#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৫
দরজার ওপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে রিয়ানা। মুখে চুইংগাম চিবুতে চিবুতে একহাত দরজার ওপরে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কে দরজা মেলে দাঁড়াতে দেখেই টাস করে রিয়ানার মুখে বেলুনের মতো ফুলে থাকা চুইংগাম টা ফুটে গেলো। প্রচন্ডরকমের গরম কড়াইয়ে পানি ঢেলে দিলে যেমন ছাত করে ওঠে এখন রিয়ানা কে দেখে আব্রাহামের মেজাজের অবস্থাও সেইম। রিয়ানা দরজা তে ধাক্কা দিলে আব্রাহাম তার হাত দিয়ে শক্ত করে দরজা ধরে ফেলে। মুখে এক কঠোরতার ছাপ এনে রিয়ানার দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; সমস্যা কি?
রিয়ানা;; ওও আব্রাহাম আমার আবার কি সমস্যা হবে বলো। তুমি জানো না যে আমি তোমাতে ফিদাহ!!
আব্রাহাম;; বাজে না বকে বলো কেনো এসেছো?
রিয়ানা;; অবশ্যই তোমার জন্য৷
আব্রাহাম কারো সাথে কথা বলছে দেখে আইরাতের কেমন যেনো একটু খটকা লাগে।
আইরাত;; আব্রাহাম! কে এসেছে?
আব্রাহাম;; কেউ না বেবিগার্ল, জাস্ট এন আউটসাইডার।
আব্রাহাম মেকি হেসে রিয়ানার দিকে তাকায়। আর আইরাত বিছানাতে বসে বসেই উঁকিঝুকি দিয়ে বাইরে কে আছে তা দেখার চেষ্টা করছে।
আব্রাহাম;; গেট লস্ট!
এই বলেই আব্রাহাম ধিরিম করে রিয়ানার মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দেয়। সে ভাবে নি যে রিয়ানাও এখানে আছে বা থাকতে পারে। এভাবে রিয়ানা কে সামনে দেখে বেশ বিরক্তিকর লাগে তার। মেয়েটা আসলেই গায়ে পরা প্রকৃতির।
আব্রাহাম আবার আইরাতের কাছে এসে বসে।
আইরাত;; কে ছিলো?
আব্রাহাম;; কেউ না জানপাখি।
আইরাত;; না না কেউ তো একজন ছিলো যার সাথে আপনি কথা বলছিলেন।
আব্রাহাম;; এমনি, ইগনোর করো।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল রেডি থেকো আজ ক্লাবে যাবো।
আইরাত;; কেনো?
আব্রাহাম;; ঘুরতে।
আইরাত;; তো আর জায়গা কি পেলেন না আপনি?
আব্রাহাম;; দরকার আছে তাই। তুমি রেডি থেকো।
আইরাত;; আচ্ছা।
রিয়ানা বেশ অপমানিত হয় আব্রাহামের এমন কান্ডে। সে ভাবে নি এমন করবে। আর না ই রিয়ানা আব্রাহাম-আইরাতের বিয়ের বিষয়ে জানে৷ এটাও জানে না যে আব্রাহামের সাথে সাথে এখানে আইরাতও আছে। চটে গিয়ে টগবগিয়ে হেঁটে সেখান থেকে সে এসে পরে।
।
।
ধীরে ধীরে রাতের সময় ঘনিয়ে আসে। আব্রাহাম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জেকেট পরছে আর আইরাত কে ডেকে যাচ্ছে।
আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল হলো?
আইরাত;; দু মিনিট।
আব্রাহাম;; হুমম।
কিছুক্ষণ পর আইরাত চেঞ্জিং রুম থেকে বের হয়ে পরে৷ আব্রাহাম তার মাথা থেকে পা অব্দি একবার দেখে নেয়। পুরো আব্রাহামের মতোই গেটাপ। অর্থাৎ আব্রাহামের ফিমেল ভারসন লাগছে পুরো আইরাত কে। আব্রাহাম যেমন ব্ল্যাক-হুয়াইট প্যান্ট শার্ট জেকেট পরেছে আইরাতও সেম। চুলগুলো কার্লি করে পেছনে ছেড়ে দিয়েছে। পায়ে উঁচু শু জুতো।
আব্রাহাম;; হে বউ!
আইরাত;; জ্বি জামাইজান।
আব্রাহাম নিজের দুহাত ভাজ করে আয়নার পাশেই মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। মুখের কোণে ঝুলছে মুচকি হাসি। আইরাত আব্রাহামের তাকানো দেখে নিজেও খানিক হেসে দেয়।
আইরাত;; কি! ভালো লাগছে না দেখতে? চেঞ্জ করে আসবো কি?
আব্রাহাম;; আরে না না একদম না। অনেক কিউট লাগছে।
আইরাত;; সত্যি?
আব্রাহাম;; একদম।
আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে একহাত দিয়ে তার গালে ধরে আলতো করে কপালে চুমু একে দেয়। আইরাত মুচকি হেসে মাথা তুলে তাকায়।
আইরাত;; কি হয়েছে?
