#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_২৩
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
______
অপ্রত্যাশিত দু’জনেই এক বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হলো। যা কখনো ভাবেইনি তাদের সাথে এমনটা হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত জায়গায় অনাচ্ছাদিত তাদের সাথে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনা ভুলে যেতে চায় অভ্র। আজকের রাত তার কাছে কাল রাত্রির মতো বিষাদ লাগছে। গ্রামের মধ্যে ছোট একটা মাটির ঘরে জানালা গেষে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। জানালা দিয়ে বাহিরে দূর আকাশের গোলাকার বৃত্তর মতো গোল চাঁদটার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভ্র। ঘরটার মধ্যে জ্যোৎস্না রাতের আলো পস্ফুটিত হচ্ছে। অন্ধকার ঘরটা জ্যোৎস্নার আলোয় জ্বলজ্বল করছে। মাটিতে একটা পাটি বিছানো পাটির উপরে একটা চাদর মুড়ানো। চাঁদরের উপর নেশাগ্রস্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে বর্ষা।
জানালার সামনে একটা কুকুর অভ্রকে দেখে ঘেউঘেউ করা শুরু করেছে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিল অভ্র। কুকুরের ডাকে ঘোর কেটে যায় তার। দৃষ্টি নিচে নামিয়ে কুকুরটার দিকে একনজর তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে মাটিতে শুয়ে থাকা মেয়েটা অর্থাৎ বর্ষার দিকে তাকালো। জানালার পাশ থেকে সরে আসল।
বর্ষার মাথার কাছে বসে চুলগুলো তে আলতো ভাবে বিলি কেটে দিতে লাগল। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বর্ষার ঘুমন্ত মুখটার দিকে, আনমনে বলে উঠল,
‘ তোকে আমি চেয়েছি খুব করে চেয়েছি। নিজের থেকেও বেশি আমি তোকে চেয়েছি। কিন্তু এভাবে নয়। আজকের রাতের কথা হয়তো তোর মনেও থাকবে না। ভোরের আলো পস্ফরিত হওয়ার আগেই তুই সব ভুলে যাবি৷ আমিও চাই না তোর কিছু মনে থাকুক কেননা, আমি চাই না এমন একটা ভয়ংকর রাতে গা হিমহিম করা দূর্ঘটনার কথা তোর মনে থাকুক। খুব করে চাই যাতে তুই ভুলে যাস৷ যদি মনে রাখিস তাহলে হয়তো কখনো আমাকে ক্ষমা করতে পারবি না৷ কিন্তু বিশ্বাস করিস আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি। নিজের কথা ভেবে একদম করিনি। আমি যদি এই পদক্ষেপ না নিতাম তাহলে তোর যে বড় ক্ষতি হয়ে যেতো। না জানি গ্রামবাসীরা কি করতো? তবে কথা দিচ্ছি তোকে আজ আমি, আজ থেকে তুই সম্পূর্ণ আমার রেসপনসেবলিটি। তোর অগোচরে তোকে আগলে রাখার দায়িত্ব আজ থেকে আমার। তুই হয়তো ভুলে যাবি নেশা কেটে গেলে কিন্তু আমি? আমি কিভাবে ভুলবো? বলতে পারিস? উঁহু, বলতে পারবি না। কারণ আমি নিজেই ভুলেও ভুলতে চাই না। আজকের রাতটাকে স্মৃতির পাতায় খুব আদর ভালোবাসা ও যত্ন সহকারে তুলে রাখবো। লিখে রাখবো ইতিহাসের পাতায়। যখনই ইচ্ছে হবে পাতা উল্টিয়ে পড়ে নেবো। তবুও ভুলতে দেবো না নিজেকে। তোকে আবদ্ধ করে রাখবো আমার স্মৃতি চারণে।
*
