#আগন্তুকের_আসক্তি
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৮]
_________
সকালে অফিসে এসে বেশ খানিকটা চমকে যান মি.ইব্রাহিম।আফিসটা সাজানো হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ফুল দিয়ে।অপরদিকে অফিসের ম্যানেজার সাহেবের দেখা নেই।সবাই আজ কেমন যেন অদ্ভুত আচরণ করছে।তিনি সব কিছু উপেক্ষা করে নিজের কেবিনে প্রবেশ করেন।তৎক্ষণাৎ বেলুন ফাটানোর শব্দে কেঁপে উঠলেন।অবাক পানে পাশে তাকাতে ইনানে মুখটা দেখে তিনি থ বনে যান।
কেননা গত দেড় বছর যাবৎ ইনান এই অফিসে প্রবেশ করেনি অথচ আজ হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
– শুভ জন্মদিন বাবা!
– জন্মদিন?
মি.ইব্রাহিম বেশ চমকে গেলেন।
– আহ বাবা,কাজের চাপে সব ভুলে গেলে আজ তোমার জন্মদিন।তাই স্বল্প আয়োজন করলাম।আসো আসো কেকটা কাটো।
ইনান তার বাবাকে টেনে টেবিলের সামনে দাঁড় করালো।মেনেজার ইশারা করতে একে একে সব কর্মচারি সেখানে ভিড় জমায়।মি.ইব্রাহিম ইনানের হাত ধরে কেকটা কাটলেন বেশ কিছুক্ষণ সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে সবাই সবার কাজে ফিরে যায়।
– তোমার প্লানিং কী?হঠাৎ আমার অফিসে হানা দিয়েছো কেন।নিশ্চই তোমার মামু পাঠিয়েছে আমার বিরুদ্ধে রেষারেষি করতে।
– আহ বাবা ভুল বুঝছো কেন?আমি রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছি।শুধু শুধু…
– রাজনীতি!তোমরা কী রাজনীতি করতে?তোমরা করতে মাস্তানি।তোমাদের কর্মকান্ডকে কেউ রাজনীতি বলবেনা।তোমার মামু তো তোমায় চামচা হিসেবে রেখেছে যাও চামচা গিরি করো।
– বাবা প্লিজ, আমার এখন এইসব কথা শুনতে ভালো লাগছেনা।আমি আজ থেকে তোমার অফিসে বসবো।তুমি আমায় একটু একটু করে সব কাজ শিখিয়ে দেবে।
– হঠাৎ আমার পরিশ্রমের গড়া এই ব্যবসার পেছনে পড়লে যে?
মি.ইব্রাহিমর কথার মারপ্যাঁচে বিরক্ত হয়ে যায় ইনান।
– বাবা আমাকে একবার সুযোগ দাও।আমি সবটা ঠিক করে দেবো।বদলে যাবো প্লিজ বাবা একটা সুযোগ।
– তোমার কি ধারনা তুমি শান্তিতে বাচঁতে পারবে?আশেপাশে যা শত্রু আছে এবার হামলে পড়বে তোমার উপর, নিজেকে বাচাঁনোর মতো কোন পরিস্থিতি পাবেনা তুমি।আর বর্তমানে সবচেয়ে বড় শত্রু তোমার মামু।তার অপকর্মের সবটাই তুমি যানো।আর তুমি মুখ খোলা মানে তার কত বড় ক্ষতি আশা করি বুঝতে পারছো?
– দেখো বাবা যা হবে ভালোর জন্য হবে।আমি অস্ত্র জমা দিয়েছি এই নয় যে অস্ত্র চালানো ভুলে গেছি।রাজনীতির পথ থেকে বেরিয়ে আসলেও আমি কিন্তু টেকনিক ভুলে যাইনি।বাই দা ওয়ে আর দেরি করো না তুমি দ্রুত বাড়ি ফিরে যাও বাবা।
– বাড়ি ফিরবো! কিন্তু কেন?
– আজ সারাদিন মায়ের সাথে ঘুরবে যেখানে ইচ্ছে যাবে কেউ বাধা দেবে না।দেরি করছো কেন জলদি যাও।
– আমার অনেক কাজ আছে অফিসে অন্যদিন যাবো।
– আহ বাবা মেনেজার আঙ্কেল আমায় সব কাজ বুঝিয়ে দেবেন।তুমি যাও তো দ্রুত বাড়ি যাও।
ইনান দ্রুত তার বাবাকে নিয়ে অফিসের বাইরে চলে যায়।গাড়িতে উঠিয়ে ড্রাইভারকে ইশারা করে বাড়ি উদ্দেশ্য রওনা দেওয়ার জন্য মূহুর্তেই গাড়িটি শান বাজিয়ে ধুলি উড়িয়ে ছুটে চলে তার আপন গন্তব্য।
.
রাত প্রায় বারোটা।অফিসের কাজ বুঝতে বুঝতে বেশ সময় চলে গেছে আজ ইনানের।কিছুক্ষণ পর ইনান লক্ষ্য করে তার পেছনে একটি ট্রাক তাকে ফলো করছে বিষটি বুঝতে পেরে গাড়ির স্প্রিড বাড়িয়ে দেয় সে।মূহুর্তে ট্রাকের স্প্রিডো বেড়ে যায়।ইনানের বুঝতে আর বাকি নেই শত্রুপক্ষ একা পেয়ে তাকে মারতে চেষ্টা চালাচ্ছা ইনান গাড়ির স্প্রিড বাড়িয়ে দিয়ে একটি তিন রাস্তার মুখে চলে গেলো।গাড়ি ডানে ঘুরিয়ে পেছনের ট্রাক ডাইভারকে বোকা বানিয়ে বামে রাস্তায় সরিয়ে নিলো গাড়িটি মূহুর্তেই ফুল স্প্রিডে ইনান ট্রাক ডাইভারের নাগালের বাইরে চলে যায়।
এবারের মতো নিজের জয় জেনে ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি রেখে ফুটে উঠলো তার।
.
