#মেঘবৃত্ত
#পর্ব_২০
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
মেঘার ওমন আকস্মিক কান্না দেখে বৃত্ত কিংক্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। কি করবে ভেবে না পেয়ে মেঘার মাথাটা নিজের বুকের কাছে চেপে ধরলো। পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত সুরে বললো,
— রিলাক্স মেঘ, রিলাক্স। আরে, এখানে এত কান্না করার কি আছে? কি হয়েছে আমাকে খুলে বল। না বললে আমি বুঝব কি করে?
মেঘা চুপ করে রইলো, ফোঁপাতে লাগলো। নাকের পানি, চোখের পানিতে বৃত্তের ইস্ত্রি করে নীল রঙা শার্টটা ভিজে টইটুম্বুর! মেঘা অভিযোগ শোনালো না। কিন্তু, ছোট্ট মনে চেপে রাখলো আগুনসম অভিমান। বৃত্ত মেঘার মাথায় হাত বুলিয়ে মেঘাকে শান্ত করার চেষ্টায় রত হয়ে উঠলো। মেঘার চোখের পানি বৃত্তের একদম ভালো লাগে না। ভার্সিটিতে থাকতে মেঘাকে কোনো ছেলে বিরক্ত করলে, মেঘার সে কি কান্না! বৃত্ত তখন রেগেমেগে লাঠি-সাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়তো সেই ছেলের হাড্ডি গুঁড়ো করতে। মেঘা আটকাতো, ভয় পেত বৃত্তকে নিয়ে। কিন্তু, বৃত্ত ঠিকই ছেলেটাকে আধমরা করেই ফিরত। মেঘার কাছে আসতো ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত দেহ নিয়ে। মেঘার সে কি রাগ! বৃত্তের দিকে তাকাতো না অব্দি। তার একটাই কথা, এই সামান্য কারণে কেউ মারামারি করে? এটা কেমন কথা?
তবে বৃত্ত শুনতো না। বরং, মেঘার ওড়না দিয়ে নিজের কপালের ঘাম মুছে ফিনফিনে হেসে বলতো,
শক্তি দেখেছিস আমার? তোর মতন হাজারটা মেয়ের বডিগার্ড হতে পারবো। তবে, আপাতত তোর বডিগার্ডের দায়িত্ত্ব ঠিকঠাক পালন করে নেই। পরবর্তীতে বউয়ের বডিগার্ডের দায়িত্ব নিবো। এবার তো চুপ হ মেরি মা। আর কত বকবি?
মেঘার রাগ তবুও কমতো না। সেদিন বৃত্তের সাথে কথা-টথা বন্ধ। বৃত্তের সে কি রাগ তাতে! সোজা মেঘার ঘরে এসে মেঘার রাগ ঠিকই ভাঙিয়ে নিত। কি দিন ছিলো সেগুলো! মনে পড়তেই মেঘার দু চোখ চোখ ভিজে এলো।
বৃত্ত এখনো মেঘার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেঘা একসময় শান্ত হলো। বৃত্তের ওমন আদুরে আচরণ মেঘার জ্বলন্ত রাগকে নিভিয়ে দিলো। মেঘা সরে এলো। আঙুল দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো সে। বৃত্ত অসহায় চোখে নিজের শার্টের দিকে তাকালো। ভিজে শার্টটা খানিক উচুঁ করে মেঘাকে দেখিয়ে বললো
— দেখ, কি অবস্থা করেছিস আমার নতুন শার্টটার!
মেঘা শার্টের ওমন ভিজে জুবজুব অবস্থা দেখে মেঘা হেসে ফেললো। বললো,
— আমাকে কাঁদানোর শাস্তি এটা।
— তাই না? দিবো এক থাপ্পর। আমি কাঁদিয়েছি তোকে? নিজেই তো বিনা কারণে কেঁদে কেটে আমার নতুন কেনা শার্টটা নষ্ট করলি। বেয়াদ্দপ মহিলা!