অফিসের কাজে হিমশিম খাচ্ছে অভ্র৷ লাইফে প্রথম আজ বাবা ও চাচাদের সাথে অফিসে এসেছে। সব সময়ই সে খোঁটা দিয়ে বলতো,’ তোমরা সারাদিন তো বসে বসে কাজ করো। তাতে আবার এত কিসের কষ্ট হুহহ? ‘
অভ্রর এমন কথায় বিরক্ত হয়ে তাকে আজ অফিসের কঠিন কঠিন কাজ দেওয়া হয়েছে। সে সব দিক সামলাতে সামলাতে আজ বেহাল অবস্থা অভ্রর। এদিকে সে খেয়াল করেছিল বর্ষার ফোনের লোকেশন কোণ্থেকে কোণ্থায় গিয়েছিল। ভেবেছিল বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছে। তাই সে ওতো গুরুত্ব দেয়নি। অফিসের কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে নেয়।
রাত বাজে ৯টা অথচ বর্ষা এখনো বাড়ি ফিরেনি। বাড়িতে সকলে টেনশনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। বর্ষার মা অফিসে তার স্বামী বর্ষার বাবা-র কাছে কল দেন। তাকে বিস্তারিত জানালে তারাহুরো করে অফিস থেকে বাড়িতে ছুটে আসে তারা সকলে সাথে অভ্র ও আসে।
বাড়িতে এসে অভ্র রিয়ার সাথে কথা বলে। রিয়া কান্নার জন্য সঠিক ভাবে কথাও বলতে পারছিল না। অভ্র জোরেসোরে ধমক দিলে অভ্রকে সব কিছু বলে দেয় রিয়া। অভ্র ছুটে বাড়ি থেকে বের হয়। বের হওয়ার পূর্বে সকলকে বলে যায়। তারা জেনো কেউ টেনশন না করে যেখান থেকেই হোক বর্ষাকে খুঁজে নিয়ে আসবেই৷
বাইক নিয়ে বের হয়। বর্ষার ফোনের লাস্ট লোকেশন চেক করে সেদিকেই যাচ্ছে।
_______
কানের কাছে ভো ভো করছে মশা ও মাছি। আশ পাশ থেকে কুকুর ও শিয়ালের ডাক ভেসে আসছে। মশার ভোভো ও শিয়ালের ডাকে ঘুম ভেঙে যায় বর্ষার। হাত দিয়ে চোখ ঢলতে ঢলতে উঠে বসে। চারপাশে তাকিয়ে দেখল শুধু অন্ধকার। তবে আকাশের চাঁদের আলোয় কিছুটা আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে।
বর্ষা চোখ বুলিয়ে সামনে তাকাতে দেখল কয়েকটা শেয়াল ডাকতে ডাকতে এদিকেই আসছে। বর্ষা ভয়ে ধান ক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে পরে। হাত পা লাগাতার কাঁপছে। একবার শেয়ালের নজরে পরলে সকলে মিলে আজ ওকে দিয়েই ডিনার সারবে। কোন আক্কেলে যে ঘুমিয়েছিল? সব কিছু ওই চিঠিবাজের জন্য ইচ্ছে করছে নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিড়ে ফেলতে। শেয়ালের ডাক বন্ধ হয়ে গেলে বর্ষা ধান ক্ষেতের মধ্য থেকে বের হয়। সেই সকালে খেয়েছিল আর সারাদিন কিছুই খাওয়া হয়নি। খিদে পেটের মধ্যে ইঁদুর ছুঁইছুঁই করছে।
রাস্তায় তাকিয়ে আছে। কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না। কোন দিক দিয়ে এসেছিল সেটাও ভুলে গেছে। এদিকে প্রচুর পানি পিপাসা লেগেছে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। বর্ষা ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে হাঁটতে লাগল। কিছুদূর সামনে যেতেই দেখল একটা লোক বসে আছে সাথে একটা পানির বোতল।
বর্ষা কোনো কিছু না ভেবেই ছুটে গেলো মধ্য বয়স্ক লোকটার কাছে। অচেনা লোকটার সামনে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বলল,’ আমার অনেক পানি তৃষ্ণা পেয়েছে। আঙ্কেল পানির বোতল টা আমাকে একটু দিবেন। ‘
