সে জানে পর্ব -০২

#সে_জানে
#Part_2
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha

ধুলোর কণার মতোই সব অনুভূতি ভেসে বেড়াচ্ছে। স্থির মস্তিষ্কে অস্থিরতা বেড়ে ক্রমান্বয়ে ভিতরে ভয় সৃষ্টি করছে। সাথে এক না পাওয়ার অতৃপ্তি হৃদয়। যেখানে আজ অব্দি কোন হিসাব মিলাতে পারেনি নুপুর।

এতো বড় মিথ্যা দিয়ে যে সম্পর্ক শুরু হতে যাচ্ছে সেই সম্পর্ক কি আজীবন টিকবে? এই সম্পর্কের ভার কি আজীবন টানতে পারবে নুপুর? নাকি ভীষণ ভালোবেসে যে সম্পর্কের ডোর বেধেছিল সে, যে সম্পর্কে আস্থার ভারী অস্থিত্বর প্রলেপ থাকা সত্ত্বেও ভেঙে গিয়েছিলো সেই সম্পর্কের মতোই কি ভেঙে যাবে? তবে ভাঙার আর ভয় নেই যে নুপুরের। এর থেকে বেশি আর কি বা ভাঙতে পারে! এর চেয়ে বেশি আর ভাঙা যায় না।

দিবস আর নুপুরকে এক সাথে বসিয়ে বিয়ে পড়ানো হলো৷ দিবসের মুখে হাসির কোন রেখা নেই। তার পুরো অবয়ব জুড়ে যেন রাগ। নুপুর ভয়ে আর লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। সব রীতি রেওয়াজ পালন করে নুপুর আর দিবস গাড়িতে উঠে যায়। নুপুরের মা কান্না করছে। মেয়ে বিয়ে করে পরের বাড়ি যাওয়ার সময় সব মায়েরাই কান্না করে৷ গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। বর পক্ষের মেহমানরা ও বেরিয়ে পড়ে আর কিছু মেহমান আগেই চলে যায়। দিবসের মা খালেদা আক্তার বিয়ের আগেই চলে গিয়েছে বাসায় । তার সম্পুর্ণ অমতেই বিয়েটা হয়েছে তাই হয়তো।

দিবসের মুখে আকাশের সব কালো মেঘ যেন জড় হয়ে আছে। নুপুর ঠিক আছে কিনা একবারের জন্যও জিজ্ঞেস করেনি সে। বাহিরে তাকিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অদ্ভুত তম কিছু দেখছে মনে হচ্ছে। আর তাই অন্য কিছুর তার খেয়াল নেই।
নুপুরের চোখ দিয়ে কেন যেন খুব বেশি পানি বের হয়নি এবার। না এখনও বের হচ্ছে না। দ্বিতীয় বার বিয়েতে হয়তো এমনি হয়। দ্বিধা,ভয় সংকোচ সাথে হাজার হাজার টন অস্বস্থি। দ্বিতীয় বার বউ সাজতেও হয়তো মেয়েরা
কোন আনন্দ খুঁজে পায়না। কেমন অনুভুতি শূন্য হয়ে পড়েছে নুপুর।

অনেকটা পথ পাড়ি দেবার পর সুবিশাল এক বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামে তাদের। নুপুর জড়তা নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই তাদের পিছনেও অনেক গুলো গাড়ি এসে থামে। পিছনের একটা গাড়ি থেকে নেমে দিবসের বাবা জীবন চৌধুরী এগিয়ে আসে নুপুর আর দিবসের দিকে। দিবস নুপুরকে এখানে ফেলে রেখে একাই ভিতরে প্রবেশ করে। নুপুর হতভম্ব হয়ে দিবসের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

জীবন চৌধুরী বেশ বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নুপুরের কাছে এসে দাঁড়ায়। নিজের কাজের জন্য মনে হচ্ছে তিনি লজ্জিত এমন ভঙ্গিমা নিয়ে নুপুরের কাধে হাত দিয়ে
‘ নুপুর মা তুমি কিছু মনে করো না দিবসের ব্যাবহারে। ওর মনটা খুব ভালো। ও আগে কিছুই জানতো না তাই একটু হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

নুপুর নিজের শাড়ির একটু কাপড় খামচে ধরে
‘ এটা ঠিক হয়নি বাবা উনার সাথে। উনাকে ঠকানো হয়েছে এভাবে। উনি আরো অনেক ভালো মেয়ে পেতো। আমি হয়তো উনার জীবনে কোন কালো অধ্যায় হয়ে চলে এলাম। মামা, মামি বা মায়ের কথা আমি তোয়াক্কা করতাম না, তাদের কথা উপেক্ষা করে হলেও আমি উনাকে সব কিছু খুলে বলতাম শুধু আপনার কথার জন্য আমি উনাকে কিছু বলিনি। আপনার কথা রাখতে গিয়ে আমি উনাকে আমার অন্ধকার জীবনে দাওয়াত দিয়ে দিলাম।

জীবন চৌধুরী নুপুরের কথায় সায় না দিয়ে
‘ তুমি আমার ছেলেকে অন্ধকার পথে দাওয়াত দেওনি মা। তুমি আমার ছেলেকে আলোর পথে নিয়ে ভালো রাখবে,আমি জানি মা আমার সেই বিশ্বাস নিয়েই আজ এতো কিছু৷

নুপুর কোন জবাব দিলো না জীবন চৌধুরীর কথায়, নিরবে পা বাড়িয়ে দিলো অচেনা রাজ্যে। সেখানে তার জন্য কি আছে জানে না সে। কিন্তু একজন আছে তাকে ভরসা করে। সেই ভরসা রাখতে পারবে কি নুপুর?

