আধারের মায়াবী ডাক পর্ব -০৪

#আধারের_মায়াবী_ডাক
#লেখক_তুষার_আহমেদ_কাব্য
#পর্ব_৪ (কে সে?)

:এই খুনের ব্যাপারে কেউ কিছু জানে?(তামিম)

সবাই এক এক করে বলতে থাকে যে সবাই কাল রাতে পি পি শব্দ শুনেছে!
তামিম বিরক্ত হয়ে যায়।

:তামিম!দেখ!(তুষার)
তামিম কাছে যায়,তুষার তাকে হাতের ইশারায় গাছের ডাল দেখায়। গাছের ডালে একটা নখের আচড়।

:প্রানীটার!(তামিম)

:এটা আদৌ কোনো প্রানী?(তুষার)

:একটা কাজ করি আমরা শহরে গিয়ে নাদিয়া কে নিয়ে আসি।

:আমরা ফিরতে ৪দিন লাগবে। ততদিনে এদের কি হবে

….
তামিম গ্রামের চারদিকে বেড়ার ব্যবস্থা করে।আর ইলেকট্রনিক ওয়ার লাগিয়ে দেয় যাতে কোনো প্রানী না আসতে পারে।

তুষার তারিন কে নিয়ে যায়,সে কোনো ভাবেই তাকে এখানে রাখবে না!

কেটে যায় ৪দিন

শহর থেকে নাদিয়া সহ গ্রামে পা রাখতেই সবাই হাজির!সবার মুখ শুকনো।

:স্যার ৪দিনে ১২ জন মারা গেছে(গ্রাম প্রধান)

তামিম আর বাকিরা চমকে উঠে! মাত্র ৪ দিনে ১২জন।

নিজেকে শক্ত রেখে নাদিয়া কে নিয়ে গাছটির কাছে যায়।নাদিয়া নখের ছাপ আর সবার কথা শুনেই বলে উঠে

:এটা কোনো প্রানী না!আত্না

:what nonsense Nadia (তুষার)

:আমি ঠিক বলছি। বিশ্বাস না হলে আজ রাতেই দেখাবো!

রাত ১১ টা। গাছটার সামনে বিশাল আগুন জ্বালানো হয়। তার থেকে ১০০মিটার দূরে দাড়িয়ে আছে গ্রামবাসী আর তামিম তুষার নাদিয়া।

নাদিয়া কি যেন বিড়বিড় করছে। আকাশ কালো হয়ে আসছে
পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে যায়! হঠাৎ সবার কানে আসে পি পি শব্দ! তখন আর কোনো শব্দ আসছে না,শুধু পি পি।

সবাই এদিকওদিক তাকাতে শুরু করে। তখনই নাদিয়া গাছটার দিকে ইশারা করে

গাছটার উপর থেকে সেই প্রানীটা উলটো হয়ে নেমে আসছে।কি ভয়ানক সে। শরীর লালচে মাংস দিয়ে ঢাকা।রক্তাক্ত।

নেমে গ্রামবাসীর দিকে আসতে থাকে।
তখনই তুষার ব্যাগ থেকে ২টো তলোয়ার বের করে তামিম কে একটা দেয়।দুজন দৌড়ে প্রানীটার সমানে যায়।

কিন্তু চোখের পলকেই প্রানীটা তুষার আর তামিমের কাছে এসে দুজনের চোখে চোখ রাখে…

তামিম দেখতে পায় তার ভালোবাসার মানুষ গুলো এক এক করে মারা যাচ্ছে।তামিম চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু সে নড়তে চড়তে পারছে না

অন্যদিকে তুষার দেখে তার ঠিক সামনে দাড়িয়ে আছে সে নিজে! কিন্তু এটা সে না,এটা কাব্য!কিন্তু সে ফিরলো কিভাবে! কাব্যের হাতেই সেই তলোয়ার,যা দিয়ে নিধিকে মেরে ফেলা হয়েছে।