গায়ে কাঁথা জড়িতে ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে ইতিকা।ইনান ওয়াশরুম থেকে একবার আড় চোখে তাকালো তার দিকে।ইতিকা যে অভিনয় করছে বুঝতে পেরে বাকা হাসলো সে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুলগুলো ব্রাশ করে আরেকবার আড় চোখে তাকালো ইতিকার দিকে।ইতিকার দুষ্টু বুদ্ধি বুঝতে পেরে ইনান বলে,
– চোর চুরি করছে অথচ পর্দার নিচে তার পা দেখা যাচ্ছে অদ্ভুত!এতে আর চুরির মজা হলো।আপনি ঘুমিয়ে আছেন ইতিবউ কিন্তু আমি আয়নায় আপনার জাগ্রত মুখখানা দেখছি আশ্চর্য এটা কী অতি ভালোবাসার টান?
ইনান কথাটা বলেই ঘুরে তাকালো।ইতিকা কাঁথা আকড়ে ধরে ঠোঁট খিচে হাসছে।ছেলেটা ঝটপট এগিয়ে গিয়ে কাঁথা সহ ইতিকাকে কোলে তুলে নেয়।
– লুকিয়ে লুকিয়ে কী আমায় দেখছেন?
– এই ঘরে তো আপনি ছাড়া আর কেউ নেই।
– আমায় লুকিয়ে দেখার কিছু নেই ইতিবউ।আমাকে সামনা সামনি ভরা অনুভূতি চোখ নিয়ে দেখবেন।
– অন্তরালে লুকিয়ে প্রিয় মানুষটিকে দেখার অনুভূতি আর সামনা সামনি দেখার অনুভূতির মাঝে আকাশ পাতাল তফাত।আড়ালে একদৃষ্টিতে আমি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখবো একটু লাজুক হাসবো।যাকে বলে একপাক্ষিক অনুভূতি।আমাকে আমার মতো অনুভব করতে দিন।
– সামনা সামনি দেখলে কী হবে ইতিবউ?
– যদি বলি আমার সবচেয়ে বেশি সংকোচ আপনার চোখে চোখ রাখা।আপনার চোখের গভীরতা আমি বুঝিনা।আর তাকালেও আমি হারিয়ে যাই নির্নিমিত্ত।
ইনান ইতিকাকে আরেকটু কাছে টেনে আনে।কপালে অধর ছুইয়ে ফিসফিস করে বলে,
– আমার চোখের দিকে তাকান।
– তাকাবো না।
– তাকাতে বলেছি আমি,তাকান।
– না তাকাবো না।
– না তাকালে ফেল দিবো কিন্তু।
– দিলে দিন তবুও আমি তাকাবো না।
– এক থেকে তিন গুনবো তার মধ্যে না তাকালে সত্যি ফেলে দিবো।
– বললাম তো তাকাবো না।
– এক…
– তাকাবো না।
– দুই।
– তাকাবো না।
– তিন।
-তাকাবো ন……
ইতিকা ভেবেছিল ইনান হয়তো তাকে ফেলে দেবে না।কিন্তু তার আশায় এক বালতি জল ঢেলে দিয়েছে ইফতিহার ইনান।সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় ছুড়ে ফেলে ইতিকাকে।আকস্মিক ছুড়ে ফেলায় হতচকিত ইতিকা।কোমড়ে যেন টান পড়েছে ব্যাথায় সঙ্গে সঙ্গে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠে সে।ইনানের সৎবিৎ ফিরতেই ইতিকার পাশে শটান হয়ে শুয়ে পড়ে।
– একদম নাটক করবে না ইতিবউ আমার বিছানা নরম তুলতুলে পড়লে কারো কোমড় ভাঙ্গবে না আমি নিশ্চিত।
– আমি ব্যাথা পেয়েছি।
– একটু ব্যাথা পাওয়াই যায় সমস্যা নাই।তোমাকে না কাল নতুন ক্লাসে ভর্তি করালাম?দশম শ্রেনীতে উঠেছো মন দিয়ে পড়ো।এসএসসি’তে আমি ভালো জিপি চাই।
– পড়বো না আমি আপনি আমায় ব্যাথা দিয়েছেন।
– না পড়লে ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলে দেবো।বুড়ি মেয়ে বয়স তো কম না আঠারো হয়ে গেছে অথচ এই সময় দশমে পড়ছো লজ্জা লাগে না?
– লজ্জা লাগবে কেন?আমি কি ফেল করেছি নাকি?আমি আমার দারিদ্র্যতার কারনে পড়তে পারিনি।যাই হোক সরে যান আমি ঘুমাবো।
– তুমি ঘুমালে আমাকে খাইয়ে দেবে কে?
