#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৫০
__________________________
আধারী নিস্তব্ধ রাত,কুয়াশার আবরণে নিয়ন বাতির সাদাটে আলো অস্পষ্ট করেছে চারিধার। ঘোলাটে চোখে সেই অস্পষ্ট শূণ্য রাস্তায় দৃষ্টি সূচনার,এক আকাশসম ভাবনা নিয়ে সে বন্দী কারো বাহু ডোরে।প্রণয়ের বাহুডোরে।মাঝে হিচকি উঠছে তার,গুনগুনিয়ে কান্নার ও আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে কান্না করছে সে।অপরদিকে তাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে রাখা প্রণয়ের কোনো মাথা ব্যথা নেই।সে নিজের মতো বসে আছে জড়িয়ে ধরে।ব্যালকনি তে থাকা হলুদ গাদা ফুলগুলো জ্ব লজ্ব ল করছে। যেন নিজের হলদেটে রং চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।নীরবতার অবসান ঘটলো।প্রণয় স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললো-
–‘মাথা ঠান্ডা হয়েছে এখন,মন ও।জানতাম না তোমায় জড়িয়ে ধরলে এত শান্তি পাওয়া যায়।জানলে এতক্ষণ অমন ফ্রা স্ট্রেটেড হয়ে থাকতে হত না।
সূচনা অভিমানী কণ্ঠে বললো-
–‘আপনি আপনার শান্তি পেয়ে গেছেন।কিন্তু একবারও আমার কথা ভাবলেন না।কিছু না বলে চলে গেলেন,জিজ্ঞেস করলাম কতবার একটা বার জবাব ও দিলেন না, চলে গেলেন একা রেখে।আর এখন আসছেন বলতে ‘আমি আপনার শান্তি।’ শুনতে কেমন যেন লাগছে!
প্রণয় এক হাত সূচনার পেটে রেখে আরেক হাত দিয়ে সূচনার বাহু চেপে ধরে আরেকটু ভালো করে মিশিয়ে নিল নিজের সাথে।সূচনার পিঠের কাছ থেকে চুলগুলো সরিয়ে থুতনি রাখলো কাঁধে।মৃদু কম্পিত হলো সূচনার কায়া।সূচনার কাধে ঠোট বুলাতে লাগলো, প্রণয় থেমে থেমে বললো –
–‘তুমি..আমার..তোমার..অভিমান হবে আমার ওপর, আমিই..ভাঙাব অভিমান।তুমি কান্না করবে,হাসবে, রা গবে সব আমাট জন্য। তোমার সবকিছু আমার।আমার যখন সময় হবে তখন অভিমান ভাঙাব,যখন তখন কাঁদাব, আবার হাসাবো।কিন্তু অন্য কারো জন্য যদি তুমি কান্না করো বা রা গ করে বসে থাকো তাহলে আই এম টেলিং ইউ আই উইল কিল হিম।এই কথাগুলো যেন আমার আর কোনোদিন রিপিট না করতে হয় তার খেয়াল রাখার দায়িত্ব তোমার।
সূচনা হতাশ স্বরে বললো-
–‘আপনি সত্যি অদ্ভুত, এমন করছেন কেন?
–‘কী করেছি?
–‘কিছু না।
–‘তুমি ভেবেছিলে আমি ভুল বুঝছি তোমাকে?
–‘হু।
–‘তুমি এত বোকা কেন বলতে পারো।
–‘জানিনা কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল শেষ হয়ে যাবে সব।
–‘বোকা মেয়ে।
–‘হু।
আবারও নীরবতায় কা টলো কয়েক পল। সূচনা হঠাৎ ডেকে উঠলো-
–‘প্রণয়?
প্রণয় সহসা জবাব দিল-
–‘বলো।
মৃদু হাসলো সূচনা,বললো-
–‘আপনাকে না বদ্ধ পাগল প্রেমিক দের মতো লাগছে একদম।
সূচনার কথায় প্রণয় ও হাসলো।মিহি স্বরে শোধালো-
–‘যাক প্রেমিক হতে পেরেছি আমি,আমার বউয়ের নাকি আবার খুব শখ ছিল প্রেম করলে বরের সাথে ই করবে।প্রেম করে যদি প্রেমিকই না হতে পারি তাহলে কীসের প্রেমিক!
