#হৃদমাঝারে_শুধুই_তুই
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-১৪
বিয়েবাড়ি!!!
পাহাড়ের গা ঘেষে বানানো ছোট কুড়েঘরের সামনের ছোট উঠোনটা রঙবেরঙের কাগজে সাজানো,সেখানে একপাশে ছোটখাটো বাশের মাচার মতো কিছু বানিয়ে সাজিয়ে বরআসন বানানো হয়েছে,ফুল দিয়ে বাশের ফটকটা মোড়ানো,ঘরের ভিতরে একদল কোমড়ে কাপড় গোজা আদিবাসী মেয়েদের হাসিঠাট্টার কলকল আওয়াজ,আর সবার মাঝখানে লাজুক মুখটা হাটুতে রেখে নিচদিক তাকিয়ে লজ্জা লুকাতে ব্যস্ত শিমুল!
মামা,মামী,রাহাত সবার সাথে বিয়েবাড়ি পৌছালাম সন্ধ্যার আগেই।ততক্ষনে বরও এসে গেছে।আসার সময় আরমানের অনুপস্থিতিটা কেনো যেনো মানতে কষ্ট হচ্ছিলো।তার রুমের দিকে নির্লজ্জের মতো উকিঝুকিও দিয়েছি,শুধু কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারিনি।এই রাহাতটা অন্য সময় আরমান ভাইয়া,আরমান ভাইয়া করে বাসা তুলে রাখলেও এখনো অবদি কোনো কিছু বললো না।আশ্চর্যজনকভাবে মামা মামীরও এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই দেখছি।তারমানে ওনারা জানেন উনি কোথায়।থাকুকগে,যেখানে খুশি।আমার কি?
ওখানে পৌছাতেই প্রথমবারের মতো শিমুলের বাবা মাতলামো ছেড়ে আমাদের স্বাগতম জানতে এগিয়ে আসলো।কিছুটা অবাক হলেও পরে বুঝলাম মেয়ের বিয়ে বলে নিজেকে হয়তো কিছুটা বুঝিয়েছেন।মামা,মামী,রাহাত বর দেখে বাকি সবার সাথে খেতে বসে গেলেও আমি সোজা শিমুলের কাছে চলে আসলাম।একগাদা মেয়ের মাঝে বসে সে শুধু মিষ্টি মিষ্টি হাসছে।আমাকে যেতে দেখেই এক আশির্ধো বৃদ্ধা ভ্রুকুচকে বলে উঠলো,
-ই কে আছেক?
শিমুল আমার দিকে তাকিয়ে সবার মাঝ থেকে উঠে এলো।কাধে হাত রেখে হেসে বললো,
-ই মুর সইটো আছেক ঠাকমা।উ পুলিস বাবুটোর ভাগ্নি।
বৃদ্ধা লাঠিতে ভর করে আমার কাছে এসে থুতনি ধরে বললো,
-বাহ্!ভালোই তো সইটো পেয়েন্ছিস রে শিমুল।কি মিষ্টিটো দেখতে রে তুয়ার সই।তা তুয়ার নামটো কি আছেক?
মৃদ্যু হেসে বললাম,
-মিথিলা।
বৃদ্ধা চিন্তার ভাব ধরে বললো,
-ই তো বেসি বড়টো হইন গেলোক!
বাকি সব মেয়েরা ফিক করে হেসে দিলো।একজন বলে উঠলো,
-বুড়িটোর দাতটো খোয়া যেয়ে ভীমরুতিটো বেড়েছেক।ই নামটোই বড় লাগছেক উর।বুলি উ ঠাকমা,ডাকতে হবেক লাই তুয়ার উকে।তু যা ক্যানে ইখান থেকে।
আমি বৃদ্ধার পাশে দাড়িয়ে হাত ধরে বললাম,
-উহুম!দিদা একদমই যাবে না এখান থেকে।দিদা,তুমি আমাকে মিথি বলো।এটা পারবে নিশ্চয়ই?
