প্রণয়ের সূচনা পর্ব -২৪

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২৪
____________________________
হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন ছাদেই করা হয়েছে। সবাই ছাঁদেই আছে।প্রণয় সূচনার সাথে আসলেও এখন মেহমানদারি তে ব্যস্ত। সূচনা তিথি,মিহু,তৃণাদের সাথে বসে আছে।ফিহা, তনয়া ও আছে সাথে।নিহা কোথায় কে জানে? এই দুইদিনে দুইটা জিনিস খেয়াল করেছে সূচনা।নিহা আর নিষাদের মধ্যে সখ্যতা বেশি,কিন্তু ফিহা টা একটু অন্যরকম।নিহা কিছুটা গা/য়ে পড়া স্বভাবের ও।ছেলে দেখলেই রং বদলে যায়।ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগে নি সূচনার।মেয়ে হয়ে ছেলেদের সাথে এত কী?আশ্চর্য!সূচনা সহ বাকি সব মেয়েরাই পার্পল কালারের শাড়ী পড়েছে সবাই।সূচনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘তোমরা না বললে লাল রঙের শাড়ী পড়বে?

মিহু হাসতে হাসতে বললো-

–‘গা/ধী তুই কিছু কিনতে চাচ্ছিলা না তাই ভাইয়া ইচ্ছে করে এমন করেছে,লাল রঙের শাড়ীর ব্যাপরটা ও মিথ্যা যাতে তোর সন্দেহ না হয়।

মিহুর কথা শুনে সূচনা আরেক দফা অবাক হলো। স্টেজে বসে আছে দিনা। লাল,হলুদ আর গোল্ডেন রঙের সংমিশ্রণ শোভা পাচ্ছে শাড়িতে। শুভ্র ও হলুদ রাঙা ফুলে সজ্জিত সে। একে একে সবাই হলুদ লাগাচ্ছে দিনাকে।প্রণয়কে আর চোখে পড়েনি সূচনার। মিহু,তিথি,তৃণা, তাসনিন সবাই ব্যস্ত ছবি তুলতে।ফিহা,ইরা আর তনয়া আছে সূচনার সাথে।

–‘ভাবি তোমাকে সুন্দর লাগছে অনেক।

পাশ থেকে কথাটুকু বললো তনয়া।সূচনা হালকা হাসল, বললো-

–‘থ্যাঙ্কিউ পাখি,, তোমাকেও সুন্দর লাগছে অনেক, কিউউট পাখি।

–‘ তোমার ফোন কোথায়, চলো ছবি তুলি একটা।

–‘আমার ফোন তো রুমে,এখানে নিয়ে আসিনি।

–‘আমারটা দিয়ে তুলো।(ইরা)

–‘আচ্ছা আমি নিয়ে আসি সমস্যা নেই। (সূচনা)

–‘ঠিক আছে যাও।(ইরা)

চেয়ার থেকে উঠে ছাদের দরজার সামনে আসতেই চোখ আটকে গেল সূচনার। চিলেকোঠার ঘরের সাথে লাগোয়া ছোট্ট একটা ঘর।ঘর বললে ভুল হবে, সূচনার কাছে সেটাকে কোনো পুরাতন পরিত্যক্ত কুঠরির মতো লাগছে। এই বাড়িতে আসার পর আজ প্রথম ছাঁদে এসেছে সে।বিকেলে ও এসেছিল কিন্তু তখন তো চোখে পড়েনি। ছাদের ওপাশ থেকে এদিকটার কিছু দেখা যায় না চিলেকোঠার কারণে।

–‘আপনি এই হানে কি করতাসেন আম্মা?তাত্তারি যান আব্বা দেখলে রা/গ করব।

আচমকা কারো কণ্ঠ পেয়ে সূচনা চ/মকে উঠল কিঞ্চিৎ। পাশে তাকাতেই দেখল ফিরোজা খালার ভীত মুখশ্রী। উনি আবার ও তাড়া দিয়ে বললেন-

–‘আম্মা যান এই হান থেকা। যান যান।

সূচনা ভ্রু কুটি করে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কেন খালা কী হয়েছে?

–‘ আব,,ব কি হবে কি,,, কিছু না।আপনি যান তো।আর শোনেন এই দিকে আইবেন না বেশি।

–‘কেন? কোনো বিশেষ নিষেধা/জ্ঞা আছে?

–‘হ্যা ধরেন তাই।আসবেন না, ঠিক আছে?