সূচনা আবারও হাসলো,লজ্জা ও লাগলো যার দরুন দৃষ্টি নত হলো তার।তা দেখে প্রণয় দুষ্টু স্বরে বললো-
–‘প্রণয় যদি প্রেমিক হয় প্রণয়ী তাহলে তার বিবাহিতা প্রেমিকা।বাহ!বিবাহিতা প্রেমিকা!মানে তুমি একান্ত তোমার প্রেমিকের, মানে আমার।
সূচনা আবারও লাজ রাঙা হলে প্রণয় মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
–‘ লজ্জা পাচ্ছো লাজুকলতা?
সূচনা নিচু হতে নিচু গলায় বললো-
–‘একটু একটু।
প্রণয় আবারও দুষ্ট হেসে বললো-
–‘চলো আরেকটু লজ্জা দেই।
–‘কীভাবে?
–‘এভাবে..
সূচনার চিবুকে চুমু খেয়ে বললো প্রণয়।সূচনা কিঞ্চিৎ অবাক হয়েছে। কিন্তু কিছু টা গা ছাড়া ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
–‘এতটুকুই?
প্রণয় এক ভ্রু উপরে তুলে জিজ্ঞেস করলো-
–‘কেন আর কী দিব?তোমার জন্য তো এতটুকু ই যথেষ্ট।
–‘আর কী দিবেন মানে?আমি তো ভেবেছিলাম যে আপনি ঔসব..
–‘কী ভেবেছিলে?ঔসব মানে কোন সব?ওয়েট..ইউ মিন টু সে…আরে আগে বলবে না।চলো চলো..
–‘আ..আরে আমি তো মজা করছিলাম..এমনি বলেছিলাম।
–‘ না না..শোনো..তোমার পছন্দের লেখকের একটা উক্তি আছে ”রূপবতী নারীদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে নেই । প্রত্যাখ্যান করলে অ ভি শা প লাগে। রূপের অ ভি শা প ।রূপ তখন ধরা দেয় না । রূপের অভি শাপে পরা ভ য়াবহ ব্যাপার।”বুঝেছো।
সূচনা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো-
–‘আমি রূপবতী না আর না আমি অনুরোধ করেছি কোনো, শুধু মজা করেছিলাম একটু খানি। তাই চুপ করুন তো।
–‘আমি অভি শা প লাগাতে চাই না।তাই…
–‘ত,,তাই?
চোখ মার/লো প্রণয়,সূচনা বুঝে গেল যা বোঝার।নিজের পায়ে কুড়াল মা রা কেউ তার থেকেই শিখুক।
__________________________
সব চলছে নিজ গতিতে।এর মধ্যে কে টে গেছে প্রায় একদিন।আজ ২৯শে ডিসেম্বর,কাল ৩০ শে ডিসেম্ বরমানে প্রণয়ের জন্মদিন।সব কিছুর মধ্যে ও সূচনার মনে আছে।রাত সাড়ে দশটা বাজে এখন।বারোটায় উইশ করবে বলে ঠিক করেছে সূচনা। বহুকষ্টে সূচনা নিজ হাতে একটা কেক বানিয়েছে প্রণয়ের জন্য। চকলেট কেক,তিথির কাছ থেকে জেনেছে চকলেট কেক প্রণয়ের পছন্দ। মিসেস আফিয়া কে যখন বলেছিল তিনি রাজি হননি।সূচনা অনেক কাঠ খোর পু ড়িয়ে রাজি করিয়েছে তাকে।ইরা বাসায় না,সে জানেনা এসব।দুইদিন আগেই দিনাদের বাসায় নিয়ে গেছে দিনা,জাওয়াদ এর আম্মু আব্বু কোনো কারণবশত গ্রামে গিয়েছেন আর জাওয়াদ ও অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত নয়টা বাজে।তাই দিনা ইরাকে নিয়ে গেছে নিজের কাছে।তিথি বাইরে অপেক্ষা করছে।সূচনা শুয়ে পড়েছে কিন্তু প্রণয় ফোন গুতা চ্ছে তার পাশে বসে।সূচনা একটু পর পর সময় দেখছে ফোনে,তিথিকে মেসেজ ও তো করতে হবে।দরজা ভিড়িয়ে রেখেছে,লক করেনি তিথি আসবে বলে।সময় কা টছে,এক ঘন্টা, দেড় ঘন্টা, প্রণয় শুয়ে পড়েছে। সূচনা নিঃশব্দে উঠে বসলো,পা টিপে টিপে দরজার কাছে আসলো।বারোটা বাজতে আর দুই মিনিট বাকি।শব্দহীন ভাবে ভেড়ানো দরজা খুলে দিল, তিথি হাতে কেক নিয়ে ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করলো।কেক টা টি টেবিলে রেখে দুজন আস্তে আস্তে প্রণয়ের পাশে যেয়ে দাড়ালো।সূচনা ভ য় পাচ্ছে প্রচুর কিন্তু তবুও পিছু হাটছে না।তিথি ও ভয় পাচ্ছে একটু একটু।ইতিমধ্যে মিসেস আফিয়া ও এসেছেন রুমে।অবশেষে সেই সময় ঘনিয়ে আসলো,বারোটা বাজতেই দুজন গলা উচু করে বললো-
