#ইতিপূর্বে [০৫]
রুমে ঢুকে মেয়েটিকে দেখতেই ইতি চমকে ওঠে।
ইতি:কণা!
রুমে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে থাকায় ইতির দিকে।ইতি এবার দ্রুত মেয়েটির কাছে গিয়ে বলে,
ইতি:কণা তুমি?
মেয়েটি:আ আমি কণা নই।ক কিন্তু আপনি আপুকে ক কি করে চেনেন?
ইতি:আপু মানে?আর তুমি কণা নও?এসব কি বলছো?
মেয়েটি:আ আমি অনা।কণা আমার জমজ বোন।
ইতি:(কিছুটা শান্ত হয়ে অনার পাশে বসে) দেখো, তোমার সঙ্গে যা হয়েছে তারপর তোমার মনের অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি।কিন্তু তুমি চিন্তা করোনা,যারা এই কাজ করেছে তাদের কাউকে আমি ছেড়ে দেবোনা।
অনা:(ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে এবার)
ইতি:তুমি হয়তোবা আমায় চেনোনা।কিন্তু কণা আমায় চেনে।তুমি ওর নাম্বার টা আমায় দিতে পারবে?
অনা:(অবাক হয়ে তাকায়)কনা তো নেই।
ইতি:নেই মানে?
অনা:এই পৃথিবীতে নেই।চলে গেছে সবাইকে ছেড়ে,আরো দু বছর আগে।
ইতি:(চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার)কি বলছো তুমি!
অনা:তুমি ই ইতি আপু তাই না?
ইতি:(মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানায়)
অনা:কনাকে ওরা বাচতে দেয় নি।ও বাচতে চেয়েছিলো জানো তো?কিন্তু পারেনি,মেরে ফেললো ওকে।আর হয়তোবা আমায় ও মেরে ফেলবে।
ইতি:নিশ্চুপ..
অনা:আমার মরতে কোনো আপত্তি নেই,কিন্তু আমি মরে গেলে ওরা আমার বোনটাকেও শেষ করে দেবে।ওর যে আমি ছাড়া আর নেই।
প্রিয়াঙ্কা:তোমায় মেরে ফেলবে মানে?দেখো তুমি ভয় পেওনা।কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা,আমরা তোমায় বাড়ি পৌঁছে দেবো।
অনা:ন না না,আমি বাড়ি যাবোনা।ওরা আমায় মেরে ফেলবে।
প্রিয়াঙ্কা:মানে?তোমার বাড়ির লোক তোমায় মেরে ফেলবে কেনো?
অনা:ওরা যদি জানতে পারে আমার সঙ্গে কি হয়েছে!তাহলে আমায় আর বাঁচিয়ে রাখবে না। আর কে বাড়ির লোক?আমার কোনো বাড়ির লোক নেই।খালামনির কাছে চাকর এর মতো থাকি।আমার কিছু হয়ে গেলে ওরা আমার বোন টাকে খাটাতে খাটাতেই মেরে ফেলবে।
প্রিয়াঙ্কা:আর কনা?তার কি হয়েছিলো?
অনা:ইতি আপু হয়তোবা জানে সবটা।সেইদিন বাড়ি যাওয়ার পর সবটা জানার সঙ্গে সঙ্গে ওরা লোকলজ্জার ভয়ে গলা টিপে মেরে ফেলে কনাকে।কিচ্ছু করতে পারিনি আমি সেদিন। বরাবরেই আমি ভীতু প্রকৃতির ছিলাম,কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনি সেদিন।
ইতি আর এক মুহূর্ত ও সেখানে না থেকে ছুটে চলে আসে।প্রিয়াঙ্কা ও তার পিছনে আসে।নিজের রুমে এসে ইতি সেখানেই বসে পরে।দু হাত মাথা চেপে ধরে সে।চোখদুটো লাল হিয়ে আছে তার।
প্রিয়াঙ্কা:ম্যাম কি হয়েছে আপনার?এভাবে চলে এলেন যে? (ইতির পাশে)
ইতি:লিভ মি এলোন প্লিজ।
প্রিয়াঙ্কা:ম্যাম কে এই কণা আপনি কি চেনেন তাকে?