ইনান কথাটি বলেই উঠে দাঁড়ায়।তোড়জোড় করে ইতিকাকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
__
ভালোবাসা খুনশুটি জড়িয়ে কেটে গেছে প্রায় তিন মাস।ইতিকা ইনানের সম্পর্ক এখন গভীর।ইনান তার বাবার সঙ্গে সামলে যাচ্ছে অফিসের সব কাজ অপরদিকে সুফিয়ার বিয়ের জন্য তোড়জোড় লাগিয়ে দিয়েছে তার বাবা।প্রতিটি বিয়ের পাত্রকে সম্মানের সহিত বিদায় করেছে ‘অলীদ’ যদিও বিষটি সুফিয়া নিজেও জানে না।
– দোস্ত এবার নতুন পাত্র পক্ষ আসছে আমার কী হবে?ইনানকে প্লিজ বল কিছু একটা করতে।
সুফিয়া কান্নারত অবস্থায় ফোন করে বসলো অলীদকে।
– বিয়ে করে ফেল সুফু।ওই ওয়াসিম হা’রামদাজার চেয়েও ভালো ছেলে দেখে আঙ্কেল তোকে বিয়ে দেবে।সুখী হবি আমি জানি।
– একটা থাপ্পড়ে আমি তোর সব দাঁত উপড়ে ফেলবো আর যদি ওয়াসিমের সম্পর্কে কিছু বলতে শুনি।
– ওয়াসিমকে কিছু বললেই রেগে যাচ্ছিস!তার মানে আজকের হা’মলা টা তুই করিয়েছিস আমাদের উপর।
– হা’মলা! কিসের হা’মলা কী বলছিস তুই?
– ওয়াসিমের লোক আজ আমার আর ইনানের উপর এট্রাক করেছে।হাসপাতালে ভর্তি আমরা।কেউ যানে না কাউকে জানাবিনা খবরদার।সবাইকে বলেছি আমরা আজ ঢাকার বাইরে একটু ঘুরতে যাচ্ছি।
– ম..মানে তোদের বেশি ক্ষতি হয়েছে নাকি?কি হয়েছে আমায় বল প্লিজ।
অলীদ ফস করে শ্বাস ছাড়লো।ঘাড় ঘুরিয়ে একবার ইনানের দিকে তাকালো বেচারার হাতে, পায়ে, মুখে ব্যান্ডেজ মোড়ানো।
– বেশি কিছু হয়নি।আমার বাম পা টা ভেঙ্গেছে ইনানের একটা হাত ভেঙ্গেছে আর গাল কেটে গেছে।আমারো সেম অবস্থা।
– এত কিছু হয়ে গেলো আর তুই বলছিস কিছু হয়নি।দাড়া আমি এক্ষুনি আসছি।
– আসছি মানে?কাউকে কিছু জানাবি না খবরদার।
অলীদ কথা শেষ করার আগেই সুফিয়া ফোনটা কেটে দেয়।ইনানের পাশে তাকিয়ে বেশ কয়েকটা ঢোক গিলে বেচারা।ইনান বারন করেছিল কাউকে কিছু না জানাতে আর সুফিয়া নিশ্চিত সবাইকে পাবলিসিটি করে ছাড়বে।ঘুমন্ত ইনান একবার যদি যেনে যায় অলীদ এত বড় মিস্টেক করেছে তবে কি হবে?
.
কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙ্গে ইনানের।ছোট ছোট চোখ করে তাকাতেই সামনে ভেসে উঠে মিসেস নাসরিনের কান্নায় ভেঙ্গে পড়া মুখখানা।আরেকটু ঘুরে তাকাতেই খেয়াল করে ইতিকাকে, মেয়েটি মুখে ওড়না গুজে চুপচাপ কেঁদে যাচ্ছে।অলীদের পাশে বসে আছে সুফিয়া।মি.ইব্রাহিম গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে ছেলের দিকে তাকিয়ে।
ইনান হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
– তোমরা এখানে?
ইনানের প্রশ্নে মিসেস নাসরিম ভীষণ রেগে গেলেন,
– ভেবেছিলি কী?আমাদের মিথ্যা বলে পার পেয়ে যাবি?হাত পায়ের কি বিভৎস অবস্থা।এমন অবস্থা তোর কে করেছে বাপ?বল আমায়।
– বাদ দাও মা এইসব।যা হওয়ার হয়েছে।
– আমার কসম লাগে সত্যিটা বল।আমার ছেলের গায়ে হাত তুলেছে আমি কি করে চুপ থাকবো?আমার কলিজা পুড়ে যাচ্ছে সেটা তুই বুঝবি না।
– শুধু শুধু এইসব শুনে আর লাভ নেই যা হওয়ার হয়েছে।
– চুপ কর তুই।অলীদ বাবা তুমি বলো কে করেছে তোমাদের এই হাল?
অলীদ চমকে উঠলো।ইনানের দিকে আড় চোখে তাকালে তার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে।ছেলেটা কেমন হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
ইনানের চাহনী বুঝতে পেরে ধমকে উঠেন ইব্রাহিম।অবশেষে সবার জোরাজোরিতে মুখ খুললো অলীদ।
– আঙ্কেল আমাদের উপরে হামলা ওয়াসিমের লোক করেছে আর বর্তমানে ওয়াসিমের দল আর বাহরুল ইসলামের দল এক জোট হয়ে কাজ করছে আশা করি বাকিটা আপনারা বুঝতে পারছেন!।
___
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে।রাতের আকাশে আজ তারার দেখা নেই।বিষন্ন মন নিয়ে নিজের ভাইয়ের বাড়িতে প্রবেশ করলেন নাসরিন।চোখের কোনে জমে আছে চিকচিক জল কণা।তাকে দেখে এগিয়ে আসলো রুমু।
– ফুফুমা তুমি? হঠাৎ আমাদের বাড়িতে।
– কেমন আছিস?
