নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-১১

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১১

আইরাত আব্রাহামের কেবিনের দরজাটা আস্তে করে খুলে নিজের মুখটা একটু বের করে দেখে নেয়। তারপর আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের গলা কিছুটা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে।

আইরাত;; ম্যা আই কাম ইন!

ওপর পাশ থেকে কোন রকম প্রতিউত্তর না পেয়ে আইরাত পুনরায় একই কথা জিজ্ঞেস করে কিন্তু এবারও কোন উত্তর পায় না। অবশেষে বিনা পারমিশনেই চলে যায় ভেতরে। ওমা ভেতরে গিয়ে দেখে আব্রাহাম নেই। আইরাত কপাল কুচকে ফেলে। মাত্রই না দেখলো আব্রাহাম কে এখানে আসতে। ইন ফ্যাক্ট আইরাতের আগেই এসেছে আব্রাহাম এখানে তাহলে গেলো কই! আইরাত কিছুটা উঁকি ঝুকি মেরে দেখছিলো কিন্তু সে এটা খেয়াল করে নি যে আব্রাহাম ঠিক তার পেছনেই দুইহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম হেসে দেয়, তারপরেই আইরাতের পেছন থেকে নিজের দুহাত প্রসারিত করে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। আইরাত যেনো বরফ হয়ে গেলো মূহুর্তেই। স্তব্ধ লেগে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম তাকে একদম আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে এতে যেনো আইরাতের দম যায় যায় অবস্থা। আব্রাহাম আইরাতের চুলের মাঝে নিজের মুখ গুজে দেয়। এই মূহুর্তে আইরাতের মাঝে এত্তো লজ্জা কাজ করছে যে মুখের বুলি আর বের হচ্ছে না। তার গলাতে নিজের নাক ঘষতে ঘষতে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আইরাত;; _________________________

আব্রাহাম;; ইউ নো আই মিস ইউ সো মাচ!

আইরাত;; মা মানে ব ব বলছিলাম ক কি যে প প্লিজ আমাকে ছাড়ুন।

আব্রাহাম;; কাপছো কেনো?

আইরাত;; আপনি ছা ছা ছাড়ুন আম আমাকে।

আব্রাহাম আইরাত কে ছেড়ে দিয়ে নিজের সামনে আনে। একহাতে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে আরেকহাতে তার সামনে আসা চুলগুলো কানের পিছে গুজে দিতে দিতে বলে…

আব্রাহাম;; আইরাত লুক এট মি..

আইরাত এখনো মাথা নিচু করেই রেখেছে।

আব্রাহাম;; আইরাত জানপাখি আমার দিকে তাকাতে বলেছি।

আইরাত একদম বেইবি ফেইস বানিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; সমস্যা কি! না মানে আমি বাঘ না ভাল্লুক হ্যাঁ, এতো ভয় কেনো পাও আমাকে দেখে?

আইরাত;; আ আম আমি জানি না, আ আপ আপনি আমা আমার থে থ থেকে দূরে থাকু থাকুন।

আব্রাহাম;; আর যদি না থাকি তো 🤨! (শক্ত মুখে)

আইরাত;; আমি এখানে একটা কাজের জন্য এসেছি।

আব্রাহাম আইরাতের কাছ থেকে সরে গিয়ে তার চেয়ারে গিয়ে বসে। আব্রাহাম কে কিছু বলতে না দেখে আইরাত তার ব্যাগ থেকে অফিসের ফাইল গুলো বের করে।

আইরাত;; আসলে আমার অফিসের ওনার চাচ্ছেন আমি যেনো অফিসে আবার জয়েন করি। আর যদি জয়েন করি তাহলে এই ফাইলগুলো তে আপনার সিংন্যাচার লাগবে। তাই…

আব্রাহাম;; আর যদি আমি সাইন না করি!

