গভীর রাতে ঘুমের মধ্যেই কারো ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ গলায় অনুভূত হলো। এটা নতুন না। প্রতিরাতেই হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, আমি অনুভব করলেও, শত চেষ্টায়ও চোখ খুলতে পারি না। রোজকার নিয়ম অনুযায়ী আজকেও এই পুরুষালি হাতের বাঁধন আরো জোরালো হয়ে আমাকে আবদ্ধ করলো নিজের আলিঙ্গনে।
হৃদপিণ্ডের প্রতিটি স্পন্দনগুলো আমাকে নিয়ে গেলো এক ঘুমের রাজ্যে।
সকালের মৃদু আলোয় পিট পিট করে চোখ খুললাম। গত রাতের কথা মনে হলো। প্রতিবারের মতো এবারও জানার আকাঙ্খা বেড়ে গেলো, এই ছায়ামানবকে। আচ্ছা, স্বপ্ন কি এটা?
ঘড়িতে বাজে ছয়টা। দ্রুত উঠে নিলাম। কাজ করতে হবে বাড়ির। এবাড়িতে আমি মেয়ে হয়ে জন্মালেও, থাকি এক চাকরানীর মতো। সৎমায়ের বাড়ি এটা, রাজত্ব করে সৎ বোন। বাবাও আমাকে মায়ের মৃত্যুর কারণ বলে অগ্রাহ্য করে এসেছে।
উঠে ফ্রেশ হয়ে এলাম। পানির ছিটে গলায় লাগতেই জ্বলে উঠেছিলো। রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালাম। চোখ বড় বড় হয়ে এলো। তার মানে সেসব স্বপ্ন ছিল না? সব সত্যি ছিলো?
আয়নাতে গলার নিচের তিলে কালচে আবরণ দেখা গেলো। হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম জায়গাটুকু। খানিক জ্বলন হচ্ছে।
আমি অর্শিয়া বীনি। ভার্সিটিতে পড়ি। জন্মের পাঁচ বছর বয়সে মা মারা যায়। এরপরের বছর আব্বু বিয়ে করে নেন, আমার খেয়াল রাখার জন্য। কিন্তু হলো উল্টো। দিন দিন ছোট মায়ের কথায় আব্বুও আমাকে অপছন্দ করা শুরু করে দেন। ছোট মা আব্বুর কাছে আমার নামে অনেক উল্টা পাল্টা বকেছে। যার জন্য এতো অবহেলায় থাকতে হচ্ছে আমাকে।
“কিরে নবাবজাদী! ঘুম ভাঙ্গেনি? এতগুলো কাজ কি তোর মরা মা এসে করে দিয়ে যাবে?”
ছোট মায়ের ডাকে খেয়াল এলো। ভাবনা থেকে বের হয়ে ছোট মাকে বললাম, “আসছি আমি।”
ছোট মা আমার সাথে এমন করেই কথা বলে। এটা তাও ভালো ভাবে বলেছে, একটু রেগে গেলে আমার মরা মাকে নিয়ে গালিগালাজ শুরু করে দেয় ছোট মা। খুব ইচ্ছে হয় নিজের একান্ত ব্যক্তিগত মানুষের কাছে চলে যেতে। কিন্তু আমার এই ছোট্ট জীবনে নিজের বলতে কেউ নেই।
______________
রান্না করতে আজ দেরি হয়ে গেছে বিধায় সকালের খাবার জোটেনি কপালে। এরকম অনেক সকাল অভুক্ত থেকেছি। এটা ব্যাপার নাহ্!
ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরোলাম। বাড়ি থেকে বেরোতেই এক শান্তি অনুভব করলাম। নিজেকে হাল্কা লাগছে। অনেক ভারী একটা বোঝা বুক থেকে ঐ বাড়িতেই নামিয়ে রেখে, উড়ে চলছি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। বাড়ি থেকে হেঁটে যেতে সময় লাগে ঘন্টা খানেক। টাকা নেই আমার কাছে। এজন্য হেঁটেই যাই।
হাঁটতে হাঁটতে বেশ খাইনকটা দূরে এসে পড়লাম। খেয়ালে এলো, কেউ একজন আমার পিছু নিচ্ছে। আমি দাড়িয়ে পড়লাম। শুনশান রাস্তায় পায়ের ঠক ঠক আওয়াজও থেমে গেলো। আমি পিছে না ঘুরেই আবার চলতে শুরু করলাম। পায়ের ঠকঠকানির আওয়াজও গতিশীল হলো।
কিছুক্ষণ বাদে আমার হাত ধরে, আমাকে থামিয়ে দিল। গায়ের শিরা উপশিরায় একটা ঘিনঘিনে ভাব চলে এলো। পেছন ফিরে দেখলাম। একটা লোক। চেহারায় নেশাখোর ছাপ। বুকটা ধুক করে উঠলো। আশে পাশে তাকালাম। কেউ নেই। মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে পড়লো। কি হবে এখন?
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে লোকটির উদ্দেশ্যে বললাম, “ছ’ছেড়ে দদিন, আমি কিন্তু চিল্লাবো!”
লোকটি একটা শয়তানি হাসি উপহার দিয়ে বললো, “নাগো সুন্দরী! এমন সুযোগ হাতছাড়া করার মতো বোকা আমি না। তুমি চিল্লিয়ে নিজের শক্তি অপচয় না করে কাছে এসো। তুমিও মজা পাবে।”
আমি লোকটির কথায় ঘৃণামিশ্রিত কন্ঠে বললাম, “ভ’ভালো হচ্ছে না কিন্তু, লোক ডাকবো!”
আমার এহেন কথার প্রেক্ষিতে লোকটি দমে না গিয়ে হাসির তেজ বাড়িয়ে দিলো। তখনই আবার খেয়ালে এলো এটা একদম জনমানব শূন্য এলাকা। ভয়ে মরি মরি অবস্থা। এখন হাইপার হলে একদম চলবে না। খানিকক্ষণ চুপ থেকে মস্তিষ্ক শান্ত করলাম। লোকটি আমাকে চুপ হতে দেখে ভরকে গেলো। আমি এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে লোকটির মেইন পার্ট বরাবর এক লাথি দিলাম।
লোকটি ওখানে হাত রেখে পিছিয়ে নিচে পরে গেল। ব্যাথায় কাবু হয়ে গিয়েছে। গলার তেজ আরো বাড়িয়ে বলল, “শালী! আজকে তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। এই রাস্তা দিয়েই তো তোর ফিরতে হবে।”
আমি ভার্সিটির রাস্তা ধরে দিলাম এক ভো-দৌড়। ভার্সিটির গেটের পাশে এসে দাড়িয়ে পরলাম। বুকে এক হাত আর কোমরে এক হাত রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি। একটু আগের ঘটনার কথা মনে পরতেই সমস্ত শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠলো। অনেক ভয়ঙ্কর এক বিপদ থেকে বেঁচে ফিরলাম।
এমন সময় একটা হাত আমার কাঁধের উপরে এসে ঠেকলো। ভয়ে ওদিকে না তাকিয়েই আবারও চিৎকার করে উঠলাম। আমায় চিৎকার করতে দেখে আমার পেছনে দাড়িয়ে থাকা ছেলে ও মেয়ে উভয়েই চিল্লিয়ে উঠলো। ওদের আওয়াজ পেয়ে আমি চুপ হয়ে পিছে ঘুরে ভ্রু কুচকে তাকালাম।
আমার সামনে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডস দাড়িয়ে। রুশী আর অয়ন।
আমি ওদের দুজনের বাহুতে, আমার দুটো হাত দিয়ে আলতো করে মেরে বললাম, “চিল্লাচ্ছিস কেনো তোরা?“
থেমে গেলো ওরা।
রুশী নিজ হাতে, বাহুতে বুলিয়ে বলল, “তুই এরকম মরা চিৎকার কেনো শুরু করেছিস?“
অয়ন ব্যথিত কন্ঠে বললো, “মারলি কেনো?“
আমি দুজনেরই উত্তর দিলাম, “আমি না হয় ভয় পেয়েছি বলে চিল্লালাম। তোরা তো কানের মাথা খেয়ে ফেলেছিস।”
কথা আর বাড়াতে না দিয়ে নিজে ক্যাম্পাসে ঢুকে গেলাম।
জীবনে এতশত না পাওয়ার ভিড়ে একটা বিশাল পাওনা ওরা আমার। আমার সুখের এক ঠিকানা। এরা আছে বলেই আমি বেদনায় ভরা জীবন নিয়ে দিব্যি বেঁচে আছি। ভালো নাইবা থাকলাম। বেঁচে যে আছি, এটাই বা কম কিসের?