– ভালো তুমি কেমন আছো?
– ভালো।ভাবি-ভাইজান কোথায়?
– সবাই দোতলায় চলো আমার সাথে।
– নাহ!ভাইজানকে নিচে আসতে বল আমার কিছু কথা আছে বলে চলে যাবো।
নাসরিনের বিষণ্ণ মুখের কথা শুনে চুপসে যায় রুমু।
– ফুফুমা কি হয়েছে তোমার?
– কিছু না তোর বাবাকে ডাক।
রুমু দাড়ালো না ছুটে চলে যায় তার বাবাকে ডাকার উদ্দেশ্য।
.
– কিরে কেমন আছিস নাসরিন?
– ভালো থাকতে কি তুমি দিয়েছো ভাইজান?তোমার অশান্তির আগুনে পুড়ছিতো আজ বেশ কয়েক বছর।
নাসরিনের সহজ স্বীকারোক্তিতে চোখ তুলে তাকায় বাহরুল ইসলাম।সিগারেটের ধোয়া উড়িয়ে তাড়া দেখিয়ে বলে,
– কী বলতে এসেছিস তাড়াতাড়ি বল।সামনে নির্বাচন আমার হাতে সময় নেই।
– আজ ইনানের উপর হা’মলা না করলেও পারতে।মায়া দয়া বলেও একটা কথা আছে।
– তোর ছেলে যা করেছে সেখানে আমি তো তাকে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছি অন্য কেউ হলে এতক্ষনে কবরে পাঠিয়ে দিতো।
– ভাই তোমার পায়ে ধরতেও রাজি আছি শুধু আমার ছেলের গলার কাঁটা হয়ে থেকো না তুমি।মুক্তি দাও তাকে এবার।
– থাকবো না বন্ধুত্ব করে নেবো আগের মতো, যদি রুমুকে তোর বাড়ির বউ করিস।
– সম্ভব না।
– আমারো সম্ভব না তোর ছেলেকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া।
– তুই না আমার রক্তের ভাই বেইমানি কি করে করিস?
– আচ্ছা একটা অপশন দিচ্ছি আব্বা মারা যাওয়ার আগে তোকে যে জমি আর বাড়িটা দিয়ে গেছে সেটা আমার নামে করে দে।
বাহরুল ইসলামের এমন কথায় বিমূঢ় হয়ে গেলেন নাসরিন।
– ছিহ ভাইজান অতীতের লোভ আপনাকে এখনো ছাড়েনি।সেই হিংসা এখনো কাজ করে আপনার মাঝে?যার দরুনে আব্বার দেওয়া শেষ স্মৃতি টুকু কেড়ে নিতে উঠে পড়ে লেগেছেন।
– ঠিক আছে তাহলে তুই তোর ছেলেকে হারাবি আমার কিছু করার নেই।তাকে আমি সেফটি দিতে পারবো না।নবাবগঞ্জের ২১ বিঘে জমি আর বড়ো বাড়িটা আমার নামে করে দে।তাহলে সব হেরেসমেন্ট থেকে মুক্তি পাবি।
– বেশ দলিল তৈরি করুন আমি প্রস্তুত আছি।
নাসরিন উঠে চলে গেলেন একবার পেছনে ঘুরে তাকালেন না বাহরুল ইসলামের দিকে।যদি তাকাতেন তবে ঠিকি দেখতেন বাহরুল ইসলামের চোখে মুখে শ’য়তানি হাসির ঝলক।
#আগন্তুকের_আসক্তি
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৯]
___________
– তুই এখানে?
রান্না ঘরের কাজ সেরে পেছেনে ঘুরে তাকাতে রুমুকে দেখে হোচঁট খেলেন মিসেস নাসরিন।
– কতদিন হলো তোমাদের দেখিনা ফুফুমা আর ইনান ভাইয়াও আমাদের বাড়িতে আসেনা তাই চলে এসেছি।তাছাড়া ইনান ভাইয়ের বৌ’কে এখনো আমার সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
রুমু থামলো, মিসেস নাসরিন এই প্রসঙ্গে আর কোন প্রশ্ন করলেন না।তিনি রান্না ঘরের বাহানায় নিজেকে ব্যস্ত করে তুললেন।
– ফুফুমা?
– বল।
– সেদিন বাবার সাথে রাগারাগি করলে আর আমাদের বাড়িতে গেলে না।প্রায় চার মাস তোমাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ নেই।কি এমন হয়েছে ফুফুমা যার কারনে তোমরা সবাই দূরে দূরে থাকছো।
– কিছু না রুমু।ইতিকা রুমেই আছে তুই দেখা করে আয়।
রুমু দাঁড়ালো না।হাই হিলের ঠক ঠক শব্দে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।সেদিন বাহরুল ইসলামের সাথে ততর্কবিতর্কের পর কেটে গেছে চারমাস।দুবাড়ির কারো সঙ্গে এখন কারো যোগাযোগ নেই।বাহরুল ইসলামো থেমে গেছে এখন আর ইনানের বিপক্ষে কার্যসিদ্ধি করেন না।অপরদিকে ওয়াসিমো ইতিকার অপেক্ষায় নেই।সে মেতে আছে খালি মাঠে বিপক্ষ দল ছাড়া একাই জয় হাতড়ানোর লোভে।
– কিরে কেমন আছিস ভাইয়া?
