#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#পর্ব_৩
— এই যে থাপ্পড়ের উপর থাপ্পড় মারছি এগুলো আমার অধিকার। একজন স্বামীর অধিকারে আমি তোমার গায়ে হাত তুলেছি।
— মানি না আমি। আপনাকে আমি স্বামী হিসেবে আমি না।
— তোমার মানা না মানায় কিছু যায় আসে না। পেপারে সাইন আছে, মানুষ সাক্ষী আছে সাবিহা সুলতানার সাথে সাজিদ আহমেদ সভ্যর বিয়ে হয়েছে।
কথার পৃষ্ঠে কথা। কারো তেজ কমজুরি হয়ে ফুটে উঠলো না। সভ্যর চোখে অগ্নি ঝড়ে। আশরাফুল ইসলাম এহেন দশায় দিশেহারা। উপস্থিত গুরুজনদের সম্মুখে কিসব চলছে? সভ্য সাবিহার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলল। একবার পেরিয়ে দু’বার। বাবা হওয়ায় বুকে লেগেছে তার থাপ্পড়গুলো। তিনি কড়া গলায় সভ্যর উদ্দেশ্যে বললেন
— এটা আশা করিনি তোমার থেকে সভ্য। সত্যিই তুমি বেশি সাহস দেখাচ্ছো। আমার মেয়েকে আমার সামনে থাপ্পড় মারার সাহস তোমার কি করে হয়?
সাবিহার বাবার কথার পিঠে সভ্য ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। ঝাঁক ঝাঁক অবজ্ঞা ঝরে পরলো যেন তার হাসি থেকে। দৃষ্টি সাবিহার দিকে নিবদ্ধ করে সভ্য প্রত্যুত্তর করলো নব শশুরের কথার।
— এখন তো এ কথা বললে হবে না বাবা! আপনি গতকাল কণ্যা দান করেছেন আমার হাতে। বলেছেন এখন থেকে আমিই তার গার্জিয়ান। আর একজন গার্জিয়ান হিসেবে আমি তাকে আদব শেখাচ্ছি। আমার দায়িত্ব পালন করছি।
সভ্যর বাঁক চমকে দিলো সকলকে। আঙ্কেল থেকে আশরাফুল ইসলাম বাবা হয়ে গেছেন সভ্যর। শশুর বলে সম্বোধন করেছে। অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন সাবিহার বাবা। রাহেলা ইসলাম কিছু বলার হেতু পেলেন না। কি বলবেন তিনি? মেয়ে তার বিশাল কিছু নীতিগত কাজ করেনি। বরং গত রাত হতে আজ এখন অব্দি সে বেয়াদবের মাত্রা টানছেই টানছে। সভ্য আর কিছু বলল না। ক্ষণিক সাবিহার দশা পরখ করে প্রস্থান করলো সে। সাবিহা রাগে ফুলেফেঁপে উঠলো। বারাবাড়ি রকমের সুন্দরী মেয়েটার মনে চাপলো জেদ। পেছন থেকে সভ্যর দিকে ছুড়ে দিলো তিক্ত সুরে
— কাজগুলো আপনি একদম ঠিক করলেন না সভ্য ভাই। দিস ইজ নট ফেয়ার। আই উইল টিস ইউ আ গুড লিসন।
সভ্য বাড়ির চৌকাঠের ওপাশে একপা রেখেছিল মাত্র। সাবিহার জেদি গলায় সে থমকে দিলো হাঁটার গতি। ঘুরে তাকালো পেছন দিকে। সাবিহা থেমে থেমে বুক ফুলিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। ভয়ংকর তার চোখ, মু্খের অভিব্যাক্তি। সভ্য এগিয়ে না এসে পারলো না। বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গেলো সে সাবিহার নিকট।
— চ্যালেন্স করলো নাকি দু টাকার টিকটকার সাবিহা সলতানা?
