এক বেরঙ চিলেকোঠায় পর্ব -৪০+৪১+৪২

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৪০

পুলিশস্টেশনে শান্তভাবে বসে আছে মুফতাহির। শার্টের উপরের বোতামটা খোলা,চুল এলোমেলো। ওর দৃষ্টি টেবিলে থাকা পেপারওয়েটে স্থির। অফিসার বললো,

-আমরা এখনো সুমনের কোনো খোজ পাইনি স্যার।

ভাষাহীনভাবে তাকালো মুফতাহির। অফিসার ওর চাওনি দেখেই সামনে থাকা একটার পর একটা ফাইল দেখতে লাগলো। একসময় ফাইলগুলো রেখে বলে উঠলো,

-স্ সরি স্যার। ডক্টর সুমনের এগেইনিস্টে করা কেসের সবরকমের প্রমান কোর্টে পেশ করা হয়ে গেছে। নাও উই ক্যান ডু নাথিং।

আবারো চোখ তুলে তাকালো মুফতাহির। ওর চোখ রক্তবর্ন হয়ে আছে। ধীর গলায় বললো,

-ইউ উইল হ্যাভ টু ডু সামথিং অফিসার। ইউ উইল হ্যাভ টু।

-উই কান্ট ডক্টর! সাদাত রওশনের মেয়ে সব প্রমান কোর্টে জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ওর সাপোর্টে। আমাদের করার আর কিছুই নেই!

-বাট আপনি আমার সাপোর্টে। আর ইনভেস্টিগেশনটা আপনার আন্ডারে হচ্ছে অফিসার ।

-বাট ডক্টর মুফতাহির…

মুফতাহির ফুসে উঠে কলার চেপে ধরলো অফিসারের। দাতে দাত চেপে বললো,

-আই ওয়ান্ট রেজাল্ট অফিসার! আই ওয়ান্ট রেজাল্ট! আই এম নট হেয়ার টু হেয়ার ইউর বাট! গট ইট?

অফিসার ঘাবড়ে গেলো অনেকটাই। ওকে ছেড়ে দিয়ে শার্টটা টেনে আবারো বসলো মুফতাহির। অফিসার কলার টেনেটুনে ঠিক করে গলা ঝেরে বললো,

-দ্ দুটো ঘটনার প্রেক্ষিতে ডক্টর সুমনকে নির্দোষ প্রমান করা যেতে পারে ডক্টর।

-ইয়েস। কাম টু দ্যা পয়েন্ট অফিসার।

অফিসার ইতস্তত করতে করতে বললেন,

-প্রথমত,যদি কোনোভাবে সাফাত রওশনের মেয়ে তাকওয়াতুল দোয়া নিজে থেকে কেইসটা উইথড্রো করে। তবে এমনটা হওয়ার কোনো কারন দেখছি না।

মুফতাহির পেপারওয়েটটা নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,

-আর দ্বিতীয়ত?

-সাফাত রওশনের রেখে যাওয়া আসল ফর্মুলায় মেবি নতুনকরে এক্সপেরিমেন্ট কন্টিনিউ করা হচ্ছে ডক্টর মুফতাহির। যদি এই এক্সপেরিমেন্টে তৈরী করা এন্টিডোডও আগেরবারের মতো ক্ষতিকর বলে প্রমান করা যায়,তাহলে…

-তাহলে?

-তাহলে যুক্তি দেখানো যেতে পারে,পাঁচবছর আগে ডক্টর সুমনের দেওয়া রিপোর্টে কোনো ভুল ছিলো না। যেকোনো চৌকস লয়ার গ্রান্ট করলেই ডক্টর সুমনকে নির্দোষ প্রমান করা যেতে পারে।

মুফতাহির থামলো। কিছুটা আরামে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করেবললো,

-লয়ার কোথায় পাবো এমন?

-লয়ার তো পেয়ে যাবেন। কিন্তু বিষয়টা হলো…

-বিষয়টা কি?

-বিষয়টা হলো আমরা এখনো জানি না এই এক্সপেরিমেন্ট কোথায় কন্টিনিউ করা হচ্ছে। বায়োমেডি তো বলে দিয়েছে,এমন রিস্কি এক্সপেরিমেন্ট তারা তাদের ল্যাবে এলাউ করবে না। আর এতোবড় এক্সপেরিমেন্ট করার মতো তেমন সাহসী স্পেশালিস্ট কে,তা ঠিক….

-ওটা তাহসানুল আরাব।

চোখ মেলে চোয়াল শক্ত করে বললো মুফতাহির। ঠিক তখনই ওর পেছন থেকে আওয়াজ এলো,

-জীজা জী নে মেরে নাম লিয়া,ইয়ে লো,মে হাজির!

দরজায় আরাবকে দেখে অফিসার দাড়িয়ে গেলো। ওর গলা শুনে শক্ত হয়ে বসে রইলো মুফতাহির। আরাব পকেটে হাত গুজে এগিয়ে আসলো ওর দিকে। অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললো,

-বি সিটেট অফিসার। কে জানে,ওই সিটটা আর ঠিক কতো সেকেন্ড আপনার নামে স্থায়ী হয়!

শুকনো ঢোক গিললো অফিসার। আরাব মুচকি হেসে টেবিলে পরে থাকা ফাইলগুলো নাড়াচাড়া করলো। তারপর ঘাড় বাকিয়ে বললো,

-এতো বড় বড় সব অফিসার থাকতে,সাফাত রওশনের মতো বড় মাপের সাইন্টিস্টের কেইসের ফাইল আপনার টেবিলে জায়গা করে নিলো অফিসার, উয়াইরড্ না?

মুফতাহির ওভাবেই চুপচাপ বসে। কথাটা আরাব বলার আগেই ওর ভাবা উচিত ছিলো। আরাব হাতের ইশারায় অফিসারকে বসতে বললো। তারপর মুফতাহিরের পাশের চেয়ারটা সরিয়ে ওর চেয়ার নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। চেয়ারের দু হাতলের উপর হাত রেখে ঝুকে দাড়িয়ে বললো,

-কি ব্যাপার জীজা জী? শোকে কাতর? নাকি শকে পাথর?

-কি বলছো এসব আরাব?

-বুঝতে পারছো না? ওকে লিভ ইট। এটা বলো,থানায় এসেছিলে কেনো? নিখোজ কারো জন্য ডায়রি করতে?

আর চুপ থাকতে পারলো না মুফতাহির। চোখ তুলে তাকালো ও আরাবের দিকে। রাগে কাপছে ও। বললো,

-সুমন কোথায়?

আরাব শব্দ করে হেসে দিলো। হাতে তালি বাজিয়ে বাজিয়ে ঘর কাপিয়ে হাসলো ও। উপস্থিত দুজনে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। একসময় ছুটে এসে আরাব আবারো ওভাবেই দাড়ালো মুফতাহিরের চেয়ার ধরে। দাতে দাত চেপে বললো,

-চিন্তা হচ্ছে মুফতাহির? কষ্ট হচ্ছে? খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়ের কথা মনে পরে?

