#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১৭
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অয়ন দেখতে পায় তার আসার পূর্বে তার রুমে চলে এসেছে অধরা। অধরাকে দেখে অয়ন অবাক হলো না। কারন অয়ন নিজেই অধরাকে এখানে আসতে বলেছে। অয়ন রুমে আসতেই অধরা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন অধরার দিকে এগিয়ে আসতেই অধরা দৌড়ে এসে অয়নকে জড়িয়ে ধরলো। ভিশন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে অধরা। অয়ন অধরার কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলছে
— অয়ন আমি তোমাকে চিনতে ভুল করেছি। আমায় তুমি ক্ষমা করে দাও। প্লিজ!
— আরে পাগলি বউ আমার আমি নিজেকে এমন ভাবেই প্রেজেন্ট করেছি যে যেকেউ আমাকে সন্দেহ করবে এটা স্বাভাবিক। আর আমিও অনেক ভূল করেছি। তার সাজা হিসেবে কিছুটা হলেও কষ্ট আমার পাওয়া উচিত।
— হুম। যে নিজের ভূল বুঝতে পারে তাকে ক্ষমা করা সম্ভব কিন্তু ২য় বার যদি সেই ভূলের সুচনা হয় তবে তা ক্ষমার অযোগ্য হয়ে পরে।
— জ্বি। তো ম্যাম বলুন ২য়বার কি ভূল করলাম?
— এই যে এখন নিজেও অভিনয় করে যাচ্ছো আর আমায় ও করতে বাধ্য করছো।
— হুম। আসলে আমি এর পিছনের আসল সত্যিটা জানতে চাই। যেটা আমি জানতে পেরেছি।
— তা হলে এখন তো অভিনয়টা বন্ধ করো। আমার কষ্ট হয় তো। ঐ অর্পার পাশে আমি তোমাকে কি করে দেখবো? ওকে তোমার পাশে আমরা সহ্য হয় না। প্লিজ অয়ন স্টপ ইট।
— জ্বি বন্ধ করবো। কাল কেই আসল পর্দা ফাঁস করে দিবো।
— হুম।
অয়ন অধরাকে বুকের সাথে একদম লেপ্টে রেখেছে। অধরা পরম আবেশে নিজের স্বামীর বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। দুজন প্রশান্তি নিচ্ছে। তাদের ভালোবাসা বিনিময়ের মধ্যে হঠাৎ করে কেউ একজন খানেক টা শব্দ করে গলা ছেড়ে কাশি দিয়ে বলল
— রোমান্টিক সিচিউসেনে এসে পরলাম। জনাব ও জনাবা বাকিটা বাড়ি ফিরে করিয়েন।
রাজের কন্ঠেস্বর শুনতেই অয়ন অধরাকে নিজের বাহুর মধ্যে থেকে আলগা করে দিলো। অধরা নিজেকে ঠিক করে নিতেই অয়ন রাজকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ধূর তোর আর আশার সময় হলো না। মুডটাই নষ্ট করে দিলি।
— হ্যাঁ, এটাই আমার সমস্যা আমি পরিস্থিতি বুঝতে পারি না।
— হুম। আচ্ছা রাজ শোন আমি অধরাকে বাড়িতে ছেড়ে আসি। তুই এক কাজ কর আমার নেক্সট প্লানটা সাকসেস করার জন্য একটা প্রপার প্লান রেডি কর।
কথাটা বলতেই অয়ন অধরার হাত নিজের হাতে নিতে চলতে শুরু করলো। রাজ অয়নকে উদ্দেশ্য করে একটু বিচলিত কন্ঠে বলল
— অয়ন আমি কি তোদের সাথে আসবো?
— উহু। আমি আর অধরা যাবো। তুই বড়িতে থাক।
— যদি কোনো বিপদ আসে? তখন কি হবে?
— যে খেলা আমি খেলে এসেছি তারপর রং কোনো বিপদ আসার কথা নয়।
— তবুও ভাই সাবধানে থাকিস।
— হুম।
* অয়ন অধরাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। গাড়িতে উঠে বসতেই অধরা অয়নের কাঁধের উপর মাথাটা রাখলো। অয়ন অধরার কপালে চুমু খেতে খেতে অধরাকে উদ্দেশ্য বলল
— কি হয়েছে? মনের মধ্যে কি অসস্থি লাগছে? ভয় পাচ্ছো! সত্যি করে বলো তো আমায়।
— হুম। অয়ন সব ঠিক হবে তো? কোনো বিপদ হবে না তো তোমার? অয়ন আমার ভয় হচ্ছে খুব।
— আরে ধূর তোমার অয়নের কিছু হবে না। আমি সব সামলে নিবো। একদম টেনশন ফ্রি থাকো।
— হুম, তাই যেনো হয়। প্লিজ আমাকে ছেড়ে চলে যেও না প্লিজ!
— ইমমম, যাবার হলে ফিরতাম না। সারাজীবন তোমার সাথেই থাকবো।
— হুম।
অয়ন গাড়ি করে অধরাকে নিয়ে আসে অয়নের বাড়ির সামনে। অয়নের গাড়ি বাড়ির গেটের সামনে আসতেই অয়ন অধরাকে বলল
— অধরা আমি ভিতরে যাবো না। তুমি এখানেই নেমে পরো।
— কেনো? এতো দিন পরে বাড়ি এসেও তুমি বাড়ির সামনে থেকেই চলে যাবে? মা বাবার সাথে একটু কথা বলে যাও।
— উহু। কাল কথা বলবো। আজ আমি আসছি।
— অয়ন!