ইতি:কণা তোমার মতোন ই একজন সাহসী মেয়ে। দু বছর আগের ঘটনা।তুমি সেই সময় গ্রামে গিয়েছিলে।
একদিন রাতে যখন নির্জন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন একটা মেয়ে নিজের প্রাণ বাচানোর জন্য ছুটে যাচ্ছিলো।পিছনে কতগুলো ছেলে,বিষয়টা বুঝতে পেরে ওদের সামনে গিয়ে দাড়াই। এমন অবস্থা করেছিলাম যে দাড়ানীর অবস্থায় ছিলো না তারা।মেয়েটার সামনে যেতেই ওর চোখেমুখে আমি অদ্ভুত আনন্দ খুজে পেয়েছিলাম। সেই মেয়েটা অন্য কেউ নয় কণাই ছিলো। আমার নাম জিজ্ঞেস করায় যখন বললাম,ইতি।তখন ও বললো ও আমায় চেনে,নাম শুনেছে আমার।
বেশ কিছুক্ষন ওর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি ছেলেগুলো ওকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষন করে।তবুও মেয়েটা সাহস হারায়নি,নিজের প্রাণ বাচানোর জন্য পালিয়ে যায় ওখান থেকে।
তখন ই বুঝতে পেরেছিলাম মেয়েটা ঠিক কতোটা সাহসী।
ওকে যখন চলে যাচ্ছিলো আমি বলেছিলাম,
“টেনশন করো না,যা হয়েছে ভুলে যাও”
তখন ও বলেছিলো,
“ভুলে তো যাবোই আপু।কিন্তু এর পরে ভাগ্যে কি আছে তা উপরওয়ালাই জানে”
কথাটা বলেই অদ্ভুত হেসে চলে গিয়েছিলো।আমি ওর কথার মানে বুঝতে পারিনি আর বোঝার চেষ্টাও করিনি।
ইতি:আমি খুব ভুল করেছি প্রিয়াঙ্কা।আমার উচিৎ ছিলো ওর সম্পর্কে জানা,ওর ফ্যামিলি সম্পর্কে জানা।
প্রিয়াঙ্কা:আপনি নিজেকে দোষারোপ করবেন না ম্যাম।
ইতি:আচ্ছা এসব ছাড়ো।অনাকে ভুলেও ওর বাড়ি পাঠাবে না।ওকে আশ্রম কেন্দ্রে পাঠাও এবং ওর বোন কেও সেখানে আনার ব্যাবস্থা করো।ওর ফ্যামিলি মেম্বার কে তো আমি দেখে নেবো।(শেষের কথাটা বলতে গিয়ে ঘাড়ের রগ ফুলে উঠলো খানিকটা)
________🌿
ভোর রাতের দিকে খুব কষ্টে সামান্য ঘুমিয়েছিলো আরাধ্য।কিন্তু ৭ টা বাজতেই ঘুম ভেঙে যায় ওর। প্রতিদিনের এমনটাই অভ্যাস।
ঘুম থেকে উঠে কিছু একটা মনে করে ফোন টা হাতে নেয়।একটা অ্যাপস এ ঢুকে বেশ কিছুক্ষন চেষ্টা করার পর আকতে সক্ষম হয় সেই সুনয়নার ছবি।ঠোটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে আরাধ্যের।ছবিটা ফোনের ওয়ালপেপার এ দিয়ে আলতো ঠোট ছোয়ায়।মুহূর্তেই নিজের কর্মে সে বিষ্মিত হয়ে যায়।মাথা ঝাঁকিয়ে ঘোর থেকে বেড়োনোর প্রয়াশ চালায়।
আরাধ্য: রিল্যাক্স আরাধ্য!তুই কি করছিস এসব?পাগল টাগল হয়ে গেছিস তুই! তুই আরিয়ান আরাধ্য,এসব কাজে তোকে মানায় না ট্রাই টু আন্ডার্সটেন্ড!
