#আমি_ফাইসা_গেছি(২০)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
–কি হয়েছে বিয়াইন আপনার?এই অবেলায় শুয়ে আছেন যে?না এতোগুলো মেহমান দেখে মাথা ঘুরে গেছে আপনার।
তোড়ার চাচীর এমন লাগামহীন কথা শুনে কামিনী বেশ রাগান্বিত হলো।কিন্তু সে তার রাগকে প্রকাশ করলো না।এদিকে চামেলি বেগম তোড়ার চাচী কে টেলা দিয়ে বললো, কি বলছিস এসব?উনি কি এসব ইয়ার্কি ঠাট্টার লোক নাকি?
তোড়ার চাচী সেই কথা শুনে আরো উচ্চস্বরে বললো,
তো কি হইছে?বিয়াইন রা ইয়ার্কি ঠাট্টা করবে না তো কে করবে?এই বলে তোড়ার চাচী কামিনী কেও একটা টেলা দিলো।আর বললো তাই না বিয়াইন?আমরা ইয়ার্কি ঠাট্টা করবো না তো কে করবে?
কামিনী সেই কথা শুনে অনেক কষ্টে মুখ থেকে কথা বের করলো।
বললো হ্যাঁ,হ্যাঁ।কোনো সমস্যা নাই।কিছু মনে করি নি আমি।আসলে শরীরে আমার ভীষণ ব্যাথা।এজন্য শুয়ে আছি।এই বলে কামিনী উঠতে ধরলে চামেলি বেগম বললো, থাক থাক উঠতে হবে না বিয়াইন।আপনি শুয়েই থাকুন।শুয়ে থেকেই কথা বলুন।
বিছানার পাশে বসা জারিফ চৌধুরী কামিনীর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।কামিনীর শরীরে যে এতো ব্যাথা সে তো নিজেই জানে না।জারিফ চৌধুরী সবার সামনে আর কামিনী কে এ বিষয়ে কিছু বললো না।তিনি চামেলি বেগমকে বললেন,বিয়াইন আমাদের বিয়াই সাহেব কই?ওনাকে দেখছি না যে?
চামেলি বেগম তখন জারিফ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো,উনি জামাই বাবাজির সাথে একটু বাহিরে গেছে।
কামিনী তা শোনামাত্র বললো কুশানের সাথে বাহিরে গেছে?কখন গিয়েছে?কেনো গিয়েছে?
কামিনীর এমন প্রশ্ন শুনে সবাই কামিনীর মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।কারণ কামিনী যেভাবে প্রশ্ন করছিলো মনে হচ্ছে কুশান কোনো অচেনা লোকের সাথে বাহিরে গেছে।কামিনী কেনো যে কুশানকে নিয়ে এতো বেশি চিন্তা করে সত্যি কারো মাথাতেই ঢোকে না।
চামেলি বেগম তখন বললো তা তো বলতে পারলাম না বিয়াইন।কেনো যে গেলো?আর কোথায় যে গেলো?শুধু কুশানের সাথে বাসা থেকে বের হতে দেখলাম।
তোড়ার চাচী তখন বললো হয়তো কুশান ভাইজান কে চারপাশ টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে।
কামিনী সেই কথা শুনে মনে মনে ভাবতে লাগলো,না জানি ছেলেটাকে আমার কি কুমন্ত্রনা শিখিয়ে দিচ্ছে?ছেলেটা এমনিতেই কেমন যেনো পালটে গেছে,তার উপর না জানি আজ আবার তার শশুড় নতুন করে মাথায় কি ঢুকিয়ে দেয়?আল্লাহ আমি সব সহ্য করতে পারবো ছেলেটাকে এভাবে হারাতে পারবো না।ছেলেটাকে যেনো আমার কেউ বশ করতে না পারে।
জারিফ চৌধুরী কামিনী কে এভাবে অজানাতে হারিয়ে যাওয়া দেখে ওর কাছে গিয়ে বললো, এই কামিনী? কই হারিয়ে গেলে এভাবে?এবার একটু বিছানা থেকে নামো।দেখো তো খাবার দাবার কত দূর পর্যন্ত হয়েছে?মেহমানদের নাস্তা পানি দিতে হবে না?
কামিনী তখন বললো,এটা তুমি বলতে পারলে কুশানের আব্বু?
আমি তো ব্যাথায় নামতেই পারছি না বিছানা থেকে।খাবার দাবার রেডি হলে তোড়া এমনি ডাক দিবে সবাইকে।
–তোড়ার তো হাত কাটা গেছে।ও আবার রান্নাঘরে গিয়েছে নাকি?
তোড়ার নাম নিতেই সে এসে হাজির।আর তার মা,চাচী কে বললো তাড়াতাড়ি এসো সবাই ডাইনিং রুমে।তোড়া জারিফ চৌধুরী আর কামিনী কেও আসতে বললো।
জারিফ চৌধুরী তখন বললো তুমি এই কাটা হাত নিয়ে আবার রান্নাঘরে ঢুকেছো কেনো?তোমার শাশুড়ী কে ডাকলেই তো হতো?
তোড়া তখন হাসতে হাসতে বললো,আব্বু,আপনিও কি কুশানের মতো পাগল হয়েছেন?কিছুই হয় নি আমার।আসেন তো?আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
জারিফ চৌধুরী তখন বললো সমস্যা হচ্ছে না সেটা তো বুঝলাম।কিন্তু আজ একটু রেস্ট নিলে ভালো হতো না?লুতফা কি এখনো ঠিক হয় নি?
