#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#৩য়_পর্ব
#লেখনিতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী
শ্রাবন্তী ক্লাসরুমে ঢুকতেই সবাই তার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকায়। শ্রাবন্তী সবার এরকম চাহনি দেখে বুঝতে পারেনা আসলে কি হয়েছে। ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে সে একটি টেবিলে বসে পড়ে। শ্রাবন্তীর পাশে যেই মেয়েটা বসে ছিল সে শ্রাবন্তীকে বলে, তুমি নাকি আদিল ভাইকে রিজেক্ট করেছ। কেমন মেয়ে তুমি? এত হ্যান্ডসাম ছেলেকে কে রিজেক্ট করে।
আমি রূপের কদর করা মানুষদের সহ্য করতে পারি না। তাছাড়া এভাবে ভালোবাসা হয় না। আমি তো ওনার জন্য কিছু ফিল করি না। তাহলে কেন ওনার সাথে রিলেশন করব?
আদিল ভাই কত হ্যান্ডসাম। আমিও ওনাকে পছন্দ করি জানো। কিন্তু দেখছ তো আমি তোমার মতো সুন্দরী নই। আমার গায়ের রং শ্যামলা। তাই কোন ছেলেই আমার দিকে ফিরে তাকায় না। সেখানে আদিল ভাইকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার সাহস আমার নেই। আমি ওনাকে ডুবে ডুবেই ভালোবেসে গেলাম। জানো আমি সেই স্কুল লাইফ থেকে ওনাকে পছন্দ করি। আমরা একই স্কুলে পড়তাম।
শ্রাবন্তী এবার মেয়েটির দিকে তাকায়। মেয়েটির গায়ের রং শ্যামলা হলেও দেখতে ভীষণ মিষ্টি। মেয়েটি বলছে যে ও নাকি শ্রাবন্তীর মতো সুন্দরী নয়। অথচ মেয়েটি জানেই না শ্রাবন্তী আসলে দেখতে তার থেকেও কালো। শুধুমাত্র মেকআপ করেছে জন্য এত ভালো লাগছে তাকে।
শ্রাবন্তী মেয়েটির কাছে জানতে চায়, তোমার নাম কি?
আমার নাম লাবিবা ওয়াহিদ সুইটি। তুমি আমাকে সুইটি বলে ডাকতে পারো।
ওকে সুইটি বলেই ডাকব।
তাদের মধ্যে আরো কিছু কথাবার্তা হয়। ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ায় কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়। কিছু কেমিক্যাল মিশিয়ে একটা দ্রবণ তৈরি করার জন্য ক্লাসের সবাইকে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিনিয়রেরা সাহায্য করবে। সুইটিকে সাহায্য করার দায়িত্ব পায় আদিল, শ্রাবন্তীকে রূপক। রূপক আদিলকে চোখ টিপে কিছু একটা ইশারা করে। আদিল একটা কেমিক্যাল বের করে রূপকের হাতে দেয়।
ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন বিক্রিয়া বিষয় নিয়ে বোঝানো হয়। তাদের বিক্রিয়া কিভাবে করতে হবে সেই বিষয়ে ক্লাস নেওয়া হয়। এরপর টিচার বলেন, তোমরা সবাই নিজের সিনিয়রদের সাহায্য নাও। তাদের সাহায্য কাজে লাগিয়ে তোমরা বিক্রিয়া করবে। একা একা কিছু করার চেষ্টা করবে না।
সুইটিকে আদিল সাহায্য করছিল। সুইটির কাছে যেন এটা স্বপ্ন মনে হচ্ছিল। যেই ছেলেটাকে সে এতদিন ধরে ভালোবেসে গেছে সে আজ তার এত কাছে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেয় সুইটি।
আদিল এই প্রথম সুইটির সাথে কথা বলে। তাকে বিক্রিয়া বুঝিয়ে দেয়। সুইটির কাছে সবটা স্বপ্ন মনে হয়। সুইটির ইচ্ছা করছিল আদিলকে এখনই নিজের মনের কথা বলে দিতে। কিন্তু সে অপারগ ছিল। কিছু কিছু ভালোবাসার কথা আজীবন মনেই থেকে যায়। সাহসের অভাবে বলা হয়না।
রূপক শ্রাবন্তীকে সাহায্য করার সময় দ্রবণে একটি ভুল কেমিক্যাল মিশিয়ে দেয়। যা হলো হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। যার কারণে সেখানে আগুন লেগে যায়। সবাই ভয়ে দৌড়ে এদিক ওদিক যায়।
আদিল তো এই সুযোগটাই খুঁজছিল। রূপক শ্রাবন্তীকে একা রেখেই চলে এসেছে। শ্রাবন্তী আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছে। এইসময় শ্রাবন্তীকে রক্ষা করে আদিল তার মনে যায়গা করে নিতে পারবে।
কিন্তু ঘটে ঠিক উল্টো ঘটনা। কিছু ছেলে মেয়ে আগুন নিভানোর জন্য পানি ছিটাতে থাকে। যার কারণে আগুন নেভার বদলে আরো বেশি জ্বলে ওঠে। কারণ হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের সাথে পানি মিলে আগুন আরো বেশি বাড়িয়ে দেয়। এত আগুন ছাড়িয়ে আদিলের পক্ষে শ্রাবন্তীর কাছে যাওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে।
