মেঘে ঢাকা আকাশ পর্ব -০৬+৭

#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব_৬
কলমে রোকেয়া পপি।

শুদ্ধ দের বাসায় এসে মলি পুরোপুরি হকচকিয়ে গেছে। অদ্ভুত সুন্দর ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে বিশাল লন। বিভিন্ন ধরনের নাম না জানা দেশী বিদেশী ফুলের গাছ লনের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
গেটে উর্দি পরা দারোয়ান গেট খোলার মুহূর্তে বিশাল এক সালাম ঠুকে দিল।

শুদ্ধ নিজে গাড়ি নিয়ে গিয়ে ড্রাইভ করে মলিকে নিয়ে এসেছে। মলি বারবার বলছিলো, কোথাও একটু থামাতে, কিছু ফল আর মিষ্টি নেওয়ার জন্য। কিন্তু শুদ্ধ না থামিয়ে এক টানে চলে এসেছে। ওর কথা বাবা আমার জন্য অপেক্ষা করছে এক সাথে জুমার নামাজ পড়তে যাবে জন্য। এখন আর দেরি করা যাবে না। সারে বারোটা বেজে গেছে।
আর তাছাড়া আমাদের বাসায় যাওয়ার জন্য তোমার কোন ফর্মালিটিজ দরকার নেই। বি ইজি।

শুদ্ধ বি ইজি বললেও মলি কিছুতেই সহজ হতে পারছে না। শুদ্ধ নামাজ পড়তে চলে গেলে নতুন একটা পরিবেশে ও কিভাবে একা একা প্রায় ঘন্টা খানেক থাকবে। তাছাড়া আন্টি বা কিভাবে গ্রহণ করবে ওকে। সবকিছু ভেবে ও খুব নার্ভাস ফিল করছে।

শুদ্ধ নিজে গাড়ির দরোজা খুলে মলিকে সন্মান জানিয়ে গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করতে করতে বুঝতে পারলো মেয়েটা সহজ হতে পারছে না।
ও হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললো, মলি তোমাকে আজ অন্য রকম সুন্দর লাগছে তুমি কি তা বুঝতে পারছো বার্থডে গার্ল?

মলির গায়ের রং এমনিতেই কাঁচা হলুদের মতো সুন্দর। তার ওপরে শুদ্ধর কথা শুনে ওর গাল দুটো লজ্জায় বেগুনি রং ধারণ করলো।

ওরা দুজনের কেউই লক্ষ্য করলো না, দোতলার বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে মিসেস মমতা বেগম ওদের খুনসুটি পুরোটাই খুব আগ্রহ নিয়ে দেখছে।

মলিকে নিচের ড্রয়িং রুমে না বসিয়ে শুদ্ধ সরাসরি দোতলায় ওদের ফ্যামিলি ড্রয়িং রুমে এনে বসিয়েছে।

মলি জানতো শুদ্ধ স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে। ওর বাবা সচিব। কিন্তু ওর চলাফেরা কথাবার্তা এতো বেশি সাধারণ যে ও কল্পনাও করতে পারেনি শুদ্ধ এতো অভিজাত পরিবারের ছেলে।
যা দেখছে তাতেই ও মনে মনে বিস্ময় প্রকাশ করছে!
কারো বাসা এতো বেশি সুন্দর হতে পারে!