তুষার তামিম দুজনেই দাড়িয়ে দুঃস্বপ্নের মধ্যে ফেসে যায়।

প্রানীটা এবার গ্রামের সবার দিকে তাকিয়ে একটা ভয়ানক হাসি দেয়। অন্যদিকে আগুন নিভে গেছে।পরিবেশ আরো ভয়ানক হয়ে উঠে।

নাদিয়া বিড়বিড় করতে করতে করতে পড়ে যায়। গ্রামের সবাই পালাতে শুরু করে। তারিন নাদিয়া কে উঠাতে চেস্টা করেও পারছে না।ঠিক তখনই প্রানীটা অসম্ভব গতি তে তারিনের মুখের সামনে এসে চোখের দিকে তাকায়। তারিনের সামনে ভেসে উঠে একটা দৃশ্য….

সদ্য জন্মানো বাচ্চা মেয়ে কে কোলে নিয়ে বাবা হেসে বলেন’আমার মেয়ে! সবাই দেখো আমার মেয়ে!
বলে সবাই কে দেখাতে থাকে।কৃষকের ঘরে মেয়ে হয়েছে। বাবার আনন্দের শেষ নেই।
মেয়ে জন্মানোর পরই মা মারা যায়। তাই কৃষক রহিমের দুনিয়ায় মেয়েই আছে।

সারাদিন মাঠে খাটা খাটনি করেও মেয়েকে আদরের অভাব বুঝতে দেন না।

এভাবেই তার দিন কাটছিলো।

কেটে যায় ৮ বছর। মেয়ে এখন ৮বছরের। তার একটি মিস্টি নাম ও আছে। সুখি। বাবা আদর করে নাম দিয়েছে। সুখির বয়স ৮হলেও তাকে দেখে মনে হয় ১২-১৩।

রোজ বাবাকে ক্ষেতে খাবার দিয়ে সারাদিন ঘুরে খেলা করাই সুখির কাজ।

এক রাতে

:আচ্ছা বাবা কস্ট কি?(সুখি)
মেয়ের মুখি এমন কথা শুনে অবাক হন নি রহিম। কারন এই শব্দ থেকে মেয়েকে অনেক দুরেই রেখে এসেছেন তিনি

:মা যদি ব্যাথা হয়, খারাপ লাগে সেটাই কস্ট!

:ওও

:হুম

রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সুখি।তবে হ্যাঁ ঘুমানোর জন্য রহিম কে একট বিশেষ গান গাইতেই হবে।নাহলে ঘুমাবে না।


কিছুদিন পর।

রহিমের বাসায় জমিদার সাদেক আসে। রহিমের কাছে সে কিছু টাকা পাবে।তবে সেদিন রহিম এতো টাকা দিতে পারেনা। তাই সাদেক তাকে ১ সাপ্তাহ এর সময় দেয়। আর সাদেক বার বার সুখির দিকে নোংরা ভাবে তাকাচ্ছিলো।

পরেরদিন রহিম ক্ষেতে কাজ করছে। হঠাৎ শোনে পি পি শব্দ। ঘুরে তাকিয়ে দেখে সুখি দাঁড়িয়ে আছে। দুহাত পেছনে

:কিরে মা কিছু বলবি?

:বাবা তোমার থেকে না ওই লোক টা টাকা পাবে।

বলেই হাত সামনে আনে।হাতে অনেক খুচরো টাকা।

:এই টাকা কই পেলি?

:বাবা! তুমিই তো রোজ আমাকে কিছু টাকা দাও।সেগুলোই জমিয়েছিলাম…

:কি জন্যে

:কিছু না

:বল

:তোমার জন্য জামা কিনতে।

মেয়ের কথা শুনে চোখে পানি চলে আসে রহিমের। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেন।

১সাপ্তাহ পেরিয়ে যায়।

সে রাতে সাদেক আসে বাসায়।টাকা তখনও রহিমের কাছে। কারন ফসল বিক্রি হয়নি।সে আরো সময় চায়।
কিন্তু সাদেকের নজর অন্যদিকে ছিলো।
সে কথায় কথায় বিশাল ঝগড়া বিবাদ শুরু করে। এক সময় তা চরম পর্যায়ে চলে যায়। রহিম কে মারধর করা শুরু করে।
তখনই সুখি সাদেকের পা জড়িয়ে ধরে।

