আমার গল্পে আমি খলনায়িকা পর্ব -০৬

#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়িকা
পর্ব—০৬
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—নাহ,কোথাও কোনো এক্সিডেন্টের দাগ নেই।কারোর শরীর থেকে এতো বড়ো একটা চিহ্ন উবে যায় কিকরে?আমার সকল সন্দেহে এবার বিশ্বাসে পরিণত হতে লাগলো।মূহুর্তেই সারা শরীর এক ঝটকায় কেঁপে উঠলো আমার,এতো কল্লোলের ভাই প্রত্যয় নয়!অন্য কেউ….!

এক অদ্ভুদ ঘৃনাবোধে আমার শরীর গুলিয়ে উঠতে লাগলো,যে স্পর্শে আগে আনন্দ দিতো আমায়,আজ সেই স্পর্শ কাঁটার মতো বিঁধছে।যথাসম্ভব চেষ্টা করছি নিজেকে নকল প্রত্যয়ের থেকে সরিয়ে নিতে,কিন্তু ওর শক্তির কাছে আমি অপারগ।ও নিজের পুরুষত্ব কায়েমের শেষ প্রান্তে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমায় ছাড়বে না।আমার কোনোপ্রকার আকুতি-মিনতি পৌঁছাচ্ছে না ওর কানে,নিরুপায় হয়ে প্রত্যয়ের সকল অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করতে লাগলাম।মনে হচ্ছে কেউ যেনো আমায় জোরপূর্বক ধ র্ষ ণ করছে।হয়তো এটাই আমার কর্মফল,প্রত্যেকটা মানুষের নিজের কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করতে হয়।আমিও তার ব্যতিক্রম নই।কল্লোলের খু ন আমার হাতে হয়েছে,এটা আর কেউ না জানলেও সৃষ্টিকর্তা ঠিক জানেন।তিনিই বিচার করছেন আমায়।নকল প্রত্যয়ের নিষ্ঠুরতা আমার সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে,ইচ্ছে করছিলো এক প্রকান্ড চিৎকার জুড়ে দেই,কিন্তু ও আমার মুখ চেপে ধরে রেখেছে।
এর কিছুক্ষণ পরে,প্রত্যয় আমায় ছেড়ে দিলো।আমি এক দৌড়ে বাথরুমের দিকে ছুটে যাই।তারপর পানির ঝর্নাটা ছেড়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে পড়লাম।নিজের শরীরকে এই সময়ে নর্দমার থেকে অধিক দূষিত প্রতিভাত হচ্ছে।ঝর্নার গরম পানির স্পর্শে নিজের দূষিত শরীরকে শুদ্ধ করার প্রচেষ্টা করছি।জানিনা,এই দূষণ কতোক্ষণে দূর হবে।হয়তো শরীর থেকে এক্ষুণি উঠে যাবে,কিন্তু নিজের মন থেকে কিকরে এই দূষণ দূর করবো আমি,এর কোনো উপায় যে জানা নেই আমার।

গোসল সেরে আবারো রুমে চলে আসলাম,এসে দেখি প্রত্যয় নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে।আমাকে বললো এক গ্লাস জল দিতে,আমি জলের গ্লাস এগিয়ে দিতেই ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।সবথেকে বেশী খুশি হতাম যদি এই গ্লাসের ভেতরে বি ষ মিশিয়ে দিতে পারতাম,কিন্তু সেটা এখন যে সম্ভব নয়।এটা প্রত্যয় নয় মানে,আসল প্রত্যয়কে ও আগেই মে রে ফেলেছে।প্রথমে প্রত্যয়কে,তারপর কল্লোলকে, এখন ওর টার্গেট আমি।ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে কেমন সাংঘাতিক লোকের সাথে সংসার করছি!যে কিনা আমি স্বামী আর দেবরের খু নি,এখন আমাকে খু ন করতে চাইছে।মাঝে মাঝে মনে হয় আমার সকল ধারণা ভুল,যে মানুষটা একটা মাছি পর্যন্ত মারতে দুবার ভাবে,তার ভেতরটা এতো ভয়ংকর।কিকরে সম্ভব এটা,একমাত্র খোদাই ভালো জানেন।
প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি সে ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে,আমিও শুয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে ফেললাম।