লোকটা মাথা তুলে নেশালো দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,’ পানি খাবে? ‘
বর্ষা মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে মুখ দিয়ে বলল,’ হুম ‘
লোকটা ঠোঁট বাঁকা করে হাসল, বোতলটা বর্ষার দিকে বাড়িয়ে দিলো। বর্ষা হাত বাড়িয়ে বোতলটা নিয়ে খেতে শুরু করল। লোকটা হাত উপরে তুলে হাসতে হাসতে চলে গেলো। বর্ষা একঢোক খেতেই তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। সে সাথে সাথে মাটিতে বসে পরল।
তবুও বর্ষা একঢোক একঢোক করে পুরোটা বোতলের পানি পেটে চালান দিয়ে দিলো। মিনিটের মধ্যেই বর্ষার নেশা হয়ে যায়। রাস্তায় বসে বসে মুরগির বাচ্চার মতো ঝিমাচ্ছে তখনই বাইক এসে থামলো বর্ষার সামনে৷ বাইক থেকে নেমে ছুটে আসছে অভ্র, বর্ষাকে ধরে দাঁড় করিয়ে পাগলের মতো গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করছে, ‘ কি হয়েছে? এখানে কিভাবে এলো? বাংলা মদ কোণ্থেকে পেয়েছিস? ‘
বর্ষা অভ্রর মুখের দিকে নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘ এই অভ্র তুমি আমাকে সব সময় বিরক্ত কেন কোরো? তুমি জানো আমার খুব খারাপ লাগে। ইচ্ছে করে তোমার চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে দেই। ‘
বলেই বর্ষা অভ্রর চুল টেনে ধরল। অভ্র বর্ষার দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে অস্ফুটস্বরে বলল,’ বর্ষা লাগছে। তোর নেশা হয়ে গেছে চল বাড়িতে চল। ‘
‘ উঁহু আমি যাবো না। ‘ মাতাল কন্ঠে বলল।
‘ কেন যাবি না শুনি। জানিস বাড়ির সকলে কত টেনশন করছে? ‘
‘ আমি যামু না। আমি এখানেই থাকমু বাতাসে বাতাসে উড়ে বেড়াবো আকাশে। ‘
বলে বর্ষা অন্য দিকে চলে যাচ্ছিল। অভ্র ফট করে হাত ধরে নেয়। বাড়িতে মেসেজ দিয়ে সকলকে জানিয়ে দেয়, ‘ ও বর্ষাকে পেয়ে গেছে সকলে জেনো টেনশন না করে। ওরা এখনই আসছে। ‘
ফোন থেকে মাথা তুলে সামনে তাকাতে দেখে বর্ষা অন্য দিকে দৌঁড় লাগিয়েছে। অভ্র ও পেছন পেছন ছুটে গেলো। বেশ অনেকটা দূরে চলে গেলো। গ্রামের কিছু মুরব্বিরা দেখতে পায়। একটা মেয়ের পেছনে একটা ছেলে ছুটে যাচ্ছে। তার পরই তারা এসে দুজনের পথ আটকে দাঁড়ায়। দু’জনকে সাথে নিয়ে চলে যায় গ্রামের মাতব্বরের কাছে। গ্রামের মাতব্বর ফজল মিয়া তার মতামত পেশ করে। অভ্র বর্ষাকে এক হাতে বুকের সাথে ধরে রেখেছে। গ্রামের কিছু মানুষ ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
মাতব্বরের কথার বিরুদ্ধে কথা বলে অভ্র। এদিকে বর্ষা মাতলামি করছে। অভ্রর কথায় গ্রামবাসিরা নারাজ হয়ে যায়। বর্ষাকে টান দিয়ে অভ্রর কাছ থেকে আলাদা করতে চাইলো। বর্ষাকে শক্ত হাতে ধরে অভ্র অনেক ভেবে মাতব্বরের প্রস্তাবে রাজি হয়।
কিছুক্ষণের মধ্যে বর্ষা সেন্সলেস হয়ে যায়। বর্ষাকে দুইহাতে আগলে নেয় অভ্র দুই হাতে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। তাদের দু’জনকে একটা ঘরে রেখে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সকলে চলে যায়৷ বর্ষাকে পাটিতে শুইয়ে দিয়ে সেই থেকে জানালায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
