরিবেশ একদম নিস্তব্ধ।
মারিয়া বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে মামিকে ডাকল
->মামি বাসায় আছেন?
কিন্তু ভিতর থেকে কোন আওয়াজ এলো না।মারিয়া দরজায় হালকা টোকা দিতে দরজা একটা আওয়াজ করে খুলে গেলো।মারিয়া ধীর পায়ে বাড়ির ভিতর ঢুকতেই ভ্যাপসা একটা গন্ধ নাকে এসে লাগলো।মারিয়া ভিতরটা দেখে একদম অবাক হয়ে গেলো।বাড়ির ভিতর ধুলো বালি জমে একাকার।বাড়ির প্রতিটা জিনিসের ওপর সাদা কাপড় বিছানো।সেই কাপড়ের ওপর ধুলো জমেছে সেটা দেখায় যাচ্ছে।মারিয়া ভাবতে লাগলো,,এই বাড়ির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ কেউ থাকে না,,,তাহলে ওর মামা মামিরা এখানে থাকে সেই কথাটি কি মিথ্যা?ইরফান মারিয়াকে মিথ্যা কেনই বা বলবে।এমন সময় ছোট বাচ্চার খিলখিলিয়ে হাসির শব্দ পেলো।মারিয়া পিছনে তাকিয়ে যা দেখলো এতে ওর পুরো শরীর হীম হয়ে গেলো।মারিয়ার ছেলে মেঘ ওর পিছনে দাড়িয়ে আছে। ছেলেকে দেখে মারিয়ার চোখে পানি চলে আসলো।মারিয়া কিছু বলার আগে মেঘ বলল
->আম্মু তুমি আমায় দেখতে এসেছো।আমার আম্মু অনেক ভালো আমায় ছাড়া থাকতেই পারে না।
মারিয়া এগিয়ে গিয়ে ছেলের সামনে হাঁটু গেরে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলল
->সত্যি সোনা পাখি আমি তোকে ছাড়া একটু থাকতে পারি না।তুই এখানে কি করছিস বাবা?
->আমি তো এখানেই থাকি।তুমি কাঁদছো কেন?জানো না তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয়?
মারিয়া তখন নিজের চোখ মুছে বলল
->আর কাঁদবো না ঠিক আছে।
->আচ্ছা।
->এবার তোকে আমার সাথে নিয়ে যাবো চল।
এই বলে মারিয়া মেঘকে ধরতে লাগলো কিন্তু ওর শরীর স্পর্শ করতে না পেরে মেঘের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।মেঘকে দেখে মারিয়া এতক্ষন ভুলে গিয়েছিলো যে মেঘ মারা গেছে।মারিয়া ধরতে পারলো না দেখে মেঘ জোরে জোরে হাসতে লাগলো।মেঘের চেহারা কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে।পুরো চেহারা মুহুর্তে সাদা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।মারিয়ার বেশ ভয় হচ্ছে নিজের ছেলেকে দেখে।মারিয়া ভয়ে পিছিয়ে যেতে লাগলো।তখন মেঘ বলল
->মারা যাওয়ার পর নিজের আপন মা সন্তানকে ভয় পায়।হাহাহাহাহা।
মেঘের এই কথাটি মারিয়ার বুকে তীরের মতো আঘাত করলো।মারিয়া দৌড়ে মেঘের কাছে এসে বলল
->দেখ বাবা আমি তোকে একটুও ভয় পাচ্ছিনা।
মেঘ তখন চিৎকার করে বলল
->তুমি চলে যাও আম্মু নয়তো ওরা তোমাকেও মেরে ফেলবে।
মারিয়া অবাক হয়ে বলল
->কে মেরে ফেলবে?
->ও আসছে তুমি চলে যাও।
এই বলে মেঘ দৌড়ে সিড়ি দিয়ে বাড়ির ছাদে যেতে লাগলো।মারিয়া মেঘের পিছু পিছু দৌড়াতে লাগলো।এমন সময় কালো কিছু একটা উড়ে এসে মেঘকে সহ অদৃশ্য হয়ে গেলো।মারিয়া মেঘ বলে চিৎকার করে সেখানে বসে থেকে কাঁদতে লাগলো।
এমন সময় ওর কানে কারো গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসলো তখন মারিয়ার মেঘের কথা মনে পড়ে গেলো।তাই মারিয়া আর দেরি না করে নিজের চোখ মুছে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লো।
মারিয়া বাসায় আসার পর ভাবতে লাগলো,,ওর পরিবারের মৃত্যুর পিছনে নিশ্চয় কোন রহস্য আছে যেটা সব কিছুর আড়ালে।মৃত্যুর কারনটা সত্যি খুব রহস্যজনক।এসব খুজে বের করতে হবে।আর একবার যদি সে হত্যাকারী খুজে পায় তো নিজ হাতে তাকে শেষ করে দিবে।
এই ভেবে মারিয়া রাগে ফুসতে লাগলো।এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ হলো।মারিয়া বেলকনিতে এসে দেখলো ইরফান এসেছে।মারিয়া তাড়াতাড়ি করে বাইরে গিয়ে ইরফানকে নিয়ে ভিতরে আসলো।মারিয়া ইরফানকে বলল
->কোথায় গিয়েছিলেন আপনি জানতে পারি?
