ভালোবাসার তৃষ্ণাতে তুমি পর্ব -১৬

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্পা অয়নের বুক থেকে মাথা তুলতেই দেখতে পেলো দরজার সামনে ওপারে দাঁড়িয়ে আছে অধরা। অধরা অগ্নি দৃষ্টি তাকিয়ে আছে অয়ন আর অর্পার দিকে। অধরাকে দেখে অর্পা অয়নের পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন ও অর্পার সাথে সাথে বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিষ্ময় সূচক কন্ঠেস্বর নিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— অধরা তুমি এখানে!

অধরা বাঁকা একটা হাসি ঠোঁটের কোণে এঁকে অয়ন আর অর্পাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আমি না আসলে তো তোমাদের এই নোংরা খেলা সম্পর্কে জানতেই পারতাম না। ছিঃ অয়ন! আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো নিজেকে সুধরে নিবে কিন্তু না। তুমি প্রমান করে দিলে তুমি আসলে কি? সমস্যা নেই এখন তুমি যাই প্রমান করো না কেনো তোমার সমস্ত প্রপার্টি এখন আমার হয়ে গেছে। আর আমার অবর্তমানে এই সব কিছু আমার বাবা মা পাবে। এখন আর তোমাকে দিয়ে আমার কোনো লাভ নেই।

অধরা কথাটা শেষ করতেই অয়ন অধরার দিকে রাগি লুক নিয়ে এগিয়ে যায়। অয়নের এগিয়ে যাওয়াতে অর্পা ভিশন রকম বিচলিত হয়ে পরে। অর্পা অয়নের কাঁধের উপর হাত রেখে অয়নকে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো “অয়ন ঝামেলা করো না। ওকে যেতে দাও”। অয়ন অর্পার কথায় কান না দিয়ে অর্পার হাতটা কাঁধের উপর থেকে সরিয়ে নিয়ে অধরার দিকে এগিয়ে যায়। অধরা একটু ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন অধরার কাছে এসেই অধরার গলা টিপে ধরে। অধরা অয়নের হাত ধরে আছে। অয়ন রাগি কন্ঠে অধরাকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— গিরগিটি তুই। আমার ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে আমাকে পথে বসিয়ে দিলি। তোর থেকে হাজার গুণে আমার অর্পা ভালো। অর্পা আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ না আনলে হয়তো তোর আসল রূপ কখনও আমার চোখেই পরতো না। আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবো।

অয়ন অধরার গলা ধরে আছে শক্ত হাতে। অর্পা অয়নের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। অয়নের দিকে তাকিয়ে অর্পা একটু বিচলিত কন্ঠে বলতে লাগলো

— দেখো অয়ন একটু দেখো। এই রাস্তার মেয়েটাকে নিজের জীবনে জরিয়েছো তো! দেখো এ সুযোগ বুঝে তোমায় কি থেকে কি করে দিলো। আজ যদি আমি তোমার নামে মিথ্যা অভিযোগ না করতাম তবে এই সত্যি সর্বদা তোমার চোখের আড়াল হয়ে থাকতো। আমি আগেই বলেছিলাম এই অধরা একটা নর্দমার কীট। ওকে দয়া করা যায়। কিন্তু ভালোবাসা নয়। আজ তোমার সরলতার সুযোগ নিয়ে এই মেয়ে তোমাকে ঠকিয়ে দিলো। আমি তখন বুঝতে পারিনি এই মেয়ে আমার মিথ্যে শোনার‌ পর কেনো আমার পক্ষে পুলিশ রিপোর্ট লেখিয়েছে। আজ বুঝতে পারলাম গিরগিটি তার রং দেখিয়েছে। ছেড়ে দাও ওকে অয়ন। নর্দমার কীট মেরে নিজের হাত নোংরা করার প্রয়োজন নেই।

অর্পা অয়নের হাত ধরে অধরার থেকে আলাদা করতে চেষ্টা করছে। যা অর্পা খুব ভালোই করতে পারে। অয়ন অধরাকে ছেড়ে দিতেই অধরা দৌড়ে অর্পার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা চলে যেতেই‌ অয়ন অর্পার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— তুমি আমাদের মাঝে এলে কেনো? আমি ওকে খুন করে ফেলতাম।

