অপরাজিতা পর্ব -১১

#অপরাজিতা
#১১তম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

আনান ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতেই সবাই রাজিতাকে ‘সরি’ বলতে লাগলো। রাজিতা মুখে এক আকাশ মেঘ জমিয়ে বসে আছে, যেন একটু দমকা হাওয়াতেই ঝড়-তুফান আর কান্নার বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে! চোখের পানিগুলো যেন টুস করে পড়ার অপেক্ষায় আছে৷
সিনান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“আরে, ওকে পরেও সরি বলা যাবে। আগে স্যারকে সরি বলতে হবে৷ স্যার আসার সাথে-সাথেই যদি আমাদের সাথে বন্ডিংটা খারাপ হয়, তাহলে বাকি বছর কীভাবে ক্লাস করব? আর আইডিয়াটা কার যেন ছিলো! নেহা, চল। তুই আর দুই-তিনজন আমার সাথে চল, স্যারকে সরি বলতে হবে। ”
নেহা মুখটা কাচুমাচু করে বলল,
–“আমাকে যেতেই হবে? না গেলে হয়না? তোরাই যা! স্যারের যা রাগ দেখলাম! আমারতো এখন স্যারের সামনে যেতেই ভয় লাগছে!”
মালিহা বলে উঠল,
–“আইডিয়াটা দেওয়ার সময় মনে ছিলো না?”
ওর কথা শুনে নেহা কিছুটা রেগে গিয়ে বলল,
–“এখনতো সব দোষ আমার! তোমরা আমার সাথে তাল না মিলালে কি আমি একা-একা পারতাম। তখনতো নিজেরাও খুব নাঁচছিলে। আর এখন এসে ‘যত দোষ, নন্দঘোষ’। ”
ওদের আরেকফ্রেন্ড বলল,
–“আরে ভাই তোরা গেলে চল। স্যারের আবার ক্লাস থাকতে পারে। এখানে সময় নষ্ট না করে চল।”

এরপর নেহা, মালিহা, সিনান আর ওদের আরো দুইটা ফ্রেন্ড গেলো আনানের সাথে দেখা করতে।বাকি সবাই ওদের ফেরার অপেক্ষা করতে লাগলো।
রাজিতা অনেক কষ্টে নিজের কান্নাগুলো চেপে রেখেছে। ক্লাসে সবার সামনেতো আর কান্না করা যাবে না! ওর নিজেকে খুব অসহায় লাগছে, এতকিছু হয়ে যাবে ও ভাবতেও পারেনি! ও নিজেও বুঝতে পারেনি যে, এই কাজটা করে বসবে!

মিনিট পাঁচেক পরে নেহারা থমথমে মুখ নিয়ে ফিরে আসলো আনানের অফিসরুম থেকে। ওরা আসতেই সবাই ঘিরে ধরল কি হয়েছে তা শুনার জন্য।
সিনান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–“কি আর হবে! সেই লেকচার।”
আরেকটা ছেলে আবার বলে উঠল,
–“বইন! তোরা আর যাই করিস, জীবনে কখনো টিচারকে বিয়ে করিস না। ছাত্রী ভেবে সারাজীবন জ্ঞান দিতে-দিতে মেরে ফেলবে!”
নেহা রাজিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
–“সরিরে দোস্ত! আমি বুঝতে পারিনি এতকিছু হয়ে যাবে! ”
রাজিতা আর কারো সাথেই একটা কথাও বলল না। পরের ক্লাসটা চুপচাপ শেষ করল।

রাজিতার ক্লাস শেষ হতে একটু দেরি হলো। ও গাড়ির কাছে গিয়ে দেখে যে, আনান গাড়িতেই বসে আছে। কতক্ষণ বসে আছে কে জানে।
রাজিতা গাড়িতে বসতে বসতে বলল,
–“কতক্ষণ বসে আছেন?”
আনান কোনো উত্তর না দিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
সারারাস্তা কেউ কোনো কথা বলল না। প্রথমদিকে রাজিতা কয়েকবার, ‘সরি’ বলল। কিন্তু আনানের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে পরে ও নিজেও চুপ করে গেলো।

