তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা পর্ব -০৯

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (৯)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

কেটে যায় প্রায় দেড় মাস….
————-
সময়গুলো খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে যেনো, তীব্রের সাথে এখন আমার প্রতিদিন দেখা না হলেও ১দিন পর পর হলেও হয়। তবে প্রতিদিন নিয়ম করে ৩বার কল করে আমার খবর নেন উনি। ওনার সাথে যেদিন ই দেখা হয় সেদিন ই আমাকে নানান ধরনের সারপ্রাইজ দিয়ে ওনার প্রতি ভালোলাগার জায়গাটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই ভালোলাগার অনুভূতি গুলো ধীরে ধীরে কবে যে ভালোবাসায় মো’ড় নিয়েছে তা বুঝে উঠতেই পারলাম না। ওনার সাথে যতোটুকু সময় থাকতে পারি মনে হয় আমার মতো খুশি ও সুখী ২য় কোনো ব্যক্তি নেই। তেমনি বাসায় চলে আসার সময় ঘ’নি’য়ে আসলে একরাশ বিষন্নতা আমার মনকে গ্রা’স করে নেয়।

কখনও কখনও নিজের মনকে নিজেই কিছু ক’ড়া কথা শুনিয়ে দেই…

“দিন যতো যাচ্ছে আমার মন যেনো ততো বে’হা’য়া হয়ে পড়ছে, ইচ্ছে করে ওনার কাছে নিজের মনের সকল অনুভূতি গুলোর বহিঃপ্রকাশ করে দেই। আবার চিন্তা করি আমি তো মেয়ে, আমি কেনো আগে একজন ছেলেকে নিজের মনের অনুভূতিগুলোর জানান দিবো!”

আজ ভার্সিটিতে বিশেষ কোনো ক্লাস না থাকায় দ্রুতই বাসায় ফিরতে পারছি, লিনাকে বিদায় জানিয়ে রিকশায় উঠেছি। ব্যগ থেকে ফোনটা বের করে দেখলাম তীব্র এখনও পর্যন্ত আমাকে একটা মেসেজ বা কল করেন নি, এমন তো কোনো দিন হয় না তাহলে আজ কি হলো! পরক্ষণে নিজেই ওনার নাম্বারে কল করলাম কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো ওনার ফোন বন্ধ। মূহূর্তেই আমার চোখে-মুখে চি’ন্তা’র ভা’জ ফুটে উঠলো।

নিয়ম/রুটিনের বাহিরে হু’ট করে কিছু হয়ে গেলে যেমন নিজের মধ্যে একপ্রকার অস্বস্তি ও চি’ন্তা কাজ করে তেমনি তীব্রের প্রতিদিন কল করে খোজ নেওয়া আমার কাছে আমার প্রতিদিনের একটা রুটিন এ পরিণত হয়েছে যার বিপরীত ঘটায় আমার মধ্যে এই অস্বস্তি কাজ করছে, উল্টো পাল্টা নানান ধরনের চি’ন্তা মাথার ভিতর ঘুরপাক খা’চ্ছে।

পরমুহূর্তে নিজের মনকে নিজেই আশ্বস্ত করলাম..

“সব ঠিক আছে তৃপ্তি, এতো চি’ন্তা’র কিছু নেই। হয়তো ব্যস্ত কোনো কাজ নিয়ে তাই কল করতে পারছে না, ফ্রী হলে নিশ্চয়ই কল করবে তখন না হয় ক’ড়া করে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিয়ে নিজের মনকে হালকা করিস। আর বলে দিবি এরপর যেনো কখনও তোকে চিন্তায় না ফে’লে। যতো ব্যস্ততাই থাকুক না কেনো তোকে কল করে ভালো-ম’ন্দ খোজ নিতে হবে ওনার, এটা বাধ্যতামূলক কাজ ওনার জন্য”

“আম্মাজান আপনার কওয়া ঠিকানা মতোন আইসা পড়ছি তো”

রিকশাওয়ালা মামার কন্ঠ কর্ণপাত হতেই ধ্যন ভা’ঙে আমার। আমি স্মিত হেসে তাকে তার প্রাপ্য ভাড়া দিয়ে রিকাশা থেকে নেমে পড়ি। মূল দরজা পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে নিতেই আমার চোখে পরে ড্রয়িং বসারত অবস্থায় কয়েকজন অপিরিচিত মধ্যবয়সের লোককে। অন্যপাশে আমার বাবা-মা, ছোট ভাই বসে আছে। বাবা-মা বেশ হেসে হেসে শখ্যতা বজায় রেখে ওনাদের সাথে কথা বলছেন। ছোট ভাইটি আমাকে দেখা মাত্র মায়ের পাশ থেকে উঠে এক ছু’টে আমার কাছে এসে আমার কমোর জড়িয়ে ধরে বলে..

