শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব -৩৫+৩৬

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_35
#Writer_NOVA

— নুবা!

আমার নামের বিকৃত উচ্চারণ শুনে কপাল কুঁচকে ইফাতের দিকে তাকালাম। দিলো রে দিলো, এই নেংটি ইদুর শেষ পর্যন্ত আমার নামটারও মান-ইজ্জ্বত মেরে দিলো। আমি রাগী চোখে একবার ইফাতের দিকে তাকাতেই ইফাত আবার মুখ কুচোমুচো করে ডাকলো,

— নুবা, ও নুবা, আমার নুবা।

আমি ইফাতের দিকে কটমট করে তাকিয়ে নিজের কপালে জোরে একটা চাপড় মারলাম। নোবা বললেও একটা কথা ছিলো। তা না করে নুবা😑।আম্মু খুব শখ করে শিশুদের নামের বই থেকে আমার নাম রেখেছিলো নোভা। এটা একটা বিদেশি নাম। যার অর্থ নক্ষত্র। আম্মুর ধারণা ছিলো আমি নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করবে। কিন্তু এখন তার ভাষ্যমতে আমি নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করাতো দূরেই থাক তারার মতো মিটমিটও করি না। আরেকটা নাম আছে আমার। যেটার সংক্ষিপ্ত হলো রাই। এই নামে আমায় খুব কম মানুষই ডাকে।

কিন্তু আজকে ইফাত আমার নামের পুরো দফারফা করে দিলো৷ আমি ওর দিকে খাইয়া ফালামু লুক দিয়ে হাতের ইশারায় সামনে আসতে বললাম। ও মাথা নাড়িয়ে বললো,

— আসবো না। এখন আসলে তুমি আমাকে মারবে।

— না আসলে আরো বেশি মারবো। জলদী এদিকে আয়। আমার এই নতুন নাম তুই পেলি কোথায়?

— আমি বানাইছি।

— তা আকিকা দিছিস? আমার নাম রাখছিস নতুন করে আর আকিকা দিবি না? তুই এদিকে আয়। তোর সাথে আমার কথা আছে। বিচ্ছু পোলা। আমার নামটাকে পুরো মান-সম্মান শেষ করে দিলো।

ইফাত দাঁত কেলিয়ে আবারো মাথা নাড়ালো। আমি উঠে ওর দিকে যাওয়ার আগেই দৌড়ে পালালো। তখুনি খট করে ওয়াসরুমের দরজা খুলে গেল। ইফাতের দাদী বের হতেই আমি ভুবন ভুলানো এক হাসি দিয়ে তাকে লম্বা সালাম দিলাম।

— আসসালামু আলাইকুম দাদী। কেমন আছেন?

— আরে বড় নাতির বউ যে।ওয়া লাইকুমুস সালাম। আল্লাহ রাখছে ভালোই। তুমি কেমন আছো?

— আল্লাহর রহমত এবং আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ। তা আপনার শরীর ভালো আছে তো?

— আছে কোনরকম। হঠাৎ আমার কাছে?

— আমি হঠাৎ হঠাৎই আসি। হুট করে এসে কাউকে চমকে দিতে আমার ভালোই লাগে। আন্টি বললো আপনার শরীরটা নাকি ভালো না তাই আপনাকে দেখতে এলাম।

উনি একটু হেসে ওয়ারড্রবের ওপর থেকে পানের বাটা নিয়ে খাটে বসলেন। আমার আবার একটা গুণ আছে। এটাকে ভালো গুণই বলে। গুণটা হলো যে যেরকম তার সাথে আমি সেরকম ভাবে মিশতে পারি। তার মনের মতো হয়ে খুব কম সময়ে তার মন জয় করার ক্ষমতা আমার আছে।যদি আমি চাই তাহলে। নয়তো না। এই যে ধরুন তেল মারানো মানুষের সাথে তার মন মতো চলতে পারবো। কিপ্টের সাথে থেকে কিপ্টামি করতে পারবো। শুচিবাই মানুষের সাথে তার মন মতো চলে তার মন জয় করতে পারবো। ইফাতের দাদী নিজের প্রশংসা শুনতে ভীষণ পছন্দ করে। সুতরাং এখন তার প্রচুর প্রশংসা করে তাকে ফুলিয়ে আমার কাজ হাতাতে হবে।

উনি মনোযোগ দিয়ে পান সাজাচ্ছে। আমি কিছুটা থেমে তাকে বললাম,

— দাদী একটা পান দিয়েন তো। তবে জর্দা দিয়েন না। জিহ্বা পুড়ে যায় আমার। চুন সামান্য পরিমাণ। আপনার হাতের পান আমার ভীষণ পছন্দ। একবার মুখে দিলে শেষ হয়ে গেলেও মনে হয় এখনো মুখে লেগে আছে। আমি অনেকের হাতের পান খেয়েছি কিন্তু আপনার হাতের সাজানো পানের মতো আজ অব্দি কারোটা এত স্বাদ লাগেনি।