পরের দিন,সকালবেলা।
প্রত্যয় বাসায় নেই।এই সুযোগে আমি রোদেলার নম্বরে কল দিলাম।নম্বরটা সকালেই প্রত্যয়ের ফোন থেকে টুকে রেখেছিলাম।আমি রোদেলাকে কল দিয়ে বলি,আমার সাথে দেখা করতে।আমাদের বাড়ির পাশেই একটা নির্জন জায়গা আছে।একটা পরিত্যক্ত পুকুর আর বাঁধানো ঘাট।তবে জায়গাটা বেশ সুন্দর।আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোদেলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।বেশ কিছুক্ষণ পরে ও এসে উপস্থিত হলো।

—তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে গেলো আমার।

—সরি আপু,আসলে হাতের কাজগুলো সেরে আসতে আসতে লেইট হয়ে গেলো।তাছাড়া একটু জ্যামও ছিলো রাস্তায়,

—ছাড়ো,কোনো ব্যপার না।আমি যে কারণে ডেকেছি তোমায়।একটা অত্যন্ত জরুরী কথা আছে তোমার সাথে,

—হ্যাঁ,সে তো বুঝতেই পারছি।তো কথাটা কি,যা ফোনে বলা সম্ভব নয়।

—আমি প্রত্যয়ের বিষয়ে কথা বলতে চাই তোমার সাথে,

—এই ঐ চিটারটার ব্যপারে কোনো কথা বলতে চাই না,ঘৃনা করি ওকে আমি।

—আরে বাবা…আগে আমার পুরো কথাটা তো শোনো,

—কি কথা,

—আমাদের সবার সাথে একটা গেম খেলা হচ্ছে, সবাইকে বোকা বানাচ্ছে কেউ…

—কার কথা বলতে চাইছেন আপনি,কে বোকা বানাচ্ছে আমাদের।

—আমার বর্তমান হাসবেন্ড,

—আমি তো আগেই বলেছি আপনাকে প্রত্যয় একটা চিটার,ওর আসল রুপটা আপনারা কেউ জানেন না।

—আমি প্রত্যয়ের কথা বলছি না,আমাদের সামনে যে প্রত্যয় সেজে আছে তার কথা বলছি।

—মানে,বুঝলাম না ঠিক,

—ও প্রত্যয় নয়।ও অন্য কেউ,কাল রাতেই ওকে অইডিনটিফাই করেছি আমি।

আমার কথা শুনে রোদেলা হা করে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে,বুঝতে পারছি ও ভীষণ শকড আমার কথায়।

—আপনার মাথা ঠিক আছে তো আপু,কি বলছেন কি আপনি?ও যে প্রত্যয় না হবে,তাহলে আসল প্রত্যয় কোথায়?

—আসল প্রত্যয় আর এই পৃথিবীতে নেই,তাকে অনেক আগেই খু ন করা হয়েছে!

আমার কথা শুনে রোদেলা আরোও বেশী অবাক হলো।শুধু তাই নয়,ও রীতিমতো অস্বাভাবিক আচরণ শুরু কর‌লো আমার সামনে।মনে হচ্ছে এক্ষুণি কান্নাকাটি শুরু করে দিবে।

—আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে মনে হয়,প্রত্যয়কে কে খু ন করবে,আমি বিশ্বাস করি না আপনার কোনো কথা,আপনি আমায় এগুলো বলার জন্য ডেকেছেন?

—দেখো,তুমি প্লিজ এরকম করো না।প্রত্যয় আমার দেবর ছিলো,ওর জন্য কী কষ্ট হচ্ছে না আমার।আমি কিন্তু নিজেকে শক্ত রেখেছি।আর তুমি নিজেকে দেখো।

—কিন্তু,ও কে তাহলে।আমাদের ভেতরে এসে ঢুকলো কিকরে,আর প্রত্যয়কেই বা কেনো মারলো?

—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা থাকলে কি ভেবেছো,এখনো বাঁচিয়ে রাখতাম ওকে।

—কি করতে চাইছেন আপনি?

