#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৫৬
কেবিনের ভেতরটা নিস্তব্ধতা আর নিরব কিন্তু সেই নিরবতার মাঝে কারোর ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। আর সেই কান্নার উৎস হলো আদিবা সে পরম যত্নে আদিকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে-ই যাচ্ছে। এদিকে আদি বিমূঢ়, বিমূর্ত বিহ্বলিত হয়ে আছে আদিবার কাজে। আদির মুখে স্পর্শ স্তব্ধতা রেশ দেখা যায়, তার বুঝতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে হঠৎ আদিবার কি হলো, যে মেয়ে ২মাস আগে ও তাকে যে কথা গুলো বলো সেটা ভুলে তার কাছে কি করে আসতে পারে। আদি ভাবছে কিছুক্ষণ আগের কথা, যখন সে নিজের কেবিনে কাজ করছিলো তখন হঠাৎ……
কিছুক্ষণ আগে…..
অর্ণবের সাথে কথা বলে আদিবা কান্না করতে করতে সোজা আদির অফিসের দিকে যায়। তার শুধু মনে হচ্ছে সে আদিকে হারিয়ে ফেলবে তার করা ভুল কাজের জন্য। কেন সে আদিকে নিজের কাছে থেকে সরিয়ে দিলো? কেন সেদিন আদিকে ওই তিক্ত কথা শুলো বললো? কেন আদিকে সে বললো সে তাকে ভালোবাসে না কেন কেন কেন? আদিবা চোখ মুছে সোজা আদির কেবিনে দিকে দৌড়ে গেলো। এদিকে আদি দাড়িয়ে দাড়িয়ে কারোর সাথে কথা বলছে কিছু কাজ নিয়ে। হঠাৎ কেউ দৌড়ে এসে তাকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরে। আদি কথা বলায় এতো ব্যস্ত ছিলো যে সে আদিবাকে আসতে ও দেখেনি। অকস্মিক তাকে কেউ জড়িয়ে ধরায় সে দু’কদম পিছিয়ে যায়। কিন্তু সে নিজের ব্যালেন্স ঠিক করে জড়িয়ে ধরা মানুষটিকে দেখে সে অবাকের শেষ পর্যন্ত চলে যায়। সে নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না আদিবা নিজে তার কাছে এসেছে, আদি ফোন কেটে দিলো। আর এদিকে আদিবা কিছু না বলে কান্না করে-ই যাচ্ছে।
এখন……..
আদিঃ আদুমনি কি হয়েছে এভাবে কান্না করছো কেন?
আদিবা আদিকে জড়িয়ে ধরে কান্নারত গলায় বললো… আদি প্লিজ আমাকে আপনার জীবন থেকে দূরে সরাবেন না। আমি আপনাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না কিছুতেই না।
বলে অরো জোরে কান্না করতে লাগলো। আদিবার কথা শুনে আদির ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটলো। সে বুঝতে পারে আদিবা তাকে মন থেকে মেনে নিজে থেকে এসেছে তার কাছে।সে তো এটাই চেয়েছিলো আদিবার কাছ থেকে। আদি একটু আদিবাকে ভয় পাওয়ানো জন্য তাকে বললো…
আদিঃ তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না তাইলে আমি কেন তোমাকে আমার জীবনে ফিরিয়ে আনবো। কেন দ্বিতীয় বার কষ্ট পাবো? কেন আমার মন ভাঙ্গাবো? কেন বলতে পারো?
আদির কথা শুনে আদিবা কান্না বন্ধ করে নিরব হয়ে যায়। তাইলে কি আদি তাকে আর মানবে না, আদি তাকে আর ভালোবাসে না, সে কি আদিকে তাইলে সারাজীবনের মতো হারিয়ে ফেলো। আদিবা আদিকে ছেড়ে দাড়িয়ে চোখ মুছে আদির দিকে কাতোর চোখে তাকিয়ে বললো…
আদিবাঃ আদি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। সেদিন শুধু তোমাকে নিজের থেকে দূরে রাখার জন্য বলেছিলাম। প্লিজ আদি আমাকে তোমার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিওনা আমি বাঁচতে পারবো না তোমাকে ছাড়া। আমি মানছি আমি ভুল করেছি ভীষণ ভুল করেছি তাই বলে আমাকে এতো বড় শাস্তি দিও না প্লিজ আদি। সেদিন তোমাকে আমি কষ্ট দিতে চায়নি কিন্তু আমি কি করবো বললো, আমার কাছে তোমাকে জীবন আর নিজের সম্মান বাচাতে আমি….
আর বলতে পারে না আদিবা সে বুঝতে পারে আবেগের বসে সে কি বলতে যাচ্ছিলো। এদিকে আদি আদিবা মুখে তাকে তুমি ডাক শুনে বিস্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকে। আদিবার আদিকে তুমি করে ডাকায় তার মনে ভালোলাগা অনুভব হলো কিন্তু আদিবার শেষ কথা গুলো শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায় তার দিকে। আদিবা কেন বললো তার জীবন আর নিজের সম্মান বাচাতে মানে কি? এদিকে আদিবা আদিকে তার দিকে এভাবে তাকাতে দেখে ঘাবড়ে যায় তাই পরিস্থিতি সামলাতে সে আদিকে জড়িয়ে ধরে বললো…
আদিবাঃ আদি তুমি যা বলবে আমি তাই করবো। যদি আমাকে তোমার পা ধরে ক্ষমা চায়তে বললো, তাইলে তাই করবো কিন্তু আমাকে ফিরিয়ে দিও না প্লিজ। আমি আর তোমাকে কষ্ট দেবো না তুমি যেটা করতে বলবে তাই করবো যেমন তুমি বলে আমি সবাইকে বলে দেবো তুমি আমার স্বামী। আর তুমি চাইলে তোমাকে আব্বু ডাক শোনাবো কিন্তু আমাকে নিজের কাছে নিয়ে নাও প্লিজ….
আদিঃ পা ধরতে হবে না শেষে যেটা বলে সেটা করলে হবে। বয়স তো কম হলো না আমার তো ছোট্ট একটা বাচ্চার মুখে আব্বু ডাক শুনতে মন চায়। ঠিক আছে এবারের মতো মাফ করে দিলাম কিন্তু দ্বিতীয় বার যেন এমন না হয়।
আদিবা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে, সে আর এমন ভুল করবে না। আদি হেসে আদিবাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। আদি মনে মনে ভাবে… এখন কিছু বলবো না তোমাকে যেদিন তোমার মনে হয় তুমি অতীত সম্পর্কে আমাকে বলবে সেদিন সব শুনবো। এদিকে আদিবা ভাবছে… আজ অনেক কিছু বলে ফেলেছি কিন্তু আর কিছু বলবো না তোমাকে। অতীতের কালো অধ্যয়শুলো তোমার আর আমার জীবনে আসতে দেবো না… বলে আদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো…..
______________________________
ভাবি প্লিজ আর খাবেন না ফুচকা। ভাইয়া যখন তখন আসে পরবে, এসে যদি দেখে আপনি এই সব খাচ্ছেন তাইলে আপনাকে তো কিছু বলবে না আমাকে মেরে ফেলবে…. বলে শুকনো ঢোক গিলো প্রাপ্যর। তার মনে ভয় লাগছে অর্ণব যদি এসে এসব দেখে তাইলে নির্ঘাত তাকে মেরেই ফেলবে কেননা অন্তুকে এসব খেতে মানা করেছে অর্ণব। অন্তু শরীর খারাপ বলে তাকে স্ট্রকলি বাইরের খাবার খেতে মানা করে সে। এদিকে অন্তু প্লেটের শেষ ফুচকাটা মুখে নিয়ে তৃপ্তি সহকারে খেয়ে প্রাপ্যর শুকনো মুখ দেখে ফিক করে হেসে ফেলে। অন্তু প্রাপ্যর নাজে হাল আবস্থা দেখে মজা নিচ্ছে কেননা সে জানে অর্ণব তাকে কিছু বলবে না কিন্তু প্রাপ্যকে ছাড়বে না। অন্তু অরো এক প্লেট ফুচকা নিতে নিতে বললো….
অন্তুঃ ভাইয়া কিছু হবে না জাস্ট চিল করুন আর আমাকে শান্তি মতো খেতে দিন।
অন্তুর কথা শুনে প্রাপ্য হতাশ হয় এদিকে আনভি তার মায়ের কান্ড দেখে হাসতে লাগলো। প্রাপ্য আনভির হাসি দে তেজী গলায় বললো…
প্রাপ্যঃ আনভিসোনা হেসো না তোমার পাপা তো তোমাকে আর তোমার মাম্মাকে কিছু বলবে না,বলবে তো আমাকে। আমি শেষ পর্যন্ত বলির পাঁঠা হবো ধুর ভাল্লাগে না। বাবা ভাবিকে কিছু বলছো না কেন তুমি। এখন যদি এসব খেয়ে শরীর খারাপ হয় তাইলে কি হবে যানো তো…
মি.চৌধুরী দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বললো প্রাপ্য। মি.চৌধুরী হাতের পেপার রেখে অন্তুকে বললো… মা আর খেয়ো না অর্ণব এসে রাগ করবে।
অন্তুঃ কিছু বলবে না বাবাই।
মি.চৌধুরী আর কিছু বলো না। আনভি গালে হাত নিয়ে বললো…. মাম্মা আর খেওনা। পাপা সত্যি সত্যি রাগ করবে।
অন্তুঃ আনভু মা তোমার পাপা তো এখানে নেই তাইলে কে বকবে আমাকে সোনা।
কথাটা বলে অন্তু অরো একটা ফুচকা মুখে নিয়ে গিলতে নেবে তখন পিছন থেকে অর্ণব বলে ওঠলো…
অর্ণবঃ কে কাকে বকবে??
