তুমি যে আমার পর্ব -১০ ও শেষ

#গল্পের_নাম_তুমি_যে_আমার
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:১০/অন্তিম পর্ব

সকাল থেকেই হেমন্তি আর রুমকি বেগম রান্নাঘরে নানান পদ তৈরি করতে ব্যস্ত হেমন্তিকে রুমকি বেগম অনেকবার বলেছে ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিতে কিন্তু সে শুনতে না/রা/জ।সে নিজ হাতে সবকিছু তৈরি করবে বলে বায়না ধরে রুমকি বেগম হেমন্তিকে বললেন,

~তোর বিয়ে আজ বিকেলে আর তুই এখন রান্না করছিস কেমন দেখাচ্ছে ব্যাপারটা?

হেমন্তি গরম তেলে পেয়াজ ছেড়ে তা চামচ দিয়ে নাড়া দিতে দিতে বললো,

~এতে কী হয়েছে মাত্র ৮জন মানুষের রান্না এতে সমস্যা হওয়ার কী আছে?

রুমকি বেগম বললেন,

~হাতের মেহেদীর রঙ্গ নষ্ট হয়ে যাবে পানি লেগে।

হেমন্তি বললো,

~আবার লাগাবো এতে কী হয়েছে?

রুমকি বেগম আর কোনো কথা বললেন না তিনি বুঝতে পেরেছেন হেমন্তির সাথে কথায় তিনি পারবেন না।সে নিজ কাজে মনোযোগ দিলেন সব কিছু তৈরি করে তারা টেবিল সাজিয়ে দিলো সব কাজ শেষ করে হেমন্তি রুমে চলে আসলো।রুমে আসতেই তার চোখ গেলো বিছানায় ইলহাম সকালে বিয়েতে পরার জন্য সবকিছু দিয়ে গেছে।হেমন্তি শপিং ব্যাগ থেকে শাড়িটা বের করলো শাড়িটা হাতে নিতেই হেমন্তির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।ব্যাগ থেকে এক এক করে জিনিস বের করে হেমন্তি সেগুলোতে হাত বুলিয়ে দেখলো।হেমন্তির অনেক সুখ সুখ লাগছে সে ওয়াশরুমে চলে গেলো গোসল করে এসে শাড়িটা পরে নিলো চুলগুলো ভালো মতো মুছে পিঠে ছড়িয়ে দিলো।হেমন্তি আয়নার সামনে নিজেকে দেখতে ব্যস্ত তখনই ঘরের দরজায় কেউ টোকা দিলো হেমন্তি বললো,

~ভিতরে আসো।

দরজা ঠেলে আবির ঘরে প্রবেশ করলো ভাইকে দেখে হেমন্তি বললো,

~কিছু বলবে ভাইয়া?

আবির বোনকে ভালো মতো দেখে মন খা/রা/প করে বললো,

~হেমন্তি,আমরা এখনই মার্কেট গিয়ে তোর জন্য নতুন একটা সুন্দর দামী শাড়ি নিয়ে আসতে পারি আজ তোর বিয়ে আর এই দিয়ে তুই এমন একটা শাড়ি পরবি।

আবিরের কথা শুনে হেমন্তি বললো,

~ভাইয়া,আমার কাছে এই শাড়িটা সবচেয়ে দামী কেন জানো ইলহাম এই শাড়িটা হালাল টাকায় কিনে দিয়েছে।আর এটাই আমার কাছে অনেক আমি জানি তোমার হয়তো ভালো লাগছেনা কিন্তু ভাইয়া সত্যি বলছি আমার মনে হচ্ছে এই শাড়িতে আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।

আবির বোনের কথা শুনে আলতো হেসে হেমন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

~তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস সব বুঝতে শিখেছিস।

হেমন্তি ভাইয়ের কথায় হালকা হাসলো আবির রুম থেকে চলে গেলো। দুপুরের দিকে ইলহাম,খালা,আর মাহমুদা বেগম এসে হাজির হলেন তাদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন হাসান সাহেব।হেমন্তি রুমে বসে চুলে খোপা করে নিলো বেলিফুলের মালাটা খোপায় পেঁচিয়ে নিলো সুন্দর করে শাড়ির আচঁলটা মাথায় দিয়ে নিলো।রুমকি বেগম হেমন্তির রুমে এসে হেমন্তিকে বধূ রুপে দেখতে পেয়ে তার চোখ ছলছল করে উঠলো খুশিতে।হেমন্তি ফুপির কাছে এসে বললো,

~কেমন লাগছে আমাকে ফুপি?

