ডুবে ডুবে ভালোবাসি পর্ব -০২

#ডুবে_ডুবে_ভালোবাসি
#২য়_পর্ব
#লেখনিতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী

শ্রাবন্তী আজ আবার ভার্সিটিতে আসল মেকআপ করে নিজের আসল চেহারা ঢেকে। আজকে ছেলেদের পাগলামি ছিল আরো অনেক বেশি। অনেক ছেলে তো শ্রাবন্তীর এই কৃত্রিম রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে প্রপোজ পর্যন্ত করেছে। শ্রাবন্তীর জন্য কত পাগলামীই না করছে তারা। একজন ছেলে তো শ্রাবন্তীর জন্য বিয়ের প্রস্তাবও নিয়ে এসেছে। শ্রাবন্তী তাদের কারো দিকে ফিরে তাকায় নি। কারণ সে আর জীবনে ভালোবাসা চায়না। শ্রাবন্তীর মনে হয় এখন আর সত্যিকারের ভালো কেউই বাসে না। সবাই শুধু বাইরের রূপ দেখেই ভালোবাসে। শ্রাবন্তী এরকম কারো সাথে নিজের জীবন জড়াতে চায়না। সে চায় একজন শুদ্ধ পুরুষকে। যে রূপের কদর করবে না। শুধুমাত্র কৃত্রিম সজ্জিত শ্রাবন্তীকে দেখে নয়, তার আসল রূপ দেখে তাকে ভালোবাসবে এমন কাউকেই চায় শ্রাবন্তী।

আদিল তার বন্ধু রূপকের সাথে ভার্সিটির একটি কদম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। আচমকা তার নজরে চলে আসে শ্রাবন্তী। শ্রাবন্তীকে দেখেই আদিলের মনের ঘন্টা আবার বেজে ওঠে। আদিল নিজের চুলের স্টাইল ঠিক করে রূপককে বলে, দেখতো আমাকে এখন কেমন লাগছে?

রূপক আদিলের পা থেকে মাথা অব্দি দেখে বলে, তুই তো বরাবরই সুন্দর। তোর জন্য এই ভার্সিটির সব মেয়েই পাগল। তোর আবার রূপ নিয়ে কিসের টেনশন।

সত্যি আমাকে সুন্দর লাগছে তো?
আদিলের প্রশ্নটা শুনে রূপক বলে, তুই নিশ্চয়ই প্রেমে পড়েছিস। প্রেমে পড়লেই মানুষ এমন কথা বলে।

হুম সত্যিই প্রেমে পড়েছি আমি। এক সুন্দরী মেয়ের। তোর মনে আছে কাল শ্রাবন্তী নামের একটি মেয়েকে আমি বরণ করেছিলাম?

হ্যাঁ, মেয়েটাকে তো তুই বরণ করেছিলি। অনেক সুন্দর দেখতে কিন্তু।

ঐ মেয়েটাকেই তো আমার পছন্দ হয়েছে। আমি শুধু বুঝতে পারছি না কিভাবে কি বলি।

তুই টেনশন করিস না ভাই। তোকে রিজেক্ট করবে এমন মেয়ে এই ভার্সিটিতে আর একটাও নেই। যা গিয়ে বলে দে নিজের মনের কথা। আমার বন্ধু যে এভাবে কাউকে পছন্দ করবে আমি সেটা ভাবতেও পারিনি। যখন কাউকে পছন্দ হলো তাহলে আর দেরি করিস না। পাখি উড়ে যাওয়ার আগে তাকে খাঁচায় বন্দি কর।

আদিল শ্রাবন্তীর সাথে কথা বলতে যায়। শ্রাবন্তী নিজের ক্লাসের দিকে যাচ্ছিল। তখনই কেউ তাকে ডাকে। তার নাম ধরে ডাকে না। তাকে লাল সালোয়ার পড়া মেয়ে বলে ডাকে। শ্রাবন্তী আজ লাল সালোয়ার পড়ে ছিল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে আর কেউই লাল সালোয়ার পড়েনি। তাই সে পিছনে ফিরে তাকায়। পিছনে ফিরে দেখতে পায় এটা কালকে যেই ছেলেটা তার মুখে পানি দিয়েছিল(গৌরব) সে। গৌরবকে দেখে শ্রাবন্তী বিরক্ত হয়। তার মনে হয়, এই ছেলে যেহেতু তার সত্যটা জেনে গেছে, তাই হয়তো এবার তাকে ব্লাকমেইল করবে। শ্রাবন্তীর ইচ্ছা ছিল না ছেলেটার কথা শোনার। কিন্তু ভয়ে সে দাড়িয়ে থাকে। গৌরব শ্রাবন্তীর পাশে এসে দাঁড়ায়। গৌরব বলে, তুমি আজও মেকআপ করে এসেছ। নিজের আসল রূপ ঢেকে রাখো কেন?
শ্রাবন্তী উদাস হয়ে বলে, সেটা আপনি বুঝবেন। আপনার গায়ের রঙ তো আমার মতো কালো নয়, ধবধবে ফর্সা। তাই আপনি বুঝবেন না গায়ের রঙ কালো হলে কত কথা শুনতে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় বেঁচে থেকে অনেক বড় ভুল করেছি। নিজেকে শে*ষ করে দিতে মন চায়।

যে নিজেকে ভালোবাসতে পারে না, তাকে কেউ ভালোবাসে না। তুমি যদি নিজের আসল রূপটাকে মেনে নেও তাহলে কারো কথা গায়ে মাখার দরকার নেই।