রাজিতাদের বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় তিনটা বেজে গেলো। ক্ষুধায় রাজিতার পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে। সেই সকালে দু’টো রুটি আর একটা ডিম খেয়ে বেড়িয়েছে, এরমধ্যে আর কিছুই খায়নি। ওর ফ্রেন্ডরা সবাই ক্যান্টিনে গিয়েছিলো খেতে, কিন্তু ও ক্লাসেই বসে ছিল, তখন খেতে মন চাচ্ছিলো না, কিন্তু এখন আর থাকতে পারছে না।কিন্তু বাইরে থেকে এসে গোসল না করেই যদি খেতে বসে ওর শাশুড়ী আর আনান কি ভাববে! তাই ভাবল যে, আগে গোসল করে নিবে।

কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে বাথরুমের দরজা খুলতে গিয়েই বুঝতে পারলো যে, আনান ভেতরে আছে। ও টলতে টলতে কাপড়চোপড় নিয়ে অন্যরুমের বাথরুমে চলে গেলো।
কোনোমতে গোসলটা সেরে বের হতেই দেখলো যে, আনান খেতে বসে গেছে। ওর শাশুড়ী আগেই খেয়ে নিয়েছে, এ সময়টা উনি রেস্ট নিচ্ছে। আনানও খেয়ে নিচ্ছে, তারমানে রাজিতাকে এখন একা-একাই খেতে হবে। রেগে আছে বলে কি একসাথে খাওয়াও যাবে না! রাজিতা রাগে ফুসছে শুধু। সেই তখন থেকে কথা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছে, আর উনি ভাব নিয়ে বসে আছে! এসব ভাবতে ভাবতে ভেজা কাপড়গুলো নিয়ে ছাদে চলে গেলো রাজিতা।
অনেকক্ষণ পর ছাদ থেকে এসে দেখল যে, আনান রুমে নেই। পেটে ক্ষুধা থাকলেও রাজিতার এখন আর খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই, ঘুমও চোখে টলমল করছে৷ তাই ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো রাজিতা।

সন্ধ্যার দিকে ওর শাশুড়ীর ডাকে ঘুম ভাঙল। এতক্ষণ ঘুমিয়েছে! ওর শাশুড়ী কি ভাবছে কে জানে!
রাজিতা তাড়াতাড়ি উঠে বসল। ওর শাশুড়ী ওর কপালে হাত দিয়ে বলল,
–“শরীর খারাপ নাকি রে মা? অনেকক্ষণ দেখলাম শুয়ে আছিস। একটু আগে আনান এসেছিল রুমে, আমি ভাবলাম যে তুই হয়ত জেগে আছিস। সন্ধ্যায় ঘুমাতে হয় না। উঠে একটু হাটাহাটি কর।”
রাজিতা বলল,
–“না মা, আমি ঠিক আছি। ক্লাস থেকে এসে একটু ক্লান্ত লাগছিলো, তাই আর কি!”
–“এতদূর থেকে ক্লাসে যেতে তোর খুব কষ্ট হয়ে যায়৷ তাই না?”
–“না মা, আপনার ছেলেওতো যায়। কষ্ট হবে কেন!”
–“আমার ছেলের দূর-দূরান্তে যাতায়াত করে অভ্যাস আছে। তোরতো নেই।”
–“আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে।”
–“তাই হলেই ভালো। তুই দুপুরে খাসনি মনে হয়?”
রাজিতা শুকনো হেসে বলল,
–“ফ্রেন্ডদের সাথে খেয়েছিলামতো আর খেতে মন চাচ্ছিলো না।”
রাজিতা সত্য বললে হয়ত ওর শাশুড়ী রাগ করতো, তাই মিথ্যে বলল। মানুষটা ওকে কত ভালবাসে! আচ্ছা ওর মা থাকলেও কি এভাবে খেয়াল রাখত সবকিছু? ও কখন কি করল না করল! কখন কি খেলো না খেলো! ওর চাচার বাসায়তো ক্ষুধা লাগলেই খেয়ে নিতো, কারো বলার আশাই রাখত না। কারণ ওখানে এভাবে কেউ ওর খেয়াল রাখতই না।কিন্তু এত ভালবাসা কি ওর কপালে সইবে!