ড্রয়িং রুমের এক পাশে ওয়াল জুড়ে পুরোটাই আলমারি। ছাদ থেকে নিচ পর্যন্ত স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসের ভেতরে শুধু বই আর বই। হাজার হাজার বই দেখে ওর মাথা খারাপ হবার জোগাড়।
আরেক পাশের ওয়াল জুড়ে কতো দামী দামী যে সোপিস! ও যে নরম তুলতুলে সোফায় বসে আছে তার সামনে যে টি টেবিল, সেই টেবিল জুড়ে ও সোপিস ভরা। ও ভেবে পাচ্ছে না টি-টেবিলে এতো সোপিস থাকলে গেস্ট আসলে নাস্তা দেয় কোথায়? তখন কি সব সোপিস একটা একটা করে নিচে নামিয়ে রেখে তারপর টেবিলে নাস্তা দেয়।

ওর ভাবনার মাঝে একজন পরিপাটি পোশাক পরা মহিলা একটা ছোট গাড়ি টাইপের কিছু ঠেলতে ঠেলতে ভেতরে ঢুকছে। সেই গাড়ির তিনটা ধাপ ভর্তি নাস্তা। ও অবাক না হয়ে পারলো না। বড়ো লোকদের ব্যাপার স্যাপারই আলাদা।
ও বুঝতে পারছে না এটা কি কাজের মহিলা নাকি শুদ্ধর মা। ও ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে একটা সালাম ঠুকে দিল।

শুদ্ধ মিটিমিটি হাসছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে রেখে বললো, রোজিনা আপা আপনি ভেতরে যান।
আমি মালিকে নাস্তা সার্ভ করছি।

ও হ্যা রোজিনা আপা, বাবা কোথায়?

খালুজান গোসল শেষ করে বের হয়েছেন।
আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান।

শুদ্ধ সরবতের গ্লাসটা মলির হাতে তুলে দিতে দিতে বললো, বাবা এখনি আসবে। তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।

আর মম মনে হয় রান্না শেষ করে গোসলে ঢুকেছে।
শুদ্ধর কথা শেষ হতেই সাহাবুদ্দিন আহমেদ ভেতরে প্রবেশ করলেন।

মলি সরবতের গ্লাসটা নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম করলো।

থাক মা , বসো বসো।
তারপর তুমি কেমন আছো মা?

জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আঙ্কেল। তুমি খাচ্ছো না কেন? নাস্তা করতে থাকো। আমরা বাপ ছেলে মসজিদ থেকে আসতেছি।
মমতা মমতা কোই তুমি? তোমার হলো?
মেয়েটা একা একা বসে থাকবে নাকি?

মলি দেখলো পর্দা ঠেলে যে রুপবতী মেয়েটা ভেতরে প্রবেশ করলেন, তাকে আর যাই বলা হোক শুদ্ধর মা বলা যায় না। বয়স কতোই বা হবে। দেখে তো বড়ো জোড় ত্রিশ মনে হচ্ছে। ভার্সিটি পড়ুয়া একটা ছেলের মা নিজের বয়স যে এভাবে ধরে রাখতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে ও কখনো বিশ্বাস করতে পারতো না।

ওনার পরনের পাতলা ফিনফিনে মসলিন শাড়িতে ওনার সৌন্দর্য যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তবে ব্লাউজ টা এতো শর্ট স্লিভলেস যে মলির তাকাতে রীতিমতো লজ্জা লাগছে।
ও মাথা নিচু করে মুখে সালাম দিলো আসসালামু আলাইকুম আন্টি।

মলি ঠিক বুঝতে পারলো না, উনি তার সালামের উত্তর দিয়েছেন কিনা। উনি একটা সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে, চেহারায় ড্যাম কেয়ার একটা ভাব এনে বললো তুমি শুদ্ধর বন্ধু?

এ ধরনের প্রশ্নের কি উত্তর হয় বুঝতে না পেরে মলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে শুদ্ধর মুখের‌ দিকে তাকালো।

মম তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। ও মলি। আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। আমরা কখনো ওর নাম্বারের‌ ধারে কাছে ও ভিড়তে পারি না। সুতরাং বুঝতেই পারছো আমার বন্ধুটি কি ধরনের মেধাবী ছাত্রী। রেজাল্ট টা হয়ে গেলেই দেখবে ও স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে।
তাই ওকে আজ তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব বলে বাসায় নিয়ে আসলাম।
মম তোমরা গল্প করো, আমরা নামাজ পড়ে আসি।

