হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -৩০+৩১

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩০(হলুদ স্পেশাল)
জারিফ প্রিয়ার নাম্বারে, হোয়াটসএপে কয়েকবার টেক্সট করে প্রতিউত্তর না পেয়ে প্রিয়মকে ফোন করে। প্রিয়ম ইভেন্ট অর্গানাইজারের সাথে কথা বলছিল। সকালে গিয়ে দেখে আসবে। যেহেতু গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান একত্রে হবে আর প্রিয়ম এক দিকে কনের ভাই আরেকদিকে বরের বেস্টফ্রেন্ড। প্রেশার তার ভালোই। প্রিয়ম ফোন রিসিভ করে বলে,

“কী ব্যাপার বরবাবু? হঠাৎ আমাকে মনে পরল!”

“কেনো তোকে মনে পরতে পারে না?”

প্রিয়ম রম্যস্বরে বলল,
“পারে তো। আফটারঅল আপনি আমার বোনজামাই।”

“হয়েছে তোর একটিং? তাহলে এবার বলি?”

জারিফের এহেনো কথায় প্রিয়ম হাসি চেপে বলে,
“তোর বউ ঘুমিয়েছে আধঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। মেহেদী দেওয়ার সময় চু*লকা*নোতে এ*লার্জির মেডিসিন খেয়েছিল। তাই তার চোখ জুড়ে নিদ্রা ভর করেছে। এখন আপনি বললে তাকে ডাকতে পারি তবে বিশেষ লাভ হবে বলে মনে হয় না।”

“তাহলে থাক। হলুদের ভেন্যুতে ফ্লাওয়ারের এরেঞ্জমেন্ট হয়েছে? কোনো হলুদ ও লাল ফুল যেনো না থাকে হলুদের ফাংশনে।”

প্রিয়ম জারিফকে আশ্বস্ত করে বলে,
“সবকিছু মাথায় আছে আমার। আমার বোনেরও সেম আবদার। অথচ লাল গোলাপ ওর খুব পছন্দের। রাখিরে। বাবা ডাকছেন।”

কল কে*টে জারিফ কফির মগে চুমুক দিয়ে মোবাইলে কিছু রিং কালেকশন দেখছে। প্রিয়ার জন্য নিবে সে।

__________

আয়ান, রাদ, সাদ সকাল সকাল প্রিয়াদের বাড়িতে চলে এসেছে। কথা ছিল নিশি, মিম, অর্ষাকে নিয়ে আসবে কিন্তু এই তিনজন লেট লতিফাদের গোছগাছই শেষ হয় না! তাই ওরা তিনজন ওদেরকে ফেলে চলে এসেছে। এসেই নাস্তা করে প্রিয়ম ও প্রিয়ার অন্য কাজিন ভাইদের সাথে হাতে হাতে কাজে লেগে গেছে।

প্রিয়া সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে হেলতে দুলতে ব্রাশ করতে গেছে। তার রুমের ওয়াশরুমে কে যেনো গেছে তাই রুমের বাহিরে গেছে। ব্রাশ করতে যাওয়ার সময় রাদকে ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায়। ঘুমের কারণে চোখ মুখ ফুলা তার। প্রিয়া মুখ ভেঙচি দিয়ে বেসিনের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। তার চুল সব কা*কের বাসার মতো ফুলে আছে। জামা, পাজামা, ওড়না একেকটা একেক রঙের। আবার মাথায় মিকি মাউসের রাউন্ড ব্যান্ড। গাড়ো গোলাপি লিপস্টিক ঠোঁটে সহ ঠোঁটের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে। প্রিয়া এসব দেখে রে*গে নিজের রুমে গিয়ে রাহাকে ইচ্ছেমত মা**রতে থাকে সাথে আরও কয়েকটা পুচকে কাজিনকে। ওরা মা**র খেয়ে কাঁদার বদলে হাসছে। মে**রে ক্ষান্ত হয়ে প্রিয়া ফেসওয়াশ নিয়ে এবার নিজের রুমের ওয়াশরুমে ঢুকলো। ওর কাজিনরা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।