দরজার পাশে রুমুর কন্ঠ শুনে চমকে তাকায় ইনান।অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্য তৈরি হচ্ছিলো সে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ইতিকা।
– হঠাৎ তুই এই বাড়িতে?
– কতদিন হলো তোর সাথে আড্ডা দিচ্ছি না তাছাড়া তোর বউকে এখনো দেখিনি।
রুমু কোন ভনিতা ছাড়াই রুমে প্রবেশ করে।ছিমছাম গড়নের মাথায় ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মেয়ের দিকে চোখ বুলায় সে।গায়ের রঙ খুব একটা ফর্সা নয় তার ফোলা ফোলা গাল দুটতেই তাকে কোমলমতী লাগছে।বড়ো বড়ো চোখ নিয়ে মেয়েটি তাকিয়ে আছে অস্থির দৃষ্টিতে।
– ও কে ভাইয়া?ইতিকা?
– হুম ইতিকা ইয়াসমিন।তোর ভাবী।
রুমু এগিয়ে ইতিকার হাতটা টেনে কাছে আনলো।
– বাহ তুমি তো খুব মিষ্টি মেয়ে।এমনি এমনি এক ঢিলে দুই পাখি মারো নি।
রুমুর কথায় চোখ ছোট করে তাকায় ইনান।ইতিকা রুমুর কথার মানে বুঝতে না পেরে মিনমিনিয়ে বলে,
– মানে?
– আহ ঠাট্টা করছিলাম।তুমি তো ঠাট্টাও বুঝোনা।
– তোরা থাক আমি অফিসে গেলাম।ইতিবউ সাবধানে থাকবেন।
ইনান শেষ কথাটি বলে বড়ো বড়ো পা ফেলে চলে যায়।অফিসে আজ তার বড্ড দেরি হয়ে গেছে।
.
নীল সাদা মেঘে ঢেকে থাকা আকাশের দিকে এক চিলতে হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে ইতিকা।হাতে তার বাগান থেকে তুলে আনা গুচ্ছ গোলাপ ফুল।তার এই দৃশ্যকে রঙতুলির মাধ্যেমে ফুটিয়ে তুলছে রুমু।চারিদিকে বাতাসের শনশন ধ্বনি সূয্যিমামা যেন হেসে হেসে রোদের ঝলক দিচ্ছে ইতিকার চোখে মুখে।
– রুমু’পু আর কতক্ষণ এইভাবে থাকবো?সূর্যের রশ্মিতে চোখ জ্বালপোড়া করছে।আমার শরীরের চামড়া জ্বলে যাচ্ছে।
– এই তুমি না গ্রামের মেয়ে?মফস্সল হলে মানা যেত। শুনেছি একদম অজপাড়াগাঁয়ে তোমার বাড়ি।তাহলে ঝড়,বৃষ্টি,রোদ তোমার তো মানিয়ে নেওয়ার কথা।এত ভংচং করছো কেন?চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।
রুমু কথাটি বলে মৃদ্যু হাসলো।সকালে আসার পর থেকে ইতিকাকে নানান বাহানায় হাসি তামাশার ছলে অপমান করছে সে।অবশ্য অপমান গুলো ইতিকার গায়ে লাগলেও রুমুর মতোই নিজেও হেসে উড়িতে দিচ্ছে।সকাল থেকে যে অপমানের ছলনাপূর্ণ অভিনয় শুরু এখন শেষ বিকেল।
– নাও তোমার ছবি শেষ।আসো দেখে যাও।
ইতিকা এগিয়ে গেলো।মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো ছবিটির দিকে।অদ্ভুত রকম সৌন্দর্য ঘিরে আছে ছবিটাতে।
– এত সুন্দর ছবি!আর আমাকেও একদম নিখুঁত লাগছে।সবটাই সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে ছবিতে।
ইতিকা তৃপ্তির হাসি দিয়ে কথাটি বললো।রুমু রঙতুলি,ক্যানভাস গোছানোর কাজে লেগে পড়ে, আনমনে খানিকটার অবজ্ঞা সুরে ইতিকাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
– যানো ইতিকা আমার একটা ফ্রেন্ড ইনান ভাইয়া বলতেই পাগল ছিল এককথায় যাকে বলে ঘোরতর পাগল।আমাদের বাড়িতে যখন যখন ভাইয়া আসতো তখনি সে ছুটে চলে আসতো আর নানান বাহানা খুঁজতো কথা বলার কিন্তু ভাইয়াকে তাকে পাত্তা দিতো না।
– মেয়েটা বুঝি খুব সুন্দরী ছিল?
– অবশ্যই।ইনান ভাইয়ার পাশে দাড়ালে দুজনকে রাজযোটক লাগতো।তবে দেখলে মানুষের রুচি কতটা নিম্নমানের।ইনান ভাই শেষে কী না তোমায় বিয়ে করলো!মাই গড। আর ওয়াসিম ভাই সে নিজেও তোমার জন্য সবার বিরুদ্ধে যু’দ্ধ ঘোষণা করে দিচ্ছে উফফ ভাবা যায় এগুলা।
ইতিকা চুপসে গেলো।তার ভেতরটা ভেঙ্গে চুরে যাচ্ছে।নিজের উপর নিজেরি বারংবার অপরাধ বোধ তৈরি হচ্ছে।
– আসলে আমার কী মনে হয় যানো ইতিকা?ওয়াসিমের উপর রাগ দেখিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইনান তোমায় বিয়ে করেছে।এই যে বউ বর খেলছো এটা জাস্ট একটা নাটক।
সুযোগ সমেত তোমায় ছুড়ে ফেলে দেবে।
– প্রতিশোধ! কিসের প্রতিশোধ?
