শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব -৩৩+৩৪

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_33
#Writer_NOVA

এক্স মানেই হলো কালসাপ। এতদিন আমি এই কথা বিশ্বাস না করলেও এখন তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। যখুনি আপনি সব ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করবেন তখুনি আপনার জীবনটাকে তেজপাতা থেকে বাঁশপাতা বানাতে এদের ফের আগমন হবে। আপনি যদি তার মিষ্টি কথার ফাঁদে পরে যান তাহলে আরেকটা বাঁশ পাওয়ার জন্য তৈরি হোন। অবশ্য বৈইমানকে তো কখনো দুটো সুযোগ দিবেন না। যে আপনাকে চরম মুহুর্তে ফেলে নিজে গা-সারা ভাব নিয়ে পালিয়েছিলো তাকে ২য় বার বিশ্বাস করলেন তো ২য় বার ঠকলেন।কালসাপকে বিশ্বাস করলে আপনার ছোবল খেতে হবে। তেমনি এই এক্স নামক মানুষটাকে বিশ্বাস করলেও ধোকা পাবেন। তবে সবাই এক নয়। কিন্তু সিংহভাগই কালসাপের সাথে তুলনীয়।

ক্যাফেতে বসে আছি আমি ও শারমিন। দুজন একসাথে ফুচকা খেতে এসেছি। তায়াং ভাইয়ার থেকে ৫০০ টাকা লাভ করেছি শুনেই শারমিন জেঁকে ধরলো ট্রিট দিতে হবে। এরকম দু-একটা বেস্টফ্রেন্ড থাকলে সাইড ব্যাগ খালি হতে দুদিনও লাগে না। মনটা বেশি একটা ভালো নেই। সকালে নূর আপি ও মামী চলে গেছে। বাসায় থাকলে খারাপ লাগবে বলে কলেজে চলে এসেছি। তন্বী আসেনি। ওর ক্লাশে স্যার ঢুকে গেছে। নয়তো আমাদের সাথে চলে আসতো।বিজনেস ম্যাথ ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে চলে এসেছি ক্যাফেতে। মোবাইল স্ক্রল করছিলাম। হঠাৎ শারমিন বললো,

— এই নোভা দেখ।

— কি দেখবো?

—মোবাইলের থেকে চোখ তো উঠা তবেই না দেখতে পাবি। মোবাইলটা একটু রাখ।

— এভাবেই বল না।

— তুই কি মোবাইলের থেকে মাথা উঠাবি।

আমি ঈষৎ বিরক্তমাখা মুখ নিয়ে শারমিনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— ঐ ছেমরি হইছো কি?

— কোণার টেবিলের দিকে তাকা। সাদা কালার ফুল হাতা টি-শার্ট পরা ছেলেটার দিকে একটু ভালো করে নজর রাখ।

আমি সেদিকে না তাকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
—এতো বড় গদ্য না বলে সারাংশ বল।

— ঐ ছেলেটা কিছু সময় পরপর তোর দিকে তাকাচ্ছে। হাবভাব ভালো ঠেকছে না আমার।

— ছেলেটা না হয় আমার দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু তুই এতো ঐ ছেলের দিকে তাকাচ্ছিস কেন? আমার তো তোর হাবভাব ভালো মনে হচ্ছে না।

— এর জন্য কারো ভালো করতে নেই।

— আচ্ছা বল কোন ছেলে?

— কোণার টেবিলে একটা ছেলে বসে আছে।

— কোন ছেলে না কোন ছেলে বসে…..

কথা পুরো শেষ করতে পারলাম না। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই সারা শরীরের রক্ত গরম হয়ে গেলো। কান দিয়ে মনে হচ্ছে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এই বেশরম ছেলে আমাকে ফলো করা ছাড়েনি। আমি তাকাতেই রোশান এক ভুবন ভুলানো হাসি দিলো। তাতে রাগ কমার বদলে আরো বেশি বেড়ে গেলো। দ্রুত মাথা ঘুরিয়ে ফুঁসতে লাগলাম। শারমিন আমাকে এই অবস্থায় দেখে বললো,

— এই তুই ঠিক আছিস তো? মাঝে মাঝে তোর কি হয়? তুই কি ছেলেটাকে চিনিস?

— হুম।

— কে উনি?