ক্যাম্পাসে ঢুকতেই রুশী আমার হাত ধরে টেনে ক্যান্টিনে নিয়ে গেলো। ওখানে গিয়ে খাবার অর্ডার দিয়ে একটা টেবিলে বসলো। পাশেই অয়নও বসেছে।
রুশী আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো, “দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আজও না খেয়ে আসতে হয়েছে। খেয়ে নে। পরে বাকি কথা।”
আমি নাকচ করতেই অয়ন বলে উঠলো, “তোর গুষ্টির পিন্ডি চটকাচ্ছি না, এটা তোর ভাগ্য ভালো। আর একটা কথা বললে তোর সৎমাসহ তার আগের ঘরের মেয়েকেও পুতে দিয়ে আসবো। আর তোর বাপকেও ছাড়বোনা। খা।”
শেষ উক্তিটি বেশ জোরালো গলায় বলেছে। ইতিমধ্যে ক্যান্টিনের সকলের দৃষ্টি আমাদের দিকে। আমি খাওয়া শুরু করলাম। আমাকে খেতে দেখেই এরা ক্ষ্যান্ত হলো।
________________
দুপুরের কড়া রোদে বাসার উদ্দ্যেশে যাচ্ছি। রাস্তা ঐ একই। আগে যেই রাস্তা দিয়ে আসতাম, সেই রাস্তায় কাজ চলছে বিধায় কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এজন্যই মূলত এই নির্জন রাস্তায় চলতে হচ্ছে।
কিছুদূর এগোতেই পুলিশ আর মানুষের ভিড় দেখা গেলো। একটা প্রশান্তির ছোট্ট শ্বাস ফেললাম। কিন্তু এখানে এতো মানুষ কিসের? ভিড় সরিয়ে এগিয়ে গেলাম।
সামনে তাকাতেই আমি চিৎকার করে, তৎক্ষণাৎ দূরে ছিটকে পরলাম। চক্ষু কোটর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায় অবস্থা। এমন কিছু দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
চোখের সামনে মাটিতে পরে আছে দুপুরের ঐ লোকটার বিদ্ধস্ত লাশ। লাশটির চোখ দুটো দিয়ে রক্ত ঝরছে। আর ডান হাত, যেটি দিয়ে আমাকে ছুঁয়েছিল, তা কেটে পাশে ফেলে রাখা। এমন ভয়াবহ মৃত্যু আমি এর আগে কখনো দেখিনি। কে আর কেনোই বা এই কাজ করেছে।
ইতিমধ্যে সকলের নজরের মধ্যমণি হয়ে উঠেছি।
এদিকে আমার এতো রক্ত দেখে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। চোখ বন্ধ করে জোরে দুটো শ্বাস টানলাম। যে বা যারাই এই কাজ করেছে, সে বা তারা যে কতটা হিংস্র, তা এই লাশ দেখলেই বোঝা যাবে।
আমি দ্রুত প্রস্থান করার উদ্দ্যেশে উঠে দাড়ালাম। এক নজর আবারও এই হিংস্রতা দেখে নিলাম। চোখ ঘুরিয়ে নিতেই একটু দূরে একটা রক্তে রাঙা সাদা রুমাল চোখে বাঁধলো। কৌতূহল না দমাতে পেরে ওখানে গিয়ে রুমালটা হাতে নিলাম। এক কোনায় রক্তের ছোপ আর অপর কোনায় লাল সুতোয় ছোট করে একটা অ্যালফাবেট “A” লেখা। পুলিশ ভিড় কমাচ্ছে। সকলে চলে যেতে ধাক্কাধাক্কি লেগে যাচ্ছে। রুমালটা ব্যাগে ঢুকিয়ে আমিও চলে এলাম।
___________________
বাড়ি ফিরতেই আবারও কর্ণকুহরে ভেসে এলো রুটিন মাফিক সেই অশ্রাব্য গালি। তবে আজকের গুলো অন্য রকম।
ছোট মায়ের কর্কশ কন্ঠস্বর আমাকে শোনাচ্ছে, “নবাবজাদী দিন দিন নাগর যুটাচ্ছে। বাড়ি বয়ে এসে হুমকি দিয়ে যায়। রোজ বাইরে বেরোয় তো শরীর বিক্রি করতেই। নাহলে এই বে*শ্যার আছেই বা কি? কতো টাকা দেয় তোকে ঐ ছেলে? আমরা কি তোকে কম খাওয়াচ্ছি? কম পড়াচ্ছি? তোকেই বা আর কি বলবো? হয়েছিস তো মায়ের মতো। তোর মা শরীর বেচেছে আর তুইও সেই পথেই চলছিস।”