আহা, আমার তোষামোদে উনি একেবারে ফুলে ঢোল হয়ে গেলো। দ্রুত একটা পান সাজিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে খুশি খুশি মনে বললো,

— প্রতম (প্রথম) দুইবার পিক ফালায় দিবা। ঐগুলার মধ্যে বিষ থাকে। পরেরগুলো দেখবা চাবাইতে চাবাইতে মিঠা লাগে। তখন গিইলা ফালাইয়ো।

আমি বিসমিল্লাহ বলে দু চোখ বুজে পান মুখে পুরলাম। আজকে আমার খাওয়া বন্ধ। পান খেলে গালের মাংস ছিলে যায়। তবে মুখে হাসি হাসি ভাব বজায় রেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললাম,

— আহা কি স্বাদ! কতদিন পর এতো স্বাদের পান খেলাম। লাভ ইউ দাদী।

— লাভ ইউ টু বউ।

লাভ ইউ টু শুনতেই চোখ উল্টিয়ে দরজার দিকে তাকাতে দেখলাম ইফাত মুচকি হেসে উঁকি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আর লাভ ইউ টু সেই বলেছে। আমি ঠোঁট কামড়ে রাগী ভঙ্গিতে ওকে বললাম,

— তোর লাভ ইউ টু বের করতাছি। দাঁড়া তুই।

আবার ছুটে পালালো। ওর কান্ড দেখে আমি ও দাদী দুজনে একসাথে হেসে উঠলাম। আমি বেশি দেরী করতে চাইছি না। সরাসরি কাজের কথায় ঢুকতে চাচ্ছি।বুড়িকে দেখে দিব্যি সুস্থ মনে হচ্ছে। আর উনি নাকি অসুস্থ। আমিই ঠিক ধরেছিলাম। উনি অসুস্থ হওয়ার ভান করছে। কিছুটা নরম সুরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

— কি হয়েছে আপনার দাদী? হঠাৎ অসুস্থ যে।

— আর বইলো না।প্রেশারে মাথা ঘুরায়।খাঁড়ায় (দাঁড়ায়) থাকতে পারি না।

আমি ব্যস্ত হওয়ার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম,
— ও আল্লাহ বলেন কি? মাথায় তেল দিছেন?

— না, মাথায় একটু পানি দিয়ে আসলাম।

— আপনার মাথা ঘুরায় আর আপনি তেল দেননি। এটা কোন কথা। তেলের বোতল কোথায়? দিন আমি আপনার মাথায় তেল দিয়ে দেই। এতে মাথাটা একটু ঠান্ডা লাগবে।

— আরে লাগবো না। তুমি বসো।

— কোন কথা শুনছি না আপনার।

💖💖💖

আমি দ্রুত ওয়ারড্রবের ওপর থেকে তেলের বোতল এনে জোর করে উনার মাথায় দিয়ে দিতে শুরু করলাম। এখন তেল দিয়ে দিবো আর নরম সুরে তাকে যদি পারি ডিটারজেন্ট ছাড়া ধুয়ে দিবো। নয়তো তাকে পটাবো। উনি মুখে বিরক্তি দেখালেও মনে মনে যে খুশি তা তার কথায় বুঝতে পারছি। মুখে বিরক্তি ভাব রেখে বললো,

— দেখ তো নাতনির কান্ড। এত করে বললাম দিতে না। তবুও শুনলো না।

— কোন কথা বলেন না তো। তা দাদী আপনি জুয়ান (যৌবন) কালে নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর ছিলেন তাই না?নয়তো দাদা কি আর এমনি এমনি রুপসীর পাগল হয়েছে?

দাদী লাজুক হেসে তার শৈশব, কৈশোরেের গল্প জুড়ে দিলো। আমিও এটা ওটা জিজ্ঞেস করে তার কথা শোনার আগ্রহ প্রকাশ করছি। বৃদ্ধারা কারো সাথে গল্প করতে ভীষণ পছন্দ করে।একজনকে পেলেই তার সাথে নানা গল্প জুড়ে দেয়। আমি ধীরে ধীরে তেল দিতে দিতে তার অনেক কথা শুনলাম। তারপর আমি আমার কথা শুরু করলাম,