দিদা ফোকলা হেসে বললো,
-খুব পারবোক।ই দিখ তুয়ারা,ই মিথি মুকে ইখানটোই থাকতে বুলেছেক,মু ইখানটোই থাকবোক।তুয়ারা জুয়ানটো আছিস তো কি?মুর মনটোও ইখনো জুয়ান!
দিদার কথায় আবারো ঘরে হাসির রোল পরে গেলো।তখনই,
-তোমার মতো জোয়ান মনবিশিষ্ট পাব্লিকই তো দরকার দিদা।এইসব হৃদয়হীনাকেই বরং বের করে দাও এখান থেকে।
সবার নজর দরজার দিকে।চিরচেনা স্বর আর ঝগড়ার জন্য উদ্দীপনা জোগাতে কে এসেছে তা বুঝতে সময় লাগেনি আমার।বিরক্তি নিয়ে দরজায় তাকানোর আগে ঘরে থাকা মেয়েগুলোর চেহারা দেখে কপাল কুচকে এলো আমার।এমনভাবে সব তাকিয়ে আছে যেনো হ্যালির ধুমকেতু উঠেছে এদের জন্য,জীবনে একবারই এর দেখা মিলবে।রাগ নিয়ে পিছন ফিরতেই চোখ আটকে গেলো আমারো।
একটা সাদা আর কাচা হলুদ মিক্সড রঙের পান্জাবী,সাদা পায়জামা পরেছেন আরমান।সাদা হাতাটা গুটানো,একটু বেশিই সিল্কি চুলগুলো এলোমেলোভাবে কপালে পরে আছে।মোবাইলটা ধরে আছেন মুঠোতে,সেহাতে মোটা ফিতার বড় একটা ঘড়ি।কপালটায় ঘামের ফোটা দেখা যাচ্ছে।আর তার সেই ঠোট টিপে হাসা!ওখানের আমি বাদে যে আর যে মেয়েগুলো আছে,নিশ্চিত ওই হাসিতেই ঘায়েল হয়েছে।কিন্তু আমার তাতে কোনো ইফেক্ট পরেনি!আমিতো ঘায়েল হয়নি!উহুম!একদমই নাহ!!!
উনি ভ্রু নাচিয়ে কি হয়েছে বুঝালেন।ধ্যান ভাঙতেই হুট করে কিছু একটা মনে পরে গেলো।চোখদুটো আপনাআপনিই নিজের দিকে চলে আসলো।আমার গায়েও সাদা আর কাচা হলুদ রঙের একটা ঘেড়ওয়ালা গোলজামা,সাদা চুড়িদার।এতোটা ম্যাচড্ কি করে হলো সেটা ভাবতেই মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে।
-লেডিস্!আ’ম প্রি বুকড্!নজর দিও না কেউ।
সব মেয়েরাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে।শিমুলটা মুখে হাত দিয়ে হাসছে।আমি কি রিয়্যাক্ট দিবো বুঝে উঠতে পারছি না।আরমান ভেতরে ঢুকে আমার সামনে দাড়িয়ে বললেন,
-নাও।জেলাস হতে হবে না আর তোমাকে।আমিই বলে দিলাম সবাইকে যাতে ওভাবে না তাকায় আমার দিকে।সবাই চোখ দিয়েই কতো প্রশংসা করলো,আর তুমি?একটাও প্রশংসা করলে না।হাউ রুড!!!
আমি কটমটে চোখে তাকালাম ওনার দিকে।উনি গাল ফুলিয়ে সরে দাড়ালেন কিছুটা।দিদা বললো,
-ই তুয়ার সুহাগটো আছেক?
-সোহাগ মানে?
-ই তুয়ার সুয়ামী?
