#শালিক_পাখির_অভিমান
#পব_১৪
#অধির_রায়
বেনারসি শাড়ি পড়ে বসে আছি৷ সোনার গহনা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছেন আমাকে৷ এতো ভারী সোনার গহনা আমার কাছে অসহ্য লাগছে৷ আমার চোখ থেকে অনবরত অশ্রুর ধারা গড়িয়ে পড়ছে৷ নেই কোন আয়োজন। শুনতে পেলাম কাজী সাহেব চলে আসছে৷ মালী কাকার ফোন নিয়ে একের পর এক ফোন করে যাচ্ছি ইহান ভাইয়াকে। ভাইয়া এখনও ফোন তুলছে না৷ ভাইয়া বলেছে দুপুর বারোটার মাঝে চলে আসবে৷ দূরন্ত দুপুরের একটা ছুঁই ছুঁই। ইহান ভাইয়া কি আসবে না? বুকের মাঝে তীব্র ব্যথা হচ্ছে৷ ধম বন্ধ হয়ে আসছে৷ শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। পারব না আমি কিছুতেই এ বিয়ে করতে৷ আফসানা চৌধুরী রুমে কখন এসেছেন জানা নেই। চোখের জল মুছে বলল,
“কান্না করো না৷ মেয়েরা কখনও স্বামী ছাড়া একা এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারেনা৷ কি অদ্ভুত নিয়ম বানিয়েছে? ডাইনিং রুমে সবাই বসে আছে। তারা চাচ্ছে তাড়াতাড়ি বিয়ে পড়াতে৷”
বাল্যবিবাহ নিয়ে পুলিশকে ফোন দিয়ে জানানো হয়েছে৷ তারাও তো আসল না৷ টাকা দিয়ে কি পুলিশ কিনে নিয়েছে? আজ গরিবের পাশে কেউ কি দাঁড়াবে না? আমার বিয়ে হলে আমি কিভাবে ইমন ভাইয়ার মুখোশ টে’নে হি’জ’ড়ে খুলব? যার জন্য আমার জীবনে ভ’য়া’ব’হ সময় যাচ্ছে৷ তাকে ছেড়ে দিলে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না৷ আল্লাহ সকল ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করেতে বলেছেন৷ সকল পরিস্থিতিতে আমাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে৷ আমি কিছুতেই ধৈর্যহারা হবো না৷ আফসানা চৌধুরী গম্ভীর গলায় পুনরায় বলল,
“কি হলো শালিক! এখনও সেই একইভাবে বসে আছো৷ সবাই অপেক্ষা করছে তোমার জন্য৷ অবাধ্য হওয়ার কোন পথ নেই৷ আমরা কথা দিয়ে ফেলেছি৷”
আফসানা চৌধুরীর হাত ধরে ভেজা গলায় বললাম,
“ম্যাডাম আমার মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। আমার শুভ কাজে তাদের কাউকে পাশে পেলাম না৷ আমার মতো অপয়া, হতভাগ্য সম্পুর্ন মেয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় কেউ নেই৷”
আফসানা চৌধুরী আলতো করে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার কন্ঠে বলল,
“জন্ম, মৃ’ত্যু, বিয়ে তিন আল্লাহ হাতে৷ সেখানে আমাদের কোন হাত নেই৷ আল্লাহ তোমার মা বাবাকে অনেক ভালোবাসাতেন। সেজন্য তিনি তাদের তাড়াতাড়ি নিজের কাছে নিয়ে গেছেন৷”
এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে শান্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ভেজা আহত কন্ঠে বললাম,
“ম্যাডাম আমি দুই রাকাত সালাত আদায় করতে চাই ৷ আমার মা বাবার কাছে দোয়া চাবো৷ আমাকে দুই রাকাত সালাত আদায় করার সময় টুকু দেন৷”
আফসানা চৌধুরী মুচকি হেঁসে জবান দেন,