আমিও আগে এমনটা ভাবতাম। কিন্তু

কিন্তু কি? নিশ্চয়ই কোন ছেলের থেকে অপমানিত হয়ে এখন নিজেকে বদলে ফেলছ। আমার কথা শুনো এভাবে কৃত্রিমতার চাদরে নিজেকে না ঢেকে নিজের আসল রূপটাকে মেনে নেও। কারো কথা গায়ে মাখবে না। যারা তোমাকে কিছু বলবে তাদের থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবে। কথাগুলো বলে গৌরব চলে যায়।

শ্রাবন্তী কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে গৌরবের বলা কথাগুলো ভাবে। তারপর উদাস হয়ে হাটতে থাকে। শ্রাবন্তীর কাছে মনে হয় গৌরব তাকে শান্তনা দেখিয়ে কথাগুলো বলছে।

অন্যদিকে গৌরব ভাবছে, মেয়েটার গায়ের রং যেমনই হোক আমার ওকে ভালো লেগেছে। ও যেমন তেমনই ঠিক আছে। কৃত্রিমতার থেকে ওর ন্যাচরাল বিউটিটাই সুন্দর। গৌরব নিজেও বুঝতে পারছে না তার সাথে এগুলো কি হচ্ছে। যেই মেয়েটা তাকে গু*ন্ডা বলে অপমান করল সে তারই প্রেমে পড়ে গেল! গৌরবের নিজের উপরই হাসি পায়।

❤️
শ্রাবন্তীর রাস্তা আটকে দাঁড়ায় আদিল। শ্রাবন্তী বিরক্তি ভাব নিয়ে আদিলের দিকে তাকায়। আদিল ভীষণ সাহস নিয়ে একটি গোলাপ ফুল দিয়ে শ্রাবন্তীর হাতে ধরিয়ে বলে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি কি আমার গার্লফ্রেন্ড হবে?
শ্রাবন্তী আদিলের দিকে কিছুক্ষণ থম মে*রে তাকিয়ে থাকে। এরপর বলে, আমাকে আপনি কেন ভালোবাসেন? ভালোবাসা কি এতটাই সস্তা নাকি? আমার যতদূর মনে আছে আমাদের কালকেই দেখা হয়েছে। আর এই একদিনে আপনি আমায় ভালোবেসে ফেললেন। এ আবার কেমন ভালোবাসা?

তোমাকে দেখেই আমার লাভ এট ফাস্ট সাইট হয়েছে। তুমি এত সুন্দর যে

ও বুঝলাম তার মানে আপনি আমার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছেন। তবে শুনে রাখুন আমার এমন মানুষ পছন্দ না যারা রূপ দেখে ভালোবাসে। আপনি যদি আমার চেহারার প্রেমে পড়েন তাহলে কোন কারণে যদি আমি দেখতে বাজে হয়ে যাই তখন আর আমাকে ভালোবাসবেন না। তাই আমি আপনার এই ভালোবাসা গ্রহণ করব না। ভালো থাকুন। এই নিন আপনার গোলাপ ফুল। যেই মেয়ে তার সৌন্দর্য দেখে প্রেমে পড়েছেন জেনেও আপনাকে ভালোবাসবে তাকে গিয়ে দিন এই গোলাপ।

শ্রাবন্তী কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের মতো চলে যায়। আদিল রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে শ্রাবন্তীর দিকে। এই প্রথম সে কোন মেয়েকে নিজে থেকে প্রপোজ করল। অথচ আজ অব্দি কতশত মেয়ে তাকে প্রপোজ করেছে। আদিল তাদের সবাইকেই ফিরিয়ে দিয়েছে। আর আজ কিনা এই মেয়ে তাকে ফিরিয়ে দিল। আদিল রাগে ফুসছিল। রূপক এসে তার কাধে হাত রাখে। আদিল রূপককে বলে, দেখলি দোস্ত এই মেয়ের কতবড় সাহস আমাকে অপমান করল। রাগে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।

সরি দোস্ত। দোষটা আসলে আমারই। আগে যদি জানতাম মেয়েটা তোকে এভাবে সবার সামনে অপমান করে চলে যাবে তাহলে কখনো তোকে বলতাম না ওকে প্রপোজ করতে।

না দোস্ত তোকে আর সরি বলতে হবে না। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। এই মেয়ের অহংকার আমি বের করছি দাড়া। আমি বলছি তোকে লিখে রাখ এই মেয়েই হবে আমার গার্লফ্রেন্ড। আমাকে রিজেক্ট করে দিলে, একসময় আমার প্রেমে পাগল হবে। এটা আমি বাজি ধরলাম তোর সাথে। আমি বাজি জিতবোই। এই মেয়েকে আমি নিজের করে নেবোই।

আচ্ছা এখন চল।

আদিল ও রূপক একসাথে যায়৷ রূপক আদিলকে হাসানোর জন্য অনেক কথা বলে। অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু আদিলের রাগ যেন একটুও কমছে না।তার চোখে এখনো সেই দৃশ্য ভাসছে যখন শ্রাবন্তী মেয়েটা তাকে রিজেক্ট করে দিল।

দোস্ত আমি ভুলতে পারছি না কিছু। তুই আমাকে বুদ্ধি দে রূপক। যাতে আমি ঐ মেয়েকে নিজের বশে আনতে পারি। এখন তুই আমার ভরসা।

আচ্ছা আদিল। তুই চিন্তা করিস না। আমি তোকে কথা দিচ্ছি ঐ শ্রাবন্তীকেই তোর গার্লফ্রেন্ড বানাতে আমি তোকে সাহায্য করব।

চলবে…

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here