— তোকে আমার বিষাক্ত অতীতের কথা বলছিলাম না। সেই বৈইমান ছেলে।

আমার কথা শুনে শারমিনও ফোঁস করে রেগে গেলো।ঝাঁঝালো গলায় বললো,

— ঐ হারামজাদায় এখানে কি করে? ওর সাহস কি করে হয় তোকে ফলো করার। ইচ্ছে তো করছে গিয়ে ঠাটিয়ে এক চড় মেরে আসি। ছেলে মানুষ যে এতটা খারাপ হতে পারে তা এর কথা তুই না বললে জানতেই পারতাম না।

— বাদ দে। ঐদিকে আর তাকাস না।

— এখন কি চলে যাবি?

— প্রশ্নই উঠে না। আমি পিছুটান রাখি না। অতীত নিয়ে মন খারাপ করে পরে থাকার মতো মেয়ে এই নোভা না। ফুচকা দিয়ে গেলে খেয়ে এখান থেকে বিদায় হবো। একে দুচোখে আমি সহ্য করতে পারি না। ফুচকা অর্ডার দিয়েছি। না খেয়ে কি করে যাই। তুইও না কি যে বলিস?

— ওকে তুই যা ভালো মনে করিস।

মোবাইল ব্যাগে রেখে শারমিনের সাথে কথা বলায় মনোযোগ দিলাম। মুখে যতই অস্বীকার করি অতীত নিয়ে মন খারাপ করি না। কিন্তু যখন মনে পরে তখন নিজেকে আটকে রাখা খুবই দুঃসাধ্য হয়ে যায়। আমি যে আমার মাঝে থাকি না। ভেতর থেকে কান্নাগুলো গলায় এসে দলা পাকিয়ে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

💖💖💖

ফুচকা দিয়ে যেতেই আমি ও শারমিন দুজন হাসি-ঠাট্টা করতে করতে ফুচকা মুখে পুরতে লাগলাম। না চাইতেও চোখেটা রোশানের দিকে বারবার চলে যাচ্ছে। এই মানুষটাকে চোখে বন্ধ করে বিশ্বাস করেছি, নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছি। বিনিময়ে নিজের চরিত্র নিয়ে মিথ্যে অপবাদ ও ধোকা ছাড়া কিছু পেলাম না। দ্রুত খাওয়া শেষ করে ফেললাম। শারমিনের হাতে টাকা দিয়ে ওকে বিল পে করতে বলে আমি ক্যাফের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। রোশান আমাকে একা দেখে দ্রুত আমার সামনে এসে বললো,

— কেমন আছো রাই?

আমি তার দিকে ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
— আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো।

— আমাকে জিজ্ঞেস করলে না আমি কেমন আছি?

— প্রয়োজন মনে করছি না।

— আমাকে কি মাফ করে দিয়ে আরেকবার সুযোগ দেওয়া যায় না?

— জীবনেও না।

— আমাকে তো ভুল বোঝানো হয়েছিলো। তুমি তো সব জানো। তবুও কেন আমার ওপর এতো আক্রোশ তোমার?

— আপনার মতো বেহায়া না দুটো দেখিনি আমি। মানুষ কতটা নির্লজ্জ্ব, বেশরম হলেও নিজের চেহারাটা আমাকে দেখাতে আসতে পারে তা আমি ভেবে পাই না। হ্যাঁ, মানলাম আপনাকে ভুল বোঝানো হয়েছিলো। আচ্ছা আমায় বলুন তো,আপনি কি অবুঝ? নাবালক বাচ্চা ছেলে? আপনাকে কেউ মিথ্যে বানিয়ে বলবে, এডিট করা ছবি দেখাবে, চোখের ধোকা দিবে আর আপনি যাচাই-বাছাই না করে একটা মেয়েকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দিবেন। ওসব মনগড়া কাহিনি না আমায় শুনাতে আসবেন না প্লিজ। আপনাদের তিনজনকে আমি কখনো মাফ করতে পারবো না। ভেতর থেকে মাফ নামক শব্দটাই আসে না। আমি এতো মহান মানুষ নই। যার কাছ থেকে সামান্য আঘাত পাই তার দিকে ২য় বার ঘুরে তাকাই না। আর আপনারা তো আমার চরিত্রে দাগ লাগিয়েছেন। আমাকে আপনারা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবেন আর আমি সেখান থেকে বেঁচে ফিরে মাদার তেরেসা হয়ে সব ভুলে আরেকবার সুযোগ দিবো? হাহ ভাবেন কি করে এসব? আমি এতো দয়ালু মানুষ নই। যে আমার সাথে যেমন করবে আমি তাকে তেমন ফেরত দিতে পারি। আমার কাছে নিজের সেল্ফ রেসপেক্ট অনেক বড়। আর হ্যাঁ, যেখানে আপনাদের মাফ করার প্রশ্ন উঠে না সেখানে আরেকবার সুযোগের কথা কোথা থেকে আসে? মানুষকে সুযোগ দেওয়া যায়। কিন্তু মানুষরূপী কালসাপকে নয়। একবার দূরে ছুঁড়ে মেরেছেন তাই বলে ২য় বার মারবেন না তার গ্যারান্টি কি? ভালো চাইলে নিজের ঐ বদনখানি আমাকে দেখাতে এসেন না। নয়তো সেটা নষ্ট হতে একদিনও লাগবে না।