আরাবের চোখ ছলছল করছে। মুফতাহির শ্বাস আটকে রেখে বললো,

-কোথায় রেখেছো ওকে আরাব?

আরাব উঠে গিয়ে পাশের বেঞ্চটাতে লাথি মারলো। পরে গেলো ওটা নিচে। আরাব চেচিয়ে বললো,

-জাহান্নামে পাঠিয়ে দিয়েছি ওকে! জাহান্নামে!

চোখ বন্ধ করে রইলো মুফতাহির। আরাব বললো,

-আর কতোদিন কতোভাবে দুই ভাই মিলে কতোজনকে ঠকাতে চেয়েছিলে তোমরা? কতোভাবে?

-কি ভেবেছিলে তুমি মুফতাহির? কি ভেবেছিলে? সুমনের পুরো নাম যে ডক্টর সুমন মুফতাহির,এটা কোনোদিনও‌ চোখে পরবে না আমার? কোনোদিনও না? এটাই ভেবেছিলে?

….

-দেন টুডে আই প্রুভ ইট টু ইউ,ইউ আর এবসুলিউটলি রং! জেনে গেছি আমি সুমনের আসল পরিচয়! জেনে গেছি তোমার আসল পরিচয়! সেদিনই জেনে গেছি,যেদিন তাজীনের পরিবারের কাছে সুমনের দেওয়া তোমার পরিচয়ের সব কাগজপত্র দেখতে পাই। অবশ্যই ওগুলো তুমি না দিলে সুমন তাজীনকে দিতে পারতো না! ভাগ্যিস সেদিন দোয়া তাজীনের সাথে ওই ঠকবাজটার ঘটনার কথা বলেছিলো!

-পাঁচ পাঁচটে বছর সুমনকে ফলো করেছি মুফতাহির। কোনো লিংক পাইনি তোমার সাথে। যদি পেতাম…যদি পেতাম,তাহলে আমার বোনের জীবনটা এভাবে নষ্ট হতে দিতাম না আমি! কোনোদিনও না!

….

-আমার বোনের জীবন,তাজীনের জীবন,দোয়াদের পুরো পরিবার,ওই আটটে নিস্পাপ শিশুর প্রান! টাকার লোভে দুই ভাই মিলে এতোগুলো জীবন শেষ করে দিলে মুফতাহির? তুমি না ডাক্তার? তোমার দায়িত্ব না জীবন বাচানো? কি করে পারলে তুমি মুফতাহির? কি করে? শুধুই টাকা পাবে বলে? শুধুই টাকা পাবে বলে রওশন স্যারকে ফাসাতে নিজের ভাইয়ের সাথে প্লানিং করলে? আটটে শিশুকে মেরে ফেললে? ভাইকে দিয়ে তাজীনের জীবনটা নষ্ট করতে যাচ্ছিলে? রংধনু ইন্ডাস্ট্রিজের সবটা হাতিয়ে নেবে বলে আমার বোনকে প্রেমের নাটক করে বিয়ে করেছো তুমি! রংধনু ফার্মাকেমিক্যালসে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছো! তোমাকে নিজের ভাইয়ের মতো বিশ্বাস করেছিলাম মুফতাহির! আর তুমি…তুমি আমার বোনকে এভাবে ঠকালে? কতো? কতো টাকার প্রয়োজন ছিলো তোমার? কতো টাকার? আমাকে বলতে পারতে! সব দিয়ে দিতাম আমি! সব! কিন্তু আমার বোনকে কেনো? কি দোষ ছিলো ওর? কি ক্ষতি করেছিলো ও তোমার? কি ক্ষতি করেছিলো? আন্সার মি!

মুফতাহির রাগ নিয়ে উঠে দাড়ালো। ও কিছু বলতে যাবে,তার আগেই ওর কলার মুঠো করে নিলো আরাব। শক্তভাবে বললো,

-হুশশশশ্! আর একটা কথাও নয় মুফতাহির। আর একটা শব্দও নয়! হ্যাঁ,তোমার ভাই সুমন আমার কাছে আছে। আর আমার কাছে মানেই দুনিয়ার জাহান্নাম। এখনো অবদি সম্মানের সাথে তুমি সম্বোধনে কথা বলছি তোমার সাথে। কারন এইটা বজায় রাখতে চাই আমি। আমার বোনের মুখে হাসি দেখতে চাই। কান খুলে শুনে রাখো মুফতাহির,যতোক্ষন না অবদি আমার বোন হাসছে,ততোক্ষন তোমার ভাই ছাড়া পাবে না। হ্যাঁ ছাড়া পেলেই ওর জেল। বাট ট্রাস্ট মি,জেলে ও আমার রাখা জায়গার চেয়ে বেশি ভালো থাকবে। অনেক বেশি পেইনে আছে তোমার ভাই। কি করবো? আমার বোনটাও যে সুখে নেই! তাই আগে আমার বোনের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করো জীজা,জী! ডু ইট!

ধাক্কা মেরে ওকে আবারো সিটে বসিয়ে দিলো আরাব। তীক্ষ্ম চোখে অফিসারের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

-সীমার বাইরে যেতে নেই। সেখানে ব্লাকহোলের মতো থাকা কোনো অদৃশ্য শক্তির আপনাকে গ্রাস করতো দু সেকেন্ডও লাগবে না অফিসার। এন্ড গেইস হোয়াট? আপনার চারপাশে ব্লাকহোল আমি নিজহাতে তৈরী করে রেখেছি। সো,বি কেয়ারফুল!

আরাব বেরিয়ে গেলো। অফিসার কম্পিতকন্ঠে বললো,

-ড্ ডক্টর? এবার কি হবে? এ্ এ তো সবই জানে।

চেচিয়ে টেবিলের উপরে থাকা সমস্ত কাগজপত্র দুহাতে নিচে ফেলে দিলো মুফতাহির। ও সত্যিই‌ জানে না এবার ঠিক কি হবে। ওর সব সত্যতা জানে আরাব। কিন্তু তৌফিকার জন্য কিছু বলতে পারছে না ওকে। আর তাই সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় আঘাত হেনেছে ওর। কিছু বললে,সেটা সুমনের উপর দিয়ে যাবে তা বেশ বুঝতে পারছে মুফতাহির। আরাবকে যতোদুর চেনে,একমাত্র ভাইয়ের অবস্থা কল্পনা করতেই শিওরে উঠলো ও।

ক্লাসে ঢুকতেই পরিচিত মুখগুলোর অদ্ভুত চাওনি দেখে কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলো দোয়া। সেদিন নিউজে ওর বাবার নামের সাথে ওর নাম বলার পর সবার ব্যবহারে অনেক পরিবর্তন। যারা ওর কাছে এসে বসতো না,ওর দিক ফিরেও তাকাতো না,সবাই টুকিটাকি কথা বলা শুরু করেছে ওর পিত্যৃপরিচয় জেনে। তা বলে ও লক্ষনীয় কেউ হয়ে যাবে,এমনটা একদমই চায়নি ও। চুপচাপ সিটে বসে পরলো গিয়ে। তাজীন এসে সোজা ওর সামনে কান ধরে দাড়িয়ে বললো,

-সরি ইয়ার! আংটিবদলে যেতে পারিনি বলে।

দোয়া অভিমানী চেহারা করে অন্যদিক তাকালো। তাজীন এদিকওদিক তাকিয়ে দোয়ার কানে ফিসফিসিয়ে বললো,

-আরে নিরবকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। বুদ্ধুটাকে নিয়ে প্রথমবারের মতো রোমান্টিক স্পেসে ছিলাম ইয়ার!