“আপু তোমার বিয়ে হবে, আমি দুলাভাই পাবো”

ছোট ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে আমার ভ্রু যুগল কুঁচকে আসে, ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে একপলক মায়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম। পরক্ষণেই নিজের দৃষ্টি সরিয়ে কোনো টু শব্দ টি না করে হ’ন’হ’নি’য়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলাম। মা-বাবার প্রতি এইমূহূর্তে আমার ভিষণ রাগ হচ্ছে, হাজার বার বলেছি তাদের এই মূহূর্তে আমি বিয়ে করতে ইচ্ছুক নই তবুও তারা যেনো না’ছো’র বান্দার মতো আমার পি’ছ’ন লেগে আছেন আমাকে বিয়ে দিয়ে তারপরই তারা ক্ষা’ন্ত হবেন।

পরক্ষণেই একটা বিষয় স্মরণ হওয়ায় আমার দু’চোখ ছলছল করে উঠে, তীব্রকে নিয়ে আমার মনে যে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছে তা কি একপাক্ষিক ই থেকে যাবে!আমাকে কি তবে অন্য কাওকে বিয়ে করতে হবে! আমার ভাবনার ছে’দ ঘটে রুমে কারোর প্রবেশের শব্দ পেয়ে। চোখ তুলে দরজার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই মাকে দেখতে পেলাম। হাতে একটা শাড়ি নিয়ে, হাস্স্যোজল মুখে আমার রুমে প্রবেশ করলেন তিনি। অ’ভি’মা’নে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।

মা আমার পাশে এসে বসে শীতল কন্ঠে বললেন…

“দেখ মা বিয়ে করা সবার জন্য ফরজ। আর ফরজ কাজ যতো দ্রুত করা যায় ততো ভালো। তোর বয়স ২০ পেরিয়েছে এখন তোকে বিয়ে দেওয়া আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মায়ের জন্য একটা গু’রু দায়িত্বের মতো। ভালো একটা পরিবার, ভালো ছেলের সন্ধান পেলে কোন বাবা-মা হাত’ছা’ড়া করতে চায় বলতো! সব বাবা-মা ই চায় তার মেয়ে সুখে জীবন কা’টা’ক। আমরাও তার বিপরীত নই, তুই আমাদের একটা মাত্র মেয়ে, তোকে নিয়ে আরো বেশি পজেসিভ আমি আর তোর বাবা। অনেক ভালো ঘর থেকে, ভালো ছেলে সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে তোর জন্য। আর না করিস না, সোনা মা আনার, এই শাড়িটা পরে দ্রুত বাহিরে আয় ওনারা তোর জন্য অপেক্ষা করছেন৷”

মায়ের এমন অনুরোধের সুরে কথা শুনে আমার মন কেনো যেনো সায় প্রদান না করে পারলো না৷ যেহেতু এখনও পর্যন্ত আমি জানি তীব্রের প্রতি আমার ভালোবাসার অনুভূতি গুলো এক পাক্ষিক সেহেতু ওনাকে নিয়ে আমার এতো সিরিয়াস হয়ে পরে বাবা-মাকে আ’ঘা’ত করা উচিত হবে না। বাবা-মা কে আ’ঘা’ত দিয়ে পরে যদি জানতে পারি আসলে আমার জন্য ওনার মনে কোনো অন্যরকম অনুভূতি বা ভালোলাগা নেই তাহলে তো আমিও অনেক বেশি হা’র্ট হয়ে পড়বো। যা হওয়ার তাই হবে, আজ যাই ওনাদের সামনে। সামনে গেলেই তো বিয়ে হয়ে যায় না, তীব্র যদি আমাকে নিজের মনের অনূভূতি গুলোর জানান দেয় তখন না হয় তীব্রকে নিয়ে ভাববো।