— আমি জানি রাই আমার মাফ হবে না। তবুও বেহায়ার মতো তোমার কাছে ছুটে আসি। তোমার যদি আমার প্রতি একটু দয়া হয় তার জন্য।

— রাস্তার কুকুরগুলোও না আপনাদের থেকে অনেক ভালো। ওদের একদিন যত্ন করলে বহুদিন মনে রাখবে। কিন্তু আপনাদের ২য় বার সুযোগ দিলে যতটুকু আমার সেল্ফ রেসপেক্ট আছে তাও খোয়াবো। আপনি না কতবড় আত্মসম্মানী লোক! তা কোথায় গেলো আপনার আত্মসম্মান? আমি তো আমার চেহারা আপনাকে দেখাতে যাইনি। তাহলে আপনি কেন ইউ.কে থেকে ফিরে এসে আমার কাছে চলে এসেছেন। আমি হলে তো জীবনেও আসতাম না। থুথু ফেলি আপনার ঐ আত্মসম্মানের। একটা কথা জানেন তো মিস্টার রোশান দেওয়ান। নকলের পেছন ছুটতে ছুটতে মানুষ এক সময়ে বুঝতে পারে সে কি পেতে গিয়ে কি হারিয়ে ফেলেছে! দুটো সময় মানুষ অন্যকে মূল্য দেয়। ১.পাওয়ার আগে ২. হারিয়ে যাওয়ার পর। থাকতে তো মূল্য দেননি। তাই হারিয়ে যাওয়ার পর আমার মূল্য বুঝে কি লাভ হবে?।সত্যি কথা বলতে আপনি আমায় কখনো ভালোই বাসেননি। ভালো বাসলে কখনো আমার সাথে এমনটা করতে পারতেন না। আপনার বুক কেঁপে উঠতো। মিথ্যে অপবাদগুলো দেওয়ার আগে, আমার চরিত্র কালি লেপ্টানোর আগে সব যাচাই-বাছাই করতেন। আপনি আমার সাথে অভিনয় করেছেন। খুব সুক্ষ্ম অভিনয়।
আর আমি আপনার অভিনয় বুঝতে না পেরে পাগলের মতো আপনাকে ভালোবেসেছি। কারো ওপর বেশি গললে তাকে ভেঙে পরতেই হয়। তাহলে আমার ক্ষেত্রে কেন হবে না বলুন? জীবনে এরকম দু-একটা আঘাত পেতে হয়। নয়তো ঘুরে দাঁড়ানো যায় না। কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া যায় না। আমি মনে করি প্রত্যেকের বড় আঘাত পাওয়া উচিত। এতে কাছের মানুষগুলো কে তো চেনা হয়।

— সব তুমি বলবে আমায় কিছু বলতে দিবে না?

— বলার মতো কিছু বাকি রেখেছেন? আমি জানি আপনি আমাকে কখনি ভালোবাসেন নি। আপনি এখন আমার কাছে এসেছেন অনুশোচনার কারণে। যখন থেকে জানতে পেরেছেন আমার সাথে আপনি অন্যায় করেছেন তখন থেকে আপনি ভেতরে ভেতরে দাবানলে দগ্ধ হচ্ছেন। সেই দাবানলের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমার পানে ছুটে এসেছেন। কিন্তু আমি আপনাকে, জারাকে,আর ৩য় সেই দুমুখো সাপকে কখনই মাফ করবো না। পুড়তে থাকুন আগুনে। দেখুন কিরকম লাগে। এর থেকে বহুগুণ বেশি আমি জ্বলেছি,পুড়েছি।তখন তো বেশ মজা নিয়েছিলেন। আমিও নিতে থাকি।আপনাদের মাফ করলে আমি নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাবো। তাতো আমি চাই না। নাও গেট লস্ট। আমি চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যান। দয়া করে আমাকে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে দিন। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।

চোখ দিয়ে পানি পরছে। কিন্তু তবুও আমি থেমে নেই। এত কথা শোনাই তারপরেও এর শরম হয় না। শারমিন চলে এলো। আমি ওর সাথে বের হতে নিলেই রোশান আমার হাত ধরে আটকালো। আমি রাগে তার হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলাম। কিন্তু এক চুলও নাড়াতে পারলাম না। চেচিয়ে বললাম,