:বাবা কে ছেড়ে দেন।(সুখি)

সাদেকের চোখ চমকে উঠে! সুখির হাত ধরে টেনে উঠানে নিয়ে যায়। বাইরে মানুষের ভীড়। কিন্তু কারো সাহস নেই কিছু বলার। রহিম কে টেনে হিচড়ে বাইরে আনা হয়।

সাদেক সুখি কে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে সবার সামনে সুখির জামা কাপড় খুলে নেয়। গ্রামের সবাই নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।সাদেক জোর করে সুখির দেহো ভোগ করা শুরু করে।

সুখি চিৎকার দিয়ে উঠে, তার চিতকারে গ্রাম কেপে উঠে। সুখি চিৎকার দিয়ে কাদতে থাকে।

:বাবা!!!! বাবা আমাকে বাচাও বাবা(সুখি)

সাদেক সুখির গলা চেপে ধরে

রহিম নিজের সব জোর দিয়েই ছুটতে পারছে না

:বাবা বাবা বাবা আমার কস্ট হচ্ছে বাবা!!!

মেয়ের মুখে প্রথম বার কস্টের কথা শুনে রহিম আর ঠিক থাকতে পারে না।

:বাবা তোমার পায়ে পড়ি আমায় বাচাও।আমার কস্ট হচ্ছে।। বাবা বাবা(সুখি)

এভাবে ২০মিনিট তান্ডব চালানোর পর রক্তাক্ত সুখিকে ভোগ করে সাদেক উঠে লোকজন নিয়ে চলে যায়।

গ্রামবাসিরাও চলে যায়।

রহিম দৌড়ে এসে মেয়ের মাথা কোলে নেয়।

:বাবা আমার কস্ট হচ্ছে বাবা(সুখি)।

:মা তোমার কিছু হবে না

:আমার চোখ বন্ধ হচ্ছে কেন বাবা।আমার ঘুম পাচ্ছে বাবা(কেদে কেদে) আমি চোখ খুলে রাখতে পারছি না

:মা তোমার কিছু হবে না।

:বাবা ঘুম পাড়ানোর গান টা শোনাও না

রহিম কাদতে কাদতে গান টা গাইতে গাইতে। সুখি চোখ বন্ধ করে। চোখের কোনে পানি জমে আছে

গান শেষ করে মেয়ে কে মাটি তে রেখে রহিম উন্মাদের মতো কাদতে থাকে।

:সাদেক(চিৎকার)

রহিম ছুটতে থাকে সাদেকের বাড়ির দিকে।

সাদেক দূর থেকে তাকে দেখেই তার এক খাস লোকের হাতে একটা তলোয়ার দিয়ে বলে রহিম কে শেষ করতে।

সে গিয়েই রহিমের পেটে তলোয়ার ঢুকিয়ে দেয়।রহিম তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে সাদেকের দিকে তাকায়

সাদেক ভয় পেয়ে যায়। তলোয়ার পেটে নিতেও রহিম দাঁড়িয়ে

রহিম নিজের পেট থেকে তলোয়ার টান দিয়ে বের করে মাটিতে গেড়ে দেয়।

:এইখানেই তোর সমাপ্তি হবে।এইখানেই তোর আর এই গ্রামের সবার সমাপ্তি হবে।কেউ বাচবে না। কেউ না।উপরে একজন আছেন তিনি এইসব মেনে নেবেন না।তোরা সবাই মরবি

বলেই রহিম ছুটে মেয়ের কাছে যায়। গিয়েই পড়ে যায় আর মারা যায়।

তারপর সাদেক দুজনের দেহ আবর্জনার স্তুপে ফেলে দেয়।


হঠাৎ তারিন সব ধোয়া দেখতে থাকে আর জ্ঞান হারায়।

চলবে…

#আধারের_মায়াবী_ডাক
#লেখক_তুষার_আহমেদ_কাব্য

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here