অর্ণবের কথা শুনে অন্তুর গলায় ফুচকা আটকে যায়, সে কাশতে কাশতে চোখ থেকে জল পরতে লাগলো। অন্তুকে কাশতে দেখে অর্ণব দৌড়ে এসে জগ থেকে পানি নিয়ে তাকে খাওয়াতে লাগলো। পানি খেয়ে অন্তু ঠিক ফিল করলে সে অর্ণবের দিকে তাকালে সে ভয় পেয়ে যায় কেননা অর্ণব তার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে। অন্তু বুঝতে পারে অর্ণব তাকে ফুচকা খেতে দেখে ফেলেছে সে শুকনো ঢোক গিলে জোরপূর্বক হাসতে লাগলো। এদিকে প্রাপ্য অর্ণবের রাগিচোখ দেখে ভয়ে একপা একপা করে পিছিয়ে যেতে যেতে বললো…
প্রাপ্যঃ যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ভাগ প্রাপ্য ভাগ তুমি আজ বাচবি না যদি ভাইয়ার হতে পরিস।
বলে দৌড়ে তার রুমে চলে যায়। প্রাপ্যকে এই ভাবে যেতে দেখে অর্ণব বুঝতে পারে অন্তুকে সেই বাইরে থেকে ফুচকা নিয়ে এসে দিয়েছে, তাই সে এই ভাবে পালাচ্ছে। তার মানা করা স্বত্বেও প্রাপ্য তাকে এগুলো এনে দিয়েছে দেখে তার রাগ লাগছে সে জোরে জোরে বললো….
অর্ণবঃ প্রাপ্য তোকে পরে দেখে নেবো আগে আমার জান কে দেখেনি। কি বলো জান কি করবো তোমাকে??
অন্তুঃ ক কি করবে ম মানে। আমি কি করেছি আবার।
অর্ণবঃ কি করেছো মানে তোমাকে আমি বলিনি বাইরের খাবার খাবে না। তাইলে কি করে বাইরে খাবার খেলে তুমি এখন যদি শরীর খারপ করে তখন তো হসপিটালে নিতে হবে। আর তুমি যে মেয়ে হসপিটালে তো নিজের ইচ্চাতে যাবে না আমাকেই ধরে বেধে নিয়ে যেতে হবে।
তাদের কথার মধ্যে আনভি বললো… পাপা মাম্মা ২ প্লেট ফুচকা খেয়েছে জানো তুমি। আমি, দাদু, চাচ্চু কতো মানা করেছি কিন্তু মাম্মা শোনে নিয়।
আনভির কথা শুনে অন্তু চোখ বড় বড় করে তাকায় আনভির দিকে সে মিনমিন করে বললো…. এবার কি করবো আমি, বাপের বেটি সব বলে দিলো তো বাপকে। এখন বাপ কি করবে আমার সাথে কে জানে। অন্তুকে মিনমিন করতে দেখে অর্ণব ধমুক দিয়ে বললো…
অর্ণবঃ অন্তু তোমাকে আজ কে বাচায় দেখছি আমি..
বলে অন্তুর দিকে যেতে নিলে অন্তুকে আর কে পায় সে দৌড়ে তার রুমে চলে যায়। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তারা তিনজনে ফিক করে হাসতে লাগে। মি.চৌধুরী বললো…. অর্ণব মেয়েটাকে এই ভাবে বকা ঝকা করো না। মেয়েটার শরীল এমনিতে ভালো না।
অর্ণবঃ বাবাই কি করবো বললো, বকতে তো চায় না। কিন্তু এমন এমন বাচ্চামি করে না বকলে হয় না। অন্তু যানে তার শরীর খারাপ বলে আমি বাইরের খাবার খেতে মানা করেছি তাইলে কি করে বাইরে খাবার খেতে সাহস করে।
মি.চৌধুরীঃ দেখো কি করবে। মেয়েটা একটু একটু করে আগের মতো হচ্ছে এটাই যথেষ্ট।
বলে তিনি চলে যায়। অর্ণব দীর্ঘ শ্বাস নিলো অন্তুকে কি করে বোঝাবে তার কিছু হলে সে বাচতে পারবে না। কিন্তু এই মেয়ে কিছু বোঝে না, যা মানা করবে সেটাই বেশি করে করবে। অর্ণব আনভিকে কোলে নিয়ে বললো…
অর্ণবঃ আম্মু তোমার মাম্মাকে কি আমি একটু বেশি বোকা দিয়েছি।
আনভি কয়েক রকম মুখের ভঙি পাল্টে বললো… হু হু একটু বেশিই।
অর্ণব আনভি কান্ডো দেখে জোরে জোরে হাসতে লাগলো। আনভি অন্তুর সাথে থাকতে থাকতে বেশ পাকা হয়ে গেছে মায়ের মতো। ইদানীং আনভি অন্তুর মতো মুখের ভঙ্গির করতে শুরু করেছে। অর্ণব আনভির গালে চুমু দিয়ে দিয়ে বললো… আম্মু তুমি তো মাম্মা নেউটা হচ্ছো দিনে দিনে। অর্ণবের কথা শুনে আনভি খিলখিল করে হাসতে লাগলো। অর্ণব আনভিকে নিয়ে ওপরে চলে গেলো রুমে গিয়ে দেখিই মহারানী কি করছে….
__________________________________
অর্ণবঃ এই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন??
কথাটি শুনে অন্তু নড়েচরে বসে মাথা নিচু করে নিয়ে অর্ণবকে আড়চোখে দেখছে। সে বুঝতে চাচ্ছে অর্ণব কি এখনো তার ওপর রেগে আছে কি না। এদিকে অর্ণব অন্তুর ভাব দেখছে কিন্তু কিছু বলছে না সে আনভিকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াছে। একটু আগে সবাই রাতের খাবার খেয়েছে কিন্তু অন্তু বাদে, সে সন্ধায় ফুচকা খেয়েছে তাই কিছু খানে না। অর্ণব আনভিকে বেডে শুয়ে দিয়ে অন্তুর সামনে বসলে চটজলদি অন্তু বললো…
অন্তুঃ সরি আর হবে না। প্লিজ রাগ করে থেকো না। সন্ধা থেকে কথা বলছো না কেন আমার সাথে, আমি ভুল করেছে সরি বলছি। প্লিজ আমার সাথে কথা বলো তুমি কথা না বলে আমার কষ্ট হয়।
বলে না বলে তার চোখ থেকে মুক্তদানা পরতে লাগলো। অর্ণব অন্তু চোখে পানি দেখে তার চোখ মুছে, তাকে তার কোলে বসিয়ে বললো…
অর্ণবঃ জান কেন বঝো না তুমি তোমার শরীল ভালো না, তাই তো আমি তোমার ভালোর জন্য বাইরের খাবার বন্ধ করেছি। তা না হলে আমি কেন তোমাকে বাইরের খাবার খেতে বন্ধ করবো। আমি জানি তো তুমি বাইরে খাবার পছন্দ করো। কিন্তু একটু তো বুঝবে তুমি সেদিন আনভিকে খাওয়াতে নিয়ে তুমি অজ্ঞাত হয়ে গেলে, তারপর কিছু খেলে বমি করো, তোমার মুড সুইং হয় কেন হয় যানি না। এই ভালো থাকো, এই রেগে যাও। তাইতো তোমাকে ডক্টরের কাছে নিতে চায়লাম কিন্তু তুমি গেলে না। তাইলে আমি যা বলি তুমি মানো না কেন। তুমি জানো না তুমি ভালো না থাকলে আমি ভালো থাকি না।
কথাটা বলে অর্ণব অন্তুর গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। এদিকে অন্তু অর্ণবের কথা শুনে মনে করলো হ্যা তার কিছু দিন ধরে শরীল খারাপ করছে, মুড সুইং হচ্ছে এমনকি সেদিন অজ্ঞাত হয়ে গিয়েছিলো। অর্ণব অনেক বার বলে ডক্টর দেখাতে কিন্তু সে যাবে না তাই অর্ণব বাইরের খাবার বন্ধ করে কিছু নিয়ম ঝুলিয়ে দেয় তাকে। অন্তু মিনমিয়ে বললো…
অন্তুঃ সরি
অর্ণবঃ ওকে। কিছু খাবে তুমি আমি নিয়ে আসবো।
অন্তুঃ না খাবো না পেটের আর জায়গা নেই।
অর্ণবঃ হবে কি করে ২প্লেট ফুচকা যে আছে এই ছোট্ট পেটে।
বলে তাকে কাতুকুতু দিতে লাগলো। অন্তু অর্ণবের কোলের মধ্যে নড়াচড়া করতে থাকে আর হাসতে থাকে। অন্তুর হাসি দেখে অর্ণব বললো…
অর্ণবঃ এই ভাবে হাসতে থাকবে ভালো লাগে। বুকে শান্তি অনুভব হয় তোমাকে এই ভাবে দেখলে।
অর্ণবের কথায় অন্তু অর্ণবের গলা জড়িয়ে ধরে তার গালে কিস করতে লাগে, আর অর্ণব তার কোমর জড়িয়ে থাকে। হঠাৎ অন্তু তাকে ছেড়ে দৌড়ে ওয়াশরুমের চলে যায়, এদিকে অর্ণব বেকুপের মতো অন্তুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ওয়াশরুম থেকে অন্তুর বমির করার শব্দ আসলে অর্ণব হবতম্ভ হয়ে ওয়াশরুমে দিকে গিয়ে অন্তুর ক্লান্তমাখা মুখ দেখে বুকে মোচড় দেয়। অন্তু হাত মুখে পানি দিয়ে আসতে নিলে মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলে অর্ণব তাকে ধরে ফেলে। অর্ণব অন্তুকে কোলে তুলে নিলে অন্তু তার টি-শার্ট খামচে চোখ বন্ধ করে থাকে। তার মাথা ঘুরছে, কথা বলতে পারছে না কিন্তু বুঝতে পারছে অর্ণব তাকে এই অবস্থাতে দেখে কতোটা অস্থির হচ্ছে। সে অনেক কষ্টে দূর্বল গলায় বললো…
অন্তুঃ আ আমি ঠিক আ আছি। ত তুমি প্লিজ আ আমাকে ত তোমার ব বুকে নিয়ে ঘু মা ও।
অর্ণব মনে করাছিলো সে অন্তুকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাবে এখনি, তাকে ডক্টর দাখানো দরকার, তার জন্য সে রুম থেকে বাইরে যেতে নিচ্ছিলো। কিন্তু অন্তুর কথায় সে আর এগোতে পারে না, তার কাছে অন্তুর কথা উপেক্ষা করার সাধ্য নেই। তাই বাধ্য হয়ে সে বেডে শুয়ে অন্তুকে তার বুকে নিয়ে তার মাথায় হাত বুলাতে লাগে। একটু সময় পরে অন্তু ভারী নিঃশ্বাস নিলে অর্ণব বুঝতে পারে সে ঘুমিয়ে গেছে তাই সে ও ঘুমিয়ে যায়…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৫৭
আন্টি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি আপনাকে না জানিয়ে আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি। এতে আদিবার কোনো দোষ নেই, যা করেছি আমি করেছি। তাই যা বলার আমাকে বলুন…. কথাগুলো শান্ত কন্ঠে বললো আদি সালেহাকে (আদিবার মা)। এদিকে সালেহা আদির কথা শুনে তার মেয়ের দিকে তাকালে আদিবা মাথা নিচু করে থাকে।
“আসলে বিকেলে আদিবা আদির কাছে নিজের ভালোবাসা শিকার করলে। আদি তাকে মাফ করে দেয় ঠিকি কিন্তু একটা শর্ত দেয় আদিবার মাকে তাদের বিয়ের কথা আজ এই মূহুর্তে বলবে। সেটা শুনে আদিবা প্রথমে ভয় পেয়ে গেলে আদি তাকে আশ্বস্ত করে যে কিছু হবে না। তারপর আদিবাকে নিয়ে আদি তাদের বাড়ি এসে সব কথা সালেহাকে বলে”
সালেহাঃ আদু আদি যা বলছে সত্যি। তুমি বিয়ে করেছো কিন্তু আমাকে একটা বার বলার প্রয়োজন মনে করো নি।
আদিবাঃ মা আমি আসলে…
আদিবাকে বলতে না দিয়ে সালেহা বলো… আমি তো তোমাদের বিয়েতে রাজী ছিলাম তাইলে কেন এটা করলে। আর এই কয়েক বছর তুমি আদির সাথে যোগাযোগ করোনি বলে আমি তোমার সাথে রাগ করেছি যে ছেলেটার সাথে এই অন্যায়টা করো না। কিন্তু এখন তো দেখছি তুমি আমাকে ঠকিয়েছো।
কথা শুলো তিনি কষ্ট নিয়েই বলেন। সে এটা আশা করেনি তার মেয়ের কাছে থেকে। আদিবা ছলছল চোখে একবার আদির দিকে তাকিয়ে সে তার মার কাছে বসে বললো…
আদিবাঃ মা আমি তোমাকে ঠকায়নি। আদি বিয়েটা শুধু করেছে আমাকে তার সাথে বেধে রাখার জন্য। সে ভয় পেতো যদি পরিস্থিতি তার বিরুদ্ধে যায় তাই। মা প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি জানি এটা করা মোটেও ঠিক হয়নি।
আদিবা কথা গুলো বলে কান্না করে দেয়। সালেহা আদিবাকে ছাড়িয়ে উঠে চলে যেতে নিলে আদিবা বলে….
