তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব -২৫+২৬

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৫
#Jhorna_Islam
ড্রয়িংরুমের সব জিনিস পত্র একের পর এক ছুঁড়ে মারছে মেঝেতে। ভেঙে বি’কট শব্দের সৃষ্টি হচ্ছে। একেকটা শব্দে কেঁপে উঠছে উপস্থিত থাকা সকলে।কেউ এগিয়ে গিয়ে থামাতে ও পারছে না।

কাঁচে লেগে হা’ত কেটে গেছে। সেইটা দিয়ে গলগলিয়ে র/ক্ত ঝড়ছে।দায়ানের সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই। এই ব্যাথা তাকে কাবু করতে পারছে না।তার মনের ভিতর যে দা’বানলের সৃষ্টি হয়েছে সেটা এই তুচ্ছ কেটে যাওয়া হাতের থেকে কয়েক গুণ বেশি যন্ত্রনা দায়ক।।।

এতো কিছু ভেঙে ও কোনো মতে নিজেকে শান্ত করতে পারছে না সে।রা’গে দুঃখে মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তোমরা কেনো বলোনি তিশা বেঁচে আছে?
কেনো বলোনি আমায়?
জ’লজ্যা’ন্ত একটা মানুষকে তোমরা আমার কাছে মৃ’ত বানিয়ে দিলে বাহ্ চমৎকার। এই না হলে আমার পরিবার?

নিজেদের মেয়েকে নিজেরা জীবিত অবস্থায়ই মৃ’ত বানিয়ে দিলো। তোমাদের কে তো এওয়ার্ড দেওয়া দরকার। কি অভিনয় টাই না করলা।

আমি সত্যি ভাবতে ও পারিনি আমার পরিবারের লোকজন এতো বুদ্ধিমান। এতো সুন্দর অভিনয় জানো তোমরা।অভিনেতা অভিনেত্রীরা ও তোমাদের কাছে হা’র মানতে বাধ্য।

কথাটা বলেই সজোড়ে কাঁচের টেবিলের উপর থা’বা মারে।এতো জোড়েই ছিলো যে ফাটল ধরে গেছে টেবিলে। হাতে বারি খাওয়ায় এবার জন্য র/ক্তের স্রুত ধারা বয়ে চলেছে।

সোহা উপর থেকে এই দৃশ্য দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে। একেই র/ক্ত সহ্য করতে পারে না। তার উপর নিজের প্রিয় মানুষের শরীর থেকেই তা ঝড়ছে।

দায়ানের এসব কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। ওর মা আর কাকি।

দায়ানের করা এমন পা/গলামি সহ্য হচ্ছে না তার মায়ের ব’দ্ধ উ”ন্মা’দ হয়ে গেছে ছেলেটা। কি বলছে তিশা নাকি বেঁচে আছে। এও কি সম্ভব?

দায়ানের মা দায়ানের হাতের দিকে তাকিয়ে দায়ানের দিকে এগিয়ে যায়। তারপর আকস্মিক ঠাস করে চ’ড় বসায় দায়ানের গালে।উপস্থিত সকলেই বি’স্ফো’রিত দৃষ্টিতে তাকায়।

এই প্রথম তিনি দায়ানের গায়ে হাত তুললেন।এতো সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রুশ ও অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। যেই বড় মা কখনো দায়ানের গায়ে ফুলের টোকা ও দেয় নি আজ সেই কি না নিজে দায়ানের গায়ে হাত তুলেছে। বড় মা কারো গায়ে হাত তোলা বা মারা একদমই পছন্দ করে না।বরং রুশ কে আর তিশা কে যখন তাদের মা মারতে চাইতো বড় মা আটকাতো।মারতে দিতো না কখনো।

কি পেয়েছিস টা কি তুই? আমাদের তোর মানুষ মনে হয় না? এরকম তিলে তিলে না মেরে একবারে আমাদের মেরে তুই শান্তিতে থাক বাপ।আমাদের পক্ষে আর এসব সহ্য করা সম্ভব না।

এসব পা/গলামি আর দেখতে পারি না। না নিতে পারি।
আর কি যেনো বললি তুই তিশা বেঁচে আছে?

কি আশ্চর্য মরা মানুষ কিভাবে বেঁচে থাকে? আমায় বুঝা তুই। এখনো মাথা থেকে এসব সরে নি দেখছি।তিশার এক্সিডেন্ট হয়েছে সে আর নেই। আমাদের সকল কে ছেড়ে সে চলে গেছে। বুঝতে পারছিস তুই?