সূচনা হালকা করে মাথা ঝা/কিয়ে নামতে লাগল সিঁড়ি দিয়ে। তার সন্দেহ হচ্ছে ফিরোজা খালার কথা শুনে। প্রণয় রা/গবে কেন? কী আছে সেখানে?খট/কা লাগছে তার। সিড়ি দিয়ে নামার সময় ই দেখল চারজন কম বয়সী ছেলে আর দুটো মেয়ে।একটা মেয়ের হাতে হলুদের ডালা। বুঝল তারা জাওয়াদের বাড়ি থেকে এসেছে হয়তো।হয়তো তার কাজিন।ভাবতে ভাবতেই ফুরোলো ছাদের সিড়ি।
______________________________
–‘আপনি এখানে কী করছেন?দরজা লক করেছেন কেন?

রুমে একাই ছিল সূচনা।বাকিরা সবাই ব্যস্ত ছাদে, জাওয়াদ এর বাড়ি থেকে দিনার জন্য হলুদ নিয়ে এসেছে জাওয়াদ এর কয়েকটা কাজিন।সবাই এখন ছাদেই তাদের নিয়ে ব্যস্ত।ফোন নিতে রুমে এসেছে সূচনা। দরজা লক করার শব্দে পেছনে ঘুরতেই দেখল দরজার সামনে নিষাদ দাড়িয়ে আছে।ঠোঁটে শয়/তানি হাসি তার।সূচনার তাকে দেখতে নিকৃ/ষ্ট লাগছে এই মুহূর্তে।ভয়ে বু/ক কা/পছে সূচনার।সূচনার প্রশ্ন শোনার পরে নিষাদ আস্তে
আস্তে এগোতে লাগল তার দিকে। সূচনা কাপ/ছে থরথর করে।চোখের সামনে স্পষ্ট হচ্ছে কিছু দৃশ্য।সেই দৃশ্য গুলো স্পষ্ট হওয়ার সাথে ঝাপসা হতে লাগল তার দৃষ্টি। নিষাদ এগোচ্ছে তার দিকে।সূচনা তরতর করে ঘাম/ছে। কম্পনরত কণ্ঠে বললো –

–‘দে,,দেখুন প্লি,, প্লিজ কা,,কাছে আসবেননা।

নিষাদ বা’কা হেসে বললো-

–‘ আরে এতদিন বলেছে প্রণয়কে ভাই মানতে।ভাই মানছি এখন তো আপনি আমার ভাবিই তাই না।সে হিসেবে আমি আপনার দেবর আর শুনেছি ভাবি আর দেবরের সম্পর্ক নাকি অনেক স্পেশাল হয়,মধুর সম্পর্ক।আসুন একটু সম্পর্ক বানাই, পরিচিত হই।

নিষাদের কথা শুনে সূচনার গা রি রি করছে।কী করবে সে? একটু সাহস জুগিয়ে বললো –

–‘দেখুন আমি কিন্তু চিৎকা/র করব।

নিষাদ উচ্চ স্বরে হাসল।বললো-

–‘আচ্ছা চিৎকার করো আমার সমস্যা নেই।কিন্তু কী বলবে?নিষাদ তোমার সম্মানে হাত দেয়ার চেষ্টা করেছে?খা/রাপ ভাবে ছুয়েছে? আচ্ছা বললে না হয় কিন্তু প্রমান আছে তোমার কাছে? নেই। তুমি চিৎ/কার করলে ভড়া বাড়ির লোকজন এসে জিজ্ঞেস করবে “কী হয়েছে? তখন মানসম্মান তোমারই যাবে।আমি তো ছেলে।আমার দিকে আঙুল কে তুলবে?

সূচনা ব্যথাতুর নয়নে তাকালো তার দিকে। ঘৃ/ণাভরা কণ্ঠে বললো –

–‘ছি’হ’হ তোর মতো ছেলের সামনে দাড়াতেও আমার ঘৃণা লাগছে এখন,মামাী ঠিকই বলেছেন অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ তোরা।