— হাত ছাড়ুন আমার। এটা কোন ধরনের অসভ্যতামী। পাবলিক প্লেসে আমি কোন সিনক্রিয়েট করতে চাইছিনা রোশান। হাত ছাড়ুন বলছি।

শারমিন রেগে বললো,
— নিজের মঙ্গল চাইলে ওর হাত ছেড়ে দিন। নয়তো অনেক খারাপ হয়ে যাবে বলছি।

কিন্তু রোশান কোন কথা না বলে শক্ত করে আমার হাত ধরে টেনে বাইরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। আমি আরেক হাতে ওর হাত টেনেও ছুটাতে পারছি না। কালো একটা প্রাইভেট কারের সামনে এসে দরজা খুললো। আমাকে ভেতরে নিয়ে যাওয়ার আগেই আরেকটা হাত এসে ঝাটকা মেরে রোশানের থেকে আমাকে তার কাছে টেনে নিয়ে বললো,

— কি হচ্ছে এখানে টিডি পোকা?

আমি তাকিয়ে দেখি এনাজ রাগী চোখে রোশানের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি বিস্মিত চাহনিতে বললাম,

— আপনি এখানে? কোথা থেকে ডাউনলোড না থুরি আমদানি হলেন? একদম হিরোর মতো এন্ট্রি মারলেন যে তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি😑।

এনাজ আমাকে চোখ রাঙিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— কেন খুব বেশি অসুবিধা হয়ে গেছে তোমার?

— কি যা তা বলেন? আপনি এসে বরং ভালো করেছেন৷ দেখুন না উনি আমার সাথে কিরকম অসভ্যতামী করছে।

— তাতো দেখতেই পাচ্ছি। (রোশানের দিকে তাকিয়ে) সমস্যা কি আপনার? রাস্তার মাঝখানে ওর হাত ধরে টানাটানি করছেন কেন?

রোশান কোন কথা বললো না। ভ্রু কুঁচকে এনাজ আমাকে যে হাতে ধরে রেখেছে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। এনাজ রাগী কন্ঠে বললো,

— আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি? কি সমস্যা আপনার? কোন সাহসে আপনি ওর হাত ধরেছিলেন।

রোশান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
— যেই সাহসে আপনি ওর বাহুতে হাত রেখেছেন সেই সাহসে।

এনাজ রেগে গেলে কেন জানি আমার ভীষণ ভয় করে। মনে হয় এই বুঝি আমার গালে ঠাস করে একটা দিয়ে বসলো। কিন্তু এনাজ সেরকম কিছু এখনো করেনি। তবুও মনের ভয়। এনাজ কিছুটা দম নিয়ে বললো,

— মুখ সামলে কথা বলুন। পাবলিক প্লেসে চুপচাপ আছি বলে আপনি যা খুশি তা বলে যাবেন আর আমি সবকিছু হজম করে নিবো। এমনটা যদি ভাবেন তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন।

রোশান হাত মুঠ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। এনাজ আমার বাহুতে তার এক হাত পেচিয়ে জোরে নিজের সাথে চেপে ধরে রোশানকে আঙুল দিয়ে শাসালো। তারপর উল্টো দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। রোশান একবারের জন্য আটকালো না। জোরে গাড়ির দরজায় লাথি মেরে রাগে ফুঁসতে লাগলো। এনাজ দুই আঙুল দিয়ে আমার মুখটা পেছন থেকে ঘুরিয়ে সামনের দিকে নিলো।আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ তার সাথে চলতে লাগলাম। মুহুর্তের মধ্যে সবকিছু এত দ্রুত ঘটলো যে আমার মাথায় সব তালগোল পাকিয়ে গেলো।
#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_34
#Writer_NOVA

❝ভাই, তোর যদি আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকতে মন চায় তাহলে থাকবি। না থাকতে মন চাইলে নিজ দায়িত্বে বের হয়ে যাবি। কিন্তু আমার পার্সোনাল বিষয়ে নাক গোলাইতে আসলে দুই আঙুল দিয়া ফিক্কা ব্লক লিস্টে ফালায় দিমু।❞