বাবা চলো। আর দেরি করা যাবে না।

সাহাবুদ্দিন আহমেদ উঠতে উঠতে বললেন, মমতা মেয়েটা প্রথম এসেছে। সহজ হতে পারছে না। তুমি একটু আপন করে নাও।
আমরা একটু পরেই চলে আসব।

মমতা মনে মনে স্বীকার না করে পারলো না যে মেয়েটা সত্যিই মারাত্মক সুন্দরী। কিন্তু তারপরও ওর কেন যেন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে শুদ্ধ খুব সাধারণ একটা মেয়ের সাথে প্রেম করছে! দামী পোশাকের আড়ালে ও মেয়েটার ভাবভঙ্গি বলে দিচ্ছে যে কতোটা সাধারণ পরিবারের মেয়ে সে।

তারপর মলি তোমার বাবা কি করেন?

আন্টি আমার বাবা বেঁচে নেই।

সো স্যাড। তা বেঁচে থাকা অবস্থায় কি করতেন তিনি?

আমার বাবা একটা প্রাইভেট ফার্মে অফিস সহকারী হিসেবে জব করতো।

আচ্ছা তাহলে তোমাদের পরিবার এখন কিভাবে চলে? মানে আমি বলতে চাইছি ইনকাম সোর্স কি?

বাবার অফিসে বড়ো আপু জব করে এখন।

আচ্ছা আচ্ছা। তোমার বড়ো আপুর বিয়ে হয়েছে?

জলির সত্যি খুব খারাপ লাগছে এই টাইপের প্রশ্নের উত্তর দিতে। কিন্তু ওর আসলে কিছু করার ও নেই। ও ভালো করেই বুঝতে পারছে শুদ্ধ ওর সম্পর্কে বাসায় কিছুই জানায়নি।

আন্টি আপু এই মুহূর্তে বিয়েতে রাজি না।

আচ্ছা। তা তোমরা থাকো কোথায়?

জিগাতলা।

নিজেদের বাড়ি? নাকি ভাড়া?

নিজেদের বাড়ি।

গুড।
কয়তলা তোমাদের বাড়ি?

আন্টি আমরা খুব বেশি সাধারণ মানুষ। বলতে পারেন নিম্ন মধ্যবিত্ত। আমার বাবা কোন রকমে একটা টিন সেড বিল্ডিং করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়ে গেছেন।

মমতা বেগমের মুখ আস্তে আস্তে কঠিন হচ্ছে। তিনি বেশ জোর গলায় হাঁক ছেড়ে রোজিনা কে ডাকলেন।

রোজিনা। টেবিলে খাবার লাগা। তোর খালুজানের আসার সময় হয়ে গেছে।

জি ম্যাডাম। সব রেডি।

আচ্ছা ঠিক আছে তুই যা।

তা তোমরা কয় ভাই বোন?

আমরা তিন বোন।

ভাই নেই?

জি না আন্টি।

কে কি করছো?

বড়োপা জব করছে আগেই বলেছি। আমি ফাইনাল ইয়ারে।
আর আমার ছোট বোন… মলির গলা বুজে আসছে। ওর কন্ঠ দিয়ে শব্দ বের হতে চাইছে না।
চোখ ভিজে উঠতে চাইছে নিজের অজান্তেই। এখন ও খুব ভালো করে জানে পরবর্তী প্রশ্নটা কি হতে পারে। ওর গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে এই অতি স্মার্ট মহিলার সামনে থেকে ছুটে বের হয়ে যেতে।
#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব_৭
কলমে রোকেয়া পপি।

