শত ডানার প্রজাপতি পর্ব -১৬+১৭

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১৬

পিটপিট চোখে সামনে তাকিয়ে আছি । এই মুহূর্তে বেডের থেকে উঠে হেঁটে গাড়ি পর্যন্ত যাওয়াটা আমার কাছে যুদ্ধ সমান । শরীরে সামান্যতম শক্তি নেই ।অগ্নি ডাক্টারের সাথে কথা বলতে ডাক্টারের চেম্বারে গিয়েছে ।
আমি মনে আসমান সমান শক্তি নিয়ে সামনের দিকে একপা আগাই । দ্বিতীয় পা ফেলার আগেই মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নেই । এমন সময়ই কেউ আমার কমোড় জরিয়ে ধরে । নিজের বুকে আশ্রয় দেয় ।তার শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ আমার খুব পরিচীত । চোখ বন্ধ করে বলতে পারছি এটা অগ্নি । আমার মাথায় কিছুসময় হাত বুলিয়ে হুট করে আমাকে নিজের কোলে তুলে নেয় । আমিও গুটিসুটি মেরে উনার বুকের মাঝে মিশে যাই । হাল্কা মাথা তুলে উনার দিকে আদো আদো চোখে তাকাই । উনি আমার দিকে গম্ভির ভাবে তাকিয়ে । সামনের দিকে বড় বড় পা ফেলতে ফেলতে গম্ভির কন্ঠে বললেন ,

– “এত তাড়া কিসের ? একটু কি আমার আসার অপেক্ষা করা যায়নি ? আমি তো বলেছিলাম এখানে অপেক্ষা করতে । ”

আমি আদো আদো গলায় উত্তর দেই ,
– “ভাবলাম আমি নিজেই চেষ্টা করি। আর কতবার আপনাকে বিরক্ত করবো ! ”

উনি আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললেন ,

– “আমি কি একবারও বলেছি আমি বিরক্ত ? ”

আমি কাচুমচু মুখ করে বলি,

– “তা মুখে বলতে হয় নাকি ? বুঝে নিতে হয় । তাছাড়া আমি আবার সবার মন কথা বুঝতে পারি । ”

– “এতো ভাবতে তো আপনাকে বলিনি । এখন যদি একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতো ? ”

– “তো কি আর হতো ? বড়জোর মরেই যেতাম ! এর থেকে বেশি আর কি হতো । ”

উনার কাছে আমার কথাটা যেন খুব তিক্ত লেগেছে । আমার দিকে রাগী চোখে তাকায় । আমিও আর কথা বাড়াইনা ।অগ্নি থেকে রাক্ষসরাজ হতে সময় লাগবে না ।
বেশি রাগীয়ে দিলে এখন আছাড় মেরে ব্যাঙ বানিয়ে ফেলবে । যা আমি কিছুতেই হতে চাইনা । একদম হতে চাইনা !
বেড থেকে গাড়ি পর্যন্ত আনা অব্দি পুরোটা সময় আমাকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছিলো । এমনকি লিফটেও । আশেপাশের মানুষজন সবাই হা হয়ে তাকিয়ে ছিলো । কানাকানি করছিলো । আমি লজ্জায় শেষ । কিন্তু উনি ? উনি এমন স্বাভাবিক ছিলো যে কিছুই হয়নি । গাড়িতে এনে আমাকে নিজের পাশের সিটে বসিয়ে সিটটা পিছনের দিকে হ্যালিয়ে দেয় । আপু বেশ কয়েকবার বলেছিলো আপুর সাথে পিছনে বসতে কিন্তু উনি শুনতে নারাজ । গাড়ি ড্রাইভিং এর সময় বেশ কয়েকবার আমার দিকে আড়চোখে তাকায় । আমিও তাকাই । একসময় আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ হয়ে আসে । ঘুমের দেশে তলিয়ে যাই ।