রাজিতা সারাদিন না খেয়ে থাকার কারণে মাথাটা ভারি হয়ে আছে, তুলতে পারছে না। বমি-বমিও পাচ্ছে, কিন্তু ওর শাশুড়ীকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।
সারাদিন না খেয়ে থেকে সন্ধ্যার দিকে চা মুখে দেওয়ার সাথে-সাথেই রাজিতা বমি আর আটকে রাখতে না পেরে বাথরুমে গিয়ে বমি করে দিলো। ওর শাশুড়ী পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। তারপর রাজিতাকে ধরে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো। আনানকে কল করে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলল।উনিতো অন্যকিছু ভেবে বসে আছেন!

আনান এসে দেখলো যে, রাজিতা বিছানায় শুয়ে আছে। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, ও কতটা ক্লান্ত। একদিনেই চোখমুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।আনানকে আসতে দেখেই আনানের মা বলল,
–“তোর ডাক্তার আঙ্কেলকে খবর দিবি কি?”
আনান রাজিতার পাশে বসে বলল,
–“আচ্ছা, আগে আমি দেখছি।”
–“আচ্ছা।”
বলেই উনি রুম থেকে চলে গেলেন। রাজিতা বুঝতে পারলো যে, না খেয়ে থাকার কারণে ওর এমনটা হয়েছে৷ এর আগেও যখন অনেকক্ষণ না খেয়ে থেকেছে তখন এমনটা হয়েছে। ওর শাশুড়ী চলে যেতেই রাজিতা আনানকে বলল,
–“মাকে বলুন চিন্তা না করতে। আমার আসলে কিছুই হয়নি। না খেয়ে থাকার কারণেই..”
শেষের কথাগুলো রাজিতা আস্তে-আস্তে বলল।তারপর আবার বলতে লাগলো,
–“সরি! আর কতক্ষণ কথা না বলে থাকবেন? এবার অন্তত কিছু বলুন।”
আনান ওর হাত আর কপাল খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বলল,
–“না খেয়ে থাকার মানে টা কি? আমি তোমার উপর রাগ করব কি তুমিই আমার উপর জিদ দেখিয়ে না খেয়ে বসে আছো? এইটা কোনো কথা!”
রাজিতা আমতা-আমতা করে বলল,
–“আমি মোটেও রাগ করিনি! আমি কেন রাগ করব, আমিতো জানি ভুলটা আমার। আমিতো আপনার রাগ ভাঙাতে চাচ্ছিলাম। আপনিইতো…”
আনান ধমকের সুরে বলল,
–“আমি কি বলেছিলাম যে, না খেয়ে থেকে আমার রাগ ভাঙাও?”
–“খেতে মন না চাইলে আমি কি করব!”
আনান রাজিতার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।রাজিতা কিছুই বুঝতে পারলো না। চুপচাপ মরার মতো পড়ে রইলো।

কিছুক্ষণ পরেই আনান একটা ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকল।তাতে একটা গ্লাসে করে ফলের জুস আর আরেকটা বাটিতে করে পানিসহ চিড়া ভেজানো আছে।
ওগুলো দেখে রাজিতা বলল,
–“আরে আপনি এতকষ্ট করে এগুলা আনতে গেলেন কেন! কিছু একটা খেলেইতো সব ঠিক হয়ে যেতো!”
আনান টেবিলের একপাশে ওগুলো নামাতে নামাতে বলল,
–“এতে খুশি হওয়ার কিছু নেই। এগুলো কষ্ট করে আমি করিনি। নিয়তি আন্টি করেছে, আমি শুধু নিয়ে এসেছি। এবার সুন্দর করে এগুলো খেয়ে নাও।”

নিয়তি আন্টি হচ্ছে ওদের বাসায় কাজ করে। আনান যখন ছোট ছিলো তখন থেকেই উনি আছেন। উনার একটা ছেলে আছে, আর ওই ছেলেটাই আনানদের গাড়ির ড্রাইভার। বউ-বাচ্চা নিয়ে আনানদের ফ্ল্যাটের নিচ-তলাতে ছোট্ট রুমটাতেই থাকে।