দোয়া হেসে দিলো। নিরব তাজীনের সম্পর্ক ঠিক হয়ে যাচ্ছে ভেবে খুশি হলো ও। অনেকটা সময় পর তাজীন বললো,

-জানিস দোয়া,নিরব অনেককথা বলছিলো রওশন আঙ্কেলকে নিয়ে। উনি কতোটা ডেডিকেটেড ছিলেন ল্যাবে,কতো ভালো বিহেভ করতেন সবার সাথে,এইসব।

দোয়া আর কিছুই বললো না। তাজীন বুঝলো ওর কথায় দোয়ার বাবার কথা মনে পরে গেছে। তাই চুপ রইলো। দোয়া ক্লাস শেষে গেইটে দাড়ালো বাসের জন্য। কিন্তু প্রতিদিনের শিডিউলের বাসটা আসছে না আজ। তাজীনকে নিরব এসে নিয়ে গেছে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেই বাইক এসে থামলো ওর সামনে। চোখ বন্ধ করে শ্বাস ফেললো দোয়া। সামনের ব্যক্তিটি বলে উঠলো,

-আপনার ব্যক্তিগত চালক আর ব্যক্তিগত বাহন উপস্থিত ম্যাডাম!

দোয়া চোখ মেললো। তৎক্ষনাৎ চোখ টিপ দিলো আরাব। বড়বড় চোখে তাকিয়ে আশপাশ দেখে নিলো দোয়া। আরাব ইশারায় বুঝালো উঠে বসতে। দোয়া চোখ নামিয়ে কিছুটা ইতস্তত করতে লাগলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর হাত ধরে আংটিটা ঘুরিয়ে আরাব ওকে মনে করিয়ে দিলো,ওরা এনগেইজড্। মুচকি হেসে পেছনে উঠে বসলো দোয়া। পেছনে সিট ধরে বসেছে,দুরুত্ব রেখে। আরাব নিজেই ওর হাত নিজের বুকের কাছে নিয়ে বললো,

-এইখানটায় থাকতে চেয়েছিলে না? আমি তো পুরো আমাকে তোমার করে দিলাম দোয়া। আড়স্টতা না রেখে,আস্তেআস্তে আপন করে নাও? যাতে কোনো এক সময় একেবারে লজ্জায় পরতে না হয় তোমাকে! তোমার সব লাজুকতা একত্র হলে,আরাব যে নিজেকে সামলাতে পারবে না। একদমই না!
#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৪১

টুইঙ্কেল চকলেট খাচ্ছে,তৌফিকা চোখ বন্ধ করে বসে আছে ওর পাশের সোফায়। সবে হসপিটাল থেকে ফিরেছে ও,টুইঙ্কেলকে রংধনু থেকে নিয়ে। এপ্রোনটা ছেড়ে এলোমেলোভাবে বসে রইলো সোফায়। ক্লান্ত লাগছে প্রচন্ড। পাশ থেকেই চপচাপ আওয়াজ আসছে চকলেটের মোড়কের। তৌফিকা চোখ খুলে পাশে তাকালো। টুইঙ্কেল কব্জির দিকটায় জিভ লাগাচ্ছে। ওর নাকে,গালে চকলেট লেগে আছে। চকলেট খাওয়ার সময় প্রতিবার জামা,হাতে লাগাবেই ওর মেয়েটা। এটা বারনের পরিবর্তে আরাব শিখিয়েছে ওকে,চকলেট না লাগালে সেটা নাকি ম্যাচিউরডদের কারসাজি,যা টুইঙ্কেলকে মানায় না। টুইঙ্কেল নিজের মতো কিউটলি চকলেট খাবে,গালে লাগাবে। ব্যস! আর টুইঙ্কেলকে থামায় কে? তৌফিকা বললো,

-এই চকলেট চেটেপুটে খাওয়া বাজে দেখায় টুইঙ্কেল। বাজে ম্যানার্স এটা।

-হ্যাঁ তো! আরাব মামা বলেছে আমাকে। বাসার বাইরে খেতে গেলে,গালে মুখে লাগানো যাবে না। ওটা বাজে ম্যানার্স! আমি তো করিও না আম্মু বলো?

বলার মতো কিছুই খুজে পেলো না তৌফিকা। বেশ কিছুক্ষন বলার মতো কিছু খুজে খুজে সুন্দর করে হেসে আদুরে‌ গলায় বললো,

-ইচ্ছে করছে তোমার গালের চকলেট লিক করি টুইঙ্কেল!

টুইঙ্কেল খাওয়া থামিয়ে হেসে দিলো। বললো,

-সত্যি? জানোতো আম্মু,আজ বুঝলাম। এজন্যই নানুভাই বলে,তোমার আম্মু আর আরাব মামা একই স্বভাবের!

-কেনো? আমি আর আরাব মামা একই স্বভাবের কি করে হলাম?

-তুমি আমার গালের চকলেট লেগেছে বলে লিক করতে চাইছো! জানোতো আম্মু? আরাব মামা বলেছে,উইশমামকে ঠিক এভাবেই চকলেট খাওয়া শেখাতে। মামাও তাহলে উইশমামের গালের চকলেট খেতে চায় তাইনা?

তৌফিকার চোখ আপনাআপনিই বড়বড় হয়ে গেলো। ভাইটা ওর মেয়েটাকে অল্পেই বেশি পাকিয়ে ফেলছে। তাড়াতাড়ি গলা ঝেরে বললো,

-চকলেট শেষ করো! ব্রাশ করতে হবে তো!

-না। আজকে টুইঙ্কেলের আরো দুটো চকলেট খাওয়া বাকি আছে। সেগুলো শেষ করে,তাতপর ব্রাশ করবে টুইঙ্কেল।

মুফতাহিরের গলা শুনে দরজায় তাকালো তৌফিকা। একেবারে বিদ্ধস্ত লাগছে ওকে ওর পোশাকে। কিন্তু মুখে হাসি। বাহাতে একটা বড় লালগোলাপ আর দুটো চকলেট। ডানহাতের মুঠোতে স্থেটোস্কোপ। কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো তৌফিকা। টুইঙ্কেল দৌড়ে এসে বাবার কোলে উঠে বললো,

-আব্বু? আমার জন্য চকলেটও? রোজও?

একপলক তৌফিকার দিকে তাকিয়ে মুফতাহির ওকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো। মেঝেতে বসে চকলেটদুটো টুইঙ্কেলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

-উহুম। চকলেটি টুইঙ্কেলের জন্য চকলেট। আর টুইঙ্কেলের রোজি আম্মুর জন্য…

টুইঙ্কেল চেচিয়ে বলে উঠলো,

-রোজ!