_______________________

বাড়িতে আসতেই জানতে পারি আভরিনকে তার নানুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে । আমরা যতদিন এখানে আছি আভরিন সেখানেই থাকবে । সাথে ছোট মামীও গিয়েছে।উনারা ঐ জায়গা থেকেই ইয়াশা আপুর বিয়ের সব ফাংশন এ্যাটান্ট করবে ।
বাড়ি তে আসতেই সবাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে । একএক করে সবাই দেখা করে যায় । আমার হালচাল জিগ্যেস করে । নানুজান তো আভরিনের এসব কু কান্ডতে খুব দুঃখী । বার বার কান্না করে দিচ্ছিলেন ।
বিকেল পর্যন্ত সবাই আমার কাছেই ছিলো । বেলা ডুবার আগে যার যার রুমে চলে যায় । হিয়া আপুও নিজের রুমে রেস্ট নিতে গেছে । কাল থেকে আপুর উপর তো আর ধকল কম যায়নি । আমি মুখ বাকিয়ে বসে আছি । খুব বোরিং লাগছে । অগ্নিও রুমে নেই উনি থাকলে না হয় উনার সাথে একটু ঝগড়া করা যেত । বিরক্তিকর !
আজ বাড়িতে আসুক এই লোক কথা বলবো না । একটুও কথা বলবো না । কি ভাবে নিজেকে ? আমি তার জন্য মরে যাচ্ছি ? উহু একদম না ।
সন্ধ্যা হয়েছে চারদিকে অন্ধ্যকার নেমেছে । আমি এখনো বেডে বসে । হঠাৎই দরজা খোলার শব্দ কানে আসে । সামনে তাকিয়ে দেখি অগ্নি এসেছে । আমি অভিমান করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখি । উনি আমার সামনে এসে বসে আমি আবার অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলি ।
উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে গম্ভির ভাবে তাকিয়ে বললেন ,

– “মুড অফ ? ”

আমি কোনো উত্তর দিলাম না । উনি আবার বললেন,

– “আমার উপর রেগে আছো ? ”

এবারো কিছু বললাম না । শুধু একবার আগুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চোখজোড়া বন্ধ করে নেই । আচমকা উনি আমার গাল চেপে উনার মুখের সামনে টেনে আনে । আমার চোখে চোখ রেখে নেশাপ্রবণ ভাবে তাকিয়ে মাতাল কন্ঠে বললেন ,

– “এই সুন্দরীইই ,খুব কি রেগে আছো ? ”

আমি উনার চোখে আর মাতাল করা কন্ঠে ডুবে যাচ্ছি । খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে ,না অগ্নি আমি কি আপনার সাথে রেগে থাকতে পারি ? আপনার সাথে কি রেগে থাকা যায় ? বলুন ? আপনার দু গাল ধরে শুধু টিপে দিতে ইচ্ছে করে । আপনার এই আদুরে কথা গুলোকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে । ইসসস এই কথা গুলো খেতে না জানি কতটা মিষ্টি হবে । হায়য়য়!!!
কিন্তু আমি তা কিছু বললাম না । নিজের মন কে সিন্দুকবন্ধি করে ।
উনার থেকে নিজের গাল ছাড়িয়ে গলা ঝেড়ে বললাম ,

– “আমি রাগ করলেই কি ? আর না করলেই কি? আপনার কি কিছু আসে যায় ?
আমি কি আপনার কিছু হই ? ”

উনি আবার আমার মুখ নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন ,

– “হুম আমার অনেক কিছু আসে যায় ।আমার সুন্দরী আমার সাথে রেগে থাকলে আমার কষ্ট হয় তো । খুব কষ্ট হয় । এই যে বুকের এই জায়গাটায় খুব পোড়ায় ! ”

আমি উনার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাই । উনি কি ড্রাংক ? মনে তো হচ্ছে তাই ই । আমি সন্দিহান চোখে উনার দিকে আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে উনার কাছে যেয়ে নাক উঁচু করে ঘ্রাণ শুনি ।
হুম যা সন্দেহ করেছি তাই ই । উনি ড্রাংক । আমি কি করে ভুলে যাই এই ব্যাটা যে কাবির সিং মেক্স প্রো ? হাউ ?
আমার বুঝা উচিত ছিলো যে সজ্ঞানে কোনো দিন আমার সাথে এত সুন্দর করে কথা বলবেনা । নিশ্চিত ড্রাংক হয়েই আমার কাছে আসবে ।
আমি বুঝিনা এই লোকের এতো কিসের জ্বালা ? আমি উনার কাছে থেকে সরে যাই ।
উনি আমাকে হুট করব কোলে তুলে নেয় । আমি উনার থেকে ছাড়া পাবার চেষ্টা করি কিন্তু বিশেষ কোনো কাজ হয় না । উনি আমাকে নিয়ে বারান্ধার দিকে পা বাড়ায় ।