– তা আমি কি করে যানবো।কিছু একটা তো অতীত আছে তাদের মাঝে।শুনেছি তোমার কারনে নাকি রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছে?আরে ইয়ার যে ছেলে টানা পাচঁ/ছয় বছর এই লাইনে জড়িত সে একটি মেয়ের কারনে সব ছেড়ে দেবে?অদ্ভুত! আর যাই হোক আমার এইসব বিশ্বাস হয় না।সংসার টিকবে কি টিকবে না তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।আমি গেলাম গো সূর্য ডুবে যাচ্ছে।তুমি আবার ইনানকে কিছু বলো না।
– আপনি যান আপু,আল্লাহ হাফেজ।
রুমু যাওয়ার আগে আলতো ভাবে ইতিকাকে জড়িয়ে ধরলো এ যেন কাটা গায়ে মলম মেখে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
রক্তিম আকাশটায় মৃদ্যু বাতাসে গাছের পাতা দুলছে।দুলছে ইতিকার খোলা চুল।হাতে মুঠোয় থাকা লাল গোলাপ গুলো ছুড়ে দেয় আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আকাশের ভাসমান অবস্থা থেকে পতিত হওয়া সেই গোলাপ গুলোর দিকে।আজ ইতিকার মনটাও এমন ভাবে পতিত হয়েছে।অনুভূতিরা থেমে গেছে, সবটা বিষাক্ত বিষাদময় লাগছে।ডুবে যাওয়া রক্তিম সূর্যের আশেপাশে বেশ দলাপাকানো পাখির আনাগোনা দেখা যাচ্ছে।তারা নীড়ে ফিরছে।
ফিরতে হবে ইতিকাকেও তাই চোখের কোনে জমে থাকা জল মুছে নিয়ে নিচে চলে যায়।
__
রাত দশটার পর বাড়ি ফিরে আসে ইনান।ক্লান্ত শরীরটা মূহুর্তেই এলিয়ে দেয় সোফায়।আড় চোখে ইতিকার দিকে তাকালো আজ মেয়েটাকে কেমন চুপচাপ লাগছে।হয়তো পড়ছে তাই।ইনান ক্লজেট থেকে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে দাঁড়ায় ইতিকার পাশে।
– পড়া শেষ হয়নি এখনো?
– না।
– আচ্ছা পড়ুন।
ইনান ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে, কিছুক্ষণ পর রূপসী এসে ডেকে যায় ডিনার টেবিলে যাওয়ার জন্য কিন্তু ইতিকা খাবেনা বলে নাকচ করে দেয়।তাতে বেশ খানিকটা অবাক হয় ইনান।
– আফা আমনে সইন্ধার সময়েও কিছু খাইলেন না।এহনো ভাত খাইবেন না খালাজান হুনলে আমারে ধমকাইয়া আবার পাডাইবো আমনে খাইতে আইয়েন।
– আমি খাবো না।তুমি আম্মাকে বলে দাও।
– শরীর কী খারাফ আমনের?এমন বেরাজ হইয়া গেলেন কেন আইজকা?
– তুমি যাবে?নাকি আমি উঠে যাবো পড়া ছেড়ে।
ইতিকার কথার গম্ভীরতায় সন্দেহের বাতি জ্বলে উঠে ইনানের মনে।ইনান রূপসীকে চলে যাওয়ার জন্য ইশারা করতে সে চলে যায়।ইনান উঠে এসে ইতিকার সামনে দাঁড়ায়।
– খাবে চলুন।পরে পড়লেও চলবে।
– খাবো না আমি খিদে নেই।
– হঠাৎ খিদে কেন?কার সাথে কি খেয়েছে?
– আপনার খাওয়ার হলে আপনি খেয়ে আসুন আমার সাথে জোরাজোরি করবেন না।জোরজবরদস্তির আমার ভালো লাগছে না আর।
ইতিকা যতটা সহজে কথাটা বলে দিয়েছে ঠিক ততটা সহযে কথাটা হজম করতে পারলো না ইনান।ইতিকার দিকে বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আঙুল নাচিতে শান্ত সুরে বলে,
– আমি ছাদে যাচ্ছি ঠিক দশ মিনিট পর ফিরে এসে তোমায় যেন রুমে না দেখি।নিচে যাবে সবার সঙ্গে ডিনার টেবিলে বসবে।
.
শুনশান নিরবতার রাত।নিয়নবাতির আলোয় আলোকিত চারিদিক।দূর থেকে কোথায় যেন স্লো ভলিউমে গান চলছে ইনান ভালোভাবে পরিবেশটা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে অলীদকে ফোন করে,
– কিরে এত রাতে ফোন করেছিস কোন সমস্যা ইনান?