— জ্বি। প্লিজ আমাকে জোর করো না।
— হুম।
অধরা মুখ ভারী করে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন অধরার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বিদায় নিয়ে গড়ি স্টার্ট করলো। অয়ন গাড়ি নিয়ে চলে যেতেই অধরা বাড়ি চলে যায়। “অয়ন রাস্তা দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে আর অধরার কথা ভাবছে। এই মেয়েটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি। আর না। এখন থেকে পাগলের মতো ভালোবাসা দিয়ে ওকে সব কিছু ভুলিয়ে দিবো। একটা ভালো আদর্শ স্বামী হবার চেষ্টা করবো”। অয়ন কথা গুলো আপন মনে বলছে আর গাড়ি ড্রাইভ করছে।
— হ্যালো অর্পা।
— হুম। এতো রাতে হঠাৎ কল করলে কেনো? আমার ঘুমের বারোটা না বাজালে তোমার শান্তি হয় না?
— তোমার ঘুম এখন পুরো উড়িয়ে দেয়ার জন্য কল করেছি। আমি এখন তা বলবো তা শোনার পর তোমার চোখে আর ঘুম আসবে না।
অভ্রর কন্ঠেস্বর আর রহস্য জনক হাসি অর্পার মনের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করলো। অজানা একটা ভয় কাজ করতে লাগলো অর্পার মনের মধ্যে। অর্পা বিছানা থেকে উঠে বসলো। বিষ্ময় সূচক কন্ঠেস্বর নিয়ে জিজ্ঞাস করলো অভ্রকে
— কি হয়েছে? কি বলবে তুমি? সব ঠিক আছে তো?
— উহু কিছুই ঠিক নাই। আগে বলো অয়ন কি তোমার কাছে আছে?
— না তো। ওতো বাড়ি চলে গেছে।
— কার বাড়ি?
— সেটা তো জানি না। মনে হয় রাজের বাড়ি। কিন্তু কেনো কি হয়েছে? অয়ন ঠিক আছে তো? এই অভ্র হেঁয়ালি না করে পরিস্কার করে বল আমায়। অয়নের কিছু হয়েছে কি? আমার টেনশন বাড়াস না। বল
— অয়নের তো অনেক কিছু হয়েছে। বলছি আমি।
* অভ্র অয়নের সব কিছু তথ্য অর্পাকে বলে দিলো। অয়ন রাজের বাড়িতে অধরার সাথে সময় কাটিয়ে অধরাকে নিজের বাড়ি উবদি ছেড়ে আসা। ও অর্পার সাথে গেম খেলার বিষয়ে সব কথা অর্পাকে বলে দিলো। অর্পা পাথরের মতো থ মেরে গিয়ে অভ্রর কথা গুলো শুনতে লাগলো। চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে অর্পার। “অয়ন এতো বড় গেম আমার সাথে খেলতে পরলো”? কথাটা ভাবতেই অর্পার শরীর শিউরে উঠছে। অর্পা অভ্রকে উদ্দেশ্য করে প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলছে
— অয়ন এখন কোথায়?
— কোথায় আবার? নিশ্চয়ই অধরাকে বাড়ি দিয়ে আবার রাজের বাড়ি আসছে।
— তুই কোথায় আছিস?
— আমি তো তোমার বাড়ির সামনেই আছি। ভাবলাম খবরটা দিয়ে বাড়ি চলে যাই।
— ওয়েট। বাড়ি যাওয়া লাগবে না তোর। আমার কথা মন দিয়ে শোন….!
অর্পা অভ্রকে কিছু কথা বলল। অভ্র একটা রাক্ষুসে হাসি মুখে টেনে অর্পার কথার বিপরীতে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। অর্পা কলটা কেটে দিয়ে নিজের কাপড় চেঞ্জ করে নিলো। অর্পা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের অবয়কের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো
— যে খেলা তুই শুরু করেছিস। তার সমাপ্তি আমি নিজে করবো মিস্টার অয়ন চৌধুরী। তুই যখন আমার না। তখন অন্য কারোর না।
* কথাটা শেষ করতেই অর্পা নিজের রুমে থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন আপন মনে গাড়ি ড্রাইভ করছে কিছু সময় যেতেই অয়নের চোখ পরলো একটা ট্রাক তার গাড়ির সামনের দিকে দ্রুত গতিতে তেড়ে আসছে। অয়ন বুঝতে পারছে না উল্টো লেনে এতো দ্রুত গতিতে কোনো গাড়ি কেনো আসছে? অয়ন হর্ণ বাজিয়ে চলেছে কিন্তু ট্রাকটা তার গতি রোধ করছে না। অয়ন নিজেকে সেফ করতে নিজের গাড়িটা দ্রুত গতিতে সাইড করতে নিতে চেষ্টা করলো। কিন্তু আফসোস অয়ন নিজেকে শেষ রক্ষা করতে পারলো না। ট্রাকটা অয়নের গাড়ির সামনের দিকে সজোরে এসে ধাক্কা দিলো। অয়ন গাড়ি নিয়ে রাস্তার পাশে একটা ডোবায় গিয়ে পরলো। অয়নের বডি গাড়ির মধ্যে। অয়নের মাথায় প্রচন্ড আঘাত লাগে। আঘাতের জন্য অয়ন নিজের সেন্স হারিয়ে ফেলে। অয়নের এক্সিডেন্ট হতেই অর্পার নিজের গাড়ি নিয়ে চলে আসে। অর্পা গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পেলো অয়নের গাড়ি পরে আছে ডোবায়। অর্পা অয়নের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো অয়ন…………………….
#চলবে……………………
(