আব্রাহাম;; না মানে এখানে তো কেউ জানে না যে তুমিই আমার একমাত্র বউ (আইরাত কে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে)
আইরাত;; মানুষ না জানুক বাট আসল কথা তো আমরা জানি তাই না।
আব্রাহাম;; হুমমম। তারা এও জানে না যে এখানে রুমের ভেতরে শুধু আমি একা নই বরং আমার সাথে আরেকজনও থাকে৷
আইরাত;; এখন কি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বলে দিবো?
আব্রাহাম আইরাতের কথা শুনে তার দুগাল ইচ্ছে মতো চেপে দেয়।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল লিসেন এখান থেকে তুমি আগে যাবে তারপর আমি যাবো ওকে!
আইরাত;; হুম আচ্ছা।
আব্রাহাম;; টেনশনের কোন কারণ নেই গার্ড রা সব থাকবে।
আইরাত;; হুমম।
আইরাত সেখান থেকে চলে আসে, আশেপাশেই অনেক গার্ড আছে যেগুলো ব্যাসিকেলি আইরাতকে প্রটেক্ট করার জন্য কিন্তু তারা গা ঢাকা দিয়ে আছে। ক্লাবের ভেতরে সাদা আলোর রেশটুকুও নেই। বাহারি রঙের সব লাইট দিয়ে সম্পূর্ণ আলোকিত। তাতে মানুষের মাতামাতির শেষ নেই। কানের পর্দা যেনো ফেটে যায় এমন মিউজিকের আওয়াজ দেওয়া। কেউ নাচছে, কেউ ড্রিংক করছে। এর মাঝেই আইরাতের চোখে পরে রিয়ানা কে৷ আইরাত চেনে এই মেয়েকে। অয়নের থেকে কিছুটা বায়ো ডাটা পেয়েছিলো এর। তাই রিয়ানা কে চিনতে আর দেরি হলো না তার। এইসব কিছুতে নজর না দিয়ে আইরাত একটা টেবিলে গিয়ে বসে পরে ফোন ঘাটাঘাটি করতে লাগে। কারো আভাস পেয়ে পাশে তাকায়। দেখে একটা ছেলে কিছুটা গলা খাকাড়ি দিয়ে তার কাছেই আসছে। আইরাত মেকি একটা হাসি দিয়ে হাত দিয়ে মানা করে দেয়। ছেলেটা এসেও যেনো আবার সোজা ঘুরে চলে গেলো। এবার মিউজিকের ভলিউম কমে আর আইরাত এক ক্ষীণ দম ছাড়ে। তখনই ধিরিম করে একজন এসে সোজা আইরাতের পাশে বসে পরে। আইরাত চমকে গিয়ে পাশে তাকাতেই দেখে আর কেউ না আব্রাহাম নিজেই। আইরাত মুখ বাকা করে চাপা স্বরেই আব্রাহাম কে বলে…
আইরাত;; এভাবে কেউ এসে বসে! আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
আব্রাহাম;; আমাকে দেখে এছাড়াও মানুষ ভয়-ই পায়।
আইরাত;; আমি পাই না।
আব্রাহাম এক ভ্রু উঁচু করে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত তার দাঁত গুলো একটু দেখিয়ে দেয় আব্রাহাম কে।
আব্রাহাম;; হাহ, ভয় পায় না। এখনই একটা জোরেসোরে ধমক দিলে চোখে পানির বন্যা ভেসে যাবে আর সে নাকি ভয় পায় না।
আইরাত;; 😒
আব্রাহাম;; হয়েছে থাক আর ইনোসেন্ট সাজতে হবে না।
আইরাত;; তখন আমাদের রুমের দরজার সামনে রিয়ানা এসেছিলো তাই না!
আব্রাহাম;; আব…
আইরাত;; বলুন বলুন।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ
আইরাত;; কেনো?
আব্রাহাম;; না আসলে..
আইরাত;; অবশ্যই আপনার জন্য তাই না!
আব্রাহাম;; আরে নাহ।
আইরাত;; হুমম বুঝি বুঝি। এরপর থেকে হলুদ পাকা লেবু আর মরিচের মালা ঝুলিয়ে দিবো আপনার গলায় তাহলেই কেউ আর নজর দিবে না।
আব্রাহাম;; গলায় ঝুলানোর হলে বরমালা ঝুলাও এগুলো কেনো ঝুলাবে।
আইরাত;; নজর লেগেছে নজর।
আব্রাহাম আর কিছু বলে না। রিভলবার বের করে হাতে ঘোরাতে লাগে।
আইরাত;; রিভলবার বের করলেন কেনো?
আব্রাহাম;; না এমনি হাতটা কেমন খালি খালি লাগছিলো তাই আর কি।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম কিছু সময়ের জন্য সেখান থেকে উঠে পরে। হাঁটতে হাঁটতে একটা অন্য রুমে চলে যায়। রুমটায় আলো একেবারেই কম। এখানে বাইরে থেকে গানের শোরগোলও খুব কম আসছে। আব্রাহাম আরো কয়েক কদম এগিয়ে গেলো। তবে পেছন থেকে কারো সাড়া শব্দ পেয়েই দাঁড়িয়ে পরে।
আতিক;; আব্রাহাম স্যার যে!
আব্রাহাম কপালে ভাজ টেনে এনে আতিকের দিকে তাকায়।
আতিক;; কেমন আছেন স্যার?
