#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_আট
পরপর দুবার বলল -” হ্যালো, “হ্যালো!
বিরক্ত হয়ে বলল -” কথা বলছেন না কেন? নারী কন্ঠ শুনলে ভালোই লাগে না? বিরক্ত করার একটা লিমিটেশন আছে! ফোন ধরে রেখে কোন কথা বলছেন না কেন?” আপনার কোন কাজ না থাকলে ও আমার কাজ থাকতে পারে!”অপর পাশ থেকে কিছুই শুনা গেল না। শুধু শুনতে পাওয়া গেল নিশ্বাস আর কিছু নেড়েচেড়ে উঠার শব্দ।
তারপ ফিক করে হেসে উঠল মোবাইলের অপরপান্ত থেকে একটি মেয়ে কন্ঠ!
স্নিগ্ধা চমকে উঠলো, এবার তার মেজাজ চরা হয়েগেল।
সেই মেয়েটিকে ধমকে উঠলো –
–” তুই? পূরবী এটা কেমন মজা? এভাবে কেউ ফোন দিয়ে বিরক্ত করে? তোর পাশে আর কে আছে রে?”
–” ধরে ফেললি? বাবাহ কি ধমকই না দিলিরে তুই! এই তোকে কেউ এভাবে জ্বালায় নাকি সবসময়?”
–” না, তুই জ্বালিয়েছিস, আর কেউ জ্বালায় না!
বাই দা ওয় তোর সাথে আর কোন বাদড় আছে রে?”
স্নিগ্ধার কথা শুনে পূরবী পাশে থাকা তার কাজিনরা খিলখিল করে হাসছে।
–” এই তো আবার হাসছে, বলবি তুই, কে তোর পাশে?”
–“আমার ফুফাতো বোনেরা এসেছে, দুটোই জমজ আর পাজি, আমি তোকে ফোন করবো একজন আমার মুখ চেপে ধরেছে তো অন্যজন মোবাইল নিয়ে রেখেছে।
কি পরিমাণ বিচ্ছু ভাবছিস?”
–” ওহ! আন্টি কোথায় রে?”
–” আম্মু কাজ করছে,” বাসায় অনেক মেহমান!
–” ওহ,”
–” তোর বাসায় কেউ নেই? ”
–” না, মামি তো সন্ধ্যা ছয়টা নাগাধ বাসায় ফিরে আজ কি হয়েছে কে জানে, মনে হয় কাজ পরেগেছে তাই আসতে দেরী হচ্ছে হয়তো!”
–” আচ্ছা রাখি, নাম্বার টা ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য চেক করলাম!”
–” আমাকে ভরকে দিয়ে চেক করছোস, তোর নাম্বার যদি আমি টাকায় আর বিলবোর্ডে না টাঙ্গিয়ে দি দেখিস তুই!”
–” এই না, না, এমন করিস না প্লিজ! আমাকে আব্বু মোবাইল ধরতে দেয় না! এইভাবে ডিস্টার্ব করলে মোবাইল দূরে থাক ঘর থেকে বের হতে দিবে না!”
–” না দেওয়ারই কথা, তুই দেখতে কম সুন্দর!”
–” তোরে থাপ্রামু অসভ্য মাইয়া, তুই কি কম সুন্দর?
–” আমি নাকি কালো, বুঝেছো জান!”
শ্রাবণের কাছে আলাদা করে চাবি ছিল বাসার লকের ।
সে বাসায় এসেছে ঠিকই কিন্তু স্নিগ্ধার সঙ্গে দেখা করেনি। স্নিগ্ধার রুম থেকে কথার শব্দ পেয়ে রুমের সামনে এসেই তার টনক নড়ল। কি বলছে এই বিচ্ছু?
এর ও প্রেমিক আছে? শ্রাবণ আরেকটু এগিয়ে এলো দরজার পাশে।
স্নিগ্ধা উঠে দাড়ালো হাটতে হাটতে বলল-
–” সত্যি, সবাই আমাকে এই কথাটাই বলে? বিশ্বাস হয়না?
