#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৬
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
” কি হলো কথা বলছেন না কেন? এভাবে হুট করে ঘরে ঢুকে চুপ করে আছেন যে? ”
উফফ মুশকিলে পড়ে গেলাম তো,এখন কথা বললে তিশা বুঝতে পেরে যাবে আমি এসেছি।তবে এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য একটা কাগজ সাথে এনেছি।কাগজে লেখা ” প্লিজ একবার ছাদে চলো,অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে,এখানে বলা যাবে না,প্লিজ এখানে কোনো প্রশ্ন করিও না “।মিষ্টি আবারো বললো
” আরে কি ব্যাপার বলবেন তো? এই আপনি চোর টোর নাকি? ”
এই মেয়ে বলে কি? এবার চোর চোর বলে চেঁচামিচি শুরু করবে নাকি?তাহলে তো আমি একদম শেষ।আর দেরী না করে মিষ্টির দিকে কাগজটা এগিয়ে দিলাম।মিষ্টি কাগজটা হাতে ভ্রু কুঁচকে তাকালো আমার দিকে।আমি অন্যদিকে তাকালাম।মিষ্টি একবার তিশার দিকে তাকিয়ে আমার হাত ধরে টেনে ছাঁদে নিয়ে গেলো।নিয়ে গিয়ে একটু সন্দেহ ভাব নিয়ে বললো
” কে আপনি ? আমি যাকে ভাবছি আপনি সেই নন তো? ”
আমি হাসলাম।আমার হাসিতে মিষ্টি খুব ভড়কে গেলো।কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো
” বি..বিষন্ন,আপনি বিষন্ন তাই না? ”
আমি মিষ্টির দিকে এক পা এক পা করে এগুচ্ছি, মিষ্টি ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে।এক পর্যায়ে সিঁড়ির কাছে দেয়ালটায় ধাক্কা খেয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমি মুখ থেকে বোরখাটা খুললাম।মিষ্টির চোখ দেখে মনে হচ্ছে ভূল করে চোখের সামনে ভূত দেখে ফেলেছে,আর এই ভূত দেখার বিষয়টা শুধু দেখবেই না ভয়ে চেঁচিয়ে উঠবে।যেমন ভাবলাম তেমনিই হলো,মিষ্টি একটু চেঁচিয়ে বললো
” বি..বিষন্ন তুই,তুই এতোরাতে আমার হোস্টেলে? ”
আমি ওর মুখে হাত চেপে ধরলাম যেন চেঁচাতে না পারে।ভয় পেলে মেয়েদের মাথা ঠিক থাকে না।অতি চালাক মেয়েও বোকার মতো কাজ করে ফেলে।মিষ্টিও তাই করছে,বোকার মতো শব্দ করে কথা বলছে।মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বললাম
” আস্তে কথা বলো, কেউ শুনে যদি ছাঁদে চলে আসে তাহলে আমাদের দেখে লজ্জা পেয়ে যাবে ”
মিষ্টি এক ঝটকায় আমার হাত সরিয়ে দিলো।চাপা স্বরে বললো ” লজ্জা পাবে মানে? ”
” লজ্জা পাবে না? এতো রাতে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ছাঁদে রোমান্স করছে,যে কেউই তো দেখলে লজ্জা পাবে ”
মিষ্টি একটু ইতস্তত হয়ে বললো ” কিসের রোমান্স,কে রোমান্স করছে ”
” আমরা ”
মিষ্টি এবার আমার দিকে প্রচন্ড রাগি দৃষ্টিতে তাকালো।মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবে আমায়,রেগে রেগে বললো