সজীব অনেক রাতে বাসায় ফিরেছে বাবার ভয়ে। দিলার বেগম নিজেই দরোজা খুলে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি সজীবের বাবাকে ডাকেননি।
যদিও সরফরাজ খান বেশ রাগান্বিত স্বরেই বলেছিলেন তোমার গুনধর পুত্রের এখনো বাসায় আসার সময় হয়নি! নতুন বউ ঘরে রেখেও তার মাঝ রাত পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে গান্জা টানা লাগে।

দিলারা বেগম কান খুলে শুনে রাখো, আজ যতো রাত হোক তোমার পুত্র ঘরে ঢোকার সাথে সাথে আমাকে ডেকে দিবে।
চতুর দিলারা বেগম আর তার স্বামীকে ডাকেনি।
প্রথমত উনি হাই প্রেসারের রুগি। দ্বিতীয়ত বাসায় নতুন বউ। দিলারা বেগম চান না নতুন বউয়ের সামনে তার ছেলে বাবার বকা খাক।

সজীব ঘুম থেকে উঠে পাশে জলিকে না দেখে একটু অবাক হলো। এতো সকালে মেয়েটা গেলো কোথায়?
ও উঠবে নাকি আরেকটু ঘুমাবে ঠিক বুঝতে পারছে না। যেহেতু আজকে ছুটির দিন। ওর বাবার বাসায় থাকার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া সরফরাজ খান শুক্রবার নিজে বাজারে গেলেও, অনেক সকাল সকাল বাজারে যায়। এখন প্রায় সারে আটটা বাজে। তারমানে তিনি এখন বাসায়।

সজীব আড়মোড়া ভাঙতেই পুস্প দরোজায় টোকা দিয়ে বললো ভাইজান নাস্তা খাইতে আসেন। খালুজান আপনাকে নাস্তা খাইতে ডাকে।

আমার বিবাহের খবর শুনে তোমার খালুজানের মানসিক অবস্থা কি পুস্প? রাগত, নরমাল না হাস্যমুখি?

পুস্প ফিক করে হেসে উঠলো, মুখে কিছুই বললো না। খালুজানের মুখের দিকে সে ভয়ে তাকাতে পারে না। তিনি রাগ না হাস্যমুখি সে জানে না। জানতে চায় ও না। ওর কাছে মনে হয় খালুজান সবসময় রেগে থাকেন।

পুস্প চলে যাওয়া মাত্র সজীব ঝটপট করে গোসল সেরে ডাইনিং টেবিলে এসে অদ্ভুত সুন্দর একটা দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ালো।

ওর বাবা একটার পর একটা রুটি খাচ্ছে আর জলি একটা বাটি থেকে তরকারি তুলে দিচ্ছে। ওর মা শুধু হায় হায় করছেন।
এতো খেয়ো না সজীবের বাবা। শেষে আবার তোমার শরীর খারাপ করবে।

তুমি চুপ করো তো দিলারা। এমন টুপির মতো ফোলা পাতলা পাতলা মজার রুটি কখনো বানায় খাওয়াইছো আমাকে? এই রুটি কি দুটোতে পেট ভরে! তার ওপরে জলি আলুর দম টা যা রেধেঁছে না।
উফ আঙ্গুল চেটে পুটে খেতে ইচ্ছে করছে।

বাবা আপনার পছন্দ হয়েছে?
পছন্দ হয়েছে মানে। খুব খুব ভালো রাঁধুনী তুমি। তোমার রুটি আর আলুর দোম একশো তে একশো বিশ পেয়েছো। আমি তোমাকে নাম্বার দিলাম। হা হা হা।

ঠিক আছে বাবা। এখন থেকে রান্না টা আমি নিজের হাতে করবো।

না না বৌমা, সবসময় রান্না করতে হবে না। পুস্প আছে কেন? তুমি শখ করে মাঝে মধ্যে করো। তাহলেই হবে।

দিলারা বেগম কথা শেষ করে তাকিয়ে দেখে সজীব দাঁড়িয়ে আছে। সে স্নেহ মাখা কন্ঠে বললেন আয় বাবা, দাঁড়িয়ে কেন? দেখ বৌমা প্রথম দিন এসেই আমাদের জন্য নাস্তা বানিয়েছে। সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আয় বোস, গরম গরম খা।