– হুম,ইতিকা কেমন যেন বিহেভ করছে।আমার সন্দেহ লাগছে রুমু আজ এই বাড়িতে এসেছিল নিশ্চই গন্ডগোল পাকিয়েছে।
– নিশ্চই আউল,ফাউল কথা কানে বিষমন্ত্র হিসেবে ঢেলে দিয়েছে। ওয়াসিম আমাদের রাস্তা থেকে সরে গেছে তবে হঠাৎ রুমু পেছনে পড়লো কেন?যাই হোক মাথাটা ঠান্ডা রাখ।
– মাথা আমি ঠান্ডা রাখবো কী করে?যার জন্য আমার সব কিছু সে নিজেই আমার সাথে তিরিক্ষি মেজাজ দেখাচ্ছে।
– তুই মাথা ঠান্ডা রাখ।আর আমি কাল আসবো ভাবীর সাথে কথা বলবো চিন্তা করিস না।
– হুম।গুড নাইট।
ইনান বেশ কিছুক্ষণ পর নিচে গেলো ইতিকাকে এখনো পড়ার টেবিলে দেখে, মাথা যেন হুট করে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে গরম হয়ে গেছে।
– আপনি এখনো এখানে?নিচে যেতে বলেছি আমি।
– আপনার খাওয়ার ইচ্ছা হলে আপনি খান আমার ইচ্ছে নেই।
ইতিকার এমন ঠাট কথায় কিঞ্চিৎ রেগে গেলো ইনান।ঝটকায় ইতিকাকে দাঁড় করিয়ে মুখোমুখি কাছে আনলো।
– চোখ মুখ এমন ফোলা কেন?কেউ কিছু বলেছে ইতিবউ?
ইনানের কন্ঠ কোমল,আদুরে।ইতিকা পালিয়ে বাচঁতে কথা কাটিয়ে নেয়।
– কে আমায় কী বলবে?আমার কিছু হয়নি এমনিতেই মাথা ব্যাথা করছে।
– আবার মিথ্যা?এই চোখ আমি চিনি।এই চোখের ভাষা আমি বুঝি আমার সাথে মিথ্যা বলে লাভ নেই ইতিবউ।
ইতিকা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।সত্যটা আড়াল করতে, নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ঝটকায় সরিয়ে দিলো ইনানে হাত।বাধঁন থেকে মুক্ত হয়ে সরে যেতেই ইনান উলটো তাকে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরলো।দুজনের মাঝে আর মাত্র সামান্য ব্যবধান।ইনান এক হাত পকেটে গুজে অন্য হাত দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দৃষ্টি তার ইতিকার মুখের দিকে।
– দীর্ঘ দেড়মাস আমি আপনাকে নিয়ে গোপনে বহুদর্শিতা করেছি।আপনার হাসি-কান্না, চাওয়া-পাওয়া সবটা বুঝেছি।কখন আপনি কী করতে চান কিংবা আপনার মনে কি চলে তার কিঞ্চিৎ হলেও আমি বুঝে ফেলি।। এরপর আমাদের বিয়ে হলো প্রায় একটা বছর কেটে গেছে।আপনি যে দিন দিন আমার আসক্তি হয়ে উঠেছেন তা কী জানেন আপনি ইতিবউ?আমায় মিথ্যা বলেন কেন?
ইতিকা মাথা নুইয়ে নেয়,তার শরীর কাঁপছে।ইনানের আচরণ শান্ত তবে কেমন যেন অস্বাভাবিক।ইতিকার উত্তর না পেয়ে ইনান ইতিকার মাথায় হাত রাখলো চুল গুলোতে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বলে,
– আমার চোখে নিজেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন,কি ভেবেছিলেন আমি বুঝিনা?আপনাকে পাই না পাই সেই বিচারবিবেচনা পরে হবে।কিন্তু আপনাকে যে আমার লাগবে, যে করে হোক লাগবে মানে লাগবেই।তা আমি বুঝেছি তখনি যখন আপনি আমায় ছেড়ে এই বাড়িতে পড়ে ছিলেন।চট্রগ্রাম থেকে ফেরার পর আপনাকে ফ্লাটে না পেয়ে আমার ইচ্ছে করছিল সব কিছু ভেঙ্গেচুরে দিতে।চট্রগ্রাম থেকে আমি যে কতটা আকুলতা নিয়ে ফিরে এসেছি সেটা একমাত্র অলীদ যানে।তারপর সব ভুলে আপনার কথা মত আমি এই বাড়িতে ফিরে আসি।কিন্তু রাজনীতি ছাড়তে পারিনি।তারপর আবারো চলে গেলেন আর গেলেনো যখন ওয়াসিমের হাত ধরে যাওয়া কি খুব প্রয়োজন ছিল ইতিবউ?