______________________

উনি আমাকে জোর করে নিজের কোলে বসিয়ে রেখেছে । আমি নড়তে পারছিনা একদম । উনি আমার কমোড়ে হাত পেঁচিয়ে খুব শক্ত করে ধরে আছে । আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকাচ্ছি ।কিন্তু উনি আমার রাগকে কোনো তেক্কার দিচ্ছেনা । আমার কাধে নিজের থুতনি ঠেকিয়ে আছে । উনার খোঁচা খোঁচা দাড়ি আমার কাধে ঘষা লাগছে । আমি উনার থেকে ছাড়া পাবার জন্য ছটফট করছি । উনি ধমকের স্বরে বললেন ,

– “আমি কি তোমাকে কামড়াচ্ছি ? এভাবে ছটফট করছো কেন ? ”

– “আপনি ড্রিংক করে এসেছেন আমি এক মুহূর্তও আপনার সাথে থাকতে চাইনা । ছাড়ুন আমাকে ! ”

আমি নিজের হাত পা আবার ছুটাছুটি করতেই উনি জোরে এক ধমক দেয় । আমি ভয়ে চুপচাপ বিড়ালের মত বসে থাকি ।দুজনের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করে । উনিই আমার গালের সাথে নিজের গাল লাগিয়ে আদুরে গলায় বললেন,

– “আচ্ছা স্যরি । ”

আমি চুপ করে আছি । উনি আবার আগের মত একই ভাবে বললেন ,

– “স্যরি তোওও । এবার তো একটু হাসো ! ”

আমি এবারো চুপ । উনি উনার জেকেটের পকেট থেকে ferrero rocher এর একটা চকলেটের বক্স বের করে আমার সামনে রাখে । আমি নিতে নেই উনি সরিয়ে নিয়ে বললেন ,

– “এত সহজে দিচ্ছিনা । আগে হাসো তার পর দিবো । ”

আমি ঠোঁট বাকিয়ে একটা প্লাস্টিক হাসি দেই । উনি মুচকি হেসে আমার হাতে বক্সটা দেয় । আমি তাড়াতাড়ি করে বক্স খুলে একটা চকলেট নিয়ে মুখে পুড়ে দেই । যত যাই হোক চকলেটের জন্য সব ভুলতে রাজি । চকলেট আমার সবরকম মন খারাপের মেডিসিন ।আমি চোখ বন্ধ করে আবেশে খাচ্ছি ।
হঠাৎ চোখ খুলে দেখি উনি আমার দিকে গাঢ় চোখে তাকিয়ে । আমি কিছু জিগ্যেস করার আগে উনি বলতে লাগেন ,

– “স্যরি আমার জন্য তোমাকে কাল এতকিছু সয্য করতে হয়েছে ! ”

– “কি আর করার এখন বর এতো হ্যান্ডসাম হলে জীবনের রিস্ক তো একটু আকটু থাকেই । ”

– “আচ্ছা তাই বুঝি ? ভালোবাসা কি চেহারা বা সৌন্দর্য দেখে হয়? ”

আমি চকলেট খেতে উত্তর দেই ,

– “হয়তো ! কিন্তু তা সবার জন্য না । কিছু কিছু মানুষ সৌন্দর্য কে ভালোবাসে । ”

উনি উদাসীন ভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন ,

– “কই আমার তো এমন হলোনা ।আমি তো সুপ্তিকে না দেখে কিছু না জেনেই ভালোবেসেছি । ওর গান ,ওর সুর ,ঘন্টার পর ঘন্টা ওর সাথে ফোনে কথা বলাটাকে ভালোবেসেছি ।ওর আওয়াজ কে ভালোবেসেছি । ”

উনার কথায় মুখের চকলেট টাও তিতা বিষ লাগছে । খুব কি দরকার ছিলো এই মুহূর্তটায় সুপ্তির নাম নেওয়া ? ঐ যে বলে না জাতে মাতাল তালে ঠিক । আমাকে কোলে বসিয়ে সুপ্তির নাম জপছে । আমি জোর করে উনার কোল থেকে উঠে রুমে চলে আসি । রুমে বেডে বসে শ’খানেক উনাকে গালি দেই । বদ লোক আমাকে কোলে নিয়ে সুপ্তির নাম জপা হচ্ছে ? যাবো না আর এই বদ লোকের কাছে । হুহ !