*
সকালের এক চিলতে রোদ জানালা দিয়ে এসে বর্ষার মুখের উপর উপচে পরে। ঘুমে নড়েচড়ে উঠে বর্ষা৷ পিটপিট করে চোখ খুলে তাকিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করল একটা মাটির ঘরে। উঠে বসে ঘরটায় চোখ বুলাতেই দেখল একটু দূরে অভ্র মাটির দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে ঘুমিয়ে আছে। বর্ষা উঠে অভ্রর পাশে গিয়ে বসে শীতলাকন্ঠে অভ্রকে ডাকতে লাগল।
অভ্র চোখ খুলে বর্ষাকে দেখে কর্কশকন্ঠে চেচিয়ে বলে উঠে,’ তুই আমার এত কাছে কি করছিস দূরে সর। ‘
বলে অভ্র উঠে দাঁড়ালো। আঁড়চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে। একহাত দিয়ে মাথা শক্ত করে চেপে ধরেছে। মাথাটা এখনো ঝিম মেরে আসছে মাথাটা ঘুরাচ্ছে। মাথায় হাত দিয়ে ঘুরে পরে যাচ্ছে বর্ষা। অভ্র ‘বর্ষাহহ’ বলে চিৎকার দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। বর্ষা আবারও সেন্সলেস হয়েগেছে। তাকে মাটিতে শুয়ে দিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে কাউকে দরজা খোলার জন্য ডাকতে থাকে।
তৎপর কয়েক জন এসে দরজা খুলে দেয়। অভ্র সকলকে বর্ষার অবস্থা জানালে সকলে তাদেরকে যেতে বলে। অভ্র বর্ষাকে নিয়ে গ্রাম ত্যাগ করে।
বর্ষা বাইকের পেছন থেকে অভ্রর গলা চেপে ধরে বলল, ‘ কেমন দিলাম। ‘
অভ্র হাসতে হাসতে বলল,’ তোকে তো এক্টিং এর এওয়ার্ড দেওয়া উচিত রে ‘
চলবে?#অবন্তর_আসক্তি
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব – ২৪
‘ ধমকাচ্ছো কেন আমাকে? ‘ (রাগী গলায়)
‘ধমকাবো না তো কি করবো আজ তোর জন্য আমি এখানে ফেঁসে গেছি৷ চোরের মতো গ্রাম বাসী ঘরে আঁটকে রেখেছে। ‘ অভ্র ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল।
‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করো ভাগ্য ভালো যে চোর বলে পিটানি খাও নাই। ‘ বিড়বিড় করে বলল।
ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে তাকিয়ে থেকে রাগে ফোঁসফোঁস করে বলল, ‘ কি বললি? ‘
‘ কিচ্ছু না। যাইহোক ভেবেছো এখান থেকে বের হবে কিভাবে? ‘
এক কথায় উত্তর দিলো অভ্র,’ নাহহ। ‘
‘জানতাম এটাই বলবে। ‘ চোখ জোড়া ছোটছোট করে তাকিয়ে বলল।
‘ তুই কিভাবে জানতি? তুই আমার মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখেছিস নাকি? ‘ অভ্র ঠোঁট বাঁকা করে বলল।
‘ হয়তো ‘
‘ মানে?’
‘ মানে বানে কিচ্ছু না। এদিকে আসো তো। ‘
‘ কাছে যাবো কেন? ‘
‘ ধ্যাত ‘
বলে অভ্রর এক হাত ধরে টান মেরে নিজের সামনে দাঁড় করালো বর্ষা। কানে কানে বলে উঠল, ‘ আমার কাছে আক্কাস আলীর ঝাক্কাস আইডিয়া আছে৷ ‘
অভ্র বর্ষার সামনে থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলো। কঠোর কন্ঠে বলল, ‘ এসব কোন ধরনের ভাষা? ‘