দায়ান অ’শ্রু’সিঃক্ত নয়নে মায়ের দিকে তাকায়।

দায়ানের মায়ের কথার সাথে তাল মিলিয়ে রুশের মা ও কাঁদতে কাঁদতে বলে তোর মা ঠিক বলছে দায়ান আমাদের তিশা তো নেই বাপ।চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। আমার মেয়েটা আর কখনো ফিরে আসবে না রে।তুই এমন পা/গলামি আর করিস না। আমাদের দিকে ও৷ একটু তাকা এবার।

এসব কিছুর মাঝে রুশ আর দায়ানের বাবা নিরব দর্শক। দায়ানের বাবা সোফায় বসে নিচের দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে।আর উনার পিছনেই রুশ দাড়িয়ে আছে।

দায়ান নিজের মা আর কাকির দিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে। নিজের বাবা আর রুশের দিকে তাকায়। তারপর আস্তে করে ছোটো ছোটো পা ফেলে নিজের বাবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।
“এখনো তুমি চুপ থাকবে বাবা?”

এবার তো সকলকে তাদের ভুল ধারণা থেকে মুক্তি দাও।

বড় বাবা কে কিছু বলিস না দায়ান।যা জিজ্ঞেস করার তুই আমাকে কর।আমি উত্তর দিচ্ছি।

দায়ান চোখ তুলে রুশের দিকে তাকায়। রুশ এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

বাহ্ ভাই বাহ্। এই না হলে তুই ভাই? আবার বন্ধু!

এখন নিচের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন? উপরের দিকে তাকা।আমার চোখে চোখ রেখে সব বল।একটা অক্ষর ও যেনো বাদ না যায়।এ টু জেট বলবি।যদি কিছু বাদ যায় তাহলে ভুলে যাবো তুই আমার ভাই। তোর সাথে আমার র/ক্তের সম্পর্ক আছে আমার।

রুশ একবার চোখ তুলে সকলের দিকে তাকায়। সকলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। রুশ এবার বলতে শুরু হয়,,,,,,

হ্যা তুই ঠিকই বলেছিস তিশা মরে নি।

এটা শুনে সকলে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে যায়।রুশের মা রুশের কাছে দৌড়ে এসে বলে,,বাবা তুই কি বলছিস? আমার তিশা বেঁচে আছে বাপ সত্যি বলছিস তুই?

আহ্ মা বলতে দাও আমায়।নোহা মা কে নিয়ে সোফায় বসাও।নোহা এতো সময় হা করে ওদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। রুশের কথায় উনাকে নিয়ে সোফায় বসায়।রুশ আবার বলতে শুরু করে,,,,,

তিশা মরে নি সে জীবিত এবং সুস্থ আছে। আর বেশ সুখেই আছে। সব দুঃখ তো সে আমাদের জন্য রেখে গেছে।

দায়ানের বিদেশ যাওয়ার পর সব ঠিকঠাকই ছিলো। তিশা দায়ান ওরা ও ভালোই ছিলো।দূর থেকে ফোনে কথা বলতো। সব ঠিক।

কিন্তু সব বদলাতে তো শুরু করে কয়েক মাস যাওয়ার পর।দায়ানের সাথে কথা বলতো না।কল রিসিভ করতো না।মাঝে মাঝে যা ও করতো দায়ানের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো।কথা শুনাতো।আর আমার বোকা ভাই প্রেমে এতোটাই অন্ধ ছিলো যে সে সব মেনে নিতো।ভাবতো দূরে আছে বলে রা’গ আর অভিমান করে এমন করছে।

তারপর আস্তে আস্তে যোগাযোগ বন্ধ করে ব্লক লিস্টে ফেলে দিলো দায়ান কে। তাও এই বুদ্ধিমান ছেলেটা কিছুই বুঝলোনা। আমার থেকে খোঁজ নিতো।তোমরা তো জানোই দায়ান আমার কাছে সব শেয়ার করতো।

যদিও এসব খারাপ ব্যবহারের কথা কিছুই জানায় নি আমায়।শুধু বলেছে তিশা নাকি অভিমান করে ওকে ব্লক লিস্টে ফেলে রেখেছে। আমার থেকেই খোঁজ নিতো।মাঝে মাঝে ভিডিও কলে একটু দেখতো তাও লুকিয়ে।