কিন্তু উনার একটা কথা কিছুতেই মাথায় ডুকছে না । সুপ্তি আবার কবে থেকে গান শুরু করলো ।স্কুল লাইফ থেকেই ওর নাচের প্রতি ঝোপ বেশি ।সব সময় স্কুল কলেজে আমি গান গাইতাম । অকে গান গাইতে বললে বলতো । ওর গানের গলা খুবই বাজে ।
তাহলে অগ্নি ঐসব কি বললো? এগুলো কি নেশার ঘোরে বলেছে নাকি সত্যিই অন্যকিছু ?
#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ১৭

দুইদিন কেটে যায় । আজ অনেকটাই সুস্থ । সেদিনের পর থেকে অগ্নির সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছি । অগ্নি নিজ থেকে বেশ খোঁচাখুঁচি করে যেন উনার সাথে কথা বলি কিন্তু আমি নিজের থেকেই ইচ্ছে করে উনার কোনো কথায় কোনোরকম রিয়েক্ট করিনা ।
আজ সবাই একসাথে শপিং এ যাচ্ছি । ইয়াশা আপুর হবু বর অনয় ভাইয়াও আসছে । শপিং এর বাহানায় মিট করাও হয়ে যাবে ।
সকালে ব্রেকফাস্ট করে সবাই শপিং এর উদ্দেশ্যে রওনা হই । গাড়িতে ইচ্ছে করে ইয়াশা আপুর সাথে বসি ।যেন অগ্নির পাশে না বসতে হয় । ত্রিশ মিনিটের মাঝে শপিং মলে এসে পৌছিয়ে যাই । অনয় ভাইয়া আমাদের পৌছনোর আগেই এসেছে । ইয়াশা আপু ভাইয়াকে দেখেই লজ্জায় লজ্জাবতী হয়ে যাচ্ছে ।ভাইয়ার সাথে আমাদের সবার পরিচয় হয় । ভাইয়া স্টাডি শেষ করে নিজেদের ফেমিলি বিজনেস দেখাশোনা করছে । অনয় ভাইয়া খুব ফ্রি মাইন্ডেড আর স্মার্ট । ইয়াশা আপুর সাথে খুব মানিয়েছে ।
ইয়াশা আপু লজ্জায় বার বার আমাদের পিছনে লুকাচ্ছে । বিয়ের আগের অনুভূতি গুলো হয়তো এমন হয় । তাই না ?
নিজের হবু স্বামী কে দেখে লজ্জায় লাল হওয়া ,বিয়ে নিয়ে হাজারো কল্পনা জল্পনা সাজানো ,হাজারো স্বপ্ন গড়া । কিন্তু সবার ভাগ্যে কি আর তা জুটে ? এই যে আমার ভাগ্যেতেই তো নেই । কোনো জল্পনা কল্পনা স্বপ্ন ছাড়াই বিয়ের পিড়িতে বসেছিলাম । মনে ছিলো আতংক আর ভয়। বিয়ের পর না পেয়েছি স্বামীর সোহাগ । না কপালে আছে স্বামীর ভালোবাসা । এসব ভেবে বড় এক চাপা নিশ্বাস ছাড়ি ।
সবাই যার যার মত শপিং এ ব্যস্ত । আমার তেমন কিছু কেনাকাটার নেই ।আশেপাশে ঘুরে দেখছিলাম । জুইলারী শপের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎই একটা ছোট ফটোফ্রেম টাইপ হার্ট পেনডেন্ট দিকে চোখ আটকায় । অসম্ভব সুন্দর । লাভ শেপের পেনডেন্টের চার দিকে ছোট ছোট হোয়াইট স্টোন সেট করা । আমি চোখ ফিয়িয়ে অন্যদিকে তাকাই । এটা আমার জন্য নয় । এইসব তো মেমোরি পেনডেন্ট । এই পেনডেন্টে নিজেদের প্রিয়জনের ছবি রাখে । কিন্তু আমার প্রিয়জনের প্রতি তো কোনো অধিকারই নেই ।সেখানে ছবি আর স্মৃতি তো অনেক দূর !