— দাদী, যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি কিছু কথা বলি।

— হ্যাঁ বল।

— আন্টি আট মাসের প্রেগন্যান্ট। তার এখন ফুল রেস্টে থাকার কথা। আল্লাহ না করুক একটা অঘটন ঘটে গেলেই বাচ্চা ও মায়ের দুজনের ক্ষতি। আপনার হয়তো কিছু না। কারণ আন্টির কিছু হলে আপনি আপনার ছেলেকে আরেকটা বিয়ে করাবেন। এক বউ গেলে আরেক বউ পাবেন।কিন্তু ইফাত,সিফাত কিন্তু নিজের মা কে হারাবে। তারা কিন্তু নিজের মা পাবে না। আজকাল খবরে দেখা যায় নিজের সন্তানকেই দুচোখে দেখতে পারে না। তাহলে সতিনের ছেলেকে কি করে নিজের ছেলে ভাববে বলুন তো? উনি এই পেট নিয়েও সারা ঘরের কাজ করে। আপনি একটু উঁকি মেরে দেখতেও যান না। এটা কি ঠিক বলুন?

উনি চুপ করে আমার কথা শুনছেন। কোন উত্তর দিলেন না। আমি আবারো বললাম,

— হ্যাঁ আন্টি গরীবের মেয়ে। কিন্তু উনার মনটা আপনাদের থেকেও অনেক বড়। অন্ততপক্ষে আপনাদের মতো নিচু মন-মানসিকতার নয়। উনি আপনাদেরকে নিজের বাবা-মা ভাবে। যদি আপনাদেরকে বাবা-মা না ভাবতো তাহলে আপনাদের সংসারে নিত্যদিন ঝগড়া, অশান্তি লাগতো। উনি কিন্তু সব মুখ বুজে সহ্য করে নেয়। সংসারে কোন ঝামেলা করেন না। উনার মতো ছেলের বউ সবাই পায় না দাদী। খুব ভালো মনের মানুষ। যদি খারাপ হতো তাহলে আপনার ছেলের কানে আপনাদের নামে বিষ দিয়ে এতদিনে আলাদা হয়ে যেতো। কিন্তু সে সবসময় আপনার ভালোর কথা চিন্তা করে। দাদার ভালোর কথা চিন্তা করে। তাহলে আপনার কি উচিত না উনাকে এই সময় একটু সাহায্য করা। ঘরের কাজগুলো তো বুয়াই করে। যেদিন বুয়া না আসে সেদিন না হয় আপনি একটু কষ্ট করে কাজগুলো করে দিলেন। এতে তো আপনাদের শাশুড়ী, বউয়ের সম্পর্ক মজবুত হবে। আর তো মাত্র ১ মাস। তারপর বাচ্চা হওয়ার কয়েকমাস অব্দি আপনি সংসারের হালটা ধরে রাখুন। এতে তো বাচ্চা, মা দুজন সুস্থ থাকবে। উনার প্রতি এখন বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু আপনি তো বাড়তি খেয়াল দূরেই থাক স্বাভাবিক খেয়ালটাই রাখছেন না। আজ যদি আন্টির বদলে আপনার মেয়ে হতো তাহলে কি এতো অবহেলা করতে পারতেন? উনাকে না হয় নিজের মেয়ে হিসেবে এতটুকু খেয়াল করুন। বউকে নিজের মেয়ে ভাবতে এতো কষ্ট কেন আপনাদের মতো শাশুড়ীদের?

উনার উত্তরের পরোয়ানা না করে আমি একটু থেমে আবার বলতে লাগলাম,

— আপনি হয়তো ভাবছেন আপনার সময় প্রেগন্যান্ট থাকতেও ধান,পাট নিয়ে সংসার করেছেন। তাহলে আপনার ছেলের বউ এতটুকু করে কেন সংসার চালাতে পারবে না? আপনাদের সময় আর এখনকার সময় আকাশ পাতাল তফাৎ। পুরনো বিষয় ধরে বসে থাকলে তো হবে না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। এখনো সময় আছে উনার প্রতি একটু যত্নশীল হোন। সে তো আপনাদের একটু কেয়ারই চাইছে। টাকা-পয়সা তো নয়। সারাদিন প্রেগন্যান্ট অবস্থায় সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের খেয়াল রাখছে।ছেলে দুটোকে মানুষ করছে। এটাও কি কম? আর কষ্টগুলো কেন করছে সে? আপনাদের বংশধর আনতেই তো? নাকি অন্য কোন কারণে? আজ আপনি থাকতে উনি নিজে এক বালতি জামা-কাপড় ধুয়েছে। এতে তো উনার পেটে নিশ্চয়ই চাপ পরেছে।যা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকারক। উনি এই বালতি নিয়ে ছাদে যেতে চেয়েছিলো। আমি দেখায় রক্ষা। সিঁড়িতে যদি স্লিপ কেটে কোন বিপদ ঘটতো তাহলে কি হতো ভেবেছেন আপনি?নিজেকে প্রশ্ন করেন তো আজ অব্দি কতটুকু একজন আদর্শ শাশুড়ী হতে পেরেছেন? এই প্রশ্নটা নিজেকে নিজে করবেন।শেষ একটা কথাই বলবো দাদী। থাকতে মূল্য দিন। হারিয়ে গেলে কেঁদেও লাভ হবে না।