অপর পাশ থেকে পূরবী বলল—“কি যে বলিস না তুই কালো হলে অন্যরা কি?”
স্নিগ্ধা হাটতে হাটতে থেমেগেল। দরজার নিচে ছায়া দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট বুঝাচ্ছে কেউ দাড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধা কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে দরজার পাশে চুপি চুপি দাড়ালো ইশশ, দরজাটার যদি লুকিং গ্লাস থাকতো তাহলে দেখতে পারতো শ্রাবণ আছে না অন্য কেউ? স্নিগ্ধা একটা কাজ করল এই সময়টা মামি আসে, মামা আসেনা, স্নিগ্ধা পূরবীর কল কেটে দিয়েছে।মামির মোবাইলে কল দিল। না ছায়া তবুও সরেনি তারপর বুঝলো এ নিঘার্ত শ্রাবণ স্নিগ্ধা এবার একটা কাজ করল।
জোরে জোরে শ্রাবণকে শুনিয়ে বলল-
–” জান, সোনা, এই তো সবুর করো আসছি আমি তোমার কাছে। কটাদিন নানাভাইয়ের কথা রক্ষা করি তারপর তোমার কাছে চলে আসবো।”
শ্রাবণের রাগ উঠলো, এইটুকুনি মেয়ে তার নাকি প্রেমিক আছে! আবার তাকে জান, সোনা বলছে। শ্রাবণ দরজায় কড়া নাড়ার আগেই কলিংবেল বেজে উঠলো।
সে দরজা খুলার জন্য সামনে এগিয়ে গেল। আর স্নিগ্ধা দরজা খুলে দেখল শ্রাবণ দরজা খুলে দিয়েছে।
স্নিগ্ধার মুখে হাসি ফুটে উঠলো মনে মনে বলল –
–” তুই প্রেম করতে পারিস, আমার বুঝি প্রেমিক থাকতো না! আমার পিছনে এখনো লাইন ধরে আছে। হুহ, আমি ও কম কিসে! নিজেকে বাহ!বাহ! দিতে স্নিগ্ধা এগিয়ে এলো সামনে কিন্তু হঠাৎই তার হাসি মুখটা কেমন মলিন রুপ ধারণ করল। ছোটমামিকে দুজন মহিলা ধরে আছে। পিছনে মামা দাড়িয়ে আছে চুলগুলো এলোমেলো। মামির দিকে তাকিয়ে দেখল মামিও কেমন নেতিয়ে আছে। স্নিগ্ধা দৌড়ে সামনে গেলো বলল-
–” কি হয়েছে মামির? মামা মামিকে এভাবে সবাই ধরে রেখেছে কেন? মামির হঠাৎ কি হলো?”
–” কি হয়েছে কিছুই জানিনা মামনি, হঠাৎ করে ফোন আসলো তোমার মামির নাকি প্রেশার বেড়েছে। ঘুরে পরে গিয়েছে, আমি যেয়ে ডাক্তারের কাছে নিলাম সেখানে বলল প্রেশারের জন্যই নাকি এমন হয়েছে , ঠিক হয়ে যাবে। তুমি চিন্তা করো না!”
–” সাজ্জাদ ভাই পুষ্প আপাকে ঘরে নিয়ে যাই চলেন আপা খুব দূর্বল মনে হয়।” সবাই মিলে ধরাধরি করে পুষ্পিতাকে নিয়ে তাদের শোবার ঘরে বিছানায় শুইয়ে দিল। পুষ্পিতা এখনো চোখ বন্ধ করে আছে স্নিগ্ধা তার পাশে বসে বলল-
–” মামি এত কাজ করে সংসারে সময় দিতে গিয়ে নিজের কি হাল করছো তুমি?” কবে বুঝবে নিজের ভালোটা?” পুষ্পিতা চোখ মেলল না। স্নিগ্ধা আর কথা বলল না মামি এমন কেন? মানুষের খোটার ভয়ে জান লাগিয়ে দিচ্ছে যেন কেউ তাকে বাঞ্জা বলে খোটা না দেয়। কেউ যেন না বলতে পারে তুই অলক্ষী! তোর কোন গুন নেই! এই ভয়েই তো মামি সারাদিন কাজ শেষে বাসায় এসে ঘরদোর আগলে রাখে। কেউ বুঝে না মামির ব্যাথাটা! স্নিগ্ধা মামির চোখদুটো আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। মনেমনে বলে মামি তুমি ভালো হয়ে যাও মামি! আমার যে আর মা বলে বুকে আগলে রাখার মত কেউ নেই!
