#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৮.
বারান্দায় আলো আধারির মধ্যে বেলাকে কোলে নিয়ে বসে আছে সাঁঝ। মৃদু হাওয়ায় বেলার চুল উড়ে এসে সাঁঝের মুখের উপরে আছড়ে এতে তার মনে কোনো রকম বিরক্তি নেই বরং সে বেশ উপভোগ করছে এই মুহূর্তটাকে। বেলাকে কোলে বসিয়ে জড়িয়ে রেখেই ঘাড়ের এক পাশে মুখ গুঁজে রেখেছে এতে সে দুটোই অনুভূতি একসাথে অনুভব করতে পারবে এক বেলার শরীরের বিমোহিত করে দেওয়া ঘ্রাণ সাথে চুলের ঘ্রাণ আর তার মুখের আছড়ে পড়া পাহাড়ের গায়ে জলের আছড়ে পড়ার মত। বেলা কোনো কথা না বলে পাথরের মত করে চুপ করে সাঁঝের কোলে বসে আছে তার মুখে কোনো বিকার নেই চোখ দুটো অদূরে অন্ধকারে মধ্যে নিবন্ধ করে রেখেছে। তার মনের ভিতরে যে প্রশ্নের ঝড় উঠেছে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হাতড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোনো কুল কিনারা পাচ্ছেনা শুধু একের পর এক মিলিয়ে যাচ্ছে সাঁঝের সাথে হওয়া কয়েকদিন এর সব ঘটনা একদম ঠিক প্যাজেলের মত করে।
আর আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনায় বেলা আরো বেশি করে ঘেঁটে গেছে সাঁঝকে এখানে দেখা থেকে শুরু করে সবার ব্যবহার আর বিশেষ করে কিছুক্ষণ আগেই তার মামনি খাওয়ার দিয়ে যাওয়ার সময়ে যে কথা গুলো বলে গেলো সাঁঝ তার চলে যাওয়ার পরেরদিন থেকেই এখানে প্রতি সপ্তাহে এখানে থেকে যায় কিন্তু কেনো? বেলা সাঁঝকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলো সাঁঝ ওয়াশরুম থেকে ফেরার পর কিন্তু বেলাকে সেই মুহূর্তে একটা কথা বলতে না দিয়ে বেলার হাত টেনে পাশে বসিয়ে খাবারের প্লেট নিয়ে নিজে খেয়েছে সাথে তার মুখেও জোর করে দু তিনবার খাইয়ে দিয়েছে আর তারপরেই তাকে কোলে তুলে নিয়ে এই বারান্দায় এসে বসে সেই থেকে এখনও দুইজনের মধ্যে কোনো কথা হয়নি সাঁঝ বেলার মধ্যে মগ্ন হয়ে আছে আর বেলা দূরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে পাথরের মত হয়ে।
-“আপনি এখানে কি করছেন? বেলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাদের মধ্যেকার নীরবতা কাটিয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
তবে বেলা তাদের মধ্যেকার নীরবতা কাটিয়ে জিজ্ঞেস করলেও সাঁঝ এখনও সেই অবস্থায় চুপ করে রয়েছে বেলার প্রশ্নের কোনও উত্তর দেয়নি বরং বেলার প্রশ্ন শুনে সে আরো একটুও শক্ত করে তার সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে বেলার ঘাড়ে নিজের অধরের স্পর্শ বুলিয়ে দিতে থাকে সাঁঝের এই করতেই বেলা থেকে থেকে কেঁপে ওঠে শরীরের অনুরণন সরে হয় উত্তেজনায়, বেলা তার মধ্যে অনুভূত হওয়া অনুভূতি গুলোকে সাইটে রেখে নিজেকে সামলে শক্ত করে স্বাভাবিকের থেকে গম্ভীর হয়ে ওঠে।
-“আমার সাথে জড়িত মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখার মানে কি যেখানে আমার সাথে সব কিছুই একটা মিথ্যের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে? কেনো এইসব প্রহসন আরো কি কিছু বাকি আছে?বেলা গম্ভীর থেকে গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।
বেলার করা প্রশ্ন শুনেই সাঁঝের ঠোঁট থমকে যায় বেলার ঘাড়ে এক জায়গায় গাড়ো হয়ে চেপে বসে থাকে, সাঁঝের বুঝতে অসুবিধা হয়না বেলার মধ্যে হতে থাকে তুফানে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া।
-“কে বলেছে তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিলোনা! কে বলেছে আমি তোমার থেকে দূরে ছিলাম! আর কে বললো আমি সব কিছু প্রহসন করছি! আর সব কিছু মিথ্যার উপর ভিত্তি করে মানেকি! আমাদের বিয়েটা কি তুমি মিথ্যা বলতে পারো, তুমি কি এটা নিজে জোর দিয়ে বলতে পারবে যে তুমি নিজে এই বিয়েটা মানোনা, এই আমাকে মানোনা! বলো বলতে পারবে আছে তোমার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর? সাঁঝ শান্ত শীতল কন্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
