তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -০৪

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৪.

-” বেলা বেবি আই মিস ইউ সো মাচ। বেলার গলা জড়িয়ে রেখেই লাফাতে লাফাতে বলে ওঠে।

-” আই অ্যাম অলসো মিস ইউ টুসুন । বেলা বলে ওঠে।

-“হে তোমাদের কি খবর? আমি তোমাদের কেও মিস করেছি অনেক। টুসুন বলে ওঠে।

-” শান্তা বেবি আমিও তোমাকে মিস করেছি সারা জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে।

-“এই যে আমিও এখানে আছি কিন্তু। রুহি কোমরে হাত রেখে বলে ওঠে।

-“এসো এসো গলাগলি করি আমিতো জানি তুমি আছো। টুসুন বলে ওঠে ।

সারা বেলা রুহি টুসুন সবাই একসাথে চারজন মিলে একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরে। পাশে দাঁড়ানো ছেলে তিনজন একে অপরের মুখ দেখছে শুধু। আর ওদের থেকে কিছু দূরে দাঁড়ানো সাঁঝ ও দিশা দাঁড়িয়ে দেখছে।

-” হয়েছে তোদের? এবার যাওয়া যাক তাহলে। আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো ভাই? নিশান বলে ওঠে।

-” তোমার এত জ্বলে কেনো? হিংসুটে একটা। শান্তা মুখ ঘুরিয়ে বলে ওঠে।

-” হয়েছে চল আর তোদের ঝগড়া করতে হবেনা। বেলা হেসে বলে ওঠে।

শান্তা বেলার কাজিন, সারা রুহি এদের দুইজনের সাথে শান্তার পরিচয় থাকলেও ওম বেদ নিশানের সাথে তেমন একটা পরিচয় নেই। তবে এরমধ্যেও নিশান আর শান্তা এদের মধ্যে খটমটে লেগেই থাকে এদের মধ্যে কি সমস্যা জানা নেই তবে নিশান শান্তাকে দেখলেই গা জ্বালা দেওয়া কথা শুরু করে আর শান্তাও রেগে যায়। প্রায় তাদের দেখা হলে ছোটো খাটো ঝগড়া লেগেই থাকে।

এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে বেরিয়ে একে একে সবাই বেরিয়ে যায়। সারা গিয়ে তাদের গাড়িতে উঠে বসে তবে তার মনে কিছুটা মেঘ জমা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর সাঁঝও দিশা চলে আসে সারা ওদের দিকে একবার দেখে নিয়ে জানালার বাইরের দিকে মুখ করে রাখে। সাঁঝ একবার তার বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসে তবে দৃষ্টির আড়ালে।

এদিকে বেদ নিশান ওম তারাও বেরিয়ে যায়। শান্তা আর বেলা পার্কিং গিয়ে শান্তার আনা তার বাইকে উঠে পড়ে। শান্তাও বেলার পিছনে বসে পড়ে আজ সে অনেকদিন পর আবারও বেলার সাথে বাইকে রাইড করবে। বেলা গোয়া থাকা কালীন শান্তা গিয়েছিলো তখনও বেলার সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে। বেলা খানবাড়ির সামনে এসে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে যায় গেটের ভিতরে যায়না আর না বাড়ির দিকে তাকায়। শান্তা বাইক থেকে নেমে মলিন মুখে বেলার সামনে দাঁড়ায় বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় মুখটা কেমন কঠিন হয়ে আছে।

-“আজও বাড়ির ভিতরে আসবিনা?

-” যে বাড়ি আমার নয় সেখানে যাওয়ার তো কোনো প্রশ্নই ওঠেনা। বেলা কঠিন ভাবে বলে ওঠে।

-“বেলা তুই এই খান বাড়ির মেয়ে তাহলে এই বাড়ি তোর নয় কি করে? শান্তা বলে ওঠে।

-” টুসুন আমি এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাইনা। বেলা কঠিন চোখে তাকিয়ে কিছু না বলে বাইক টেনে বের হয়ে যায়।