মামা আর শ্রাবণ মিলে যারা এসেছিল সবাইকে পাঠিয়ে দেয় বাইরে। মামা বাড়ির সবাইকে ফোন করে জানাচ্ছে কি দূর্ঘটনাই না হতে যাচ্ছিল সিড়ি থেকে পরেযেত যদি সেই মূহুর্ত অফিসের কলিগরা তার পাশে না থাকতো।
” পুষ্পিতা একদম নিজের খেয়াল রাখতে জানেনা! পুষ্পিতা শুধু অফিস করে আর বাসায় ফিরে একা একা কাজ করে কাজের লোক রাখলে নাকি তার ভালো লাগেনা। এখন তো স্নিগ্ধা আছে সে ও মাঝে মাঝে কাজ করে। স্নিগ্ধার উপর রেগে আছে মামা তার উপর শ্রাবণ তো আছেই। সন্ধ্যার ঘটনার পর মনে হলো একবার ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিবে গালে। কিন্তু না এখন আর সিনক্রিয়েট করা যাবে না। চাচি অসুস্থ এই সময় তো আর স্নিগ্ধাকে ধরতে ও পারবে না!
চুপ করে দাত খিচেঁ সে স্নিগ্ধার সামনে চাচুর সঙ্গে দাড়িয়ে ছিল। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে তাকায়নি সে এখন তার মামিকে নিয়ে ব্যাস্ত। মনে প্রাণে চাইছে মামি সুস্থ হোক!
কিছুক্ষণ পরই পুষ্পিতা চোখ খুলল, দূর্বল চোখ জোড়া আশেপাশে বুলিয়ে স্নিগ্ধাকে দেখল তার পাশেই বসে আছে। মেয়েটার মুখ দেখে বুঝল খুব ভয় পেয়েছে।
পুষ্পিতা স্নিগ্ধাকে অভয় দেওয়ার জন্য অনেক কষ্টে বলল-
–” আমি ঠিক আছি তো,” সেই কখন থেকে তোর মামা বকল, তুই ও বকবি আমাকে?”
ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় পুষ্পিতার কথাগুলো বলতে যে খুব কষ্ট হয়েছে স্নিগ্ধা বুঝল। স্নিগ্ধা উঠেগেল মামাকে ডেকে আনতেই মামা পাশে এসে বললেন-
–” কিসের অভাব আমাদের? কিসের অভাব? সন্তান নেই বলে টাকা যোগাড় করছো যেন সবাই টাকার লোভে শেষ বয়সে তসামত করবে তার জন্য?”
পুষ্পিতার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরল।
চোখের পানিগুলো টলটলে হয়ে গড়িয়ে পরল গাল বেয়ে।
–” আমি কখনো বলেছি আমার টাকা লাগবে?
বলেছি তুমি অকর্ম? বলেছি তুমি কাজের নও?
বলেছি নিজের টাকায় সব করো আমার টাকা ধরবে না? আমি তো তেমন কিছু চাইনি! আমি চেয়েছি সুখ আমাদের সুখ! সুখের জন্য সবদিক লাগে না পুষ্প!
মানুষের কথা শুনতে গিয়ে তুমি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো!
আমার কথা ও তুমি ভাবলে না! এই মেয়েটাকে দেখো, মা হারা মেয়েটা তোমার জন্য চিন্তায় পরে গিয়েছে। তারদিকে চেয়ে দেখেছো? ”
চলবে।