–না আব্বু।চাচীর শরীরে এখনো অনেক জ্বর।সেজন্য আর ওনাকে ডাকি নি।
তোড়া আর জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে চামেলি বেগম কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।কামিনী কে ঘাড়ত্যাড়া মহিলা মনে হলেও জারিফ চৌধুরী কে বেশ ভালো মানুষ ই মনে হলো তার। সেদিনের পর থেকে তিনি তোড়াকে নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলেন।না জানি তার মেয়েটা শশুড়বাড়িতে কেমন আছে?আজ তোড়ার মুখে এরকম মিষ্টি হাসি দেখে সত্যি চামেলি বেগমের বুক টা আনন্দে ভরে গেলো।
এই আনন্দ শুধুমাত্র মেয়ের মায়ে রাই বুঝবে।কত কষ্ট করে বড় করে সেই মেয়েকে অন্যের ঘরে পাঠাতে হয়।মায়েরা বাবারা সব সময় শুধু এটাই চিন্তা করে না জানি তাদের মেয়েটা এখন কি করছে?আর সে কেমন আছে?যদিও ফোনে ফোনে সারাদিন চামেলি বেগম আর গোলাপ সাহেব খবর নিচ্ছেই তবুও তোড়ার কথা তাদের সারাদিন মনে হয়।বিশেষ করে বিয়ের পরের দিনই কামিনী আর তার মেয়েরা তোড়ার সাথে যেসব কান্ড করেছিলো সেসব কথা এখনো ভোলে নি তারা।
সবাই এক এক করে রুম থেকে বের হলেও কামিনী সেই আগের মতোই চুপটি করে বসে থাকলো।সে ভেবেছে হয়তো আঙুল কাটা যাওয়ার কারণে তোড়া আজ রান্নাঘরেই ঢুকবে না,তাকেই বুঝি এসব মেহমানদের আপ্যায়ন করতে হবে।সেজন্য এই মিথ্যা শরীর ব্যাথার অভিনয় করলো সে।
তোড়া কামিনী কে এভাবে চুপটি করে বসে থাকা দেখে বললো, আম্মু তুমিও আসো।
–না আমি যেতে পারবো না।আমার নাস্তা টা এখানেই দিয়ে যেও।
–ঠিক আছে।এই বলে তোড়া চলে গেলো।সে আর জিজ্ঞেস করলো না কেনো তিনি ডাইনিং রুমে সবার সাথে একসাথে বসে খেতে চাচ্ছেন না।
কিছুক্ষন পরে কুশান আর গোলাপ সাহেব বাসায় ফিরলেন।আসলে গোলাপ সাহেব কুশান কে নিয়ে একটু বাজারে গিয়েছিলেন।কুশানদের বাড়িতে আসার সময় তোড়ার অসুস্থতার কথা শুনে টেনশনে কিছু নিতে পারেন নি তিনি।যেহেতু তিনি এখানকার বাজার চেনেন না সেজন্য কুশানকে সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন।গোলাপ সাহেব হরেক রকমের ফলমূল, মিষ্টান্ন আর পাঁচ ছয় কেজি মাছ নিয়ে এসেছেন বাজার থেকে।
কুশান সবকিছু টুনির হাতে দিয়ে দিলো।টুনি ফলমূল আর মিষ্টি গুলো ফ্রিজে রেখে দিলো।আর মাছগুলো কাটার জন্য রান্নাঘরে নিয়ে গেলো।
কুশান আর গোলাপ সাহেব কে দেখে হেনা বেগম তাদের কেও নাস্তা করার জন্য টেবিলে ডাকলো।কিন্তু কুশান যখন দেখলো সবাই আছে ডাইনিং টেবিলে শুধুমাত্র তার আম্মু নেই সেজন্য কুশান বললো, আপনারা শুরু করুন।আমি আসছি একটু।এই বলে কুশান সোজা কামিনী বেগমের রুমে চলে গেলো।
কুশান রুমে গিয়ে দেখে কামিনী বেগম শুয়ে আছে।
–আম্মু শুয়ে আছো কেনো?সবাই নাস্তা করছে।যাও ওনাদের সাথে তুমিও বসে নাস্তা করো।
–আমার নাস্তা তোড়া রুমেই দিয়ে গেছে।
–রুমে কেনো?ওনাদের সবার সাথে খেলে ভালো হয় না?আম্মু, দাদী, চাচীরা কি মনে করবে আবার?
–কি মনে করবে?কিছুই মনে করবে না।কারণ তারা জানে আমার শরীরে আজ ব্যাথা।সেজন্য উঠতে পারছি না আমি।
কুশান সেই কথা শুনে অবাক হয়ে বললো, ব্যাথা?কই ব্যাথা আম্মু?কখন থেকে শুরু হইছে ব্যাথা?
কামিনী সেই কথা শুনে কুশানের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো তোর কি খেয়াল আছে নাকি আমার প্রতি?তুই তো এখন সারাক্ষণ তোড়াকে নিয়েই ব্যস্ত থাকিস।যত চিন্তা তোর শুধু এখন তোড়াকে নিয়ে।সামান্য আঙুল কাটা যাওয়ার কারণে গোষ্ঠীর সবাইকে খবর দিয়েছিস।আর আমি ব্যাথায় মরে যাচ্ছি সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই কারো।এখন তো মনে হচ্ছে আমার খোঁজখবর নেওয়ার আর কেউ রইলো না।
–কি বলছো এসব আম্মু?সবার আগে আমার আম্মু।তারপর বাকিরা।কিসে ব্যাথা করছে আম্মু?ডাক্তার ডাকবো?
হঠাৎ পিছন দিক থেকে তোড়া কামিনীর জন্য এক গ্লাস পানি এনে টেবিলে রাখলো।কারণ সে কামিনীর নাস্তা দিয়ে গেলেও পানি দিতে ভুলে গেছে।তোড়া পানি টা রেখেই চলে গেলো।
কামিনী তোড়াকে দেখে আরো বেশি ঢং করতে লাগলো।না বাবা।লাগবে না ডাক্তার ডাকা।এমনিতেই আমার বাতের তেল টা দিয়ে একটু মালিশ করলেই ভালো হয়ে যাবে।
কুশান সেই কথা শুনে বললো আচ্ছা আম্মু।আমি টুনিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।এই বলে কুশান চলে গেলো।
কুশান বাহিরে গিয়ে দেখে টুনি মাছ কাটছে আর জয়া সেগুলো ধুচ্ছে।এখন দুইজনারই তো হাত বন্ধ।এখন তার আম্মুকে কে তেল মালিশ করে দিবে?কুশান তখন সোনিয়া কে খুঁজতে লাগলো।এদিকে সোনিয়া তো স্বর্ণার সাথে গল্পে মজে আছে।তারা দুইজন একদম বাগানে বসে মনের সুখে গল্প করছে।এই কয় ঘন্টায় দুইজনের মধ্যে বেশ ভাব হয়েছে।
যুথি হঠাৎ কুশানকে এভাবে এদিক ওদিক তাকানো দেখে বললো, কাকে খুঁজছো ভাইয়া?
–না তো।কাউকে না।
–তাহলে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো এখানে?
–এমনি দাঁড়িয়ে আছি।
যুথি সেই কথা শুনে চলে গেলো।
কুশান তখন বললো এই যুথি আম্মুর রুমে একটু যা তো?আম্মুকে একটু তেল মালিশ করে দিয়ে আয়।
যুথি তখন তার দুই হাত দেখিয়ে বললো, কুশান ভাইয়া আপনি কি চোখে কম দেখেন?দেখতে পারছেন না মেহেদী দিয়েছি।
কুশান তা দেখে বললোএটা আবার কোন সময়ের মেহেদী দেওয়া যুথি?