তৌফিকা দুজনের দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলো। টুইঙ্কেল হাত বাড়ালো চকলেটের দিকে। মুফতাহির চকলেটদুটো সরিয়ে বললো,

-সেদিন ডেন্টিস্ট আঙ্কেল কি বলেছিলো টুইঙ্কেলকে?

টুইঙ্কেল চকলেট দুটো নিতে গিয়েও থেমে গেলো। গাল ফুলিয়ে বললো,

-চকলেট খেলে ক্যাভিটি হয়। আর ক্যাভিটি হলে টুইঙ্কেলের দাত ইদুরে নিয়ে‌ যাবে।

মুফতাহির ঠোট টিপে হেসে গাল টেনে দিলো ওর। বললো,

-বাট আজকে টুইঙ্কেলের রুমের ইদুরমশাইকে টুইঙ্কেলের আব্বু একেবারে ছু মন্তর করে পাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে। আজকে ও ঘরে কিন্তু টুইঙ্কেলের দাত নিয়ে যাওয়ার কেউই নেই!

খুশি হয়ে গেলো টুইঙ্কেল। বাবার কাছ থেকে চকলেট দুটো নিয়ে দৌড় লাগালো নিজের ঘরে। তৌফিকা উঠে দাড়ালো। মুফতাহিরও দাড়িয়ে গেছে। তৌফিকা নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছিলো। পেছন থেকে মুফতাহির ওর নাম ধরে ডাক লাগালো। তৌফিকা পিছন না ফিরে বললো,

-কিছু বলবে?

ওর সামনে এসে দাড়ালো মুফতাহির। মাথা নিচু করে বললো,

-আ’ম সরি তৌফিকা।

বিস্ময়ে তাকালো তৌফিকা। বললো,

-কেনো বলোতো মুফতাহির? তুমি কোন বিষয়ে নিজের ভুল খুজে পেলে?

মাথা তুলে তাকালো মুফতাহির। ওকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো। সামনে মেঝেতে বসে বললো,

-সব বিষয়ে। সরি ফর এভরিথিং তৌফিকা। ফর এভরিথিং। তোমার এই বিষন্নতা আমার সহ্য হচ্ছে না তৌফিকা। আমি শুধু দোয়া কেনো,সব মেনে নেবো। শুধু তুমি এভাবে থেকো না প্লিজ! প্লিজ আগের মতো হয়ে যাও? প্লিজ?

তৌফিকা তৃপ্তিতে দেখতে লাগলো ওকে। এ যেনো সেই আগের মুফতাহির। মুফতাহির গোলাপটা ওর সামনে তুলে ধরে বললো,

-আই লাভ ইউ আমার বাচ্চার মা!

হেসে দিয়ে গোলাপটা নিলো তৌফিকা। জরিয়ে ধরলো মুফতাহিরকে। ঠিক আগের মতোই মুফতাহির মানিয়ে নিলো ওকে। মানা করার উপায় ছিলো না ওর। ওকে জরিয়ে রেখে শক্ত চাওনিতে তপ্তশ্বাস ফেললো মুফতাহির।

বাচ্চাদের এক্সাম শেষ বলে টিউশনি নেই দোয়ার। বিকেলটায় তাই ছাদে উঠে বসেছে ও। বিকেলের শেষভাগের রোদ গায়ে লাগছে বলে বেশ ভালোই লাগছে। হাতের আংটির দিকে তাকিয়ে আনমনে হাসলো ও। আংটিবদল আর বিয়ে! এই দুটোর মাঝামাঝি সময়টা আলাদাই এক অনুভূতিময়। এই আংটিবদলে স্বীকৃতি পেয়েছে ওদের ভালোবাসা। আর বিয়ের পর পুর্নতা পাবে ওদের ভালোবাসা। শুরু থেকে আরাবের সাথে জুড়ে থাকা প্রতিটা মুহুর্ত দোয়ার সামনে ভেসে উঠতে লাগলো। প্রথমদিনের এক্সিডেন্ট,রনোকের জ্বালাতনে আরাবের প্রতিক্রিয়া,টুইঙ্কেলকে পড়াতে যাওয়া,সবজায়গায় আরাবকে অনুভব করা,কিছুদিনের অনুপস্থিতে অস্থির হয়ে পরা,আর তারপর…আরাবের ভালোবাসি বলা। অনুভব হওয়া,ওউ ভালোবাসে আরাবকে। আর সেখানে ও কিনা উদ্যত হয়েছিলো,আরাবকে ফিরিয়ে দেবে বলে। সবটা মনে করে আবারো হাসলো দোয়া।
তন্নি জামাকাপড় তুলতে এসে দেখলো ওভাবে মিটমিটিয়ে হাসছে দোয়া। ঠোট টিপে হেসে গুটিগুটি পায়ে এগোলো ও দোয়ার দিকে। দোয়ার খোপায় থাকা কাঠিটা টান মেরে চুল খুলে দিয়ে ছুট লাগালো ও। চেচিয়ে বললো,

-কি? দোয়াপু? প্রেম প্রেম পায়? ওভাবে হাসছো কেনো?

কাধে হাত দিয়ে উঠে দাড়ালো দোয়া। লজ্জা ছেড়ে রাগী ভাব নিয়ে কাঠিটা নেবে বলে এগোলো তন্নির দিকে। বললো,

-কাঠিটা দে তন্নি! চুল বাধবো!

-না! আজকে যদি না বলো ওভাবে হাসছিলে কেনো,পাচ্ছো না তোমার কাঠি!

-হাসির মধ্যে আবার এভাবে ওভাবে কি হলো তন্নি? কাঠিটা দে! দে বলছি?

তন্নি দৌড়াচ্ছিলোই। দোয়াও পিছনে ছুটছিলো ওর। তন্নি সবে সিড়ির দিকে গেছে,কারো বুকের সাথে ধাক্কা লেগে একেবারে পরেই গেলো ও। আর কাঠিটা গরিয়ে দোয়ার পায়ের কাছে ঠেকেছে। চোখ তুলে তাকিয়ে সামনে স্বস্তিককে দেখে তন্নি চেচিয়ে বললো,

-এই বিলেতি কদু! চোখে দেখেন না?

স্বস্তিক পাত্তা দিলো না ওর কথাকে। কাঠিটা দিয়ে চুলে খোপা করতে করতে দোয়া লক্ষ্য করলো স্বস্তিকের হাতে রঙ,ক্যানভাস,ছবি আকার সব সরন্জাম। এগিয়ে গিয়ে বললো,

-এসব কি স্বস্তিক?

-আরাব দাদা পাঠিয়েছে। তোমার জন্য।

দোয়া বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। ও যে আকাআাকি ভালোবাসে,এটা আরাবের জানার কথা নয়। তন্নি নিচে বসে থেকেই বললো,

-আরে? আমাকে তো কেউ তোলো?

স্বস্তিক সবগুলো জিনিস দোয়ার হাতে গুজে দিয়ে হাত ধরে টেনে তুললো তন্নি। বিরক্তি নিয়ে বললো,

-জানতাম। টেনে না তুললে উঠতে পারবেন না আপনি। লেইম একটা!

-ইউ ইম্পর্টেড কদু! আপনি আমাকে আবার লেইম বললেন?

