তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -১১

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১১.
ব্যস্ততম শহরের রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে সারি সারি গাড়ি তাদের গন্তব্যে। রাতের দিকে এখন হালকা শীত থাকলেও দিনের বেলায় কাটফাটা রোদ্দুরের তেজে সবাই কে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সূর্য্য তার তেজ এর মাধ্যমে সবার শরীরে ইমিউনিটি শুষে নিচ্ছে। গাড়ির মধ্যে বসে আছে বেলা আর তারপাশেই বসে ড্রাইভ করছে সাঁঝ। সাঁঝ ড্রাইভিংএর মাঝে মাঝে বেলার দিকে তাকালেও বেলা বাইরের দিকে মুখ করে বসে আছে। এসি চলছে তাই গাড়ির কাঁচ ওঠানো আছে নাহলে এতক্ষণ জানালার উপরে নিজের থুতনি রেখে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করত, তবে কাঁচ ওঠানো থাকায় সে জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। বেলা কিছুতেই সাঁঝের উপস্থিতি সহ্য করতে পারছেনা বেলা নিজেকে সব কিছুর থেকে নিজেকে কঠিন বানিয়ে রাখলেও এই একটা মানুষের কাছে সে বরাবরই দুর্বল। এই মানুষটার উপর সে বেশি রেগে থাকতে পারেনা আর না পারে অভিমান গুলো ধরে রাখতে, আর ঘৃণার কথাতো অনেক দূরে থাক। তবে সে তার অনেক দৃঢ় প্রচেষ্টার পর এতদিন সফল হয়েছিলো সাঁঝের থেকে দূরে থাকা নিজেকে কঠিন বানিয়ে রাখা নিজের মনের মধ্যে থাকা অনুভূতি গুলোকে তালা বদ্ধ করে রাখা কিন্তু আবারো সাঁঝ তার এতদিনের কঠিন রূপের খোলস টাকে আবারো টেনে খুলে ফেলতে তার জীবনে এসেছে।

আচ্ছা সত্যিকি বেলা নিজেকে সাঁঝের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলো! নাকি সাঁঝ বেলার থেকে দূরে সরে ছিলো! সাঁঝের প্রতি রাগ অভিমানের যে পাহাড় জমে আছে সেটা কি এমনি জমেছে নাকি সাঁঝই সেটা জমতে দিয়েছিলো বেলার মনে তার জন্যে !বেলার কথা মত সত্যিই কি সাঁঝ বেলার থেকে দূরে ছিলো নাকি দূরে থাকার রূপ দেখিয়েছিলো বেলাকে আসলেই সত্যিটা কি সেটাতো সময়ে বলবে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল।

বেলা বাইরের দিকে তাকিয়ে এতটাই নিজের চিন্তার মাঝে বিভোর ছিল যে বুঝতেই পারিনি কখন সাঁঝ তার এক হাত তার নিজের হাতের মুঠোতে নিয়েছে! বেলার হাত টেনে সাঁঝের নিজের ঠোঁটের গভীর স্পর্শ বুলিয়ে দিতেই বেলা চমকে উঠে পাশে ঘুরে তাকায়। অবাক চোখে সাঁঝের দিকে তাকাতেই দেখে তার হাত এখনও সাঁঝের ধরে রেখে তার ঠোঁটে ছুয়ে রেখেছে আর একটু পর পর স্পর্শ বুলিয়ে দিচ্ছে, আর অন্য হাত দিয়ে স্টেয়ারিং হুউল ঘুরিয়ে ড্রাইভ করছে দৃষ্টি সামনের দিকে রেখে। বেলা কিছুক্ষণের জন্যে থমকে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক করে কঠিন করে নেয়। সাঁঝের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে গেলে সাঁঝ আরো শক্ত করে চেপে তার ঠোঁটের সাথে ছুয়ে রাখে। সাঁঝের এই কাজে বেলা তপ্ত চোখে তাকায় কিন্তু এতে সাঁঝের কোনো হেলদোল নেই সে তার কাজে ব্যস্ত