–মেহেদি দিতে আবার সময় অসময় আছে নাকি?যখন তখন দেওয়া যায়।
কুশান তখন যুথিকে ধমক দিয়ে বললো, যা এখুনি এগুলো তুলে ফেল।আম্মু ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।আর তুই মেহেদী নিয়ে পড়ে আছিস?
কুশানকে এভাবে উচ্চস্বরে কথা বলা দেখে তোড়া এগিয়ে আসলো।আর বললো কি হয়েছে?লোকজনের সামনে এভাবে চিল্লাচ্ছো কেনো?
কুশান তোড়ার কথা শুনে বললো, আম্মুর বাতের ব্যাথাটা বেড়ে গিয়েছে। সেজন্য আম্মুকে কিছুক্ষন তেল মালিশ করে দিতে হবে।কিন্তু টুনি আর জয়া দুইজনারই তো হাত বন্ধ।অন্যদিকে এই যুথির কান্ড দেখো,কেমন দুই হাতে মেহেদী দিয়ে বসে আছে।আর সোনিয়াকে তো খুঁজেই পাচ্ছি না।
তোড়া তখন বললো কেনো আমি আছি না?আমি তো ফ্রিই আছি।আমাকে বললেই তো হতো।
কুশান তখন বললো,ফ্রি থাকলেই হবে? তোমার না হাতে ব্যাথা।
–তো কি হইছে?তাছাড়া আম্মু মনে হয় আমার হাতের তেল মালিশ পেলেই বেশি খুশি হবেন।আর তুমিও মনে মনে তো সেটাই চাও।
কুশান তখন বললো কি বলছো এসব?তোমার হাতে সমস্যা দেখেও আমি তোমাকে দিয়েই তেল মালিশ করাবো?
–তুমি এটা করতে পারবে কুশান।উনি তো তোমার নিজের আম্মু হয়?আর আমি তো নিজের কেউ না।
কুশান তোড়ার এমন ত্যাড়ামার্কা কথা শুনে ওর হাত ধরে টেনে ঘরের মধ্যে নিয়ে গেলো।কারন তোড়ার বাড়ির সবাই এখানেই আছে।তোড়া কখন কি করে বলা যায় না?
তোড়ার হাত ধরে ঘরের মধ্যে নিয়ে আসায় তোড়া চিৎকার করে বললো এভাবে নিয়ে এলে কেনো কুশান?ছেড়ে দাও আমাকে।
কুশান ঘরের মধ্যে এসে বললো, কি হয়েছে তোমার আবার?এভাবে ত্যাড়া কথা বলছো কেনো আমার সাথে?
–তো কিভাবে বলবো?কিছু হয় নি আমার।যেতে দাও আমাকে।
কুশান বুঝতে পারছে না কিছু।এই কিছুক্ষন আগেই তো ভালো ছিলো তোড়া।তাকে সবার সাথে বসে কি সুন্দর করে নাস্তা খাওয়ার কথা বললো। হঠাৎ তার আবার কি হয়ে গেলো?
তোড়া কুশানের থেকে তার হাত ছেড়ে নিয়ে চলে যেতে ধরলে কুশান আবার তোড়াকে টেনে আনলো।আর বললো,
তোড়া! বাসা ভর্তি মেহমান।সবার সামনে এমন ভাবে কথা বলো না প্লিজ।কি হয়েছে বলবে তো?
–কিছুই হয় নি।
কুশান তখন হাসতে হাসতে বললো,কিছু তো হয়েছেই।তা না হলে এরকম বিহেভ কেনো করছো?নিশ্চয় আজ আদর ভালোবাসা একটু কম হয়েছে।
হঠাৎ পিছন দিক থেকে স্বর্ণা বললো, কিছুই দেখি নি আমি।আমার কিন্তু চোখ বন্ধ আছে।
কুশান একদম চমকে উঠলো স্বর্ণার কন্ঠ শুনে।স্বর্ণা আবার কখন এলো?
কুশান স্বর্ণাকে দেখামাত্র তাড়াতাড়ি করে তোড়াকে ছেড়ে দিলো।আর বললো,আপনি, না মানে তুমি আবার কখন এলে?
–এই তো এক্ষুনি দুলাভাই।আপনি যে আমার বোনটার সাথে রোমান্টিক মুডে আছেন সত্যি আমি বুঝতে পারি নি দুলাভাই?ভুল সময়ে এসে ফেলছি।চলে যাচ্ছি আমি।সরি সরি।
কুশান তখন চিৎকার করে বললো,এই না না।তেমন কিছু না।এমনিতেই কথা বলছিলাম।
–বললেই হলো।আমরা কিন্তু সবই বুঝি।
–তুই চুপ করবি স্বর্ণা।সবসময় কিন্তু এরকম ফাজলামি ভালো লাগে না।এই বলে তোড়া রাগ দেখিয়ে চলে গেলো।
স্বর্ণা তখন কুশানকে বললো, ব্যাপার কি দুলাভাই?আকাশ এতো মেঘলা কেনো?আর কেমন জানি বিদ্যুৎ এর ঝটকাও দেখলাম?
–আকাশ মেঘলা?কই আকাশ মেঘলা।বাহিরে রোদের জন্য যাওয়া যাচ্ছে না।আর তুমি বলছো আকাশ মেঘলা?
স্বর্ণা তখন বললো দুলাভাই আপনি এই সহজ ব্যাপার টা বুঝলেন না?শেষ!আমার তোড়া আপুর জীবন টা শেষ।
–কি করলাম আমি আবার?
স্বর্ণা তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,এই আকাশ সেই আকাশ না দুলাভাই।আমি বোঝাতে চাচ্ছিলাম আপু এতো রেগে আছে কেনো?
–ওহ!সরি সরি।আমি বুঝতে পারি নি।আসলে ও যে কেনো এতো রেগে আছে আমি নিজেও জানি না।তোমার বোন এমনই।কখন কি কারনে রেগে যায় নিজে যেমন জানে না তেমনি আমিও জানি না।
স্বর্ণা তখন বললো আপনি আমার এতো সহজ কথাটাই বুঝতে পারলেন না দুলাভাই।আর আপুর মন কি করে বুঝবেন?