ফেসবুক প্রোফাইলের বায়ো তে এই কথাগুলো লিখে রাখছি। তবুও যত চুলকানি পাবলিক আমার কপালেই জুটে। একটু আগে মেয়ের নাম দিয়ে খোলা ফেইক আইডির এক ছেলে ইচ্ছে মতো জ্বালাচ্ছিলো। তাই তাকে দুই আঙুলে ফিক্কা ব্লক লিস্টে ফেলে দিছি। এবার আমার ব্লক লিস্টে আত্মীয়-স্বজনের সাথে থাকুক। একটু বই নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু ফলাফল জিরো। কয়েক পেজ উল্টিয়ে পাল্টিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম। তারপর বাকিটা ইতিহাস। তন্বী আমার পাশে শুয়ে কার সাথে জানি চ্যাটিং করছে। মাঝে মাঝে মুচকি হাসছে। এর লক্ষ্মণ আমার ভালো ঠেকছে না। সময় এখন রাত দশটা। কিন্তু তায়াং ভাইয়া বাইরে থেকে আসেনি। তন্বীকে আবারো মুচকি হাসতে দেখে জোরে এক ঠেলা মেরে জিজ্ঞেস করলাম,

— এই তোর কি হয়েছে রে? তুই এমন মুচকি মুচকি হাসতেছিস কেন? নয়া নয়া প্রেমের লক্ষ্মণ মনে হচ্ছে।

— আরে ধূর। তুমি যে কি বলো না।

— কার সাথে চ্যাটিং করছিস?

— এক ফ্রেন্ডের সাথে।

— ওহ। আমি ভাবলাম প্রেমে পরেছিস। তন্বী!

— হু বলো।

— তোকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।

— হুম বলো।

— আমার দিকে তাকা। মোবাইল রাখ।

তন্বী হাতের মোবাইলটা রেখে উঠে বসলো। তারপর আমার চোখে চোখ রেখে বললো,
— রেখেছি এবার বলো।

— আজকে দুপুরে একটা কাহিনি হয়ে গেছে।

— কি কাহিনি?

— বলছি।

তন্বীকে ক্যাফেতে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা খুলে বললাম। রোশানের কোন কথা লুকালাম না। এনাজের হিরোর মতো এন্ট্রির কথাও বললাম। তন্বী সব শুনে বিস্মিত চোখে বললো,

— আজ এতকিছু ঘটে গেছে!

— জ্বি হ্যাঁ। এখন আমাকে এটা বল এনাজ কি তোর কাছে গিয়েছিল? নয়তো ও জানলো কি করে আমি ঐ ক্যাফেতেই আছি?

— হ্যাঁ, এনাজ ভাইয়া তো আমার কাছে এসেছিলো। তোমার রুমে নাকি তোমাকে খুঁজে এসেছে কিন্তু পাইনি। আমাকে জিজ্ঞেস করলো তুমি কোথায়। আমি ঐ ক্যাফের নাম বলে দিলাম।

— এনাজ কেন এসেছিলো? সেই বিষয়ে কি কিছু বলেছিলো?

— আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, “হঠাৎ ভাইয়া আপনি কলেজে?” উনি বললো, “কলেজের পাশ দিয়ে যাচ্চিলাম তাই ভাবলাম তোমাদের সাথে দেখা করে যাই।” তারপর যখন তোমার কথা বললাম সে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলো।

— সত্যি উনি যদি সঠিক সময়ে না যেতো তাহলে ঐ রসুইন্না আমাকে আজ তুলেই নিয়ে যেতো। জানিস এনাজ ঐ কাহিনি ঘটার পর আমার সাথে কোন কথা বললো না। থমথমে গলায় শুধু বললো,”বাইকে উঠো।” আমি বাইকে উঠার পর একটানে বাসার গেইটে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। ভালো-মন্দ কিছু বললো না। মাঝে মাঝে এদের কি হয় তাই আমি বুঝি না।

— এরা এমনি। কখন কি হয় তুমি কেন আমিও বুঝি না।

তন্বীর মোবাইলে টুং করে ম্যাসেজ আসতেই তন্বী মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। ভেবেছিলাম তায়াং ভাইয়াকে আজ রোশানের কথা সব বলে দিবো। কিন্তু তার আসার নামও নেই। সময়ও যেন কাটছে না। ও থাকলে দুজন টম এন্ড জেরির মতো লেগে কখন যে সময় পার হয়ে যায় নিজেও জানি না। আমি উঠে খালামণির রুমে চলে গেলাম। খালামণি মোবাইলে সিরিয়াল দেখছে। আমি গিয়ে পাশে বসলাম। আমাকে দেখে মোবাইল রেখে জিজ্ঞেস করলো,

— কিছু বলবি?

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালাম। খালামণি বললো,
— কি বলবি বল?

— তায়াং ভাইয়া কোথায়? এতরাত হয়েছে তবুও আসে না কেন?