বড়বড় করে তাকালাম দিদার দিকে।দিদা একটু হেসে বললো,
-কুপালটো করে সুয়ামী পেয়েন্ছিস তু।ছুড়াটো সেই সোক্কাল থেকে ইখানে সবদিক সামলাচ্ছেক।সুনেছি,উ লাকি শিমুলের বাপটোকে ই বিহার সব খরচাটোও দিয়েছিক।উয়াকে বুঝাইন্ছেক মিয়ার বিহাটোতে উয়ার মাতলামো করাটো চলবেক লাই।দেখছিস লা,ইর লাগিই তো শিমুলের বিহাটো ইতো ভালোভাবে হুইন্ছেক।
পাশের একটা মেয়ে বলে উঠলো,
-খালি ই লয় রে ঠাকমা,ই শওরের বাবুই তো ই বিহাটোর আসোল ঘটকটো আছেক।সুনেছি উই লাকি আসিকটোকে বুলেছিলো ই সমন্ধটো কুরতে।
আমি আরমানের দিকে তাকালাম।উনি ভাব নিয়ে দাড়ালেন।তারমানে উনিই শিমুলের বাবাকে বিয়ের এসব ব্যবস্থা করতে ফিন্যান্সিয়ালি সাপোর্ট করেছেন।আবার মেন্টালি সাপোর্টও করেছেন শিমুলের বাবাকে যাতে বিয়েটা নির্বিঘ্নে হয়ে যায়।আর শিমুলের জন্য ঠিক মানুষটাও উনিই খুজে বের করেছেন।আনমনে ঠোটের কোনে হাসি ফুটলো আমার।দিদা বললো,
-দিখেছিস?ই তো শিমুলের চেয়েও বেশি লজ্জা পেয়েন্ছে রে!
নিজেকে সামলে বললাম,
-শুনো দিদা,এ আমার কোনো সোহাগ টোহাগ না।আমি তো…
আরমান বলে উঠলেন,
-হ্যাঁ দিদা,ঠিকই বলেছে।আমি ওর সোহাগ টোহাগ না।কালই একটা নতুন নাম দিয়েছে ও আমার।জান!!!তাইনা মিথি?
আমি রাগী চোখে তার দিকে তাকালাম।আরমান লাজুক ভঙ্গিতে ঘাড় চুলকাতে লাগলেন।ঘরের মেয়েগুলো সব হেসে উঠলো জোড়ে।দিদা মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো,
-ই!মিলা হইন্ছে!সব বাইরে চল ক্যানে?শিমুলের কানাই তো উয়াকে দিখার লাগি উতলা হুইন্ছেক!
মেয়েগুলো হাসতে হাসতে শিমুলকে ধরে বাইরে বেরিয়ে গেলো।দিদা আমার হাত ধরেই আছে।আমি শুধু শিমুলের হাসিমুখটাই দেখে চলেছি।বাবার ঘরে অনেক তো হলো,মেয়েটা যেনো বরকে নিয়ে ভালো থাকে।দিদা আমার হাত ঝাকিয়ে বললো,
-ই ছুকড়ি!উ সুহাগটোকে ইকা ছাড়তেটো লাই।ইত্তো ভালো দেখতে সুয়ামী পেয়েন্ছিস,উ সব তীরচোখীরা গিলেই নিবেক উয়াকে।যা উয়ার কাছে।
কথা শেষ করেই ধাক্কা দিলো আমাকে একপ্রকার।টাল সামলাতে না পেরে পরেই যাচ্ছিলাম,আরমান ধরে ফেললেন আমাকে।নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম।উনি বললেন,
-ত্যাড়া মেয়ে একটা!ভাঙবে তবু মচকাবে না!
কোমড়ে দু হাত রেখে চোখ ছোট ছোট করে বললাম,
-ইউ!!!আপনি আমাকে ত্যাড়া বললেন?
উনি ভাবলেশহীনভাবে বললেন,
-হুম বলেছি,তুমি তো তাই।
আমি দু পা এগিয়েছি।আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এগিয়ে গিয়ে দিদার কাধে থুতনি ঠেকিয়ে আরমান আদুরে গলায় বললেন,
-দেখো না দিদা,একদম ভালোবাসে না এই মেয়েটা আমাকে!
-আরে ছোড়া,মুখে বুলতেটো হুবেক?তু বুঝিস লা?
-বুঝি তো।তবুও মুখে বলানোর জন্যই অপেক্ষা করে আছি।
-আজীবন অপেক্ষাই করতে হবে আপনাকে।কজ আমি কোনোদিন ওসব বলছি না আপনাকে।
-কোনসব গো?
-আপনাকে তো…!!!