________

জারিফ, জায়ান ও কয়েকজন কাজিন মিলে বাজারে গেছে। জারিফ যেতে চাচ্ছিল না কিন্তু জায়ানরা কি ছাড়বে! উহু! হলুদের তত্বের জন্য বড়ো মাছটা জারিফকে দিয়েই কিনাবে। তাছাড়া বিয়ের বরকে দিয়ে বাজার করানোর একটা উৎসব আছে বিয়ের পর। সেটাতে যাতে জারিফ না ঠকে যায় তাই এই পন্থা। জারিফ বিরক্তি নিয়ে বলে,

“এই সকাল সকাল মাছ বাজারে না আসলে হতো না? আমাকেই কেনো এনেছো ভাই? সুপার মার্কেট থেকে কিনলেই হতো।”

“অভ্যাস কর। সবসময় সুপার মার্কেট থেকে মাছ কিনলে হবে? এখানে তাজা মাছ পাওয়া যায়। সুপার মার্কেটে পাবি ফ্রিজার করা মাছ।”

বাকিরাও নানারকমের উপদেশবর্ষণ করছে আর জারিফ চোখ মুখ খিঁচে সেসব শুনছে।

_______

সন্ধ্যাবেলা পার্লার থেকে সেঁজে এখন প্রিয়া স্টেজে বসে আছে। চারিপাশে সাউন্ডবক্সে গায়ে হলুদের গান বাজছে। জারিফরা আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে চলে আসবে। এখনও সব অতিথিরাও আসেনি। মিমকে ইফা পাঠিয়েছে প্রিয়া কিছু খাবে কীনা জিজ্ঞেস করতে।

“কিছু খাবি?”

“হ্যাঁ।”

“কী খাবি?”

“বেশি করে ডার্কচকলেট মিক্সড আইসক্রিম আর কেক।”

মিম নিশি ও অর্ষার দিকে তাকায়। নিশি বলে,

“মুখ চকলেট দিয়ে মাখাতে? তোর তো স্বভাব খারাপ। ড্রাই কিছু খা।”

প্রিয়া বিরক্ত হলো। এরা নিজেরাই আগ বাড়িয়ে এসে জিজ্ঞেস করে কিছু খাবে কীনা? আবার নিজেরাই রেস্ট্রিকশন দেয়! বিরক্তি নিয়ে বলে,

“শুকনো টোস্ট হবে? যেগুলো দিয়ে তোর মা*থায় বা*ড়ি দিলেও টোস্ট ভা*ঙবে না! কিন্তু তোর মা**থা আর থাকবে না। হবে?”

নিশি ভ্রুঁ উুঁচিয়ে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো। অর্ষা হাসতে হাসতে খেয়াল করেনি স্টেজ থেকে পরে যাচ্ছিল তখনই একজোড়া হাত ওকে আগলে নেয়। অর্ষা চোখ মুখ খিঁচে আছে। মনে মনে ধরে নিয়েছে তার হা*ড্ডি শেষ! কয়েক সেকেন্ড পর কোনো ব্যাথা না পাওয়াতে ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখল এক শ্যামবর্ণা ছেলে অর্ষাকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছে। ছেলেটির চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। চোখগুলো খুব শান্ত। কালো পাঞ্জাবিতে আরও আকর্ষণীয় লাগছে। অর্ষা হচ্ছে ক্রা*শখোর! তাই যথারীতি তাই হলো। ছেলেটি অর্ষারই পলকহীন দৃষ্টি দেখে অপ্রস্তুত হলো। একটু কাঁশির শব্দ করলো কিন্তু অর্ষা হা করে তাকিয়েই আছে। প্রিয়া, মিম, নিশি, রাহা, সামিহা ওরা অর্ষাকে এভাবে দেখে মুখ টিপে হাসছে। ছেলেটি এবার সুন্দর করে বলে,

“এইযে মিস অর মিসেস! এবার উঠুন। আপনি পরে যাননি। আপনি সিকিউর আছেন।”

অর্ষা থতমত খেয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর বলে,

“ইটস অকে!”

অর্ষার বেমিল কথা শুনে ছেলেটি কেমন করে তাকায় তা দেখে অর্ষা দ্রুততার সহিত বলে,

“থ্যাংকিউ এন্ড সরি।”

ছেলেটি প্রতিউত্তর করে চলে যায়। সামনে প্রিয়মকে দেখে পিঠ চাঁপড়ে কথা বলতে থাকে। ছেলেটি যাওয়ার পর অর্ষা ঘোর লাগা নজরে দেখছে তাকে। মিম ওর সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

“ও হ্যালো মেম! কল্পনা থেকে বের হোন।”

“দেখা তানু পেহলি পেহলি বার বে! হোনে লাগা দিল বেকারার বে!”