ছোট মাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, “চুপ করো! তুমি এতক্ষণ আমাকে বলেছো, আমি শুনেছি। আমার মৃত মাকে নিয়ে আর একটা কথাও বলবে না। দোহায় লাগে।”
কথাটা বলতে বলতেই কেঁদে দিয়েছি। ছোটমা দ্রুত আমার সামনে এসে এক হাতে চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বললো, “কি বললি তুই? আমাকে ধমকাস তুই? তোর এতো সাহস! আজ তোর সাহস বের করছি।”
এরপর মীরা আপুর উদ্দেশ্যে বললো, “স্টোর রুম থেকে দড়ি আর বেত নিয়ে আয় তো মীরা। এই হারামজাদি উড়তে শুরু করে দিয়েছে, ডানা কাটতে হবে।”
মীরা আপু খুশি মনে “আনছি” বলে চলে গেলো স্টোর রুমের উদ্দেশ্যে। আপুকে ভীষণ ভালোবাসি আমি। সব কথা মেনে চলি। তবুও জানিনা, কেনো আপু আমার কষ্ট দেখে শান্তি পায়। হয়তো ফ্রীতে সিনেমা দেখতে পাওয়ার এক লোভ এটা। কিছুক্ষণ পর দুজনে মিলে আমাকে দড়ি বেঁধে নিচে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিলো। ছোট মা আমাকে বেত দিয়ে মারা শুরু করলো। একেক ঘাতে আমার চিল্লানো বাড়ি কাঁপিয়ে তুলছিলো।
আমার আহাজারীতে পাথর গলতে রাজী। কিন্তু আফসোস! এরা পাথরের চেয়েও অধম।
আধা ঘন্টা টানা পেটাবার পর এরা ক্ষ্যান্ত হয়। আমার শরীরের প্রতিটি লোমকূপ এই নির্মম অত্যাচারের সাক্ষী। আগেও এভাবে মেরেছে। তবে প্রতিবার এতোটা গভীর ভাবে ক্ষত হয়নি, তারা করেননি। আজ কি এমন রাগ? যার জন্য এমন অমানবিক নির্যাতনের শিকার হলাম? আমার বাঁধন খুলে তারা নিজ নিজ রুমে চলে গেলো। মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে আমিও গেলাম নিজের রুমে। কি কষ্ট হচ্ছে আমার! একাকী এই দুনিয়ায় কষ্ট ছাড়া আমার নিজস্ব বলতে আর কিছু নেই।
ওরা আমায় মেরেছে। অভিযোগ নেই। ওরা আমার কেউ নয়। এজন্য কোনো রাগ নেই ওদের উপর। রাগ তো হচ্ছে নিজের উপর। রাগ হচ্ছে আমার মায়ের উপর। কেনো আমাকে একা রেখে গেলো? কেনো এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় আমাকে মরতে দিয়ে চলে গেলো? তার চেয়েও বেশি রাগ হচ্ছে আমার জন্মদাতার উপর। সে পিতা নয়। একটা কলঙ্ক।
রাগে-কষ্টে-দুঃখে-ক্ষোভে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে নিচে বসে রইলাম। এই পানি আমার অশ্রুকণা লুকোতে সাহায্য করছে। প্রতিটি পানির ফোঁটায় অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করছি। হ্যাঁ! করতেই হবে আমাকে। মানুষ একা আসে, একা যায়। মাঝখানে তৈরি হয় কিছু রক্তের ও আত্মার সম্পর্ক। যার একটিও আমার নেই। এটাতো সামান্য শরীরের ক্ষত, যা নজর এড়াতে অক্ষম। কিন্তু মনে যেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে, এটা কে দেখবে?
