মেঘে ঢাকা আকাশ পর্ব -০৮+৯

#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব_৮
কলমে রোকেয়া পপি।

শুদ্ধ মলিকে বাসায় পৌছে দিয়ে এসে দেখে বাসা থেকে ডাক্তার বেরিয়ে যাচ্ছেন। ওর বাবা ডাক্তারকে বিদেয় দিয়ে শুদ্ধ কে নিয়ে ছাদে চলে আসলেন।
তারপর একটু সময় নিয়ে জানতে চাইলেন মলি মেয়েটা কি খুব বেশি গরীব?

বাবা তার আগে বলো ডাক্তার এসেছিল কেন? কার কি হয়েছে?

কার আবার কি হবে। তোর মায়ের হঠাৎ করে প্রেশার উঠে গেছে। ডাক্তার দেখে গেলো, ওষুধ খেয়ে রেস্ট নিতে বলেছে।

ঠিক আছে বাবা আগে মাকে দেখে আসি। তারপর তোমার সাথে বসবো।

শুদ্ধ মায়ের রুমের সামনে এসে দেখলো, ঘরের দরজা-জানালা শুধু যে বন্ধু তা না— দরজা-জানালার উপর ভারী পরদা টানানো। এসি থেকে শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে। মমতা বেগম চোখের ওপর একটা হাত দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। ধবধবে সাদা বিছানার মাঝখানে নীল শাড়ি পরা ওর মাকে মনে হচ্ছে এক খন্ড সমুদ্র। শুদ্ধ দরজা সামান্য ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছে। সে নরম গলায় ডাকল, মম ঘুমাচ্ছ?

না এখনো ঘুমাইনি। ডাক্তার ঘুমের ওষুধ দিয়ে গেছে। রাতে খেয়ে একবারে ঘুমাব। এখন ঘুমালে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যাবে।
দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে এসে চেয়ারটাতে বসো।

এখন বলো তো মলির সাথে তোমার সম্পর্কটা কেমন?
শুধু বন্ধু নাকি আরো বেশি কিছু?

শুদ্ধ নিচু গলায় বলল আরো বেশি কিছু।

হোয়াট!
আমি তখনি বুঝতে পেরেছিলাম, যখন খাওয়ার পর তোমার রুমে নিয়ে সারপ্রাইজ দিলে।

মম শান্ত হও প্লিজ।
তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে। তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো আগে। তারপর না হয় শুনবে সব।

আমি ঠিক আছি। তুমি বলো।
তোমার রুম এভাবে বেলুন আর ফুল দিয়ে কখন সাজালে? আর এতো বড়ো কেকটা কখন আসলো এ বাসায়? আমি এ বাসায় গেস্ট নাকি হোস্ট?
সেটাইতো বুঝতে পারছি না।

মম তুমি এতো রিএ্যাক্ট করছো কেন? এতো রিএ্যাক্ট করার মতো তেমন কিছু তো হয়নি।

তাই নাকি! তেমন কিছুই হয়নি!

আমি তোমার বান্ধবীকে এতো সুন্দর করে এতো এতো আইটেম দিয়ে আপ্যায়ন করে দিলাম তাতে হয়নি! হোটেল সোনারগাঁও থেকে এ বাড়িতে হরেক পদের নাস্তা আসে! কেক আসে! হাউ সুইট!
কোই আমার জন্মদিনে তো কখনো এমন সারপ্রাইজ দিতে দেখলাম না কখনো!

মম বিশ্বাস করো এ বিষয়টা আমার জানা ছিল না। এগুলো সব বাবা করেছে। তবে আমার রুমে ডেকোরেশনটা আমার পারমিশন নিয়ে করেছে।

বাহ্ বাপ ছেলে মিলে চুক্তি করে সবকিছু করা হচ্ছে। আর আমি এখন বানের জলে ভেসে এসেছি! আমাকে কোন কিছু জানানোর ও প্রয়োন মনে করো না তোমরা!

মম তোমাদের জানানোর জন্য আজ মলিকে নিয়ে এসেছি। আমাদের এক্সাম ডেট দিয়ে দিছে। এক্সাম শেষ হলেই আমি চাই মলিকে বিয়ে করে এ বাড়িতে আনতে।

বাসায় বোমা পড়লেও মমতা বেগম হয়তো এত অবাক হতেন না। তিনি বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ প্রায়।
তোতলাতে তোতলাতে বললেন পরীক্ষা শেষ করেই বিয়ে করতে চাও?

জি।

খাওয়াবে কি?
বেকার ছেলেকে আমিই বা বিয়ে দিব কেন?

মম মলি স্কলারশিপ পাবে। ভার্সিটি তে এখনি কানাঘুষা চলছে। আর কমন ওয়েলথ স্কলারশিপে তো স্পাউস সঙ্গে নেওয়ার ব্যাবস্থা আছে।
আমি ও মলির সাথে দেশের বাইরে চলে যাব।

মমতা বেগমের হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেছে। ওনার মনে হচ্ছে এখনি উনি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবেন। তিনি ভাবতেই পারছেন না তার একমাত্র ছেলে কিনা এমন লোয়ার ক্লাসের মেয়েকে বিয়ে করতে চাইতে পারে!