আদিবাঃ মা আমার কথাতো শোনো…
আদিবাকে কথা না বলতে দিয়ে সালেহা মুচকি হেসে বললো…. জামাই প্রথম বার বাড়িতে এলো, ভালো মন্দ রান্না করে খাওয়াতে হবে না। জানি আদি প্রথম বার না অনেকবার এসেছে কিন্তু জামাই হিসেবে তো এই প্রথম তাই না। তুই আদিকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ হতে বল আমি রান্না চাপিয়ে দিচ্ছি।
বলে যেতে নিলে আদি বললো… আন্টি তাইলে কি ধরে নেবো আপনি আমাদের কে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
সালেহাঃ আদি তুমি ছেলে হিসেবে খারাপ না আর আগে থেকে আমি তোমার সাথে আদিবার বিয়ে ঠিক হয়ে ছিলো। তাই বিয়ে যখন হয়েছে তাইলে মানা আর না মানা একি ব্যপার। আজকে রাতটা এখানেই থেকে যাও ভালো লাগবে আমার।
বলে সে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। তিনি একটু হলেও কষ্ট পেয়েছেন কিন্তু নিজেরি তো মেয়ে মেনে না নিলে সে কি করে থাকবে। এদিক আদিবা তার মায়ের কথা শুনে খুশি হবে যে তার মা আদিকে আর তাকে মেনে নিয়েছে, না-কি কষ্ট পাবে সে তার মাকে কষ্ট দিয়েছে তাই বলে। এদিকে নিরব দর্শকের মতো সব কিছু নুপুর দেখলো তার রাগ হচ্ছে তার বোনের ওপর এতো কিছু হবার পরেও সে আদিকেই বিয়ে করলো, সে চলে যায় তার রুমে। নুপুরকে এভাবে যেতে দেখে আদিবা বুঝতে পারে নুপুর রেগে আছে তাকে বুঝাতে হবে। আদিবা আদিকে তার রুমে ফ্রেশ হতে বলে আজ আদি এখানে থাকবে তার সাথে। আদিবা আদিকে থুয়ে নুপুরের রুমে গিয়ে দেখে সে জানালার ধারে দাড়িয়ে আছে সে গিয়ে বললো….
আদিবাঃ নুপুর আদির সাথে কথা বলি না কেন? সে এখন তোমার জিজু হয়। সব ভুলে যাও।
আদিবার কথা শুনে নুপুর রেগে বললো… আমি ওনাকে জিজু মনে করি না আর করবো না। আর কিসের ক্ষমা তার জনেই এসব হয়েছে। তুমি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারো আমি না। আমার চোখের সামনে সেই লোকগুলো তোমাকে বাজে ভাবে টাচ করছিলো, ভিডিও করছিলো কিন্তু আমি কিছু করতে পারিনি শুধু নিরব দর্শকের মতো চেয়ে ছিলাম। আমি কিছুতেই সেই দিনটার কথা ভুলতে পারবো না আপু কিছুতেই না।
বলতে বলতে কান্না করে দেয় সে। নুপুরে কথা শুনে আদিবার গায়ের কাটা দিতে লাগে সে ও সেদিনের কথা কিছুতেই ভুলতে পারে না। সে দিনটা ছিলো একটা কালো দিন সালেহা যখন তাকে বলে নুপুরকে পাওয়া যাচ্ছে না তখন সে ভয় পেয়ে যায়। আদিবা নুপুরকে অনেক জায়গা খোঁজে কিন্তু পায় না হঠাৎ তার ফোনে একটা ফোন আসলে সে ধরে যা শোনে তাতে সে স্তব্ধ হয়ে যায়। সে সোজা চলে যায় নুপুরকে যেখানে রাখে সেখানে। সেখানে গিয়ে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে দাড়ায় সেদিন। সে ওখানে যেতেই ওই লোকগুলো তাকে বলে নুপুরকে সে নিয়ে যাতে পারে কিন্তু তাকে আদিকে ছেড়ে দিতে হবে না হলে আদিকে তারা মেরে ফেলবে। এই কথা শুনে আদিবার বুঝতে বাকি থাকে না তাদের সাথে এই কয়েকদিন যা হচ্ছে তা এদের কাজসাজি তার থেকে বড়ো অবাক হয় এর পেছনের থাকা মানুষটাকে দেখে তার ঘিন্না হতে লাগে ওই মানুষটিকে। আদিবা রাজী না হলে ওই লোকগুলো তার সাথে জবরদস্তি করতে লাগে সাথে ভিডিও করতে লাগে, তাও নুপুরে সামনে। আর ছোট্ট নুপুর বোনকে ওভাবে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। আদিবা কতো বার তাদের কাছে মিনতি করে বলেছিলো তাকে যেনো স্পর্শ না করে কিন্তু না, তারা কোনো কথা ওই লোকগুলো শোনে নিই। আদিবা আর সহ্য করতে না পেরে অবশেষে তারা যা শুনতে চেয়েছিলো সেটা আদিবা বলে। আদিবার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে তারা তাকে ছেড়ে দেয়, তাদের মুল উদেশ্য ছিলো আদিবার থেকে কথা বের করা আর কিছু না তাই আদিবার কথা শুনে তাকে তারা ছেড়ে দেয়। সেই কথাটা হলো সে আদিকে ছেড়ে দেবে, আর দূরে কোথাও চলে যাবে। আদিবা তাদের কথা রাখে কিন্তু তারা আদিবাকে স্পর্শ করা ভিডিওটা তাকে দেয় না। আদিবাকে ভয় দেখায় যদি আদিবা আদির সাথে যোগাযোগ রাখে তাইলে ভিডিওটা ভাইরাল করে দেবে। তাই তো আদিবা নিজের সম্মান বাঁচাতে এতো দিন আদিকে তার কাছে থেকে দূরে রেখেছে কিন্তু আজ অর্ণব তাকে ভিডিওটা দেয়ায় সে সাহস দেখিয়ে আদিকে তার জীবনে ফিরিয়ে আনে। আদিবা চোখের জল মুছে বললো…
আদিবাঃ নুপুর এতে আদির দোষ নেয়। যা হয়েছে সেটা কিছু মানুষের সাধসিদ্ধি জন্য। আর এখন ওই ভিডিওটা আমার কাছে তাই আমি নিজেকে আটকাতে পারলাম না আদির কাছে যেতে। যারা আমাদের সাথে অন্যায় করেছে তারা সবাই শাস্তি পাবে দেখে নিস। কিন্তু আদিকে প্লিজ এসব নিয়ে কথা বলিস না আর পরলে তুই সব ভুলে আদিকে জিজু হিসেবে মেনে নে আদির এতে দোষ কিন্তু ছিলো না প্লিজ নুপুর।
নুপুর তার বোনের দিকে তাকায় সে দেখেছে তার বোনকে আদির জন্য কষ্ট পেতে তাই সে চায়না সে আবার কষ্ট পাক তাই সে বলে…
নুপুরঃ ঠিক আছে আমি জিজুকে কিছু বলবো না কিন্তু তাকে ক্ষমা করতে কিছুটা সময় লাগবে আমার।
নুপুরে কথায় আদিবা হাসে, সে জানে তার বোন অনেক বুঝদাড় তাই সব ভুলে গিয়ে আদিকে মেনে নেবে। আদিবা সেখান থেকে চলে আসে নিজের রুমে। রুমে গিয়ে আদিকে মাথা মুছতে দেখে বুঝলো সে গোসল করেছে তার পরনে টি-শার্ট আর টাওয়জার দেখে বুঝলো তার মা মনে হয় সমনের দোকান থেকে আদির জন্য এসব এনে দিয়েছে। আদি আদিবাকে দেখে হাসে তারপর সবাই মিলে রাতে এক সাথে খেতে বসে গল্পগুজব করে নুপুরো আদির সাথে একটু একটু কথা বলে তা দেখে আদি খুশি হয়। সবাই খেয়ে যে যায়র রুমে চলে যায়…
______________________________
রাত-২টা
আদিবা আদির বাহু ডোরে আবদ্ধ হয়ে গল্পে মেতে উঠেছে আদির সাথে। আদি আদিবা তাদের আগের সব কথা মনে করছে, তাদের প্রথম দেখে, ভালোলাগা, ভালোবাসা সব স্মৃতি চরণ করছে। আদি আদিবার কেশে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো…
আদিঃ আদুমনি অরুবুড়ির বিয়েটা হয়ে গেলে আমি তোমাকে বিয়ে করে ঘরে তুলবো৷ আমি দিদুনের সাথে কথা বলে নেবো…
আদিবাঃ ঠিক আছে।
আদিঃ আদু আন্টি কি আর কিছু বলেছে পরে তোমাকে।
আদিবাঃ না কিছু বলেনি। আদি আপনি এতো ভালো কেন? আমি আপনার সাথে কতোটা খারাপ করলাম তারপরও আপনি আমাকে অনায়েসে মেনে নিলেন।
আদিঃ আদুমনি তোমাকে ভালোবাসি তাই তোমার রগে রগে চিনি তুই কি করতে পারো কতটা করতে পারো। আমি জানতাম তুমি আসবে ফিরে আমার কাছে তাই শুধু অপেক্ষা করেছি আমি। তুমি ঠিক আসলে তাই নিজেকে আর কষ্ট দিতে চাইনি তাই কোনো দ্বিধা না করে তোমাকে মেনে নেই। আর আবার তুমি আমাকে আপনি আপনি করছো তোমাকে বলাম না তুমি করে বলতে…
আদিবাঃ সরি আর হবে না। আচ্ছা অরুর বিয়ে কবে ঠিক হলো।
আদিঃ কাল আসবে অর্ণব বিয়ের ডেট ঠিক করতে। অরনির পরীক্ষা শেষ তাই আমি যতো তাড়াতাড়ি পাড়ি ওকে বিয়ে দিতে চায় আবার না জানি কি হতে পারে ভবিষ্যতে।
আদিবা কিছু বললো না সে আদিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আদি তা দেখে হাসতে লাগে সে দুষ্টুমি করে বললো…
আদিঃ আদুমনির বুঝি আদর লাগবে। আমাকে বলেই হতো আমি আদর করে দিতাম।
আদির কথা শুনে আদিবা লজ্জা আদির বুকে মুখ গুজে নেয়। আদি আদিবার লজ্জা পাওয়া মুখ দেখে আদিবাকে নিজের সাথে গভীর ভাবে জড়িয়ে নিলো। ভালোবাসার কিছু সময় কাটালো তারা….