-তো কি বলবো? লেইমের মতোই কাজ করছেন না আপনি?

-দেখুন আপনাকে আমি…

দোয়া খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে জিনিসগুলো। স্বস্তিক,তন্নির ঝগড়া চলমান। আস্তেধীরে চলে আসলো ওখান থেকে। জলরঙ,ক্যানভাস সব আছে ওতে। রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে ওগুলো একটা একটা করে স্পর্শ করে অনুভব করতে লাগলো। অনেকটাসময় ঝগড়ার পর স্বস্তিকের সময়ের কথা মনে পরলো। একবার দোয়া আরেকবার হাতের ঘড়িটা দেখে ও কথা বলতে থাকা তন্নির হাত ধরে হাটা লাগিয়ে বললো,

-কথাবলা মেশিন,লেটস্ গেট আউট অফ হেয়ার।

তন্নি বারবার বারন করছিলো হাত ধরার জন্য। ওকে নিয়ে একপ্রকার জোর করেই নেমে আসলো ও। দোতালায় কেচিগেইটের ভেতরে ওকে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজে বাইরে থেকে স্বস্তিক বললো,

-এখানে এখন যত খুশি শব্দদুষন ঘটান!

কানে হেডফোন গুজে দিলো স্বস্তিক। কিছু বলতে গিয়েও বললো না তন্নি। রাগে পা ছুড়ে ঘরের ভিতর চলে গেলো ও।
ছাদে দাড়িয়ে মনের মতো করে ছবি আঁকছে দোয়া। এ সময়,এ জায়গা,এ আনন্দ,এ রঙ,এ ক্যানভাস,এসব উপহারদাতা,সব ওর! সব! খুশিতে মনের সব রঙ এটে দিচ্ছে ও ক্যানভাসে। বহুদিন পর!
হঠাৎই কেউ পেছন থেকে খুলে দিলো ওর চুল। দোয়া পেছন ফেরার আগেই সে বলে উঠলো,

-তুমি ওই ক্যানভাসে যতো খুশি রঙ এটে দাও দোয়া। আমাকে শুধু এই কৃষ্ণবর্নের চুলে হারানোর অনুমতি দেবে?

কথা শেষ করে দোয়ার ঘাড়ের চুলে নাক ডুবিয়েছে আরাব। শিওরে উঠলো দোয়া। কাপতে লাগলো ওর পুরো শরীর। হাতে থাকা তুলিটা পরে গেলো ওর হাত থেকে তৎক্ষনাৎ। টের পেয়ে চোখ মেললো আরাব। নিচে তুলিটা দেখে হতাশার শ্বাস ফেলে সরে দাড়ালো ও। দোয়া অস্বস্তি নিয়ে পেছন ফিরে বললো,

-আ্ আপনি?

-তো আমার হবু বউয়ের কাছে আমি থাকবো না তো কি আইনস্টাইন এসে থাকবে?

দোয়া হচকিয়ে গেলো ওর জবাবে। আরাব গাল ফুলিয়ে ড্রয়িংটার দিকে তাকালো। মুহুর্তেই চাওনির পরিবর্তন ঘটলো ওর। ছবিটা দেখে মুগ্ধতার হাসি ফুটলো ওর ঠোটের কোনে। কোনো এক জানালার পাশে আবছা আলোয় দাড়িয়ে দুটো অবয়ব। ছেলেটার বুকে পিঠ ঠেকিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মেয়েটা। ছেলেটা পেছন থেকে জরিয়ে রেখেছে মেয়েটাকে। দোয়ার দিকে তাকালো আরাব। দোয়া মুচকি হেসে বললো,

-এক বেরঙ চিলেকোঠায়।

হাসি নিয়ে একপা এগোলো আরাব। বড়বড় চোখে একপা পেছোলো দোয়া। আরাব মুচকি হেসে বললো,

-এভাবেই তো প্রতিনিয়ত তোমার প্রেমে পরতে বাধ্য করো ম্যাডাম। সবকিছুতে অনন্যা!

দোয়া ভাব নিয়ে বললো,

-হুম। দেখতে হবে তো! কোনো এক সাইকো সাইন্টিস্টের হবু বউ কিনা? ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে!

-ও? তাই বুঝি?

আরাব দুষ্টুমির ভঙ্গিমায় হাত বাড়ালো ওর দিকে। দোয়া হেসে সরে দাড়িয়ে বললো,

-উহু! একদমই না! আগে বেটার কিছু ড্রয়িং করে দেখান! তারপর…

-বেটার কিছু ড্রয়িং করে দেখালে? তারপর কি বলোতো দোয়া?

ঠোট কামড়ে হেসে বললো আরাব। দোয়া আটকে গেলো। ঠিক কি থেকে কি বলেছে ও,আর আবার কি বুঝে কি বুঝাতে চাইলো ভাবতেই কান গরম হয়ে উঠলো ওর। চোখ বন্ধ করে জিভ কামড়ালো ও। আরাব বাকা হেসে বললো,

-ওকে। যা বলতে চেয়েছো,আমি বুঝে গেছি! এখন আমার ড্রয়িং স্কিল দেখো!

নতুন কাগজ নিয়ে কয়েকরঙের জলরঙ পুরোটাই ওতে ছুড়ে মারলো আরাব। প্রথমে আরাবের কনফিডেন্স দেখে ভয় পেয়েও,একটুপরেই দোয়া হেসে দিলো। এভাবে আর যাই হোক,ড্রয়িং হয়না। ভয়ের কোনো কারন নেই ওর। ওকে হাসতে দেখে ক্যানভাস ওর থেকে উল্টো করে ধরলো আরাব। দোয়া বললো,

-এটা কি হলো? ঘুরালেন কেনো? আমিও তো দেখি? মহাশয়ের ড্রয়িং স্কিল?

-ন্যাঁ! দেখতে হবে না! প্রেমে পরে যাবেন!

ঠোট টিপে হাসি আটকালো দোয়া। আরাব একবার ওর দিকে তাকাচ্ছে,তো একবার ক্যানভাসে আকিবুকি করছে। দোয়ার ওর আকানোর ভঙিমা দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। রঙ নেওয়া কোনোটাই হয়তো বাদ যায়নি ওর। তুলি নিচ্ছে,আবার রেখেও দিচ্ছে, ক্যানভাস আঙুলে ঘষাঘষি করছে,আবার আঙুল শার্টে মুছছে। এভাবে কে ছবি আঁকায়?