কথাগুলো বলে আর থাকলাম না। দ্রুত উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। দাদী এখনো চুপ করে বসে আছে। তার ভেতরে একটা তোলপাড় সৃষ্টি করে দিয়েছি। রুম থেকে বের হতেই দেখলাম আন্টি ওড়নায় মুখ গুঁজে কাঁদছে। নিশ্চয়ই আমার সব কথা শুনেছে। আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে দরজা খুলে বের হলাম। তবে বের হওয়ার আগে দাদীর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম।কৌতুহলবশত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। উনি আন্টিকে ডাকছে।

— ছোট বউ, ও ছোট বউ। কোথায় তুমি?

অপরপাশ থেকে আন্টির গাল শুনলাম,
— জ্বি মা বলুন।

— শুনো ছোট বউ, আজ দুপুরে কি রান্না করবো বলো তো? তোমার রান্নাঘরে যাওয়ার কোন দরকার নেই।
আজ থেকে সংসার আমি সামলাবো। তুমি বরং একটু রেস্ট নাও।

— কিন্তু মা আপনার তো শরীর ভালো না। আপনি একা এতকিছু পারবেন না।

— বেশি কথা বলো না তো। তোমাকে রেস্ট নিতে বলছি তাই নিবা। কি কি করতে হবে বলো। আমি সব করে নিচ্ছি। সংসার নিয়ে তোমার আর ভাবতে হবে না। এখন থেকে সব আমি দেখবো। তুমি কি সকালে খেয়েছো? না খেলে কিন্তু এখন তোমার খবর আছে। একদম আমার দিদিভাইকে না খেয়ে কষ্ট দিবে না।

চোখ দুটো আপনাআপনি পানিতে ভিজে গেলো। না আমি সফল হয়েছি। এটাই অনেক বড় পাওয়া। কথাগুলো যে এত দ্রুত তার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।পেছন ঘুরে যাওয়ার আগে কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। তাকিয়ে দেখি আন্টি কান্না মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে জড়িয়ে ধরে আরো কান্না করতে লাগলো। তবে আমি জানি এই কান্না কষ্টের নয়। বরং তার আনন্দের। বড় কিছু পাওয়ার আনন্দ। উনি কয়েক মিনিট পর আমার মাথায়, গালে হাত বুলিয়ে ভেতরে চলে গেল। আমি কিছু সময় তার দিকে তাকিয়ে থেকে বাসার দরজার দিকে গিয়ে একটুর জন্য ধাক্কা খেলাম না। তার আগেই কেউ আমাকে কোমড় পেচিয়ে জড়িয়ে ধরে ফেললো।

— আরে আস্তে! চোখ কোনদিকে রেখে হাঁটো টিডি পোকা?

দুজন মুখোমুখি হয়ে আছি। তাকিয়ে দেখি এনজিও সংস্থা।এখন দুজনেই পুরো চোখাচোখি। আজকেও তার সাথে আমার ড্রেস ম্যাচিং হয়ে গেছে। দুজনেই কালো। আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে তার হাত আমার কোমড় থেকে সরালাম। তারপর কটমট চোখে তার দিকে একটা রাগী লুক দিয়ে দ্রুত ভেতরে ঢুকে গেলাম। একটু সুযোগ পেলেই আমার কাছে আসার ধান্দা। বদমাশ বেডা কোথাকার!

#চলবে#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_36
#Writer_NOVA

সারাদিন হেলায় ফেলায় কেটে গেলো। বিকেল থেকে ভালো লাগছে না। তাই সন্ধ্যার দিকে ভাবলাম চানাচুর, পেঁয়াজ, মরিচ দিয়ে একটু মুড়ি মাখাই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সবকিছু কমপ্লিট করে তন্বীকে পাঠালাম ইফাত,সিফাতকে নিয়ে আসতে। পুচকো দুটোর সাথে থাকলে মন খারাপ দূরে পালায়। এমনিও আমি বাসায় কিছু বানালে ওদেরকে ডেকে নিয়ে আসি। নয়তো ওদের বাসায় পাঠিয়ে দেই। সবাই মিলে একসাথে কিছু খাওয়ার মজাই আলাদা। হোক সেটা অল্প পরিমাণের। ইফাত,সিফাত এসে সোফায় চুপ করে বসলো। আমি সরিষার তেল নিয়ে সবকিছু একসাথে মিক্সিং করতে লাগলাম। হঠাৎ ইফাত বললো,