আইরাতের মুখ টা হুট করেই মলিন হয়ে যায়।

আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল এককাজ করো। তোমাকে যেমন তোমার অফিসের ওনার অফার দিয়েছে আবার চাকরি তে জয়েন করার জন্য ঠিক তেমনই এখন আমিও তোমাকে একটা অফার দেই।

আইরাত;; মানে??

আব্রাহাম;; আমার অফিসে জয়েন করে নাও।

আইরাত;; না আমি পারবো না। মানে তা বলি নি আসলে আমি রিপোর্টার প্রফেশন কেই বেশি প্রাধান্য দেই আর কি।

আব্রাহাম;; ওকে তোমার ইচ্ছে।

আইরাত;; হুম আপনি ম…….

আব্রাহাম;; প্রেজেন্টেশন সেট আপ করতে পারো?

আইরাত;; জ্বি?

আব্রাহাম;; ল্যাপটপে প্রেজেন্টেশন সেট আপ করতে পারো?

আইরাত;; হ্যাঁ

আব্রাহাম;; কাম হ্যায়ার।

আইরাত গিয়ে আব্রাহামের পাশে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম ইশারাতে তাকে ল্যাপটপ অন করতে বলে। আইরাত তাই করে, এতে আইরাত আব্রাহামের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুটা ঝুকে পরে। তারপর ল্যাপটপ চালাতে লাগে। আর আব্রাহাম হাতে একটা গ্লোভ নিয়ে ঘোড়াচ্ছে। আইরাত হঠাৎ কাজ করতে করতেই আব্রাহাম কে জিজ্ঞেস করে..

আইরাত;; এবার কি আপনি সাইন করবেন?

আব্রাহাম;; তোমাকে ঘোড়াবো।

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম এক টানে আইরাতকে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। আইরাত এতে ভরকে যায়। হুট করেই কি হলো সব তার মাথার ওপর দিয়ে গেলো। নিজেকে আব্রাহামের কোলের ওপর অনুভব করতে পেরে দ্রুত সেখান থেকে উঠে চলে আসতে নিবে তখনই আব্রাহাম তার একহাত দিয়ে আইরাতের পেট চেপে ধরে। আইরাত মুখ বাকা করে আব্রাহামের দিকে তাকায়। তবে সেদিকে যেনো আব্রাহামের খেয়াল নেই। সে তার বাম হাত দিয়ে ল্যাপটপ চ্যাক করছে আর ডান হাত দিয়ে আইরাতকে আটকে রেখে দিয়েছে। আইরাত তার দুইহাত দিয়ে ঠেলেও আব্রাহাম সে সরাতে পারছে না। সে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে দেখে তার মাঝে কোন ভাবান্তর-ই নেই। এমন একটা ভাব যেনো সে কিছুই করছে না।

আব্রাহাম;; এবার বেশি নড়াচড়া করলে একদম কোল থেকে ঠাস করে ফ্লোরে ফেলে দিবো।

আইরাত যেনো অসহায়। কিছুই করার নেই তার এখন। চুপ করে বসে আছে। আইরাতকে এমন চুপ করে বসে থাকতে দেখে আব্রাহাম তার দিকে তাকায়। দেখে আইরাত কপাল কুচকে তার নিচের ঠোঁট টাকে উল্টিয়ে রেখেছে৷ তা দেখে আব্রাহাম ফিক করে হেসেই দেয়। আর আইরাত তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম কে সে কত্তোদিন যাবত দেখছে এর মাঝে আব্রাহাম কে এভাবে হাসতে দেখে নি সে, শুধু শয়তানি হাসি দিতেই দেখেছে। আইরাত কপাল ভাজ করে তার দিকে তাকিয়েই ছিলো তার মাঝেই আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে আইরাতের দুগাল চেপে ধরে হাসিমাখা কন্ঠেই বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল, ইউ আর সো সো সো মাচ কিউট!

এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের গালে কষে একটা চুমু দিয়ে দেয়। আইরাত চোখ পাকিয়ে তাকায়। আর এবার এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে পরে৷ দাঁড়িয়ে নিজের হাতের উল্টো পাশ দিয়ে গাল ঘষতে লাগে। আর এটা দেখেই আব্রাহামের মুখের ভাব সেকেন্ডই পরিবর্তন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকায়। আর আইরাত শুকনো ঢোক গিলে। এভাবে আব্রাহাম তার দিকে তাকিয়ে আছে কেনো! আবার কি করলো সে। আইরাত এটাই ভাবছিলো তার মাঝেই আব্রাহাম তার চেয়ার থেকে উঠে পরে। একহাত পকেটে গুজে দিয়ে আইরাতের দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসতে লাগে। আইরাত আমতা আমতা করে কিছু বলতে গিয়েও আবার আটকে যায়। আব্রাহাম তার দিকে এভাবে এগোচ্ছে কেনো! নতুন করে কি করে বসলো আবার। আইরাত এগুলো ভাবছে আর পেছাচ্ছে। আব্রাহাম তার দিকে যত এগোয় আইরাত তত পেছায়। পেছাতে পেছাতে এক সময় আইরাত একটা বড়ো কাচের গ্লাসের সাথে ঠেকে যায়। আইরাত হকচকিয়ে একবার পেছনে তাকায় তারপর আবার সামনে আব্রাহামের দিকে তাকায়। কিন্তু ততক্ষণে আব্রাহাম আইরাতের বেশ কাছে এসে পরেছিলো। আব্রাহাম তার এক হাত আইরাতের মাথার পাশে গ্লাসের ওপর রেখে দেয়।

আইরাত;; আমি কিছু করি নি, বিশ্বাস করুন আমি সত্যি কিছুই করি নি এবার। প্লিজ যেতে দিন।

আব্রাহাম;; অনেক কিছু করেছো তুমি।

আইরাত;; আবার কি করলাম?

আব্রাহাম;; গাল কেনো মুছলে?

আইরাত;; _________________________

আব্রাহাম;; বলো! আমি তোমাকে কিস করেছি সেই গাল কেনো ঘষলে?

আইরাত;; মানে, আসলে ইয়ে মানে…

আব্রাহাম আইরাতকে আর কিছুই বলার সুযোগ না দিয়ে আবার নিজের বাম হাত দিয়ে তার গাল দুটো শক্ত করে চেপে ধরে। এতে আইরাতের মুখ টা একদম চুপসে গিয়ে কিউটিপাই লাগছে। আব্রাহাম আর এক মূহুর্ত দেরি না করে আইরাতের দুগালে, থোতায়, নাকের ডগায়, কিছুটা ঠোঁটের পাশেও চুমু একে দেয়। আর সর্বশেষে আইরাতের কপালে। এই সময়টাতে আইরাত সম্পূর্ণই নিজের চোখ-মুখ সব খিচে বন্ধ করে দিয়ে রেখেছিলো। আব্রাহাম এবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ফট করে চোখ মেলে সামনে তাকায় আইরাত। দেখে আব্রাহাম তার ঠোঁটে হাসির ঝলক রেখে দাঁড়িয়ে আছে।

আব্রাহাম;; আমি কিস দেওয়ার পর তা মুছে ফেললে এর পরেরবার থেকে যে কি কি করবো আর কোথায় কোথায় কিস করবো তা আমি নিজেও জানি না।

আইরাত;; আম…..

আব্রাহাম;; আর হ্যাঁ বেবিগার্ল, তুমি ফাইল গুলো এখানেই রেখে যাও। আমার অফিস থেকে কল করলে তারপর তুমি আবার এখানে এসো ওকে।

আব্রাহামের বলার সাথেসাথেই আইরাত তার ব্যাগ টা নিয়ে এক প্রকার দৌড়েই তার কেবিন থেকে ছুটে বের হয়ে আসে। আর আইরাতের এসব কান্ড দেখে আব্রাহাম হেসে হাত দিয়ে তার চোখগুলো কিছুটা চেপে ধরে।

আব্রাহাম;; এক পিচ্চি পাগল মেয়ের প্রেমে পরেছি আমি।


আইরাত তো বাইরে এসে সোজা এক টেক্সিতে ওঠে পরেছে। আর ওদিকে আব্রাহাম বসে আইরাতের রেখে যাওয়া ফাইলগুলো দেখতে লাগে।

আব্রাহাম;; রাশেদ, রাশেদ!

