ছদ্মবেশে কে সে পর্ব-০২|প্যারানরমাল লাভ স্টোরি

#গল্পঃছদ্মবেশে_কে_সে?
#পর্বঃদ্বিতীয়।
#লেখাঃShihab Hossain

মারিয়ার মা-বাবা সহ সবার মৃত্যুর খবর শোনা মাত্রই ওর হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো।মারিয়া যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না,,,সে কি শুনছে এসব?মারিয়ার হাত থেকে ফোন পড়ে যেতে দেখে ইরফান ওকে জিজ্ঞেস করলো
->কি হলো তোমার?
মারিয়া কোন কথা বলছে না।একদম নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে সে।হঠাৎ মারিয়া জোরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো তারপর বলল
->আমার মা-বাবাসহ সবাই নাকি মারা গেছে?
->হোয়াট?এটা কি করে সম্ভব?
->জানি না।
মারিয়া এসে ইরফানের পায়ের কাছে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো
->আপনি দয়া করে আমায় বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন?আমি আপনার দুটো পায়ে ধরি।আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো শুধু যেতে দিন।
ইরফান মারিয়ার মাথায় হাত রেখে বলল
->এভাবে বলছো কেন?চলো আমিও যাবো।
ইরফান ফোন করে ওর ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বললো।তারপর দুইজন মিলে মারিয়ার বাড়ির দিকে রওনা দিলো।মারিয়া সারা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে গেলো।মারিয়া গাড়ি থেকে নামতেই দেখলো বাড়ি উঠানে পাঁচটি লাশ রাখা।মারিয়া কান্না জড়িত চোখে ধীর পায়ে লাশ গুলোর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।প্রতিটি লাশ মারিয়া দেখছে আর চিৎকার করে কাঁদছে।সব শেষে নিজের ছেলে মেঘের লাশের পাশে গিয়ে বসে পড়লো।ছেলের চেহারার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।কি নিষ্পাপ লাগছে মারিয়ার কলিজার টুকরোটাকে।হঠাৎ মারিয়া মেঘকে ওই অবস্থায় বুকে জড়িয়ে নিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো।আর বলতে লাগলো
->ময়না আমার তুই আমায় একা করে দিয়ে কেন চলে গেলি?তুই না সব সময় বলতে বড় হয়ে নাকি আমায় আর কখনো কাঁদতে দিবি না তাহলে আজ আমায় কেন এভাবে কাঁদিয়ে চলে গেলি।
মারিয়ার কান্না যেন কিছুতে থামছে না।কয়েকজন মহিলা এসে মারিয়ার কোল থেকে ওর ছেলেকে ছাড়িয়ে নিলো।মারিয়া ওভাবে ওখানে বসে থেকে কাঁদছে।ইরফান হুইল চেয়ারে বসে মারিয়াকে নানারকম কথা বলে বুঝাতে লাগলো।এভাবে সবার হঠাৎ মৃত্যু হওয়ায় পুলিশ এসেছে তদন্তের জন্য।প্রত্যেকে লাশ গুলো পোস্টমর্টেম করার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো।আশেপাশের মহিলারা বলাবলি করছে,,এমন এক অপয়া মেয়েকে জন্ম দিয়েছে,,যার প্রথম স্বামীর ভাত হয়নি,,আবার দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে যেতে না যেতেই পুরো বাড়ির মানুষদের খেলো।ওরও মরা উচিত।”
সেখানে সামিউল উপস্থিত ছিলো।সে ওই মহিলাদের কথায় রেগে গিয়ে বলে উঠলো
->আজব মানুষ তো আপনারা।একজন তার পরিবারের সকল সদস্যদের হারিয়েছে।আপনারা কি আরো এই দুঃসময়ে তার পাশে দাড়াবেন তা না করে আগে বলছেন সে খেয়েছে।আরে মৃত্যু কখন কার কিভাবে হবে সেটা কেউ বলতে পারে না আল্লাহ ছাড়া।যত্তসব মূর্খের দল।নিজেদের সাথে এমন না পর্যন্ত কেউ বুঝবেন না।
সামিউলের কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো।সামিউলের এক বন্ধু মারিয়াদের পাড়ায় থাকে সে তার মাধ্যমে মারিয়ার মা-বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে দেখতে চলে আসে।মারিয়াকে ওর পাশের বাড়ির আন্টি বাড়িতে নিয়ে গেলো।ইরফানও সাথে গেলো।মারিয়াকে দেখে সামিউলে অনেক খারাপ লাগছে।সে কাছে থেকেও মারিয়ার এই দুঃসময়ের সঙ্গী হতে পারলো না।এমন সময় সামিউলের সেই বন্ধু ইসতিয়াক এসে বলল
->কি রে মন খারাপ করে আছিস কেন?
->এমনি রে।বুঝতেই তো পারছিস।কাল মেয়েটার বিয়ে হলো আর আজ মা-বাবাকে হারিয়ে ফেললো।কতটা কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার।কিন্তু আপসোস ওর এই মুহুর্তে আমি পাশে থাকতে পারলাম না।
->মন খারাপ করিস না।ওর পাশে এখন ওর হাসবেন্ড আছে।আর ওকে হয়তো তোর ফ্যামিলি মানতোও না।তাই এটা নিয়ে ভেবে লাভ নাই।
সামিউল কিছু বললো না।তখন ইসতিয়াক বলল
->একটা বিষয় খেয়াল করেছিস তুই?
->কি?
->প্রত্যেকটা লাশ দেখে মনে হচ্ছে কারো শরীরে কোন রক্ত নেই।কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
->হুমম ব্যাপারটা আমারো অদ্ভুত লাগলো।পোস্টমর্টেম হলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
->হুম।