পরমুহূর্তে মায়ের কথানুযায়ী শাড়ি পরে চুলগুলো হালকা চিরুনি করে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম৷ আমার মা আমাকে টেনে রান্নাঘরে নিয়ে গেলেন, হাতে একটা চায়ের ট্রে ধরিয়ে আচল দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে দিলেন আর ধীরপায়ে হেঁটে ওনাদের সামনে যেতে বললেন। পাশাপাশি এ ও বললেন সর্বপ্রথম গুরুজনদের সালাম দিয়ে চা পরিবেশন করতে। আমি মায়ের কথাগুলো মা নাড়িয়ে মেনে নিয়ে চায়ের ট্রে টা হাতে রাখা অবস্থায় ধীর পায়ে ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলাম।

দৃষ্টি মেঝের দিকে স্থির রেখে একএক করে গুরুজনদের সামনে গিয়ে স্মিত হেসে সালাম দিয়ে চা পরিবেশন করতে লাগলাম। কয়েকজনকে চা দেওয়ার পর শেষ জনের সামনে দাঁড়াতেই আমার ভ্রু কিন্ঞ্চিত কুঁচকে এলো, দৃষ্টি নিচের দিক থেকে সরিয়ে আমার সামনে বসে থাকা আ’গ’ন্তু’ক’টির মুখশ্রী পানে লক্ষ্য করতেই আমার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেলো, চোখ যেনো কপালে উঠার উপক্রম।

অস্পষ্ট স্বরে বললাম…
“আপনি!”

তীব্র হয়তো আমার অস্পষ্ট স্বরে বলা কথা শুনতে পেরেছেন, তার ঠোঁটের কোনে ঝুলিয়ে রেখেছেন আমার চির চেনা বাঁকা হাসির রেখা। পরক্ষণেই হালকা করে কাশি দিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন…

“সবে মাত্র মুভির ট্রে’লা’র দেখলে ম্যম, এখনও অনেক বড় স’কিং নিউজ জানার আছে তোমার। আপাতত চা টা আমাকে দিয়ে ওপাশে সোফায় গিয়ে বসে পড়ো”

আমি চোখ ছোট ছোট করে দাঁত কিড়মিড়িয়ে সম্পূর্ণ চায়ের ট্রে টা ওনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে সোফার অন্যপাশে বসে পড়লাম। আমার এমন কাজে সকলে হা হয়ে গিয়েছে যেনো কিন্তু স্বাভাবিক হয়ে বসে রয়েছেন শুধু তীব্র। সেইমূহূর্তে আমার মা ড্রয়িং রুমে আসেন, তীব্রের হাতে চায়ের ট্রে টা দেখে জোড় পূর্বক হেসে আমার মাথায় একটা টো’কা মে’রে তীব্রের নিকট এগিয়ে যেতে যেতে বলেন…

“কিছু মনে করো না বাবা, মেয়েটা আমার শুধু বয়স আর শারিরীক গঠনের দিক থেকেই বড় হয়েছে, মনের দিক থেকে এখনও বাচ্চাসুলভ স্বভাবের ই রয়ে গিয়েছে। তাই এমন করে ফেলেছে।”

প্রতিত্তুরে তীব্র আমার দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে বললো…

“ইটস ওকে আন্টি, ব্যপার না। কিছু কিছু সময় এমন বাচ্চা সুলভ স্বভাবের বহিঃপ্রকাশ করা ভালো। আমি কিছু মনে করি নি”

আমি রা’গে ফো’স ফো’স করতে শুরু করেছি ইতিমধ্যে। নিজমনে বিরবিরিয়ে বললাম…

“ব’জ্জা’ত লোক, আমাকে চিন্তায় ফে’লে আমার বাড়িতেই আয়েশ করে বসে আছেন। একবার শুধু হাতের না’গা’লে পাই আপনাকে তারপর আপনার হবে!”

তীব্রের সাথে আমার ভালো উঠাবসা থাকলেও কখনও ওনার পারিবারিক বিষয় নিয়ে ইন্টারফেয়ার করি নি আমি। একদিন এমনি জিঙ্গাসা করেছিলাম ওনার পরিবারে কে কে আছেন! প্রতিত্তুরে উনি বলেছেন ওনার নিজের লোক বলতে কেও নেই। কিন্তু আজ যাদের সাথে নিয়ে আমার বাড়িতে আসলেন ওনারা তাহলে কারা! কি সম্পর্ক ওনাদের সাথে তীব্রের!

#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here