এই ছেলেটা বুঝতেই পারে নি। তিশা ওর থেকে কতো টা দূরে চলে গেছে। ধোকা দিয়ে অন্য কারো সাথে নিজেকে জড়িয়েছে।

রুশের এই কথাটা শুনে দায়ান চোখ বন্ধ করে ঢুক গিলে।

সকলে পুরো ঘটনা শুনার জন্য অধির আগ্রহ নিয়ে আছে।

হ্যা তোমরা ঠিকই শুনেছো।দায়ান দেশে নেই সেই সুযোগে তিশা অন্য কারো সাথে নিজেকে জড়িয়েছে।নতুন সম্পর্কে গেছে। তাও জানো কার সাথে?

দায়ানের লাইফের একমাত্র শ’ত্রু ওমির সাথে। যে কিনা পদে পদে দায়ান কে ভার্সিটি লাইফ থেকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে।নানান ভাবে ক্ষতি করতে চেয়েছে তার সাথে।

সারাদিন রাত কথা বলতো তিশা ওমির সাথে। অথচ তোমরা ভেবেছো দায়ানের সাথে। আমিও বিষয় টা তেমন গুরুত্ব দেই নি তখন। ভেবেছি হয়তো বন্ধু বান্ধবদের সাথে কথা বলে। নিজের মনে হাজার সন্দেহ থাকলেও নিজেকেই বুঝাতাম আমার বোন কখনো খারাপ কিছু করবে না।

আমার বন্ধুরা আমায় ফোন দিয়ে দিয়ে বলতো তিশা কে নাকি একটা ছেলের সাথে প্রায়ই দেখে হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়।।তাদের কথায় ও তেমব পাত্তা দিতামনা বলতাম ভুল দেখেছিস হয়তো।

কিন্তু একদিন অফিসের মিটিং এর জন্য একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে আমার সব চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। যখন নিজের চোখে সব দেখলাম।

একটা কর্ণার টেবিলে দুইজন পাশাপাশি হাত ধরে বসে হেসে হেসে কথা বলছে আর একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করে সব হজম করে চলে এসেছি। কোনো সিনক্রিয়েট করিনি।

তিশা বাড়িতে আসলে ওকে বুঝাই।দায়ান কে ঠকাস না বোন তোকে ও সত্যি ভালোবাসে।যা করার করেছিস সব এটা শেষ কর।ঐদিন তিশা সব চুপচাপ শুনে গেছে একটা টু শব্দ ও করেনি। ভেবেছিলাম এবার সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না আমায় আবারো ভুল প্রমানিত করে ওমির সাথে প্রেম ঠিকই চালিয়ে গেছে। আবারও আমি বুঝালাম।

কিন্তু সে কি বলল জানো?

দায়ান কে সে কখনো ভালোবাসে নি।মোহে পরেছিলো।এক বাড়িতে থাকতে থাকতে চোখের মায়া পরেছিলো জাস্ট ভালোবাসা না।আর সে শুধু দায়ানের পা/গলামিতে রাজি হয়েছিল। ভালোবাসা ওমির কাছ থেকে শিখেছে। ওমি কে সে ভালোবাসে।

মা আর বড় মা যখন বড় মার কোনো আত্নীয়ের বাড়িতে গিয়েছিল বেড়াতে। ঐদিন ওরা দুই জন ঐ বাড়িতে থেকে গিয়েছে। আর এই সুযোগে তিশা তার সব কাপড় লাগেজে ভরে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরে। আমি আর বড় বাবা তখন বাড়ির নিচে দাড়িয়ে কথা বলছিলাম তিশা সেটা জানে না। দুইজন ই তিশাকে ধরে ফেলি।বুঝাই সে বুঝে না।ওমিকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না। ওমির কাছে সে চলে যাবে। দরকার পরলে আমাদের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিবে তাও ওমির কাছে যাবে। ওর সাথে না পেরে বলেছিলাম সে যদি এখন চলে যায় তাহলে আমাদের কাছে সে মৃ’ত হয়ে যাবে। সব শেষ করে যেতে হবে। কারো সাথে কোনো দিন কোনো যোগাযোগ করতে পারবে না। পরিবারের সকলের কাছে আমরা তাকে মৃ’ত ঘোষণা করবো।তাই মেনে নেয়। চলে যায়। কারো কথা একটাবারের জন্য ও ভাবেনি।দায়ানের কথা তো বাদই দিলাম আমার আর মায়ের কথা ও ভাবে নি।