রাশেদ;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম;; আরে ইয়ার কড়া কফি খাওয়াও।

রাশেদ;; টু মিনিট”স স্যার,, এক্ষুনি আনছি।

রাশেদ দ্রুত গিয়ে একজন স্টাফ কে দিয়ে কফি বানিয়ে আব্রাহামের কেবিনে পাঠিয়ে দেয়। আব্রাহাম গরম ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর আইরাতের ফাইলগুলো চ্যাক করছে। তবে চ্যাক করতে করতেই একটা জিনিসে গিয়ে আব্রাহাম থেমে যায়। ব্যাপার টা খেয়াল করতেই দেখে আইরাতের অফিসে ছেলে & মেয়ে একসাথে কাজ করবে৷ অর্থাৎ অফিসে ছেলে মেয়ে একসাথে কাজ করলেও তাদের সেকশন আলাদা ছিলো, গ্রুপটাও আলাদাই ছিলো। তবে এইবার কন্ডিশন সব আলাদা। একই কেবিনে ছেলে মেয়ের একসাথে কাজ করতে হবে আর গ্রুপেও ছেলেরা থাকবে। তা দেখেই আব্রাহাম তার ঠোঁট কামড়ে ধরে। তখনই রাশেদ আসে…

রাশেদ;; স্যার আপনি ম্যানেজার কে ডেকেছিলেন?

আব্রাহাম;; কাম ইন।

রাশেদ এসে আব্রাহামের সামনে দাঁড়ায়।

আব্রাহাম;; ক্যান্সেল (আইরাতের ফাইল গুলো টেবিলের ওপর ঠাস করে রেখে দিয়ে)

রাশেদ;; কিন্তু স্যার..

আব্রাহাম;; আইরাতের ফাইল গুলো ক্যান্সেল। না-ই আমি এগুলোতে সাইন করবো আর না-ই আইরাত আবার ওই অফিসে জয়েন করবে।

রাশেদ;; ওকে স্যার।

আব্রাহাম;; এটা আইরাত কে জানিয়ে দিও।

রাশেদ ফাইল গুলো নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে এসে পরে। অফিসেই বসে বসে কাজ করছিলো আব্রাহাম তার মাঝেই ইলা ফোন করে।

আব্রাহাম;; হ্যালো।

ইলা;; আচ্ছা এতো পাগলামি করলে কেমন হবে আব্রাহাম?

আব্রাহাম;; এমা আমি আবার কি করলাম?

ইলা;; কি করলি মানে। এতো ভাঙচুর আচ্ছা যাজ্ঞে তোকে বলেও লাভ নেই উল্টো আমাকেই চুপ করে বসিয়ে রাখবি।

ইলার কথা শুনে আব্রাহাম মুচকি হাসে।

আব্রাহাম;; আচ্ছা খেয়েছো তুমি?

ইলা;; হ্যাঁ

আব্রাহাম;; মেডিসিন”স?

ইলা;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম;; হুমম, কি করছো?

ইলা;; কি আর করবো, ঘরেই হাঁটছি। আচ্ছা তুই কখন বাসায় আসবি?