“তুমি সালাত আদায় করে চলে আসো। শুভ কাজের আগে সালাত আদায় করা অতি জরুরি। যার সাথে তোমার বিয়ে হবে তাকেও আমি বলি সালাত আদায় করতে।”
আফসানা চৌধুরী চলে গেলেন৷ সবাই আমাকে নিরাশা করলেও মহান আল্লাহ আমাকে নিরাশা করবেন না৷ আমি এই বিয়ে আটকানোর সমস্ত দায়িত্ব আল্লাহ হাতে ছেড়ে দিলাম৷ সালাতে বসে আল্লাহ কাছে অঝোরে কান্না করতে করতে ভেজা গলায়,
“হ্যাঁ আল্লাহ! আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না৷ আমার স্বপ্ন পূরণে সহায় হোক৷ আপনার ভরসায় আমি এতদূর এসেছি৷ মাঝপথে আমার স্বপ্ন ভেঙে দিবেন না। আমি আজ নিজ থেকে বিয়ে ভেঙে দিব৷ আমি আর উপেক্ষা করতে পারব না কারোর জন্য৷”
মুনাজাত শেষ করে পিছনে ফিরে ইহান ভাইয়াকে দেখতে পেলাম৷ ঘেমে একাকার হয়ে গেছে৷ ফর্সা দেহ লালচে বর্ণ ধারণ করেছে৷ সাদা শার্ট ঘেমে দেহের সাথে মিশে আছে৷ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার দিকে৷ আমার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“শালিক তোমাকে কোন চিন্তা করতে হবে না৷ আমি একা আসিনি৷ আমার সাথে অনেক পুলিশ এসেছে৷ এখন যা করার তোমাকেই করতে হবে৷ আমি তোমার পিছন পিছন আসতেছি৷”
সাহস জুগিয়ে রুম থেকে বের হলাম৷ আমাকে মাঝ বয়সী একজন লোকের সাথে বসিয়ে দেওয়া হলো৷ তার মানে এই লোকের সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে৷ এর আগে কখনও উনাকে দেখিনি৷ উনাকে দেখে আমার বাবার বয়সী লাগছে৷ কাজি সাহেব বিয়ের কাজ শুরু করার আগে আমি বললাম,
“আমি মাঝবয়সী ব্যক্তিকে বিয়ে করতে পারব না৷ আপনার লজ্জা করে না মেয়ের বয়সী অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে আসছেন৷”
আমার কথায় ইমন ভাইয়ার চোখ লাল হয়ে যায়৷ হুংকার দিয়ে বলল,
“তোকে এ বিয়ে করতেই হবে৷ তোর জন্য আমি যাকে ঠিক করেছি তাকেই বিয়ে করতে হবে৷ আমার কথার অমান্য কিছুতেই হতে দিব না৷”
ইমন ভাইয়ার রিয়েক্ট দেখে বুঝতে পারলাম সবকিছু। ইমন ভাইয়া আমাকে নিয়ে খেলতে চান৷ আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লাম৷ গম্ভীর কন্ঠে,
“আমার জীবন নিয়ে খেলা করার দায়িত্ব আপনার নেই৷” মাঝবয়সী লোকটার কলার ধরে উঁচু স্বরে বললাম,
“এই মিয়া কতো টাকা যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে করতে আসছেন৷ পাঁচ লক্ষ টাকার এক টাকা কম হলে বিয়ে হবে না৷ জেলে বসে তুই টাকা হিসাব কর৷ যৌতুকের অপরাধে তোকে জেলে যেতে হবে৷ আমি তোদের সব কথা শুনে নিয়েছি৷”
ইমন ভাইয়া তেড়ে আমার কাছে আসতেই ইহান ভাইয়া পুলিশ নিয়ে ভিতরে আসেন৷ চিৎকার করে বলল,
“ভাইয়া সাবধান। শালিকের গায়ে হাত তুললে তোমার হাত ভেঙে দিব৷ যৌতুকের অপরাধে ছেলে আর ছেলের মাকে গ্রেফতার করেন৷”
ছেলের মা দৌড়ে পুলিশের পা ধারে বলল,