–আচ্ছা আমি আসি।এই বলেই কুশান চলে গেলো।
স্বর্ণা তো অবাক!তার তোড়া আপুর জামাই এতো হাবলু?ও মাই গড!এ তো দেখি সহজ ব্যাপার ও বুঝে না।কত আশা করেছিলাম তোড়া আপুর জামাই এর সাথে কত মজা করবো।সারাক্ষণ দুলাভাই দুলাভাই বলে ক্ষেপাবো।কিন্তু এ বেটা তো পুরাই উলটো।সে তো আমাকে দেখলেই পালিয়ে যায়।এই বলে স্বর্ণা হা হুতোশ করতে লাগলো।
হঠাৎ রুমে সুমন প্রবেশ করলো।সে স্বর্ণা কে দেখা মাত্র বললো, আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না আমি যেখানে যেখানে যাচ্ছি সেখানে সেখানে আপনিও যাচ্ছেন কেনো?
স্বর্ণা তখন বললো আচ্ছা আপনিও কি কুশান দুলাভাই এর মতো বলদ?
–মানে?আ,,মি বলদ হতে যাবো কেনো?
–হ্যাঁ আপনি বলদই।তা না হলে এরকম কথা কখনোই বলতে পারতেন না।আরে বলদ!আমি তো আগে থেকেই এই রুমে আছি।আপনি নিজেই তো এসেছেন এখানে?
সুমন সেই কথা শুনে বললো, আমি সেটাই বোঝাতে চাচ্ছিলাম।আমি যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই দেখি আপনি।ব্যাপার টা ঠিক বুঝতে পারছি না।
–সেটা আপনার প্রবলেম।আমার না।আপনি হয় তো আমাকে ফলো করছেন।সেজন্য যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই আমাকে দেখতে পাচ্ছেন।এই বলে স্বর্ণা মুখ ভেংচিয়ে চলে গেলো।
সুমন স্বর্ণার কথা শুনে মনে মনে বললো, আমি ওকে ফলো করছি?এতো বড় কথা বলতে পারলো মেয়েটা।
ভাবি?ভাবি?তোমার বোন এসব কি বললো আমাকে?এই বলে সুমন তোড়াকে ডাকতে লাগলো।
তোড়া টুনি আর জয়ার সাথে কথা বলছে।টুনিকে বললো,তাড়াতাড়ি লুতফা চাচীর খাবার টা ঘরে দিয়ে আয়।আর জয়া তুই কিছু মুখে দিয়ে তবে রাতের রান্নাবান্না শুরু করবি।
জয়া সেই কথা শুনে বললো,ভাবি আপনিও তো কিছু খান নি।
–খেয়ে নিবো পরে।আগে তোর কুশান ভাই খেয়ে নিক।
জয়া তখন বললো কুশান ভাইয়াও তো এই কথাই বললো,যে তোর ভাবি আগে খেয়ে নিক।
হঠাৎ সুমন তোড়াকে বললো,ভাবি তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না?সেই থেকে ডাকছি।
–শুনতে পারি নি ভাই।বল কি হয়েছে?
সুমন তখন বললো তোমার বোন কিন্তু আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।আমি নাকি ওনাকে ফলো করছি।বলো এটা কি সম্ভব?আমি কোন দুঃখে ওনাকে ফলো করতে যাবো?
তোড়া সেই কথা শুনে বললো স্বর্ণা বলেছে?
–তো?তোমার আবার আর কোনো বোন আছে নাকি?
–আচ্ছা তুই যা এখন।আমি পরে স্বর্ণাকে বলছি কথাটা।
সুমন তখন বললো পরে মানে?এখনি বলবে।
–না ভাই এখন না।ইরা আপুরা এখন অফিস থেকে ফিরবে, ওনাদের খাবার টা রেডি করতে হবে। পরে আমি বলবো।
–সিওর বলবে তো?
–হ্যাঁ হ্যাঁ বলবো।
সুমন তোড়ার কথা শুনে চলে গেলো।
তোড়া এবার সবার জন্য কাপে চা ঢালতে লাগলো।হঠাৎ কুশান আসলো তোড়ার কাছে।কুশানকে দেখেও তোড়া না দেখার ভান করে থাকলো।কুশান তখন তোড়ার হাত থেকে কেটলি টা কেড়ে নিয়ে বললো,আজ তোমার রেস্ট নেওয়ার কথা তোড়া।অথচ আজকেই তুমি বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছো।দাও আমাকে দাও।
তোড়া তখন আবার কুশানের হাত থেকে কেটলি টা কেড়ে নিলো আর বললো তাহলে কে করবে আমার কাজ?আমি তো আর সবার মতো মিথ্যা অভিনয় করতে পারি না।
কুশান তখন বললো কে আবার মিথ্যা অভিনয় করলো?কার কথা বলছো তুমি?
–ও তুমি বুঝবে না কুশান।ওসব বোঝার ক্ষমতা তোমার কখনোই হবে না।
হঠাৎ সেখানে চামেলি বেগম আসলো।আর তোড়াকে কেটলি থেকে চা ঢালতে দেখে বললো, মা তুই কি করছিস এসব?দে আমাকে দে।আমি সবার জন্য নিয়ে যাচ্ছি চা গুলো।
তোড়া তখন বললো, না আম্মু।লাগবে না।পারবো আমি।
কুশান তখন বললো আম্মু প্লিজ আপনি ওর হাত থেকে জোর করেই নিয়ে নিন কেটলি টা।এতো করে বলছি আমি তবুও সে কিছুতেই শুনছে না।এতো জিদ কেনো আপনার এই মেয়েটার?ও যেটা বলবে সেটাই নাকি করতে হবে।
তোড়া সেই কথা শুনে রাগান্বিত লুকে কুশানের দিকে তাকালো।
চামেলি বেগম তখন কেটলি টা তোড়ার হাত থেকে নিয়ে বললো, যা মা তুই ঘরে যা।সেই আসার পর থেকে দেখছি শুধু ছোটাছুটি করছিস।এবার একটু রেস্ট নে।এই বলে চামেলি বেগম জোর করেই কেড়ে নিলো কেটলি টা।
তোড়া তখন তার আম্মুকে বললো, আম্মু আজ তোমরা থাকো না?আজকেই কেনো যাবে?