সাঁঝের এমন শান্ত শীতল কন্ঠস্বর শুনে বেলা কেঁপে ওঠে, সাঁঝের করা প্রত্যেকটা প্রশ্নই তার ভিতরে নাড়িয়ে দিয়েছে। সাঁঝের প্রতিটা কথার ভার এত ছিল যে বেলার এখন দম বন্ধ হয়ে আসছে সত্যিতো সে নিজেই কখনই এই বিয়ে অস্বীকার করতে পারবে না আর না কখনো করেছে সে যতো মুখে বলুক সব কিছু তারপরেও সে মন থেকে এই বিয়েটা মানে আর সাঁঝ তাঁকে কিভাবে সে অস্বীকার করবে এই মানুষটা কে অস্বীকার করা মানেই নিজেকে অস্বীকার করা যে মানুষটার থেকে দূরে থেকেও যাকে সব সময়ে নিজের মনে রেখেছিলো যাকে এক সেকেন্ডের জন্যেও নিজের মন থেকে দূরে সরাতে পারিনি সেখানে কিভাবে অস্বীকার করবে সে এই মানুষটার থেকে দূরে ছিল ভুলে থাকার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু পারেনি সে। এখনও পর্যন্ত এই মানুষ তার কাছে আসলেই সে দুর্বল হয়ে পড়ে তার মধ্যে দেখা যায় মিশ্র অনুভূতি সেখানে অস্বীকার করার প্রশ্নই তো আসেনা তবে হ্যাঁ এগুলোর বাইরে যা আছে সেটা রাগ অভিমানের স্তূপ জমে আছে বেলার মনে সাঁঝের জন্যে তবে কখনো ঘৃণা করিনি আর না অস্বীকার।
সাঁঝ বেলার চুপ থাকা দেখেই বুঝতে পারে তার প্রশ্ন শুনেই বেলার বিশাল তুফান চলছে মেয়েটা নিজেকেই প্রশ্ন বিদ্ধ করে যাচ্ছে তাই সাঁঝ বেলাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে।
-“আমি জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্নের ঝড় উঠেছে তবে সব উত্তর তুমি পাবে। তবে এটা জেনে রাখো তোমার আমার বিয়ে কখনই মিথ্যে ছিলোনা আমি মন থেকেই তোমাকে বিয়ে করেছিলাম নিজের স্ত্রী মানি তখন আমাদের ধর্ম মতে বিয়ে হয়েছিলো তবে তোমার বয়স তাছাড়াও এমন কিছু কারণ ছিলো যার আমাদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি আমি শুধু অপেক্ষায় ছিলাম সঠিক সময়ের আর এতদিন আমি কখনই তোমাকে নিজের চোখের আড়াল করিনি দূর থেকেই আমি তোমাকে চোখে চোখে রেখেছিলাম তোমার প্রত্যেকটা গতিবিধির উপরে আমার নজর ছিল। তোমার মনে হতে পারে আমি তোমার থেকে দূরে ছিলাম তোমাকে না চেনার ভান করতাম কিন্তু দেখতে গেলে আমি পাঁচটা বছর তোমার থেকেও এক বিন্দুর জন্যেও দূরে যায়নি হতে পারে সশরীরে তোমার সাথে ছিলাম না কিন্তু প্রতি মুহূর্তে তুমি নজরবন্দিতে ছিলে তোমার প্রত্যেকটা বিষয়ের উপরে আমার নজর থাকতো।
আমি তোমাকে শুধু দূরে রেখেছিলাম কিন্তু তোমাকে দৃষ্টির বাইরে করিনি আর না মনের বাইরে করেছিলাম। তুমি গোয়া যাওয়ার পরই আমি এখানে আসি নিজেই নানিমার সাথে আমাদের বিয়ের বিষয়ে জানিয়ে দেই তোমার অনুপস্থিতে আমি তোমার হয়ে সমস্তটা খেয়াল রেখেছি কারণ আমি কখনই চায়নি যে তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমার কাছের মানুষ গুলো কষ্ট পাক তোমার জন্যে কোনো অসুবিধায় পড়ুক আর তাছাড়াও ওরা তোমার মানে আমারও কাছের তাই ওদের সাথে বাকি সময়টা কাটিয়ে যেতাম আর নানিমার খেয়াল রাখতাম যাতে তোমার অনুপস্থিতর জন্যে নানিমা কষ্ট না পাক।
আমি কখনই তোমাকে নিয়ে প্রহসন করিনি করার প্রশ্নই আসেনা যাকে হৃদয়ে জায়গা দিয়েছি তাকে নিয়ে প্রহসন করার স্পর্ধা নেই আমার।
তোমার মনে আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে সাথে এটাও জানি আমাকে অনেক অভিমান জমেছে সাথে আমাদের মাঝে গভীর সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগেই সবকিছু থমকে গেছে আর তারপরেই তোমার মনে জমেছে মেঘ সাথে এটাও মনে হয়েছে সব কিছু মিথ্যে আমাদের মধ্যে যা ছিল সব মিথ্যে আমাদের মাঝের দূরত্ব পাঁচটা বছর আমরা দূরে ছিলাম তোমার মনে হয়েছে আমি তোমাকে ভুলে ছিলাম তাই একটু একটু করে তুমিও আমাকে ভুল বুঝলে আর এখনও সেই প্রশ্ন তোমার মনে আমি আবার এতগুলো বছর পর কেনো তোমার জীবনে ফিরে এসেছি কেনো তোমাকে আবার আমার মায়ায় জড়িয়ে নিচ্ছি তোমার মনে পড়ে সেই দিনের কথা যেদিন শুরু হয়েছিলো আমাদের মধ্যেকার দূরত্বের সৃষ্টি? কিন্তু তুমি কি বলতে পারবে তুমি যে কারণে আমার দূরত্ব করে নিয়েছিলে সেটা মন থেকে মানো? সাঁঝ শীতল গলায় বলে ওঠে।
সাঁঝের বলা এক একটা কথা বেলার মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করে অস্থির হয়ে ওঠে দম আটকে আসছে তার এই কয়েকদিন তার সাথে ঘটা ঘটনা গুলো হিসাব মেলাতে গিয়েও উদ্ধার করতে পারিনি কিছু তবে আজ সাঁঝের মুখের থেকে বলা কথা গুলো শুনেই তার সব কিছু তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে বেলা একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছে।
চলবে….?
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।