বাক্সবন্দী চিঠি পর্ব -২৯

গল্পঃ বাক্সবন্দী চিঠি
লেখিকাঃ নিনিকা জামান নূর
পর্বঃ ২৯
কুহু আবিরের সামনে বসে আছে। আবির তার দিকে তিক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। এ সময় কুহু এখানে কেন এসেছে বুঝতে তার অসুবিধে হচ্ছে না। কিন্তু আজ কেউ বাসায় নেই। তার বাবা- মা গ্রামের বাড়ি গেছে। আবির নিজেও বেরিয়ে যেত। শ্রাবণ আর অয়ন এর সাথে কথা বলে ইতু, অনুকে নিয়ে বাসায় ফিরত।
কিন্তু হঠাৎ করেই কুহু এসে বলছে তার জরুরি কথা আছে। সে কথা এখনো মুখ ফুটে বলছে না।
আবির এবার বিরক্ত হয়ে বললো,”কুহু কিছু বলার থাকলে বলো না হয় চলে যাও। এখানে এইভাবে বসে থেকে তো লাভ নেই।”
কুহু গলা পরিষ্কার করে বললো, “কফি খেতে খেতে কথা বলি?”
আবিরের রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। এখানে কি খোশগল্প করতে এসেছে? তাও মুখে কিছু না বলে উঠে যেতে লাগলো।
কুহু তাড়াহুড়ো করে উঠে দাড়িয়ে বললো,” আরে তুমি বসো আমি বানিয়ে আনছি।”
শান্ত গলায় আবির বললো,”বসো তুমি। আমারা গেস্ট কে দিয়ে কাজ করাই না। আমি বানিয়ে আনছি।”
এইভাবে কড়া গলায় না করায় কুহু কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।
“ঠিক আছে তোমার জন্য ও বানাবে। আমি কিন্তু একা একা খাবো না।”
আবির বিরক্ত চোখে তাকিয়ে চলে গেলো। কুহুর এইসব ন্যাকামো তার ভালো ঠেকছে না।

অহনার মা কথা দিয়েছেন তিনি অহনার বাবার সাথে কথা বলবেন।
অহনা পারছে না খুশিতে লুঙ্গি ড্যান্স করতে। অহনা ঠিক করলো ওদের সাথে আরো কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে তবেই যেতে দিবে। এইদিকে ইতুর কিছুই ভালোলাগছে না। আবিরের সাথে একবার কথা বলতে পারলে হতো। ইতু আবিরের নাম্বারের কল দিলো। কল্টা বেজে গিয়ে কেটে গেলো কেউ ধরলো না। ইতুর চিন্তায় মনটা অস্থির হয়ে আছে।