–না মা আজ আর থাকা হবে না।আরেকদিন সময় করে এসে থাকবো।
তোড়া তখন বললো তাহলে কি দরকার ছিলো এভাবে আসার?কেনো মায়া বাড়াতে এসেছো তোমরা?এই বলে তোড়া কাঁদতে কাঁদতে তার রুমে চলে গেলো।
চামেলি বেগম তোড়ার কান্না করা দেখে নিজেও কেঁদে ফেললেন।তিনি বুঝতে পারলেন তাদের যাওয়ার কথা শুনে তোড়ার মন টা ভালো নেই।
তখন তিনি কুশানকে বললেন,
বাবা কুশান!আজ না হয় তোড়াকে আমরা আমাদের সাথে নিয়ে যায়।দুই চার দিন একটু থেকে আসলে ওর মন টা ভালো হয়ে যেতো।
কুশান সেই কথা শুনে বললো, কিন্তু আম্মু আমার তো ভার্সিটি খোলা আছে।এ কয় দিন ক্লাস করতেই হবে।কিভাবে যাবো আমি?
চামেলি বেগম সেই কথা শুনে বললো, তুমি না হয় পরে এসে ওকে নিয়ে যেও।ও আজ আমাদের সাথে যাক।আমাদের যাওয়ার কথা শুনে দেখলে না কেমন কেঁদে উঠলো?এই অবস্থা দেখে কি করে ওকে রেখে যাই বাবা?
চলবে,#আমি_ফাইসা_গেছি(২১)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
তোড়া চলে যাওয়ার কথা শুনে কুশানের চোখে জল টলমল করছে।এই বুঝি সে কেঁদে ফেলবে।সে নিজের মুখে কিছু বলতেও পারছে না আবার না বলে থাকতেও পারছে না।কুশান শুধু ভাবছে সে কি করে তোড়াকে ছাড়া থাকবে এ কয়দিন?যখন তোড়া তার প্রেমিকা ছিলো তখন একদিন কথা না বললে সে অস্থির হয়ে যেতো।আর এখন বিয়ে করে পড়েছে আরেক বিপদে।এখন তোড়াকে এক নজর না দেখলে, তার কাছাকাছি না থাকলে, তাকে দু হাতে স্পর্শ না করলে কুশান কে অস্থির অস্থির তো লাগেই,সাথে তার অবস্থা একদম পাগলের মতো হয়ে যায়।এই কোন মায়ায় পরে গেলো সে?তার মনের এই অনুভূতি সে কি করে এখন তোড়াকে বোঝাবে?কি করে বলবে আমাকে এভাবে একা রেখে যেও না প্লিজ।আমি তোমাকে না দেখে এক সেকেন্ড থাকতে পারবো না।পৃথিবীতে এমন কোনো ভাষা আবিষ্কৃত হয় নি যে ভাষায় আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো তুমি এখন আমার কত টা অস্তিত্ব জুড়ে আছো।তোমাকে বোঝানোর মতো এমন কোনো ভাষা আমার কাছে নেই যে ভাষায় আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো কতখানি ভালোবাসি তোমাকে।আমি নিজেও জানি তোমার যোগ্য আমি কখনোই ছিলাম না,আর আমি যে একটা অপদার্থ ছেলে সেটাও ভালো করেই জানি।তাহলে কেনো এমন হচ্ছে আমার?ইট ভাটার মতো জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে হৃদয় আমার।আমি তো তোমাকে ভালোবাসতেই জানি না,তাহলে তুমি চলে যাওয়ার কথা শুনে কেনো হৃদয় টা আমার ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে?
অন্যদিকে তোড়া তার আব্বু আম্মুর সাথে বাড়ি যাবার কথা শুনে খুশিতে একদম গদমদ হয়ে গেলো।সত্যি এ কয় দিন এক টানা থাকার ফলে তার নিঃশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসছিলো।তার বাবা মা আজ না আসলেও সে দুই এক দিনের মধ্যে চলে যেতো তার বাড়িতে।তোড়া আর তার খুশি ধরে রাখতে পারছিলো না।আনন্দে তাড়াতাড়ি করে তার কাপড় গুছিয়ে নিলো।অন্যদিকে কুশান দাঁড়িয়ে থেকে তোড়ার কাপড় গোছানো দেখছিলো।তোড়া যখন তার কাপড় গোছানো কম্পিলিট করে পিছন ফিরে তাকালো সে দেখতে পেলো কুশান দরজার সাথে হেলান দিয়ে আছে।তোড়া কুশানকে এভাবে দাঁড়ানো দেখে বললো,
কিছু বলবা?
কুশান মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো, না।
তোড়া তখন কুশানের কাছে এগিয়ে এসে বললো আমি কিন্তু এবার অনেক দিন থাকবো।যেদিন ভার্সিটি বন্ধ থাকবে সেদিন যেও আমাদের বাড়িতে।আর হ্যাঁ, ভার্সিটি বা প্রাইভেটে যাওয়া বন্ধ করে খবরদার যাবে না আমাদের বাড়িতে।সামনে যেহেতু ফাইনাল এক্সাম এ কয় দিন খবরদার গাফলতি করবা না।মন দিয়ে পড়াশোনা করবে।ওকে।
কুশান কোনো উত্তর দিলো না।সে শুধু তাকিয়ে আছে তোড়ার দিকে।আর তোড়া কি বলছে তা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
তোড়া কুশানের অসহায় মুখ টার দিকে তাকিয়ে বললো,এই কুশান? কি হয়েছে তোমার?মুখ টা এমন ভার করে আছো কেনো?
কুশান সেই কথা শুনে হঠাৎ তোড়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তবে সে এখনো চুপচাপ ই আছে।সে তোড়াকে একদম তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।একটা কথাও বলতে পারছিলো না সে।
কুশানকে এরকম করা দেখে তোড়া বুঝতে পারলো সে তার বাড়িতে চলে যাচ্ছে দেখে কুশান মোটেও খুশি হয় নি।সেজন্য মুখ টা এমন গোমড়া করে আছে।
তোড়া তখন নিজেও কুশানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আর বললো,
তুমি তো নিজেই আম্মুকে বলেছো যে কয়েকদিন গিয়ে তোড়া থেকে আসুক।তাহলে এখন এরকম করছো কেনো?
কুশান তখন অভিমানের সুরে বললো আমি বলেছি?না উনি বললেন বাবা আমরা আজ তোড়াকে আমাদের সাথে নিয়ে যাচ্ছি।তুমি কি বলো?তখন আমি বলেছি আচ্ছা ঠিক আছে।
তোড়া তখন হাসতে হাসতে বললো,তাহলে এখন এরকম করছো কেনো?তখন আম্মুকে ডাইরেক্ট বলে দিলেই তো হতো?