— এর কথা আর বলিস না। একটু আগে কল দিলাম মোবাইল বন্ধ। সন্ধ্যার দিকে নিজেই কল করে বলছিলো আসতে দেরী হবে৷ কিন্তু এখনো আসার খবর নেই। তা তুই হঠাৎ তায়াং-এর খবর নিচ্ছিস যে?

— আমার সময় কাটছে না। তায়াং ভাইয়া থাকলে শয়তানি করতে পারতাম তাই আরকি।

— ওরে ফাজিল মেয়ে। এর জন্য ভাইকে খোঁজা হচ্ছে।

— ও বাসায় না থাকলে আমার ভালো লাগে না। সময় কাটতে চায় না।আর বাসায় থাকলে ওরে জ্বালাতে জ্বালাতে কখন যে সময় চলে যায় নিজেও বুঝি না।

— খেয়ে শুয়ে থাক। অনেক রাত তো হলো।

— না তায়াং ভাইয়া আসুক। তারপর একসাথে খাবো।

— ওর আসার কোন ঠিক-ঠিকানা আছে। ওর জন্য না খেয়ে বসে থাকবি দেখবি এসে বলবে খেয়ে এসেছে। সে এখন খাবে না।

— থাক তবুও আরেকটু অপেক্ষা করি।

খালামণির রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় গিয়ে বসলাম। মাথাটা সোফার পেছনে হেলিয়ে দিয়ে দুপুরের কথা ভাবতে লাগলাম। মোবাইলে টুং করে ম্যাসেজ আসতেই মোবাইল হাতে নিলাম। দেখি ভাইয়া ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ওন করে দেখি ম্যাসেজে লেখা,

— কি রে শাঁকচুন্নি ঘুমাসনি?

আমি দ্রুত রিপ্লাই দিলাম।
— না এখনো ঘুমায়নি। তুই কোথায়? বাসায় কখন আসবি?

অপরপাশ থেকে সিন হলো কিন্তু রিপ্লাই এলো না। সিন করে রিপ্লাই না দিলে বিরক্ত লাগে। তাই কতগুলো এংরি রিয়েক্ট পাঠিয়ে বললাম
— ঐ পাঠা, ম্যাসেজ দেখে রিপ্লাই দেস না কেন?

ভাইয়া সিন করে বললো,
— আমি সিঁড়ি তে আছি৷ দরজা খোল।

আমি মোবাইল রেখে দ্রুত দরজা খুললাম। কিন্তু দরজার অপরপাশে কেউ নেই। উঁকি মেরে দেখলাম সিড়িতেও কেউ নেই। তিন মিনিট অপেক্ষা করার পর তায়াং ভাইয়া এলো। সে ভেতরে ঢুকতেই আমি দরজা আটকে ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম। ভাইয়া ঘেমে একাকার। ওর শার্ট ভিজে গেছে। ওর মুখের থেকে ঘামগুলো নিয়ে আমার মুখে ছুড়ে মেরে বললো,
— এখনও জেগে আছিস যে?

আমি নাক,মুখ সিটকে ওর থেকে দুই হাত দূরে গিয়ে বললাম,
— ইস, খাচ্চর। সর সামনের থেকে। ওয়াক! এই খাচড়ামি গুলো কি তোর যাবে না রে পাঠা। আমার মুখে ঘামের পানি ছিটিয়ে মারতে হবে।ওয়াক থু🤮।

— এত নাক সিটকালি না দাঁড়া তুই।

ভেজা শার্ট-টা খুলে আমার মুখে ছুড়ে মারলো। ঘাম,পারফিউম মিক্সিং হয়ে বিচ্ছিরি গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। সেটা আমার মুখে ছুড়ে মারছে। ভেতর থেকে সব গুলিয়ে আসছে।এর এসব খাচড়ামি এখনো আছে। আমি ফিরতে ওর শার্ট ওর শরীরে ছুড়ে মেরে বললাম,

— সর খাচ্চড়। আমার মুখটাকেই খারাপ করে দিলো। এখন ইচ্ছে মতো ফেশওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে। তোর সামনে থাকাই আমার ভুল হয়েছে।

— তোর ঐ আটা-ময়দার থেকে আমার ঘামের পানি অনেক ভালো।

— তোর ভালো নিয়ে তুই থাক।

— এগুলো হলো তোর শাস্তি। সেদিন আমাকে জোর করে মূলার তরকারি খাইয়েছিলি না তার বদলা। এখন এই ঘামে ভেজা শার্ট দিয়ে তোর মুখ মুছে দিবো। তুই শুধু একটু দাড়া।