আব্রাহাম;; রাত হবে আসতে দাদি।

ইলা;; আচ্ছা সাবধানে থাকিস।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ, টেক কেয়ার। বায়।

ইলা ফোন কেটে দেয়। দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে আসে। আমেরিকা থেকে কিছু ক্লাইন্ট এসেছে। তাদের সাথে ডিল ফাইনাল করার কথা। আর তখন যে প্রেজেন্টেশন টা দেখছিলো সেটা এই ডিলের ব্যাপারেই ছিলো। রাশেদ জানিয়েছে ক্লাইন্ট গুলো অন দি ওয়ে। আসতে আর ঘন্টা খানেক লাগবে। তাদের ফ্লাইট ল্যাড করেছে বেশ সময় আগেই। কেবিনে বসে থেকে থেকে আব্রাহাম বেশ বোর হচ্ছিলো তাই ভাবলো বাইরে বের হওয়া যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। আব্রাহাম নিজের জেকেট টা গায়ের ওপর জড়াতে জড়াতে বাইরে বের হয়ে পরে৷ গার্ড গুলো আব্রাহামের সাথে যেতে চাইলে সে নিজেই মানা করে দেয়। গাড়ি হয়তো অফিসের পেছনের দিকটায় পার্ক করা। তাই গার্ডের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তা আঙুলে ঘোড়াতে ঘোড়াতে এসে পরে। গাড়ির লক খুলে তাতে উঠতে যাবে তখনই কারো চাপা গলা শুনতে পেরে থেমে যায়।

অন্যদিকে রাশেদের মনে পরে যে আব্রাহাম তো বাইরে চলে গেলো আর এখন সন্ধ্যা। তবে আইরাত কে তার ফাইলগুলোর বিষয়ে এখনো ইমফর্ম করা হয়নি। হ্যাঁ হলেও তাকে জানাতে বলেছে আর না হলেও। আর এখন আব্রাহাম বাইরে চলে গেলো কিছু সময় পর মিটিং আছে। অনেকটা ব্যাস্ত হয়ে পরবে সে, পরে সময় নাও পেতে পারে। এই ভেবেই রাশেদ দ্রুত আইরাতকে ফোন করে আব্রাহামের অফিসে আসতে বলে। আইরাতও আসছে বলে রেখে দেয়।


কারো ফিসফিসিয়ে কথা বলার ধ্বনি বাজছে। যেনো কেউ ঝগড়া করছে ফোনে এমন। আব্রাহাম তার কপাল কুচকে ঘাড় টা হাল্কা বাকিয়ে আওয়াজের দিক অনুসরণ করে তাকায়। বেশ খটকা লাগে তার কাছে। আব্রাহাম আবার স্বশব্দে গাড়ির দরজা টা লাগিয়ে ধীর পায়ে সেদিকেই যায়। আর কিছুদূর হাঁটতে পেয়েও যায়। আব্রাহামের গার্ডরা সবাই একই পোশাক পরে। আর সেখানেও গার্ডের পোশাক পরিহিত একজন ফোনে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ঝগড়া করছে।

গার্ড;; দেখুন আপনি যা করতে বলেছেন তাই করেছি। আব্রাহাম চৌধুরীর অফিসে ব্ল্যাকমানির প্রমাণ রাখতে বলেছেন, ইলিগ্যাল। নিজের জীবনের বাজি রেখে তাই করেছি। কিন্তু এখন যদি আপনি আমার পাওনা পুরো টাকা না দিন তাহলে কিন্তু সবকিছু আব্রাহাম স্যার কে বলে দিতেও আমার বেশি একটা সময় লাগবে না। তাই বলছি আমার সাথে বেশি বারাবারি বা ভেজাল না করে আমার পুরো টাকা আমাকে দিয়ে দিন। নয়তো আমি আপনার নাম বলে দিবো সবাইকে। তখন সবাই আপনার বিষয়ে জেনে যাবে।

আব্রাহাম;; আমার মনে হয় তার আর প্রয়োজন হবে না। কেননা আমি এখন তোর এমন কুৎসিত হাল করবো যে যার/যাদের সাথে মিলে তুই এগুলো করেছিস তোকে দেখার পর তারা অটোমেটিক সাবধান হয়ে যাবে। দ্বিতীয় বার আর এমন করার বুদ্ধি আঁটবে না। বুকের পাটায় কোলাবে না।

