চুক্তিহীন বাঁধনে আবদ্ধ পর্ব -০৪

#চুক্তিহীন_বাঁধনে_আবদ্ধ(০৪)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টিসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

শিমুর বাবা মা দুজনেই নিয়ে যেতে আসে শিমুকে। শিমুর মা মজিদা ভানু প্রথমে এসেই রেশমা কে আচ্ছা মত গালমন্দ করেছেন। তখন রেশমা বলে,
–” খালাম্মা আপনার মেয়ে তার স্বামীকে একটা সন্তান দিতে অক্ষম আর তাই এই পরিবারের কথা চিন্তা করে আমি বিয়েটা করেছি। এখন যদি আপনারা শুধু আপনাদের মেয়ের কথা চিন্তা করেন তাইলে আমার কিছু বলার নাই।

মজিদা ভানু চাপা রা’গের গনগনে গলায় বললেন,
–” রাস্তা থেকে উঠিয়ে এনে আমার মেয়ে তোকে জায়গা দিছিল। আর তোর এহন চ্যাটাং চ্যাটাং কথা হ‌ইছে না? মনে রাখবি অন্যের সুখ কেড়ে নিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না। আমি তোকে অভি’শাপ দিচ্ছি তুই অচিরেই বি’নষ্ট হবি!

নাহার বেগম আর সহ্য করতে পারলেন না তেড়ে আসবেন তখনই শিমু তার মাকে টেনে ঘরে নিয়ে যায়। মজিদা ভানু রেগে হাত ঝাড়া দিয়ে বললেন,
–” শিমু তুই আমাকে টেনে আনলি ক্যান? আজকে ঐ মহিলার মুখ বাঁকিয়ে দিতাম আমি। শুধুমাত্র তোর জন্য এতগুলো দিন চুপ করে ছিলাম আমি। তোর ভাইয়েরা তো বিদেশ থেকে মোবাইল ক‌ইরা বলতাছে জামাইরে পুলিশে দিতে! আমি আর তোর বাবা বলেছি, আমরা আগে গিয়ে দেখি ঘটনা সত্যি কিনা তাই পুলিশের কাছে যাই নাই। এহন দেখছি না যাইয়া উপায় নাই। সবগুলারে পুলিশের হাতে দিয়া জেলের ভাত খাওয়ামু। তা না হলে আমার নাম মজিদা ভানু না এ আমি ক‌ইয়া রাখলাম তোরে।

এর মাঝে শিমুর বাবা মিজান উদ্দিন বললেন,
–” শিমু মা তুই আমাদের সাথে এক্ষুনি চলে যাবি। তোকে আর এদের মাঝে এখানে থাকতে হবে না। তোকে সারাজীবন পালনের জন্য আমার যথেষ্ট আর্থিক অবস্থা আছে। তোকে এখানে পড়ে থেকে লোকের গালমন্দ শুনতে হবে না।

শিমুর চোখ পানিতে ঝাপসা হয়ে এলো। ভেজা চোখে বলল,
–” বাবা উপরে একজন আছেন। দেখ তিনি উত্তম ফয়সালা করবেন। বিয়ে জীবনে একবারই হয়। তাই এ বাড়ি থেকে বের হলে আমার লা’শ বের হবে। এ দুনিয়ায় যদি কষ্ট সহ্য ও করি তবে পরকালে যেন জান্নাত নসিব হয়। এর বেশি কিছু চাই না আমি। আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা আমার জন্য যেমন পরিকল্পনা করে রেখেছেন তেমন ই আমার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে ইনশা আল্লাহ।
–” তাহলে কি এখানে পড়ে থেকে এসব অত্যাচার সহ্য করবি?

শিমু বিদ্রুপ হেসে বলল,
–” তোমার বাড়িতেও দুজন পরের মেয়ে আছে বাবা। তারা আমাকে একদিন দুইদিন সর্বোচ্চ এক বছর সহ্য করবে। তারপর তারাও পছন্দ করবে না। ভাইয়েরা প্রবাশে থাকে তারা তো আর থাকবে না সবসময়। তখন সেখানেও ঠাঁই হবে না আমার। এর চেয়ে এখানে থাকাই ভালো। হয়তো আল্লাহ তা’আলা আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন। পরীক্ষা শেষ হলে দেখবে সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে। তোমারা শুধু আমার জন্য দুই হাত তুলে দু’আ করবে। বাবা মায়ের দুআ কখনো বিফলে যায় না।

মেয়ের কথা শুনে মিজান উদ্দিন সাহেব কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলেন না। তার মেয়েটা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে তাই ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখে। সাথে খুব আল্লাহ বিরু মেয়ে। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার উপর তার অগাধ বিশ্বাস মা শা আল্লাহ। তাই স্ত্রী কে নিয়ে নিজের বাড়িতে র‌ওনা হলেন।
________

কাউসার দুপুর বেলা কাজ থেকে ফিরে গোসল করে যখন খেতে বসে তখন শিমু খাবার বেড়ে দিতে গেলে রেশমা গিয়ে বলল,
–” আপা তুমি যাও! আমি উনাকে খাবার বেড়ে দিচ্ছি।

শিমুর হাত থেকে স্ট্রিলের চামচ টা পড়ে গিয়ে ঝনঝন শব্দ তুলে। শিমু ধীর পায়ে খাবার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে বালিশ চেপে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তার কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না। ধীরে ধীরে নিজের আপন মানুষটি এভাবে পর হয়ে যেতে দেখলে কার না বুক ফাটবে? শিমুর ও হয়েছে তাই। নারীরা সব কিছু সহ্য করতে পারলেও নিজের স্বামীর ভাগ অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারে না।

রাতের বেলা,
কাউসার শিমুর ঘরে এসে শুয়ে থাকে। শিমু বেশ কিছুক্ষণ ধরে বলে তার ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু কাউসার যায় না। বলে, আমার কিছু ভালো লাগছে না মাথাটা কেমন যেন করছে গো। একটু দুআ পড়ে ফুঁ দিয়ে দাও না গো?