মেঘা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। যেনো বৃত্ত বেশ মজার কথা বলেছে। বৃত্ত করুন চোখে একবার নিজের শার্টের দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার হাস্যরত মেঘার দিকে তাকাচ্ছে। বৃত্ত ভ্রুকুটি করে উঠে দাঁড়ালো। বাথরুমের দিকে যেতে যেতে হুমকি দিলো,
— এই শার্টের টাকাটা আমি তোর বাপের থেকে যৌতুক নিবো। মাইন্ড ইট, মেঘ।
মেঘা আবারও হেসে উঠলো।
________________________________
বৌভাতের আয়োজন বেশ জমকালো করা হয়েছে। বিয়েটা বেশ সাদামাটা হওয়ায় বৃত্তের বাবা বৌভাতে নিজের সমস্ত সখ আহ্লাদ পূরণ করেছেন। আয়োজনের বাহার দেখলে ত স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। বৃত্ত ও মেঘা একপাশে স্টেজে বসে আছে। একেকজন করে মেঘাকে দেখে যাচ্ছেন আর মেঘার হাতে গিফটের প্যাকেট দিচ্ছেন। যখন চারপাশ একটু ফাঁকা হলো, তখন বৃত্ত মেঘার হাতে চিমটি কাটলো। মেঘা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। রাগান্বিত চোখে তাকালো বৃত্তের দিকে। বৃত্ত সেসব পরোয়া করলো না। নিজের মত করে বলতে লাগলো,
— বিয়ে হলে যে এত এত গিফট পাবো, জানলে আরো দু বছর আগেই বিয়ে করে নিতাম। শালার এত বছর কে সিঙ্গেল থাকতো। হুদাই গিফটগুলো মিস করলাম।
মেঘা বোকার মত চেয়ে রইলো বৃত্তের দিকে। এই ছেলে কি পাগল হলো? গিফটের জন্যে বিয়ে করতে চাইছে? মেঘা বৃত্তের দিকে একটু ঝুঁকে নিচু সুরে বললো,
— পাবনা কিন্তু ঢাকা থেকে বেশি দূর না। যাবি সেখানে? ওইখানে তোর অনেক ভাই ব্রাদার আছে কিন্তু। পাগলে পাগলে ভালো বন্ধুত্ব হবে। যাবি?
বৃত্ত হাসলো। নিচু স্বরে সেও বললো,
— তুই গেলে যেতে পারি। ইউ নো, পাগলে পাগলে ভালো বন্ধুত্ব হয়।
কথাটা বলেই বৃত্ত মেঘাকে চোখ টিপ দিলো। মেঘা একদম হা হয়ে গেলো। তার কথা তার কাছেই ফিরিয়ে দিচ্ছে। ওই বজ্জাত ছেলে রে বাবা! মেঘা আর কথা বাড়ালো না। এই ছেলের সাথে এ জীবনে কথায় সে পেরে উঠবে না। তাই নিজের কথার জালে নিজের মান সম্মান খোয়ানোর কোনো দরকার নেই।
বৌভাতের আয়োজন শেষ হতে বেশ রাত হয়ে গেলো। মেঘা মাত্রই গোসল সেরে বেরিয়ে এলো। চুলে এখনো টাওয়াল পেঁচানো। মেঘা আয়নার সামনে গিয়ে ক্রিম, লোশন দিয়ে নিলো। বৃত্ত সোফায় বসে গেম খেলছে। মেঘা সেদিকে একবার তাকিয়ে চুলের টাওয়াল খুললো। টাওয়াল দিয়ে চুল রক্ষার ঝাড়া দিতেই হুট করে তার পেটে যেনো খিল ধরে গেল। মেঘা টাওয়াল ফেলে দিয়ে পেট চেপে ধরে চিৎকার করে উঠলো,
— ও আল্লাহ গো!
মেঘা চিৎকার করে মাটিতেই বসে পড়লো। মেঘার এমন করে চিৎকার শুনে বৃত্ত হুড়মুড়িয়ে মেঘার পাশে এসে বসলো। মেঘাকে একহাত দিয়ে আগলে দিয়ে অস্থির কণ্ঠে বললো
— কি, কি হয়েছে মেঘ? তুই ঠিক আছিস? মেঘ?
#চলবে