গার্ড টা তার পেছন থেকে আব্রাহামের কন্ঠস্বর শুনতে পেরে দ্রুত ফিরে তাকায়। দেখে আব্রাহাম রাগে রক্তচক্ষু নিয়ে ফুসছে। আব্রাহাম কে দেখে এতোটাই ভয়ংকার লাগছে যা বলার বাইরে। ভয়ে গার্ড টার হাত থেকে ফোনটা নিচে ঠাস করে পরে যায়। ফোনের ওপর পাশে থাকা ব্যাক্তিটি এখনো হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। তা দেখে আব্রাহাম তার পা দিয়ে ফোন টা একেবারে পিষে ফেলে। গার্ড টা আব্রাহাম কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম তার হাত দিয়ে খপ করে গার্ডের গলা চেপে ধরে। এতোই শক্ত ভাবে গলা চেপে ধরে যে শ্বাস আটকে যায় তার। কয়েক সেকেন্ড পর আব্রাহাম গার্ডের গলা চেপে ধরে তাকে একদম মাটি থেকে শূন্যে তুলে ফেলে। আর গার্ডটা শ্বাস নিতে না পেরে কাতরাচ্ছে। চোখ গুলো যেনো তার কোটর থেকে বাইরে বের হয়ে আসবে এমন। মরে মরে দশা এমন হলে আব্রাহাম গার্ড টাকে ছুড়ে ফেলে দেয় নিচে।


আইরাত অফিসের বাইরে এসে থামে। ভাড়া মিটিয়ে অফিসের ভেতরে প্রবেশ করতে যাবে তখনই তার কাছে অনামিকার ফোন আসে। আইরাত রিসিভ করে কানে ধরে…

আইরাত;; হ্যালো মা বলো।

অনামিকা;; হ্যাঁ রে শোন না, আমার শরীর টা বেশি একটা ভালো লাগছে না। তুই….

আইরাত;; হ্যালো কেনো কি হলো আবার? ঠিক আছো তো মা মা হ্যালো হ্যালো মা…

নেটওয়ার্ক একদম কাজ করছিলো না আর আইরাত অফিসের এক সাইডে এসে পরে। পরে কথা বললেও চলতো তবে অনামিকার নাকি শরীর ভালো লাগছে না এটা শুনেই তো আইরাত বেশ চিন্তায় পরে যায়। কানে ফোন রেখেই হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে আর হাঁটছে।

আইরাত;; আরে ঘোড়ার ডিম আবার এই নেটওয়ার্ক-এর কি হলো ছাতা। হ্যালো মা, মা শুনতে পারছো কি হ্যালো মা, ধুর ছাই।

আইরাত হাঁটতে হাঁটতে কখন যে অফিসের শেষাংশ অর্থাৎ পেছনের দিকটায় এসে পরেছে তা তার খেয়ালই নেই। সে ফোনে ব্যাস্ত। আরো কিছুটা এগোতেই যেনো ফোনে নেটওয়ার্ক পায় আইরাত। এবার সব ক্লিয়ার শোনা যাচ্ছে।

অনামিকা;; হ্যাঁ মানে মাথা ব্যাথা করছে আর কি।

আইরাত;; হ্যাঁ এখন বলো এখন সবকিছুই শোনা যাচ্ছে। আসলে নেট প্রব্লেম তো তাই আর কি। আর শোন তুমি কিন্তু আ……..