“দিন শেষে বেঈমান আর স্বার্থপর মানুষ গুলোই ভালো থাকে সুখে থাকে।”

বড় বাবা বলেছিলো সবাই কে সব বলে দিতে আমিই দেইনি।আমার ক’সম দিয়েছি।বলেছি আমি যা যা করবো সব চুপচাপ মেনে নিতে এতে সবারই লাভ। তারপর ঐদিন রাতেই একটা এক্সিডেন্ট হয়।ঐখানে একটা মেয়ের লা’শ চেনার উপায় ছিলো না। পরিবারের ও খুঁজ পাচ্ছিলো না। ঐটা কেই আমি তিশা সাজিয়ে নিয়ে আসি।আর বলি তিশা এক্সিডেন্টে মারা গেছে। বড় মা আর মাকে তিশার পাশে যেতে দেইনি তাদের তো মায়ের মন ঠিকই কোনো না কোনো ভাবে বুঝে যতো এটা তিশা না।

ঐ মেয়েটাকেই ভেবে নেয় সকলে তিশা হিসেবে।

তিশা ঐদিন যাওয়ার আগে যা কথা দিয়ে গিয়েছিলো সে রেখেছে।কারো সাথে যোগাযোগ বা সামনে আসার চেষ্টা করে নি। এখন কি ভাবে দায়ান দেখেছে আমি সত্যিই জানি না।

সবাই এখন আমায় দোষ দিতে পারো।কিন্তু আমি যা করেছি বেশ করেছি এতে আমার বিন্দু পরিমাণ আফসোস নাই। কারণ ঐ মেয়েটা এসবেরই যোগ্য। যে পরিবার ছোট থেকে বড় করেছে সেই পরিবারের কথা যখন ভাবলো না ওর কোনো দরকার নেই।

তারপর রুশ নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,, মা তোমার কি মনে হয় আমি ভুল কিছু করেছি? তুমি কি তিশা কে চাও?

না রুশ বাবা ঐ মেয়েটার নাম আর নিবিনা।আমার কোনো মেয়ে নেই।যে ছিলো সে মারা গেছে। তারপর নিজের চোখের পানি মুছে রুমে চলে যায় রুশের মা। পিছন পিছন নোহা ও যায় উনাকে সামলাতে হবে।যতোই শক্ত হোক নিজেরইতো মেয়ে।

সোহা ও আর দাঁড়ায় না।নিজের রুমে ঢুকে খাটের পাশে নিচে বসে খাটে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।

দায়ান বসা থেকে উঠে রুশের কাছে এগিয়ে যায়। গিয়ে রুশের গালে ঠাস করে চ’ড় বসায়। খুব বড় হয়ে গেছো না।নিজের ভাই আর পরিবারের কথা এতো ভাবতে শিখে গেছো?

রুশ ছলছল চোখে তাকিয়ে ঝাপটে ধরে দায়ানকে।দুই ভাই আলিঙ্গন করতে দেখে এতো কিছুর পরও তৃপ্তির হাসি হাসে।তারপর দায়ানের বাবা মা ও চলে যায় নিজেদের রুমে। সকলেরই নিজেদের একটু সময় দেওয়া দরকার।

দায়ান ও রুশ কে ছেড়ে উপরে উঠে নিজের রুমে না ঢুকে সোজা সোহার রুমে ঢুকে।

তারপর সোহাকে চোখ বন্ধ করে নিচে বসে থাকতে দেখেও কিছু বলে না। চুপচাপ গিয়ে সোহার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।

সোহা বুঝতে পারে এটা দায়ান। তাই কিছু না ভেবেই এক ঝটকায় দায়ানকে নিজের কোল থেকে সরিয়ে দেয়। আচমকা হওয়ায় দায়ান টাল সামলাতে পারেনি কিছু টা দূরে গিয়ে পরে। কাটা হাতে আবারও ব্যাথা পায়। কিন্তু এসবে পাত্তা না দিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা চালায়।

“ডো’ন্ট ডে’য়ার টু টা’চ মি!”

বলেই সোহা চিললিয়ে উঠে।
#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৬(বোনাস)
#Jhorna_Islam

“ডো’ন্ট ডেয়ার টু টাচ মি!”