—এমন কিছু করতে চাইছি,যাতে ও বাধ্য হয় সবটা স্বীকার করতে।সেই ব্যবস্থা আমি করবো।

—সেটা কীকরে সম্ভব হতে পারে,যদি আপনার কথা সত্যি হয়।

আমি ভ্যানিটি ব্যাগের ভেতর থেকে একটা বিষের শিশি বের করে রোদেলাকে দেখালাম।

—কিভাবে করবো,এটার সাহায্য!দেখো না কি করি আমি,তুমি শুধু জাস্ট হেল্প করবে আমায়।

—আমি আপনার সাথে আছি,যখন প্রয়োজন হবে আমাকে বলবেন।নকল প্রত্যয়কে এক্সপ্লোর করতে যা করা দরকার করুন।আমিও জানতে চাই সবটা।কে ও,কি চায়,প্রত্যয়কে কেনো মে রে ছে?

—ঠিক আছে,আমি যথাসময়ে ডেকে নেবো তোমায়।এখন আসি তাহলে।তুমি সাবধানে থেকো।

এরপর আমি আর রোদেলা পুকুর পাড় থেকে বেরিয়ে আসলাম।






বিকেলবেলা।প্রত্যয়ের জন্য যত্ন করে ওর প্রিয় গাঁজরের হালুয়া তৈরী করলাম।ও গাঁজরের হালুয়া খুব পছন্দ করে।দু কাপ হালুয়া নিয়ে ছাদে গেলাম।গিয়ে দেখি ও বসে বসে মোবাইল ঘাটছে।আমি জিজ্ঞেস করি।

—কি দেখছো মোবাইলে এতো মনোযোগ দিয়ে,

—দেখছি না পড়ছি,

—কি পড়ছো,

—একটা দারুণ গল্প,

—বাবা,তুমি আবার ফেসবুকের গল্প পড়া শুরু করলে কবে থেকে।আগে তো কখনো দেখিনি,তা কি গল্প পড়ছো?

—পারমিতা,

—ওহ,ওটা আমিও পড়েছি এক বছর আগে,লেখক প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।ওনার নামে একটা পেজও আছে।

—হুমম,পেজ থেকেই পড়ছি।আরো অনেক গল্প আছে এখানে,শেষ নেই।

—কি জানি,এরা এতো ফ্রি টাইম কোথায় পায়।বোধহয় কাজকর্ম কিছুই করে না,সারাদিন এসব নিয়েই পড়ে থাকে।

—আচ্ছা,বাদ দাও এসব।তোমার হাতে এগুলো কি?

—গাজরের হালুয়া,

—ওয়াও,এটা তো আমার ফেভারেট,

—তোমার জন্যই বানিয়ে এনেছি,খেয়ে তাড়াতাড়ি বলো কেমন হয়েছে?

—হুমমম,দাও।আর লোভ সামলাতে পারছি না যে আমি,

আমি একটা কাপ প্রত্যয়ের দিকে এগিয়ে দিলাম।তারপর আমিও বসে আমার কাপ থেকে খেতে শুরু করলাম।প্রত্যয় দুচামচ মুখে দেবার পরেই কেশে উঠলো।আমাকে বললো জল দিতে।পাশেই একটা জলের বোতল রাখা আছে।আমি বোতলটা এগিয়ে দিলাম ওর দিকে।প্রত্যয় আবারো খেতে খেতে আমায় জিজ্ঞেস করে,

—স্বাদটা একটু বেশীই কড়া হয়েছে মনে হয়েছে,স্পেশাল কিছু দিয়েছো নাকি?

—হ্যাঁ,দিয়েছি তো।

—কি দিয়েছো?

—সত্যি বলবো?

—বললে চমকে যাবে না তো আবার,

—আরে কি এমন দিয়েছো,যা শুনে চমকাতে হবে আমায়?

—বিষ দিয়েছি,বিষ!শুনতে পেয়েছো?

আমার কথা শুনে প্রত্যয়ের চোখদুটো ভয় আর আতংকে বড়ো হয়ে যেতে লাগলো,আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি সেটা।

চলবে…….

নেক্সট পার্ট এই নিচের পেইজে খুব তারাতাড়ি দেওয়া হবে পড়তে চাইলে ফলো করুন নিচের পেইজটা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here