ওর সামনে গিয়ে চুলগুলো ইচ্ছে মতো টেনে পিঠে দুটো কিল বসিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলাম। এই শয়তান ভালো হবে না। এটা ওর ছোট বেলার অভ্যাস। মাঝে এমন করেনি বলে আমি ভেবেছিলাম অভ্যাসটা বোধহয় বদলে ফেলেছে। কিন্তু ঐ যে একটা কথা আছে না পাহাড় স্থান পরিবর্তন করেছে তা বিশ্বাস করো। কিন্তু কেউ ছোট বেলার অভ্যাস কেউ পরিবর্তন করেছে তা বিশ্বাস করো না।

💖💖💖

পূর্ব দিগন্তে রক্তিম আভায় চারিদিক আলোকিত হয়েছে। আরো একটি নতুন সকালের সূচনা। নামাজ পরে কোরাআন পরে নিলাম। এখন ঘুমালে দশটার আগে উঠতে পারবো না। তবে আজ কলেজ যেতে একটুও ইচ্ছে করছে না। কবে যে গ্রামে যাবো সেই টেনশনে আছি। ভাইয়াকে বলছিলাম হলুদের দুই দিন আগে যাবো। কিন্তু তায়াং ভাইয়া বলছে হলুদের দিন যাবে। কিন্তু সেদিন গেলে আমার আনন্দ মাটি। আমি এমনি জার্নি করতে পারি না। জার্নি করে বাসায় গেলে দুই দিন বেডের থেকে মাথা উঠাতে পারি না। মাথা ঘূর্ণায়। তাই ভাইয়া হলুদের অনুষ্ঠানের একদিন আগে যেতে রাজী হয়েছে। তাও ভালো। গ্রামের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো শহরের মতো না হলেও আনন্দ অনেক বেশি হয়। আজ চাচাতো ভাইয়া ও বোন ঢাকায় আসবে। বিয়ের মার্কেটিং সব এখান থেকে করে নিবে। তায়াং ভাইয়া তাদের নিয়ে কোন শপিংমলে নাকি যাবে। তায়াং ভাইয়ার সাথে এনাজও যাবে। তাই ভাইয়াকে সকাল দশটার আগে ডাক দেওয়া নিষেধ। খালামণির সাথে কিচেনে হাতে হাতে কাজ করে দিতে লাগলাম। কখন যে সাড়ে নয়টা বেজে গেছে বুঝতেই পারলাম না।

সদর দরজায় বেশ কয়েকবার খটখটানির শব্দ পেয়ে দ্রুত সেদিকে ছুটলাম। এই কাজটা হলো বিচ্ছু দুটোর। মাঝে মাঝে দরজায় জোরে থাপড়িয়ে কিংবা কোলিং বেল বাজিয়ে দৌড় মারে। আজ হাতে পেলে মোয়া বানাবো। দরজা খুলে বাইরে উঁকি মেরে কাউকে দেখতে পেলাম না৷ নেংটি ইদুরটা নিশ্চয়ই বাসায় ঢুকে গেছে। আমি কিছু সময় দরজা আবজিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ খট করে ইফাতদের বাসার দরজা খুললো। আমি ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভেবেছিলাম বিচ্ছু দুটোর একজন হবে। কিন্তু না। ওদের আম্মু এক বালতি জামা-কাপড় নিয়ে বের হলো। মাঝারি সাইজের বালতিটা নিয়ে উনি হাঁপিয়ে গেছে। বালতি মেঝেতে রেখে উনি দুই হাতে কোমড় ধরে দাঁড়ালেন। বোঝাই যাচ্ছে উনার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি বাইরে বের হয়ে তাকে বড় করে এক সালাম দিলাম।

— আসসালামু আলাইকুম শাশুড়ী আম্মা।

— ওয়া লাইকুমুস সালাম।

— কেমন আছেন?

— এই তো মা আছি আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি এই বালতি নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

— এই তো ছাদে রোদ দিতে।

তার কথা শুনে আমার চোখ চড়কগাছ। বলে কি উনি? এই ৮ মাসের প্রেগন্যান্ট অবস্থায় উনি এই বালতি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে যাবে। আমি চেচিয়ে বললাম,

— আপনি পাগল হইছেন? কি বলেন এসব? আল্লাহ না করুক সিঁড়ি থেকে স্লিপ কেটে যদি নিচে পরেন তাহলে কোন উপায় আছে? এই অবস্থায় কোন ভারী জিনিস নেওয়ায় উচিত না। আর আপনি সেটা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে যাবেন? বিপদ ডেকে আনতে ইচ্ছে করছে?