মারিয়া বিছানার ওপর চুপ করে বসে আছে।ওর পাশে হুইল চেয়ারে ইরফান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।মারিয়ার সেই আন্টি বেশ কয়েকবার খাবার খাওয়াতে চাইলো কিন্তু মারিয়া খেলো না তাই তিনি খাবার টেবিলের ওপর রেখে চলে গেলো।সে মাঝে মধ্যে শুধু কেঁদে উঠছে।বিশেষ করে নিজের ছেলের কথা ভেবে মারিয়ার আরো বেশ কষ্ট হচ্ছে।ইরফান মারিয়ার সামনে এসে ওরে মুখে হাত বুলিয়ে বলল
->এভাবে কান্না করলে কি তারা আর ফিরে আসবে বরং এতে তোমার শরীরের ক্ষতি হবে।তার চেয়ে দোয়া করো যেন তোমার মা-বাবা ওপারে ভালো থাকেন।এখন ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নাও।
ইরফান খাবারের থালা হাতে নিয়ে মারিয়াকে তুলে খাইয়ে দিতে চাইলো।মারিয়া একবার ইরফানের দিকে তাকালো তারপর খাবারটা খেলো।দুই একবার খেয়ে আর খেলো না।
মারিয়া শুয়ে পড়লো কারন কান্না করতে করতে আবার মাথা ব্যথা করছে,,চোখটাও ব্যথা করছে।মারিয়া চোখ বন্ধ করতে অনুভব করলো ওর মাথায় কেউ হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মারিয়া চোখ খুলতে দেখলো সে আর কেউ না সে হলো ইরফান।মারিয়া বলল
->আমার মাথা কষ্ট করে হাত বুলিয়ে দিতে হবে না আপনার আমি ঠিক আছি।
->চুপ করে শুয়ে থাকো আমার মুখে মুখে তর্ক করবে না।এটা আমার একদম পছন্দ নয়।
মারিয়া আর কিছু না বলে চোখ বুজে ফেললো।মারিয়া মনে মনে ভাবছে,,লোকটা আসলেই খুব ভালো।বয়স বেশি হলেও ভিতরে কেয়ারিং ভাবটা এখনো রয়ে গেছে।
আসলে মেয়েরা তো এসবই চায় যে ওদের দুঃসময়ে কাছের মানুষটি সবসময় তার কেয়ার করুক।
এদিকে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে দেখা গেলো যে রক্তশূন্যতার কারনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।শরীর থেকে এতোগুলো রক্ত কিভাবে হাওয়া হয়ে গেলো সেটা ভেবে সবাই অবাক।যারা পোস্টমর্টেম করেছে তারা এটাও জানিয়েছে যে শরীর হতে রক্ত বের করে নেওয়ার কোন চিহ্ন তারা খুজে পায়নি।কেসটা পুলিশের কাছে অনেক জটিল হয়ে গেলো।পরেরদিন সকালবেলা পাঁচজনকে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো।সেই সময় ও মারিয়া অনেক কান্না করলো।
এরপর মারিয়া ইরফানের সাথে বাসায় ফিরে আসলো।মারিয়া মানষিক ভাবে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে।ঠিক মতো একটু খাওয়া দাওয়াও করে না।সবার কথা বার বার মারিয়ার মনে পড়ছে।বিশেষ করে মেঘের কথা বেশি মনে পড়ে।সবার মৃত্যু মারিয়ার কাছে একদম অস্বাভাবিক লাগছে।মারিয়ার কোন কিছু ভালো লাগছে না,,কোন কাজে মন নেই।ইরফান মারিয়ার যথেষ্ট কেয়ার করছে।মারিয়া ভাবলো,,নতুন একজনের জীবনে এসেছে সে এখন এসব কিছু নিয়ে না ভেবে তার সংসারে মন দেওয়াটায় বেটার হবে।মারিয়া স্বাভাবিক হতে প্রায় তিন-চার দিন সময় লাগলো।
সকাল বেলা মারিয়া ঘুম থেকে উঠার পর না দেখে ওকে খুঁজতে লাগলো।মনে মনে ভাবছে সে আসলে প্রতিদিন সকালে কোথায় যায়,,আমি উঠার আগে? দেখতে হবে ব্যাপারটা।মারিয়ার শোবার ঘর দুতলায়।মারিয়া কি যেন ভেবে বেলকনিতে আসলো।বেলকনিতে আসার পর দেখলো ইরফান নিচে লাগানো গাছপালায় পানি দিচ্ছে।মারিয়া এই বাড়িতে আসার পর নিচটা ভালো ভাবে দেখেনি।আজ দেখলো যে সেখানে নানারকম ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে।বাড়ির এক কোনায় বিশাল বড় আমগাছ।সেই গাছের নিচে একটা দোলনা বসানো।গাছে পানি পড়ায় সেগুলো বেশ সতেজ লাগছিলো।ইরফানের এই কাজে মারিয়ার বেশ ভালো লাগলো।মারিয়া নিচে আসতেই ইরফান না বুঝে জলের পাইপ মারিয়ার দিকে ধরলো।আর এতে মারিয়ার শরীর একেবারে ভিজে একাকার হয়ে গেলো।মারিয়া রেগে গিয়ে ওর দুই হাত কোমড়ে রেখে বলল