বর্ষা কোনো প্রত্যত্তর করল না। অভ্র বর্ষার দিকে ঘুরে দেখল মাথায় হাত দিয়ে বর্ষা পরে যাচ্ছে, ছুটে দু’হাতে ধরে ফেলে। বিমূঢ় কন্ঠে বারবার, ‘বর্ষা’ বলে ডাকতে লাগে। হুট করে চোখ খুলে তাকায় বর্ষা। অভ্র তার চোখের দিকে তাকাতে চোখাচোখি হয়ে যায়। বর্ষা মেকি হাসি দিয়ে চোখ টিপ মারে। ভেবাচেকা খেয়ে যায় অভ্র হাত ছেড়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বর্ষা মাটিতে পরে যায়। তবে ব্যাথা পায় না। মাটি থেকে কিছুটা উঁচুতে অভ্র তাকে ধরে রেখেছিল।
অভ্র রাগী কন্ঠে বলল, ” এই মাথা ঘুরে পরে যাওয়া কি তোর নাটক ছিল? ”
বর্ষা পাটির উপরে সোজা হয়ে শুয়ে পরে হেয়ালি কন্ঠে বলে,’ আবার জিংগায়। ‘
লাফিয়ে অভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে দুইহাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,’ এখন প্লান শুনো। আমি এখানে অসুস্থের মতো শুয়ে থাকবো। তুমি দরজার সামনে গিয়ে গ্রামের মানুষ দের আওয়াজ দিবে। দরজা খুললে বলবে আমার অবস্থা অতন্ত্য খারাপ। মাথা ঘুরে পরে গেছি তারাতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে। বাস এতটুকুই বলবে এর থেকে বেশি একটা কথাও বলবা না। ওকে? ‘
‘এতে কাজ হবে? যেতে দিবে তারা আমাদের? বিশ্বাস করবে তোর এক্টিংকে সত্য মনে করবে? ‘
‘ আলবাত কাজ করবে। তুমি বিশ্বাস করছো না তারাও করবে। ‘
বলেই সশব্দে হেসে উঠল বর্ষা। ঠোঁটের উপর দাঁত দিয়ে আলতো চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র ইচ্ছে করছে তার কষিয়ে বেয়াদর মেয়ে অর্থাৎ বর্ষার গালে চড় মারতে। এটা একটা ফালতু আইডি মনে হচ্ছে তার কাছে। বের হওয়ার দ্বিতীয় কোনো রাস্তা না পেয়ে রাজি হতে হয় অভ্রকে মেনে নিতে হয় বর্ষার মাথার ঝাক্কাস আইডিয়া।
বর্ষার আইডিয়া সাকসেস হওয়ায় বাইকে বসে অভ্র কিছুক্ষণ সেই বিষয়ে আলোচনা করল। বর্ষা একটু এটিটিউট নিয়ে বলল,’ দেখতে হবে না আইডিয়া টা কার। ‘
‘হুহহ, পেত্নী জংলী মেয়ের। ‘
‘ অভ্র ভাইয়া! ‘ চেঁচিয়ে বলল বর্ষা।
★
বাড়িতে পৌঁছালে হয় আরও এক ঝামেলা। বাড়ির সকলো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে বর্ষা ভয় পেয়ে অভ্রর পেছনে লুকিয়ে পরে। অভ্র বাড়ির সকলকে শান্ত করার জন্য কাল গ্রামে পৌঁছানোর পর কি ঘটেছিল তা বলে৷ শুধু গ্রামের মাতব্বরের শর্তের কথা গোপন রাখে। বর্ষার সঙ্গে অভ্র ছিল বৈকি সকলে এবারের মতো তাকে মাফ করে দেয়। কিন্তু সকলে শাসিয়ে যায় এর পর জেনো একা কোথাও না যায়।
রুমে এসে সর্ব প্রথম ফ্রেশ হয়ে নেয় বর্ষা।
কলেজের সময় হলে সে রেডি হয়ে নেয়। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে রুম থেকে বের হয়। নিচে ডাইনিং টেবিলে আগে থেকেই সকলে খেতে বসে পরেছিল। বর্ষা চেয়ার টেনে খেতে বসে খেয়াল করল। টেবিলের এ মাথা থেকে শেষ পর্যন্ত সকলে আছে শুধু অভ্র ছাড়া। বাকিদের অভ্রর কথা জিজ্ঞেস করলে বর্ষার দাদা বলেন,’ সারারাত জেগে তোকে পাহারা দিয়েছিল। দু’জনে একসাথে ঘুমিয়ে পরলে যদি গ্রামের লোকেরা কোনো ক্ষতি করে বসে সে জন্য এখন ঘোড়া বিক্রি করে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ‘