শরীরের অনেক জায়গা কেটে গিয়েছে। জ্বলছে ভীষণ ভাবে। আল্লাহ! আমাকে কেনো এতো কষ্ট দিচ্ছো? আমি কি খুব খারাপ? ব্যাথা আর সহ্য না করতে পেরে চোখ দুটো বুঁজে এলো। আমার তো আর কেউ নেই, মরে পরে থাকলেও কেউ খোঁজ নিতে আসবে না। হয়তো অনন্ত কষ্টের সাগরে তলিয়ে গিয়ে আমিও চলে যাবো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে।
_____________________
হালকা হালকা করে চোখের পাতা দুটো খুললাম। শরীরে এখনও পানি পড়ছে দেখে উপরে তাকালাম। বাঁকা হাসলাম। নিজের ভাগ্যকে উপহাস করে বললাম, “কি সুন্দর ভাগ্য আমার!”
এখনও ওয়াশরুমে পরে আছি আমি। শরীরের ব্যাথা বেড়েছে আরো কয়েক গুণ বেশি। তাপমাত্রাও বেড়েছে। এতক্ষণ ব্যাথা শরীর নিয়ে ভিজেছি, জ্বর না আসলে বরং সেটা খারাপ দেখাতো।
এতো কষ্ট সহ্য করেছি, খানিকটা নাহয় আরো সহ্য করলাম। এটা ভেবে উঠে রুমে গেলাম। আমার এই ছোট্ট দুনিয়ায় কষ্টের পরিমাণ এতো বেশি নাহলেও পারতো। চেঞ্জ করে প্রতিবারের মতো একটা ফুল স্লিভস এর কামিজ পরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। ক্ষত লুকোনোর প্রয়াস এটা। আরেকবার বাঁকা হাসলাম। জ্বরের মাত্রা অত্যধিক পরিমাণে বেড়েছে। খিদেও ভীষণ পেয়েছে। সকালে ওদের জোরাজোরিতে যা খেয়েছিলাম। তারপর আর পানি অবদি গলা দিয়ে নামেনি। নামবেও না। ওভাবেই ঘুমিয়ে গেলাম।
মাঝরাতে আবারও সেই ছায়ামানবের আগমন ঘটেছে। আমার ঘুম কিছুক্ষণ আগেই ভেঙেছে। খিদে আর অসহনীয় যন্ত্রণায় ঘুম আসছে না আর। পিটপিট করে চোখ খুলতে সক্ষম আমি। লোকটির অবয়ব দেখে আবিষ্কার করলাম, বলিষ্ঠ দেহের লম্বা এক পুরুষ। আমার পাশে এসে বিছানায় বসে পরলো। অন্ধকারে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। লোকটি আমার ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। পরম যত্নে চুমু খেল হাতের পিঠে। দুপুরে যখন সেই লোকটি আমার হাত ধরেছিলো তখন ঘৃণা জেগেছিলো মনে। তবে এই লোকটির স্পর্শে সুখ অনুভূত হচ্ছে। লোকটি এক হাতে আমার হাতটি ধরে রেখে আমার বা গালে নিজের ডান হাত রাখলো। কপালে আরো এক উষ্ণ স্পর্শ এঁকে দিলো। আবেশে চোখ বুজে নিলাম।
গালে রাখা হাতটা কানের নিচ দিয়ে রেখে বৃদ্ধাঙ্গুল গালে বুলিয়ে বলছে, “তোমাকে ছোঁয়ার অধিকার আমি কাউকে দিইনি শুকতারা।”
চলবে…
#অদ্ভুত_আসক্তি
#সূচনা_পর্ব (এতোটা হিংস্র?)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ (অনু)