“স্যার আমাদের ক্ষমা করে দেন৷ আমরা সব টাকা ফিরিয়ে দিব৷ এক টাকাও যৌতুক নিব না৷ আমরা যৌতুকের কানা কুড়িও নেই নি। শালিককে আমার ছেলে বিয়ে করবো না৷ আমার ছেলের বউ আছে। আমাদের কোন দোষ নেই৷ সব দোষ ইমন সাহেবের৷ উনি আমাদের টাকা দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছেন৷”
সকলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল৷ ইমন ভাইয়া বুঝতে পারেনি তার দিকে তীরের ভান ছুটে আসবে৷ ইমন ভাইয়া চিৎকারে করে বলল,
“এই মহিলা সব মিথ্যা কথা বলছে৷ আমি তাদের এর আগে কোনদিন দেখিনি৷ আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে৷ মা বিশ্বাস করো৷ শালিক আমাকে ফাঁসাচ্ছে৷ আমি শালিককে কিছুতেই ছাড়ব না৷”
মহিলাটি আফসানা চৌধুরীর পা ধরে বলল,
“বিশ্বাস করেন ম্যাডাম আমাদের কোন দোষ নেই৷ আমাদের ফোনের কল রেকর্ড চেক করলেই বুঝতে পারবেন৷ আমরা কোন মিথ্যা কথা বলছি না৷ আমরা গরিব মানুষ৷ টাকার জন্য আমরা এসব করতে রাজি হয়েছি৷ ইমন সাহেব বলেছেন শালিককে বিয়ে করে বাড়ি থেকে বের করতে৷ তারপর শালিককে কোথায় জানি পাঠাবে? তাঁকে বাড়িতে তুললে হবে না৷ আমার ছেলের বউ সন্তান আছে৷ আমার ছেলেকে জেলে দিবেন না৷”
আফসানা চৌধুরীর মুখে কোন কথা নেই৷ তিনি মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছেন৷ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন৷ ইমনকে এতো করে বুঝানোর পরও সে এমন কাজ কিভাবে করল? ধপাস করে সোফায় বসে পড়ল। ইহান ভাইয়া বলল,
“স্যার এদের তিনজনকেই গ্রেফতার করেন৷ তিনজনই যৌতুকের সাথে জড়িত৷ একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে তিনজন৷ আপনারা নিজেদের কাজ করেন৷”
ইমন ভাইয়া আমার সামনে হাত জোর করে বলল,
“শালিক বোন আমার৷ আমাকে পুলিয়ে ধরিয়ে দিও না৷ শ্রুতি জানলে অনেক কষ্ট পাবে৷ আমার সংসার ভেঙে যাবে৷ আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি৷ আর কোন অন্যায় করব না৷ তোমার সব কথা মেনে চলব৷ আমাকে ধরিয়ে দিও না৷”
ঘৃণায় বলে উঠলাম,
“আপনাদের মতো লোকদের একটু শাস্তি না হলে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবে না৷ আপনি সব সময় আমাকে..। থাক আমি কিছু বলতে চাইনা৷ নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে৷ স্যার এদের নিয়ে যান৷”
বাড়ির মালিক শরীফ চৌধুরী সোফার এক কোণে বসে আছেন৷ উনার মুখে কোন কথা নেই৷ উনি সকল বিষয়ে যথেষ্ট ভালো সিদ্ধান্ত নেন৷ সকল পরিস্থিতিতে তিনি তার বুদ্ধি মত্তার পরিচয় দিয়েছেন৷ আজ কেন এভাবে চুপচাপ বসে আছেন? উনি ছেলের অপরাধ নিজ চোখে দেখবে ভাবতেই পারেনি৷ পুলিশ ইমন ভাইয়াকে ধরে নিয়ে গেল৷ ইমন ভাইয়া অনেক আকুতি মিনতি করল৷ কেউ তার কথা শুনল না৷ কাজি সাহেব চলে যেতে নিলেই ইহান ভাইয়া বলল,
“কাজি সাহেব আমি শালিককে বিয়ে করতে চাই৷ শালিকের স্বপ্ন পূরণের সঙ্গী হতে চাই৷ আমি শালিককে নিজের স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করব৷”