দাদার কথা শুনে বর্ষার মন খারাপ হয়েগেলো। সারারাত একটা মানুষ ঘুমায়নি আর সে দিব্যি ঘুমিয়েছে। নাস্তা শেষ করে কলেজের উদ্দেশ্য বের হয়ে পরল।
রিমা আর বর্ষাকে আজ হেঁটে হেঁটেই যেতে হবে। বাড়ির তিনটা গাড়ি তিনজনে নিয়ে গেছে, বর্ষার বাবা ও দুই চাচা। তিনজনের আজ ভিন্ন তিন জায়গায় মিটিং আছে তাই সেখানে চলে গেছে। যখন বর্ষা ফ্রেশ হতে রুমে গিয়েছিল তখন। আর যেসব ভাইদের বাইক আছে তারাও বেরিয়ে গেছে। তাদের নাকি আজকে ঘুরতে যাওয়ার কথা৷ আর একটা বাইক আছে তবে যার বাইক সে তেল বেইচা ঘোড়া বেইচা ঘুমাইতাছে।
রিয়া হাঁটছে আর বারবার ঘড়ির টাইম দেখছে। বর্ষা হেঁটে যাচ্ছে আর রাস্তায় পরে থাকা ছোট ছোট ইটের কোণা খালি বোতল সেগুলো তে পা দিয়ে লাথি মারছে। লাথি লেগে সেগুলো কিছুটা দূরে চলে যাচ্ছে। বর্ষা সেটা দেখে হাত তালি দিচ্ছে ফিক ফিক করে হাসছে।
কলেজে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লেগে যায়। তবে কলেজে এসে ধুমধুম পিঠে কতগুলো কিল পরে বর্ষার। কিল দিয়েছে আহিতা, নিঝুম, মাহিরা কাল না জানি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। কত টেনশনে ফেলে দিয়েছিল বর্ষা ওদের। সেই অভিমানেই দু-একটা কিল মেরে বসল।
তাদের অভিমান বুঝলো না বর্ষা। উল্টো এখন সে অভিমান করে বসে পরল। পুরো ক্লাসে কেউ কারো সাথে কথা বলেনি। ক্লাস শেষে বর্ষা সকলকে ফেলে একা একা চলে আসে। তাদের আড্ডাখানায় কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে এক বড় বেঞ্চের নিচে বসে আছে। চারদিকে বাতাস বয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণচুড়া গাছ থেকে কিছু কিছু ফুল বাতাসে বর্ষার উপরে পরছে। চোখ বন্ধ করে প্রকৃতি উপভোগ করছে। চোখ মেলে তাকাতে বড়সড় শকট খেলো। তিনটা মেয়ে কুকুর তার সামনে হাঁটু গেঁড়ে কানে ধরে বসে আছে। বিস্মিত স্বরে বলছে,’ সরি আর হবে না। তোকে আর কখনো কিল ঘুসি মারবো না। এবারের মতো আমাদের ক্ষমা করে দে। ‘
বর্ষা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সেখান থেকে উঠে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে শীতলাকন্ঠে কে জেনো বলল,’ ক্ষমা চাওয়া ব্যক্তির থেকে ক্ষমা করে দেওয়া ব্যক্তি উত্তম। ‘
বর্ষা পেছনে ঘুরে তাকালো। একসাথে তিনটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে মুরাদ, নিভ,আদ্রিক।
কিছুক্ষণ আগের কথাটা আদ্রিক বলেছে। বর্ষা আঁড়চোখে তিনজনের দিকে তাকিয়ে আছে। নিভ বর্ষার সামনে বেঞ্চে বসে বলল,’ ওরা তোকে নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল তাই রাগে অভিমানে মেরেছে আর তুই ওদের রাগ অভিমান না মিটিয়ে উল্টো রাগ করে বসে আছি? ‘
মুরাদ বলল,’ আমি ছেড়ি মাইনষের মধ্যে নাই। এরা কহন কি চায় এরা নিজেও জানে না। এক একটা শয়তানের নানি এগুলার পেটে পেটে জিলাপির পেচ। ‘
বর্ষা ধ্রুত পা ফেলে মুরাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। ফট করে মুরাদের কান মোলা দিয়ে বলে, ‘ কি বললি তুই?’