” তুই এতো রাতে এখানে আসার সাহস পাস কিভাবে? তোর লজ্জা লাগছে না মেয়ে সেজে গার্লস হোস্টেলে আসতে? ”
” একটু লজ্জা লাগছিলো,আগে তো কখনো বোরখা পড়িনি,গেইটে ঢোকার সময় দারোয়ান যেভাবে দেখছিলো যে লজ্জায় পড়ে গেছিলাম ”
রাগে মাত মুঠো করে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললো ” তুই আর এক মুহুর্ত এখানে থাকবি না,কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে ”
” চলে তো যাবো,আগে আমার কিছু কথার উত্তর দিতে হবে তারপর ”
মিষ্টি একটু ইতস্তত হয়ে বললো ” কি উত্তর ”
” তুমি নতুন টিউটর কেনো ঠিক করেছো,?তুমি কি মনে করো এতো সহজে তুমি আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে? ”
” দেখ বিষন্ন তুই এখনো অনেক ছোট,প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর,আমাদের মধ্যে কখনো এটা সম্ভব না,তুই কেনো বুঝিতেছিস না ”
” আমি এসব শুনতে চাইনি,তুমি কি ঠিক করেছো? আমাদের বাড়িতে আর আসবে না? আমার সামনাসামনি কখনো হবে না তাই তো? ”
” হ্যা তাই ”
” তুমি খুব ভালো করে জানো মিষ্টি, আমি যা চাই সেটা পাওয়ার জন্য কতদূর যেতে পারি ”
” আচ্ছা এখন তুই প্লিজ চলে যা,আমি কাল তোর সাথে কথা বলবো, প্লিজ,”
” আরো কথা আছে,”
মিষ্টি বিরক্তি নিয়ে বললো ” কি কথা? ”
” জুনায়েদ কে? ”
নামটা শোনার সাথে সাথে মনে হলো মিষ্টি খুবই অবাক হলো।এই সময়ে আমার মুখে এই নামটা হয়তো ও কখনো আশা করেনি। আমার দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বললো
” কে…কেউ না ”
” মিথ্যা বলবে না,সত্যিটা বলো,তোমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছি ”
” বললামই তো কেউ না, তুই কেনো আমার পার্সোনাল লাইফে এন্টাফেয়ার করছিস,”
মিষ্টির মুখে এমন কথা শুনে মাথা ঠিক রাখতে পারলাম না।ঠাস করে গালে একটা চড় বসিয়ে দিলাম।মিষ্টি তাল সামলাতে না পেরে ছাঁদের ফ্লোরে পড়ে গেলো।গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ওর সামনে হাটুগেড়ে বসে বললাম
” পার্সোনাল লাইফে এন্টাফেয়ার করবো না কেন? আমি কি তোমায় ভালোবাসি না? যাকে ভালোবাসি তার লাইফে এন্টাফেয়ার করা কি দোষের কিছু? ”
” বিষন্ন, তুই আমার গায়ে হাত তুললি?”
মিষ্টির মায়াবী স্বরে আমার সব রাগ নিমিষেই মোমবাতির আগুনের মতো নিভে গেলো।এই মেয়েটা মাঝে মাঝে এতো মায়ায় জড়ানো কথা বলে যে মনে হয় শুধু এই কথা শুনেই সারাজীবন পার করে দিতে পারবো।
মিষ্টি কান্না করছে,ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।পাশের বিল্ডিংয়ের আলোতে ছাদ অনেকটাই আলোকিত।মিষ্টির ফর্সা গালটা লাল হয়ে আছে।এর মধ্যে অনেকবার ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু ও বারবার ছাদের এদিক থেকে সেদিক যাচ্ছে।ওর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম
” আমি তোমায় মারতে চাইনি,কিন্তু তুমি এমন সব কথা বলো যে আমি রাগ সামলাতে পারিনা।মিষ্টি আমি চাই তুমি তোমার সব কথা আমার সাথে শেয়ার করো,কিন্তু তুমি এতো বড় একটা কথা আমার থেকে আড়াল করে গেলে।জুনায়েদ ছেলেটা কত খারাপ সেটা তুমি জানো? ”
মিষ্টি এখন কান্না করছে না তবে বারবার চোখের জল মুচছে।আমার কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না।আমি আবারো বললাম
” মিষ্টি চুপ করে থেকো না, কথা বলো,আমি বেশিক্ষণ এখানে থাকতে পারবো না। জুনায়েদ কি তোমার সাথে খারাপ কোনো ব্যাবহার করেছে? বা খুব ডিস্টার্ব করছে? ”
মিষ্টি কান্না মিশ্রিত স্বরে বললো ” না, ”
” মিষ্টি আমি জানি তুমি আমায় সত্যিটা বলছো না,তুমি ভাবছো আমায় বললে আমি গিয়ে মারপিট করবো।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি সেরকম কিছুই করবো না, ”
” উনি আমার দিকে খারাপ উদ্দেশ্যে তাকায়,এখনো তেমন ডিস্টার্ব করে না,তবে এখন করবে ”
” আচ্ছা ”
দেখলাম মিষ্টি এখনে কাঁদছে। মনে হচ্ছে চড়টা বেশ জোরেই লেগেছে,বেশি ব্যাথা পেয়েছে।নিজের কাছে নিজেকে কেমন কাপুরুষ মনে হচ্ছে, যে কি না রাগ সামলাতে না পেরে একটা মেয়ের গায়ে হাত তোলে,তাও আবার যাকে ভালোবাসে তার গায়েই।আলতো করে পেছন থেকে ওর হাত স্পর্শ করতেই হাত সরিয়ে নিলো।আমি ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলাম।কেঁদে কেঁদে এইটুকুতেই চোখ,ঠোঁট ফুলিয়ে ফেলেছে।চোখের জল মুছে দিয়ে অপরাধী ভঙ্গিতে বললাম
” খুব ব্যাথা পেয়েছো? ”
আমার কথায় যেন মিষ্টি আরো বেশি আঘাত পেলো।আবারো ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।আমি ওকে জরিয়ে ধরলাম।প্রথমত মিষ্টি অনেক ছটফট করলো, কিন্তু আমি ছাড়লাম না।এক পর্যায়ে মিষ্টিও চুপ করে রইলো।
__________________________
হোস্টেলের যিনি মালকিন তিনি একজন মহিলা।বেশ জাদরেল ধরনের মহিলা।তিনি রোজ দশটার দিক হোস্টেলে আসেন।সবার সুবিধা অসুবিধা দেখেন।অন্য দিনের মতে আজকেও তিনি হোস্টেলে এসেছেন।ওপর তলার ঘরগুলি একনজরে দেখে যান।তিনি দেখলেন মিষ্টির ঘরে আলো জ্বলছে,দরজা খোলা।তিনি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন মিষ্টির ঘরে।এসে দেখলেন তিশা কানে হেডফোন লাগিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।তিনি কয়েকবার ডাকলেন,কানে হেডফোন থাকায় তিশা শুনতে পেলো না।এবার তিনি কাছে এসে তিশাকে ডাকলেন।তিশা ফোনটা লুকিয়ে বললো
” আন্টি আপনি,কখন এলেন ”
” এখনি, তা কি এতো মনোযোগ দিয়ে দেখো?যে তখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না ”
” আসলে আন্টি, ইয়ে মানে,একটা মুভি দেখছিলাম ”
” মুভি এতো মনোযোগ দিয়ে দেখছিলে?মুভিটা খুব ইন্টারেস্টিং নাকি? ”