আব্রাহাম;; সবসময় অনেক ভালোই থাকি। কিন্তু কি করবো বলুন কিছু কিছু মানুষের জন্য তাতেও বাঁধা এসে পরে৷
আতিক;; শুনলাম কোহিনূর হারিয়ে মানে চুরি হয়ে গেছে!
আব্রাহাম;; হুমম।
আতিক;; সো স্যাড। কোহিনূর এতো টা প্রোটেকশনে থাকার পরেও হারিয়ে গেলো!
আব্রাহাম;; চোরের মায়ের বড়ো গলা আজ অব্দি শুধু শুনেই এসেছিলাম আজ দেখেও নিলাম।
আতিক;; আসল কোহিনূর ভেঙে ত……
আব্রাহাম;; প্রশ্নই আসে না। আসল কোহিনূরকে যদি হাতুড়ি দিয়েও ভাঙার ট্রাই করা হয় তাহলে হাতুড়ি ভেঙে যাবে কিন্তু কোহিনূর না।
আতিক;; তো আপনার কি মনে হয় যে কোহিনূর আমি চুরি করেছি!
আব্রাহাম;; আরে ভাই কোহিনূর, আর সেটা চুরি হয়েছে। এতো বড়ো একটা জিনিস চুরি করেছে তো চোরের কিছু তো রেস্পেক্ট দাও।
আতিক;; মানে?
আব্রাহাম;; গাধা আর ঘোড়া দেখতে এক হলেও তফাৎ আকাশচুম্বী। কিন্তু এখন ঘোড়ার দৌড়ে গাধাও দৌড়াচ্ছে দেখছি।
আতিক;; আপনারা জামাই-বউ কোন মাটি দিয়ে গড়া আল্লাহ জানে। একদম সমান।
আব্রাহাম;; বউ আমার, সমান তো হতেই হবে।
আতিক;; তো আপনার বউও এখানে আছে তাই না।
আব্রাহাম;; তো? (গম্ভীর ভাবে)
আতিক;; আ…..
আব্রাহাম;; আপনার যেমন ফালতু কথা বলার মতো সময় আছে আমার তেমন শোনার মতো সময় নেই।
এই বলেই আব্রাহাম সেখান থেকে এসে পরে। একটা ড্রিংক এর শপের সামানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার কিছুদূরেই আইরাত বসে আছে। আব্রাহাম থেকে থেকে তার দিকে নজর রাখছে। কিছু সময় পর রিয়ানা আবার আসে আব্রাহামের কাছে।
রিয়ানা;; হেই আব্রু আমি জানতাম তুমি আসবেই।
আব্রাহাম;; আব্রু!?
রিয়ানা;; তোমার নামের শর্টফোম৷
আব্রাহাম;; ওও আচ্ছা আচ্ছা।
আব্রাহাম কিছুটা ঝেড়ে কাশে। কি বলবে খুঁজে পায় না। যেখানে আজ পর্যন্ত তার নিজের বউ-ই তার নামের শর্টফোম বের করলো না আর সেখানেই এই মেয়ে। নানা ধরনের কথা রিয়ানা আব্রাহাম কে বলছে। আর তার কাছে ঘেষার চেষ্টা করছে। আব্রাহাম যতটা সম্ভব দুরত্ব বজায় রাখছে৷ একটা সময় বিরক্তির চরম লেভেলে পৌঁছে গিয়ে আব্রাহাম তাকে ব্যাস্ততা দেখিয়ে চট জলদি সেখান থেকে কেটে পরে। ক্লাবের একটা কর্ণারে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে নজর স্থীর করে রেখে দিয়েছিলো আব্রাহাম তবে তারই মাঝে হুট করেই বিকট শব্দে কিছু ভাংচুরের আওয়াজ কানে এলে সেদিকে তাকায়৷ আব্রাহাম দ্রুত গিয়ে দেখে আইরাত যেনো চন্ডীরুপ ধারণ করেছে। আব্রাহাম ‘থ’ হয়ে গেছে পুরো আইরাত কে দেখে। রাগে ফুসছে আর চোখ দিয়ে তো যেনো রক্ত ঝড়ছে তার। আর যেই বিকট আওয়াজ টা হয়েছে তা একটা কাচের টেবিল ভাঙার শব্দ ছিলো। আইরাত ভেঙে দিয়েছে। এমন শব্দে পুরো ক্লাব থেমে গিয়েছে। সব মিউজিক অফ। নজর শুধু আইরাতের দিকেই। কোনরকম কোন কথা না বলে জেকেটের হাতা গুলো গুটিয়ে নিতে নিতে রিয়ানার দিকে এগিয়ে যায় সে। বিনাবাক্যে রিয়ানার কানের ঠিক নিচ বরাবর ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ রিয়ানার চোখে সরষে ফুল। ডেস্কের ওপর এলকোহলের গ্লাস ছিলো তা নিয়ে সোজা রিয়ানার মুখে ছুড়ে মারে। আইরাতের উঁচু জুতা ছিলো তা দিয়ে রিয়ানার পায়ে এমন এক লাথি দেয় যে সে এবার চিল্লিয়েই উঠে। ক্লাবের ভেতরে গন্ডগোল দেখে দুজন সিকিউরিটি গার্ড এগিয়ে এলে আইরাত ডিরেক্ট রিভলবার বের করে তাদের দিকে তাক করে ধরে। এতে গার্ড রা থেমে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে আব্রাহাম দ্রুত আইরাতের কাছে এগিয়ে যায়৷ তার হাত থেকে গান টা নিচে নামিয়ে ফেলে৷ গার্ড দের ইশারাতে দূরে চলে যেতে বলে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল হয়েছে কি?