রুমকি বেগম হেমন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

~অনেক সুন্দর লাগছে তোকে।

হেমন্তি বললো,

~সবাই চলে এসেছে?

রুমকি বেগম বললেন,

~সবাই এসেছে খাওয়া-দাওয়া করছে।

হেমন্তি বললো,

~ওহ।

সবার খাওয়া শেষে কাজি সাহেব চলে আসলেন হেমন্তির রুমে বিয়ে পড়ানোর জন্য সকল নিয়ম মেনে কাজী সাহেব হেমন্তিকে কবুল বলতে বললেন।হেমন্তি হাসান সাহেবের হাত ধরে কবুল বলে দিলো এরপর ইলহামের কাছে চলে আসলো তাকেও কবুল বলতে বলা হলো সেও কবুল বলে দিলো অতপর তাদের দুজনরই বিয়ে হয়ে গেলো নানা বিপদ পা/ড় করে আজ তারা এক হয়েই গেলো।হয়তো তাদের এক হওয়া বিধানে লেখা ছিলো তাই তো তাদের আলাদা করা যায়নি। বিয়ের পর হেমন্তিকে ইলহামের পাশে বসিয়ে দেওয়া হলো ইলহাম হেমন্তিকে দেখে চোখ সরাতে পারলো না এতো সুন্দর লাগছে হেমন্তিকে যা ইলহাম ভাষায় প্রকাশ করতে পারলোনা।বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠলো হেমন্তি সবার থেকে বিদায় নিলো আবির ইলহামের হাত ধরে বললো,

~আমার বোনটাকে দেখে রেখো।

ইলহাম মাথা দুলালো হেমন্তিকে নিয়ে ইলহাম রওনা হলো তার বাসার উদ্দেশ্যে একটা সিএনজিতে হেমন্তি,খালা আর মাহমুদা বেগম একসাথে চলে গেলো ইলহাম রিকশায় উঠে বসলো।বাসায় পৌছে মাহমুদা বেগম ইলহামের রুমে হেমন্তিকে বসিয়ে দিলো।হেমন্তি বললো,

~মা,আপনার শরীরটা ভালো লাগছেনা আমার কছে।

মাহমুদা বেগম বললেন,

~তোমার মুখ থেকে মা ডাল শুনে আমার শরীর একদম ঠিক হয়ে গেছে।

হেমন্তি মৃদু হাসলো মাহমুদা বেগম নিজ রুমে চলে গেলো।ইলহাম এসে সোজা রুমে চলে গেলো রুমে ডুকতেই সে দেখলো হেমন্তি বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে।হেমন্তি ইলহামকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,

~আপনি এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন?

ইলহাম নিজ ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে হেমন্তির কথা শুনে ইলহাম বললো,

~তুমি চেন্জ্ঞ করবে না?

হেমন্তি বললো,

~দরকার নেই আমি এভাবেই ঠিক আছি।

ইলহাম বললো,

~আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।

বলেই সে ওয়াশরুমে চলে গেলো হেমন্তি ইলহামের অবস্থা বুঝতে পেরে হেসে উঠলো।ইলহাম ওয়াশরুমে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আয়নার সামনে দাড়িয়ে বললো,

~আমার ভয় লাগছে কেন হেমন্তি কে আজ অন্যরকম লাগছে।

এসব ভেবে সে ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে রুমে চলে আসলো হেমন্তি কোথাও না দেখতে পেয়ে সে এদিকসেদিক খুজতে লাগলো।হঠাৎ হেমন্তি এসে ইলহামের গলা জড়িয়ে ধরে তার পায়ের ওপর ভর দিয়ে বললো,

~আমাকে খুজচ্ছেন?

হেমন্তিকে এভাবে নিজের কাছে দেখে হকচকিয়ে গেলো হেমন্তি বললো,

~কী হলো কিছু বলছেন না কেন?

ইলহাম বললো,

~তুমি এতো কাছে কেন এসেছো?