কথাটা বলতে না বলতেই আইরাতের ডান পাশ থেকে এক বিকট শব্দ হয়। আইরাত চমকে গিয়ে সেদিকে তাকায়। আর তাকাতেই দেখে দেওয়ালের পাশ থেকে আব্রাহাম বেরিয়ে আসে। একদম কঠোর মুখ করে সামনে এগিয়ে আসছে। আব্রাহামের কালো শার্ট পরনে, হাতা গুলো সব ফোল্ড করা। সামনের চুলগুলো কিছুটা কপালে আচঁড়ে পরেছে। সবকিছু ঠিকই ছিলো তবে আইরাত খেয়াল করে দেখে আব্রাহামের প্রায় দুহাতেই রক্ত লেগে আছে। এবার আব্রাহাম পুরো পুরি দেওয়ালের আড়ালের বাইরে এসে পরে। আব্রাহাম কে দেখে আইরাতের বুক টা কেমন ধুক করে ওঠে। কেননা আব্রাহাম যত দেওয়ালের আড়ালের বাইরে আসছে তত একটা লাশও তার সাথেসাথে বের হয়ে আসছে। আব্রাহাম সোজা সামনের দিকে হাঁটছে আর পেছনে তার ডান হাতে একটা মৃত লোকের পা রয়েছে। আব্রাহাম সেটা ধরে টেনে টেনে তাকে বাইরে আনছে। লোকটার পরণে গার্ডের পোশাক। সে মারা গিয়েছে। মুখটা রক্তাক্ত। একদম নিথর দেহ। আর আব্রাহাম সেই নিথর দেহ-এর পা টাকেই নিজের সাথে টেনে বাইরে নিয়ে আসছে। আব্রাহাম কে দেখতে যমরাজ থেকে কম লাগছে না। আইরাতের মুখ টা আপনা-আপনিই হা হয়ে যায়। কানের পাশ থেকে ফোনটা সরিয়ে ফেলেছে সে। ইতোমধ্যে ভয়ের চোটে আইরাতের চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানিও গড়িয়ে পরেছে। আইরাত তাক লেগে আব্রাহামের দিকেই তাকিয়ে ছিলো তখনই হুট করেই আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়। সাথে সাথে আইরাত তার মুখে দুইহাত রেখে চিৎকার করে ওঠে। জোরে জোরে দম ছাড়ছে সে। এখানে এসে আব্রাহামের এমন ভনায়ক লুক দেখতে পারবে কল্পনাতেও ভাবে নি আইরাত। আব্রাহামের চোখগুলো যেনো আর চোখ না রক্তের ধারা। খুব বেশিই বাজে একটা অবস্থা। আইরাত ভয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। আর ওদিকে রাশেদ আব্রাহাম কে হন্ন হয়ে পুরো অফিসে খুঁজছে কারণ ক্লাইন্ট গুলো এসে পরেছে। একজন কে জিজ্ঞেস করলে সে বলে আব্রাহাম কে সে অফিসের পেছনের দিক টায় দেখেছে। রাশেদও সেদিকে চলে যায়। গিয়েই দেখে আইরাত দাঁড়িয়ে আছে আর সে রীতিমতো কাপাকাপি করছে। রাশেদ কপাল কুচকে সেদিকে যায়। আর গিয়েই দেখে আব্রাহাম গার্ড কে একদম বিচ্ছিরি ভাবে মেরে ফেলেছে। রাশেদ দ্রুত অন্যান্য গার্ড কে ডাক দেয় তবে গোপনে যেনো কেউ কিছু না বুঝে। আব্রাহামও এবার শান্ত হয় কিছুটা। গার্ড গুলো এসে দ্রুত লাশটাকে ঠিকানা দেওয়ার চেষ্টা চালায়। রাশেদও যায়। আর আব্রাহাম ভাবেই নি যে এখানে হুট করেই এই সময়ে আইরাত এসে পরবে। আব্রাহাম স্বাভাবিক হওয়ার ট্রাই করে। আইরাতের দিকে কয়েক কদম এগিয়ে এসে তাকে ডাক দেওয়ার চেষ্টা করে।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল তু……

আব্রাহামের পুরো কথা শোনার আগেই আইরাত দৌড়ে সেখান থেকে এসে পরে। একদম প্রাণপণে ছুটে সেখান থেকে এসে পরে। যেনো জিবনের মায়ায় ছুটে চলেছে এমন। আব্রাহাম শুধু আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম বুঝে যে সে বেশ ভালোই ভয় পেয়েছে তাই এভাবে দৌড়িয়ে চলে গিয়েছে। তাকে বুঝাতে হবে। আইরাত এক হাত দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছছে আর সেখান থেকে চলে যাচ্ছে।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here