আইরাত তো তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে।
আইরাত;; হয়েছে কি মানে? অন্য কোন মেয়ে কেনো আপনার দিকে তাকাবে? কেনো আপনার কাছে ঘেষার চেষ্টা করবে? কেনো আপনার সাথে ফ্লার্ট করবে? কেনো? আপনি কেনো বলেন না যে আমি আপনার বউ হই!
আব্রাহাম;; কি আর বলবো ওই মেয়ে জানে তো সেটা।
আইরাত;; না ও জানে না।
আব্রাহাম;; জানে (আইরাত কে শুধু শান্ত করার চেষ্টা)
আইরাত;; কিইইইই? ওই জানে যে আমি আপনার বউ তারপরেও, তারপরেও এমন করে। তবে রে
আইরাত কি আর শান্ত হবে সে উল্টো আবার রিয়ানার দিকে তেড়ে যেতে ধরে তাকে মারার জন্য। কিন্তু আব্রাহাম তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে থামিয়ে দেয়। অনেক ক্ষেপা ক্ষেপে গেছে আইরাত। আব্রাহাম কে সরিয়ে দিয়ে রাগে আগুন হয়ে ক্লাব থেকে বাইরে বের হয়ে পরে৷ তারপর গাড়িতে উঠে বসে থাকে। এদিকে ক্লাবের যত ক্ষতি হয়েছে তার দ্বিগুণ টাকা মেনেজার কে ধরিয়ে দিয়ে আব্রাহাম নিজেও বের হয়ে এসে পরে। এসে দেখে আইরাত গাড়িতে ড্রাইভিং সীটের পাশে বসে আছে৷ রাগে ফুলে দুহাত ভাজ করে আছে৷ আব্রাহাম হেসে দেয় তাকে দেখে। আইরাত আজ রাগের বসে এসে এমন কিছু করে বসবে সে তা ভাবতেও পারে নি। ওদিকে হয়তো রিয়ানার দশা নাজেহাল হয়ে গেছে। আব্রাহাম বুঝলো যে রিয়ানা যখন তার সাথে ওভাবে কথা বলছিলো তখন আইরাত সবকিছুই খেয়াল করছিলো। আব্রাহামও সেখান থেকে সরে এলো আর আইরাতও তাকে সোজা মেরে বসলো। আব্রাহাম গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি চালাচ্ছে আর আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত;; ________________
আব্রাহাম;; জানপাখি!
আইরাত;; ________________
আব্রাহাম;; আব্রাহামের বউ!
আইরাত;; ________________
আব্রাহাম;; আরে কিছু তো বলো।
আইরাত যেনো মুখে তালা দিয়ে রেখে দিয়েছে একটা ফোটা কথা বলছে না। দেখতে দেখতেই হোটেলের সামনে এসে গাড়ি থামে। আইরাত নেমে গিয়ে সোজা ভেতরে চলে যায়। গার্ড কে গাড়ি পার্ক করে দিতে বলে আব্রাহামও আইরাতের পিছে পিছে যায়।
গার্ড;; স্যার কিছু ক্লাইন্ট আ…….
আব্রাহাম;; আরে দুনিয়া যাক জাহান্নামে আগে বউ কে সামলাতে হবে।
এই বলেই আব্রাহাম দৌড়। রুমে এসে জেকেট টা শুধু খুলে ধুপ করে বিছানার ওপর বসে পরে আইরাত। আব্রাহাম এসে দেখে এভাবে মন মরা হয়ে বসে আছে সে। আস্তে করে তার পাশে গিয়ে বসে জড়িয়ে ধরে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা আ”ম সরি। আ”ম সরি। আমি এখন থেকে মেয়েদের থেকে একশ না না এক হাজার হাত দূরে থাকবো।
আইরাত;; আমি কি আপনাকে কিছু বলেছি!
আব্রাহাম;; আব…না
আইরাত;; তাহলে বাজে বকছেন কেনো? আপনার তো দোষ নেই, মেয়েরা আপনার পিছে ভাগে।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ মেয়েরা আমার পিছে ভাগে আর আমি একাই তোমার পিছে ভাগি। সবাই আমার জন্য পাগল হলেও আমি শুধুই তোমার জন্য পাগল৷
আইরাত;; দেখি আমিও যাই কাল বাইরে যাকে পাবো ফ্লার্ট করা শুরু করবো।
আব্রাহাম;; হাহ, দেখবো নি এমন কোন বাপের ব্যাটা জন্ম হয়েছে যে আমার সামনে তোমার সাথে কথা বলা তো দূর তোমার দিকে নজর তুলে তাকায়৷ আমি কলিজা ছিড়ে না ফেলি ওর।
আইরাত;; নাও কাম টু দি পয়েন্ট, আপনি আমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারেন না তাহলে আমি কি করে পারবো!