শিমুর তখন শ্বাশুড়ি আম্মার যাদু টোনার কথা মনে পড়ে যায়। দুষ্টু লোকেরা যেমন যাদু টোনা করে তেমনি আল্লাহ তা’আলা কোরআন এ এর থেকে পরিত্রাণের উপায় ও বলে দিয়েছেন। যারা যাদু আক্রান্ত হয়েছে তাঁরা তো বটেই, তাঁদের সাথে সবারই যাদু এবং জ্বিন-শয়তানের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখিয়ে দেয়া আ’মলগুলো যত্ন সহকারে করা উচিত। এগুলোকে মাসনুন আমল অর্থাৎ সুন্নাহ সম্মত আ’মল বলে। এসবের অসাধারণ সব উপকারিতার পাশাপাশি বড় যে লাভ রয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল বাড়ে।

সব সুন্নাতই গুরুত্বপূর্ণ, আর সারাদিনের বিশেষত সকাল-সন্ধ্যার ফযিলতপূর্ণ অনেক দুয়া ও যিকর হাদিসে আছে সেসব আমল গুলো করলে যাদু করা হয়ে থাকলে তা বি’নষ্ট হয়ে যায় ইনশা আল্লাহ।

শিমু দুআ পড়ে কাউসার কে ফুঁ দিতে উদ্যত হলে, এমন সময় রেশমা এসে দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
–” কাউসার তুমি কি এখানে? আমি তোমাকে কোথায় না কোথায় খুঁজে বেড়াচ্ছি! তাড়াতাড়ি আমার ঘরে আসো তো জরুরি কাজ আছে!

রেশমার কথা শুনে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে গেল কাউসার এর। এদিকে মুখ কালো করে তাকিয়ে আছে শিমু। তাই কাউসার কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিতে দরজা খুলে দিল। তখন রেশমা কাউসার কে জরিয়ে ধরে বলল,
–” তোমাকে কি বলেছিলাম মনে নেই?
কাউসার মনে করার চেষ্টা করছে রেশমা তাকে ঠিক কি কথা বলেছিল? কিন্তু কিছুই মনে করতে পারছে না। ইদানিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা গুলো তার মনে থাকে না। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে রেশমা বলল,
–” আচ্ছা থাক চলো আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি তোমাকে।
এই বলে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল তার ঘরে! শিমু শুধু টলমল চোখে চেয়ে রইল সেই দিকে। কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে দরজা বন্ধ করে ঘরের লাইট অফ করে খোলা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। মনে মনে ভাবছে যাই কিছু হোক ঐ উপর‌ওয়ালা ঠিক দেখছেন। এখন শুধু সবুর করে নেওয়ার পালা।

এরপরের দিন সকাল বেলা রেশমা সকাল সকাল গোসলখানা থেকে গোসল করে বের হয়ে আসলে শিমুর সামনে পড়লে মাথা নুইয়ে ওঠোনে চলে যায় রশিতে কাপড় ছড়ানোর জন্য। যা দেখে শিমুর আর বুঝতে বাকি থাকে না ঠিক কি হয়েছে! ঘরের দৌরে মাটিতে বসে পড়ল শিমু। তার আর কোনো সম্বল র‌ইল না এই ভেবে পাথরে হয়ে গেল। আর যেন এসবে চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে না। যেন চোখ গুলো ও শয়ে গেছে।

রেশমা যখন স্কুলে ক্লাস নিচ্ছিল তখন তার মা মিনোরা এসে ভড়া ছাত্র ছাত্রীদের সামনে গালে চড় মেরে বললেন,
–” তোর মতো স্বার্থপর কে জন্মের সময় কেন যে মে’রে ফেললাম না এখন আমার আফসোস হচ্ছে! তুই কেমনে পারলি আমার ফুলের মতো মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে? তোকে আল্লাহ তা’আলা মাফ করবো না দেখে নিস! তুই পা’পি তোর এই পা’প ক্ষমার অযোগ্য। আজ থেকে আমার ইচ্ছা আমি তোর ম’রা মুখ দেখুম!

এই বলে বেরিয়ে চলে যান তিনি। ক্লাসের সব বাচ্চারা হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকে এমন ঘটনায়।

এর মাস খানেক পর নাহার বেগম বাড়ি বাড়ি মিষ্টি বিতরণ করে বেরান। কারণ তিনি দাদী হতে চলেছেন!….

#চলবে…ইনশা আল্লাহ।

(আসসালামু আলাইকুম।
আমি আমার সব গল্পতেই শিক্ষনীয় বিষয় রাখার চেষ্টা করি। যাদের ভালো লাগবে না পড়বেন না প্লিজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here