হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -১৮+১৯

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
“আপনি ছিলেন তো বাঁচানোর জন্য!”

আয়ান খানিকটা হকচকিয়ে উঠলো তারপর পিহুর বাচ্চা স্বভাবের কথা ভেবে বলল,

“এমন ভাবে বলছ যেনো তুমি স্লিপ করেছই যাতে আমি তোমাকে উঠাই!”

কথাটা বলেই আয়ান হেসে ফেলে। পিহু এই আলো আঁধারিতে হাস্যজ্বল পুরুষটিকে মুগ্ধতার নজরে দেখছে। সকালে যখন হেলিপ্যাডের জন্য রওনা করেছিল তখনই আয়ানের উদাস দৃষ্টি পিহুর নজর কেড়েছিল। এরপর তো কতোকিছু হয়ে গেলো। ষোল বছরের জীবনে সে অনেক ক্রাশ খেয়েছে তবে সবগুলোই সেলিব্রেটি। এই প্রথম কারও উদাস দৃষ্টিতে মুগ্ধ হয়েছে পিহু।
পিহুকে পলকহীন তাকিয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হলো আয়ান। হালকা কেশে নিয়ে বলে,

“আমোদপ্রিয় জীবনে সবকিছুতে আকর্ষণ কাজ করে। তাই নয় কি?”

পিহু হালকা হাসলো। তারপর বলল,
“দুঃখকে পাত্তা না দিলে আপনিও আমার মতো আমোদপ্রিয় হতে পারবেন।”

“বাচ্চাদের মুখেও গম্ভীর্যতা পূর্ণ কথা। ইমপ্রেসিভ। বাই দা ওয়ে আমি আয়ান মাহমুদ। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সটির বায়োকেমিস্ট্রির ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড সেমিস্টারে পড়ি।”

পিহু মুচকি হেসে বলে,
“আমি পিহু সরকার। ইন্টার প্রথম বর্ষে বিজ্ঞান শাখাতে পড়ি। আমি আপনার দুই ক্লাসের ছোটো।”

আয়ান নাকচ সুরে বলে,
“উহু। তিন ক্লাস। আমি এক বছর পর ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।”

“ওহ। তা ভার্সিটির নাম কী?”

আয়ান ভার্সিটির নাম বলে তারপর পিহু বলে,
“আপনি গিটার বাজাতে পারেন তো গান গাইতে পারেন না?”

আয়ান গিটারের তারে টুংটাং করে বলে,
“কিছুটা। তবে সুর হয় না। গান শুনতে পছন্দ করি।”

পিহু একটু উৎসুক হয়ে বলে,
“আপনি গিটার বাজান। আমি একটা গান ধরি। অতোটাও ভালো গাই না কিন্তু আপনার কানের পোঁকা ম*র*বে না তা সম্পর্কে গ্যারান্টি দিতে পারি।”

আয়ান আবারও হেসে ফেলল সাথে পিহুও। তারপর আয়ান গিটার বাজায় আর পিহু গান গায়।
তোমার ইচ্ছে গুলো, ইচ্ছে গুলো

“তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে, আমায় দিতে পারো।
আমার ভালো লাগা, ভালোবাসা তোমায় দেবো আরো (2)
তুমি হাতটা শুধু ধরো,
আমি হবো না আর কারো (2)
তোমার স্বপ্ন গুলো আমার চোখে হচ্ছে জড়সড়!”

(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন।)

গানটা শেষ হলে আয়ান পিহুকে বলে,
“তুমি দারুন গান গাও। অনেক রাত হলো। অ্যাই থিংক ইউ শুড গো।”

পিহু খানিকটা মন খারাপ করলো কিন্তু হয়তো আয়ান একটু একা থাকতে চাইছে তাই বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। আয়ান পিহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,

“একদিনের পরিচয় মাত্র। আগামীকালই তুমি তোমার রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তায়। এতোটা এডিক্ট হবে না। সময়ের নিয়মে তোমার বাচ্চামন ঠিক কন্ট্রোল হয়ে যাবে।”