সরফরাজ খান তার গমগমে কন্ঠে পুরো রুম কাঁপিয়ে বললেন, তা তোমার গুনধর পুত্রের ঘুম ভেঙেছে তাহলে। তোমার পুত্র কে জিজ্ঞেস করো, বিয়ে যে করলো তা বউকে খাওয়াবে কি?
নিজে তো সারাদিন গান্জা টেনে বেড়ায়। তা বউকেও কি গান্জা খাওয়াবে নাকি কাজকর্ম করবে।

আপনি যে কি বলেন না সজীবের বাপ! আমাদের কি টাকা পয়সার অভাব? আমার একমাত্র ছেলের বউ কে খাওয়াতে পারবো না!

সরফরাজ খান খাবার টেবিল থেকে উঠতে উঠতে বললেন, মাথা মোটা মহিলা তো এমনিতেই বলি না। তোমার আস্কারায় ছেলের আজ এই দশা।

বাবা আপনার চা।

সরফরাজ খান চা নিয়ে তার রুমে চলে গেলেন। সজীব কে দেখলেই তার মাথা গরম হয়ে যায়। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না এই গুণবতী মিষ্টি মেয়েটাকে তার অন্তঃসারশূন্য ছেলেটা কিভাবে পটালো!

বাবার এই জাতীয় কথায় এখন আর সজীবের মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা যায় না। এগুলো শুনতে শুনতে ওর চামড়া গন্ডারের চামড়া হয়ে গেছে। ওর বাবা
জুতার ব্যবসা করে এত টাকা করেছেন যে, তার একমাত্র পুত্রকে জীবিকা নিয়ে কোনো রকম চিন্তা ভাবনায় যেতে হয় নি। অর্থ কী করে মানুষকে অকর্মণ্য করে ফেলে সজীব তার জ্বলন্ত উদাহরণ। এখন তার সময় কাটে বাবার টাকা উড়িয়ে, বন্ধু বান্ধবের সাথে মদ গাঁজা খেয়ে।

সজীব নাস্তা খেয়েই বেরিয়ে গেছে। জলি শুধু অবাক হচ্ছে। দুই দিন আগেও সজীব কে সে যেভাবে চিনতো, এখন তার কাছে পুরোপুরি অপরিচিত মনে হচ্ছে। এই সজীবকে সে চিনে না। তার সজীব ছিল রোমান্টিক প্রেমিক পুরুষ।
জলি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো পুস্প মোটামুটি সব গুছিয়ে ফেলেছে।

আজকে কি রান্না হবে পুস্প?

ভাবিসাব খালুজান‌ ফ্রিজের গরুর মাংস পছন্দ করেন না। এই যে দেখছেন না পাঁচ কেজি গরুর মাংস আনছে। এই সবটাই রান্না করতে হবে। কোন আলু দেওয়া যাবে না। উনি কষানো মাংস খেতে খুব পছন্দ করেন তো। তারপর যে দুই দিন থাকবে শুধু ভাজা ভাজা করে দিতে হবে।

তাই। বাহ বেশ। তাহলে দাও আজ আমি রান্না করি।

কি যে কন না ভাবিসাব। সকালে ও আপনি নাস্তা বানাইছেন। এখন আবার আসছেন‌ রান্না করতে। আমার চাকরিটা খাইতে চান? যান গিয়া সিরিয়াল দেখেন নিজের রুমে গিয়া।

জলি মিষ্টি করে হেসে বললো, এতে তোমার চাকরি যাবে না পুস্প। সব কাজ তো তুমিই করছো। আমি শুধু রান্নাটা করবো। জলি মাজায় শাড়ির আঁচল গুজে চুলায় হাঁড়ি বসায় দিয়ে বললো দেখি পুস্প একটু বেশি করে পেঁয়াজ কুচি করে দাও তো।