নিষাদ এক ঝট/কায় সূচনার সামনে দাড়ালো।বা’কা হেসে বললো-

–‘ তাহলে একটু অসুস্থতা দেখাই না হয়।

সূচনা চ/মকে উঠল,লাফ দিয়ে পিছিয়ে গেল দু কদম।কম্পনরত কায়া আরও কাঁপতে লাগল,শ্বাস ওঠা নামা করছে তার অস্বাভাবিক গতিতে। কেমন যেন ঝাপসা লাগছে সবকিছু। নিষাদ আচমকাই ধরে ফেলল তার ডান হাতটা,মুড়ে ধরল পেছেন। ব্যথায় শব্দ করে কান্না করে দিল সূচনা।আবারো স্পষ্ট হতে লাগল চোখের সামনে কিছু দৃশ্য। তারপর অন্ধকার ছেয়ে গেল সবকিছু তে।
__________________________________
অন্ধকার বদ্ধ রুমে একজন ছেলে আর মেয়ে, আসমানী রঙা শাড়ী পড়া মেয়েটার ভীত-সন্ত্র/স্ত মুখ, তার সামনে দাড়ানো একটা যুবক। মুখে তার পৈশা/চিক হাসি।মেয়েটা অনুনয়-বিনয় করছে ছেলেটার সামনে কিন্তু ছেলেটা শুনছেনা।এগিয়ে আসছে তার দিকে ক্রমাগত। এগিয়ে আসতে আসতে বিছানার শেষ কোণায় পোঁছে গেল মেয়েটা,ছেলেটা তাকে জোরে ধা/ক্কা দিয়ে ফেলে দিল বিছানায়। অধর কোণে পৈশা/চিক হাসি রেখেই বললো-“অবশেষে উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে।”

চিৎ/কার দিয়ে উঠল সূচনা।আশেপাশে তাকালেও বুঝতে বেগ পেতে হলো।তার চিৎ/কার শুনে প্রণয় দৌড়ে আসলো তার কাছে।তার পাশে বসতেই সূচনা ঝা/পটে ধরলো তাকে।প্রণয় বিমূঢ় হয়ে গেল যেন কিন্তু সামলে নিল সাথে সাথেই।তার দুইহাত রাখল সূচনার পিঠে।হাত রাখতেই টের পেল সূচনা কাপ/ছে।খাম/ছে ধরেছে প্রণয়ের পড়নে থাকা বেগুনি রঙা পাঞ্জাবীটার পিঠের দিকটায়।জ্বর কমেছে কিঞ্চিৎ পরিমাণে।নিজের বু/কের দিকে উষ্ণতা অনুভব করতে ই প্রণয় অতি ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘কাঁদছ কেন?চিৎ/কার করেছিলে কেন? খা/রাপ স্বপ্ন দেখেছ?তাই বলে এভাবে কাদবে?কিছু হয়নি তে, শুধু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলে মাত্র।

সূচনা থামলনা।পূর্বের ন্যায় বিসর্জন দিতে থাকল অশ্রু।ব্যথি/ত হলো প্রণয়ের হৃদয়।সে কিভাবে পারল এতটা দায়িত্বহীন হতে?কেন আসলো না ঠিক সময়ে?না চাইতেও ঝাপসা হলো প্রণয়ের নয়ন জোড়া।কিন্তু কপোল বেয়ে পড়ার আগেই সামলে উঠল সে, গ/লা ঝেড়ে পরিষ্কার করে নিল।তার বু/কে ক্রন্দনরত মানবির মুখখানা ধরে উঠাতে চাইলে সে আরও চেপে ধরলো তাকে।প্রণয় হালকা হাসার চেষ্টা করে বললো-

–‘বো/কা মেয়ে, এমন পা/গলের মতো কাদছ কেন?কিছুই হয়নি তোমার।কেউ কিছু করতে পারে নি।কান্না থামাও।নাহলে কিন্তু মা/ইর দিব এখন।

সূচনা নড়লো না,লেপ্টে রইলো প্রণয়ের প্রশস্ত বু/কে।প্রায় দশমিনিট এর মাথায় কান্নার মাত্রা কমলো কিছু টা।সূচনা নাক টানতে টানতে বললো-

–‘আপনি খা/রাপ,অনেক খারাপ,এখনো ব/কছেন আমাকে,আমি থাকব না এখানে,কালকে আম্মুকে ফোন দিয়ে বলব নিয়ে যেতে।

প্রণয় হালকা হাসল,বললো-

–‘সেই যে জড়িয়ে ধরেছ, ছাড়ছই না আবার বলছ থাকবেনা এখানে।

সূচনা পিলে চম/কালো যেন, জড়িয়ে ধরে আছে মানে?নিজের অবস্থান টের পেতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেল একদম।সরে আসতে পারলনা,কেমন যেন অসাড় হয়ে গেছে তার শরীর।প্রণয় বুঝল কি না কে জানে।সূচনার মুখখানা বু/ক থেকে উঠিয়ে দু’হাতের আজলে নিল।চোখ তুলে তার দিকে তাকালো সূচনা। সূচনার কান্না ভেজা অক্ষি পল্লবে পরপর চুমু খেল।সূচনা কিংকর্ত/ব্যবিমুঢ়।চোখ জোড়া তার বন্ধ হয়ে গেল আপনা আপনি। প্রণয় তার কপালের সাথে সূচনার কপাল ঠেকিয়ে স্পষ্ট স্বরে শুধালো –