চিড়া রাজিতার একদম অপছন্দ। কিন্তু এখন না খেয়ে উপায় নেই। ও পেট ভরে খেলেই সব ঠিক হয়ে যেতো, আনান শুধু-শুধু এসব করতে গেলো। এসব ভাবতে ভাবতে উঠে বসে রাজিতা। ওর মনে হচ্ছে যে, ও কোনো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছে!
ফলের জুসটা এক চুমুকে শেষ করে নাক কুঁচকে চিড়ার বাটিটা হাতে নিয়ে আনানের দিকে একবার তাকালো। তারপর বলল,
–“আমার এই অপছন্দের জিনিসটা খেতে পারি, তবে একটা শর্তে!”
–“রাগ করে আছি আমি, আর শর্ত দিচ্ছো তুমি! আজব মেয়ে কপালে জুটেছেরে বাবা!”
–“আগে বলুন আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন?”
–“আচ্ছা বাবা দিয়েছি৷ তবে নেক্সট টাইম আবার যদি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করে অসুস্থ হয়ে যাও, তাহলে আর ক্ষমা নেই।”
রাজিতা চোখমুখ বুজে চিড়া-পানি খেতে লাগলো। আনান কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল,
–“আমি কি এমনি এমনি রাগ করেছি? তোমার আর তোমার ফ্রেন্ডদের আক্কেল দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি! কোনো কমনসেন্স নেই একটারও! এই খবরটা কোনোভাবে ক্যাম্পাসে বা ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে পড়লে কি হবে জানো? প্রথমে বদনাম হবে ভার্সিটির, তারপর ডিপার্টমেন্টের, তারপর তোমার! আমার এখানে কিছুই হবে না, কারণ আমি মাত্র জয়েন করেছি, আমাকে কেউ ওভাবে চেনেই না।সবাই এটাই রটিয়ে দিবে যে ‘স্টুডেন্ড হয়ে ক্লাসের মধ্যে স্যারকে প্রপোজ’ বুঝতে পারছো ব্যাপারটা! অন্যসব বাদ-ই দিলাম, অন্তত নিজের কথাটাতো ভাবতে!”
রাজিতা অপলক দৃষ্টিতে আনানকে দেখছে আর ওর কথা শুনছে৷ আনানও রাজিতার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল। রাজিতাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আনান আবার বলল,
–“ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?”
–“সরি বলেছিতো!”
–“সবকিছু সরি দিয়ে হয়!”
–“তাহলে কি করতে হবে? আপনিই বলুন।”
–“আপাতত একটু রেস্ট নাও। মা চিন্তা করছে, কি হলো! আমি যাই মাকে বলে আসি যে, তার আদরের বউমা না খেয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ”

বলেই আনান রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রাজিতা একটু শুয়ে থাকার পর যখন একটু ভালো লাগলো উঠে ওর শাশুড়ীর রুমে চলে গেলো। সেখানে ওর শশুর আর আনানও ছিলো।