অর্ষাকে গান গাইতে শুনে ওদের হাসি ছুটে যায়। রাহা এসে বলে,

“অর্ষাপুও পেয়ে গেছে। আমিই পেলাম না। ইশ! কবে যে আসবে!”

“তোর অর্ষাপু দিনে কয়েকশবার ক্রা*শ খায়। তাই এতো খুশি হোস না।”

আরেকদফা হাসির রোল পরে গেলো। অর্ষা ক্ষিপ্রগতিতে প্রিয়ার পিঠে ধু*মধা*ম লাগিয়ে হনহন করে অন্যদিকে চলে গেছে।

_______

জারিফকে প্রিয়ার পাশে বসানো হয়। সবাই ওদের ঘিরে রেখে ছবি তুলছে আরও কতো কী! জারিফ প্রিয়াকে একান্তে কিছু বলবে তার সুযোগই পাচ্ছে না। প্রিয়ার হাতে ওর ফোন দেখে সে এবার মেসেজ লিখে,

“পুষ্পকন্যা তার রূপের ঢালি নিয়ে হাজির! পুষ্পে আবৃত তার স্নিগ্ধ কায়া।”

মেসেজ পাঠিয়ে জারিফ প্রিয়ার দিকে হালকা ঘুরে হাতের উপর ভর দিয়ে চোখে হেসে তাকিয়ে আছে আর প্রিয়া সামনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। জায়ান, প্রিয়মরা এই মোমন্টটা ক্যামেরায় বন্ধি করল। জারিফের পড়নে সবুজ ডিজাইনার পাঞ্জাবি। হাতা গুটানো কনুইয়ের কাছ পর্যন্ত। চুলে জেল দেওয়া না। এলোমোলো করে আঁচড়ানো সাথে চোখে গ্লাস(ফ্রেম ছাড়া চশমা) তো আছেই। শুভ্র কায়ায় বাঁকা হাসি! অনিন্দ্য সৌন্দর্য বহন করছে।

প্রিয়া ফোনের ভাইব্রেশন বুঝতে পেরে একটু অপেক্ষা করে ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে জারিফের বার্তা দেখে এখন সে জারিফের দিকে তাকায়। ঠোঁটের কোণে স্নিগ্ধ হাসি। দুইজনের দুই নয়নের শুভ মিলনটা যদি ক্যামেরা বন্ধি না হয় তাহলে কী চলে! একদমই না। এটাও ক্যামেরায় ধারণ করা হলো।

গায়ে হলুদ লাগানোর কার্যকর্ম শুরু হয়েছে। প্রিয়ার পছন্দ অনুসারে ডার্ক চকলেট কেক আনা হয়েছে। কেউ কিছু খাওয়াতে আসলে সে কেক, ক্ষীর ও কালো আঙুর দেখিয়ে দিচ্ছে। জারিফ এখানেও প্রিয়ার বাচ্চামি দেখে হাসলো। বাহিরে ঝড়ো হাওয়া। বৃষ্টি হব হবে ভাব। জারিফ হালকা ঝুঁকে প্রিয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

“বৃষ্টি আসার আগমুহূর্তে শীতলতা তোমায় ঘিরে হোক। তুমি আমার হৃদয়ে সুখ বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো প্রিয়তমা!”

বাতাসে প্রণয়ের সুর। হৃদয়ে অনন্য খুশির জোয়ার। প্রতিক্ষায় এখন শুভ লগ্নের।
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩১(বিয়ে স্পেশাল)
হলুদের অনুষ্ঠান সুন্দর নির্বিঘ্নেই কে*টে গেলো। একটানা তিন-চার ঘণ্টা বসে থেকে প্রিয়ার কোমোড়ের অবস্থা নাজেহাল। জারিফ তো তাও কয়েকবার উঠে বন্ধুদের সাথে কথা বলেছে। রুমে গিয়ে প্রিয়া এই শাড়ি গহনা নিয়েই সটান হয়ে শুয়ে পরে বলে,

“ওরে কী যে শান্তি লাগতেছে এখন। সারাদিন শুয়েই থাকতে মন চাচ্ছে।”

ইফা হাতে করে একটা পে*ইনকি*লার ঔষধ এনে প্রিয়াকে দিয়ে বলে,

“এটা খেয়ে নে নয়তো কালকে ধকল সামলাতে পারবি না।”

“এই আপু! বিয়েতে অ্যাম্বুলেন্স এলাউ না?”