হেমন্তি বললো,

~ওরে বাবা এই ৬মাস আমাকে অনেক ভাবে জ্বা/লি/য়ে/ছে/ন এখন আমার পালা।

ইলহাম এবার হেমন্তির কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,

~ঠিক আছে আপনার শাস্তি আমি মাথা পেতে নিবো।

হেমন্তি মুচকি হেসে বললো,

~ওয়াদা করতে হবে কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না।

ইলহাম বললো,

~ওয়াদা করলাম কখনো যাবো না।

হেমন্তি ইলহামের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিলো তার কাছে এখন এটাই নিরাপদের জায়গা।ইলহাম হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরলো তার কাছে এখন সকল সুখ আছে।

২বছর পর

হেমন্তি উঁচু পেট নিয়ে সোফায় বসে আচার খাচ্ছে ইলহাম তার দিকে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।হেমন্তি ৯মাসের প্রেগন্যান্ট যেকোনো সময় তার ছোট্ট রাজকুমার বা রাজকুমারী চলে আসবে।ইলহাম এই দু বছরে অনেক কিছু করেছে নিজের একটা ছোট্ট বাড়ি তৈরি করেছে মা আর বউকে নিয়ে সে অনেক সুখে আছে এখন তো নতুন মেহমানও আসছে।ইশরাক সাহেব এখন কারাগারে আছেন নিজ শাস্তি ভোগ করছেন। আবির বিয়ে করেছে ৬মাস তারাও অনেক সুখে আছে হাসান সাহেব মেয়ে আর ছেলের সাথে সুখেই আছেন।ইলহাম হেমন্তিকে বললো,

~আর এসব খেয়ো না এখন ফলটা খাওনা?

হেমন্তি ভ্রুকুচকে বললো,

~খাবো না ফল আচার খেতে ভালো লাগছে।

হেমন্তির কথা শুনে ইলহাম কিছুই বললো না জানে কিছুই বললে কাজ হবে না ইলহাম উঠে রুমে যেতে নিবে তখনই হেমন্তি “আহ”
বলে উঠলো।ইলহাম পিছন ফিরে হেমন্তির কাছে গিয়ে বললো,

~কী হয়েছে হেমন্তি?

হেমন্তি ব্যাথায় লাল হয়ে বললো,

~আমার অনেক ব্যাথা করছে সকাল থেকেই একটু একটু ব্যাথা করছিলো।

ইলহাম বললো,

~আগে বলো নি কেন?

হেমন্তিকে কোলে তুলে নিয়ে ইলহাম মাহমুদা বেগমকে ডাকলো মাহমুদা বেগম আসতেই ইলহাম তাকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দিলো।হাসপাতালে পৌছে হেমন্তিকে ডাক্তাররা নিয়ে গেলো ইলহাম টেনশনে চেয়ারে বসে পরলো মাহমুদা বেগম সবাইকে ফোন করে আসতে বললেন।সবাই একটু পর এসে হাজির ইলহামের পাশে আবির বসে তাকে শান্তনা দিচ্ছি মাহমুদা বেগমকে আবিরের বউ সামলাচ্ছে।১ঘন্টা পর বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসতেই সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো ডাক্তার বের হতেই ইলহাম এসে বললো,

~ডাক্তার আমার ওয়াইফ?

ডাক্তার বললো,

~আপনার মেয়ে হয়েছে আর আপনার ওয়াইফও ভালো আছে।

নার্স এসে ইলহামের কোলে বাবুকে দিয়ে গেলো সবাই অনেক খুশি ইলহাম বাবুকে নিয়ে হেমন্তির কাছে গেলো। হেমন্তি বিছানায় শুয়ে আছে হেমন্তির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।হেমন্তি আলতো হেসে বললো,

~রাজকুমারী চলে এসেছে।

হেমন্তির কথায় ইলহাম আলতো হাসলো আর বললো,

~আমাদের ভালোবাসার একটা সুন্দর ফুল আমাদের রাজকুমারী।

হেমন্তি ইলহামের কাঁধে মাথা রেখে মেয়েকে দেখতে লাগলো ইলহাম বললো,

~হেমন্তি,অনেক ভালোবাসি।

হেমন্তিও হেসে বললো,

~আমিও অনেক ভালোবাসি❤️❤️

সমাপ্ত

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here