__________________________________
মির্জা বাড়িতে বিয়ের পর এই প্রথম বার অন্তু পা রাখে। অর্ণব আসতে বলে তাকে এখানে কিন্তু সে আসতে চায় না, তার ও বাড়িতেই ভালো লাগে সেই জন্যে। যখন বাড়ির জন্য মন খারাপ লাগে তখন অর্ণবকে বলে সে এবাড়িতে খবর দেয় আর এই বাড়ির সবাই চৌধুরী বাড়িতে চলে যায় তাই আর এই বাড়িতে আসতে হয় না। কিন্তু আজ এসেছে তার বোন আর প্রাপ্যর বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে। অন্তুর সাথে মি.চৌধুরী বাদে সবাই এসেছে। অন্তু আনভিকে কোলে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই সবাই তাকে আর আনভিকে ঘিরে ধরে এদিকে অর্ণব আর প্রাপ্য আছে তাদের সেই খেয়াল নেয়। অন্তু বিরক্ত হয়ে বললো…
অন্তুঃ কি করছো কি তোমার সবাই। এক এক করে কথা বলো আর তোমাদের জামাই আছে আমার সাথে সেটা কি ভুলা গেছো কি তোমরা।
অন্তুর কথা শুনে নিহিতা বললো… ও হো সত্যি তো ভুলে গেছিলাম আমি তোমাকে আর আনভিকে পেয়ে। কি করবো বল কতো দিন পরে দেখা হলো।
অন্তুঃ চাচী পরশু দেখা করে এলে তুমি আনভি আর আমার সাথে।
অন্তুর কথা শুনে তারা সবাই হাসতে লাগলো। আকাশ বললো… ঠিক বলেছো অন্তুমামনি তোমার চাচী সব ভুলে যায়। বয়স হয়েছে তো তাই।
আকাশের কথা শুনে নিহিতা রেগে যা কিন্তু কিছু বলে না পরে দেখে নেবে সে। নিহিতা অর্ণবের হাত থেকে মিষ্টি নিয়ে কিচেনে চলে যায় ২ জামাই এসেছে আপায়ন করতে হবে। আদি বললো… তোমরা দাড়িয়ে আছো কেন বসো। অর্ণব প্রাপ্য বসলে আদি, আয়ান, আকাশ তাদের সাথে কথা বলে আর অন্তু আনভিকে নিয়ে কিচেনে চলে যায় সেখানে অরনি, আয়রা, দিদুন, চাচী আছে। অন্তুকে কিচেনে দেখে আয়রা চেচিয়ে বলো…
আয়রাঃ অন্তু কিচেনে কেন আসছো আনভিকে নিয়ে। যাও বাইরে যাও এখানে গরম। তোমার আর আনভির গরম লাগবে।
অন্তুঃ ভাবি কিছু হবে না। তোমরা কি করছো?
অরনিঃ দিদিয়া ভাবি পিঠা বানাচ্ছে। শীত পরেছে না তাই।
অন্তুঃ পিঠা তাইলে তো রোদের আর ভাত পেটে যাবে না সে পিঠা খেয়ে পেট ভরাতে। কেননা তার পিঠা অনেক পছন্দ।
আয়রাঃ তাইতো সকাল থেকে কষ্ট করে পিঠা করছি। অরু তুই আনভিকে নিয়ে অয়নের কাছে যা দেখ সে মনে হয় ঘুম থেকে জেগে গেছে আর অয়নের জন্য দুধ নিয়ে যায় খাইয়ে দিবি।
অরনি তাই করে আনভিকে অন্তুর কোল থেকে নিয়ে ফিডার নিয়ে আয়ানের রুমে চলে যায়। এদিকে নিহিতা পিঠা আর চা নিয়ে ড্রইংরুমে চলে যায়। কিচেনে শুধু দিদুন আয়রা আর অন্তু আছে। দিদুন অন্তুকে দেখে বললো….
দিদুনঃ দিদিভাই তোমার শরীল কি খারাপ কেমন যেন লাগছে তোমাকে?
দিদুনের কথা শুনে আয়রা পিঠা বানানো বাদের অন্তুর দিকে তাকিযে দেখে সত্যি অন্তুকে অসুস্থ লাগছে। আয়রা বললো… অন্তু দিদুন তো ঠিক বলছে কি হয়েছে তোমার।
অন্তু একটা পিঠা মুখে দিয়ে খেতে খেতে বলো… যানি না কিছুদিন ধরে শরীলটা খরাপ করছে। কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। তাই এমন দেখাছে।
আয়রাঃ তা ভাইয়া ডক্টর দেখায় নি।
অন্তুঃ দেখাতে তো চায় কিন্তু আমি যায় না। ভালো লাগে না ঔষধ খেতে তাই।
অন্তুর বাচ্চামি কথা শুনে তার দুজনে হাসলো। সব কাজ শেষ করে তারা কিচেন থেকে বাড়ালে অন্তুর সামনে আজাদ মির্জা পরে যায়। অন্তু এতো দিন পরে সে তার আব্বুকে দেখে ভাবুক হয়ে যায়। সে তার কাছে গিয়ে বললো…. আ আব্বু
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৫৮ (মেন ভিলেন ধামাকা)
পিতৃ স্নেহে আবদ্ধ হয়ে আছে অন্তু আজ ২ মাস পর সে তার বাবাকে দেখেছে। আজাদ মির্জা অন্তুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো….
আজাদঃ আব্বু সাথে এতো অভিমান কেন ছোট আম্মাজান…
আজাদ মির্জা কথা শুনে অন্তু কান্না করে দেয়। আজ কতো বছর পর তার আব্বু তাকে আম্মাজান বলে ডাকলো, সে তো খুশিতেই কেঁদে ওঠে। এদিকে অর্ণব, আদি আর আয়ান কিংকত্র্তব্যবিমূঢ়, বিস্ময় নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তাদের কাছে আজাদ মির্জা স্নেহময় আবেগটা নিছক কোন জাল লাগছে আর সেই জালে অন্তু ধীরে ধীরে ফেসে যাচ্ছে। অর্ণবের যুগলজোরা কুঁচকে তাকায় আছে সেদিকে, সে আজাদ মির্জাকে বিশ্বাস নামক ‘বি’ ও করে না। সে নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারে, তাই অন্তুকে তার কাছে থেকে দূরে রাখতে হবে, না হলে মেয়েটা আবার একটা ধাক্কা খাবে আর সেই ধাক্কা সে সহ্য করতে পারবে কি না সে জানে না। অন্তু বললো…
অন্তুঃ না আব্বু অভিমান করিনি শুধু নিজেকে গুছিয়ে নিতে সময় লাগলো।
আজাদ মির্জাঃ তুমি তোমার জীবনে ভালো আছো তা দেখে আমার শান্তি লাগছে। এই ভাবে সুখে থেকো ছোট আম্মাজান। তো আমার দিদিভাই কই তাকে তো দেখছিনা।
অন্তু আজাদ মির্জাকে ছেড়ে চোখে মুছে বললো… আনভি অরনির কাছে আছে আমি এখনি নিয়ে আসি।
আজাদ মির্জাঃ না না আনতে হবে না আমি কাজ করে আসলাম ফ্রেশ হয়ে আসি তারপরে না হয় দাদু নাতনী মজা করবো কি বললো…
অন্তু মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। আজাদ মির্জা হেসে সিড়ি দিয়ে যেতে নিলে পিছুনে ঘুরে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে, সেই হাাসিতে ছিলো সে অনেক কিছু জানে আর সে কতটা ভয়ানক হতে পারে। আজাদ মির্জা তার রুমে চলে যায়। এদিকে আজাদ মির্জা হাসি দেখে অর্ণবের কিছুটা সন্দেহ হয় সে বুঝতে পারে সামনে কিছু খারাপ হতে চলেছে যা কেউ কল্পনাও করতে পারছে না। আজাদ মির্জা চলে যাবার দিকে তাকিয়ে থাকে অর্ণব হঠাৎ অন্তুর ডাকে তার হুঁশ হয় সে তাকিয়ে দেখে অন্তু হাসি মুখে কিছু বলছে কিন্তু সে তা শুনতে পারছে না তার মনে ভয় হচ্ছে সামনে কি হবে ভেবে।
অন্তুঃ কি হলো তোমার কখন থেকে ডাকছি আমি। কি এতো ভাবছিলে তুমি? থাকে তুমি দেখো আব্বু আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলেছে। আমি আজ অনেক খুশি।
অর্ণবঃ হুমম দেখলাম। অন্তু তুমি আনভিকে নিয়ে আসো তো আমি দেখবো।
অন্তুঃ কেন?