আঁকানো শেষে একটা বিশ্বজয়ের হাসি দিলো আরাব। হাত ধরে দোয়াকে টেনে এনে ছবির সামনে দাড় করালো। দ্বিতীয় দফায় হতভম্ব হলো দোয়া। প্রায় সব রঙ আছে ক্যানভাসে। আর সেসব রঙের মাঝে কারো,কোনো মেয়ের মুচকি,লাজুক হাসিমুখ। তার কোকড়া চুলের উপস্থিতি জানান দিলো,এ আরাবের প্রেমের হাজার রঙে ছেয়ে যাওয়া,দোয়ারই প্রতিচ্ছবি।
ঘাড় ঘোরানের আগেই একহাতে দোয়াকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো আরাব। আরেকহাতে ওর সবগুলো চুল সামনে দিয়ে দিলো। আকস্মাৎ কানের পিছনে জলরঙে ভেজানো তুলির শীতল পরশ আর আরাবের উষ্ণ নিশ্বাসের আবেশে কেপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিলো দোয়া। সরু তুলিতে ওর ঘাড়ে আকিবুকি করতে করতে আরাব ফিসফিসিয়ে বললো,

-শুনছো আরাবের ব্যক্তিগত সম্পদ? তোমার লজ্জারাঙা মুখ এই ক্যানভাসের চেয়েও আরো বেশি রঙিন! বেশি আকর্ষক! তাইতো বারবার বলি,ওভাবে লাজুক হাসিতে আমাকে পাগল করে দিও না! আটকাতে কষ্ট হয় নিজেকে। অনেক বেশি কষ্ট হয়!
#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৪২

-দোয়ার বাবার তৈরী করা ফর্মুলার এন্টিডোড একমাত্র রংধনু গ্রুপই মার্কেটে লন্চ করবে। ওই ফর্মুলা সরাসরি রংধনু ফার্মাকেমিক্যালসে আনার ব্যবস্থা করো আরাব।

ফাইল দেখতে দেখতে বাসায় ঢুকছিলো আরাব। নিজের ঘরের দিকেই যাচ্ছিলো ও। কিন্তু বাবার কথা থেমে গেলো। তৌফিক ওয়াহিদ সোফায় বসে পেপার পড়ায় মগ্ন। আরাব মুচকি হেসে ফাইলটা বন্ধ করে এগিয়ে গেলো বাবার দিকে। বললো,

-বিজনেসে কি করে টপ করতে হয়,তা কেউ তোমার কাছ থেকে শিখুক।

তৌফিক ওয়াহিদ একপলক ছেলের দিকে তাকালেন। আবারো পেপারে মনোযোগ দিলেন উনি। আরাব বললো,

-রওশন স্যারের ফর্মুলা তো এখনো স্বীকৃতি পায়নি। ওটা সবে নতুন করে রিচেইক করা হচ্ছে। এতো আগে আগেই টোপ ফেলছো বাবা?

তৌফিক ওয়াহিদ নিজের মতো ব্যস্ত থেকেই বললেন,

-রিচেইকের দরকার নেই। মিস্টার ওয়াহিদের ফর্মুলা যে প্রতিবারের মতো কার্যকরী,সেটা আমি জানি।

-তবুও পাঁচবছর আগে নিউজে তার এগেনিস্টে প্রমান দেখে একমুহুর্তেই মেনে নিয়েছিলে সে ভুল এক্সপেরিমেন্ট করেছে।

-শুধুশুধু কথা কেনো বাড়াচ্ছো আরাব? যেটা বলা হলো,সেটা করো। কালেক্ট দ্যা ফর্মুলা বাই এনিহাউ।

-পারবো না!

শক্তকন্ঠে বললো আরাব। ওর আওয়াজে মাথা তুলে তাকালেন তৌফিক ওয়াহিদ। পেপারটা সামনের টি টেবিলে রেখে দাড়িয়ে বললেন,

-পারবে না মানে?

আরাব একটা ইনোসেন্ট হাসি দিয়ে বললো,

-মানেটা খুব সিম্পল বাবা। আমি জানি না ফর্মুলা কোথায়। কিভাবে আনবো?

তৌফিক ওয়াহিদ গম্ভীরভাবে বললেন,

-ওটা বায়োমেডিতেই আছে। এটা তুমি আমি দুজনেই খুব ভালোমতো জানি আরাব!

-কিন্তু বায়োমেডির এমডি তো বলে দিয়েছে নিউজে,তারা এতো রিস্কি এক্সপেরিমেন্ট বায়োমেডিতে এলাউ করবে না। তারপরও তুমি কি করে জানলে বলোতো বাবা? বায়োমেডি আর তোমার মাঝে হেডফোনের একটা তো আমি,আরেক কানে ঠিক কোন থার্ড পার্টিকে গুজে শব্দভান্ডার মস্তিষ্কে প্রেরন করছো বলোতো?

চিন্তার ভাব নিয়ে বললো আরাব। তৌফিক ওয়াহিদ কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলে ছেলের দিকে। আরাব মৃদ্যু হেসে বললো,

-হ্যাঁ ওটা বায়োমেডিতেই আছে। ঠিকই খোজ পেয়েছো তুমি।

-আর তার দায়িত্বে তুমিই আছো। এটাই শতাংশ সঠিক। যাইহোক,ওটা সবার আগে রংধনুতেই চাই আমার।

আরাব শব্দ করে হেসে দিলো। কিছুক্ষন পর হাসি থামিয়ে বললো,

-ডোন্ট টক সিলি বাবা! এটা কি আমার দাদুর শ্যালকের বাড়ির মোয়া? যে আনতে বললে,আর এনে দিলাম? অনুমতিবিহীন তোমাকে ফর্মুলা এনে দেওয়া মানে বোঝো,আমার আর ডক্টর সুমনের মাঝে কোনো তফাৎ থাকবে না!

-অনুমতিবিহীন আনতে বলিনি তো! যখন ফর্মুলা স্বীকৃতি পাবে,তখন বায়োমেডির অনুমতি নিয়েই তুমি….

-অনুমতি বায়োমেডি না,দোয়ার কাছ থেকে নিতে হবে বাবা!

শীতল স্বরে বললো আরাব। বিস্ফোরিত চোখে তাকালেন তৌফিক ওয়াহিদ। আরাবের ঠোটে বাকা হাসি। বললো,

-কি বলোতো বাবা? রওশন স্যারের স্থাবর,অস্থাবর যা আছে,সবকিছুর উত্তরাধিকারিনী দোয়া। তাই স্যারের রেখে যাওয়া ফর্মুলা ঠিক কোন ফার্মাকেমিক্যালসে সেল করবে,সেটা দোয়াই ঠিক করবে। এমনটাই বলা হয়েছে শুনানিতে।

তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লেন তৌফিক ওয়াহিদ। বললেন,

-দোয়া রংধনুতে বউ হয়ে আসছে,তোমার বউ‌ হয়ে আসছে,ও অবশ্যই চাইবে রংধনু ইন্ডাস্ট্রিজ,তোমার ব্যবসা….

-দোয়া চাইবে,যে গ্রুপ কম রেটে এন্টিডোড বাজারে লন্চ করবে,সেই গ্রুপকেই ফর্মুলা দিতে।একটা ভুল বললে কিন্তু! ব্যবসাটা আমার ব্যবসা নয় বাবা! তোমার ব্যবসা! তোমার রংধনু ইন্ডাস্ট্রিজ! আর হ্যাঁ! আরো একটা কথা,দোয়াকে যতোদুর চিনি,আমার ব্যবসা হলেও সেটাকে গুরুত্ব দিতো না ও। মানে তুমি ,কোটিকোটি টাকা ইনভেস্টের আশায় দোয়ার কাছ থেকে এটলিস্ট এন্টিডোড পাবে না!