আব্রাহাম;; কিন্তু তুমি তো……..
আইরাত;; কি এভাবে মেরে বসবো আমি! আমার এতো শখ নাই যে বারবার মারবো।
আব্রাহাম;; জ্যালাস!
আইরাত এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে পরে এবার৷ রাগে দাঁত কটমট করতে করতে বলে ওঠে…
আইরাত;; অবশ্যই আমি জ্যালাস আব্রাহাম। আপনি আমার জামাই লাগেন এন্ড আমি আপনার বউ। অবশ্যই আমার জ্বলবে। শুনুন একটা মেয়ে মানুষ মরে যেতে রাজি আছে বাট তার হাজবেন্ডের ভাগ কাউকেই দিতে রাজি না। এতে আপনি যাই বলুন না কেনো। তো আমিও দিবো না। আমিও এটা মানবো না। আমার দিকে কোন ছেলে চোখ তুলে তাকালে আপনি সহ্য করেন! বলুন! করেন না তাই তো! তো আমি কেনো করবো। আমারও সহ্য হয় না কোন মেয়ে আপনার দিকে তাকালে আপনি বুঝেন না কেনো?
একদম গলা ফাটিয়ে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কথা গুলো বলেছে আইরাত। আব্রাহাম খেয়াল করে দেখে আইরাতের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ছে আর সে রাগে ফুসছে। আব্রাহাম উঠে দাঁড়িয়ে পরে৷
আব্রাহাম;; কাছে আসো।
আব্রাহাম তার দুহাত আইরাতের দিকে মেলে ধরলে আইরাত আব্রাহামের বুকে নিজের মাথা ঠেকিয়ে দেয়। একদম আষ্টেপৃষ্টে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। আইরাত কান্না করছে, যেনো তার রাগ গুলো সব কান্নাতে পরিনত হয়েছে। আব্রাহাম তার একহাত দিয়ে আইরাতের মাথার পেছনে বুলিয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষণ এভাবেই কান্নাকাটি করার পর আইরাত তার মুখটা ওপরে তুলে তাকায় আর আব্রাহাম তার অশ্রুবিন্দু গুলো নিজের ঠোঁট দিয়ে শুষে নেয়। এবার গিয়ে আইরাত যেনো কিছুটা শান্ত হয়।
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৬
পরেরদিন সকালে আইরাত কে ঘুমের মাঝেই রেখে আব্রাহাম কে চট জলদি রেডি হয়ে কাজের ব্যাস্ততার ফলে বাইরে বের হয়ে যেতে হয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওপরে কোর্ট পরতে পরতে আইরাতের দিকে তাকায়। ঘুমের মাঝেই সে কিছুটা নড়েচড়ে উঠে। তার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে বাইরে এসে পরে। আইরাত শুধু ঘুমের মাঝেই আব্রাহামের ছোয়া অনুভব করে। বাইরে এসেই দেখে আজকের পরিবেশ টা কেমন একটু ভারি ভারি, থমথমে। হোটেলের হলরুমে চলে গেলে কিছু সনামধন্য ব্যাক্তি আব্রাহামের দিকে এগিয়ে আসে। কথা বলে যা বুঝতে পারে তা হলো এতোদিন যাবত যে খবর টা প্রাইভেট করে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো তা লিক হয়ে গেছে। আর হওয়ারই কথা এতো বড়ো একটা কান্ড হলো আর তা পাবলিক হবে না তা কি হয়। মিডিয়ার লোকজন হলো কিছুটা পিপড়ার দলের মতো। মূহুর্তেই সব জায়গায় ছড়িয়ে পরে। তারাই জেনে গিয়েছে ফলে নিউজ লিক। লোকগুলোর সাথে আব্রাহাম কথা বলছিলো তখনই প্রত্যেকটা নিউজ চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে কোহিনূরের ব্যাপার টাই দেখাচ্ছে। যা প্রতিনিয়ত আব্রাহাম কে অস্বস্তি তে ফেলছে। আব্রাহামের চোখ যায় আতিকের দিকে। সে মাত্রই হলরুমের পাশে থাকা করিডর পার হয়ে গেলো। কিছু একটা ভেবে আব্রাহাম সেখান থেকে এসে পরে। দ্রুত রাশেদ কে ফোন দেয়।
রাশেদ;; আসসালামু আলাইকুম স্যার। কেমন আছেন?
আব্রাহাম;; ওয়ালাইকুম সালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি আর বাকিরা সবাই কেমন আছে?
রাশেদ;; সবাই অনেক ভালো। আর স্যার সেখানকার খবর তো বেশি একটা ভালো শুনলাম না।
আব্রাহাম;; হুমম নিউজ লিক হয়ে গেছে।
রাশেদ;; স্যার আমি কি আসবো?
আব্রাহাম;; না থাক। তুমি সেদিক টাই সামলাও এছাড়াও এখানে আসতে তোমার কমপক্ষে দুদিন লাগবে। দুদিনে ব্যাপার টা হাতের বাইরেও চলে যেতে পারে।
রাশেদ;; স্যার আপনি বললে গার্ড পাঠাবো আরো!!