কুশান তখন তোড়াকে ছেড়ে দিয়ে বললো, উনি আমার শাশুড়ী হয় তোড়া।ওনাকে আমি এখন কি করে বলি যে যাওয়া হবে না তোড়ার।আপনার মেয়েকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।তাছাড়া আমি আকার ইঙ্গিতে তো বুঝিয়েই দিলাম তবুও বুঝতে পারলেন না তিনি।
তোড়া এবার জোরে করে হেসে উঠলো। আর কুশানের মুখ টা উপরে তুলে বললো,কিভাবে বুঝাইছো যে আম্মু বুঝতেই পারে নি।
–আমি বললাম আম্মু আমার তো ভার্সিটি খোলা আছে।এ কয় দিন ক্লাস করতেই হবে।কিভাবে যাবো আমি আপনাদের বাড়ি?
তিনি আমার এই কথার অর্থ বুঝতেই পারলেন না।তখন তিনি বললেন,আজ তোড়া যাক আমাদের সাথে।তুমি তাহলে পরে যেও।
কুশানের এমন ছেলেমানুষী দেখে তোড়ার ভীষণ হাসি পাচ্ছিলো।তোড়া ভাবতে লাগলো কবে যে কুশান ম্যাচিউর হবে?এখনো সে বাচ্চাদের মতো অভিমান করে।তবে কুশানের এইরকম বোকা বোকা কথাবার্তা শুনতে তোড়ার ভীষণ ভালো লাগে।ঠিক এসব কারণেই সে কুশানকে ছাড়তে পারে না।সে ভালো করেই জানে এই বোকা ছেলেটা তাকে কত বেশি ভালোবাসে?তাকে ছাড়া যে সে এক সেকেন্ড থাকতে পারবে না সেটাও জানে তোড়া।তোড়া এবার কুশানকে শান্ত্বনা দিয়ে বললো,
ওকে কুশান।মন খারাপ করো না।এই যে ব্যাগ রাখলাম।তুমি যখন চাচ্ছো না আমি যাই,তাহলে গেলাম না।সবাইকে বলে দিচ্ছি যে আমি যাবো না।
কুশান তোড়ার মুখে এরকম কথা শুনে বললো এখন কি আর সেই কথা বললে হবে?যা করার তা তো আগেই করেছো।তুমি মায়ের সামনে যেভাবে কান্দাকাটি শুরু করে দিয়েছো মনে হচ্ছে তোমার উপর আমি ভীষণ অত্যাচার করছি।আর সেজন্য আমার হাত থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছো।আম্মু তো তোমার কান্নাকাটি দেখেই এভাবে সাথে করে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
তোড়া কুশানের কথা শুনে বললো,
অত্যাচার ই তো করা হচ্ছে আমার উপর।তুমি অত্যাচার না করলেও দিনরাত তোমার মা আর বোনদের কথার অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে আমাকে।আমার নিঃশ্বাস একদম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কুশান।সত্যি আমার ভালো লাগছে না কিছু।সেজন্য কিছুদিন একটু বাড়ি গিয়ে থেকে আসতে চাচ্ছিলাম।
কুশান সেই কথা শুনে বললো, আমার আম্মু তোমাকে নানা ধরনের কথা শোনায় সেটা আমি ভালো করেই জানি।আমার বোন রাও যে আম্মুর মতো সেটাও জানি।এদের কে আমি যতই বলি না কেনো এভাবে তোমরা তোড়ার সাথে কথা বলো না তবুও এনারা কিছুতেই শুনবেন না।কারন এরা পুরাই ঘাড়ত্যাড়া টাইপের।নিজেরা যা বুঝে সেটাই করবে।অন্য কারো কথা এদের কানেই যায় না।এই পরিস্থিতিতে আমি কি করতে পারি বলো?আমি তো এখন প্রতিবাদ করিই।যে আম্মুর মুখে মুখে কখনো উত্তর দেই নি তার সাথে এখন আমাকে তর্ক করতে হয়।যে বোনদের আদেশ শুধু সারাবছর শুনেই গেলাম তাদের কেও এখন আমি ধমক দিয়ে কথা বলি।আর কি করতে পারি আমি তুমি একটু বলবে আমায়?
–কিছুই করতে হবে না তোমাকে।আমি কি একবার বলেছি যে এটা করো,ওটা করো।বলি নি তো?এটা আমার ভাগ্যের লিখন ছিলো।মাশাল্লাহ এমন একটা পরিবার পেয়েছি পুরাই নাটকবাজ পরিবার।কে কখন নাটক করছে বোঝা বড় দায়।
কুশান তখন বললো, এভাবে বলছো কেনো তোড়া?কে আবার নাটক করলো?
–আমি এখন আর কিছু বলতে চাচ্ছি না কুশান।যেহেতু এখন আমি নিজের বাড়ি যাচ্ছি,ওসব কথা আমি বলতে চাচ্ছি না।এই বলে তোড়া ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বের হতে ধরলো।
কুশান বুঝতে পারলো কিছু তো হয়েছেই।সেজন্য তখন থেকে তোড়া তার সাথে এমন খারাপ আচরণ করছে।কিন্তু কি হয়েছে?তোড়া কি লুকাচ্ছে তার থেকে?তাকে জানতেই হবে।এই বলে কুশান তোড়াকে আটকিয়ে দিলো।আর বললো,
কি হয়েছে তোড়া?তুমি কি বলতে ধরে থেমে গেলে?
তোড়া তখন বললো আমাকে এখন যেতে দাও কুশান।সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
–না,যেতে দিবো না তোমাকে।আগে বলো কি হয়েছে?
তোড়া তখন বললো, শুনতে চাও?আচ্ছা শোনোই তাহলে।
তোমার মা যে কিছুক্ষন আগে নাটক টা করলো সেই নাটক টা কি তুমি বুঝতে পেরেছো?
–নাটক?কিসের নাটক?