বেলা নিজেকে সাঁঝের থেকে চেয়েও ছাড়িয়ে নিতে পারেনা তাই চুপচাপ জানালার দিকে ঘুরে বসে। তারা এখন সাইট ভিজিটে যাচ্ছে তাদের একসাথে প্রজেক্টের কাজের জন্যে এইখানে একটা ছোটো মিটিং আছে। বেলা নিজের বাইক নিয়েই যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সাঁঝ ইম্পোর্টেন্ট কিছু যেতে যেতে আলোচনা করবে বলে বেলাকে জোর করে নিজের গাড়িতে উঠিয়ে নেয় আর আকাশকে অন্য গাড়ি করে আগে পাঠিয়ে দেয়।

বেলার মাথায় ঘুরছে কিছু প্রশ্ন সাঁঝের কাজ কর্ম দেখে, প্রথমত কেনো সাঁঝ তার থেকে দূরত্ব করে নিয়েছিলো আর এখন কেনো আবার তাকে ফিরিয়ে নিতে চাইছে কেনো আবার নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করলো সে! এটাতে তো তারই ক্ষতি হলো কেনো সে তাদের বিয়েটা আইনত করলো! আর সেদিনের বলা সাঁঝের কথা গুলো কানে বাজতে থাকে কি বলতে চেয়েছিলো সাঁঝ কি বোঝাতে চেয়েছিলো তাকে! কি চাইছে সাঁঝ! তার কাছে কিছুই পরিষ্কার নয়, তবে পুরো বিষয়টা ঠান্ডা মাথায় ভাবলে কিছু একটা রহস্য খুঁজে পায় কিন্তু সেটা কি সেটাই বুঝতে পারেনা! যেমন আজকে সকালের ঘটনা টা নিয়েই তার মনে আরো গভীর ছাপ ফেলেছে, হুট করে দিশার মিটিং রুমে ঢুকে আসা আর তারপরেই সাঁঝের করা কাহিনি গুলো ভাবতে থাকে।

দিশার হুট করে রুমে আসতেই এমনিতেই সাঁঝ বিরক্তি হয়েছিলো আর তারপর আকাশের মুখের থেকে দিশা বলা কথা গুলো শোনার পর সাঁঝ ক্ষেপে যায় ভয়ংকর ভাবে দিশার উপর।

-“দিশা তোমার কি মনে হয় তুমি এই কোম্পানির বস! এই কোম্পানির বসের সাথে তোমার কেমন ধরণের গভীর সম্পর্ক আছে? বলো কেমন ধরণের সম্পর্ক আছে তোমার? সাঁঝ ভয়ংকর ঝাঁঝালো কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

সাঁঝের এমন কন্ঠস্বর শুনেই রুমে থাকা প্রত্যেকেই কেঁপে ওঠে, তবে বেলা নিজেকে শান্ত রেখে চুপচাপ সাঁঝকে পর্যবেক্ষন করছে। দিশা ভয়ে কিছুটা পিছনে সরে গিয়ে আমতা আমতা করে ওঠে কিছু বলার জন্যে কিন্তু সাঁঝের ভয়ংকর রাগী রূপ দেখে তার কণ্ঠনালী থেকে কোনও শব্দ বের হয়না।

-“তুমি শুধুমাত্র এই কোম্পানির একজন মডেল, আর আমি এই কোম্পানির বস আর বসের অ্যাসিস্ট্যান্টও কিন্তু তোমার থেকে উপর লেভেলে আছে তাই তার সাথে বেয়াদবি করার সাহস হয় কি করে তোমার? তুমি ওর চাকরি থাকবে কিনা সেটা নিয়ে হুমকি দিচ্ছো, একবারও কি এটা ভেবে দেখেছ এই কাজের জন্যে তোমার আর এই গ্রুপের সাথে কন্ট্রাক্টড থাকবে কিনা! আর তোমার সাথে আমার কিসের সম্পর্ক দিশা! আমি তোমার সাথে কোনো রিলেশনে আছি? তোমাকে কি কখনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছি নাকি কখনো তোমার ঘনিষ্ঠ হয়েছি? তাহলে তোমার সাথে আমার গভীর সম্পর্ক কি করে তৈরী হলো মিস দিশা? এই কোম্পানিতে তুমি শুধুমাত্র একজন মডেল এর বাইরে আর কিছুই নয়, আর যদি কোনো সম্পর্কের দোহায় দাও তাহলে বলতেই তুমি আমার সেইরকম সম্পর্কের কেউ হওনা। তাই দ্বিতীয়বার থেকে নিজের লিমিটের মধ্যে থাকবে, আর আমার সাথে নিজের সম্পর্ক নিয়ে সো অফ করার চেষ্টাও ভুলে করবে না, নাহলে তোমাকে এই কোম্পানী থেকে বাইরে বের করতে আমার এক মুহুর্তও সময় লাগবে না। নাও গেট আউট। সাঁঝ ধারালো কন্ঠে বলে ওঠে।