তৌফিক ওয়াহিদ রাগ নিয়ে বললেন,

-কি বলতে কি চাইছো তুমি?

-ফর্মুলা চাইলে নিজের চিন্তাধারা বদলাও বাবা! দোয়াকে দোয়ার মতো করে ভালোবাসো। ওর অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যতকে তুলনা করে না। ছেলেকে ছেলের মতো করে ট্রিট করো। পাপেটের মতো না। পরিবারকে পরিবারের মতো হিসেব করে ভালোবাসো। বিজনেসের ডেবিট ক্রেডিট হিসাব করে তাদের সাথে আপডাউন গ্রাফ তৈরী করো না! দ্যাটস্ ইট!

কথাগুলো বলে নিজের ঘরে চলে গেলো আরাব। সব কথা মাথায় না নিলেও,এটা বেশ বুঝতে পারছেন তৌফিক ওয়াহিদ,দোয়াকে তার দরকার। যে ভাবেই হোক,ওই এন্টিডোড রংধনুই লন্চ করবে। আর এজন্য দোয়াকে খুশি রাখতে হবে। এতোদিন তো উপেক্ষা করেছে। কিন্তু আরাব যেভাবে বলে গেলো, ওই সাধারনবেশে চলাফেরা করা মেয়েটাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তার। তৌফিক ওয়াহিদের বিজনেসে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে,ওই বেরঙ চিলেকোঠার সাধারন মেয়েটি!

উজ্জল রোদ্দুরে ছেয়ে থাকা দুপুরের শহর। এ রোদকে কেউ কেউ বলবে মিছরির ছুরি। শীতের উত্তরা হিমশীতল বাতাসের জন্য ছায়ায় দাড়ালেই শিওরে ওঠে গা। আর রোদে দাড়ালে তীক্ষ্মভাবে উষ্ণ আবেশ জুড়ে দেয় শরীরে। একটু বেশিক্ষন দাড়ালেই মনে হয় জ্বলে যাবে শরীর ওই রোদে। হাটতে হাটতে দোয়া বুঝলো,ঘেমে উঠেছে ও কিঞ্চিত। গলায় থাকা ওড়নায় গলাটা মুছে নিলো একটু। রোদের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে আবারো চোখ নামিয়ে নিলো। শীতকাল তো কি,সুর্য তেজ দেখাতে ভুলবে না। মা ভাইয়ের ওষুধ কিনবে বলে বেরিয়েছে । দুদিন পর সবাই বিয়ে তে ব্যস্ত হয়ে যাবে,নিজের দায়িত্বগুলো নিয়ে ভাবতে গেলে ধোয়াশা দেখে দোয়া। মাকে কিছু বলতেও পারছে না ভেবে আরো দম বন্ধ লাগে ওর। অপরাধী লাগে নিজেকে।

ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে ডানেবামে তাকিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলো দেখেশুনেই। হঠাৎই কেউ হাত ধরে ফেললো ওর। পেছন ফিরে এক অচেনা মেয়েকে দেখে বিস্মিত না হয়ে পারলো না দোয়া। ওকে নিয়ে কোনো কথা না বলে হাটা লাগালো মেয়েটি। দোয়া কয়েকবার বললো,হাত ছাড়ুন আপু,মেয়েটি পাত্তা দেয়নি। পরে আর কিছু বললো না দোয়া। আপাদমস্তক দেখে নিলো মেয়েটাকে। কোটসুট পরা,ছোটছোট সোজা কালার করা চুল,যাকে এককথায় বলে বিজনেস ওমেন। পাগল তো নয়। তবে হয়তো দরকারেই হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে ওকে কোথাও। আশপাশ দেখে হাটলো কয়েকপা দোয়াও ওর সাথে।একটুপরেই জনবহুল জায়গা পেরিয়ে আসলো ওরা। দোয়ার হাত ছেড়ে মেয়েটি চেচিয়ে বলে উঠলো,

-হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস কি করে হয় আরাবের বউ হবে এমনটা ভাবারও?

দোয়া অবুঝের মতো তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে। মেয়েটা আবারো চেচিয়ে বললো,

-লিসেন! আরাব শুধু জারার! ও আমার! কোনো বিয়ে হচ্ছে না! তুমি করছো না আরাবকে বিয়ে!

জারার কথায় দোয়া কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। শুধু জারাকে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো। জারা চুল উল্টে ধরে এদিকওদিক হেটে বললো,

-শোনো মেয়ে! আরাব আমাকে বিয়ে করবে। ওইদিন…ওইদিন যদি পাপা আমাকে জোর করে বিজনেস ট্রিপে না নিয়ে যেতো,আমি কোনোদিনও বিষয়টা এতোদুর গরাতে দিতাম না! তৌফিক আঙ্কেলের বিজনেস ওমেন পছন্দ বলে পাপার সব কথা মেনে আগে বিজনেস বুঝে নিয়েছি। পাপা বলেছিলো,ঢাকায় ফিরলেই আরাব তোমার। আজই ফিরেছি। আর সেখানে কিনা আমাকে শুনতে হলো আরাবের এনগেইজমেন্ট হয়ে গেছে! তোমার সাথে? যার কোনো যোগ্যতাই নেই আরাবের বউ হওয়ার! এই মেয়ে! কই? কই দেখি,কোন আঙুলে আংটি পরিয়েছে আরাব তোমাকে? দেখি! বের করো? বের করো!

কথা বলতে বলতেই দোয়ার হাত নিয়ে আংটি দেখতে লাগলো জারা। দোয়া কিংকর্তব্যবিমূঢ়! স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলো ও। জারা যেই ওর হাতের আংটি খুলতে গেছে,হুশ ফিরলো ওর। ঝারা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

-এ্ এসব কি শুরু করেছেন আপনি? পাগল হয়ে গেছেন নাকি?

জারা বড়বড় চোখে তাকালো দোয়ার দিকে। আবারো ওর হাতের দিকে হাত বারিয়ে বললো,

-কথা বাড়িও না মেয়ে! আংটিটা আমাকে দিয়ে দাও! আরাবের দেওয়া আংটি আমার আঙ্…

-আরাব আমাকে আংটি পরিয়েছেন আপু। আংটি আমার আঙুলেই থাকবে!

-ইউ…!

জারার রাগ বেড়ে গেছে। চেচিয়ে এগোলো ও দোয়ার দিকে। দোয়া শক্ত হয়ে দাড়িয়ে থেকে বললো,

-দেখুন আপু। প্লিজ ঝামেলা করবেন না! প্লিজ!

-ইউ! আগে আমাকে আংটি টা দাও! কোনো আংটিবদল হয়নি তোমাদের! কোনো বিয়ে হবে না বলছি তো!

-আজব তো! কেনো পাগলামি করছেন? বুঝতে কেনো চাইছেন না আমি…

-এই মেয়ে! তুমি কেউ নও! ইউ আর নো বডি!