শরীফ চৌধুরী আর চুপ থাকতে পারলেন না৷ এবার মুখ ফুটিয়ে বলল,
“আমি এ বিয়ে কিছুতেই মানব না৷ তুমি শেষে কিনা কাজের মেয়েকে বিয়ে করবে৷ সমাজে আমাদের একটা মান সম্মান আছে৷ আমি কিছুতেই নিজের মান সম্মান নিয়ে তোমাকে খেলা করতে দিব না৷ ফর্সা হলেও একটা কথা ছিল৷ এমন কালো মেয়েকে আমার বাড়ির বউ হিসেবে মানব না৷”
ভাইয়ার কথা শুনে আমি স্তব্ধ। ভাইয়া আমাকে বিয়ে করতে চান৷ আমি নিজস্ব কানকে নিশ্বাস করতে পারছি না৷ আমার সাথে আমার কানও প্র*তা*র*ণা শুরু করল৷ ফ্লোরে মাথা নিবদ্ধ করে ভেবে যাচ্ছি৷ ভাইয়া দেখতে মাশাল্লাহ খুব সুন্দর। সুদর্শন যুবক আমার মতো অপয়া কালো মেয়েকে বিয়ে করতে চান কেন?আফসানা চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিল,
“শালিকের জন্য আমার সংসারে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে৷ আমি শালিকের মুখটাও দেখতে চাইনা৷ আজ গুরুজনদের কথা মনে পড়ছে খুব৷ যাদের চেহারা কালো তাদের মনটাও কালো৷ আমি শালিককে সাদা মনের মানুষ ভাবছিলাম।”
আফসানা চৌধুরী হন হন করে সিঁড়ি বেয়ে চলে যান৷ কথার তীর মানুষকে আহত করতে সময় নেয় না৷ বুকের মাঝে তীব্র ব্যথা হচ্ছে৷ বুক ফেটে অঝোরে কান্না চলে আসছে৷ ভেজা আহত গলায়,
“ভাইয়া আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না৷ আমি এই বাড়ি থেকে অনেক দূর চলে যাব৷ এদের চোখে এখনও বিশাল পর্দা বিরাজ করছে৷ আমি কিছুতেই এ বাড়িতে থাকতে পারব না৷ পৃথিবীতে সবাই চামড়া দিয়ে মূল্য বিচার করে৷”
আমি দ্রুত পায়ে রুমে চলে আসি। কপাট বন্ধ করার আগেই ইহান ভাইয়া রুমে ঢুকে পড়েন৷ আহত কন্ঠে বলল,
“শালিক আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমাকে নিয়ে আমার খুব ভয় হয়৷ আমি তোমাকে হারাতে পারব না৷ আমি তোমাকে হারালে মা*রা যাব৷ একটু আগে তোমাকে হারাতে বসেছিলাম৷ আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছিল৷ আমি দুনিয়ার সবকিছু ভুলে গেছিলাম৷”
আমি হাত জোড় করে বললাম,
“আপনি আমার কালো অতীত জানেন না৷ আমার কালো অতীত জানলে আমাকে আপনি কখনও বিয়ে করতে রাজি হবেন না৷ আমি কিছুতেই আপনাকে বিয়ে করতে পারব না৷”
“তোমার অতীত যেমনই হোক৷ আমি তোমার ভবিষ্যৎ হবো৷ অতীতের কোন কষ্ট তোমার ধারের কাছেও আসতে দিব না৷ সব সময় তোমাকে আগলে রাখব৷ তোমার সুখ হবে আমার সুখ৷ তোমার চোখে দেখব আমি বিশ্ব।”
“আমি আপনার পায়ে পড়ি৷ আপনাকে আমি ভাইয়ের নজরে দেখি। আপনাকে কখনও আমি স্বামীর নজরে দেখতে পারব না৷ আপনি আমার পথ নির্দেশক।”
“আমি তোমার পথ চলার সাথী হব। তোমার মন ভালোবাসা দিয়ে জয় করব৷ যেদিন তুমি নিজ থেকে আমার কাছে আসবে সেদিন আমার ভালোবাসা পূর্ণ হবে৷ আমি তোমাকে কোন জো*র জব*র*দ*স্তি করব না৷”