আয়ানও নিজের রুমে চলে যায়। কাল সকাল ছয়টার গাড়ি ঠিক করিয়েছে হোটেল ম্যানেজারকে দিয়ে। তারপর চট্টগ্রাম থেকে প্লেনে করে ঢাকা যাবে।

__________

প্রিয়া রাত এগারোটা পর্যন্ত পড়লো। আগামী সপ্তাহে মিড১ পরীক্ষা শুরু। এগারোটার পর ফোন হাতে নেয়। তারপর একটু ফেসবুক, মেসেঞ্জারে ঢুকে। জারিফের আইডি সার্চ করে। আইডি লক করা না। তারপর ফটো অপশনে গিয়ে ছবি দেখতে থাকে। তবে ছবি খুব কম। পোস্টও কম। প্রিয়া নিজে নিজেই বলে,

“লোকটা মনে হয় পাবলিক করে পোস্ট কম দেয়। তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিলে কি কিছু মনে করবে?”

নিজের উপরই বিরক্ত হয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে রিকুয়েস্ট দিয়ে ফেলল অতঃপর স্বগোতক্তি করে বলে,

“আমার বিয়ে করা বর! আমি তার ফ্রেন্ড লিস্টে কেনো থাকব না! হুহ!”

তারপর আবার ফেসবুক স্ক্রোল করতে শুরু করে। পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট পার হয় আর প্রিয়ার মনে অস্থীরতা বেড়েই চলেছে। জারিফ এখনও ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করছে না। ফোনটা বিছানায় রেখে রুম জুড়ে পায়চারি করে এসে আবার ফোনটা হাতে নেয়। নাহ্! এখনও করছে না। আবার পায়চারি করে এসে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোনটা নিয়েই প্রিয়মের রুমের দিকে ছুটে। প্রিয়মের দরজায় নক করলে প্রিয়ম দরজা খুলে দেখে প্রিয়া। প্রিয়মকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিয়া অভিযোগের কন্ঠে বলে উঠে,

“আমাকে যে তখন ব*কে গেলি! যা এখন নিজের বন্ধুকে ব*ক! আমি নাহয় ফোনের দিকে নজর দেইনি। সে কী করে? খা*রু*স কাহিকা!”

প্রিয়ম অবাক হয়ে প্রিয়ার দিকে তাকায়। প্রিয়া গটগট করে চলে যায়। প্রিয়ম মাথা চুলকে দরজা লাগিয়ে জারিফকে ফোন করে। তিন বার রিং হওয়ার পর জারিফ রিসিভ করে। প্রিয়ম বলে,

“এই তোর বউ রেগে আছে কেন?”

জারিফ ব্যাপারটা না বুঝে বলে,
“মানে? আমি কীভাবে বলব? তোর বোন কেনো রেগে আছে সেটা তুই জানবি।”

“সে তো তোর উপর রেগে আছে। তুই জানবি। বিয়ের সপ্তাহ না পেরোতেই বউকে রাগিয়ে দিছো বন্ধু! কপাল খারাপ তোমার।”

জারিফ অবাক হয়ে বলে,
“আমি আবার কী করলাম! আমি তো কাজ করছিলাম।”

প্রিয়ম সন্দিহান হয়ে বলে,
“তাহলে এই পা*গলী রেগে গেলো কেনো? একটু ফোন চেক কর তো। ফোন বিষয়ে বলেছিল।”

জারিফ চেক করে প্রথমে কল লিস্ট। তার মনে পরে, সে তো রিংটোন অফ করে রাখেনি। তারপর মেসেজ লিস্ট চেক করে তারপর হোয়াটসএপে। শেষে গিয়ে ফেসবুক চেক করে দেখে প্রিয়ার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পঁচিশ মিনিট আগে। জারিফ হেসে দেয়। প্রিয়মকে বলে,

“তোর বোন ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে তাই মনে হয়।”

প্রিয়ম মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“এজন্য এমন করতে হয়! যা একসেপ্ট কর।”

“তুই ওকে বকেছিস কেনো? সে সিক ছিল বলেই চেক করেনি।”

প্রিয়ম ভাব নিয়ে বলে,
“আমার বোন আমি বকেছি। সো আমাকে তুই কিছু বলতে পারবি না।”

দুই বন্ধু হাসি-ঠাট্টাতে ফোনালাপ শেষ করে। জারিফ এবার নিজেই প্রিয়াকে মেসেজ করে বলে,

“সরি অ্যাই ওয়াজ বিজি। এনিথিং সিরিয়াস?”