তিশা আমতা আমতা করে বললো ” হ্যা আন্টি অনেক ইন্টারেস্টিং,”
” তাহকে আমাকেও দেখাও,আমি অনেকদিন থেকে ইন্টারেস্টিং দেখার মতো মুভি খুজে পাচ্ছিলাম না ”
তিশা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।তিশা মনে মনে ভাবলো,”যে মুভি দেখছি,সেটা যদি আন্টিকে দেখাই তাহলে আমি শেষ,মায়ের কাছে ফোন করে সব বলে দিবে।হয়তো বলবে,ভাবি,আপনার মেয়ে বড় হয়ে গেছে,ওকে পড়াশোনা না করিয় বিয়ে দিয়ে দেন।এই মহিলার কাছে এমন কাজ খুবই স্বাভাবিক।একবার তিনি একটা মেয়ের ঘরে গেলেন।মেয়ের নাম সানজিদা,গিয়ে দেখলেন তার বালিশের কাছে একটা বই,বইয়ে একটা অ*র্ধ*ন*গ্ন মেয়ের ছবি,সেই মেয়েকে পেছন থেকে একটা যুবক জরিয়ে ধরে আছে।তিনি এটা দেখে সাথে সাথে তার মা’কে সবটা জানিয়ে দিলেন।একটা মেয়ের কাছে এটা যে কি পরিমান লজ্জার বিষয়।যদিও তারপর সানজিদা বলেছিলো বইটা ওইকম টাইপের বই না,আন্টি বানিয়ে বলেছে,কিন্তু আমরা জানি,আন্টি কোনোকিছু বানিয়ে বলেন না,সত্যিটাই বলেন।তিশার ভাবনা ভাঙ্গলো, আন্টি চেঁচিয়ে বললো
” কি হলো কি ভাবছো? আমার মেয়ে কাল দেশে ফিরবে,ওর সাথে এই মুভিটা দেখবো,দেখাও দেখি কেমন ”
” আন্টি এই মুভি তো আপনার ভালো লাগবে না,এখানে প্রেমের বিষয় আছে,যদি মেয়ের সাথে বসে রোমান্টিক মুভি দেখতে চান,তাহলে দিতে পারি ”
” তাহলে থাক,প্রেম বিষয়কে আমি অত্যাধিক ঘৃণা করি”
তিশা হাফ ছেড়ে বাচলো। আন্টি আশেপাশে তাকিয়ে বললো
” মিষ্টি কই গেছে?রুমে নাই কেনো? ”
” আন্টি ছাঁদে গেছে মনে হয়,আমি ডেকে নিয়ে আসছি ”
” যুবতী মেয়ে এতো রাতে ছাঁদে কি করে? ছাঁদের চাবি তোমাদের কাছে রেখেছি জন্য কি রাতবিরাতে ছাঁদে উঠে যাবে? ছাঁদে কেনো গেছে? ”
” জানিনা আন্টি,আপনি দারান আমি ডেকে আনছি,এক মিনিট ”
” তোমার যেতে হবে না,আমিই যাচ্ছি, মেয়েগুলা বড্ড জ্বালায়,রাতে ছাঁদে গেলে পাশের ফ্লাটের ছেলেরা উঁকি দেয়,তারপর কোনো ঘটনা ঘটে গেলে দোষ হবে আমার ”
” জি আন্টি”
” তুমি চুপ করে থাকো,তোমার বয়স আমিও পার করে এসেছি,কি মুভি দেখছিলে সেটা বুঝিনা ভেবেছো? একেকটা বদের হা*ড্ডি হয়েছে ”
উনি ছাঁদের দিকে রওনা হলেন।তিশা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো।ফিসফিস করে বললো,এই বুইড়া বেডীর জ্বালায় জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেছে।বেডীডার ওপর ঠাডা পড়লে ভাল্লাগতো।
ছাঁদের কাছে যেতেই আন্টি শুনতে পেলো কেউ কথা বলছে।আরেকটু কাছে এসে ছাঁদে যাওয়ার দরজাটায় কান পাতলো,গুনগুন করে কথা বলার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।তিনি এক ধাক্কায় দরজা খুললেন।সামনে দেখলো মিষ্টি আর……
চলবে?
যারা পড়ছেন তাদের কাছে একটা চাওয়া, প্লিজ রেসপন্স করবেন।🖤