কথাটা প্রবল আ’ক্রো’শের সাথে বলে উঠে সোহা দায়ানকে।

দায়ান এক দৃষ্টিতে সোহার দিকে তাকিয়ে রয়।

সোহা দায়ানের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।তারপর হাত দিয়ে মুখ ঢেকে শব্দ করে কেঁদে উঠে। হাউমাউ করে কাঁদছে সোহা।চোখের পানি তার হাত বেয়ে গড়িয়ে নিজের কোলে পরছে।

সোহার কান্না দেখে দায়ানের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে। মেয়েটার কান্না একদমই সহ্য হচ্ছে না তার। সব দোষ তো তারই তার পিচ্চি পাখিটা তার উপর নিশ্চই খুব অভিমান করেছে। তাইতো তাকে কাছে যেতে দিচ্ছে না।

দায়ান তবুও নিজেকে সামলে সোহার কাছে এগিয়ে আসে।
সোহা রা’গ করেছো আমার উপর?

আমি জানি রাগ করারই কথা। কিন্তু আমাকে একটু বলতে দিবে? শুধু একবার আমার কথা শুনো।এ’ক্স’প্লে’ইন করার সুযোগ দাও পা/গলি।

সোহা মুখের থেকে হাত সরিয়ে দায়ানের দিকে তাকায়। তারপর কাঠ কাঠ গলায় বলে,,,আমি কারো কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই না।

আমার কিছু শোনার নেই।

একবার প্লিজ!!

না মানে না আমি কিছু শুনতে চাই না। কাল এতো অনুরোধ কোথায় ছিলো? যখন আমি ঘন্টার পর ঘন্টা আপনার পথ চেয়ে হাসপাতালে অধির আগ্রহে পথ চেয়ে বসেছিলাম?

কোথায় ছিলো এতো দরদ? যখন রাতের বেলা আমাকে একা একা বাড়িতে আসতে হয়েছে। আমার কাছে কোনো টাকা ছিলো না। আর সাথে না ছিলো ফোন।

আপনার মনে না হয় জায়গা নাই পেলাম।কিন্তু মানুষের বাড়িতে কু’কুর বিড়াল থাকলেও মায়া হয়।

একটু মানবতার খাতিরেই না হয় ভাবতেন।মেয়েটা এই রাতের বেলা একা একা কি করবে? বাসায় যেতে পারবে কিনা। রাতে নিজে ফিরলেন না।একটা ফোন ও কি দেওয়া যেতো না? আমার ফোন না হয় আপনার গাড়িতে ছিলো। বাড়িতে কি আর কারো ফোন ছিলো না?

একটাবার খোঁজ নিয়ে দেখতেন মেয়েটা ঠিক মতো বাড়িতে পৌঁছাতে পেরেছে কি না?

হাহ্ কি করে নিবেন।আপনিতো আপনার প্রথম ভালোবাসার খোঁজে বেরিয়েছিলেন।আমার কথা তখন মাথায়ই ছিলো না আপনার। সোহা নামের কেউ যে আপনার লাইফে আছে সেটা আপনি ভুলেই গিয়েছিলেন।

ভুলারই কথা ভুলবেন ই তো।আমি আপনার কে? কেউ না।উটকো ঝামেলা আমি আপনার জীবনে। বিয়ে টা ও পরিবারের জোরাজোরি তে করেছেন বুঝতে পেরে গেছি।

এতোকিছু করে এখন যখন দেখলেন তিশা আপু অন্য কারো। তাই আমার কথা মনে পরেছে।এখন তাই আমার কাছে এসেছেন আপনি।

“আমি শুধু আপনার প্রয়োজন,, প্রিয়জন না।”

আমি থাকবোনা আপনার জীবনে।আর না থাকবো আপনার বাড়িতে। সব ছেড়ে চলে যাবো।সব কিছু থেকে আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিবো এমন কি এই বিয়ে নামক বন্ধন থেকেও।

তখন আর আপনাকে ডিসটার্ব করার জন্য কেউ থাকবে না।

দায়ান সোহার কথা গুলো এতো সময় মাথা নিচ করে শুনে গেছে। সব দোষ তো তারই। সে কেন মেয়েটা কে একা ফেলে তিশার পিছনে ছুটে গেলো। মাথায় কেনো আসলোনা মেয়েটার কাছে টাকা আছে কি না।

কতোটা কষ্ট নিয়ে কথা গুলো বলছে সোহা। কাল খুব কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।

সোহা যখন দায়ানকে বিয়ের বন্ধন থেকে মুক্তি দিবে বলেছে তখন তার টনক নড়ে। কি বলছে মেয়েটা এসব? দায়ান কে মুক্তি দিবে মানে?

