#সে_জানে
#Part_3
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
দরজার বাহিরে কারো ভিতরে আগমনের শব্দে নুপুর নেড়েচেড়ে বসে। ভিতরে শুকিয়ে যাচ্ছে তার। দিবস আসছে হয়তো। কিছু পরিস্থিতিতে হয়তো এমনি হয়। তবে সামলে নেবার ক্ষমতা সবার থাকে না। হুংকার দিয়ে যে ভয় দরজায় এসে উপস্থিত হয় তার জবাব সবাই দিয়ে পারেনা। আজকে দিবসও হয়তো অনেক প্রশ্নবিদ্ধ করবে নুপুরকে। তার হুংকারে হয়তো কেঁপে উঠবে ঘর, কিন্তু কি জবাব দেবে নুপুর দিবস কে? তার কাছে তো কোন প্রশ্নেরই উত্তর নেই৷
দিবস ভেতরে এসেই বিকট আওয়াজ করে দরজা লাগিয়ে দিলো৷ হঠাৎ আওয়াজে নুপুর একটু ভয় পেয়ে যায়। দিবস হাতের মোবাইলটা টেবিলে ছুড়ে মারে। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে,
‘ তোমার এক্সের সম্পর্কে আগে কিছু বলোনি কেন?
নুপুর চুপ করে মাথা নিচু করেই বসে আছে। যার ভয় পাচ্ছিলো তাই হচ্ছে। নুপুর বুঝতে প পেরেছিলো এসব কথার সম্মুখীন হতে হবে তাকে। একবার নয় বহুবার। তার এই অতীত তাকে পিছু ছাড়বে না। তাকে চুপসে ধরবে যতই সে পালাতে যাক না কেন অতীত থেকে। তাজা ঘাঁ হয়ে বেতের মতোই পড়বে তার আগামী জীবনে।
এখন কিছু বললে সেটা লেইম দেখাবে, তাছাড়া আর কিছুই না। তাই চুপ হয়ে বসে থাকাই শ্রেয় মনে করলো।
নুপুরকে চুপ থাকতে দেখে দিবস আবার
‘ আগে বললে অযথা এসব হাঙ্গামা হতো না। শুধু শুধু দু পরিবারকেই অপমানিত হতে হয়েছে। আর তোমার এক্স তো ভীষণ বজ্জাত। সব শেষ হয়ে যাবার পরও তোমার পিছু ছাড়ছে না। লাভ মেরেজ ছিলো?
নুপুরের ভিতরে সব তচনচ হয়ে যাচ্ছে। এই লোকটার কথা মনে পড়লেই সব এমন তচনচ হয়ে যায়। কান্না আসে ভীষণ রকমের। নুপুর ভাবতে চায়না ওসব কিন্তু পরিস্থিতি আর মানুষের জন্য তা আর হচ্ছে না। বার বার তাকে সেই জায়গায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়।
দিবস ভ্রু কুঁচকে
‘ কি হলো কথা বলছো না যে?
এবার নুপুর ঘুমটা তুলে মুখটা উঁচু করে সাহস করে কথা বলার চেষ্টা করলো
‘ আসলে আপনার আব্বু জানতেন বিয়ের কথা। আমি আপনাকে বলার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু উনি বারণ করায় আর আমি বলতে পারিনি।
দিবস একটু হাসলো নুপুরের চোখ এড়ালো না সেই হাসি। এতো সুন্দর করে কেউ কি ভাবে হাসতে পারে। না চাওয়া সত্ত্বেও অবাধ্য চোখ তাকিয়ে রইলো দিবসের দিকে।
দিবস তোয়ালেটা একটা চেয়ারে রেখে খাটের এক সাইডে এসে বসে,
‘ তুমি জানো আমার বাবা এমনই। উনি আমায় ভালো দেখতে চায়। তাই এমনটা করেছে। আমি বার বার বলেছিলাম আর কখনো বিয়ে করবো না। কিন্তু উনি হাল ছাড়েনি। আমার জন্য নাকি খুব ভালো মেয়ে খুঁজে বের করবে। তোমায় পেয়ে মনে করেছিলো হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গিয়েছে উনি । আমার আব্বুকে বাঁচানোর জন্য আর আব্বুর জোরাজুরিতে বিয়ে করেছি তোমায়। না দেখেই বিয়েতে মত দিয়েছিলাম শুধু আব্বুর জন্যই। ভালোবাসা, বিশ্বাস, বিয়ে এসব থেকেই বিশ্বাস উঠে গিয়েছে আমার। তাই আমার কাছ থেকে কিছু আশা করবে না আশা করি।
নুপুর অবাক হচ্ছে, যে কথা গুলো তার বলার কথা ছিলো সেই কথা গুলো সামনে থাকা মানুষটা বলছে। কিন্তু উনি কেন বলবে উনার তো ডিভোর্স হয়নি। নুপুর সংকোচ কাটিয়ে
‘ আপনারও কি আগে বিয়ে হয়েছিলো?
দিবস হো হো হো করে হেসে উঠলো। হাসিটা ভীষণ সুন্দর হলেও এইবার নুপুর বিরক্ত হলো। এতে হাসির কি আছে? আর কি এমন বললো যে এই ভাবে হাসতে হবে উনাকে!
নুপুর বিরক্তি নিয়েই চুপ করে রইলো। দিবস কিছুক্ষণ হেসে চুপ করে মুখ ভার করে ফেলেছে। নুপুর এবার বিষ্মিত হলো। এই মাত্রই হাসছিলো এখন আবার মুখ এমন গোমড়া করে ফেললো কেন! পাগল টাগল নাকি লোকটা!