— আমি তুমারে ছাড়া বাচমু না বউ।

ইফাতের কথায় মুড়ি মাখানো বন্ধ করে ওর দিকে তাকালাম। বেচারা করুন মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে ছিলো ওকে ইচ্ছে মতো বকুনি দিবো। কিন্তু ওর মুখ দেখে আর পারলাম না। ফিক করে হেসে উঠলাম। আমাকে হাসতে দেখে সে বললো,
— তুমি আমারে একটুও ভালোবাসো না।

তন্বী, সিফাত দুটোই মুচকি হাসছে। ওদের দিকে চোখ রাঙিয়ে ইফাতকে বললাম,
— তোকে আমি ভালোবাসি।

— সত্যি 😍!

— এত খুশি হওয়ার মতো কিছু হয়নি। আমি তোকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতো ভালোবাসি।

— মনটা ভেঙে দিলা💔।

— আহারে! খুব কষ্ট হচ্ছে?

— হুম অনেক।

— দেখ নেংটি ইদুর তুই এখন মন দিয়ে পড়াশোনা কর। তাহলে অনেক ভালো ভালো মেয়ে তুই পাবি। কিন্তু পড়াশোনা বাদ দিয়ে আমার পেছন ঘুরলে কোন লাভ হবে না।

— আমার তোমাকেই লাগবে।

— ধূর ব্যাঙ। কি বলি আর কি বুঝে?

আমি বিরক্তি নিয়ে কথাটা বললাম। সিফাত মুখ টিপে হেসে বললো,
— ভাইয়া তো তোমার শোকে পাগল হয়ে যাবে ভাবী। আমার ভাইয়াকে বিয়ে করতে তোমার এতো কিসের সমস্যা? কি নেই আমার ভাইয়ার বলো?

— আরেকবার বাংলা মুভির ডায়লগ মারলে তোর মাথায় ফুলদানি ভাঙবো সিফাত।

— আরে আরে রাগো কেন? আমি তো এমনি বললাম। তোমাদের জামাই-বউয়ের বিষয় তোমরাই বুঝো।

— দুটো ছেলেই বেশি পেকে গেছে।

আমি দুটোর দিকে মুখ বাঁকিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিলাম। তন্বী ব্যঙ্গ সুরে বললো,
— তোমায় কত ভালোবাসে নোভাপু। আর তুমি ইফাতকে পাত্তাই দাও না। ইফাত ভাই আমার। আয় আমার কাছে আয়। তোর দুঃখে আমিও দুঃখিত।

আমি হুংকার দিয়ে বললাম,
— মাছের মায়ের পুত্রশোক হচ্ছে। তা এতই যখন খারাপ লাগছে তাহলে নিজের ঘাড়ে নিয়ে যা না।

— ইফাত তো তোমায় ভালুপাসে। আমি কেন নিবো?

— তাহলে মুখটা অফ রাখ। নয়তো ভাতের চামচ দিয়ে এমন জোরে বারি দিবো স্মৃতি শক্তি থাকবে না।

সারা হাত সরিষার তেলে মাখামাখি মুড়ির ডিব্বা থেকে যেই মুহুর্তে মুড়ি নিবে সেই মুহুর্তে কপালে ছোট দুটো ঠোঁটের পরশ পেতেই চমকে উঠলাম। তাতে কিছু মুড়ি নিচে পরে গেলো। বিস্ফোরিত চোখে সামনে তাকিয়ে দেখি ইফাত মিটমিট করে হেসে মুখ ঢেকে ফেললো। তার মানে এটা এর কাজ। আমি রেগে বললাম,

— এই এটা কি করলি? বেশি পেকে গেছিস?

ইফাত লাজুক সুরে বললো,
— বউকে ভালোবাসা দিছি।

এর কথা শুনে আমার মাথা ভনভন করতে লাগলো। পুঁচকে পোলা বলে কি। তন্বী, সিফাত দুজনে একসাথে মোবাইলে কিছু একটা দেখছিলো। আমার কথা শুনে মোবাইল থেকে মাথা উঠিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে নোভাপু?

— কি হয়েছে ভাবী?