প্রিয়া জারিফের মেসেজ দেখে চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলে। জারিফ এমন মেসেজ করেছে মানে নিশ্চয়ই তার ভাই জারিফকে কিছু বলেছে। প্রিয়া লজ্জায় আড়ষ্ট হলো। কি রিপ্লাই দিবে ভেবে ভেবে শেষে লিখল,

“নাথিং স্যার।”

মেসেজ সেন্ড হতে দেরি কিন্তু প্রিয়ার নেট অফ করতে দেরি নাই। জারিফ প্রিয়ার রিপ্লাই দেখে আনমনে হাসলো তারপর লিখল,

“কাল সকাল সাড়ে আটটায় তোমার ক্লাস? বাস স্ট্যান্ড থেকে একসাথে যাবো। সাড়ে সাতটায় সেখানে থাকবে।”

প্রিয়া ইতোমধ্যে কম্বল মুড়ি দিয়ে দিয়েছে। তার ভাইটা যে দুই কূলেই ভীরে সেটা প্রিয়া ভুলেই গিয়েছিল। একদিকে বোন আরেকদিকে বেস্টফ্রেন্ড। ঘুমানোর চেষ্টা করল কিন্তু মনে অস্থীরতা থাকলে কী আর ঘুম আসে! হাসফাস করে উঠে বসল কিছুক্ষণের মধ্যে তারপর নেট অন করে জারিফের মেসেজ দেখে খানিক লজ্জা পেলো। ফিরতি আর কোনো মেসেজ না করে বান্ধুবীদের সাথে কথা বলায় লেগে পরলো।

________

সকালবেলা প্রিয়া একটা সাদা জর্জেটের থ্রিপিস পরে অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশি পরিপাটি হলো। আজ তার ঘুমও অনেক জলদি ভেঙেছে। ফজরের আজানের আগেই ঘুম ভেঙেছে। শীতকালে তো আর শাল ছাড়া বেরোনো যাবে না। সে এখন নিজের হালকা গোলাপি শালটা খুঁজছে। সেটা গায়ে জড়িয়ে মাকে বলে বেরিয়ে গেলো। বাস স্ট্যান্ডে রিকশা দিয়ে গিয়ে দেখে জারিফ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো। প্রিয়া জারিফের সামনে গিয়ে সালাম দেয়। জারিফও সালামের জবাব দেয়। প্রিয়া জিজ্ঞেস করে,

“জায়ান ভাইয়া গাড়ি দিয়ে যায় না?”

“ভাইয়াকে অফিস থেকে রাইড দিয়েছে। আগেও দিয়েছিল। ভাইয়া সবসময় ইউজ করতো না। এখন করে।”

প্রিয়া হালকা হাসে তারপর ব্যাক সিটে জারিফের সাথে বসে। আধঘণ্টা পর প্রিয়াকে আগে এক জায়গায় নামিয়ে দিতে বলে প্রিয়া। জারিফ প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে কারণ বুঝতে চাইলে প্রিয়া বলে,

“ভার্সিটির কেউ দেখলে এটার অন্য মানে বের করবে। দ্যাটস হোয়াই।”

জারিফ আর আপত্তি করে না। প্রিয়া নিরাপদ দূরত্বে নেমে যায় আর জারিফ চলে যায়।
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯
প্রথম ক্লাসটা করে প্রিয়ারা ক্যাম্পাসে বসলো হাতে লেমোনেট নিয়ে। তখন এক সিনিয়র এসে দাঁড়ায় ওদের কাছে। ওরা ছয়জন তাকে সালাম দিলে তিনিও সালাম নেন তারপর তিনি বলেন,

“কেমন আছিস তোরা? আর নিশি, মিম, অর্ষা, প্রিয়া তোমরা কেমন আছো?”