নুপুর মাথা নিচু করে
‘ সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি।
দিবস এবার মুচকি হেসে
‘ নাহ আমি আগে বিয়ে করিনি। তবে তোমার বৈধ ভাবে ডিভোর্স হয়েছে, আর আমার অবৈধ ভাবে।
নুপুরের চোখ গুলো সাধারণের চেয়ে একটু বড় হলো। অবাক হয়ে
‘ মানে?
দিবস আবার জোরে হো হো করে হাসি জুড়ে দেয়। নুপুর এখনো তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। উত্তরের অপেক্ষা করছে । কি বলছে এই গুলো বুঝতে পারছে না সে।
দিবস হাসি থামিয়ে মুখটা কঠিন করে
‘ যেই সম্পর্ক বৈধতা পাওয়ার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে তাকে আর কি বলবো বলো? তাকে বিয়ের জন্য অনেক অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তখন নাকি সে বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। যখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত হলো তখন আমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে আরেকজনকে বিয়ে করে নিলো। তাই আমি এটাকে ব্রেকআপ নাম না দিয়ে অবৈধ ডিভোর্স নাম দিলাম।
নুপুর অবাক হচ্ছে প্রচন্ডরকম। এরকম একজনকে মানুষ কি ভাবে ছেড়ে যেতে পারে কেউ। কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে। কি সুন্দর কথা বলার ভঙ্গিমা। যুক্তিও দিতে পারে বেশ। সত্যিই তো মানুষ যদি বিয়ে ছাড়া প্রেম নামক অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে পারে। আবার ছাড়াছাড়িও হয়ে যায় তখন তাকে তো অবৈধ ডিভোর্সও বলা যেতে পারে৷ যেমনটা বৈধ সম্পর্কে ডিভোর্স বলে।
নুপুরের ভয় অনেকটা কেটে গিয়েছে। মানুষটাকে তার খারাপ মনে হচ্ছে না। দুজনের মাঝে অন্তত কমন কিছু আছে যে, দুজনেই ভালোবাসার মানুষের কাছে ধোকা খেয়েছে।
নুপুর আকাশচুম্বী ভাবনায় তলিয়ে যাচ্ছিলো এর মাঝেই দিবস,
‘ তুমি তালাকপ্রাপ্ত হয়ে থাকো বা অন্য কিছু তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কারণ আমার মাঝে আর অন্য কারো বসবাসের জায়গা নেই। তুমি এখানে নিরাপদে থাকতে পারবে।
নুপুরও স্পষ্ট ভাষায়
‘ ভালোবাসায় বিশ্বাস আমারও নেই। মানুষ বার বার একি ভুল করে না।
দিবস আবার হো হো করে হেসে উঠতে নুপুর বিরক্তি নিয়ে
‘ এতো হাসির কি আছে এখানে?
দিবস হাসি চেপে
‘ ভালোবাসা হচ্ছে লবণের মতো। লবণ যেমন তরকারিতে অতিরিক্ত দিলে মানুষ তা মুখে তুলে না৷ তেমন ভালোবাসাও বেশি দিলে তার কদর বুঝে না। আসলে মানুষ অতিরিক্ত সহ্য করতে পারেনা। অতিরিক্ত পেয়ে গেলে তা বমি করে ফেলে দিতে চায়। তাই সবাইকে তার নিজ নিজ জায়গায় রেখে ভালোবাসা-ই শ্রেয়।
নুপুর মুগ্ধতা নিয়ে নিয়ে শুনছে দিবসের কথা৷ সাবলীলভাবে কত সুন্দর করে কথা গুলো বলছে। সব গুলো কথাই সত্যি। মানুষকে আসলে অতিরিক্ত বেশি দিতে নেই কিছুই ভালোবাসা হোক বা অবহেলা।
দিবস উঠে বিছানার এক পাশ থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো
‘ যাও ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়। আমরা কিন্তু একি বিছানায় ঘুমাবো, গল্প কিংবা সিনেমার মতো আলাদা ঘুমাতে পারবো না। এটা বাস্তব জীবন। আর আমি জানি তুমিও একই ভাবে আমার প্রতি দূর্বল নও৷ তাই সমস্যা নেই। আমি বাম সাইডে শুয়ে পড়ছি তুমি ওই সাইডে শুয়ে যেও।
নুপুর আর কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়৷ কেন যেন অনেকটা হাল্কা লাগছে এখন তাঁর। ভিতরে ভিতিরে যেই ভয় পেয়েছিলো তাও কমে গিয়েছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কিনা এক মাত্র উপরওয়ালা জানে।
নুপুর ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে এক সাইডে। দিবস কি ঘুমিয়েছে নাকি ঘুমের ভান ধরছে বুঝতে পারছে না। নুপুরের অতীত নিয়ে আর কিছু জানতে চায়নি দিবস। আর জেনেই বা কি হবে যেখানে নুপুর কিংবা দিবস কারোরই কারো প্রতি কোন চাওয়া নেই। বিশ্বাস নেই। ভালোবাসা তো অনেকটা দূরে।
সকালে
ঝিরিঝিরি বাতাস আর লোকজনের পায়ের শব্দে ঘুম ভাঙে নুপুরের। নিভু নিভু করে চোখ খুলতেই নিজেকে আবিষ্কার করে দিবসের বুকে। নুপুর নিজের ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চোখ গুলো মারবেলের মতো বড় করে ফেলে। আর মনে মনে
‘ এই লোকের বুকে আমি করছি!!……..
চলবে……..
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।