বেশি পেঁয়াজ দিয়ে কি করবেন ভাবিসাব? এক বাটি পেঁয়াজ তো কাটছি।

ওটা মাংসে লেগে যাবে। বেরেস্তা করে তুলে পরে মাংসের ওপর ছিটিয়ে দিব। আর এই যে গলদা চিংড়ি কেটে রাখছো, এটা দোপেঁয়াজা করবো। তার জন্য ও পেঁয়াজ লাগবে অনেক।

খালুজানের কলাম প্রেসার আছে। একদিনে সব খাওয়ানো যাবে না গো ভাবিসাব।

আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না। একদিন খেলে কিছুই হবে না। তুমি শুধু আমাকে একটু হেল্প করো তাহলেই হবে।

দুপুরে খাবার সাজিয়ে যখন শুশুর শাশুড়ি কে নিয়ে জলি খেতে বসলো, ভেবেছিলো সজীব উপস্থিত থাকবে। হাজার হলেও আজকে ছুটির দিন।
কিন্তু দেখা গেল সজীবের কোন খবর নেই। জলিও অভিমান করে আর ফোন দেয়নি।

বৌমা তোমার তুলে দিতে হবে না। তুমিও বসে পড়ো। আমরা সব সময় নিজেরাই তুলে খাই।

বাবা আপনাদের খাওয়া শেষ হোক। তারপর বসব।

এ বাড়িতে ওসব চলবে না। বসে পড়ো।

আহা গরুর মাংসের গন্ধে আমার আজ ডাবল ক্ষুধা লেগে গেছে। পুস্প কালারটাও তো সেই হইছে রে।

খালুজান আমি রান্না করিনি। সবকিছু ভাবিসাব রান্না করছে।

দিলারা বেগম আজ খুব ভয় পাচ্ছেন। রান্না সত্যিই চমৎকার হয়েছে। মাংসটা এতো সুন্দর করে ভাজা ভাজা করেছে মেয়েটা। ইচ্ছে করছে শুধু মাংস দিয়েই খেয়ে উঠতে। চিংড়ি মাছের দোপেঁয়াজা টাও হয়েছে অসাধারণ। সজীবের বাবা যেভাবে চেটে পুটে খাচ্ছে। যদি প্রেসার বেড়ে যায়, তখন তো আরেকটা ঝামেলায় পরতে হবে।

দিলারা বেগম আমতা আমতা করে বললেন, সজীবের বাবা ডালটাও খুব ভালো লাগছে খেতে। আর‌ মাংস খেয়ো না। এবার একটু লেবু চিপে ডাল দিয়ে খাও।

দেখছো বৌমা তোমার শাশুড়ি কেমন হিংসুটে মহিলা। আমি একটু আরাম করে খাচ্ছি, সেটা তার সহ্য হচ্ছে না।

বাবা, মা কিন্তু ভুল বলেনি। আপনি খাওয়ার পর প্রেসারের ওষুধটা মনে করে খেয়ে নিবেন প্লিজ।

আরেকটা কথা বলতে চাইছিলাম।

একটা কেন মা, হাজারটা বলো।
আজ তুমি রান্না করে আমার মন জয় করেছো। আজ তুমি যা বলবে তাই ওকে। বলো কি বলতে চাও?

বাবা কাল আমার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। রেজাল্ট তো অনলাইনে দিবে। আমার তো স্মার্ট ফোন নেই। আমি সকালে একটু বের হবো রেজাল্ট আনতে।

দিলারা বেগম মুখ শক্ত করে বললেন ডাক্তার হওয়া এতো সহজ না। পরীক্ষা দিলেই সবাই চান্স পায় না।
এখন বিয়ে হয়েছে। মনোযোগ দিয়ে সংসার করো।

মা….

চলবে……
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here