আরমানকে ধাওয়া করতে গেলে উনি আবারো দিদার পিছনে লুকালেন।দিদা হাসতে হাসতে বললো,
-ইভাবে ঝুগড়াটো কুরিস তুয়ারা?
আরমান ওভাবে থেকেই নালিশের মতো করো বললেন,
-আর বলো না দিদা,একটা ঝগড়াটের প্রেমে পরেছি।
-আমি ঝগড়াটে তাইনা?দেখাচ্ছি।
-কি দেখাবে?তোমায় দেখেই তো ইহজনম কাবার করে দিচ্ছি।আর কি?
আমি হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ওনাকে শায়েস্তা করার মতো কিছু খুজতে লাগলাম।দিদা আবারো হেসে বললো,
-হুইন্ছে,হুইন্ছে!ইখন বাইরে চলতো ছোড়া!ই তো তুয়ারই আছেক।বাইরে গিয়ে নাচাগানার ধুয়াটো শুরু কর ক্যানে?বিহাবাড়িটো বুলে কুথা!
-ঠিক বলেছো।এ তো আমারই।একে তো পরে দেখে নেবো।
কথাটা বলে আরমান দিদাকে ধরে ঘরের বাইরে পা বাড়ালেন।যাওয়ার সময় চোখ মারাটাও বাদ দেননি।শুধু রাগী চোখে তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে,কিছু বলেই উঠতে পারলাম না।কেনো বলতে পারলাম না সেটা ভেবে রাগও উঠলো।পরক্ষনেই বাইরে থেকে ঢোল,বাশি আর ছেলেমেয়ের একস্বর শুনে সব ভুলে দৌড়ে বেরিয়ে এলাম।
বিয়ে বাড়ির ভোজপর্ব শেষ।শিমুল আর ওর বর আশিককে পাশাপাশি বসিয়ে রাখা।বেশ মানিয়েছে ওদের। সামনের কিছুটা দুরে আমার মামা,মামী,রাহাতসহ বাকি অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।বিয়েতে আসা মেয়ে আর ছেলেদের দুটো আলাদা গ্রুপ বরকনের ডানেবামে দাড়িয়েছে।
ছেলেমেয়েগুলোর ড্রেসকোড এক।মেয়েরা গাঢ় সবুজ চিকন পারের হলুদ কাপড় পরেছে,গায়ে ফুল,ঝিনুকের গয়না,মাথায় পালক বেধেছে।আর ছেলেগুলো হলুদ ফতুয়া আর ওদের ট্রাডিশনাল সবুজ লুঙ্গি পরেছে।পাশেই একদল লোক নানা হস্ততৈরী সুরেলী যন্ত্র নিয়ে তাল তুলেছে।পরিবেশটা বেশ লাগছে।আমি ক্যামেরায় দুটো ছবি তুলে মামা,মামীর কাছে গেলাম।ফোনটা ছবি তোলার জন্য রাহাতকে দিলাম।এটা ও ভালোই পারবে।ওই লোকগুলোর তোলা সুরে ছেলেমেয়েগুলো একসাথে হেলেদুলে গাইতে লাগলো,
🍂
হলুদ হলো গাল আর কন্যা হলো লাল,
বিয়ের আঙ্গুর ফল বলো টক হবে না ঝাল(ii)
(এরমধ্যে ছেলেগুলোর মাঝখান থেকে আরমান বেরিয়ে এসে গাইতে লাগলেন,)
–সাজলো বাড়ির চাঁদ,নাচলো মেয়ের বাপ,
মনে মনে দিচ্ছে কনে আগুন মাসে লাফ(ii)
বিয়ের পীড়িতে আয় স্বর্গের সীড়িতে,
আজকাল বিয়ের কাঠাল মিষ্টি লাগে তাই…
(মামা মামী ওনাকে দেখে অবাক হয়ে বলাবলি করছিলো।উনি গান গাইতে গাইতেই মেয়ের দলগুলোর দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখিয়ে কিছু ইশারা করলেন।ওরা সবগুলো দৌড়ে এগিয়ে আসলো,পাশ থেকে দিদাও আমাকে ধাক্কিয়ে গেয়ে উঠলো,)
–উঠ ছুড়ি তোর বিয়ে হবে সাজনা তলায় গিয়ে হবে,
উঠ ছুড়ি তোর বিয়ে হবে ঘোমটা মাথায় দিয়ে হবে,