— অয়ন আমি চাই না তোমাকে আবার হারিয়ে ফেলতে। তাই ওকে যেতে দিয়েছি। প্লিজ তুমি আমাকে………

অর্পার সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই অয়ন ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে ধপাস করে বসে পরলো। অয়ন মাটিতে বসে পরে মাথাটা নিচু করে কান্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো

— এখন আমার কাছে কিছুই রইলো না। আমি শুন্য হয়ে গেছি একদম।

অয়নের কথার মানে অর্পা বেশ বুঝতে পারছে। অয়ন তার সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে। তাই সে ভেঙ্গে পরেছে। অর্পা অয়নের কাঁধের উপর হাত রেখে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো

— অয়ন আমার কোনো প্রপার্টি চাই না। আমার তোমায় লাগবে শুধু। আমি তোমায় মিথ্যে বলে চাকরিতে জয়েন করেছি। আমি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে না। আর আমার বাবা মা কেউ মারা যায় নি। আমি তোমার একটু সহানুভূতি পাবার জন্য মিথ্যে বলেছি। আমার বাবা লন্ডনে থাকে। ইনফ্যক্ট আমিও লন্ডনে থাকতাম। আমি দেশে আসি আমার আন্টির বাড়িতে। ওখানে এসে একদিন বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা পার্কে যাই। ওখানেই তোমায় প্রথম দেখেছি আমি। প্রথম দেখায় আমার অনেক ভালো লাগে তোমায়। সেখান থেকে আজ এই পর্যন্ত। আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা বোঝার পরে জানতে পারি তুমি বিবাহিত। তাই হাজার রকম চেষ্টা করে‌ তোমাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করিয়েছি। অয়ন তুমি এই বিজনেস নিয়ে ভেবো না। এরকম দশটা বিজনেস আবার তুমি দাঁড় করাতে পারবে। শুধু মাত্র আমার হয়ে‌ যাও তুমি। প্লিজ!

— এই পাগলি আমি তো তোমারই ছিলাম আর‌ আছি। খুব ভালোবাসি গো তোমায়।

অয়নের কথা শেষ হতেই অর্পার ফোনে কল চলে এলো। অর্পা চোখের জল মুছে অয়নের সামনে‌ থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন অর্পার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন বোঝার চেষ্টা করছে কে কল করেছে? তার জন্য অর্পা আমার পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালো? অর্পা অয়নের সামনে থেকে চলে যেতে নিতেই অয়ন অর্পার হাত ধরে ফেললো। অর্পা অয়নের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে মৃদু একটা হাসি দিয়ে বলল

— অয়ন একটা ইমপ্রটেন্ট কল এসেছে। আমি দুমিনিটে…..!

— আমির থেকেও বেশি ইমপ্রটেন্ট?

অয়ন প্রশ্ন বিদ্ধ কন্ঠে অর্পার উদ্দেশ্য প্রশ্ঞ ছুড়ে দিলো। অর্পা একটু দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে‌ যায় কি করবে সে! তা ভাবতে ভাবতে। অয়নের ছলছল চোখ জোড়া অর্পাকে বিশ্বাস করাতে বাধ্য করলো অয়ন আজ ভিশন একা। তার আজ তাকে প্রয়োজন। অর্পা কলটা পিক করে অয়নের পাশে বসে পরলো। অয়নের কাঁধের উপর মাথা রেখে অর্পা বলে উঠলো

— হুম অভ্র বলো।

অয়ন অর্পার মুখে অভ্রর নাম শুনতেই ভিশন অবাক হয়ে যায়। অয়ন ভাবতে লাগলো অর্পার সাথে অভ্রর কি সম্পর্ক? অর্পা কিছু সময় নিরব থেকে অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলতে‌ লাগলো