আব্রাহাম;; না এনাফ আছে এখানে। জাস্ট ডু ওয়ান থিং কোহিনূর বানাও।
রাশেদ ভেবাচেকা খেয়ে যায় আব্রাহামের কথা শুনে। তার কথার ধরন কিছুই বুঝে না।
রাশেদ;; ম মা মানে স্যার বুঝলাম না।
আব্রাহাম;; আ”ম ড্যাম সিওর এগুলোর পিছে যে আছে তাকে আতিক বেশ ভালোই চিনে। সে শুধু পালিয়ে বেড়াচ্ছে আর কিছুই না। সে মুখও খুলছে না একমাত্র টাকার লোভে। তো এমন কিছু একটা করতে হবে যে সাপও মরে আর লাঠিও ঠিক থাকে।
রাশেদ;; স্যার আ….
আব্রাহাম;; লিসেন সব গার্ড দের এলার্ট করে দাও তোমার কাছ থেকেই। এখানে তাদের কাছে সব ধরনের লিংক আছে।
রাশেদ;; কিন্তু স্যার কোহিনূর!
আব্রাহাম;; ফেইক। প্লাস্টিক সার্জারি করে যদি পুরো মুখের হুলিয়া পালটে যেতে পারে তাহলে শুধু মাত্র ক্ষণিকের জন্য একটা ডুপ্লিকেট কোহিনূর কে আসল বানাতে পারবে না। সবই সম্ভব। আমি প্রেজেন্ট-ই করবো এমন ভাবে যে কেউ ধরতেই পারবে না তা ফেইক। আর কথা রইলো নিউজ লিক হওয়ার তো তা ভুয়া প্রমাণ করে দিবো। অর্থাৎ কোহিনূর কখনো চুরিই হয় নি এমন ধরনা দিতে হবে। নয়তো সব ভেস্তে যাবে। আর আসলে যে কোহিনূর চুরি হয়েছে সেটাকেই ফেইক বানাতে হবে। এতে যে চুরি করেছে সে ভাবতে পারে যে তার কাছে বর্তমানে যে কোহিনূর আছে সেটাই ভুয়া আর আমার কাছে যেটা আছে সেটাই আসল।
রাশেদ;; স্যার সময় লাগবে!
আব্রাহাম;; সমস্যা নেই যত টাইম লাগার লাগুক বাট এভাবে বসে থাকা আর চলবে না। কিছু একটা করতেই হবে। আর এখানে সব সামলিয়ে নিতে হবে।
রাশেদ;; আর আতিক?
আব্রাহাম পেছন ঘুড়ে আতিকের দিকে তাকায়৷ শালা দিনে-দুপুরে এলকোহল গিলতে বসে পরেছে।
আব্রাহাম;; হায়াতের মাত্রা শেষ হয়ে গেছে ওর।
আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। কিছু গার্ড কে ডেকে আগামীকাল সকালের মাঝে সব মিডিয়া/প্রেস রা যেসব ঝড় বইয়ে দিচ্ছে তাকে দ্রুতই বন্ধ করতে বলে৷ আব্রাহাম করিডরের দিকটায় চলে যায়। সেম টাইমে তার নজর যায় রিয়ানার দিকে। রিয়ানার দশা একবার দেখে নেয় আব্রাহাম। তার বা পায়ের নিচের অংশ টায় সাদা ব্যান্ডেজ করা আর হাতের কুনির দিকটা তেও ব্যান্ডেজ করা। একদিনেই চোখের নিচে কেমন এক কালো দাগ পরে গেছে৷ রিয়ানা আব্রাহাম কে দেখে সেখান থেকে জলদি পা ফেলে চলে যায়৷ আর আব্রাহাম মুখ টিপে হাসে৷ কাল আইরাত যা করেছে বলার বাইরে। ফোনের স্ক্রিন টা অন করতেই আইরাতের হাসিমাখা মুখটা ভেসে আসে। আইরাতের কাছে ফোনই করে বসে সে। আইরাত ঘুমের মাঝেই ফোনের শব্দে হাতিয়ে হাতিয়ে তা নিয়ে রিসিভ করে। উঠে বসে হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে ফোন কানে ধরে।
আইরাত;; হ্যালো।
আব্রাহাম;; ঘুম হলো?
আইরাত;; হুমমম।
আব্রাহাম;; উঠেছো?
আইরাত;; হ্যাঁ
আব্রাহাম;; জানো রিয়ানা কে দেখলাম।
আইরাতের ঘুম উড়ে গেছে৷
আইরাত;; মানে কি? ওই মাইয়া কি আবার আপনার কাছে আসছে নাকি। দাঁড়ান আমি আসছি। আর এবার সোজা হকিস্টিক নিয়ে আসবো৷
আব্রাহাম;; আরে কুল কুল বেবিগার্ল কুল। রিয়ানা আসে নি আর কখনো আসবেও না কারণ যে ডোজ দিয়েছো কাল তুমি ওকে৷ হায় বেচারি এখন হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ করে ঘুরে ফিরছে।
আইরাত;; ভাগ্য ভালো চুল টেনে ছিড়ে দেই নি ওর।
আব্রাহাম;; হুমম এখন উঠে পরো। ফ্রেশ হও ব্রেকফাস্ট করো।
আইরাত;; আচ্ছা আপনি কোথায়? আর কখন আসবেন?