–‘সদ্য স্ফুটিত কোনো পুষ্পের ন্যায় পবিত্র প্রণয়ী,নিজেকে অপবিত্র ভাবার দুঃসাহস যেন না করে সে।তার অন্তর,কায়া গভীর থেকে গভীর ভাবে স্পর্শ করার অধিকার শুধু তার প্রণয়ের।সেই দুঃসাহস শুধু দেখাবে প্রণয়ীর প্রণয়ই।

কোনো এক অদ্ভুত শিহরণে শিহরিত হলো সূচনার সমস্ত শরীর। কথা দিয়ে ও বুঝি এমন শিহরিত করা যায়, সূচনা লজ্জায় মিয়িয়ে গেল একদম। কান গর/ম হয়ে গেছে তার,মনে হচ্ছে সেখান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। এমন অনুভূতি, এই কথা,ছোয়া যে তার কাছে নয়া নয়া একেবারে।

দরজায় ঠকঠক আওয়াজে ঘোর ভাঙল দুজনের। সূচনাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলতে গেল প্রণয়। দরজা খুলতেই মিসেস আফিয়া হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করলেন। এসেই সূচনার পাশে বসলেন। ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন –

–‘এখন কেমন লাগছে রে? এমন জ্ঞান হারালি কেন হঠাৎ করে? কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানিস। এখন ঠিক লাগছে না?

একনাগাড়ে সব বললেন মিসেস আফিয়া। সূচনা মাথা নাড়িয়ে বুঝালো-সে ঠিক আছে এখন।

সূচনার কপালে হাত রেখে বললেন-

–‘ একটু কমেছে। আমি স্যুপ পাঠাচ্ছি ইরা কে দিয়ে, তারপর খেয়ে ঔষধ নিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিবি।ঠিক আছে?

আবারো মাথা নাড়ালো সূচনা। মিসেস আফিয়া একটু মন খারাপে/র স্বরে বললেন-

–‘জানিস তিথি, দিনা বারবার তোর কথা জিজ্ঞেস করছিল।কোনোরকম বুঝিয়েছি।

সূচনা কিছুটা অপরাধীর স্বরেই বললো-

–‘দুঃখীত মামী আসলে,আমি

–‘ এক টা লাগাব কা/নের নিচে।তোকে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেছি আমি।তাড়াতাড়ি ঠিক হ’য়ে যা।কালকে তোর নন্দিনীর বিয়ে আর তার ভাবি অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকবে এটা কি হয়?

দুইদিকে মাথা নাড়ালো সূচনা।

–‘তাহলে যা বলছি তাই কর।

–‘আচ্ছা।

–‘ঠিক আছে আমি আসি তাহলে।

মিসেস আফিয়া চলে যেতে নিলে সূচনা থামিয়ে দিল তাকে। বললো-

–‘ছোটবেলায় আমি অসুস্থ হলে মনে হত আম্মুকে জড়িয়ে ধরলেই অসুখ পালিয়ে যাবে, তাই জড়িয়ে ধরে রাখতাম আর অদ্ভুত ভাবে অসুখ ও সেড়ে যেত। সত্যি ই সেড়ে যেত না আমার ধারনা ছিক জানিনা কিন্তু সেই অভ্যাসটা আমার এখন ও আছে। আম্মু তো নেই এখানে,আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে দিবেন মামী?

একটানা কথাগুলো বলে থামল সূচনা। তার কণ্ঠে ছিল আকুলতা। মিসেস আফিয়া কোনো কথা বললেন না সোজা ঝা/পটে ধরলেন সূচনাকে। সূচনার চোখ জোড়া জ্বল/জ্বল করে উঠলো। প্রণয় হাসল,প্রশান্তির হাসি।

#চলবে

( আসসালামু আলাইকুম।ঘটনা কালকে পরিষ্কার হবে।তাড়াহুড়োয় লিখেছি, কারেন্ট ছিলনা,এখন ও নেই। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং ❣️।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here