ইনান কথাটি বলে খামছে ধরে ইতিকার চুল।ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে সে।ছয়/সাত মাস আগের কথা কেনই বা তুলছে ইনান।আর ওয়াসিমের সাথে যাওয়ার জন্য ইনান তাকে বিশেষ ভাবে কিচ্ছু বলেনি।কেনই বা বলেনি সেটা নিয়েও ভয় ছিল ইতিকার মনে।কিন্তু আজ হঠাৎ ইনানের এমন আচরণে ঘবড়ে গেছে ইতিকা।
– বিশ্বাস করেন ইতিবউ যাস্ট একবার আপনাকে যদি খুঁজে পেতাম কি কি করবো সব ভেবে রেখেছিলাম।আপনাকে নিয়ে আমি দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্লানিং করেছি গোপনে।দীর্ঘ পাচঁদিন পাগলের মতো খুঁজেছি কিন্তু পেলাম না।তারপর যখন সেদিন রাতে মা আপনার সঙ্গে মোবাইলে বারান্দায় চুপিচুপি কথা বলছিল আমি বুঝে গেলাম সবটা তাদের প্লান।যার সাথে জড়িয়ে আছে সুফিয়া,অলীদ,বাবা। শুধু বোকা হলো ওয়াসিম, ভেবেছিল সে আপনাকে পেয়ে গেছে। আর বেকুব হয়ে ছিলাম আমি,যে কী না পাগলে মতো খুঁজছি আপনাকে।তারপর দিন আমার আরেকটি প্রাপ্তির সূচনা হলো,আমার ইতিবউকে পেয়ে গেলাম।সব ছেড়ে দিলাম।আসলে কী জানো ইতিকা যেখানে বাবা, মা,সুফিয়া,অলীদ তুমি তোমরা সবাই চাও আমি রাজনীতি ছেড়ে দি সেখানে আমার ঘাড়ত্যাড়ামো করা কিঞ্চিৎও মানায় না।
ইতিকা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।সে ভেবেছিল ইনান সত্যিটা জানেনা।দুই’চারটা ঢোক গিয়ে তিরতির করে কাঁপতে থাকা ঠোঁটে বলে,
– এই জন্যই কী আমায় এই সম্পর্কে একটু কিছুও বলেন নি?একটু শাসনো করলেন না।আমি তো ভেবেছিলাম রাতুলের মতো নাক ফাটিয়ে দেবেন।
– যাস্ট মে’রে ফেলতে ইচ্ছে হয়েছিল আমার কিন্তু থেমে ছিলাম চুপ ছিলাম।আর এখনো চুপ আছি।যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে আর যা হবে ভালোর জন্য হবে।
দীর্ঘক্ষণ পর ইতিকা হাসলো।ইনানের গলায় হাত ঝুলিয়ে বলে,
– তবে কে জিতে গেলো মি. ইফতিহার ইনান?শেষ জিত’টা আমারি হলো।
– মানে?
– বিয়ের দিন রাতের কথা মনে নেই আপনার?
ইনান অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।তার দৃষ্টি নত করে ভাবতেই মনে পড়ে গেলো বিয়ের দিন রাতের কথা।যেদিন ছিল দু’জন দুজনের বিপক্ষে।
~~অতীত…
– ভাগ্য বদল শুনেছো কখনো?আজকের পর তোমার ভাগ্য বদল হবে।হয় সূচনা না হয় বিষাক্ত উপসংহার।
ইনান ইতিকাকে ছেড়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।তখনি আয়নায় সেই কিশোরীর প্রতিবিম্ব অগোচর করে ইনান।মেয়েটি হাসছে অদ্ভুত ভঙ্গিতে।ইতিকা হাসতে হাসতে ইনানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– ঘটনা তো উল্টাও হতে পারে, যদি আপনার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়?আমার যা চাই তা কিন্তু আমি নিয়েই ছাড়ি কিন্তু আপনি আমার পূর্ণতাতে বাঁধা দিয়েছেন তাই আপনার প্রাণ বিনাশ করে হলেও আমি আমার পূর্ণতা করে ছাড়বো।
ইতিকার কথায় খিটমিট করে হাসে ইনান।আয়নার দিকে তাকিয়ে ইতিকার চোখে চোখ রেখে কোমড়ে হাত গুজে বলে,
– তবে তাই হোক!
বাস্তবে ফিরে এসে ইনান ইতিকার দু’গালে আলতো করে হাত রাখে।জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে,
– না আমি জয়ী হলাম আর না আপনি জয়ী হলেন।তখন আপনার চাওয়া ছিল ওয়াসিমকে পাওয়া। আমাকে নাশ করে হলেও আপনি ওয়াসিমকে চেয়েছেন।আর আমার চাওয়া ছিল আপনাদের আলাদা করা ব্যস এটুকুই।
‘আলাদা করা’ বাক্যটা শুনেই হতভম্ব ইতিকা।তার শরীর কাঁপছে।হুট করে রুমুর কথা মনে পড়ে গেলো।তখন রুমু বলেছিল ওয়াসিমের উপর জেদ ধরেই তাকে বিয়ে করেছে ইনান।তবে কী ইনানে সব নাটক ছলাকলা।
মূহুর্তেই ইতিকার সব আশা ভালোবাসায় যেন মুষড়ে গেছে।দু’চোখ ভিজে গেছে নোনাজলে।
– একটা প্রশ্ন করবো আপনাকে?
ইতিকার প্রশ্নে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় ইনান।
– আপনি ওয়াসিমের সাথে জেদ ধরে আমায় বিয়ে করেছেন তাই না?আমায় নিয়ে কেন খেলছেন?আমি হতদরিদ্র এতিম বলে?
সহসা মাথা চড়া দিয়ে রাগ উঠেছে ইনানের।রক্তিম চোখে ইতিকার দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে দুগাল চেপে ধরে তার।
– শুনো মেয়ে যা ছিল তা অতীত।বর্তমানে আমি আপনার জন্য সব করছি আপনাকে খুশী করতে নিজের চাওয়া পাওয়া ভুলে যাচ্ছি তারপরেও যদি এমন প্রসঙ্গ উঠে তবে আমার রাগ কোন আসমানে উঠে তা কী বুঝতে পারেন?
– আমি তো আপনার জীবনে নিতান্তই একজন আগন্তুক ব্যাক্তি।
ইতিকা কথাটি বলে আবারো দৃষ্টি নত করে।ইনান তার চিবুক উপরে তুলে নেয়।কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
– সেই আগন্তুক এখন আমার আসক্তি।