ঘনঘন কতগুলো নিঃশ্বাস ছেড়ে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।সেখান থেকে বের হওয়া মাত্রই ফোন টা বেজে উঠলো তার,
আরাধ্য:হ্যালো আরাধ্য স্পিকিং..ইয়েস..হোয়াট! আহাদ হসপিটাল এ?কে করেছে এসব?ওহ শীট!…
বলেই ফোন টা ছুড়ে মারে বিছানায়।দ্রুতগতিতে রেডি হয়ে যেই নিচে নামলো তখন ই রানু এসে সামনে দাড়ালো,
রানু:আরে সাহেব যে,উইঠা পরছেন?আমনের লাইগা বিররি প্রথম বানাইছি।
আরাধ্য:বিরতি প্রথম?
রানু:ঐযে আমনেরা সক্কাল বেলা খান যেডি।
আরাধ্য:ইউ মিন ব্রেক ফাস্ট?
রানু:হয় হয় ঐডাই।আয়েন খাইয়া লন।
আরাধ্য:নো থ্যাংকস,আমায় বেড়োতে হবে।
রানু:খেলতে হবে?সাহেব আমনে কিতা খেলবেন? বাড়তে আমার মাইয়ার অনেকডি খেলনা আছে। আইন্না দিমু?
আরাধ্য:আরে আমি বলেছি আমায় বেড়োতে হবে, আমি খাবোনা।
রানু:কি?আমনে যাইবেন না?আচ্ছা যাওন লাগতো না।অহন খাইয়া লন।
আরাধ্য:আমি আসছি..
রানু:আমনে কাশছেন?হেইডা আগে কইবেন না?আমি এহনি মধু গরম কইরা আনতাছি আর হের লগে তুলসি পাতার রস।
আরাধ্য:তুল তুল কি?
রানু:আরে তুলশি লাতা সাহেব।
আরাধ্য:আমার কাশি হয়নি।আমি বললাম যে আমি আসছি…
রানু:কিহ!আমনে কাঁদছেন?কেন গো সাহেব? রাইতের বেলা ভুতের ভয় পাইছেলেন নাকি?
আরাধ্য:(মনে মনে তার ফিলিংস:ও ভাই মারো মুঝে মারো,মারো মুঝে মারো🙂) মাফ করেন আমাকে!
রানু:আরে আমি রাগ করমু কিল্লাই!আমি সামান্য কামের মানু,আমারে কি রাগ করোন মানায় নি!
আরাধ্য এবার হাত জোড় করে রানুর সামনে।তারপর হনহনিয়ে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে।
কিছুক্ষিন পর নিলাঞ্জনা হোয়াইট কালার চেক এর শার্ট সঙ্গে ব্লু জিন্স পরে নিচে নামে।
রানু:আফামনি বাইর হইতাছেন?খাইয়া লন।
নিলাঞ্জনা:একদম খাওয়ার টাইম নেই গো।আমি পরে খেয়ে নেবো।
কথাটা বলে যেই সামনে এগোতে যাবে তখন ই একটি বেড়াল এসে ওর সামনে থেকে বলে যায়।
রানু:ও মা গো..এইডা তো ভালা লক্ষন না আফামনি।আইজগো আমনে বাইরে যাইয়েন না।
নিলাঞ্জনা:আমি এসব বিশ্বাস করি না। (নিচের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে)
রানু:কিতা?আমনে নিঃশ্বাস করেন না,ও আফা গো কিতা হইছে আমনের?
নিলাঞ্জনাও এবার রানুর সামনে হাত জোড় করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।
#চলবে
#লেখনীতে_সাদিয়া
[