মিম জোরপূর্বক হেসে বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাইয়া আমরা সবাই ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”

“আমিও ভালো আছি। আজকাল কী দিনেও তারা দেখা যাচ্ছে নাকি?”

সিনিয়র ভাই শাফিনের হেয়ালিপূর্ণ কথায় ওরা ছয়জনেই কনফিউজড হয়ে তাকায়। সাদ বলে,

“ভাই, তারা তো রাতে দেখা যায়।”

শাফিন সাদের পিঠ চাঁ*পড়ে বলে,
“আরে পা*গলা! তারা বলতে কি আকাশের তারা বুঝিয়েছি নাকি! প্রিয়াকে আজ অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশি সুন্দর লাগছে। তারকারাজির ঝলমলে তারা।”

প্রিয়ারা অবিশ্বাসের নজরে তাকায় শাফিনের দিকে। শাফিন তা দেখে বলে,

“সুন্দরকে সুন্দর বলা উচিত। এতে দোষের কিছু নেই। তারাদের রাণীর মতো লাগছে তোমাকে প্রিয়া।”

প্রিয়ার মাথা ঘুরছে। মিম বিড়বিড় করে বলে,
“অন্যের বউকে এতো রসিয়ে রসিয়ে সুন্দর বলিস! লজ্জা করে না তোর!”

নিশি মিমকে ঠেলে বলে,
“চুপ কর। সে একটু ফ্লার্টিং করছে করতে দে। একটু ডান সাইডের উপরে তাকা।”

মিম নিশির কথা মতো উপরে তাকিয়ে দেখে চারতলায় জারিফের অফিস রুমের জানালার কাছে জারিফ দাঁড়িয়ে আছে। শাফিন যে প্রিয়াকে নিয়ে কথা বলছে তা সে শুনতে না পেলেও বুঝতে পারছে। কেমন গম্ভীর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। মিম নিশির দিকে তাকিয়ে কনফিউজড হয়ে বলে,

“স্যার কি সব শুনছে? মনে তো হচ্ছে শুনছে না। সে গম্ভীর ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেনো? আর দৃষ্টি যেনো প্রিয়া আর শাফিন ভাইয়ার দিকেই স্থীর!”

নিশি বাঁকা হেসে বলে,
“না শুনলেও শাফিন ভাই যেমন অঙ্গভঙ্গি করে কথা বলছে তা দেখে স্যার ঠিকই বুঝতে পারছে। স্যার জেলাস হচ্ছে রে!”

মিম আর নিশি দুজনেই মিটমিট করে হাসতে থাকে। ওদের হাসতে দেখে অর্ষা ইশারায় জিজ্ঞেস করলে ওরা জারিফ স্যারের দিকে ইশারা করে তারপর অর্ষারও হাসি পেয়ে যায়। শাফিন আরও কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়। শাফিন গেলে প্রিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। অর্ষা বলে,

“বান্ধুবী! উপরে তো দেখো।”

“কী?”

“চারতলায় তো দেখো।”

প্রিয়া চারতলায় তাকালে দেখে জারিফ দাঁড়ানো। প্রিয়াকে তাকাতে দেখে জারিফ পর্দা টেনে দেয়। প্রিয়া বোকার মতো নিশিদের দিকে তাকালে নিশি বলে,

“স্যার মেবি জেলাস। দশটা না পাঁচটা না তার একটা মাত্র সুন্দরী বউ বলে কথা! সেটাকেও এখন মানুষের নজর লেগে যাচ্ছে।”

ওরা পাঁচজন হেসে উঠে। প্রিয়া ঠোঁট উলটিয়ে বসে রয়।
__________

জারিফের ক্লাসে জারিফ সবার আগে প্রিয়াকেই পড়া ধরে। প্রিয়া জবাব দিতে গিয়ে একটু আধটু আটকে গেছে। জারিফ বলে,

“ইজি পড়া ছিল এটা। এটা বলতেও এভাবে আটকানো লাগে! মনোযোগ নেই পড়াতে একদম। আরও পড়তে হবে।”

প্রিয়া মন খারাপ করে বসে পরে। একটু ঠেকে গেছে বলে এভাবে বলবে! প্রিয়া মনে মনে বলে,

“কই? ওই সাহারাকেও পড়া ধরতেছে। সাহারা তো আমার থেকেও বেশি আটকেছে। সাহারাকে তো এমন করে বলল না! খ*বি*স কাহিকা। সব ব*কা-ঝকা আমার জন্য! হুহ্!”