->এসব কি হ্যাঁ,,সকাল সকাল দিলেন তো গা ভিজিয়ে।
->ওহ সরি দেখতে পারিনি।
->হুম দেখতে পারেননি বলে কিছু বললাম না।
->তাই?
এই বলে ইরফান আবার মারিয়ার গা ভিজে দিলো।মারিয়া রেগে গিয়ে ইরফানের থেকে পাইপ কেড়ে নিয়ে ওর গা ভিজে দিলো।তারপর হাসতে হাসতে বলল
->দেখুন এবার কেমন লাগে।এই মারিয়ার সাথে লাগতে আসলে এমনই হবে।
->তবে রে।
এই বলে ইরফান হুইল চেয়ারে করে মারিয়ার দিকে যেতে লাগলো।মারিয়া তখন দৌড়ে পালাতে লাগলো আর মাঝে মাঝে ইরফানের গায়ে পানি মারলো।সকালবেলাটা বেশ ভালোই কাটলো।মারিয়া ইরফানকে গোসল সেরে কাপড় পড়তে সাহায্য করলো।তারপর নিজে গোসল সেরে সকালের নাস্তা করলো।মারিয়া বলল
->যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কি আমি আপনার সেই গাছগুলোতে সকালে পানি দিতে পারি?
->হ্যাঁ নিশ্চয়।এখন এসব তো তোমারই।
মারিয়া হেসে জবাব দিলো
->ধন্যবাদ।
->আর একটা কথা আমি একটু কাজে বাইরে যাবো তুমি সাবধানে বাসায় থেকো।
->আচ্ছা।কখন আসবেন?
->জানি না।বিকেলও হতে পারে আবার রাতও হতে পারে ঠিক নাই।
->আচ্ছা সাবধানে থাকবেন।
ইরফান খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লো।মারিয়া পুরো বাড়িতে এখন একা।মারিয়া মাত্র কয়েকদিনে এই বুড়ো লোকটার মায়ায় পড়ে গেছে।
বাড়িতে মারিয়ার বেশ একা লাগছিলো আর বার বার ওর পরিবারের কথা মনে পড়ছিলো।মনে মনে ভাবছে আর কেউ ওকে এখন আর আম্মু আম্মু বলে ডাকবে না।এটা ভাবতে চোখের কোণে জল চলে এলো।মারিয়া নিজের ফোন হাতে নিয়ে ভাবলো একবার সামিউলকে ফোন দিই।তারপর ভাবলো থাক কি দরকার ফোন দিয়ে ছেলেটার কষ্ট বাড়িয়ে ।তার চেয়ে বরং সে তার মতো থাকুক আমি আমার মতো।
মারিয়া ফোন বিছানার ওপর রেখে নিচে চলে এলো।নিচে এসে দোলনায় বসে আনমনে দোল খেতে লাগলো।কিন্তু এমন সময় মারিয়ার মনে হচ্ছিলো যে কেউ তাকে দেখছে।সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।হঠাৎ মারিয়ার চোখ গেলো ওর রুমের বেলকনির দিকে সেখানে দরজার সাথে হেলান দিয়ে কালো পোশাক পরিহিত কেউ একজন দাড়িয়ে আছে।তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না।মাথা পর্যন্ত কালো পোশাকে ঢাকা।মারিয়া ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো।মনে মনে ভাবছে এই বাড়িতে তো সে ছাড়া কেউ নেই তাহলে এই লোকটি কে?মারিয়া ভাবলো আবার চোর টোর নয়তো?এটা দেখার জন্য সে বাড়ির ভিতর গেলো।দরজার কাছে বেশ কয়েকটা রড রাখা ছিলো।মারিয়া একটা রড হাতে নিয়ে ভিতরে গেলো,,,,,,

চলবে,,,,,,।

(গল্প সম্পূর্ণ কাল্পনিক।বাস্তবের সাথে গল্পের কোন মিল নেই।এই গল্প গুলো শুধু লেখা হয় বিনোদনে জন্য।যাদের গল্প ভালো লাগবে না তারা এড়িযে যাবেন কিন্তু কোন বাজে মন্তব্য করবেন না।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here