–‘হ্যাপি বার্থডে প্রণয়(সূচনা)..হ্যাপি বার্থডে ভাই(তিথি)।
কানে পোঁছাতেই সজাগ হলো প্রণয়।সাথে সাথে উঠে বসলো।চোখ গেল সামনে ঝুকে থাকা এক জোড়া মুখের দিকে।মুহূর্তেই মুখের রং বদলালো।চোখ মুখ স্বাভাবিক থেকে শক্ত হয়ে গেল। তাদের থেকে দৃষ্টি সরে গেল টি টেবিলের ওপর রাখা কেকের দিকে।সেটা দেখে যেন আরও রে গে গেল প্রণয়।শক্ত কণ্ঠে শুধু বললো-
–‘আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও এটা।
সূচনা কাপা কাপা কণ্ঠে বললো-
–‘প্র..প্রণয়..
–‘বললাম না নিয়ে যেতে।
আকস্মিক চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো প্রণয়।মিসেস আফিয়া অবাক হয়ে গেলেন।সূচনা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে,তিথিও ভয়ে চুপসে গেছে একদম।সূচনা ‘থ’ বনে গেছে,চোখ জোড়া থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে সময় লাগলো না খুব বেশি কারণ প্রণয় এরমধ্যে বিস্ময়াবহ কাজ ঘটিয়েছে একটা। বেড থেকে উঠে সোজা যেয়ে টেবিলের ওপর রাখা কেকটা নিচে ফেলে দিয়েছে। সেকেন্ডের মধ্যে ই সূচনার ঘন্টা খানেকের করা মেহেনত আর এত আশা সব শেষ হয়ে গেছে। সূচনা তখনও ঔভাবেই দাঁড়িয়ে আছে,তিথি এক হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে সূচনাকে।সে ভাবেনি প্রণয় এমন টা ও করবে।বেশি হলে ধমকাবে, একটু বকা দিবে তিথির ধারনায় এতটুকু ই ছিল।কিন্তু প্রণয় কী করলো এটা?দরজার দিকে হঠাৎ চোখ পড়ায় মিসেস আফিয়া কে এতক্ষণে দেখল প্রণয়।উনি চাইলেও কিছু বলতে পারলেননা, কারণ মিসেস আফিয়া এতটুকু তো বুঝতেই পারছেন এই মুহুর্তে প্রণয়কে কিছু বলা মানেই তাকে আরও রা গিয়ে দেয়া।প্রণয় তার থেকে চোখ সরিয়ে সূচনার দিকে তাকালো।সূচনা নিচের দিকে দৃষ্টি তাক করে রেখেছে।প্রণয় কা ট কা ট গলায় বলে দিল-
–‘তোমাকে যেন আমার চোখের সামনে না দেখি।যাও এখান থেকে।
সূচনার বুক ধ্বক করে উঠলো,চোখ থেকে পানি অনবরত পড়তে লাগলো।দাড়ানোর ইচ্ছে না থাকলেও পা নড়লো না সহজে।কিন্তু দাড়ালো না এক মুহুর্ত ও,যেন শরীরটাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।তিথি এক পলক প্রণয়ের দিক তাকিয়ে বললো-
–‘তুমি এমন বিহেভ করবে সেটা আশা করিনি ভাইয়া।তোমার পছন্দ ছিল এজন্য ভাবী নিজ থেকে এত আশা আর ভালোবাসা নিয়ে কেকটা বানিয়েছিল আর ভাইয়া তুমি?
আর বললো না তিথি, সূচনার পেছনে ছুটলো।মিসেস আফিয়ার দিকে তাকালো প্রণয়। মিসেস আফিয়া ও চলে এলেন রুম থেকে।প্রণয় ফ্লোরে পড়ে থাকা কেকটার দিকে তাকিয়ে রইলো কয়েকপল।সামনে থাকা টি টেবিলটার মধ্যে লা থি দিয়েই রাগ কমানোর বৃথা চেষ্টা করলো ।
#চলবে