আমি রেগে দাঁত কটমট করে বললাম,
—কি হয়নি তাই বল। কিছু না। তোরা তোদের কাজ কর। ইফাতের আজকে খবর আছে।

আমি এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে যেই খপ করে ইফাতকে ধরবো তখুনি কোলিং বেল বেজে উঠলো। আমি একবার দরজার দিকে তাকিয়ে থেমে গেলাম। আমার বাড়িয়ে রাখা হাতটাকে দুই হাতে ধরে আবারো পুঁচকেটা চুমু খেলো। আমি বাম হাতে নিজের কপালে জোরে দুটো থাপ্পড় দিয়ে দরজা খুলতে চলে গেলাম। এই বিচ্ছু ছেলে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে।

💖💖💖

দরজা খুলতেই দুটো ক্লান্ত মানুষকে দেখতে পেলাম। তায়াং ভাইয়া ও এনাজ দুজনের শরীরের অবস্থা কাহিল। সেই সকাল দশটায় বেড়িয়েছে। এখন সন্ধ্যা সাতটা। বিয়ের শপিং করতে গিয়ে বেচারাদের অবস্থা নাজেহাল। আমাকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তায়াং ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— ভেতরে কি ঢুকতে দিবি?

আমি কোন কথা না বলে দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালাম। তারা ভেতরে ঢুকতেই দরজার সিটকিনি লাগিয়ে ওদেরকে বললাম,
— ফ্রেশ হয়ে আয়। মুড়ি মাখাচ্ছি। সবাই একসাথে খাবো।

তায়াং ভাইয়া আচ্ছা বলে তার রুমে চলে গেল। সাথে এনজিও সংস্থা। বড় এক বোল ভর্তি মুড়ি মাখলাম। এক প্লেট খালামণির রুমে দিয়ে এলাম। আরেক প্লেট ভর্তি করে ইফাতের আম্মুর জন্য নিয়ে গেলাম৷ কয়েকবার বেল বাজাতেই ইফাতের দাদী দরজা খুললো। আমি ভেতরে ঢুকে দেখলাম সোফায় বসে আন্টি টিভি দেখছে। সামনের টি-টেবিলে প্লেটটা রেখে বললাম,

— বউ, শাশুড়ী একসাথে সিরিয়াল দেখছিলো বুঝি। যাক ভালো। এখন সিরিয়াল দেখতে দেখতে খাওয়া হয়ে যাবে।

ইফাতের দাদী আমার মাথায় হাত রেখে বললো,
— কি বলে ধন্যবাদ দিমু তা জানি না। তবে আজকে সকালে তুই আমার চোখ খুলে দিয়েছিস নাতনী।

আমি তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
— আপনি বুঝতে পেরেছেন এটাই আমার কাছে অনেক কিছু দাদী। আপনার মতো করে যদি সব শাশুড়ী বুঝতো তাহলে আর ঘরে ঘরে বউ শাশুড়ীর এত যুদ্ধ চলতো না। অনেকে তো বুঝেও না বোঝার ভান করে। কিন্তু আপনি তা না করে নিজের ভুল সংশোধন করে নিয়েছেন। সারাজীবন এমন থেকেন। তাহলেই হবে। আমি যাই। ঐদিকে ওরা কি করে কে জানে? শাশুড়ী আম্মা খেয়ে বলেন কেমন হয়েছে। দাদী দরজাটা লাগিয়ে দিয়েন।

দ্রুত দরজা দিয়ে বের হয়ে এলাম। সোফায় বসে থাকা আন্টির মুখে ছিলো তৃপ্তির হাসি। যা না চাইতেও মনটাকে কেড়ে নিয়েছে। ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি তায়াং ভাইয়া, এনাজ সোফায় বসে আছে। এনাজের কোলে ইফাত। তারা দুজন পুটির পুটুর করে কথা বলছে। আমি পুরো বোল সামনে দিয়ে বললাম,

— সবাই নিয়ে খাও। ঐ তন্বী মোবাইল রাখ। সিফাত নিয়ে খেতে থাক।

সবাই একসাথে মুড়ি খেতে লাগলাম। ইফাত কিছু সময় পরপর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে আর দুই চোখ মারছে। আমি চোখ রাঙানি দিলেই মুখ টিপে হাসছে। আমাদের দুজনের কান্ড দেখে এনাজ জিজ্ঞেস করলো,

— কি চলছে তোমাদের মাঝে? আমাকে একটু বলবে কি? এই টিডি পোকা তোমার সাথে ওর এতো আই কানেকশন কেন?

ইফাত এনাজকে কিছুটা চেচিয়ে বললো,
— তোমাকে কিছু বুঝতে হবে না। আমার ও আমার বউয়ের মধ্যে তুমি কথা বলো না।

এনাজ ওর কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে বললো,
— কি বললে? টিডি পোকা তোমার বউ হলো কবে?