— ওয়েট এক মিনিট। আমি অয়নের সাথে একটু কথা বলে নেই।

অর্পা অয়নের দিকে তাকিয়ে একটু ভারী কন্ঠস্বর নিয়ে বলল

— অয়ন অধরার সময় চলে এসেছে। অভ্রর মাধ্যমে তুমি অধরার উপর প্রতিশোধ নিতে পারো। অয়ন অভ্র ট্রাক নিয়ে অপেক্ষা করছে। অধরার গাড়ি অভ্রর টার্গেট। বলো অয়ন অধরাকে‌ কি শেষ করে দিবো? আমাদের রাস্তা থেকে চিরদিনের জন্য অধরা নামটা মুছে ফেলবো? বলো অয়ন! প্লিজ

অর্পার কথা শুনে অয়ন ভিশন ঘাবড়ে যায়। “অধরাকে মেরে ফেলার প্লান হয়ে গেছে! এখন আমি কি জবাব দিবো”? আপন মনে ভাবছে অয়ন। অয়নকে চিহ্নিত দেখে অর্পা আবারও অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— কি হলো অয়ন? অধরার জন্য বুকটা কেঁপে উঠছে তোমার? কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে বুঝি? এতো চিহ্নিত দেখাচ্ছে কেনো তোমায়?

— উহু। অর্পা আমি ভাবছি কি করে মারবে? পেছন থেকে ধাক্কা দিলে তারাতাড়ি মরবে? নাকি সামনে থেকে? উহু অর্ডার দিয়ে দাও মাঝ বরাবর ট্রাক চালিয়ে দিতে। একটা ধাক্কা অধরা নিঃশেষ।

অয়নের হাস্যজ্বল চেহারাটা দেখে অর্পার পুরো পুরি বিশ্বাস হয়ে গেলো যে অয়নের মনের মধ্যে অধরার জায়গাটা কোথায়। অর্পা অয়নের কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে দিলো

— অভ্র ফিরে আসো। অধরাকে মারতে হবে না। আমি আমার অয়নকে পেয়ে গেছি। ব্যাক করো।

— মানে? কি সব বলছো? অর্পা অয়নকে এতো তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করো না। ও একটা মারাত্মক অভিনেতা। ওর ফাঁদে পা দিও না। ও তোমাকে শেষ করবে। অর্পা আমার কথা শোনো….!

অভ্রর কথার বিপরীতে অর্পা রেগে আগুন হয়ে যায়। চিৎকার করে অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— এই কুত্তা** তোর সাহস হয় কি করে অয়নকে নিয়ে বাজে কথা বলার? তোকে‌ এই জন্য টাকা দেই না আমি। যা বলেছি তাই কর।

রাগে গজগজ করতে করতে অর্পা কলটা কেটে দিলো। অয়ন চাতক পাখির মতো অর্পার দিকে তাকিয়ে আছে। অর্পাকে রেগে আগুন হয়ে থাকতে দেখে অয়ন মৃদু কন্ঠে অর্পাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অর্পা রেগে যাচ্ছো কেনো? অভ্র ঠিক বলেছে আমার কথা তোমার শোনা উচিৎ নয়। তুমি অধরাকে শেষ করে দাও। প্লিজ!

অয়নের কথা শেষ হতেই অর্পা নিজেকে শান্ত করে অয়নকে জড়িয়ে ধরে বলল

— উহু। আর কল করতে হবে না। অধরার নামটা মনে থেকে মুছে ফেলো। আমাকে আপন করে নাও। আমি আর পারছি না তোমার থেকে দূরে থাকতে প্লিজ অয়ন!

অয়ন অর্পার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। এতোক্ষণে অয়ন একটা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারলো।

* অর্পার সাথে আরো কিছু সময় কাটানোর পরে অয়ন অর্পার বাড়ি থেকে চলে আসতে চাইলো। অর্পা অনেক বার অয়নকে আটকাতে চেয়েছে। কিন্তু অয়ন অর্পাকে কোনো মতে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন অর্পার বাড়ি থেকে সোজা চলে আসে রাজের বাড়িতে। রাজের বাড়িতে এসে অয়ন নিজের রুমে ঢুকতেই চমকে যায়। অয়ন দেখতে পায় তার আসার পূর্বে তার রুমে ……………………….

#চলবে……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here