আবির কফি নিয়ে এসে বললো, “এইবার বলো কি বলবে?”
কুহু মন খারাপ এর ভান ধরে বললো,” এমন করে বলছো কেন? একটু কি টাইম স্পেন্ড করা যায় না?”
“দেখ কুহু তোমার সাথে টাইম স্পেন্ড করার মতো না আমার সময় আছে না তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক। মানবতা দেখিয়ে তোমাকে আমি থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছি। এর বাইরে তোমার সাথে কথা বলাও আমার রুচিতে বাধে। তাই আমার সময় নষ্ট না করে কি বলার তাড়াতাড়ি বলো।”
কুহু চুপচাপ অপমানগুলো হজম করে নিলো। তার এখন মাথা গরম করে লাভ হবে না।
কুহু হেসে বললো, “আমি তো তোমার কাছে কিছু চাইতে আসিনি। না সম্পর্ক তৈরি করতে। কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার ছিলো তাই এসেছি।”
“কথাটা কি সেটা তো বলছো না। সেই কখন থেকে কথাই ঘুরিয়ে যাচ্ছো।”
কুহু সেসব কথা কানে না তুলে বললো,”একটু বিস্কিট এনে দিবে? আসলে কিছু না খেয়েই এসেছি। এখন তো বেবির জন্য না খেয়ে থাকা ভালো নয়।”
আবিরের যেন ধৈর্য পরিক্ষা নিচ্ছে। সে চুপচাপ উঠে বিস্কুট আনতে গেলো।
আবির চলে যেতেই কুহু ব্যাগ থেকে ওষুধ গুলো বের করে তাড়াতাড়ি আবিরের কফিতে মিশিয়ে দিয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে বসলো।
কিছুক্ষন পর আবির এসে তাকে বিস্কুট দিয়ে বললো,” তুমি কি সত্যি কিছু বলতেই এসেছো?”
কুহু হেসে কফি আর বিস্কুট খেতে খেতে বললো,”তোমার কফি ঠান্ডা হচ্ছে খেয়ে নাও তারপর বলছি।”
কুহুর এমন জ্বালাময়ী হাসি দেখে আবির একবারেই পুরো কফি শেষ করে ফেললো।
“বলো এইবার। আর কোনো বাহানা নয়।”
কুহু চিন্তায় পড়ে গেলো। ওষুধ গুলো কাজ করতে কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু এখন আবিরকে কি বলবে। সে তো কিছু ভেবেও আসেনি।
“কি ব্যাপার চুপ করে আছো কেনো?”
হঠাৎ কুহু ভেবে বললো,” তুমি কি যানো তোমার আদের ওয়াইফের একটা রিলেশন ছিলো?তাকে ছেড়ে দিয়ে সে এখন তোমার গলায় এসে ঝুলেছে।”
আবির তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো,” বিয়ের আগে রিলেশন তো আমার ও ছিলো তাতে কি হয়েছে? আমি তাকে ভালোবাসি ইতু আমাকে ভালোবাসে এটাই আমার জিন্য এনাফ। আর সে আমার গলায় এসে ঝুলে পড়েনি। আমি তাকে জোর করে বিয়ে করেছি। তাই ইতুর ব্যাপারে কিছু বলার আগে অন্তত দুইবার ভাববে। তুমি যদি এইসব ফালতু কথা বলতে এসেছো তাহলে এখনি চলে যাও।”
কুহু থতমত খেয়ে বললো, “না আসলে আমি ভেবেছিলাম ইতু তোমার থেকে ব্যাপারটা লুকিয়ে গেছে। একসময় তো আমরা একে অপরকে ভালোবাসতাম তাই তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে তোমাকে ব্যাপারটা জানাতে এলাম। আসলে আমি চাই না তুমি কোন কষ্ট পাও।”
আবির হো হো করে হেসে উঠলো, “তুমি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী? হাসালে কুহু, তুমি নিজের ভালো ছাড়া আর কারোরই ভাল চাও না। তোমার মতো স্বার্থপর মেয়ে আর একটাও নেই। আমার কষ্ট পাওয়া নিয়ে তোমাকে অন্তত ভাবতে হবে না। অনেক উপকার করেছ এবার চলে যাও।”
এত কথা বলে জানো আবির হাঁপিয়ে উঠছে। চোখ মুখ কেমন গরম হয়ে উঠছে। কহু এতক্ষন দম ধরে বসে থাকলেও আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। কুহু তার গায়ের ওড়না সরিয়ে ফেললো।
আবির চমকে অন্য দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” এইসব কি করছো কুহু? এখনই ওড়না ঠিক করে বাসা থেকে বের হও।”
কুহু ধীরে ধীরে উঠে আবিরের কাছে আসতে লাগলো।
আবির উঠতে গিয়ে পড়ে গেলো সোফায়। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। এইসবই যে কুহুর কাজ বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে না। মনে মনে নিজেকে শক্ত করছে। কিন্তু নিজের ভিতর পুরুষত্ব কেমন জেগে উঠতে চাইছে। পুরো শরীর জ্বালা করছে। আবির মনে মনে চাইছে এখান থেকে পালিয়ে যেতে কিন্তু শরীর সায় দিচ্ছে না।
আজ যদি কিছু হয়ে যায় ইতু সহ্য করতে পারবে তো? তাকে ভুল বুঝবে না তো? মেয়েটা এমনিতেই কুহুকে নিয়ে সেনসেটিভ এখন যদি এমন কিছু হয়ে যায় ইতুর কি হবে?
কুহু এসে আবিরের পাশে বসে তার থাইতে হাত বুলালো। আবি ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিলো। কুহু তাও দমলো না। আবিরেএ গালে হাত দিয়ে তাকে কাছে টানতে চাইছে। আবির এইবার মনে মনে নিজেকে শক্ত করলো। কুহুকে জোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে বসলো।
কুহু এমন কিছু আশা করেনি তাই হঠাৎ থাপ্পড় পড়ায় সোফা থেকে ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে গেলো। খুব জোরে না পড়লেও পেটে চাপ পড়ায় কুহু ব্যাথায় কাতরাতে থাকে। আবির নিজেও স্তব্ধ হয়ে যায়। এমন কিছু হবে সে কল্পনাও করেনি।
কুহু ব্যাথায় চিৎকার করে বললো,” আবির আল্লাহ দোহাই লাগে আমাকে হাস্পাতালে নিয়ে চলো। আমার পাপের শাস্তি আমার বাচ্চাকে দিয়ো না।”
আবির হুশে ফিরলো কুহুর চিৎকারে। তাকে ধরে তুলতে গিয়েও আবির পড়ে গেলো। তার শরীর ও যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে। কুহু আবিরকে দেখে ঢুকরে কেঁদে উঠলো। অন্যের ক্ষতি করতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। আবির এখন তাকে সাহায্য করার অবস্থায় নেই। কুহুর চিনচিন করে ব্যাথা বেড়ে যাচ্ছে। কুহু শুধু আল্লাহ কে ডেকে যাচ্ছে তার পাপের শাস্তি যেন এই বাচ্চাকে না দেয়। আবির চেষ্টা করেও হাত পা নাড়াতে পারছে না।
বাচ্চাটার কথা ভেবেই তার বুক শিরশির করছে। কুহুর তলপেট থেকে শরীরের বাকি অংশ নাড়াতে পারছে না। সেখানে পেটে হাত দিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
চলবে।
( ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here