— এখনো হয়নি তবে হবে। নুবা শুধু ইফাতের। নুবা যদি ইফাতের না হয় তাহলে আর কারো হবে না।

আমি রাগী গলায় বললাম,
— ইফাতরে আমার নাম নোভা নট নুবা।

আমাদেরও কান্ড দেখে সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো। শুধু এনাজ বিস্মিত চোখে ইফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তায়াং ওকে ধাক্কা মেরে বললো,
— মুখটা বন্ধ কর এনাজ। সবে তো শুরু আরো কতকিছু যে দেখবি।

এনাজ মুখ বন্ধ করে অসহায় কন্ঠে বললো,
— আমরা জীবনে কি করলাম তায়াং? আজ অব্দি প্রপোজ করতে পারলাম না। আর এই পিচ্চি বলে টিডি পোকা নাকি শুধু ওর বউ। ও ছাড়া অন্য কারো হবে না। ভাই আমারে ধর। আমার মাথা চরকির মতো ঘুরতাছে।

ইফাত এনাজের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
— জানো ভাইয়া আমি ওরে কত ভালবাসি। কিন্তু ও আমারে বুঝেই না। শুধু আমার সাথে রাগ দেখায়। ওরে ভালোবেসে একটা কিসি দিলেও মানে না। বরং আরো বেশি রেগে যায়।

এনাজ আরেকদফা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— তুমি ওকে চুমু খাইছো?

— হ্যাঁ খাইছি তো। আমার বউ আর আমি চুমু খাবো না। তা কি হয় বলো? একটু আগেও তো ওর কপালে আর হাতে চুমা দিছি।

এবার ইফাতের কথা শুনে সবাই আমার দিকে তাকালো। আমি লজ্জায় ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম। এই পিচ্চি আমারে লজ্জা দিয়া শেষ করে দিবে। তন্বী “ওহো” বলে চেচিয়ে উঠলো। এনাজ অবিশ্বাস্য চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর মুখটাকে শুকনো করে জিজ্ঞেস করলো,
— টিডি পোকা এগুলো কি সত্যি?

আমি এক হাতে মুখ ঢেকে উপরনিচ মাথা নাড়ালাম। এনাজ ওর মাথাটা সোফায় হেলিয়ে দিয়ে হাত-পা চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে তায়াং ভাইয়াকে বললো,
— তায়াংরে আমি ফিট খাইছি। আমার জ্ঞান ফেরা।

তায়াং ভাইয়া হাসতে হাসতে বললো,
— সেদিন তো আমার কথা বিশ্বাস করিসনি। আজকে হয়েছে তো? এখন কি ওয়াসরুম থেকে বালতি ভর্তি পানি এনে তোর মাথায় ঢালতে হবে?

— তাই কর ভাই। এই জীবন রেখে কি লাভ? এতো প্রেমিকের ভিড়ে আমি হারিয়ে গেছি। টিডি পোকা ইফাতের হলে আমার কি হবে?

ইফাত এনাজের সামনে এসে বললো,
— তোমার কি হইছে ভাইয়া?

এনাজ ওর দিকে ইনোসেন্ট ফেস করে বললো,
—এখনো কিছু হয় নাই ভাই। তবে খুব শীঘ্রই আমি চান্দের দেশে পারি দিবো৷ নিজের ওপর রাগ উঠতাছে। এই জীবন রেখে কি করবো? যদি ১০ বছরের বাচ্চা ছেলে আমাদের থেকে এডভান্স হয়।

আমি এদের কথা শুনে হাসতে হাসতে তন্বীর ওপর পরে গেছি। তন্বী কিছুটা দম নিয়ে বললো,
— জানো ভাইয়া আজকে নোভাপু কি করছে?

আমি ওর মুখ আটকে ধরে বললাম,
— চুপ একটা কথাও বলবি না।

এনাজ উৎসুক চোখে সোফায় দুই পা উঠিয়ে বললো,
— টিডি পোকা ওর মুখ ছাড়ো।

আমি রাগ দেখিয়ে বললাম,
— ছাড়বো না কি করবেন?

— ইফাত দুইটা চুমু দিছে। আমি চারটা দিবো।

তার কথা শুনে তন্বীর মুখ ছেড়ে আমি একটা ভেংচি কাটলাম। ইফাত কাঁদো কাঁদো ফেসে এনাজের হাঁটুতে মারতে মারতে বললো,
— আমার বউরে আমি চুমা দিবো। তুমি দিবা কেন? তুমি ওর সামনেও যাইবা না।

এনাজ দুই হাতে ওর হাত আটকিয়ে বললো,
— না ভাই কিছু করবো না। আমি তো এমনি বলছিলাম। আর শোন আমি একটা কথা বলি?

ইফাত মার থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি কথা?