–এই কিছুক্ষন আগেই যিনি সুস্থ সবল ছিলেন,ভালো মানুষের মতো হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন তিনি হঠাৎ মেহমান দেখেই অসুস্থ হয়ে গেলেন?উনি ভেবেছেন আমার তো আঙুল কাটা গিয়েছে,এখন বুঝি ওনাকেই মেহমানদের খাতির যত্ন করতে হবে।এই ভয়েই ব্যাথার অভিনয় শুরু করে দিয়েছেন।এসব অভিনয় আলা মানুষ না আমার একদম অসহ্য?এই কথা এখন আমি বলি কাকে?বললেও তো বিশ্বাস করবে না কেউ।আর তুমি তো নও ই।
কুশান সেই কথা শুনে বললো, আম্মু অভিনয় করছে মানে?না জেনে বুঝে আন্দাজেই একটা কথা বললেই হলো নাকি?আম্মুর তো সত্যি সত্যি বাতের ব্যাথা তোড়া।তুমি কেনো যে ওনার সাথে লাগতে যাও সত্যি আমি বুঝি না।ওনাকে ওনার মতো থাকতে দাও না।কেনো এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে আমার সাথে রাগারাগি করছো?
তোড়া তখন বললো, সামান্য ব্যাপার?এটা তোমার কাছে সামান্য ব্যাপার মনে হচ্ছে?আমার বাবা মা কি সারাদিন তোমাদের বাড়ি আসে?বিয়ের পর আজ প্রথমবার এলো।ওনার কি উচিত ছিলো না নিজ দায়িত্বে তাদের আপ্যায়ন করানো।তাদের সাথে ভালোমন্দ গল্প করা।তা না করে উনি ঘরের মধ্যে চুপটি করে বসে আছেন।এটা কি ধরনের আচরণ কুশান?এটা কি ঠিক হয়েছে ওনার?উনি নিজেকে মনে করেন টা কি?যে অহংকারের জন্য কারো সাথে কথা বললেন না।আব্বু আম্মু দাদী আর চাচী কি মনে করলো কে জানে?
কুশান তা শুনে বললো আম্মু এমনই।তা এখন কি করতে পারি আমি?ওনাকে কি বাসা থেকে বের করে দিবো?না তোমাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাবো?তুমিই বলো কি করবো এখন?
তোড়া কুশানের মুখে এরকম উত্তর কখনোই আশা করে নি।তোড়া তখন বললো, বাহঃ কুশান।বাহঃ।আমি কখন বললাম যে তোমার মাকে বের করে দাও বাড়ি থেকে বা আমি তোমার সাথে আলাদা ভাবে থাকতে চাই?বলেছি একবার আমি?তাহলে তুমি বললে কেনো সে কথা?
–বলো নি।কিন্তু তোমার কথাবার্তা শুনে সেটাই মনে হচ্ছে আমার।তোমার প্রবলেম তো আমাকে নিয়ে নয়।আমার মা আর বোনদের নিয়ে।
তোড়া তখন বললো, তোমাকে নিয়েও আমার প্রবলেম কুশান?তুমি সোজা জিনিস উলটো ভাবে বোঝো সবসময়।তোমাকে আমি বললাম কি আর তুমি বুঝলে কি?এই বলে তোড়া চলে গেলো।
কুশান আর রুম থেকে বের হলো না।সে ধপাস করে শুয়ে পড়লো বিছানায়। আর বালিশ টা মাথার নিচে দিয়ে ভাবতে লাগলো তাদের দুইজনের সম্পর্ক মনে হয় কখনোই ভালো হবে না।সারাক্ষণ তাদের ঝগড়া লেগেই থাকবে।বাড়ি চলে যাওয়ার সময়ও তোড়াকে সে হাসি মুখে বিদায় দিতে পারলো না।কুশান নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো,এই ঝগড়ার শেষ কোথায়?কবে তাদের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে?
🖤
তোড়ার বাড়ির লোকেরা তোড়ার জন্যই অপেক্ষা করছে।সবাই বাসা থেকে বের হয়েছে কিন্তু তোড়ার ই তো আসার কোনো খবর নেই।তোড়ার মা বাবারা চলে যাওয়ার সময় ও কামিনী রুম থেকে বের হলো না।জারিফ চৌধুরী কত করে বললো একটিবার অন্তত তাদের থাকার কথা বলো,তারা তো আর বললেই থাকবে না।
কামিনী সাফ জানিয়ে দিলো তারা আমার কিসের আপনজন?যে থাকার কথা বলতে হবে।তারা চলে গেলেই কি আর থেকে গেলেই কি?আমার পছন্দ না ওনাদের।যাদের মেয়েকেই আমার পছন্দ না।তাদের ফ্যামিলির লোকজনকে পছন্দ হবে কি করে?
জারিফ চৌধুরী একদম অবাক হয়ে গেলো কামিনীর কথা শুনে।তিনি তো ভেবেছেন কিছু টা হলেও কামিনীর মধ্যে পরিবর্তন এসেছে।সেজন্য তোড়াকে বাড়ির বউ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আর তাকে সংসারের সব দায়িত্ব বুঝে দিয়েছে।আজ দিয়ে পরিষ্কার ভাবে বুঝে গেলো জারিফ সাহেব, এটা কামিনীর পুরোই একটা নাটক ছিলো।
আসলে কামিনী কুশানের চোখে ভালো সাজার জন্যই তোড়াকে এসব দায়িত্ব দিয়েছিলো।কারণ কামিনী বুঝতে পেরেছে তার ছেলে তোড়াকে ছাড়তে পারবে না কিছুতেই,সেজন্য অযথা তোড়াকে ডিভোর্সের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না।তবে কামিনী এমন কিছু পরিকল্পনা করেছে যাতে তোড়া নিজের থেকে এ বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়।এতে করে সে তার ছেলের চোখেও ভালো থাকবে আর তার আপদও দূর হবে।এখন দেখা যাক তোড়া কামিনীর পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে কুশানকে ভুল বুঝে তাকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় কিনা?না সে সবকিছু সহ্য করেও কুশানের সাথেই রয়ে যায়?
🖤
স্বর্নাকে চলে যাওয়া দেখে সোনিয়ার ভীষণ মন খারাপ হলো।স্বর্ণা নিজেও ভীষণ আপসেট হয়ে আছে।তার ইচ্ছা করছিলো আজ সোনিয়ার সাথে থাকতে।দুইজনে একদিনেই ভীষণ ক্লোজ হয়ে গিয়েছিলো।সোনিয়া হঠাৎ স্বর্নাকে জড়িয়ে ধরে বললো আবার আসিও।
স্বর্ণা সেই কথা শুনে বললো তুমিও যেও আমাদের বাসায়।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
হঠাৎ স্বর্ণার সুমনের দিকে চোখ গেলো।সুমন দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।স্বর্ণাকে এভাবে তাকানো দেখে সুমন তার রুমের ভিতর চলে গেলো।
তোড়া চোখ মুছতে মুছতে ব্যাগ হাতে নিয়ে আসলো সবার সামনে।তোড়াকে একা আসতে দেখে গোলাপ সাহেব বললো, মা কুশান কই?ও আসলো না যে?