অর্ণবঃ অনেকখন দেখি না তাই। যাও প্লিজ..
অন্তু চলে যায় আনভিকে নিতে। এদিকে আদি অর্ণবরের কাঁধে হাত দিয়ে বললো…
আদিঃ অর্ণব আমার কিছু ভালো ঠেকছেনা। আব্বুর ব্যবহার সন্দেহজনক, সে কবে থেকে তার সন্তানদের প্রতি এতোটা যত্নশীল হলো।
অর্ণবঃ আমার ও ভালো লাগছে না। কিছুতো হচ্ছে আমাদের অগোচরে যা আমরা জানি না। আজাদ মির্জা কি সব জেনে গেছে, আমার তাকে দেখে এটাই মনে হলো তিনি অনেক কিছু জেনে গেছে।
আয়ানঃ আমি খবর নিচ্ছি। এমন কি ইনফরমেশন পেয়েছে। যাকে ভর করে তিনি এতোটা স্বাভাবিক লাগছে ওনাকে। যেখানে ওনাকে এখন টেনশনে থাকার কথা…
আয়ানের কথা শুনে অর্ণবে আর আদি তার দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচকে মাথা নাড়ায়। আয়ান আবার বললো…
আয়ানঃ অর্ণব তুমি অন্তুকে চোখে চোখে রাখো কিছু দিনের জন্য। আমার মন বলছে বড় কিছু ঘটতে চলেছে যা ঘটলে সবার জীবন তচনচ হয়ে যাবে।
আদিঃ অর্ণব আয়ান ঠিক বলেছে তুমি অন্তুকে দেখে রাখো। যে মানুষ একবার অন্তুর সাথে যে অন্যায় করেছে সে দ্বিতীয় বার করতে পারে না এমন কিন্তু না। তাই আমার মনে হয় সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে যতদিন না অরনির আর প্রাপ্যর বিয়ে না হচ্ছে।
প্রাপ্যঃ অর্ণব ভাইয়া আদি ভাইয়া ঠিক বলেছে ভাবিকে দেখে রাখতে হবে।
অর্ণবঃ হ্যাঁ আমি একমুহূর্তে জন্য অন্তুকে আমার থেকে দূরে রাখবো না। সামনে অনেক বড় ঝড় আসছে চলছে আর সেটা হলে আমার অন্তুর অনেক ক্ষতি হতে পারে। আমি অন্তুকে কিছু হতে দেবো না কিছু না।
আয়ানঃ অর্ণব রিলেক্স হাইপার হলে হবে না। আমাদেরকে বুঝে শুনে পদক্ষেপ নিতে হবে যদি একটা ভুল পদক্ষেপ নিই তাইলে সবার জীবন সংসয় হতে পারে। তাই টেনশন না নিয়ে শান্তো ভাবে ভাবো কি করা যায় সামনে।
আয়ানের কথা শুনে অর্ণব শান্তো হলো কিন্তু তার মনের মাঝে এখন ভয় জেঁকে বসেছে, না জানি কি হতে চলেছে তাদের সাথে। অন্তু আনভিকে নিয়ে আসলে অর্ণব তাকে নিয়ে আদর করতে লাগে তা দেখে অন্তু কিছু বুঝলো না যে হঠাৎ অর্ণবের কি হলো যে এতো টেনশনে আছে…..
____________________________________
এখন শীত কাল তাই শীতের বিকেলটা অনেক সুন্দর লাগে। একটু আগে বিকেল নেমে এসেছে পৃথিবীর বুকে, আকাশে সূর্য হেলে গেছে। বিকেলের পরিবেশটা অনেকটা মনরম পরিবেশ , বিকেলে মির্জা বাড়িতে ছাদে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছে অর্ণব, প্রাপ্য, আদি আর আয়ান। অর্ণব আর প্রাপ্যকে জামাই আদর করেছে দিদুন আজ নিজে দাড়িয়ে থেকে দুপুরের হরেক রকমের খাবার তাদের খাইয়েছে। অর্ণব না করতে পারেনি কারন দিদুনের যে হুকুম তাইতো সে মাথা পেতে নিয়েছে। দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই রেস্ট নেয়, আজ প্রাপ্য বাড়ি চলে যাবে কিন্তু অর্ণব আর অন্তু থাকবে মির্জা বাড়িতে। অর্ণব বিকেলে ছেলেদলকে নিয়ে ছাদে এসে দাড়িয়ে কথা বলছিলো তাদের কথার বিষয় হলো আজাদ মির্জা কি করতে চাচ্ছে সামনে। আয়রা তাদেরকে কফি দিয়ে গিয়েছে, নিরাবতা ভেঙে অর্ণব বললো….
অর্ণবঃ আমার মাথায় কিছু আসছে না এখনো তোমরা কি করবে বললো।
আদি কফিতে চুমুক দিয়ে বললো…. আমার মতে অন্তুকে সব বলে দেওয়া ভালো। পরে জানতে পারলে কি করবে আমরা তো জানো না।
আয়ান চিন্তিতো গলায় বললো…. কিন্তু বোনু তো সত্যিটা নাও নিতে পারে। তার শরীল যদি আবার খারপ করে তাইলে।
প্রাপ্যঃ অর্ণব ভাইয়া ভাবি কি করছে?
অর্ণবঃ অন্তু আনভিকে নিয়ে ঘুমাছে। আমি ভাবছি অন্তুকে নিয়ে তার শরীল খারাপ এখন এতো বড় সত্যি সে নিতে পারবে না। যদি কিছু হয় তাইলে কি হবে। আচ্ছা আজাদ মির্জা কোথায় এখন?
আয়ানঃ দুপুরে খেয়ে বের হয়েছে। কোথাও মিটিং আছে। আর তুমি অন্তুকে ডক্টর দেখাছো না কেন? আমার বোনুর কিছু হলে তোমাকে ছাড়বো না কিন্তু?
অর্ণবঃ ছাড়বো না বলেই হলো, তোমার বোনু ধোঁয়া তুলসি পাতা না সে ডক্টর দেখাতে যাবে না। আমি জোর করলে তার নাটক শুরু হয়, তুমি আমাকে আর ভালোবাসো না এখন, আমি থাকবো না তোমার সাথে এমন নানান বাহানা করে আর আমি গলে যায়…
অর্ণব ব্যঙ্গ করে বললো তার কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। আদি বললো… আয়ান তোর না খোঁজ নেওয়ার কথা ছিলো সেটার কি হলো?
আয়ানঃ আমি খোঁজ নিয়েছি তারাও বুঝছি না বড় আব্বু কি এমন সোনার হরিণ পেলো যে তার মধ্যে এতো পরিবর্তন হয়েছে।
প্রাপ্যঃ আমার মনে হচ্ছে তিনি আমাদরে সত্যিটা ধরে ফেলেছে। তার সাথে আমরা যে এতো বড় গেম খেলছি তিনি হয়তো কোন ভাবে জেনে গেছে।
প্রাপ্য কথায় তারা তিনজনে চিন্তা পরে যায়। হ্যাঁ তার সবাই মিলে অনেক বড় একটা গেম খেলেছে তাও আজ নাই সেই ৩ বছর আগে। একটু একটু করে তারা আজাদ মির্জা পাপের সাম্রাজ্য ধ্বংস করেছে, হে তারা এটা করেছে কারন আজাদ মির্জা জন্য সবার জীবন নষ্ট হয়েছে। হে এই আজাদ মির্জা হলো সব কাজে নাটেরগুরু, আজাদ মির্জা অন্তু, অর্ণবের জীবনটা এভাবে ধ্বংস করেছে যে সবাই আয়ানে দোষারপ করেছে আর তিনি ধোয়া তুলসীপাতা হয়ে আরালে লুকিয়ে তার কাজ করে গেছে। আয়ানের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে দিয়ে এই জঘন্য পাপ করাতে চেয়েছিলো কিন্তু সে নিজের মাধ্যমে পাপটা করতে চায়নি তাইতো সে অর্ণবকে সব সত্যি এবং তার সাহায্য করেছে আজাদ মির্জা কাছে থেকে প্রতিশোধ নিতে। অর্ণব তাদের থেকে কিছুটা দূরে সরে ছাদের কনারে এসে দাড়িয়ে ভাবছে সেদিনের কথা যখন আয়ান তাকে গুলি মারার জন্য রিভলবারটা তাক করে তার দিকে কিন্তু সেই রিভালভার থেকে তাকে গুলি মারেনি আয়ান, সে নিজের চোখে দেখেছে……
____________________________________
অতীতে…..