শান্তা মলিন চোখে বেলার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে থেকে ভাবে আজ নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও সে বাড়িতে থাকেনা মেয়েটার আজ সব কিছু থেকেও কিছুই নেই তার একদম একা নিঃস্ব। এই বাড়ির কারোর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই কখনো কারোর সামনে যদি পড়ে তাহলে পাশ কাটিয়ে চলে যায় না চেনার মত করে। শুধু সে আর একজন আছে যার সাথে এখনও বেলার সম্পর্কে রয়ে গেছে এখনও তাদের কথা হয় সবাই কে ছেড়ে দিলেও বেলা তাদের মনে রেখেছে। এমনকি বাড়ির বাইরে থেকে গেলেও কখনো ভুলেও বাড়ির দিকে চোখ তুলে তাকায়না শান্তা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গেটের ভিতরে ঢুকে যায়। বাড়ির ভিতরে ঢুকে ড্রইংরুমের দিকে একবার তাকিয়ে শান্তা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই বিষাক্ত কিছু কথার বানে থেমে যায় শান্তার পা।

-“ফিরে এসেছে তাহলে নষ্টা মেয়েটা। তুমি আনতে গেছিলে বুঝি ?

-” কে ফিরে আসলো কি আসলো না তাতে আপনার কি? আর আমি কোথায় গিয়েছিলাম এখন সেটার কৈফিয়ত আপনাকে দিতে হবে? শান্তা রুক্ষ কন্ঠে বলে ওঠে।

-” শান্তা ঠিক করে কথা বলো ভুলে যেওনা আমি তোমার বড় হই।

-“আর আমরাও কিন্তু বড়দের কাছ থেকেই শিখি কার সাথে ঠিক কেমন ব্যবহার করতে হবে। আর বড়োরা যদি সহবোধ ভুলে গিয়ে নিজের ভাষার লঙ্ঘন করে ছোটদের সামনে সেখানে ছোটরা তো সেটাই শিখবে তাইনা মিসেস রিসা খান আন্টি। শান্তা বলে ওঠে।

-“শান্তা তুমি কিন্তু আমার সাথে অসভ্যতা করছো। কিছুটা গলা চড়িয়ে বলে ওঠে রিসা খান।

-” ওমা তাই নাকি? কিন্তু আমি তো শুধু আপনার কথার উত্তর দিয়েছি এটাকে বুঝি অসভ্যতা করা বলে? তাহলে বলতেই হয় এটা আমি আপনার থেকে শিখেছি। শান্তা কঠিন ভাবে বলে ওঠে

-“তুমি ওই অসভ্য নোংরা মেয়েটার জন্যে আমার সাথে এই ভাবে কথা বলছো তোমার সাহস কি করে হয় শান্তা তুমি জানো তোমার এই ব্যবহারের জন্যে তোমাকে শাস্তি দিতে পারি? রিসা কিছুটা চিৎকার করে বলে ওঠে।

-” ওমা তাই নাকি আমাকে শাস্তি দেবেন? তো কি শাস্তি দেবেন? আমাকেও বুঝি বাড়ি থেকে বের করে দেবেন বেলার মত? তো বলে রাখি এই বাড়িটা আমারও আপনার স্বামীর একার নয় যে আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে বের করে দিতে পারেন। আপনার স্বামীর অধিকার নিয়ে আপনি এই বাড়ির অধিকারী। আর আমি আমার বাবার মেয়ে হিসাবে এই বাড়ির অধিকারী তাই আমাকে বের করার সাহস করতে আসবেন না। আর হ্যাঁ সাহস টা আমার বরাবরই একটু বেশি। আর আমার বাবা মায়ের কাছে আমার নামে নালিশ করতেই পারেন তবে তারা আমাকে বিশ্বাস করে আপনার স্বামীর মত নয় যে নিজের সন্তান কে বিশ্বাস করতে পারেনা অথচ একজন বাইরে লোকের কথা বিশ্বাস করে। বলে উপরের দিকে পা বাড়ায়।

পিছনে রাগে ফুসতে থাকে রিসা শান্তার বলা কথা গুলো তার পুরো শরীর জ্বলিয়ে দিচ্ছে যেনো।