রাতে খাওয়ার সময় আনানের মা রাজিতার প্লেটে মাছ, তরকারি, ভাত, এটা-সেটা তুলে তুলে দিতে দিতে বলল,
–“আমি বলছিলাম কি আনান টিচার্স কোয়ার্টার পেলে তোরা দুজন ওখানে উঠে যা। ”
আনানের মা একথা বলার সাথে-সাথেই আনান আর রাজিতা দুজনেই একসাথে বলে উঠল,
–“কেন?”
বলেই দুজনে দুজনের মুখের দিকে তাকালো।
ওদের প্রতিক্রিয়া দেখে আনানের মা আনানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“দেখছিস না, রাজিতার জন্য এতদূর থেকে ক্লাস করা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে!”
আনান খাওয়া থামিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“কেন? আমিওতো এখান থেকেই রোজ যাবো৷ তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আর দুইদিন না যেতেই তোমার কেন মনে হচ্ছে যে, ওর জন্য কষ্ট হয়ে যাচ্ছে? ও তোমাকে বলেছে কিছু?”
কথাগুলো বলেই রাজিতার দিকে তাকালো আনান। আনানের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে রাজিতা মাথা ঝাঁকালো।
রাজিতার দিকে ওভাবে তাকাতে দেখে আনানের মা বলল,
–“তুই ওর দিকে ওভাবে তাকাচ্ছিস কেন? ও কিছু বলেনি। আমি নিজেই বলছি। সামনের মাসেইতো কোয়ার্টার দিতে চেয়েছে, নিয়ে নে।”
রাজিতা এবার মুখ খুলল,
–“না মা! এসব আপনি কি বলছেন! আপনারা থাকতে আমরা আলাদা বাসায় কেন উঠব? আর আমার কোনো সমস্যা হবেনা৷ আজ প্রথমতো তাই একটু সমস্যা হয়েছে৷ দুয়েকদিন গেলেই অভ্যাস হয়ে যাবে।”
তারপর আনান বলল,
–“মা তুমিও ইদানীং বেশি বোঝা শুরু করে দিয়েছো৷ তোমাদের কাছ থেকে দূরে যেতে দিবে না বলে আমাকে বিদেশে পড়তে যেতে দিলে না! আর এখন নিজেরাই দূতে যেতে বলছো! আজব!”
আনানের মা হাসতে হাসতে বলল,
–“এই দূর কি সেই দূর রে বাবা! ও তুই বুঝবি না। তখন ভয় ছিলো যে, বিদেশে পড়তে দিলে কোন বিদেশিনীর খপ্পড়ে পড়বি, শেষে আমাদের ভুলেই যাবি! এখনতো আর সেই ভয় নেই। আর তাছাড়া বেশি দূরেতো নয়৷ ছুটির দুইদিন আমাদের সাথে থাকবি, আমি আর তোর বাবাও গেলাম। ”
আনান খাবার খেতে খেতে বলল,
–“মা! তোমাদের মাথায় এসব আজগুবি লজিক কে ঢুকায় বলোতো! আজ যা বললে বললে, নেক্সট যেন এমন কথা আর না শুনি।”
আনানের মা এবার রাজিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
–“রাজিতা! তুই-ই একটু বোঝাতো!”
রাজিতা এক ঢোক পানি খেয়ে নিয়ে বলল,
–“উনিতো ঠিক-ই বলেছেন। আমি আপনাদের কাছে আসতে না আসতেই আমাকে দূরে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন। আমি কি আপনাদের জ্বালাচ্ছি খুব? আমিতো ভাবছি যে, আমি আমার বাবা-মাকে ফিরে পেয়েছি৷ আর আপনারা আমাকে তাড়ানোর ধান্ধায় আছেন।”
আনানের মা এবার হাসতে হাসতে বলল,
–“আচ্ছা তোদের কথাই থাকবে৷ কোয়ার্টারে উঠতে হবেনা। তবে আমার একটা কথা শুনতে হবে।”
আনানের খাওয়া শেষ। ও টেবিল থেকে উঠতে যাচ্ছিলো, ওর মায়ের কথা শুনে আবার বসতে বসতে বলল,
–“বলো, কি বলতে চাও?”
–“কোয়ার্টারে তোদের থাকতে হবে না। কিন্তু নিয়ে নে।”
আনান এবার রেগে গিয়ে বলল,
–“এ আবার কি ধরনের কথা! থাকতে হবে না, তাহলে কোয়ার্টার নেবো কেন?”
–“নিবি কারণ তোদের যার যখন ক্লাস আগে শেষ হয়ে যাবে সে তখন ওখানে গিয়ে বিশ্রাম করতে পারবি। বেশি ক্লান্ত থাকলে ওখান থেকে বিশ্রাম নিয়ে ধীরে-সুস্থে বাসায় আসবি। আমিও গেলাম তোদের ভার্সিটি দেখতে, তখন ওখানে গেলাম।”
আনান হাসতে হাসতে বলল,
–“মা, কিছু সময় কাটানোর জন্য ওখানে আমার রুম আছে। আর রাজিতার জন্য ক্যান্টিন, লাইব্রেরি, ক্লাস সব পড়ে আছে। এসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবেনা।”
–“আমি বলেছি কোয়ার্টার নিবি। ব্যস! থাকিস আর না থাকিস কোয়ার্টার নিবি, এটাই আমার শেষ কথা! ”
বলেই উনি টেবিল থেকে উঠে গেলেন। উনার খাওয়া আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। আনান ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
–“বাবা! তুমি কিছু একটা বলো!”
ওর বাবার খাওয়া তখনও শেষ হয়নি। উনি আরাম করে খেতে-খেতে বললেন,
–“আমি আর কি বলব! তোর মা ঠিক-ই বলেছে। কোয়ার্টার নিয়ে রাখতে ক্ষতি কি! যেকোনো সময় কাজে লাগতে পারে।”
–“বাবা! তুমিও না!”
বলেই আনান হাত ধুয়ে সোজা রুমে চলে গেলো।
রাজিতাও হাত ধুয়ে আনানের পিছু-পিছু রুমে চলে গেলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here