দায়ান তারাতাড়ি সোহাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। তারপর দুই গালে হাত রেখে সারা মুখে চুমু খেতে থাকে পাগলের মতো।

সোহা চেয়েও দায়ান কে সরাতে পারছে না। একেইতো শরীরে জোর নেই তার উপর প্রচন্ড বুক ব্যাথায় নিশ্বাস ভা’রি হয়ে আসছে। কি কষ্টে যে নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে শুধু সোহাই জানে।একদম জানতে দিবে না লোকটাকে অসুস্থতার কথা।

দায়ান সোহাকে নিজে সোহাকে বু’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করে,,,,,

তুমি একদম আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববে না। আমি জানি আমি কাল খুব বড় অন্যায় করেছি।তার জন্য যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দাও ল’ক্ষি’টি আমি সব শাস্তি বিনা সংকোচে মাথা পেতে নিবো।যা বলবা তাই শুনবো।

আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা একদম বলবেনা। এটা আমি হতে দিবো না কখনো।আমাকে ছেড়ে যাওয়া ছাড়া সব শাস্তি মেনে নিবো। আমার সাথে থেকে আমাকে না হয় শাস্তি দিও তুমি!!

কালকে আমার পা/গলিটাকে ছেড়ে যেয়ে আমি খুব বড় অন্যায় করেছি। তোমার হাতটা ছাড়া আমার একদম উচিৎ হয় নি। কিন্তু হঠাৎ করে তিশাকে চোখের সামনে দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারিনি আমি। যাকে এতোদিন জেনে এসেছি মৃ’ত তাকে হুট করে চোখের সামনে দেখলে কি ঠিক থাকা যায়?

ঐ মুহূর্তে তিশাকে দেখে আমার মাথা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিলো। তাই ওকে ধরতে তোমার হাত ছেড়েই তিশার পিছনে ছুটে যাই। বাইরে গিয়ে আমি আরেকটা ঝটকা খাই।

যখন দেখলাম তিশা আর ওমি হেসে হেসে কথা বলছে আর গাড়িতে উঠছে।আমি তখন পিছন থেকে অনেক ডেকেছি আমার ডাক শুনেনি। গাড়িতে উঠে চলে যেতে থাকে।

তাই আমি গাড়ি নিয়ে ওদের পিছু নেই। প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট পিছনে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই কোথায় যেনো গাড়ি টা হাড়িয়ে যায়।অনেক খুঁজেও আর পেলাম না। রাগ লাগছিলো খুব ভিতরে ভিতরে যে কিছু একটা প্যা’চ ছিলো বুঝতে বাকি নেই। আমি অনেক বড় একটা ধোঁয়াশার মধ্য ছিলাম।সেইটাই খুঁজে বের করতে পারছিলাম না।

তখন হঠাৎ করেই তোমার কথা মাথায় আসে। এসব ভাবতে ভাবতে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে তোমাকে আমি হাসপাতালেই রেখে এসে পরেছি।

তারপর গাড়ি ঘুরিয়ে তারাতাড়ি হাসপাতালের দিকে রওনা দেই। তখনই মাথায় ফোনের কথা আসে।তোমায় ফোন লাগাই। কিন্তু তাকিয়ে দেখি তুমি তোমার ব্যাগ আর ফোন গাড়িতেই রেখে ছিলে।

তারপর আরো জোরে ড্রাইভ করতে গিয়ে একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যায়। একজন বৃদ্ধ মহিলা আমার গাড়ির সামনে এসে পরে। যদিও আমি ব্রেক করায় তেমন লাগে নি।তাও পরে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে।মাথা ও কেটে গেছে। হাটতে পারতেছিলো না।উনার হাসবেন্ড অবশ্য সাথে ছিলো।তাও দুজন বৃদ্ধ মানুষ কি করে একে অপরকে সামলাবে?