জারা ওর হাত চেপে ধরলো। নখ বসে যাওয়ায় ব্যথা পেয়েছে দোয়া। ঠোট কামড়ে দ্বিতীয়বারের মতো হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

-আমি তাহসানুল আরাবের হবু বউ আপু! আমার যোগ্যতা কি,সেটা আপনার কাছে বলার প্রয়োজনবোধ করছি না। আরাব ভালোবাসেন আমাকে। দুই পরিবারের সম্মতিতে আংটিবদল হয়েছে আমাদের জারাপু। শুনেছি আরাবও নাকি আপনাকে আপু বলে ডেকেছিলো তাইনা? তো এইসব পাগলামি বাদ দিয়ে ভাই আর ভাইয়ের হবু বউকে সম্মান করতে শিখুন। আফটার অল,সম্মান করতে শিখলে তবেই সম্মান পাবেন। বিশ্বাস করুন,তৌফিকা আপুর মতোই আপনাকে ভালোবেসে মাথায় তুলে রাখবো ননদীনি!

রাগে জারার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো। ওর চোখের জল দেখে নিমিষেই নুইয়ে গেলো। বেশিবেশি বলে ফেলেছে ভেবে ওর মনে আত্মগ্লানি জমার আগেই কেউ পাশ থেকে ওর হাত আলতোভাবে ধরে বললো,

-আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি জারা। নিজের পাগলামি ভালোলাগাকে ভালোবাসার নামে বাড়াবাড়িটা করাটা এবার থামাও।

আরাবের কন্ঠ শুনে শ্বাস আটকে পাশ ফিরলো দোয়া। হাসিমুখে ওর পাশেই দাড়িয়ে আরাব। মুগ্ধভাবে তাকিয়ে রইলো দোয়া। আরাব ওর দিকে তাকালো। মাঝেমধ্যে রাগের পরিবর্তে আদর আসে বাবার প্রতি ওর। অফিসে পাঠানো নিয়ে। ভাগ্যিস অফিসের কাজে বেরোতে হয়েছিলো ওকে। নইলে জারা আরো ঝামেলা করতো দোয়ার সাথে। এমনটা ভেবে ক্ষুদ্রশ্বাস ফেললো ও। আরেকটু চেপে ধরতেই দোয়া কিঞ্চিত আর্তনাত করে উঠলো। হাত উচিয়ে জারার নখের দাগ স্পষ্ট চোখে পরলো আরাবের। দোয়া মাথা নাড়িয়ে ওকে মানা করলো রিয়্যাক্ট না করার জন্য। আরাব গুরুত্ব দেয়নি। রক্তচক্ষু করে জারার দিকে তাকিয়ে দেখে ও ওভাবেই কাদছে। আরাব চোয়াল শক্ত করে বললো,

-আজ তুমি একটা মেয়ে বলে ছাড় পেয়ে গেলে জারা। দোয়ার যোগ্যতা,আমাদের ভালোবাসা,আংটিবদল বা বিয়ে,এসবের কোনো বিষয়ে তোমার অভিমত চাইনা আমার। দোয়ার এতোটুকো কষ্টের কারন তুমি হয়ো না প্লিজ। এতোদিনের চেনাজানা আমাদের। কোনো বাজে পরিস্থিতি তৈরী হোক,এমনটা চাইনা আমি! গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার রাইট নাও! গেট লস্ট!

আরাবের ধমকে চমকে উঠলো দোয়া। জারার দিকে তাকালো। অনবরত চোখ‌ দিয়ে পানি পরছে ওর। আর সবটাই রাগে। এটাও বুঝলো দোয়া। জারা বললো,

-সুখি হতে দেবোনা আরাব! এই মেয়েকে আমি শান্তিতে থাকতে দেবো না! আমাকে এইভাবে ঠকিয়ে তোমার ভালো হবে না আরাব! এই সড়কছাপ,নিঃস্ব মেয়েটাকে নিয়ে কোনোদিন সুখী হবে না তুমি! কোনোদিনও না!

আঙুল ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে কথাগুলো বললো জারা। রাগ নিয়ে কাদতে কাদতে চলে গেলো ওখান থেকে। চোখ বন্ধ করে শ্বাস ছাড়লো আরাব। কোনো মেয়ের সাথে প্রথমবার এতো বাজে ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে আজ ও। দোয়ার দিকে তাকাতেই ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো ওর। দোয়ার চোখে জল। পাগলের মতো ওর দুগাল ধরে বললো,

-দোয়া? তুমি কাদছো? কি হয়েছে তোমার?কেনো কাদছো? এই দোয়া? তোমাকে না বলেছি কোনোদিনও কাদবে না? হাতে বেশি লেগেছে? নাকি তুমি জারার কথায় কাদছো? হ্যাঁ? ও্ ওর কথাকে কেনো…

আরাবের হাতে হাত রাখলো দোয়া। শান্ত গলায় বললো,

-না আরাব। আমি জারার কথায় কাদছি না। আমি তো খুশিতে কাদছি। সুখে কাদছি। আমার জীবনে আপনি আছেন,সেই সুখে কাদছি। এ যে আনন্দঅশ্রু। সুখের কান্না।

মৃদ্যু হেসে ওর চোখের জল মুছিয়ে দিলো আরাব। বললো,

-এটাও আমার কাছে মন্জুর নয়। খুশিতে হাসবে তুমি। খুশিতে উচ্ছ্বল রবে তুমি। খুশিতে আমাকে জরিয়ে ধরে ভালোবাসি বলবে তুমি। আর তোমার খুশিতে আরো সুখ হিসেবে আদর এটে দেবো আমি।

কান্না লজ্জায় পরিনত হলো দোয়ার। চোখ নামিয়ে নিলো ও। এই লোকটার কথাবার্তা সবসময় ওকে অস্বস্তিতে ফেলতে বাধ্য। আরাব উকি দিয়ে ওর মুখচোখ দেখে বললো,

-ওইযে! আমাকে পাগল করা সেই লাজুক হাসি!

দোয়া সরিয়ে দাড়ালো আরাবের কাছ। চোখ মুছে নাক টেনে আঙুলে ওড়না পেচাতে পেচাতে লাগলো। আরাব বললো,

-থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। জারাকে তো বেশ শুনালে শুনলাম। এটা বলো,ওকে আপু বলার ঘটনা তুমি কি করে জানলে? ওর বিষয়ে তো আমি কিছু বলিনি তোমাকে!

দোয়া ইতস্তত করতে করতে বললো,

-আব্ আমি জানতাম কিছুটা। তৌফিকা আপু আমাকে আগেই বলেছিলো জারা আপুর বিষয়ে। আপনার লাইফের বিরক্তিকর অধ্যায় শিরোনামে। এ্ এখন যে আপনার সাথে যেমন,আমাকেও তো তার সাথে তেমন হতে হবে তাইনা?

আরাব হেসে দিলো। পকেটে দুহাত গুজে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো দোয়ার দিকে। আজ দোয়া যেভাবে জারাকে কথা শুনিয়েছে,এমনটাই চাই ওর। আর কারো জন্য না হোক,তৌফিক ওয়াহিদের জন্য দোয়ার এই রুপটাই পার্ফেক্ট। নিজের বাবার ভবিষ্যত ভেবে কেনো যেনো হাসি পেলো ওর।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here