ইফা না বুঝে বলে,
“না তো। কেনো বলতো?”

ইফা না বুঝলেও প্রিয়ার বান্ধুবীরা ঠিকই বুঝে গেছে। মিম হাই তুলতে তুলতে বলে উঠে,

“বুঝোনা কেনো আপু! সে বলবে, সে অ্যাম্বুলেন্সে করে বিয়ে করতে যাবে ও আসবে! ওর যতো অকর্মা চিন্তা-ভাবনা।”

প্রিয়া মিমকে ভে*ঙচি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে যায়। মূলত সবাই ওকে ঘুমানোর তাগদা দিচ্ছিলো নাহলে সে তো হলুদের ফাংশনের ছবিগুলো দেখতে বসেছিল।

________

সকাল থেকে ব্যাস্ততা ও দৌড়াদৌড়ির উপরই যাচ্ছে। প্রিয়াকে সকাল সকাল পার্লারে নিয়ে গেছে। কাজিন মহলের সবার সাঁজগোজ করতে কখন এসে বিয়ের ভেন্যুতে পৌঁছাবে তা নিয়ে সন্দেহ। মা-চাচিরা বাড়িতে সব ঠিকঠাক করছেন।
জারিফদের বাড়িতে তামান্না, ফিহা, আরও কয়েকজন কাজিনদের ওয়াইফরা পার্লারে গিয়েছে তাদের বাচ্চাদের রেখে। এখন বাচ্চাদের নিয়ে বাবারা পরেছে মহাবিপাকে। জারিফের এক কাজিন আফসোস করে বলে,

“ভাইরে! বিয়ে তো করছিস। তিনমাস তো হাওয়ায় উড়লি। এখন বউ ঘরে তুলবি তারপর আমাদের কস্টটা ফিল করতে পারবি।”

আরেকজন বলে,
“বউয়েরা পার্লারে যাবে আর বাচ্চাদের ধরিয়ে দিয়ে যাবে। আজকে সারাদিন দেখবি ওরা বাচ্চার ধারে কাছেও ঘেঁষবে না।”

“ঠিক বলছেন ভাই।”

এক অবিবাহিত কাজিনের এহেনো সমর্থনে বিবাহিত কাজিনরা তীক্ষ্ম নজরে তাকায়। জায়ান বলে,

“তুই সমর্থন করিস কেনো? তুই তো বিয়ে করিস নাই। তোর তো বাচ্চা নাই। ব্যাপার কী হুম?”

বেচারা থতমত খেয়ে যায়। তার যে রিলেশন আছে আর প্রেমিকার প্যারায় যে সে এখনই অতীষ্ঠ তা তো বলতে পারবে না বিধায় আমতা আমতা করে হাসার চেষ্টা করে বলে,

“আরে আমি তো তোমাদের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে বললাম। দেখতেছি তো তোমাদের। ইশ! ভাবীরা কী নি*র্দয়!”

তারপরেও সন্দেহের তী*র পুরোপুরি হটেনি কিন্তু তারা আবার কথায় মশগুল হওয়াতে বেচারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। জুম্মার নামাজের পর ওরা বরযাত্রী বের হয়।

________

পার্লার থেকে সেঁজে এসে বসে আছে। ভালোই গরম লাগছে। তারউপর হচ্ছে বৈশাখ মাস! প্রিয়া এই ভারী শাড়ি, গহনা পরে এখন তো কোনোরকম আছে। হঠাৎ “বর এসেছে” শোরগোলে প্রিয়াকে রেখে সবাই পাগারপার মেইনগেইটের কাছে। প্রিয়া বোকার মতো ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার সে মুখ ফুলিয়েছে। একটু পরপর দেখা যাচ্ছে রাহা ও কয়েকজন কোনদিকে দৌঁড়ে যায় আবার আসে। প্রিয়া কৌতুহলী হলো তাই সে টিপটিপ পায়ে মেইনগেইটের দিকে অগ্রসর হয়। আশেপাশের অন্যান্য গেস্টরা ব্যাপারটা দেখে হাসাহাসিও করছে কিন্তু তাতে প্রিয়ার কী? সে তো দেখবে।