— ভাষা ঠিক করুন সভ্য ভাই।
— ঠিক আছে করলাম। সুনামধন্য মডেল এন্ড টিকটকার সাবিহা সুলতানা, রূপের জোন্য যে তুমি এত দাপট করো আদৌ কিন্তু তুমি ততটা সুন্দর নও। ট্রাস্ট মি আমার বিবেক বলতে কিছু না থাকলে আমি তোমায় নিলামে উঠাতাম। তখন নিজেই দেখতে পেতে তোমার মূল্য কতটা নিচে।
এরবেশি কিছু মুখে আসলেও সভ্য বলল না। মা, বাবার বয়সের অনেক গুরুজনই এখানে উপস্থিত। কিন্তু সাবিহা থেমে রইলো না। সে পাল্টা প্রতিবাদ করে বলল
— আমি আপনাকে প্রুফ করে দেখাবো। সাবিহা সুলতানার মূল্য কতটা। সাবিহার জন্য সোসাইটির কোন লেভেলের ছেলেগুলো পাগল তা আপনি নিজেই চোখ দিয়ে দেখে নিবেন। তারা আপনার মতো রূপহীনও নয় গরিবও নয়।
শেষের কথায় বুকে আচমকা ধাক্কা লাগলো সভ্যর। হয়তো! তার টাকা নেই। হতাশা ভাব মনে চেপে তবুও সভ্য শক্ত কন্ঠে বলল
— ওয়েট করবো। তবে আমি যতোদূর জানি, খোলা জিনিসের উপর ছেলেদের আকর্ষণ কম থাকে।
সভ্যর ভাবলেশহীন কথা। সাবিহার সহ্য হলো না এতো বড় কথা। গা জলে উঠলো তার। সে সম্মুখের ডাইনিং টেবিলের ক্লোথটা রাগে আচমকা টেনে ফেলে দিলো। যতো খাবার ছিল, যতো বাটি ঘটি প্লেট ছিল মূহুর্তেই তা ঝনঝনিয়ে মাটিতে পরে আহত হলো। খাবার গুলো বিছিয়ে গেলো মেঝেতে। সভ্য শান্ত চোখে দেখলো। সাবিহা তেড়ে আসছে তার দিকে। সভ্য এবার হাঁটা দিলো সাবিহার সম্মুখ বরাবর। সাবিহা যখন তার খুব নিকটে, একেবারে সম্মুখে পৌঁছালো ঠিক তখনই সভ্য হেঁচকা টানে ঘুরিয়ে নিলো সাবিহাকে। ঘারে টান পরলো সাবিহার। আশপাশের জিনিসগুলো ভনভন করে ঘুরতে লাগলো চোখের সামনে। হাতে ব্যাথা পাচ্ছে। পায়ের আঙুলও উল্টে গিয়ে ব্যাথার বহর নামিয়েছে। সভ্য দয়ামায়া সমুদ্রে বিসর্জন দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে সাবিহাকে। মাথা তারও চওড়া। শেষমুহুর্তে সাবিহার রুমের সামনে এসে সভ্য ধাক্কা দিলো সাবিহাকে। হুড়মুড় করে সাবিহা ঢুকে পরলো রুমে। সভ্যর শক্ত হাতের বেপরোয়া ধাক্কায় সে তাল সামলাতে না পেরে টল খেয়ে পরলো সোজা বিছানায়। বক্স খাটের সাথে হাঁটু লেগে শব্দ হলো। তোয়াক্কা করলো না সভ্য। রাগ তার দেখেনি সাবিহা।
— নেক্সট টাইম দাপট নিয়ে আমার কলার ধরতে যাওয়ার সাহস কোরো না।
কথাটা বলে সভ্য উল্টো পথে পা বাড়ালো। ক’টা অপমান করলো সাবিহা? গায়ের রং নিয়ে, টাকা না থাকায় আর শেষটা শার্টের কলার ধরে। মোট তিনটা। পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সাবিহাকে ফেরত দেওয়া হবে এসব। সভ্য যন্ত্রণাগ্রস্থ বুক আর আঁধার নামা মুখ নিয়ে হাসলো। বিরবির করে তাকে বলতে শোনা গেলো চলতি পথে
” নারী তুমি ততক্ষণ রূপের বড়াই করতে পারো, যতক্ষণ না তোমার পেটে বাচ্চা উঠে।”