উনি আমার কথায় হাসলেন। তবে তার হাসিতে আমি লুকানো কষ্ট খুঁজে পেলাম। মুখে হাসি হাসি ভাব রেখেই বললো,
— এতগুলো ধুতে পারলে ছাদে দিতে সমস্যা কি?

তার কথা শুনে আরেকদফা অবাক। ৮ মাসের পেট নিয়ে উনি নাকি এগুলো ধুয়েছেন। কিছুটা রাগী গলায় বললাম,

— আপনাদের কাজের বুয়ার হয়েছে কি? এর দুই দিন পরপর কি হয়? আর আপনার শাশুড়ী কোথায়?

— কাজের বুয়া বললো আজ আসতে পারবে না। কোন কারণ বললো না। আর শাশুড়ী অসুস্থ।

— সত্যি অসুস্থ? নাকি অসুস্থ হওয়ার ভান করছে?

— জানি না মা।

— আচ্ছা আপনাকে না বলছি কোন দরকার হলে নিঃসংকোচে আমাকে ডাকবেন। আপনি একটু কষ্ট করে ইফাতকে কিংবা সিফাতকে পাঠাবেন। তাহলেই তো আমি চলে আসি। আর কাজের বুয়া আজ আসেনি। কাল তো আসবে। কাল এগুলো তাকে দিয়ে ধুইয়ে নিতেন। আপনাকে অসুস্থ শরীরে এসব কাজ করতে বলছে কে?

উনি আমার কথা শুনে চোখের পানি ফেলে বললেন,
— মা গো সবার কপালে তো সুখ জোটে না। আমিও সেই হতভাগী। গরিবের মেয়ে বলে আমার খারাপ লাগার কোন দাম নেই। আল্লাহ আমাকে নিয়ে গেলেই ভালো হবে। আর ভালো লাগে না এই সংসার জীবন।

তার প্রতিটা কথার মাঝে একরাশ বিষন্নতা ও চাপা কষ্টের আঘাত খুঁজে পাচ্ছি আমি। সামনে গিয়ে দুই চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,
— বাচ্চাদের মতো কান্না করেন না তো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কষ্টের পর সুখ রেখেছে।

আমার কথায় উনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আফসোসের সুরে বললো,
— আর সুখ!

— আমাকে বালতিটা দিন। আমি ছাদে জামা-কাপড় মেলে দিয়ে আসি। আর কখনো এসব ভারী বালতি নিয়ে ছাদে যাওয়ার কথা চিন্তাও করবেন না। দরকার পরলে কোন লজ্জা না পেয়ে আমাকে ডাকবেন। শাশুড়ীর এতটুকু সাহায্য না করতে পারলে কেমন বড় বউ হলাম?

আমার কথা শুনে উনার কান্নামাখা মুখে এক চিলতে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। সেটাই আমাকে মুগ্ধ করলো। আমি তার হাতের কাছ থেকে বালতিটা নিয়ে হাসিমুখে বললাম,

— যান, নিজের রুমে গিয়ে বিশ্রাম করুন। আমি ছাদে জামা-কাপড় রোদ দিয়ে আসছি। আপনার শাশুড়ীর সাথে আমার কিছু কথা আছে। ভেবেছিলাম কিছু বলবো না। কিন্তু এখন দেখছি চুপ করে থাকাটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল।

— না না তুমি তাকে কিছু বলো না।

— আপনি ভয় পেয়েন না। আমি এমন করে তাকে বলবো যে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙ্গবে না।

উনি বাসার ভেতরে ঢুকে পরলেন। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বালতি নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। জামা-কাপড় দড়িতে মেলে খালি বালতি নিয়ে ইফাতদের ফ্লাটে চলে গেলাম। দরজা আগের থেকে খোলা ছিলো। আমি বালতিটা ওয়াশরুমের সামনে রেখে ইফাতের দাদীর রুমে গিয়ে উঁকি দিলাম। ইফাতের দাদা এমন সময় বাসায় থাকে না। চালের আড়তে ঢু মারতে যায়। ওর দাদী সম্ভবত ওয়াসরুমে গিয়েছে। আমি তাই চুপটি করে খাটে বসে এদিক সেদিক দেখতে লাগলাম। হঠাৎ পেছন থেকে ইফাত আমাকে নাম ধরে ডাকলো,

— নুবা!

আমার নামের বিকৃত উচ্চারণ শুনে কপাল কুঁচকে ইফাতের দিকে তাকালাম। দিলো রে দিলো, এই নেংটি ইদুর শেষ পর্যন্ত আমার নামটারও মান-ইজ্জ্বত মেরে দিলো।

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here