আব্রাহাম;; জান আমার আমি বাইরে এসেছি। কিছু সময় পরই রুমে আসছি।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; হে লিসেন!
আইরাত;; হুমমমম।
আব্রাহাম;; আই লাভ ইউ।
আইরাত;; টু।
আইরাত ফোন কেটে দেয়। আব্রাহামের কেমন যেনো লাগছে এখন। এতোক্ষণ তো ভালোই ছিলো তবে আইরাতের সাথে কথা বলার পর থেকে কেমন যেনো লাগছে তার। আব্রাহামের কিছু ভালো লাগছে না। মন বারবার বলছে যে কিছু না কিছুটা একটা হবে মানে কোন একটা বিপদ হবেই যা আব্রাহাম কোন ভাবেই চাইছে না আর চায় না।যাই হোক, যা কিছুই হয়ে যাক না কেনো আইরাত যেনো সেইফ থাকে। তার যেনো কোন কিছু বা কোন ক্ষতি না হয় তাহলে আব্রাহাম শেষ হয়ে যাবে একদম। একটা কথা একবার মনে এসে নাড়া দিলে তাও তা মানা যায় কিন্তু বারবার। যাই হোক সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। বেশকিছু কাজ ছিলো সেগুলো মিটিয়ে আব্রাহাম চলে যায়। রুমে গিয়ে দেখে আইরাত রুমে নেই। করিডরেও নেই। কোথাও নেই। আব্রাহাম তড়িঘড়ি করে যেই না রুমের বাইরে বের হতে যবে তখনই ওয়াসরুম থেকে শব্দ আসে। আইরাত ওয়াসরুমে৷ আর আব্রাহামের মাথা থেকে তা বেরই হয়ে গিয়েছিলো৷ আব্রাহাম আস্তে করে এগিয়ে গিয়ে দরজায় নক করে। কিন্তু তা আইরাতের কান অব্দি পৌঁছায় না। সে ওয়াসরুমের ভেতরে মনের আনন্দে গান গাইছে আর হয়তো লাফাচ্ছেও। আব্রাহাম বুঝলো যে তার বউ মস্ত বড়ো একখান বাথরুম সিংগার৷
আব্রাহাম;; ওরে আমার আরিজিৎ সিং রে। হলো তোমার!
আব্রাহামের কন্ঠস্বর পেয়ে আইরাত থেমে যায়৷ তার মাথায় শ্যাম্পু, দুগালে সাবানের ফোয়ারা লেগে আছে। হালকা করে ওয়াসরুমের দরজা টা ফাক করে মাথা বের করে দিয়ে রুমের আশেপাশে চোখ বুলায়। কোথাও কেউ নেই তবে হুট করেই আব্রাহাম তার সামনে চলে আসে। এতে আইরাত বেশ চমকে ওঠে। যেই না দ্রুত গতিতে দরজা লাগিয়ে দিতে যাবে তখনই আব্রাহাম তার একহাত দিয়ে দরজা ধরে ফেলে৷ আইরাত তার দুহাত প্লাস বডি দিয়ে দরজা লাগানোর চেষ্টা করছে আর আব্রাহাম শুধু তার একহাত দিয়ে দরজা ধরে রেখেছে। আর না পেরে আইরাত হাল ছেড়ে দেয়। আর আব্রাহাম এক নিমিষেই বাথরুমে ঢুকে পরে। আইরাত ছোট খাটো একটা চিল্লানি দিয়ে ওঠলে আব্রাহাম তার মুখ চেপে ধরে৷ খেয়াল করে দেখে শুধু একটা হুয়াইট কালারের টাওয়াল জড়িয়ে আছে আইরাত। নিজের দিকে আব্রাহাম কে এভাবে অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে থাকতে দেখে আইরাত ঘুড়ে দাঁড়ায়।
আব্রাহাম;; ঢেকে লাভ নেই বেবিগার্ল।
আইরাত;; লুচু ছেলে। ছাড়ুন আমাকে।
আব্রাহাম;; ধরলামই তো না।
আইরাত;; আপনি বাইরে যান। সরুন আমার পেছন থেকে৷
আব্রাহাম;; আর যদি না যাই তো!
আইরাত;; এমন করেন কেনো! প্লিজ বাইরে যান না।
আব্রাহাম;; চুপ।
আব্রাহাম আইরাত কে দেয় এক ধমক মেরে। আইরাতের শীতল বাহু ধরে টান দিয়ে একদম শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দেয় নিজের সাথে। শাওয়ার অন করে। ঝিরিঝিরি পানি বিন্দু দুজনের ওপরে পরে। আইরাতের মাথায় তো শ্যাম্পু ছিলো তা পানি দিয়ে গলে তার মুখে পরতেই চোখে তীব্র ভাবে কামড় ধরে।
আইরাত;; আহহহহহহহহ।
আব্রাহাম;; কি হলো? চোখে শ্যাম্পু গিয়েছে!