এসব শুরু হয় অন্তু আর অর্ণব যেদিন রাস্তায় দাড়িয়ে ফুচাকা দোকানে কথা বলছিলো তখন তাদেরকে এক সাথে দেখে ফেলে আজাদ মির্জা। তিনি মানিকে দিয়ে অর্ণবের সব খোঁজ খবর নিয়ে দেখে অর্ণবের কোনো পরিচয় নেয় সে অনাথ তাই তিনি কৌশলে অন্তুকে কথার মাধ্যমে ফাসিয়ে আশিকের সাথে বিয়ে ঠিক করে কিন্তু অন্তু তারপরেও অর্ণবের সাথে সম্পর্কে থাকে তার দেখে তিনি রেগে যায়। তার কাছে নিজের সম্মান, ক্ষমতা, প্রতিপতি, দম্ভ এসব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো যে তার মেয়ের খুশি দেখলো না তাই তো নিজের রাজনীতিক লাভের জন্য আর তার কালোব্যবসার লিডার হতে তিনি আশিকের মতো একটা জানোয়ারের সাথে অন্তুর বিয়ে দিতে রাজী হয়। তিনি যখন ভবছেন কি করে অন্তুকে আটকানো যায়, কি করে তার ক্ষমতা লাভ করা যায় তখন আয়ানের কিছু সত্যি তিনি যেনে যান তাই তো তাকে দিয়ে অন্তুকে আটকাতে চাই, আর আয়ান প্রথমে না করলেও কিন্তু নিজের দূর্বলতার আর আজাদ মির্জার অন্তুর প্রতি গোপন ভাবে ক্ষতি করবে সেই ভয়ে সে হ্যাঁ করে কিন্তু সে অর্ণবকে ক্ষতি করে না, সে যথেষ্ট সাবধানে লুকিয়ে অন্তুকে সাহায্য করেছে। অর্ণবকে সে লোক দিয়ে বুঝাতে পাঠিয়ে ছিলো যাতে সে তাদের অবস্থা বুঝতে পারে কিন্তু সে কিছু করার আগে আজাদ মির্জা লোকেরা অর্ণবকে মারে, আয়ান তখন কিছু করতে পারে না। যখন অন্তু অর্ণবকে নিয়ে পালিয়ে যায় তখন সে ওখানে যেতে চায় না কিন্তু আজাদ মির্জা লোকেরা তাদের একবার নিজের হাতে পেলে মেরে ফেলতো তাই সে গিয়ে তাদের কে ধরে ওই খানে নিয়ে যায়। আর অর্ণবকে আঘাত করে শুধু মাত্র আজাদ মির্জা লোকগুলোকে দেখানোর জন্য, যখন আজাদ মির্জা লোকগুলো চলে যায় তখন আয়ানের লোক অর্ণবকে বোঝানো চেষ্টা করে কিন্তু তখন অর্ণব বোঝার ক্ষমতার ছিলো না। কিন্তু সে নিজের চোখে দেখেছে আয়ান তাকে গুলি করেনি করেছে আয়ানের পেছনে থাকে একটি লোক, আয়ান যখন রিভালবার ধরে তার দিকে তখন পেছনের থাকা লোক ও তার দিকে রিভালবার তাক করে, আয়ানকে শুলি করতে না দেখে সেই লোক অর্ণবকে গুলি মারে সেটা স্পর্শ অর্ণব দেখেছে। আর সে যখন দিদুনের কাছ থেকে জানতে পারে আয়ান কেন এসব করেছে তখন সে বুঝতে পারে তাদের অগোচরে আজাদ মির্জা অনেক বড় গেম খেলেছে। আর আনভিকে হসপিটালে আজাদ মির্জাই মারতে চেয়েছিলো সেটা দিদুন জেনে যায় তাই তো তিনি অর্ণবকে আনভিকে নিয়ে চলে যেতে বাধ্য করে তখন….
__________________________________
হঠাৎ কাঁধে হাত পরতেই সে ভবনা থেকে বেরিয়ে আসে অর্ণব, পিছু ঘুরে দেখে আয়ান অপরাধী নয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে সে পিছে ঘুরে দাড়ালে আয়ান বলে…
আয়ানঃ সরি অর্ণব আমার জন্য তোমার আর অন্তুর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো। আমি সত্যি বুঝতে পারিনি বড় আব্বু এতোটা নিচু নামবে, সে কিনা তার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিলো…
অর্ণবঃ এমন করে বলছো কেন তুমি তো ইচ্ছে করে করোনি তোমার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে ছিলো আজাদ মির্জা এসব করার জন্য। আর এখনো তার ক্ষমতার লোভ কমেনি তাইতো অন্তুকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো আরো একটা জানোয়ারের সাথে কিন্তু ভাগ্য ভালো আদি সব বুঝতে পারে তাই তো অন্তুকে আমার হাতে তুলে দেয়।
আয়ানঃ যতো যায়ই হোক না কেন? আমি আমার বোনুকে কষ্ট দিয়েছি। অর্ণব তুমি বিশ্বাস করো আমি জানতাম না অন্তু প্রেগন্যান্ট ছিলো তা না হলে আমি এসব করতাম না। আমি গিয়েছিলাম তোমাকে খুজতে সেখানে কিন্তু তার আগে প্রাপ্য তোমাকে নিয়ে যায় আমি সব খোঁজ রেখেছিলাম তোমাট কিন্তু দেখা করতে পারিনি। কিন্তু আমি আমার সব সত্যি দিদুনকে বলি আর অন্তুকে দেখে রাখতে বলি কিন্তু তোমার সত্যি তাকে বলি না। কিন্তু যখন দিদুন আমাকে আশিকের নোংরামি কথা বলে আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি তাই বিদেশ থেকে তখনি চলে এসে তাকি উচিৎ শিক্ষা দিয়েছি, মেরে হসপিটালের পাঠিয়ে ছিলাম জানোয়ারটি কে। তারপর তোমার সত্যি জানি তুমি অরনিকে তোমার সত্যি বলেছো তাই তো দিদুনকে তোমার কাছে পাঠিয়ে ছিলাম আমার সত্যি তোমাকে বলতে আর নতুন করে আজাদ মির্জা বিরুদ্ধে খেলা শুরু করি। কিন্তু এই সবের মধ্যে আনভি, অন্তু, তোমার জীবন নষ্ট হলো সরি…
বলে কান্না করতে লাগলো। অর্ণব তাকে জড়িয়ে ধরে বললো… প্লিজ এমনটা বলো না, তোমার জায়গা আমি হলে আমি ও তাই করতাম। নিজের ভালোবাসাকে সবাই নিজের প্রানের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। যদি তার ভালোবাসাকে আস্তে আস্তে তার চোখের সামনে মৃত্যু যন্ত্রণায় দেখে তখন সে দুনিয়ার সব পাপ করতে পারে তাকে বাঁচাতে। তাই নিজেকে ছোট্ট করো না আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে। কি হবে আর যা হয়েছে আমাদের ভাগ্যে লেখা ছিলো সেটা কেউ খনডাতে পারতো না। আর তুমি এই ভুলে শাস্তি পেয়েছো বিশাল বড় শাস্তি পেয়েছো তাই এসব নিয়ে আর কথা বলো না।
আয়ানঃ হ্যাঁ শাস্তি আমি পেয়েছি ঠিকি কিন্তু এখনো অপরাধ বোধ কাজ করে আমার জন্য আনভি তার মাকে পায়নি তুমি তোমার অন্তকে পাওনি। সরি
অর্ণব কি বলবে বুঝতে পারছে না আয়ান তাদের সাথে যা করেছে নিছক ভুল কিন্তু সেও তো পরিস্থিতি শিকার। কিন্তু ছেলেটা তার জীবনের অনেক কিছু হারিয়েছে সে দেখেছে তাকে কষ্ট পেতে তাইলে সে কি করে তাকে শাস্তি দেবে আর কেনই বা দেবে আয়ান তো তার পাপের ফল পেয়েছে তার পাপের ফল আয়রাও পেয়েছে তাইলে সে কিভাবে আবার শাস্তি দেবে। তাদের কথার মাঝে আয়রা আসে অয়নকে নিয়ে, অয়ন কান্না করছে ভীষণ আয়রা চিন্তা গলায় বললো….
আয়রাঃ আয়ান অয়ন কান্না করছে কিছুতেই থামছে না তুমি একটু দেখবে।
আয়ান চোখ মুছে তাড়াতাড়ি অয়নকে কোলে নিলো, অয়ন সাথে সাথে চুপ হয়ে যায়। তা দেখে সবাই চমকে যায়, যাবেই না কেন অয়ন আয়রার থেকে আয়ানের কাছে বেশি থাকে, আয়ান অয়নের সব খেয়াল রাখে। আয়রা মুখ ফুলিয়ে বললো…
আয়রাঃ আমি জন্ম দিলাম কতো কষ্ট সহ্য করে আর এই মহারাজ বাবা পেলে মাকে ভুলে যায়।
আয়রা কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। আয়ান বললো… এই আমার আর আমার ছেলের দিকে এভাবে নজর দেবে না। আমার অয়ন বাবু তার আব্বুকে বেশি ভালোবাসে বুঝলে।
আয়রা হাসে হে অয়ন তাকে ছেড়ে আয়ানকে বেশি ভালোবাসে। অর্ণব এই ছোট পরিবারকে দেখে খুশি হয় এই পরিবারটা বাচাতে আয়ান অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। আয়রা অয়নকে নিয়ে চলে যায়, তারা সবাই মিলে প্ল্যান করে কি কি করতে হবে আর কখন কখন, সামনে অনেক কাজ আছে সাবধানে সব করতে হবে না হলে সব ভেসতে…
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৫৯ (আয়ানের সত্যি)
আয়ান আমার কথাটা শোননা প্লিজ। ঘুমাছো কি তুমি এই আয়ান কথাটা শোনা…. বলে আয়রা আয়ানকে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করে। আয়ান আয়রার হাত ধরে তার বুকের মাঝে নিয়ে ঘুম জোরানো কন্ঠে বললো…
আয়ানঃ আয়রাপরী ঘুমাতে দাও প্লিজ। সারাদিন কাজ করে এসে ঘুম পাচ্ছে, একটু ঘুমিয়ে বাড়িতে যাবো আবার। তাই ডিসটার্ব করবে না, তুমি ও ঘুমাও।
আয়রা নিজেকে আয়ানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো… হ্যাঁ জানি তো তোমার সারাদিনের কতো কাজ, ভার্সিটিতে রাজনীতি করে বেরাবে আর সন্ধ্যা হলে আমার কাছে এসে আদর করে, আবার রাতে মির্জা বাড়িতে চলে যাও। সারাদিন এইসবই তো করো নতুন কি করো তুমি।
আয়ানঃ কাছে আসো নতুন কিছু করছি কাছে আসো..