______________________

গাড়ি চলছে পতেঙ্গা সিবিজের উদ্দেশ্যে । দুপুরের শেষ ভাগ । সূর্যমামা পশ্চিমা আকাশে আস্তে আস্তে ডলে পড়ছে । দ্রুত বেগে গাড়ি চলায় আশেপাশের সবকিছু চোখের পলকেই হারিয়ে যাচ্ছে । বেশকিছু সময় পর গাড়ি পতেঙ্গা সিবিজে পৌছায় । গাড়ি থেকে নামতেই স্নিগ্ধ শীতল হাওয়া ছুঁয়ে যায় ।সমুদ্রের ঢেউয়ের শো শো আওয়াজ আর বিশাল জলরাশির মিলন দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় । জল আর স্থলের এক অপরূপ সমাবেশ । এর শুরু তো দেখা যাচ্ছে কিন্তু শেষ ? অজানা ! এর গভীরতা আমাকে খুব গভীর ভাবে আকর্ষন করছিলো । আস্তে আস্তে সামনের দিকে নিজের পা বাড়াই । চারিদিকে শতশত লোকের আলাপন । যে যার মত ব্যস্ত । ব্রিজের পাশেই বিভিন্ন রং এর বসার সিট বানানো।নীল ,আকাশী ,সবুজ আরো অনেক রংয়ের । স্থানীয় লোকেরা ঘোড়া নিয়ে ঘুরছে । অনেক পর্যটক ঘোড়ার পিঠে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ।
ব্রিজের উপরের দিক থেকে নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পাই বড় বড় ঢেউ গুলো কংক্রিটের ব্লগ গুলোতে আচড়ে পড়ছে । মনে বেশ লোভ জাগছে এই সমুদ্রের ঢেউ এ নিজের পা ভেজানোর । তাই সেদিকে এগিয়ে যাই ।হ্ঠাৎই অগ্নি কোথা থেকে এসে জানো আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরে । আমি ঘাড় উঁচু করে উনার দিকে জিগীষু দৃষ্টি তে তাকাই । কিন্তু তার কোনো পাত্তাই নেই !
এটিটিউড নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করেছে । আমার দৃষ্টি অগ্নির দিকে । গভীর ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি । ইশশশ ! এতো সুন্দর কেন এই লোক ? পাগল করা সুন্দর । এই লোক কি বুঝে উনার প্রত্যেকটা চাহনি প্রত্যেকটা কথা আমার বুকে যেয়ে তীরের মত আঘাত করে । উনি আমাকে নিয়ে সমুদ্রে পা ভেজানোর জন্য নিচের দিকে আসে । আমি তখনো উনার দিকে তাকিয়ে । আশেপাশের লোকজন কি বলবে না বলবে আমার তাতে কোনো কিছু যায় আসেনা । মাথায় কোনো কিছু কাজ করছে না । পুরো মাথা অগ্নি আর অগ্নিতেই হ্যাং হয়ে আছে । এই মুহূর্তে আমি অগ্নিকে গভীর ভাবে দেখতে ব্যস্ত । পড়নে ব্লাক শার্ট হাতাটা ফোল্ড করা ।উনাকে বেশ মানিয়েছে । ফর্সা গায়ে একদম ফুটে আছে । চুল গুলো পিছনের দিকে ব্রাশ করা । ঠোঁটের নিচের তিলটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে । আর উনার সমুদ্রের মত গভীর চোখজোড়া সামনে সমুদ্রের মাঝে ডুবে । আর উনার এটিটিউড ? তা আর নাই বলি ।এই এটিটিউড যেই কোনো মেয়েকে ফিদা করতে যথেষ্ট ।
আমি শুধু উনার মাঝে ডুবে আছি । এমন মানুষের সাথে কি আদো রেগে থাকা যায় ? উনার স্পর্শের সাথে সাথেই রাগ গায়েব হয়ে গিয়েছিলো ।
উনি গম্ভির আওয়াজে বললেন ,

– “আমাকে না হয় বাড়িতে ফিরে মন ভরে দেখ ! আপাদত্ত যা দেখতে এসেছো তা দেখ । ”

আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেই । ইশশ ! কি লজ্জা ,লজ্জা ।
এভাবে না ধরে খেলেও হতো । উনি তো সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলো তাহলে উনি কি করে জানলো আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি! ম্যাজিক ? হয়তো ।
আশে পাশে চোখ যেতেই দেখতে পাই জায়গায় জায়গায় কপত কপতি গভীর ভাবে জড়িয়ে আছে । সমুদ্রের এই অপরুপ সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করছে । আমি চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তা দেখছি । আচমকাই অনুভব করলাম অগ্নি আমার কমোড় টেনে মাঝের গ্যাপ পূর্ন করেছে ।আমি উনার দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি উনি খুব স্বাভাবিক ভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে । আমিও নিজের থেকে একটু দুর্সাহস দেখিয়ে অগ্নির হাতের আঙ্গুলের ভাজে নিজের আঙুল গুজে দেই । উনার কাঁধে নিজের মাথা রাখি । উনি কি এতে রেগে গেছেন ? রাগলে রাগুক তাতে কি! এই মুহূর্তে আমি নিজের মনকে কোনো প্রকার বাঁধা দিতে চাই না । এই মুহূর্তে আমি নিজের মত করে উনার সাথে সময় কাটাতে চাই । এই সময়টায় অগ্নি আমার । শুধুই আমার । উনার উপর এই সময়টার উপর শুধু আমার অধিকার ।
বিকেলের শেষ প্রহর পশ্চিমা আকাশে সূর্য ডলে পড়ছে । সমুদ্রের জলরাশি তখন আগুন রাঙা হলদেটে রঙ ধারণ করেছে । মনে হচ্ছে পৃথিবী কে আদার করে সূর্য সমুদ্রের মাঝে সমাধি নিচ্ছে । সমুদ্রের ঢেউ আমাদের পা ছুয়ে দিচ্ছে । নিজের ভালোবাসার মানুষের কাঁধে মাথা রেখে এই অপরূপ দৃশ্যকে চোখের পাতায় বন্ধি করি ।

________________________

আজ ইয়াশা আপুর হলুদ । পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। একদম নতুন বউয়ের মত । বাহারি রঙের আলো আর ফুলে খুব সুন্দর ভাবে সাজানো । আজকের ফাংশনে সবার ড্রেসকোড কাঁচা হলুদ আর সাদা। সেই সুবাদে হলুদ আর সাদা কম্বিনেশন লেহেঙ্গা পড়েছি । চুল গুলো মিডল কার্লি করে ছেড়ে দিয়েছি । আর্টিফিশিয়াল ফ্লাওয়ারের টিকলি আর কানে দুল পড়েছি। হাতে হলুদ সাদা মিক্সড কাচের মধ্যে স্টোন বসানো চুড়ি । সিম্পল মেকআপ লুক করেছি । সবশেষে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নেই । না খারাপ লাগছে না । বেশ ভালোই লাগছে । অগ্নির পছন্দ হবে তো ?
এমন সময়ই হিয়া আপুর ডাক পরে । চলে যাই বাগানের দিকে সেখানেই সব আয়োজন করেছে । ছেলেপক্ষের লোকজন এসে গেছে । কিন্তু অগ্নি কই ? আমি অগ্নিকে খুঁজে যাচ্ছি । যার জন্য এতো সাজগোজ সে কোথায় ? তার কোনো দেখাই নেই !
পিছন থেকে খুব চেনা স্বর ভেসে আসে । তাকিয়ে দেখি উৎস ভাইয়া একগাল হাসি নিয়ে দাড়িয়ে । আমি উনাকে এখানে দেখে খুব অবাক হয় । উনি এখানে কি করে ?
উৎস ভাইয়া আমার কাছে এসে বললেন ,

– “আরে হুর তুমি? এখানে কি করে ? ”

– “আগে এটা বলুন আপনি এখানে কি করে ? ”

উনি মুচকি হেসে বললেন,

– “আমি বর পক্ষ থেকে এসেছি । অনয় আর আমি সেম ব্যাচ একসাথে ঢাকা ইউনিভারসিটি তে স্টাডি করেছি । ”

– “ও আচ্ছা । আমি কনেপক্ষ । অগ্নির কাজিন ইয়াশা আপু। ”

– “তো বলো কেমন আছো ? ”

– “এই তো ভাইয়া ভালো । আপনি কেমন আছেন? ”

– “এই তো যেমন তুমি দেখছো ।বায় দ্যা ওয়ে ইউ লুকিং গর্জিয়াস । ইয়ালো তে হলদে পরী লাগছে । ”

আমি লাজুক হেসে উত্তর দেই ,

– “ধন্যবাদ ভাইয়া । ”

উৎস ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম এমন সময়ই চোখ যায় স্টেজের দিকে । অগ্নি আমার দিকে নিজের অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে । মনে হচ্ছে এই দৃষ্টি তে আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিবে । ইয়া আল্লাহ এবারের মত বাঁচিয়ে দিও । আমি এতো তাড়াতাড়ি এই দুনিয়া ত্যাগ করতে চাই না।উনাকে রাক্ষসরাজ থেকে চকলেট বয় অগ্নি করে দেও । প্লিজ প্লিজ ।

চলবে ….❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন । ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন 😊😊😊😊 ।
চলবে …..❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন । ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন । 😊😊😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here