উঠ ছুড়ি তোর বিয়ে হবে রে,
বিয়ে হবে রে…
(মেয়েগুলোর টানাটানি,দিদার ধাক্কাধাক্কি আর মামা মামীর ইশারায় ঘাড় নাড়িয়ে আমাকে উঠতে বলা। সবকিছুর জন্য আমিও ওদের সাথে উঠে শিমুলের কাছে এসে ওদের মতো করে পা দুলিয়ে গাইতে লাগলাম,)
–উঠ ছুড়ি……..বিয়ে হবে রে…
(আরমান এগিয়ে এসে আমার পাশে ঘুরতে ঘুরতে গাইলেন)
–সাতপাকে আটকাবে আসলে তা যে জেলখানা
(মুখ বাকিয়ে আঙুল দেখিয়ে গাইলাম)
–বিয়ের নামে যার একশো হাজারটা বাহানা
(পাশ কাটিয়ে মেয়েদের সারিতে দাড়িয়ে গাইলাম)
–শান্তি দু আনা যে রইলো বাকি আরচোদ্দ আনা কই
(উনি আবারো ছেলেদের দলে দাড়িয়ে গাইলেন)
–বাদবাকি টা আল্লাহ জানে কি হয় আর কি না হয়
(সবাই একসাথে গাইলাম)
–বিয়ের পীড়িতে…….মিষ্টি লাগে তাই
উঠ ছুড়ি তোর…….বিয়ে হবে রে
(সবাই মিলে মামীকে ধরলো এবার।সেই ফাকে আমি শিমুলকে ধরে গাইলাম)
–হলুদ হলো গাল……..টক হবে না ঝাল
(আরমান ছেলেগুলোর থেকে সামনে এগিয়ে মাঝ বরাবর দাড়িয়ে গাইলেন,)
–ধীরে ধীরে দেখা দেবে এক মস্ত চিচিং ফাক
(আমার পিছনের মেয়েগুলো ধাক্কা মেরে আমাকেও মাঝে ঠেলে দিলো।সুর সামলাতে আমিও গাইলাম,)
–সুযোগ পেলেই ফেলবে বাটিয়ে যে যার নিজের ভাগ
(আরমান হুট করেই আমার হাত ধরে ফেললেন।বাকা হেসে গাইলেন,)
–ধানতারা যতই বাধো পালানো যে মুশকিল
(আমি বেচারী হাত মুচরিয়েই গাইলাম,)
–সর্বনাশের মাথায় বারি আর কাকের বাসায় চিল
(আরমান হেসে হাত ছেড়ে দিলেন আমার।সবাই মিলে গাইলো আবারো)
–বিয়ের পীড়িতে আয়….মিষ্টি লাগে তাই
উঠ ছুড়ি তোর………বিয়ে হবে রে
🍂
নাচগান শেষে মাটিতে মাদুর বিছিয়ে বসেছে সবাই।আমিও শিমুলের কাছেই ছিলাম।আরমান সামনেই ছেলেদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন,হাসাহাসি করছিলেন।যতোদুর জানি,আমার মতো বিজনেস নাদান বালিকা যখন জামান ইন্ডাস্ট্রির নাম শুনেছি,তারমানে উনি যথেষ্ট বড় ঘরের ছেলে।তবুও এতোটা মিশুক সবার সাথে যা না দেখলে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।
বেহায়া চোখ তার দিকেই চলে যাচ্ছে বারবার।দুবার চোখাচোখিও হয়ে গেছে আমাদের।মুখ লুকানোর জায়গা পাচ্ছি না আমি।তাই ভাবলাম আর তাকাবোই না।কিন্তু লোকটাকে আজ বেশ লাগছে দেখতে।নির্লজ্জ চোখ তৃতীয়বারের মতো আবারো তার দিকেই তাকালো,আবারো চোখাচোখি।উনি মুচকি হাসলেন।চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।অস্বস্তি হচ্ছে প্রচন্ডরকমের।আরমান বলে উঠলেন,
-এতো লুকিয়ে চুরিয়ে দেখার কি আছে?বাদবাকি সব মেয়েগুলোকে তো বলেই দিয়েছি না তাকাতে।এখন তুমিও যদি না তাকাও,তাহলে এই হ্যান্ডসাম লুক দিয়ে কি আচার বানাবো আমি?