প্রিয়া রাগ করে জারিফের দিকে আর একটাবারের জন্যও তাকায়নি। জরিফ এক দুইবার তাকিয়েছিল কিন্তু কিছু বলেনি। এটুকু বুঝেছে তার বউয়ের রাগ হয়েছে।

__________

আজকের মতো প্রিয়া ও জারিফের ক্লাস শেষ। জারিফ প্রিয়াকে মেসেজ করে যেনো কিছুটা সামনে এগিয়ে দাঁড়ায়। প্রিয়া মেসেজ দেখে গাল ফুলিয়ে রেখেছে। লোকটা কেমন যেনো! একবার ভাবে, দাঁড়াবে না। চলে যাবে। আবার ভাবে, এখন চলে গেলে সে জারিফকে বুঝাবে কী করে যে সে রাগ করেছে? তাই সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পাঁচ মিনিট দাঁড়ানোর পর মেসেজ আসে,

“রাস্তার অপজিট পাশে আসো।”

প্রিয়া রাস্তার ওইপাশে কেনো যাবে তাই বুঝলো না। বাড়িতে যেতে তো এই পাশ দিয়েই যেতে হয়! প্রিয়া লিখল,

“কেনো? কোথায় যাবেন? বাড়িতে তো এই পাশ দিয়েই যেতে হয়।”

জারিফ লিখল,
“জানি আমি। রাস্তার অপজিট পাশে আসতে বলেছি নিশ্চয়ই কারণ আছে। জলদি দেখে শুনে আসো।”

বাধ্য হয়ে প্রিয়া রাস্তার অপরপাশে গেলো। সেখানে জারিফের গাড়ি একটু সাইড করে রাখা। প্রিয়া গাড়ির কাছে গেলে ফ্রন্ট সিটের দরজা খুলে দেয় জারিফ। ড্রাইভিং সিটে জারিফ বসা। প্রিয়া অবাক হয়ে বলে,

“ড্রাইভার আঙ্কেল কই?”

জারিফের ভাবলেশহীন গম্ভীর জবাব,
“তাকে যেতে বলে দিয়েছি। উঠো।”

প্রিয়া উপায়ন্তর না পেয়ে উঠে বসলো। প্রিয়া উঠে বসার পর জারিফ দেখলো প্রিয়ার মাঝে সিটবেল্ট বাঁধার তাগদা নেই তাই নিজেই বেঁধে দিলো। প্রিয়া জারিফের হুট করে কাছে আসাতে কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। সিটবেল্ট বেঁধে জারিফ সরে যায় তারপর গাড়ি স্টার্ট করে। গাড়ি মোড় ঘুরে এসে বাড়ির পথ ধরে। প্রিয়া এবার বুঝলো ওইপাশে যাওয়ার কারণ কী ছিল। এইপাশে তো ভার্সিটির কয়েকজন দাঁড়ানো তাই অপরপাশে যাওয়া।

কিছুটা পথ যাওয়ার পর জারিফ বলে,
“তোমার সামনের কেবিনেটটা (গাড়ির ফ্রন্টে কিছু রাখার মতো জায়গা) খুলো।”

প্রিয়া জারিফের দিকে তাকিয়ে কেবিনেটটা খুলতে অগ্রসর হলো। কেবিনেটটা খোলার পর যে এতোটা অবাক হবে তার ধারণাও ছিল না। কেবিনেটের ভিতর একটা বক্সে কতোগুলো চকলেট রাখা। প্রিয়াতো খুশিতে আটখানা অবস্থা। চকলেট বক্সটা নিয়ে জারিফকে খুশিতে ডগমগ হয়ে বলে,

“এটা আমার?”