আয়ানের কথা শুনে আয়রা পিছিয়ে গিয়ে বসে বললো…. আয়ান প্লিজ আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই সিরিয়াসলি। মজা করার মুডে আমি নাই তাই আমার কথা শোন প্লিজ।
আয়ান চোখ বন্ধ করে বললো… বলো শুনছি।
আয়রা শাড়ির আঁচল হাতের আঙ্গুলে পেচিয়ে পেচিয়ে বললো…. আ আয়ান তুমি বাবা হতে চলেছো।
বলে আয়রা চোখ বন্ধ করে নেয়। এদিকে আয়রার কথা শুনে আয়ানের চোখের ঘুম পালিয়ে যায় সে ধপ করে চোখ খুলে আয়রার দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে। তার কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না যে, সে একটু আগে যা শুনলো তা সত্যি কি না। আয়ান বললো…
আয়ানঃ আয়রা এখনি যা বলে তা কি সত্যি, বলো সত্যি না-কি । আমি বাবা হবো।
আয়রা মাথা নাড়ায় তা দেখে আয়ানের চোখে পানি চলে আসে সে আয়রাকে তার কাছে বসিয়ে বলো… তুমি বুঝতে পারছো না তুমি কি উপহার দিলে আমাকে। আমি অনেক খুশি অনেক, তুমি কি চাও বলো আমি তাই দেবো।
আয়রাঃ আয়ান আমি তোমার সাথে তোমার বাড়িতে থাকতে চায় তা ও তোমার স্ত্রী পরিচয়ে। এভাবে এখানে থাকতে ইচ্ছা করে না, জানি আমরা স্বামী স্ত্রী তাও অনেকে অনেক কথা বলে। প্লিজ
আয়ানঃ আমি বাড়িতে আমাদের কথা বলবো তারপর তোমাকে নিয়ে যাবো।
আয়রা আয়ানকে জড়িয়ে ধরে থাকে তার আর কিছু চায় না আয়ানের কাছে থেকে সে অনেক কিছু পেয়েছে তার কাছে থেকে। আয়ান আয়রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবলো সেদিন দিদুনের জন্মদিনের দিন আয়রা তাকে ফোন করে বলে তার মামি তাকে বিয়ে দেবার জন্য অনেক মারছে সে যেন তাকে এসে নিয়ে যায়। আয়ান তা শুনে তাকে ওখান থেকে নিয়ে এসে তার গুলশানের বাসায় রাখে। এর পরে থেকে আয়রা এখানেই থাকে, আয়ান ও এখানে এসে থাকে আবার মির্জা বাড়িতে থাকে এভাবেই চলতে লাগলো কিছু মাস। আর আজ আয়রা প্রেগন্যান্ট তাই সেটা আয়ানকে বললো…
_____________________________________
আস্তে আস্তে দিন গড়াতে লাগলো সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হতে লাগলো। আয়রা এখন ৫মাসের প্রেগন্যান্ট, আয়ান তাকে দেখা শোনার জন্য একজন মহিলাকে রেখেছে নাম জোছনা। এই কয়েক মাসে আয়রার মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে হঠাৎ হঠাৎ তার প্রচুর মাথাব্যথা হয়, বমি হয়, মাঝে মাঝে খিচুনি হয় তাও অল্প এসব নিয়ে আয়ান চিন্তা তাই ভালো ডক্টর দেখাতে চায় কিন্তু তার সামনে ভার্সিটির ইলেকশন তাই সময় পায় না। হঠাৎ আয়ানের ফোনে ফোন আসে সে ফোন ধরলে জোছনা অস্থির হয়ে বললো…
জোছনাঃ আয়ান বাবা আয়রা মা মাথাব্যথা ছটফট করছে কিছুতেই মাথাব্যথা ঠিক হচ্ছে না। তুমি তারাতাড়ি বাড়িতে আসো আমার ভয় করছে।
জোছনার কথা শুনে আয়ান নিস্তব্ধ হয়ে যায় তার মাথা কাজ করছে না। সে তারাতাড়ি বাড়ি গিয়ে আয়রাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যায়। ডক্টর তাকে দেখে অনেক প্রকার টেস্ট দেয় আয়ান সব করে ডক্টরকে দেখাতে গেলে ডক্টর যায় বলো তারা সমগ্র পৃথিবীর যেন ঘুরে গেলো। আয়ান কাপা কাপ গলায় বললো….
আয়ানঃ ব্রেন টি টিউমার মানে আ আয়রা তো ঠিক ছিলো। হঠাৎ ব্রেন টিউমার কেন হবে।
ডক্টরঃ মিস্টার আয়ান আপনি আগে শান্তো হয়ে আমার কথাশুলো শুনুন তাইলে বুঝতে পারবেন। টিউমার হচ্ছে শরীরের যেকোনো জায়গায় বা অঙ্গে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। এই টিউমার মস্তিষ্কের ভেতরে হলে সেটাকে আমরা ব্রেন টিউমার বলি। ব্রেন টিউমার দুই রকমের হতে পারে। বিনাইন বা শিষ্ট টিউমার ও ম্যালিগন্যান্ট বা দুষ্টু টিউমার। আপনার স্ত্রীর বিনাইন বা শিষ্ট টিউমার হয়েছে। বেনাইন টিউমার এমন এক গুচ্ছ কোষের সমষ্টি বা টিউমার যা প্রতিবেশী কলাকে আক্রমণ করতে বা মেটাস্ট্যাসাইজ করতে পারে না। অবশ্য্য এ ধরনের টিউমার কখনো কখনো খুব বড়ো আকৃতি ধারণ করতে পারে। সম্পূর্ণ অপসারণের পর এ ধরনের টিউমার সাধারণত আমার ফিরে আসে না। বেনাইন টিউমারের বৃদ্ধি খুবই ধীরে ধীরে হয়ে থাকে, অনেকসময় হয়না। বেনাইন টিউমারের ক্ষেত্রে টিউমারের আশেপাশের গ্রন্থির সাথে এই টিউমারের কোন সম্পর্ক থাকে না। শরীরের অন্যান্য অংশের বেনাইন টিউমারের চেয়ে মস্তিষ্কের বেনাইন টিউমার জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।[১] ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের চেয়ে বেনাইন টিউমার খুবই ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং টিউমারের কোষের বিভাজন বৈশিষ্ট্যগুলোও স্বাভাবিক হয়।[২][৩][৪] এটি সাধারণত বাহ্যিক পৃষ্ঠ (যোজক কলার আবরণী) দ্বারা ঘেরা থাকে বা এপিথেলিয়ামের সাথে অবস্থান করে।[৫] বেনাইন টিউমারের সাধারণ উদাহরণের মধ্যে রয়েছে আঁচিল ও জরায়ুর ফাইব্রয়েড।যদিও বেনাইন টিউমার মেটাস্ট্যাসাইজড হয় না বা আশেপাশের কলায় কোনো সংক্রমণ ঘটায় না, তার পরেও এ ধরনের টিউমার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের টিউমারের বৃদ্ধিতে শরীরের ওপর ভরের প্রভাব পড়তে পারে যা আশেপাশের কলার ওপর চাপ প্রয়োগ করা করা ও স্নায়ুকোষের ক্ষতি করা, শরীরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহে বাধা প্রধান করা, টিস্যুর মৃত্যুসহ অঙ্গেরও ক্ষতি করতে পারে। বেনাইন টিউমারের এ ধরনের নেতিবাচক প্রভাব আরও মারাত্মকভাবে দেখা দিতে পারে যদি টিউমার একটি করোটিই, ফুসফুসের নালী, সাইনাস বা হাড়ের ভেতরের মতো বদ্ধ জায়গায় সৃষ্টি হয়। অন্তঃক্ষরা কলার টিউমারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু হরমোন প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত মাত্রার তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে যখন কোষগুলো টিউমারের সাথে পার্থক্যসৃষ্টিকারী। এধরনের জটিলতার উদাহরণ হিসেবে থাইরয়েড এডিনোমাস ও এড্রিনোকর্টিকাল এডিনোমাসের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।[২]।যদিও বেশিরভাগ বেনাইন টিউমার জীবনের জন্য হুমকির কারণ নয়, কিন্তু কিছু ধরনের টিউমারের টিউমার প্রগ্রেশন প্রক্রিয়ায় ক্যান্সারমূলক (ম্যালিগন্যান্ট) হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে।[৬] এই কারণে এবং সম্ভাব্য নেতিবাচক স্বাস্থ্যঝুঁকির বিবেচনায় কিছু ধরনের বেনাইন টিউমার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়।[৭]ব্রেন টিউমারের ঝুঁকিতে কারা আছেন? এ রকম করে কাউকে নির্দিষ্ট করা যায় না। যেকোন মানুষ ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হতে পারেন। ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা অত্যান্ত জটিল। চিকিৎসা নির্ভর করে টিউমারের ধরন, তীব্রতা, আকার ও অবস্থানের ওপর। সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি এর মূল চিকিৎসা। লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। যেমন: খিঁচুনি বন্ধ করার ওষুধ, বমির ওষুধ ইত্যাদি। ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
(গতবার মেডিকেল সম্পর্কে না জানায় অনেক অকেন কথা বলেছে। তাই গুগলে সার্চ দিয়ে এতো কিছু জেনে গুছিয়ে লেখেছি। জয় বাবা গুগলের জয়)
ডক্টরঃ আপনার স্ত্রী এখন প্রেগন্যান্ট তাই এটা অনেক রিস্ক হয়ে যাবে আপনার স্ত্রী জন্য। আমি সাজেস্ট করবো যতো দুরুতো সম্ভব আপনার স্ত্রী অপারেশনটা করিয়ে নি। না হলে আপনার স্ত্রীকে বাচাতে পারবেনা।
আয়ান ডক্টর সব কথা শুমে বিমূর্ত বিহ্বলিত ধারণ করে। তার কাছে এসব নিছক স্বপ্ন মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে ঘুম থেকে জেগে উঠলে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু না এটা ঠিক হবার জিনিস না। আয়ান বললো…
আয়ানঃ আপনি ওর চিকিৎসা শুরু করুন আমি টাকার ব্যবস্থা করছি।
ডক্টরঃ মিস্টার আয়ান আপনাকে আরেকটি কথা বলছি। চিকিৎসায় অনেক হায় পাওয়ারের ঔষধ আপনার স্ত্রীকে দেওয়া হবে তার জন্য আপনার সন্তান নাও বাঁচতে পারে। আপনাকে আগে থেকে বলে রাখছি।
আয়ান সেটা শুনে আরো ভেঙে পরে এসব যদি আয়রা জানে তাইলে তারকে কি করে সামলাবে। সে তো মরে যাবে তার সন্তান না থাকলে। আয়ান উঠে আয়রার কেবিনে গিয়ে দেখে আয়রা শুয়ে আছে, সে তার পাশে গিয়ে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আয়রা চোখ খুলে ছলছল চোখে বললো…
আয়রাঃ আয়ান আমার অনেক বড় অসুখ হয়েছে তাই না। আমি জানি তুমি বলবে না কিন্তু আমি বুঝতে পারছি আমার শরীরের অনেক বড় কিছু হয়েছে। বলো না আয়ান কি হয়েছে আমি সব সহ্য করতে পারবো সত্যি বলো…
আয়ান আয়রা দিকে তাকিয়ে তাকে আস্তে আস্তে সব বলতে লাগলো। আয়রা সব শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পরে আয়রান তাকে জড়িয়ে ধরে বলে…
আয়ানঃ তোমাদের কিছু হতে দেবো না আমি কিছু না। আমার আয়রা আমার কাছে থাকবে সে কোথাও যাবে না আমাকে ছেড়ে। তোমাকে আমার সাথে বেধে রাখতে আমি সব কিছু করতে রাজী সব কিন্তু তোমাকে হারাতে রাজী না।
এরপর আয়রার চিকিৎসা শুরু হয়ে আয়ান নিজের টাকা সব দিয়ে তার চিকিৎসা করালেও সেটা কম ছিলো তাই সে তার বাবার কাছে থেকে টাকা নিতে লাগলো। যেদিন আয়ান টাকা নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি তখন অন্তুর সাথে ধাক্কা লাগে। কিন্তু সে কিছু না বলে চলে যায়, এরপর আশিকের সাথে অন্তুর বিয়ে সে জানতো না তার বড় আব্বু কিসের জন্য করিয়েছে। আয়ার কাছে টাকা না থাকায় সে টাকা জোগাড় করতে লাগলো তখন আজাদ মির্জা তার কাছে এসে বলে….