মহিলাটা কে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে পাশের একটা ফার্মেসিতে নিয়ে যাই।মাথায় ব্যানডেজ করে দেই।পা টা ও মচকে গেছে। কোথায় যাবে জিজ্ঞেস করতে জানায় শহরে নিজের ছেলের কাছে এসেছিল। ছেলের সাথে নাকি অনেক দিন যোগাযোগ হয় না। ছেলে বউ নিয়ে শহরে থাকে।কিন্তু ওনারা যাওয়ায় নাকি ছেলে আর ছেলের বউ অনেক কথা শুনিয়েছে।তাই বেরিয়ে এসেছে রাতের বেলা।

এতো রাতে গ্রামের দু’জন বৃদ্ধ মানুষ কি করে যাবে বলো? তার উপর আবার আমার জন্যই পা টা মচকে গেছে। তাই কোনো উপায় না পেয়ে আমাকেই ওনাদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা দিতে হয়।

তখন প্রায় অনেক রাত।তোমার জন্য ও খুব টেনশনে পরে গিয়েছিলাম।সব দিক দিয়ে নিজেকে আমার অসহায় মনে হচ্ছিল।

তারপর বাড়িতে নোহা কে ফোন দেই।ওর ফোন বেজে কেটে যায়। হয়তো সাইলেন্ট ছিলো। তারপর অনেক চিন্তা ভাবনা করে দারোয়ান কাকা কে কল দেই। জিজ্ঞেস করি তুমি এসেছো কি না। উনি বললেন বাড়িতে এসেছো।বিশ্বাস করবে না আমার বুক থেকে যেমন বড় একটা পাথর সরে গেছে এটা শুনে। তারপর দারোয়ান কাকা আমায় সবই বলেছে,,। শুনে চু’প ছিলাম।আমার মতো অসহায় তখন কেউ ছিলো না। আমি জানি আমার পা/গলিটা হয়তো রা’গ করে থাকবে।তাই সিধান্ত নেই বাড়িতে এসে তার সব রা’গ অভিমান ভেঙে দিবো।

তারপর উনাদের বাড়িতে দিয়ে কিছু টাকা দিয়ে রাতেই আবার রওনা দেই তখন রাত দুইটা কি তিনটা। খুব ক্লান্ত লাগছিলো।একটু ফ্রেশ হওয়ার জন্য একটা ব্রিজের সামনে গাড়িটা থামাই। অনেক সময় নিয়ে ঐখানেই দাড়িয়ে থাকি।এতো রাতে আর বাড়িতে ফিরতে ইচ্ছে হয় নি। সকালেই আসি।

আর নিচে যে ভাঙচুর করেছিলাম না? ঐটা তিশা কে ভালোবেসে না। আমার রা’গ লাগছিলো এটা কেনো আমার থেকে লোকানো হলো? এই মিথ্যাবাদী ঠ’ক মেয়েটা কে আমি এতোদিন ভালোবেসেছে গেলাম। কাল বিকেল পর্যন্ত কিনা মনের এক কোণে ঐ মেয়েটা কে আমি বসিয়ে রেখেছিলাম। একটা স্বার্থপর মেয়ের জন্য আমি এতো কষ্ট পেয়েছিলাম এটা ভেবে রা’গে এমন করেছি।ওর প্রতি যে৷ টুকু ও টান ছিলো তার এক ফোটাও নেই বিশ্বাস করো।

বলেই দায়ান সোহার মাথায় চুমু খায়। তারপর মুখটা তুলতে গিয়ে বুঝতে পারে সোহা হাত পা ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে। তারাতাড়ি সোহার মুখ তুলে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে।

সো- সোহা এইইই এইই,, কি হয়েছে তোমার?
সোহা কথা বলো চোখ বন্ধ করে আছো কেনো তুমি? শুনতে পারছোনা আমার কথা? বলেই সোহাকে ঝাকাতে থাকে।
এইই আমার কাল ভুল হয়ে গেছে।

তোমাকে আমি আর জীবনে ও জ্ঞান থাকতে একা ফেলে যাবো না।হাত ও ছাড়বোনা তোমার কখনো।
তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো সোহা?

উঠো বলছি।উঠো সোহা এই মেয়ে উঠ। বলতে বলতে বলতে দায়ান চোখের পানি ছেড়ে দেয়।

চিললিয়ে তার আম্মু কে ডাকতে থাকে।

আম্মু,,,,,,,, আম্মু ,,,,, এই আম্মু দেখোনা সোহা কথা বলছে না আমার সাথে। ওরে চোখ মেলতে বলো আমার সাথে কথা বলতে বলো।আমি আর এমন ভুল জীবনেও করবো না।

সোহা,,,,,,

#চলবে,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here