“আপনি আমার অতীতের কোন কিছুই জানেন না৷ আমার অতীত খুব ভ*য়া*ন*ক। ভাবতেই ম*রে যেতে ইচ্ছা করে৷ আ*ত্ম*হ*ত্যা ম’হা’পা’প না হলে আজ শালিক বেঁচে থাকত না৷ অনেক আগেই আল্লাহর কাছে চলে যেত৷ শালিকের অস্তিত্ব পৃথিবীতে বিলীন হয়ে যেত৷ শালিক পাখি নামে কেউ আর পৃথিবীতে জন্ম নিত না৷”
কথাগুলো আটকে আসে৷ কথা বলতে খুব কষ্ট হয়৷ আমার চোখের জল মুছে দিয়ে ভেজা করুন কন্ঠে বলল,
“তোমার অতীত নিয়ে আমি কোন কথা বলব না৷ অতীত যেমনই হোক। আমি তোমার বন্ধু হয়ে সব সময় পাশে থাকব৷ আমিও জানতে চাই তোমার অতীত কি? আমি তোমার অতীত জেনেই তোমাকে বিয়ে করতে চাই৷”
আমি ভেজা গলায় বললাম,
” আমি ডিভোর্সী নারী৷ আমার বিয়ে হয়েছিল৷ স্বামীর চাহিদা মেটানো আমার প্রধান কাজ ছিল৷ প্রতি রাতে নরপশুর মতো আমাকে দা’ন’ব, কু’কু’রে’র মতো ছিঁ’ড়ে খে’য়ে’ছে৷ পি’রি’য়’ড কালীন আমাকে ছাড় পর্যন্ত দেয়নি৷ আপনাকে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই৷ আমি আমার সতীত্ব হারিয়ে ফেলেছি৷ যার সতীত্ব নেই তার জীবনে কোন মূল্য নেই৷ আমি কিভাবে আপনার মতো ছেলেকে আমার নিজের জীবনের সাথে জড়াবো? পারব না আমি আপনাকে নিজের জীবনে জড়াতে। আপনি চলে যান৷ আপনি আমার থেকে ভালো কাউকে পাবেন৷ আমাকে বিয়ে করলে আপনাকে সমাজে মাথা নিচু করে চলতে হবে৷ আমি আপনার মাথা কিছুতেই নিচ হতে দিব না৷ স্যারের মান সম্মান আমি তলানীতে আসতে দিব না৷ স্যারকে আমি বাবার নজরে দেখেছি৷ আমি আমার বাবাকে ভুলে স্যারকে বাবার আসন দিছি৷ যদিও নিজের বাবাকে ঘৃনার নজরে দেখি৷”
আর বলতে পারলাম না৷ হু হু করে কান্না শুরু করলাম৷ ইহান ভাইয়া আমার চোখের জল মুছে দিয়ে আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেন৷ মায়া ভরা কন্ঠে বলল,
“আমি তোমার অতীত জেনেই তোমাকে বিয়ে করতে চাই৷ বাকী পথ তোমার সাথে চলতে চাই৷ আমি তোমাকে কখনও একা ছেড়ে যাব না৷”
সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। ইহান ভাইয়াকে আর ফিরিয়ে দিতে পারলাম না৷ মহান আল্লাহ তায়ালাকে সাক্ষী রেখে আমার নাম ইহান ভাইয়ার সাথে জড়িয়ে নিলাম৷ হয়ে গেলাম সারা জীবনের জন্য ইহান ভাইয়ার অর্ধাঙ্গিনী। প্রতিজ্ঞা করলাম সারা জীবন পাশে থাকব৷ কখনও হাত ছেড়ে চলে যাব না৷ সর্বকালের সঙ্গী হয়ে থাকব৷ বিপদে মুখ ফিরিয়ে নিব না৷ সম্মুখে আসা সকল বিপদের সাথে মোকাবেলা করব ইহান ভাইয়ার হাত ধরে৷ জন্ম জন্মান্তরের আবদ্ধ হলাম৷ পৃথিবীকে হাসাতে না পারলেও মায়া ফুপি আর ইমন ভাইয়াকে হাসাতে পেয়েছি৷ আমার কাছে মানুষ দু’টোর মুখের হাসি সবচেয়ে দামী৷ তাদের এক ফোঁটা হাসির জন্য সবকিছু করতে পারি৷
চলবে….
শালিক আফসানা চৌধুরী ও শরীফ চৌধুরীর মন কিভাবে জয় করবে? আরও একটা যু*দ্ধ শুরু হলো শালিক পাখির৷ ইমনকে আরও গুরুত্বর শা*স্তি দেওয়া হবে৷ রেসপন্স করলে রেগুলার গল্প দিব৷ রেগুলার বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করব৷