আদিল খুবই ভয় পেয়ে যায়। শ্রাবন্তী বাঁচার জন্য চিৎকার করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যায়। এরমধ্যে গৌরব কোথা থেকে যেন খবর পেয়ে ছুটে আসে। শ্রাবন্তীকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে কোন কিছু না ভেবে আগুনের উপর দিয়ে লাফ দিয়ে তাকে বাঁচাতে যায়।
শ্রাবন্তীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে গৌরব। শ্রাবন্তীকে নিয়ে তাদের মেডিকেল ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আদিলও গৌরবের পিছনে যায়।
ডাক্তার শ্রাবন্তীকে চেক করে বলেন,ও একদম ঠিক আছে। ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
গৌরব নিশ্চিত হয়। তার কিছু জরুরি ক্লাস থাকায় সে চলে যায় ক্লাস করতে। আদিল শ্রাবন্তীর কাছেই বসে থাকে। কিছুক্ষণ পরেই শ্রাবন্তীর জ্ঞান ফিরে আসে। জ্ঞান ফেরার পর নিজের চোখের সামনে আদিলকে দেখে অবাক হয় শ্রাবন্তী।
কি হয়েছিল আমার? আমি এখানে কিভাবে এলাম।
ল্যাবরেটরিতে আগুন লেগে গিয়েছিল। তুমি তো ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে। আমি তোমাকে আগুন থেকে বের করে এখানে নিয়ে এসেছি।
শ্রাবন্তী কৃতজ্ঞতার সাথে আদিলের দিকে তাকিয়ে বলে, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানোর জন্য। আজ আপনি না থাকলে আমার যে কি হতো।
এতো ফর্মালিটি করতে হবে না। তুমি বিপদে ছিলে তাই তোমাকে বাঁচিয়েছি। আমাদের তো দায়িত্ব এটা। অন্য সবার মতো আমি তোমাকে ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারিনি।
আপনি সত্যি অনেক ভালো মানুষ। আমি বোধহয় আপনাকে ভুল ভেবেছিলাম।
উহুম। অতীতের কথা ভেবে আর কাজ নেই। এখন তো আমরা বন্ধু হতে পারি তাইনা?
শ্রাবন্তী মাথা দোলায়। আদিল খুব খুশি হয়। তার উদ্দ্যেশ্য সফল হয়েছে। এই মেয়ে এখন নিজে থেকে তার জালে ধরা দিয়েছে। এখন আপাতত বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল। সুযোগ বুঝে নিজের প্রেমেও ফেলবে।
❤️
গৌরব ভার্সিটির গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে শ্রাবন্তীর অপেক্ষা করছিল। শ্রাবন্তী সুইটির সাথে কথা বলতে বলতে বাইরে আসছিল। গৌরবকে দেখে শ্রাবন্তী থেমে যায়। গৌরব শ্রাবন্তীকে দেখে স্বস্তি পায়। বলে, তুমি এখন ঠিক আছ তো?
শ্রাবন্তী শুধু হুম বলে। আর কিছু না বলেই সুইটির হাত ধরে চলে যায় গেইটের বাইরে। গৌরবের বেশ খারাপ লাগে। সে কত কষ্ট করে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রাবন্তীকে বাঁচাল আর শ্রাবন্তী তার সাথেকে ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলল না। গৌরব মন খারাপ করে নিজের বাইকে করে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
এদিকে সুইটি শ্রাবন্তীকে বলছিল, গৌরব ভাইকে তুমি কিভাবে চিনো?
শ্রাবন্তী তখন সব ঘটনা বলে যে কিভাবে প্রথমদিন সে তাকে র্যা*গিং করতে দেখেছিল। সুইটিও বলে, আসলেই গৌরব ভাই ভালো মানুষ না। শুনেছি ওনার বাবা একজন রাজনীতিবিদ। এই নিয়ে তার দাপটে চলে। এই ভার্সিটিতে পদার্থ বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়েন। আমার তো ওনাকে দেখলেই ভয় লাগে। তুমি ওনার থেকে একটু সাবধানে থেকো।
আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না। আমার কোন ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। আচ্ছা আমি তাহলে আজ আসি।
এসো।
ভার্সিটি থেকে সোজা বাড়িতে চলে আসে শ্রাবন্তী। শাহাদাত হোসেন নিজের মেয়েকে দেখে আফসোস করে বলেন, তুই আজও এভাবে মেকআপ করে গেছিস। তোর নিজেকে নিয়ে এই অনীহা দেখে আমার সত্যি খুব খারাপ লাগছে। জানিস তোর গায়ের এই রঙ আমাকে তোর মায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। কালো হওয়ায় তার কোন আফসোস ছিলনা। সে নিজেকে খুব ভালোবাসতো। তুই নিজের মায়ের গায়ের রং পেলেও তার মতো হতে পারলি না এটা দেখে আমার খারাপ লাগছে।
শ্রাবন্তী কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়। তারও তো এই কৃত্রিম মেকআপে ঢেকে থাকতে ভালো লাগে না। কিন্তু সে যে নিরুপায়।
চলবে…
(গল্পটায় এত লাইক পাবো ভাবিনি। আমি ভেবেছিলাম আমার কাচা হাতের লেখা কেউ পড়বেই না। আপনাদের এত বেশি সমর্থন দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ আপনাদের জন্য রাতে আরো একটা পর্ব দেব। সবাই বড় বড় কমেন্ট করবেন কেমন?)