জারিফের কাছ থেকে গেইট আটকিয়ে বড়ো এমাউন্ট দাবি করে বসে আছে। সাথে নানারকমের জুস সাঁজানো। নানাধরনের মিষ্টান্ন। কাঁচামরিচের রসোগোল্লাটাও রেখেছে। দুই পক্ষের কথা হচ্ছে। প্রিয়াকে দেখে জারিফের কাজিনরা বলে উঠে,

“ভাবীইইই! আমাদের সাহায্য করেন। এই এই ভাবী চলে এসেছে। এখন আর ভয় নাই।”

প্রিয়া হকচকিয়ে তাকায়। প্রিয়ার কাজিনরা পেছোনে ঘুরে প্রিয়াকে দেখে আবার সামনে ঘুরে জারিফের কাজিনদের বলে,

“হে হে! সে গুঁড়ে বালি! প্রিয়ু আমাদের টিমে। সে আমাদের সাপোর্ট করতে এখানে এসেছে।”

রাহা ভাব নিয়ে বলে,
“আহা শখ দেখো! আপুর বাহানা দিয়ে তারা ঢোকার ধা*ন্দা করে!”

রাহা কথাটা বলা মাত্রই প্রিয়ার কাজিনমহলে হাসির রোল পরলো কিন্তু তৎক্ষণাৎ জারিফের কাজিনমহল থেকে একটা শক্ত কন্ঠস্বর ভেসে আসলো,

“মুখ সামলে বলো পিচ্চি। অন্যরা বলেছে সেগুলো মানা গেলেও এক স্কুল পড়ুয়া মেয়ের মুখ থেকে এসব কাম্য না। শব্দের সঠিক ব্যাবহার করবে।”

রাহা ঈষৎ কেঁপে উঠলো। নিরবতা বিরাজ করল দুই পক্ষের মাঝেই। জায়ান গিয়ে শক্ত কন্ঠস্বরের মালিককে ফিসফিস করে বলছে,

“আস্তে নাহান। বাচ্চা মেয়ে বুঝেনি। তুই হাইপার হচ্ছিস কেনো? তোর না মা*থাব্যথা করছিল? তুই নাহয় গাড়িতে গিয়ে রেস্ট কর। সব ঠিক হলে ডাক দিবো।”

নাহান কপাল ঘষতে ঘষতে বলে,
“অ্যাই অ্যাম ফাইন। চাচ্চুকে বলো এসব বাড়ির বড়োদের মাঝে মিমাংসা করতে। এভাবে তর্ক চলতেই থাকবে।”

জায়ান সামনে এগিয়ে হালকা হেসে বলে,
“দেখেন আপনারা যেই এমাউন্ট দাবী করছেন তা পসিবল না। মাঝামাঝিতে আসেন। আর বড়োরা কথা বলেন।”

রাহা চুপসে গেছে। আঁড়চোখে নাহানকে একবার দেখে নিলো। ছেলেটি কে সে জানে না। হবে হয়তো জারিফের কাজিনদের কেউ। কিছুক্ষণের মধ্যে সবকিছু মিটিয়ে জারিফরা ভেতরে প্রবেশ করে। তারপর জারিফকে প্রিয়ার পাশে বসানো হয়। বর-কনে দুটোকে নিয়ে এখন ছবি, ভিডিও করার বাহার চলছে। ওদের কানের কাছে মৌ*মা*ছির মতো সবাই ভনভন করতেই আছে যার দরুন একটু কথা বলার সুযোগও পাচ্ছে না। এখন খাবার টেবিলে নিয়ে গেছে ওদের। জারিফ ও প্রিয়াকে প্রথম তিন-চার লোকমা বড়োরা খাইয়ে দেওয়ার পর প্রিয়ার কাজিনরা জারিফকে খাওয়াতে আসলে জারিফ বিনয়ের সাথে মানা করে দেয়। প্রিয়া প্লেটে গো*শ*ত ছুটাতে পারছে না তাই জারিফ ছুটিয়ে দিচ্ছে আবার খাইয়েও দিচ্ছে। এগুলো দেখে সবার উচ্ছাস প্রকাশ পাচ্ছে সাথে ছবি, ভিডিও তো আছেই।

খাওয়া দাওয়ার পর সবাই একটু বসে। জারিফ প্রিয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