সাঁঝের প্রত্যেকটা কথা শুনেই বেলা কিছুটা কেঁপে ওঠে, সাঁঝের বলা কথা তাকে গোলক ধাঁধায় ফেলে দেয়, তার সব হিসেব গুলিয়ে যায়। সাঁঝের বলা কথা যদি মিথ্যে হতো তাহলে দিশা তার কথায় প্রতিবাদ করতো কিন্তু সে নিজেই ভয় পেয়ে গেছে সাঁঝের করা প্রতিটা প্রশ্নে তাহলে কি তার হিসেবে কি কোনো ভুল আছে! কিন্তু এটাও বা কি করে সম্ভব! বেলা বসে থেকে সাঁঝের মুখের দিকে তাকিয়ে এক মনে ভাবে। সাঁঝের ধমক খেয়ে দিশা রুম থেকে ছুটে বের হয়ে যায়। আর আকাশ তার বসের দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে পারে তার বসের সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে আজ এই মেয়ে নাহলে তার বস এত হাইপার হতো না দিশার উপরে।

বেলা সকালের এই ঘটনাটা নিয়েই ভাবছে তার মাথায় চলছে নানা ধরনের প্রশ্ন তবে যাইহোক না কেনো সে সাঁঝের উপরে থাকা তার রাগ অভিমান কিছুই কমতে দেবেনা। কিছুতেই না।বেলা নিজের কাছেই নিজেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। তবে বেলার নিজের কাছে করা এই প্রতিজ্ঞা কতক্ষণ যে টিকে থাকবে আর সাঁঝ যে কতক্ষণ বেলাকে টিকিয়ে রাখতে দেবে সেটাই দেখার।

সাইটে ভিজিটে আসার পরই বেলা সাঁঝ কাজের মধ্যে ডুবে যায়। বেলা তার সাথে করা সাঁঝের করা ব্যবহার ভুলে গিয়ে নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে নিয়েছে। তারা পুরোটা ঘুরে দেখে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে তাদের মিটিং এর জন্যে। হোটেলে এসে পৌঁছে তাদের জন্যে নির্ধারিত করা রুমে চলে যায় সেখানে আগের থেকেই আকাশ আর আর.এম বসে আছে বেলা আর সাঁঝ আসতে ওরা দাঁড়িয়ে পড়ে তবে আর.এমের চোখ আটকে যায় সাঁঝের পাশে দাঁড়ানো বেলার উপরে সে বেলাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করতে থাকে, আর. এমের বেলার উপরে এই নজর সাঁঝের এড়িয়ে যায়না আর বেলাও তার সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তির তাকানো বুঝতে পারে কেমন একটা ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বেলা চট করে তার পাশে ঘুরে তাকায় দেখে সাঁঝের চোখ মুখের রং পাল্টে গেছে হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে নিয়েছে চোখের দৃষ্টি কেমন রাগী হিংস্র হতে শুরু করেছে কপালের রগ ফুলে উঠেছে। সাঁঝের এমন রূপ দেখেই বেলা চমকে ওঠে, বলা যায় এক প্রকার আতকে ওঠে ভয়ে, সাঁঝের এমন ভয়ংকর রূপের সাথে বেলা পরিচিত আর সাথে সাঁঝের রাগের সাথেও। এরপরে যে এই রুমে কি ঘটতে চলেছে এটা ভেবেই ভয় পেয়ে যায় বেলা।

চলবে….?

।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here