“কেনো? তোমার নিতে ইচ্ছে হচ্ছে না? না ইচ্ছে হলে রেখে দেও।”

নিমিষেই প্রিয়ার মনঃক্ষুণ্ণ হলো। এমন ত্যাড়া কথা বলছে কেনো লোকটা? প্রিয়ার অভিমান হলো। বক্সটা যথাস্থানে রেখে দিলো তারপর বুকে হাত গুঁজে জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল। জারিফ এক পলক অভিমানীনির অভিমান দেখে নিঃশব্দে হাসলো অতঃপর নিজেই এক হাতে স্টেয়ারিং ধরে বক্সটা বের করে প্রিয়ার কোলের উপর রেখে বলল,

“তুতুলেরটা ব্যাক সিটে রাখা আছে। আর গাল ফুলিয়ে থাকতে হবে না। এই চকলেটগুলো তোমার জন্যই।”

প্রিয়ার মনে খুশিরা ডানা মেলেছে। জানালার দিকে তাকিয়েই মুখ টিপে হাসলো। সে চাইছে না জারিফ এই হাসিটা দেখুক। জারিফ বুঝোক, তার অভিমান এখনও পানি হয়নি। জারিফ বলল,

“গাল ফুলালে তোমার গালগুলো রেড চেরির মতো লাগে।”

প্রিয়া দ্রুত জারিফের দিকে ফিরলো। নয়নযুগল গোল গোল করে জারিফের দিকে দৃষ্টি স্থীর রেখেছে। জারিফ আনমনে হাসলো অতঃপর বলল,

“চেরি ফলটা আমি খেতে অতোটা লাইক করতাম না কিন্ত দেখতে দারুন লাগে। এটা পাঁকার পর যখন সাওয়ারনেসটা কমে তখন ভালো লাগতো।”

প্রিয়া কিছু বলল না। বক্স খুলে চকলেট খেতে শুরু করেছে। প্রিয়াকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে জারিফ চলে যেতে উদ্যত হলে প্রিয়া বলে,

“বাসায় আসেন।”

“আজকে না। অন্য কোনোদিন।”

“আম্মু জানলে কস্ট পাবে। আপনি বাসার বাহির পর্যন্ত এসে ভিতরে আসলেন না।”

জারিফ হাসলো তারপর বলল,
“বলবে কাজ পরে গিয়েছিল। আমাকে এখন ব্যাংকে যেতে হবে। আর্জেন্ট।”

প্রিয়া আর কিছু বলল না। জড়তা কাজ করছে তার। জারিফ গাড়ি নিয়ে চলে গেলে প্রিয়াও বাসায় ঢুকে।

_________

সন্ধ্যার একটু আগেই আয়ান বাড়িতে এসে পৌঁছেই ঘুম দিয়েছে। এদিকে পিহু সকাল থেকে পুরো রিসোর্টে আয়ানকে খুঁজে না পেয়ে ম্যানেজারের থেকে জানতে পারে আয়ান ঢাকা ফিরে গেছে। তখন থেকে পিহুর মন খারাপ। বন্ধুদের সাথে থেকেও তার মন হারানো। আর কোনোদিন আয়ানের দেখা পাবে কীনা সে জানে না। কোনো কন্টাক্ট নাম্বারও দিয়ে যায়নি। শুধু আয়ানের নাম ও ভার্সিটির নামটা জানে। আজকে পিহুরাও ফিরে যাবে। পিহুর মন খারাপ বিষয়টা লক্ষ্য করে তনিমা জিজ্ঞেস করে,

” কী হয়েছে তোর? এতো মুডঅফ কেন?”

পিহু জবাব দেয় না। তনিমা রাখি ও নাইমার দিকে তাকালে ওরাও ইশারায় জানায় ওরা জানে না। পিহু যেহেতু চুপ করে আছে তার মানে পিহু কথা বলতে ইচ্ছুক না তাই ওকে যা জিজ্ঞেস করবে সব বৃথা। তাই ওরা আর কিছু বলে না।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here