“শহর জুড়ে রৌদ্রবর্ষণ নামুক। জ্বলমলে বৃষ্টি। কাল্পনিক তাই না? রোদের উপস্থিতিতে ভারী বর্ষণ হয় বলে জানা নেই। কিন্তু আমার কল্পনায় আমি তোমাকে নিয়ে সেই বর্ষণে ভিজতে চাই।”

প্রিয়া লাজুক হাসে। এই লোকটা ইদানীং কেমন কেমন কথা বলে যার সাথে প্রিয়া তার ভার্সিটিতে জারিফ স্যারের রোলে থাকা ক্যারেক্টারের মিল পায় না। প্রিয়া মৃদু কন্ঠে বলে,

“আপনার এই রূপের সাথে পরিচিত হওয়ার পর আপনার টিচার রূপটা আমার কাছে কেমন কেমন লাগে। ঠিক বিপরীত যেনো।”

“মনের প্রেমময় অনুভূতির প্রকাশ আমি একান্ত তোমার সম্মুখেই করব প্রিয়।”

প্রিয়া লাজুক হাসে। লাজুক কন্ঠস্বরে বলে,
“আপনার সকল শব্দে আমার হৃদয়ে ঝড় তুলে। ঝড়ে সামলানোর দায়িত্ব এবার থেকে আপনার।”

দুজন দুজনার চোখের দিকে নির্নিমিখ চেয়ে আছে। সময় যেনো থমকে গেছে। চোখে চোখে প্রেমের আদানপ্রদান!

_________

রাহা কোথায় যেনো দৌঁড়ে যাচ্ছিল হুট করে নাহানের সাথে বেশ জোড়েশোরেই ধা*ক্কা খেয়ে ছিটকে পরে। নাহান নিজের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে ঝাঁঝালো কিছু বলতে নিবে তৎক্ষণাৎ দেখে একটা মেয়ে ফ্লোরে পরে গেছে। মেয়েটির উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে বলে,

“এই মেয়ে, উঠো। এতো ব্যাস্ত হয়ে দৌঁড়ানোর কী আছে? ধীরে সুস্থে গেলেই পারো।”

রাহা মুখের উপর আসা চুলগুলো সরিয়ে নাহানের দিকে তাকিয়ে ভড়কে যায়। নাহানও খেয়াল করলো তখনকার মেয়েটা। সে বিরক্তিকর শব্দ করল। রাহা নিজে নিজেই উঠে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে বলে,

“সরি। আমি খেয়াল করিনি।”

কথাটা বলে চলেই যাচ্ছিল তারপর আবার ঘুরে বলে,

“তখনকার জন্যও সরি। আমি ফান করে বলেছিলাম। বুঝতে পারিনি আপনার খারাপ লাগবে।”

নাহান কিছু বলবে তার আগেই রাহা চলে গেছে। জারিফের আকদের সময় নাহানের ভার্সিটির কারণে আসতে পারেনি। তবে সে সবকিছু শুনেছে সবার থেকে তাই জানে রাহা স্কুলে পড়ে ফিহার মতো।

______

আয়ান টেরেসে গিয়ে পিহুকে মেসেঞ্জারে মেসেজ করে,

“আচ্ছা আমার কী একটু কস্ট পাওয়া উচিত না? কিন্তু পাচ্ছি না কেনো? তাকে অন্যকারও সাথে বধূবেশে দেখছি কেমন কেমন লাগছে তবে কস্ট পাওয়ার অনুভূতি হচ্ছে কী-না বুঝতেই পারছি না। আমাকে বিরস মানুষ বুঝি এজন্যই বলে?”

পিহু অনলাইনেই ছিল। এই সময়ে আয়ান তাকে মেসেজ করবে তাও প্রথমবারের মতো। মেসেজের ধরণটাও কেমন যেনো। পিহু কী জবাব দিবে বুঝে উঠতে পারছে না। এদিকে মিনিটের কাঁটা তিন মিনিট পেরিয়ে গেছে। অবশেষে লিখে,

“হয়তো তার প্রতি থাকা প্রখর অনুভূতির স্থানে অন্যকেউ এসেছে!”

আয়ান সাথে সাথে দেখল। তারপর মলিন হেসে অফলাইনে চলে গেলো। একটু পর প্রিয়ার বিদায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here