————–

রওশন ম্যানশনের ভিতরে গাড়ি এসে থামতে সারা কোনো কথা না বলে চুপচাপ বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। সাঁঝ সারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সেও বাড়ির ভিতরে চলে আসে। সারা বাড়ির গেটের কাছে দাঁড়িয়ে বেল বাজানোর আগেই তাকে কেউ কোলে তুলে নেয়। সারা ভয় পেয়ে কিছুটা চিৎকার করে ওঠে। তাকে কোলে নিয়ে ভিতরে যেতেই সারা মুখ দেখতে পায় সাথে সাথে হাত ছুড়ে মারতে থাকে। আর সারার কান্ড দেখে সবাই হেসে ফেলে।

-“আমাকে নামিয়ে দাও কোনো কথা নেই আমার তোমার সাথে নামিয়ে দাও। সারা নাক টেনে বলে ওঠে।

-” সারু বেবি আমার রাগ করেছে নাকি। সারিফ বলে ওঠে।

-“ভাই আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাইনা আমাকে নামিয়ে দাও। সারা বলে ওঠে।

-” আমি আমার সারুকে আনতে যেতে পারিনি বলে আমার উপর রেগে আছে কিন্তু আমিতো তার জন্যে তার স্পেশাল ডিশ রেডি করছিলাম। সারিফ বলে ওঠে।

-” তাই নাকি। ঠিক আছে তাহলে এই বারের জন্যে তোমাকে ক্ষমা করা হলো। সারা বলে ওঠে।

-“ওরে আমার সারু। বলে জড়িয়ে ধরে সারিফ।

-” সারা!

-” ড্যাড! কেমন আছো তুমি? সারা এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“আমিতো ভালো আছি আর এখন আমার সারামা ফিরে এসেছে আরো ভালো হয়ে গেছি। সামাদ রওশন মেয়ের মাথা স্নেহের স্পর্শ বুলিয়ে বলে ওঠে।

-“সারা কেমন আছো তুমি? কতদিন পর ফিরে এলে বাড়ি। তুমি জানো আমি তোমার জন্যে রান্না করতে চাইছিলাম তোমার পছন্দের কিন্তু সারিফ নিজেই করে নিলো। আর দিশা তো কত খুশি তুমি ফিরে আসছো বলে সকাল থেকে শুধু টাইম দেখে গেছে তোমার ফ্লাইটের। মিসেস দোলা মির্জা বলে ওঠেন।

-” হ্যাঁ আন্টি আমি জানিতো দিশা দি আমাকে এতই মিস করছিলো যে আমাকে এখনও পর্যন্ত সে দেখতেই পাইনি আর কথাতো দূরে থাক। সারা বলে ওঠে দূরে দাঁড়ানো সাঁঝের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ানো দিশার দিকে তাকিয়ে ।

-” ভাই আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তারপর তোমার হাতে খাবো। বলেই উপরের দিকে চলে যায়।

এদিকে সারার কথা শুনে দিশা জোর করে মুখে হাসি টানার চেষ্টা করে আসলেই সে সারার সাথে একটাও কথা বলেনি সারাক্ষণ সাঁঝের সাথে কথা বলে গেছে। দোলা দেবীও নিজের বলা কথায় আর নিজের মেয়ের কাজে বিরক্ত হয়ে যায়। সারিফ একবার ওদের দেখে নিয়ে ভিতরে চলে যায়।

————–
বেলা বাইক নিয়ে মায়ানীড়ের ভিতরে ঢুকে যায় বাইক পার্কিং করে চারিদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। পুরো জায়গা অন্ধকার হয়ে আছে কিন্তু কেনো বাইরে তো গেটের কাছে লাইট জ্বলছে তাহলে ভিতরে লাইট জ্বলছে না কেনো সেটাই বুঝতে পারছে না বেলা। তাহলে ভিতরে কি কিছু প্রবলেম হয়েছে? সব কিছু ঠিক আছে তো? ভেবে বেলা চিন্তা বেড়ে যায়। বাড়ির ভিতরে ও কোনও আলোর চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছেনা বেলা আসতে আসতে বাড়ির ভিতরের দিকে পা বাড়ায়।

চলবে…..?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here