মুরাদ বর্ষার হাতের উপর রাখ রেখে বলল,’ শয়তানের নানি ছাড় কইতাছি। আমি কি তোরে কইছি নাকি? ‘
বর্ষা মুরাদের কান ছেড়ে দিয়ে বলল,’ তো কারে বলছিস? ‘
মুরাদ বর্ষার সামনে থেকে কিছুটা দূরে চলে গেলো। হাতের নাগালের বাহিরে গিয়ে চেঁচিয়ে বলল,’ তোকেই বলছি শয়তানের নানি জড় তুফান ছেড়ি। সপ্তাহে একদিন ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে জড় না তুললে তোর ভাল্লাগে না? ‘
বর্ষা রাগান্বিত চোখ জোড়া মুরাদের উপর নিক্ষিপ্ত করে এক পা সামনে এগিয়ে যেতে যাবে তখন আদ্রিক বলল,’ ওরা তোমার ফ্রেন্ড বর্ষা। সব সময় রাগ মোটেও ভালো নয়। ওদের তোমাকে নিয়ে চিন্তা হয় দুশ্চিন্তা হয় ওদের। তোমার ওদের ফিলিংস বুঝা উচিত নাকি উল্টো ওদের সাথে রাগ করে একা একা বসে থাকা উচিত। তুমি ওদের সাথে কথা বলো দেখবে মান অভিমান সকলের মিটে যাবে। ‘
আদ্রিকের কথার সাথে নিভ উঠে দাঁড়িয়ে সহমত প্রকাশ করল। বর্ষা ভাবান্বিত ফেস বানিয়ে আঁড়চোখে তাকিয়ে আছে, আহিতা,নিঝুম,মাহিরার দিকে। ওরাও ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের ওমন মুখের আকার আকৃতি দেখে সশব্দে হেসে উঠল বর্ষা। পরক্ষণে সকল মান অভিমান সাইডে রেখে বান্ধবী গুলোকে জড়িয়ে ধরল। পৃথিবীতে বাবা মায়ের পরে যারা একান্ত কাছের হয়ে যাদের সাথে সুখ দুঃখ সব কিছু শেয়ার করা যায় তারাই হচ্ছে বেস্ট ফ্রেন্ড।
কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে আজ মিলন মেলা বসেছে বন্ধু বান্ধবের মিলন মেলা।
সকলের সাথে আজ অনেকক্ষণ মন খুলে আড্ডা দেয় বর্ষা। বাড়িতে ফিরে যেতে হবে মাথায় আসতে সকলকে বিদায় দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
আজ তার মনে হচ্ছে সে পৃথিবীর সব থেকে খুশি বাড়িতে এসে। জামাকাপড় চেঞ্জ করে নিয়ে খেতে বসে। কলেজ ছুটির পর বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য দুপুরে লাঞ্চের সময় পার হয়ে গেছে। সকলে খাবার খেয়ে নিয়েছে শুধু বর্ষা আর রিয়াই এখন একা একা খাচ্ছে।
সন্ধ্যার পর, বর্ষা, রিমা, রিয়া, বৃষ্টি চারজনে একত্রিত হয়েছে।
রিমা হুট করে বলে উঠল,’ আজ তোর চিঠিবাজ তোকে কোনো চিঠি দেয় নি? ‘
বর্ষা লাফিয়ে উঠল খুশিতে আহ্লাদী কন্ঠে বলে উঠল,’ ঠিক ভালো কথা মনে করিয়ে দিছিস। ‘
বলে বিছানা থেকে নামল। পড়ার টেবিলের উপর থেকে ব্যাগ টা নিয়ে এসে বিছানার উপর রাখল।
ব্যাগ থেকে একটা একটা বই বের করল। সবগুলোতে খুঁজেছে কিন্তু কোনো চিরকুট আজ পায়নি। মূহুর্তে বর্ষার হাসি খুশি উজ্জ্বল মুখটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো। এক রাশ অভিমান জড়ো হলো তার মুখে। ফেঁকাসে লাগছে বর্ষার মুখটা। বর্ষার অবস্থা দেখে সকলে নিরব দর্শক হয়ে গেছে৷ বিছানা থেকে নামল বর্ষা। পড়ার টেবিলের সামনে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পরল। অভিমানি হয়ে বিস্মিত স্বরে বলল, ‘ আজ চিঠি কেনো দিলো না? ‘
#চলবে?
(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)
🌺___________________🌺
(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)