ইরফান হেসে জবাব দিলো
->,পরে একসময় বলবো কেমন?
->আপনার ইচ্ছা।
ইরফানকে পোশাক বদলাতে মারিয়া সাহায্য করলো।এরপর মারিয়া ইরফানকে নিয়ে বাইরে আসলো।মারিয়া ইরফানের থেকে এসব ঘটনা গোপন করলো কিছু বললো না।শুধু বলল
->আমি আপনার মামার বাসায় গিয়েছিলাম কিন্তু তাদের কাউকে বাড়িতে পেলামনা তো।
->ও আচ্ছা।এখন পাবে না তো।মামা আর মামি সারাদিন তাদের একটা অফিস আছে সেখানে থাকে সন্ধ্যার একটু আগে এই বাসায় আসে।
->ও।
মারিয়ার কাছে ইরফানের বলা কথা গুলো কেমন জানি খোটকা লাগলো।কিন্তু কিছু বললো না।তখন ইরফান বলল
->সন্ধ্যায় মামার বাসায় তোমাকে নিয়ে যাবো নি।
->ঠিক আছে।
সন্ধ্যার পর ইরফান মারিয়াকে নিয়ে মামার বাড়ির দিকে গেলো।রাস্তা একদম নির্জন।আশেপাশে থাকা বাড়ি গুলো তে লাইট জ্বলছে কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে না কোন লোকজন আছে।মারিয়া বলল
->এই এলাকাটা একদম ভুতুড়ে টাইপের তাই না?
->হুমম ঠিক বলেছো।এখানে মানুষজনের আনাগোনা খুব কম।তাই বাড়িটা এখানে কিনেছি।
->আমার অবশ্য নির্জন জায়গা খুব ভালো লাগে।
->মানুষের সাথে মেলামেশা করার চেয়ে নির্জন জায়গায় একা বসে প্রকৃতির সাথে কথা বলা ভালো।
->একদম ঠিক বলেছেন।
দুর থেকে মারিয়া দেখলো ইরফানের মামার বাড়ির সামনে লাইট জ্বলছে।বাড়িটার আশপাশ বেশ আলোকিত লাগছে।মারিয়া ইরফানকে নিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলা।বাড়িটা দেখে মারিয়ার বেশ অবাক লাগছে।বাড়ির ভিতরে সবকিছু একদম পরিষ্কার।এমনকি দরজাটা দেখেও মনে হচ্ছে একদম নতুন।অথচ সে একা যখন এসেছিলো তখন এসব কিছু ছিলো না।
মারিয়া আর ইরফান আর গেটের সামনে দাড়ালো।ইরফান মারিয়াকে দরজায় নক করতে বললো।মারিয়া কি করবে বুঝতে পারছে না।সে নিজে দেখেছে যে ভিতরে অবস্থা দেখে মনে হয় অনেকদিন কেউ থাকে না সেখানে এখন ওর মামা মামি আসবে কি করে সেটা দেখে অবাক হচ্ছে।তারপরেও সব সংকোচ দুর করে দরজায় নক করলো।একটু বাদে ইরফানের মামি এসে দরজা খুলে দিলো।মারিয়া ইরফানকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলো।ভিতরটা দেখে মনে হচ্ছে সবকিছু একদম নতুন।সব জিনিসপত্র কেমন যেন চকচক করছে।এটা কি করে সম্ভব সেটা ভেবে মারিয়া অবাক হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু সে কাউকে কিছু বুঝতে দিলো না।নিজেদের মতো করে গল্প করতে লাগলো।

চলবে,,,,,,।

(গল্প সম্পূর্ণ কাল্পনিক।বাস্তবের সাথে গল্পের কোন মিল নেই।এই গল্প গুলো শুধু লেখা হয় বিনোদনে জন্য।যাদের গল্প ভালো লাগবে না তারা এড়িযে যাবেন কিন্তু কোন বাজে মন্তব্য করবেন না।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here