নুপুরকে বরণ করার জন্য তার শাশুড়ি এগিয়ে আসেনি। তিনি নাকি ভিতরে তার রুম শুয়ে আছে। তার আদরের সন্তানকে এমন মেয়েকে বিয়ে করানোর জন্য শোকে কাতর হয়ে পড়ে আছেন তিনি। নুপুরকে বরণ করতে তার খালা শাশুড়ি আর চাচি শাশুড়ি এগিয়ে আসে। ভিতরে পা রাখতেই অদ্ভুত রকম অবাক হয় নুপুর যেমন ভেবেছিলো তার থেকে অনেক বড় বাড়িটা। বাহিরে থেকে যেমন ভেবেছিলো তার থেকে কয়েকগুণ বেশি সুন্দর বাড়ি৷ কিন্তু চারপাশে চোখ না বুলিয়ে নুপুর মাথা নিচু করেই ভিতরে যায়।

নুপুরকেবড্রয়িংরুমে তাকে বসানো হয়েছে। অনেকেই দেখতে এসেছে নুপুরকে। সবাই বলছে ‘ বউ তো মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর। আবার যখন শুনছে মেয়ের আগে আরেকটা বিয়ে হয়েছিলো ডিভোর্স হয়েছে তখনি মুখ কালো করে ফেলছে। অনেকজন আবার কানাঘুষা করছে। অনেকে আবার চলে যাচ্ছে।
নুপুরের পাশে স্থির হয়ে শুধু বসে আছে নুপুরের একমাত্র ননদ দিশা। সেও দেখেতে অনেক সুন্দর তার ভাইয়ের মতোই। দিবসের সম্পুর্ণ চেহারা যেন তার মুখে কেউ মাখিয়ে রেখেছে। নুপুর একটু পর পর উকি দিয়ে দিশাকে দেখছে।

সব ঝামেলা মিটিয়ে নুপুরকে যখন দিবসের ঘরে রাখা হয়েছে ঠিক তখনি নুপুরের বুক চিরে যেন কান্না বেরিয়ে আসছে। কান্না করছে নুপুর। ভিতরে সব দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। এই ভাবে দ্বিতীয় বার কারো জন্য বাসর ঘরে বসে সে অপেক্ষা করবে কল্পনাও করেনি। প্রথম বার যে ভালো লাগা নিয়ে অপেক্ষা করেছিলো তার ভালোবাসার মানুষের জন্য তার ছিটেফোঁটাও কাজ করছে না আজ নুপুরের। প্রথমবারের সব অনুভূতিই হয়তো অন্যরকম হয়।

সবে একটু সামলে উঠেছিলো নুপুর। ডিভোর্সের পর প্রায় ঘর বন্দি হয়ে বসে ছিলো সে। দিন রাত খেয়ে না খেয়ে, সারাদিন কান্না করে পার করেছে সে। একটু সামলে উঠতেই আবার বিয়ের পিরিতে বসবে সে ভাবেনি। সেদিন দিবসের বাবার সাথে দেখা না হলে হয়তো আজ এখানে থাকতো না নুপুরের।

মায়ের খুব জোরাজোরিতে নুপুর তার খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো। সারাদিন ঘর বন্দি না থেকে একটু বেড়ালে হয়তো ভালো লাগবে ভেবে নুপুরও না করেনি। একদিন নুপুর তার ছোট খালাতো ভাইকে নিয়ে বের হয় কিছু বাজার করার জন্য। কিছুপথ যেতেই দেখে এক লোক মুমূর্ষু অবস্থায় এক্সিডেন্ট হয়ে পড়ে আছে। কেউ ধরছে না তাকে ভয়ে, যদি পুলিশ কেস হয় তাই। নুপুর ছুটে গিয়ে উনাকে ধরে। আশে পাশের অনেকের কাছে হেল্প চাইলে কেউই সাহায্য করে না। অবশেষে তার ছোট ভাই আর একটা রিকশাওয়ালা এগিয়ে আসে।

তারপর তিনজনে মিলে উনাকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যায়। নুপুর শুধু তাই করেনি উনাকে নিজের শরীরের রক্ত দেয়। লোকটার জ্ঞান ফেরার আগেই নুপুর খালার বাসায় চলে আসে।

কিছুদিন পর হঠাৎ বেল বেজে উঠতেই নুপুর দরজা খুলতে গিয়ে চমকে উঠে। সেই লোক যাকে কিনা নুপুর বাঁচিয়েছিলো। আর তিনিই জীবন চৌধুরী। অনেক কষ্ট নাকি নুপুরের বাড়ির এড্রেস জোগাড় করেছে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য। তখনি পরিচয় হয় তাদের। এর পর উনাকে মামা, মামি আর মায়ের সাথে পরিচয় করায় নুপুর।

সেই সুবাধে আরেকদিন জীবন চৌধুরী বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয় নুপুরদের বাসায়। সবাই রাজি হলেও নুপুর মেনে নিতে পারছিলো না। সে বিয়ে করতে চায়নি। কিন্তু এমন ঘরে বিয়ে করাতে এতো বড়লোক পরিবার কেন রাজি হলো নুপুর বুঝে উঠতে পারছিলো না। হয়তো জীবন চৌধুরীকে ওইদিন সাহায্য করার জন্য। আর দিবসও হয়তো তাই-ই রাজি হয়ে গিয়েছিলো।

দরজার বাহিরে কারো ভিতরে আগমনের শব্দে নুপুর নেড়েচেড়ে বসে। ভিতরে শুকিয়ে যাচ্ছে তার। দিবস আসছে হয়তো। কিছু পরিস্থিতিতে হয়তো এমনি হয়। তবে……..

চলবে………

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে সবাই জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here