— শুনো ইফাত, তোমার বউ আমারও বউ। কিন্তু আমার বউ তোমার ভাবী।

— আচ্ছা।

ইফাত মাথা হেলিয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো। কিন্তু কিছু সময় পর চিৎকার করে বললো,
— না আমার বউ শুধু আমার। আর কারো না।

এনাজ তায়াং ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
— ভাই যা করার জলদী করতে হইবো। অবস্থা বেগতিক। নয়তো দেখা যাবে আমার আগে আমার বউকে অন্য কেউ নিয়া পালাইবো। এতো প্রেমিক দেখে আমারি ভয় করছে। কবে জানি বাতিলের খাতায় আমার নাম উঠে যায়। আর দেরী করবো না আমি। তুই ব্যবস্থা কর। আগমীকাল আমি সব জানিয়ে দিবো।

এদের কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলাম না। তায়াং ভাইয়া এনাজের কানে কানে কি জানি বললো। তারপর ভাইয়া তন্বীকে জিজ্ঞেস করলো,
— তুই কি জানি বলতে চাইছিলি।

আমি তন্বীকে ইশারায় চুপ করতে বললাম। কিন্তু তন্বী শয়তানি হাসি দিয়ে তায়াং ভাইয়াকে বললো,
— আজকে কলেজ থেকে আসার সময় একটা চিকনা ছেলে নোভাপুর মোবাইল নাম্বার চেয়েছে।

এনাজ চোখ দুটো বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলো,
— তারপর?

তন্বী আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হেসে বললো,
—সামনের দেয়ালে ছিলো কলিকাতা হারবালের পোস্টার। নোভাপু ঐ চিকনা ছেলেরে কলিকাতা হারবালের নাম্বার দিয়ে দিছে।

এনাজ চোখ দুটোকে উল্টিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— সিরিয়াসলি??

তন্বী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে হাসতে লাগলো।আমি তন্বীর দিকে খাইয়া ফালামু লুক দিয়ে মুড়ি চাবাতে লাগলাম। মনে হচ্ছে মুড়ি নয় তন্বীকেই চাবাচ্ছি। হাসি-ঠাট্টায় সবার মুড়ি খাওয়া শেষ।সিফাত দৌড়ে ওদের বাসায় চলে গেল। কিন্তু ইফাত তায়াং ভাইয়া ও এনাজের মাঝখানে বসে আছে। ওরা কি জানি কি নিয়ে কথা বলছে। আমি বোলটা বেসিনে রেখে হাত ধুয়ে নিলাম। তারপর বোল ধুয়ে উপুড় করে রেখে ড্রয়িংরুমে যেতেই ইফাত দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর কান্ডে আমি শর্কড। এনাজ বুকের বাম পাশে হাত রেখে কাদো কাদো মুখে বললো,
— ভাই এমন করে ধরিস না। কলিজা ফাইট্টা যাইতাছে৷ বুকের বামপাশে চিনচিন ব্যাথাও শুরু হইছে। খুব শীঘ্রই বোধহয় আমি স্ট্রোক করবো। তুই এভাবে ওকে ধরে রাখলে আমি বোধহয় বেশি সময় বাঁচবো না। ওরে ছেড়ে দে ভাই🥺।

এনাজের কথায় তায়াং ভাইয়া সোফায় লুটোপুটি খেয়ে হাসছে।আমি ইফাতকে ঝাটকা মেরে ছাড়িয়ে নিলাম। তন্বীও হাসতে হাসতে শেষ। এনাজ তন্বীকে বললো,
— বোইন একটু পানি দে। সিউর আজ আমি হার্ট অ্যাটাক করবো। তোরা মিলিয়ে নিস আমার কথা।

ইফাতের ডান কান মুলে দিয়ে বললাম,
— এসব কি?

ইফাত দাঁত কেলিয়ে বললো,
— বউকে জড়িয়ে ধরলে ভালোবাসা বাড়ে।

এনাজ সবেই মুখে পানি নিয়েছিলো খাওয়ার জন্য। ইফাতের কথা শুনে বিষম খেলো। মুখের পানি সব তায়াং ভাইয়ার ওপরে পরে গেছে। তায়াং ভাইয়ার সেদিকে খেয়াল নেই। সে তো হাসতে হাসতে বোধহয় আজকে শহীদ হয়ে যাবে। আমি ইফাতকে ধমক দিয়ে বললাম,

— কে বলছে তোকে এসব?

— আমি বাংলা ছবিতে দেখছি। শাকিব খান বলছিলো এই কথাটা।

তন্বী পেট ধরে বললো,
— এবার তোমরা একটু থামো। আর হাসতে পারছি না। কি শুরু করছো তোমরা?

এনাজ গ্লাস থেকে পানি নিয়ে নিজের মাথার তালুতে পানি ডলতে লাগলো। বিষম খেয়ে তার অবস্থা নাজেহাল। বেচারার মুখ লাল হয়ে গেছে। আর আমি আপাতত কোমায় আছি। সেখান থেকে ফিরলে বাকি কাহিনি বলবোনি🌚।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here