আজাদ মির্জাঃ আয়ান তোমার স্ত্রীর চিকিৎসা সমস্ত খরচ আমি দেবো কিন্তু একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে তোমার।
আজাদ মির্জা কথায় আয়ান চমকে যা সে বুঝতে পারছে না আজাদ মির্জা কি ভাবে এতো সব জানলো, সে তো কিছু বলেনি কাওকে। আর তাকে দিয়ে এমন কি করতে চায় আজাদ মির্জা যে আয়রার সমস্ত চিকিৎসার খরচ দেবে। আয়ান বললো…
আয়ানঃ কি করতে হবে?
আজাদ মির্জাঃ বেশি কিছু না অন্তুকে অর্ণবের থেকে দূরে রাখবে।
আয়ান কিছু বুঝতে পারলো না কি বলছে আজাদ মির্জা। আজাদ বুঝতে পারে আয়ান অন্তুর ভালোবাসা সম্পর্কে কিছু জানে না তাই তিনি সব বলো, সেটা শুনে আয়ান স্তব্ধ হয়ে যায়। তার ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে বাবা হয়ে মেয়েকে এতোটা কষ্ট দিতে চাচ্ছে, অন্তুর জীবনকে নষ্ট করে দিতে চাচ্ছে, এটা কেমন বাবা। আয়ান ঘেন্না ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে…
আয়ানঃ আমি কিছুতেই এটা করবো না কিছুতেই না। আমি আয়রাকে বাঁচাতে আমার বোনুর জীবন নষ্ট করবো না আর কাউকে করতেও দেবো না।
আজাদ মির্জা হেঁসে বললো…. আগে নিজেরটা ভাবো তারপর অন্যকে নিয়ে ভেবো। সর্বপ্রথম আয়রাকে আর তার সন্তানকে বাচাও তারপর না হয় তোমার বোনকে বাঁচাও। তুমি যদি এই কাজটা না করো আমি অন্য কাওকে দিয়ে করিয়ে নেব, তখন তোমার বোন এখনকার থেকে বেশি কষ্ট পাবে বুঝলে।
আয়ান আজাদ মির্জা কথার মানে খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছে, সে যদি এই কাজটা না করে তাইলে তিনি অন্য কাউকে দিয়ে করাবে ঠিকি কিন্তু অন্তুকে ও বাঁচতে দেবে না, সে জানি এই মানুষটা কতোটা ভয়ানক হতে পারে সে নিজের চোখে দেখেছে ছোট্টবেলায়। না অন্তুকে কিছু হতে দেবে না সে এটা করবে কিন্তু আয়রারকে বাঁচাতে না অন্তুকে বাঁচাতে। তাকে ভালো ভাবে বুঝে শুনে পদক্ষেপ নিতে হবে খুব সাবধানে সবটা করতে হবে। আয়ান তার কথায় রাজী হয়ে যায় তা শুনে আজাদ মির্জা শয়তানি হাসি দিয়ে তাকে বুঝায় তাকে কি কি করতে হবে। সেদিন নাহিদের সাথে যা আয়ান করে সেটা আজাদ মির্জা কথায় কিন্তু সে পরে অর্ণবের খোঁজ খবর নিয়ে তাকে বুঝাতে চায় কিন্তু তার এক্সাম আয়রা সব নিয়ে ব্যত থাকায় কিছু হচ্ছিল না। তার মধ্যে সে অর্ণবকে বুঝাতে গিয়ে দেখে অর্ণবকে আজাদ মির্জা লোকেরা মারছে সে তাদেরকে আরাল থেকে অর্ণবকে তার লোক দিয়ে হসপিটালে নিয়ে যায়। তারপর অন্তুকে অর্ণবের সাথে পালাতে শুনে সে বোঝে আজাদ মির্জা দু’জনকে মেরে ফেলবে তাই সে গিয়ে তাদেরকে নিয়ে আসে কিন্তু তার পিছু আজাদ মির্জা লোক থাকায় সে অর্ণবকে মারতে বাধ্য হয় কিন্তু তার লোক অর্ণবকে বুঝায় কিন্তু সে বঝে না আর তখনি সেই ঘটনা ঘটে। কিন্তু সে অন্তুকে বাড়িতে থুয়ে সেখানে গিয়ে অর্ণবের খোজ নিয়ে সব যানে তাই কিছু করে না। এর মধ্যে অন্তু প্রেগন্যান্টের কথা সে জানে সে নিজেকে তার জন্য অপরাধী ভাবে কোন সে আগে সবাইকে সবটা বলো না কেন সে সাবধানতা অবলম্বন করলো না। সে দিদুনকে আয়রার তার অন্তু অর্ণবের সব বলো আর আজাদ মির্জা কতটা খারাপ সেটাও বলেছে। দিদুন নিজের ছেলের কু-কর্মের সব কথা শুনে ভেঙ্গে পেরে কিন্তু সে অন্তুকে আজাদ মির্জা হাত থেকে বাঁচাতে শক্ত হয়। মির্জা বাড়ির সবাই আয়ানকে দোষারোপ করে অন্তুর অবস্থার জন্য আয়ান সব মাথা পেতে নিয়ে নেয়, এদিকে আজাদ মির্জা তার পাপের সম্রাজো নিয়ে পরে থাকে, তার কোনো চিন্তায় ছিলো না তার মেয়ের জন্য সে তার দায় আয়ানের ওপর চাপিয়ে সুখে ছিলো। এর মাঝে আয়রা হঠাৎ সিঁড়ি থেকে পরে যায় যার ফেলে তার মাথায় আর পেটে আঘাত লাগে এতে আয়রার বেবি মিসকেরেজ হয়ে যায়। আয়রা তার সন্তান না থাকার শোক নিতে পারে না এতে তার ব্রেনের ক্ষতি হতে থাকে, আয়ান তার সন্তান মারা যাওয়া আর আয়রার অবস্থার অবনতি দেখে একেবারে খারাপ অবস্থা হয়। সে কিছুতেই নিজেকে শান্তো রাখতে পারে না। ডক্টর বলে আয়রার অপারেশন করতে হবে তা দেশে সম্ভব না তাই তাকে নিয়ে বিদেশে চলে যায়। অনেক কষ্টে আয়রাকে সে মৃত্যু মুখথেকে নিয়ে আসে, তারপর তাকে নিয়ে দেশে এসে একেবারে মির্জা বাড়িতে নিয়ে আসে তাকে বউ হিসাবে…
__________________________________
হঠাৎ কাঁধে কারোর হাত পরতে আয়ান তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে, হাতের মালিকে দেখতে পিছু ঘুরতে দেখে আয়রা দাড়িয়ে আছে। আয়ানের শুকনো মুখ দেখে আয়রার বুকে মোচড় দিলো, সে জানে আয়ান কেন এভাবে দাড়িয়ে আছে। সে বললো…
আয়রাঃ আয়ান আবার পুরনো কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছো। তোমাকে না বলছি যা কিছু হয়েছে তাতে তোমার দোষ ছিলো না যা ছিলো আমার দোষ ছিলো তাই প্লিজ এভাবে থেকো না।
আয়ানঃ কি করবো বলো মন মানছে না। আমি তো ওসব করতে চাইনি শুধু চেয়েছিলাম অন্তুর কোনো ক্ষতি যেন না হয় কিন্তু আমার ভুলের জন্য সব হয়েছে। আমি কেন সবাইকে সব বলাম না কেন নিজে সব করতে গেলেম, আয়রা আমার বোন অনেক কষ্ট পেয়েছে তাইনা।
আয়রাঃ হ্যাঁ পেয়েছে যেমনটা তুমি আমার জন্য পেয়েছিলে। আয়ান এখন সব ঠিক আছে তাই এসব ভেবো না তো। চলে দেখো আনভি অয়নকে কি করছে।
আয়ানঃ সব ঠিক হয়নি আজাদ মির্জা আবার নতুন কোনো শয়তানি খেলাতে মেতেছে। তিনি অন্তুর সাথে যতটা ভালো বিহেভ করছে ততটা মনে সন্দেহ জাগছে ভবিষ্যতে অনেক বড়ো ঝড় আসছে। আমাদের সবার মনে হচ্ছে সে আবার অন্তু বা আনভিকে কিছু করবে, এবার যদি তিনি কিছু করেন তাইলে আমি সত্যি ওনাকে খুন করবো।
আয়রাঃ কিছু হবে না অর্ণব ভাইয়া কিছু হতে দেবে না অন্তুকে তুমি প্লিজ টেনশনে করো না তো। চলো দেখো আনভি কি দুষ্টুমি করছে অয়নের সাথে।
আয়ান হালকা হেসে বললো… দেখতে হবেনা কোন মায়ের মেয়ে। যেমন মা তেমন মেয়ে, মা যেমন দুষ্টুমি করতো তেমন মেয়েও হয়েছে…. চলো
আয়রা আয়ান রুমে চলে যায়। না জানি ভবিষ্যতে কি লেখা আছে সবার জীবনে….
চলবে…..