তোড়া কিছু বলার আগেই তোড়ার চাচী বললো,তোড়াকে তোমরা বড়লোক ঘরে বিয়ে দিয়েছো ঠিকই কিন্তু মানুষ গুলোর মন মোটেও বড় নয়।কেমন যেনো অন্য ধরনের।কি অহংকার ভাই তোড়ার শাশুড়ীর।উনি তো ঘর থেকেই বের হলেন না।আর মেয়েগুলো যে অফিস থেকে আসলো।তারা ওই যে ঘরে প্রবেশ করলো আর বের হলো না।এরকম বাড়িতে কেউ আসে নাকি?অন্যদিকে তোমাদের জামাইকে দেখো,সেও যাওয়ার সময় একটু বিদায় দিতেও আসলো না।
স্বর্না তার মায়ের কথা শুনে বললো,আম্মু তুমি একটু বেশিই বোঝো,দেখলেই তো তোড়া আপুর শাশুড়ী ব্যাথায় উঠতে পারছেন না,তিনি কি করে রুম থেকে বের হবেন?আর ওনাদের মেয়েরা অফিস করে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরেছেন কখন তোমাদের সাথে গল্প করবে?আর আমাদের কুশান দুলাভাই এর কথা বলছো তো?তোড়া আপু আমাদের সাথে চলে যাচ্ছে দেখে উনি একটু আপসেট হয়ে আছেন, এ জন্য আসলেন না?
স্বর্নার মা তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো,তুই হঠাৎ এদের গুনগান গাচ্ছিস কেনো?তোর আবার কি হলো?
স্বর্না তখন বললো কি আবার হয়েছে?যা সত্য তাই বললাম।
তোড়া তখন বললো, আমি একটু সবাইকে বলে আসি।তোমরা আরেকটু অপেক্ষা করো।এই বলে তোড়া প্রথমে তার শাশুড়ীর রুমে ঢুকলো।আর কামিনী কে বললো,মা আসছি।
কামিনী কোনো উত্তর দিলো না।
জারিফ চৌধুরী কামিনীর সাথেই ছিলেন।তোড়া জারিফ চৌধুরী কেও বললো।জারিফ চৌধুরী তখন বিছানা থেকে নেমে এসে বললো,
মা তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করিও।ঠিক আছে?
–আচ্ছা আব্বু।এই বলে তোড়া তার ননদদের থেকে বিদায় নিতে গেলো।
আর জারিফ চৌধুরী গোলাপ সাহেবের কাছে গিয়ে ওনার হাত ধরে বললো,
বিয়াই সাহেব!এটা কিন্তু ঠিক হলো না।আজকের রাত টা কিন্তু আপনারা থেকে যেতে পারতেন।এসেই চলে যাচ্ছেন কেমন একটা কথা?
গোলাপ সাহেব সেই কথা শুনে বললো অন্য আরেকদিন আসবো বিয়াই।সেদিন থেকে যাওয়ার মন মানসিকতা নিয়েই আসবো।আপনি বিয়াইন কে নিয়ে আসিয়েন আমাদের বাড়িতে।
–আচ্ছা, যাবো।
হঠাৎ কুশান এসে দাঁড়ালো সবার সামনে।কিন্তু তোড়া ছিলো না।কারণ তোড়া তো এক এক করে ইরা,মিরা,লিরার কাছে থেকে বিদায় নিতে গিয়েছে।
কুশান গোলাপ সাহেব আর চামেলি বেগমের কাছে গিয়ে বললো,
আম্মু আবার আসিয়েন,আব্বু যখন মনে হবে মেয়ের কথা তখনই আসবেন।
গোলাপ সাহেব কুশানের কথা শুনে বললো ঠিক আছে বাবা।সেটা আর বলতে হবে না।তুমিও যেও বাবা।গিয়ে তোড়াকে নিয়ে আসিও।
কুশান মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো।
এবার কুশান হেনা বেগমের হাত ধরে বললো,দাদী মাঝেমধ্যে একটু নাতনির বাড়িতে বেড়াতে আসলেই তো নাতনীর মন ভালো থাকে।
–আসবো আসবো।অবশ্যই আসবো।এই বলে হেনা বেগম সবাইকে বললো,তোমরা সবাই সামনে এগোয়।আমি একটু আমার নাতি জামাই এর সাথে একাকি কিছু কথা বলবো।
হেনার কথা শুনে সবাই বাসা থেকে বের হলো।
সবাই চলে গেলে হেনা কুশানকে ফিসফিস করে বললো,তাড়াতাড়ি বাচ্চা কাচ্চা নেওয়ার ব্যবস্থা কর ভাই।কয় দিন বাঁচি কে জানে?তোদের বাচ্চা কাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করার ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে আমার।
কুশান দাদীর মুখে বাচ্চাকাচ্চার কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিলো।
দাদী তখন বললো ওভাবে হাসলে তো হবে না।যা বললাম অবশ্যই মাথায় রাখবি।আর তুই কি এখনো ছোটো আছিস?এতো লজ্জা পাস কেনো?
হঠাৎ তোড়া আসলো সেখানে।দাদীকে একা দেখে বললো, দাদী আম্মুরা কই?
–ওরা চলে গেছে বাহিরে।আমি একটু কুশানের সাথে কথা বলছিলাম।এই বলে দাদী কুশানের কানে কানে বললো, যা বললাম মনে যেনো থাকে।এই বলে দাদী চলে গেলো।আর তোড়াকে বলে গেলো তাড়াতাড়ি আসিস তুই।আমরা কিন্তু বেশিক্ষন দেরি করতে পারবো না।
দাদী চলে যাওয়ার সাথে সাথে কুশান তোড়াকে জড়িয়ে ধরে বললো, সাবধানে যেও।আর বাসায় পৌঁছে আমাকে কল করিও।
তোড়া সেই কথা শুনে বললো,হ্যাঁ করবো।তুমিও নিজের যত্ন নিও।আর আমাকে নিয়ে অযথা টেনশন করার দরকার নেই।এই বলে তোড়া বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে।
কুশানও তোড়ার পিছু পিছু চলে গেলো।আর ওদের গাড়ি যতক্ষন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিলো ততোক্ষণ পর্যন্ত সে তাকিয়ে রইলো।
চলবে,
কেমন লাগছে গল্প টা অবশ্যই জানাবে।