ছেলেমেয়ে সবাই হেসে উঠলো।আজকে ওনার কথায় রাগ না হয়ে লজ্জা হচ্ছে।কিন্তু কেনো?আমিতো এমন ছিলাম না।রাঙা চেহারাটা লুকাতে নিচদিকে তাকিয়েই রইলাম।দিদা কোথা থেকে লাঠিতে ভর করে এসে আরমানের কান ধরে বললো,
-ই ছোড়াটো বড্ড বেশরম আছেক।ই মিথি,উয়াকে একটু ভালোমতো তারা গুনাবিক লা?
বিরবির করে বললাম,
-যে লোক আমার ক্লাস নিচ্ছে,তাকে তারা গোনাবো কিভাবে?
-কিছু বুললি তু?
এরমধ্যে মামা ইশারায় আরমানকে ডাকলেন।আরমান একপলক আমার দিকে তাকিয়ে উঠে চলে গেলেন মামার কাছে।আমি তাকিয়ে দেখলাম মামা একটু হেসে তবে সিরিয়াসলি কিছু বলছেন আর আরমান লজ্জা লজ্জা পেয়ে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন,একবার নিচদিকে,একবার ঘার চুলকাচ্ছেন,একবার পিছনে দুহাত আটকাচ্ছেন আর মামার কথার জবাব দিচ্ছেন।মামীও রাহাতকে ধরে পাশেই দাড়িয়ে।
তবে রাহাত মোবাইলে ব্যস্ত।ব্যাপারটা আজব লাগলো আমার।তাই উঠে আমিও সেদিক হাটা লাগালাম।আমাকে এগোতে দেখেই ওনারা আলোচনা বন্ধ করে দিলেন।ভ্রুকুচকে বললাম,
-কি হয়েছে?
-আমার তোমার ব্…
আরমানের কথায় বাকিসব তাকালো ওনার দিকে।মামা গলা ঝাড়া দিতেই উনিও আটকে গেলেন।
-আমার আপনার?
মামী মেকি হাসি দিয়ে বললো,
-ও ক্ কিছু না মিথি।কিছু না।
-ক্লিয়ারলি বলবে তো মামি?কি হয়েছে?এই লোকটা…
-আরেহ,তোমার মামা বলছিলো আরমান আর তোমার বেশি ঝগড়া হয়।
-হ্যাঁ,কারন উনি ঝগড়াটে।এতে আলোচনার কি হলো?
আরমান হাসছেন।মামীও।মামা বললেন,
-হ্যাঁ,ওটাই বুঝাচ্ছিলাম ওকে।তোমার সাথে যেনো ঝগড়া না করে।
আমি একটু ভাব নিয়ে নাকটা ঘষলাম।কাল তো চলেই যাবো।ঝগড়া হোক বা না হোক,এ বাসার লোক তো বুঝে গেছে,ওই লোকটাই ঝগড়াটে।দ্যাটস্ এনাফ।মামী বললো,
-চলো মিথি,ওদিকে যাই।
কথাটা বলে মামী রাহাতকে ধরে হাটা লাগালেন।আমিও চলে আসছিলাম।মামা আরমান পিছনেই দাড়িয়ে।আমরা একটু দুর আসতেই মামা বলে উঠলেন,
-তুমি তবে আজই সিভি মেইল করে দিও কেমন?
পিছন ফিরে দেখলাম আরমান মাথা নাড়ালেন।মামার সাথে আরমানের সিভি মেইল করার কি সম্পর্ক?থাকতেও পারে।সাংবাদিক পুলিশ মিচুয়াল কিছু হবে হয়তো।আগামাথা কিছু না বুঝে স্থানত্যাগ করলাম আমি।
#চলবে….