সভ্যর ভয়ংকর কথা। সাবিহা তো এর একরত্তিও আচ করতে পারবে না। সভ্যর মনে যে ভয়াবহ জেদ চেপে গেছে। নিষ্ঠুর পরিকল্পনা চলছে এসবই সাবিহার অগোচরে। মেয়েটা বড্ড বোকা। শুধু ছটফট ছটফট করে রূপ নিয়ে অহংকার করতে পারে। নির্বুদ্ধিতার কর্ম রচনা করতে পারে। আজও তাই করছে সে। সভ্যর কড়া অপমানের জবাব দিতে সে বসে গেছে ল্যাপটব নিয়ে মেঝেতেই। অগোছালো রুমটা জুড়ে আঁধার নিঃশ্বব্দ। সাবিহা অডিও লাইভে চলে গেলো। ইউটিউবে তার ফলোয়ার 1.3M, ফেসবুক পেইজে ফলোয়ারার 920K। এতো এতো ফলোয়ার যে মেয়ের তার কিনা মূল্য কম হবে। নিলামে তুলতে চায় সভ্য। সাবিহা হাসলো। মনে মনে সে সভ্যকে ‘বেকুব’ বলে আখ্যায়িত করে শান্তি কিনলো মনে। তার অডিও লাইভে সে ফুরফুরে চিত্তে বলতে লাগলো,
” আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আজ আমি আপনাদের মাঝে একটা সারপ্রাইজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। গতকাল সন্ধ্যায় আপনাদের সাথে আমার লাইভ হবে। বিষয়টা হলো আমার লাইভ পার্টনার নিয়ে। এতো দিন অনেকেই অনেক ভাবে প্রপোজ করেছেন। তো কাল আমি অপেক্ষায় থাকবো কারো প্রপোজালের। বেছে নেবো পার্মানেন্ট লাইফ পার্টনার। ”
.
ধরণীর কোলে যখন আঁধার ছাপিয়ে গেছে তখন সভ্য বাড়ির পথ ধরেছে। সারাবেলা তার কাটলো ভাবনায় ভাবনায়। জীবন যে একটা যুদ্ধ তা আজ বেশ করে উপলব্ধি করা হয়েছে। পরিকল্পনা চোখের পলকে সাজাতে পারলেও বাস্তবায়ন হয় না সহজেই। কি করে পাল্টা জবাবা দেবে সে সাবিহাকে? এ চিন্তায় সভ্য বিভোর। আজ ঢাকাতেও যাওয়া হলো না। মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানিতে একটা ইন্টারভিউ ছিলো তার। হলো না দেওয়া। সভ্য দীর্ঘ একটা শ্বাস টেনে মেইন ডোর অতিক্রম করলো বাসার। ড্রয়িং রুমে কেউ নেই। সবাই হয়তো নামাজের বিছাবায়। সভ্য নিজ ঘরে হেঁটে যাচ্ছিলো। এমন সময় সাবিহা নিজ রুম থেকে গলা উঁচিয়ে বলল
— ফকিরে কি আর বোঝে নাকি কোহিনূরের মূল্য।
কথাটা সভ্যর শুনতে সময় লাগলো না। সাবিহা আয়েশ করে বসে আছে বিছানায়। সভ্যর উদ্দেশ্যেই তার কথা। হৃদয় ছিদ্র হয়ে গেলো সভ্যর। হুট করে সে অনুভব করলো পা উঠছে না। হাঁটা যাচ্ছে না এই অপমান উপেক্ষা করে। সভ্য বন্ধ করে নিলো দুচোখ। সাবিহার লাইভ সে দেখেছে। সাবিহা বুঝি তার সাথে খেলতে চাইছে। রঙ বেরঙের খেলা। সভ্য চোখ খুলে সাবিহার খোলা দরজা দিয়ে নজর করলো সাবিহার দিকে। হঠাৎ বলে উঠলো
— খেলাটা শুরু করলে তুমি সাবিহা। শেষ কিন্তু আমিই করবো।
— জয়ীও আমিই হবো। আপনি খেলা শেষ করলেও।
— দেখা যাবে।
আরো একদফা জেদাজেদি। সাবিহা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ছিল সভ্যর দিকে। সভ্য গটগট করে প্রস্থান করলো সাবিহার সম্মুখ হতে। তার জীবন পথ বাছাই করা হয়ে গেছে। হয়তো সে সাবিহাকে ছাপাছাপি করে দিয়ে টিভির পর্দায় উঠবে নয়তো জীবনের ইতি টেনে দেবে। আর অবশ্যই সে জীবনের ইতি টানতে বিন্দুমাত্র ব্যাগ্র নয়।
চলবে….
( ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। আর ভাইসব, ধলা বউ হইতে সাবধান 🌝)