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; দেখি দেখি।
আব্রাহাম আইরাত কে একদম শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দেয়৷ কিছু সময় পর চোখের জ্বালাপোড়া কমে আসে তার।
আব্রাহাম;; এখনো জ্বলছে?
আইরাত;; নাহ, ঠিক আছি।
আব্রাহাম আইরাতের দুচোখে চুমু দিয়ে দেয়। দুজনে ফ্রেশ হয়ে বেশ সময় পর বাইরে বের হয়ে আসে। বিকেলের দিকে আব্রাহাম-আইরাত করিডরে বসে ছিলো। আসলে আইরাত আব্রাহাম কে খাইয়ে দিচ্ছে। তবে খাওয়ার মাঝেই আব্রাহামের ফোন কল আসে।
আব্রাহাম;; জানপাখি আমায় যেতে হবে এখনই।
আইরাত;; আরে কিন্তু মাত্র একটুই তো খেলেন। আরো একটু খেয়ে তারপর যান।
আব্রাহাম;; এতো খেলে মোটা হয়ে যাবো। তোমার মতো।
আইরাত;; আমি মোটা?
আব্রাহাম আইরাতের গাল টেনে দেয়।
আব্রাহাম;; একদম পারফেক্ট আছো। বাট গালগুলো ফুলো ফুলো যা আমার সবথেকে বেশি পছন্দ।
আইরাত;; হয়েছে। আপনার খেতে হবে না যান আমিই খাই।
আব্রাহাম হেসে দিয়ে আইরাতের গাল টেনে দেয়। কানের নিচে চুমু দেয়।
আব্রাহাম;; ওরে আমার রসগোল্লা রে।
আইরাত;; হুম এখন যান আর পারলে একটু জলদি আসবেন।
আব্রাহাম;; যো হুকুম মহারানী।
আব্রাহাম রেডি হয়ে নেয়। তবে তার গেটাপ দেখেই আইরাত বুঝে যায় যে বাইরে কিছু একটা গন্ডগোল পাকাতে যাচ্ছে সে। কি আর করার আইরাত কিছুই বলে না। আব্রাহাম আইরাত কে বলে বের হয়ে পরে। রুম থেকে বের হয়ে লিফটে চরে হোটেলের হলরুম পেরিয়ে বাইরে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই কতো গুলো পুলিশের গাড়ি আসে রেড এলার্ট বাজিয়ে। তারাই সবদিক টা ঘেড়াও করে রেখেছে। আব্রাহাম আসলে পুলিশ তার সাথে কিছু কথা বলে। তারপর গাড়িতে উঠে চলে যায়। হাতে থাকা ঘড়ির দিক তাকিয়ে দেখে রাত বেশ হয়ে এসেছে। বারো টা ছুই ছুই। গাড়িতে উঠে গার্ড কে আগে ক্লাবের দিকে যেতে বলে। বিশ-ত্রিশ মিনিট পর ক্লাবের সামনে গাড়ি থামলে আব্রাহাম নেমে পরে। হুডি দিয়ে পা থেকে মাথা অব্দি সব ঢাকা। মাথার ওপরেও হুডি আছে আর মুখে কালো মাস্ক পরা। চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ক্লাবের ভেতরে যেতেই একরাশ ধোঁয়া আসে। ধোঁয়ার মাঝ দিয়ে আবাহাম চলে যায়। মূলত আতিক কে হন্নে হয়ে খুঁজে যাচ্ছে আব্রাহাম আর তার জানা মতে এই সময়ে আতিক ক্লাবেই ছাইপাস সব খেয়ে পরে আছে। কয়েক কদম আগে যেতেই আব্রাহাম যা ভেবেছিলো তাই হলো। আতিক এখানে তো আছে কিন্তু ঠিকই আছে ড্রাংক না। যাই হয়ে যাক আজ এর মুখ থেকে কথা বের করতেই হবে। আব্রাহাম গিয়ে একটা টেবিলে বসে। তবে আতিকের থেকে আড়াল করে যেনো সে বুঝতে না পারে। এভাবেই কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আতিক উঠে দূরে যায়। আর সেটারই সুযোগ আব্রাহাম নেই। সেও উঠে আতিকের পিছু চলে যায়। আব্রাহাম তার হাতে একটা ইঞ্জেকশন নিয়ে নেয়। আতিক যেখানে মানুষ জন কিছুটা কম সেখানে এসে পরে। হঠাৎ আতিকের কেনো যেনো মনে হয় যে তার ঠিক পেছনেই কেউ দাঁড়িয়ে আছে। পিছে ঘুরে দেখতে যাবে কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না। তার আগেই আব্রাহাম তার হাতে থাকা ইঞ্জেকশন টা আতিকের ঘাড়ের ডান দিক বরাবর বসিয়ে দেয়। ব্যাথায় কুকড়ে যায় সে। সম্পূর্ণ ইঞ্জেকশন তার ঘাড়ে পুশ করার পর তা তুলে নেয়। আতিক তার ঘাড়ের দিকে হাত দিয়ে হালকা করে চেপে ধরে তারপর আপনা আপনিই তার চোখের সামানে সব ঘোলা হয়ে আসে। আস্তে আস্তে লুটিয়ে পরে ফ্লোরে সে।
।
।
।
।
চলবে~~
।
।
।
।
চলবে~~