তিনি কোন রকমে শুধু বলতে পারলেন শুদ্ধ তুমি এখন আমার সামনে থেকে যাও। আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি তোমার সাথে এ ব্যাপারে পরে কথা বলব।

মম আমি তোমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেই। তুমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো। দেখো খুব ভালো লাগবে।

তোমাকে কিছুই করতে হবে না। তুমি শুধু আমার চোখের সামনে থেকে যাও।

জলির মেডিকেল পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছে অনলাইনে। জলি সকাল থেকেই খুব অস্থির হয়ে আছে। ও যেতে পারেনি রেজাল্ট আনতে। ওর শশুর মাথায় হাত দিয়ে বলে গেছেন তুমি চিন্তা করো না মা।
আমার কাছে তোমার রোল নম্বর দিয়ে দাও। আমি তোমার রেজাল্ট নিয়ে আসব।
তোমার শাশুড়ি নিজে মূর্খ মানুষ। তাই তার চারপাশে মূর্খ মানুষদের নিয়ে বসবাস করতে বেশি পছন্দ করে। সে তোমার মূল্যায়ন বুঝবে না কখনো।

জলি জানে না ওর ভবিষ্যৎ কি হতে চলেছে। ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে অবশ হয়ে গেছে। আজ জলি বিছানা থেকে ও নামতে পারছে না। মনে হচ্ছে পায়ের পাতা এতো ভারী হয়ে গেছে, যে একটা ধাপ ও ফেলতে পারবে না।

ওর খুব অবাক লাগছে সজীবের নির্লিপ্ততা দেখে। এমন একটা দিনে ও খুব আশা করছিলো, সজীব ওকে নিজে সাথে করে নিয়ে রেজাল্ট আনতে যাবে।
অথচ প্রতিদিনের মত স্বাভাবিক ভাবেই নাস্তা খেয়ে বের হয়ে গেল।

গতকাল শাশুড়ির কথা শুনে এতো বেশি মন খারাপ ছিল যে, রাতে ও খাবার টাও খায়নি। কান্না করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। তারপরও সজীব ওকে কোন ছাড় দেয়নি। সে তার চাহিদা পূরণ করে নাক ডেকে ঘুমিয়েছে।

ও একটা বার চোখ খুললেই দেখতে পেতো, যে মেয়েটা ওকে এতো ভালোবেসে নিজের আপনজন সবাইকে পর করে এই মানুষটির হাত ধরে চলে এসেছিল একটু সুখের আশায়, সেই মেয়েটি না ঘুমিয়ে চোখের পানিতে বুক ভেজাচ্ছে।

সরফরাজ খান বাসায় এসেই হৈচৈ ফেলে দিলেন। কোথায় সজীবের মা , এদিকে আসো। আজ আমাদের খুব বেশি সুখের দিন।
দেখো তোমার তিনবার ইন্টার ফেল করা ছেলের বউ ডাক্তারি পড়বে। আজকে পুরা মহল্লার মানুষ জানবে আমার ছেলের বউ একজন হবু ডাক্তার। সবার বাসায় মিষ্টি দিয়ে আসো আর সাথে খুশির খবরটাও।

দিলারা বেগম বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে দেখলেন একের এক এক মিষ্টির প্যাকেট এনে ড্রাইভার সামনের রুম বোঝাই করে ফেলছে। তিনি মুখ অন্ধকার করে নিজের রুমে চলে গেলেন।

জলি রুম থেকে তার শশুরের সব কথা শুনতে পাচ্ছে। আনন্দ অশ্রুতে ওর চোখ দুটো ছলছল করছে। তারপরও জলি বিছানা থেকে নামতে পারছে না।

সরফরাজ খান দরোজায় টোকা দিয়ে হালকা কেশে বললেন, মারে ভেতরে আসব?

বাবা কি বলছেন! আপনার অনুমতি লাগবে কেন? আসুন আসুন।

সরফরাজ খান হাতে করে একটা পিরিচে দুটো মিষ্টি নিয়ে এসেছেন।
জলির সামনে এসে বললেন, হা কর মা। আগে মিষ্টি মুখ কর।

সজীব ওর মায়ের ফোন পেয়ে আর দেরি করেনি। সাথে সাথে চলে এসেছে বাসায়। বাসায় এসে অদ্ভুত সুন্দর একটা দৃশ্য দেখে ও থমকে দাঁড়িয়ে গেছে।
ও দেখলো ওর বাবা পরম মমতায় জলিকে মিষ্টি খাওয়ায় দিচ্ছে। জলির চোখ ভর্তি পানি আর ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। ঠিক যেন এক স্বর্গীয় দৃশ্য!

জলিও ওর শশুর কে মিষ্টি খাওয়ায় দিচ্ছে।
শরাফত আলীর চোখে ও পানি। তিনি হাতের তালুতে চোখ মুছে একটা প্যাকেট জলির হাতে ধরিয়ে দিলেন।

এটা কি বাবা?

খুলে দেখ পছন্দ হয় কিনা। এটা তোর এতো সুন্দর রেজাল্টের ছোট্ট একটা উপহার।

জলি প্যাকেট খুলে দেখে ভেতরে একটা আইফোন।

ওর চোখ দুটো এখন বাঁধ ভাঙা নদীর মতো জল উপচে পড়ছে।

সরফরাজ খান জলির চোখের পানি আলতো করে মুছে দিতে দিতে বললেন, কিরে শুধু চোখের পানি ফেললেই হবে?
এই বুড়ো ছেলেটার আশির্বাদ নিবি না।

জলি লজ্জা পেয়ে পায়ে হাত ছোঁয়াতে যাওয়ার আগেই তিনি টেনে দাঁড়া করিয়ে দিয়ে বললেন থাক থাক লাগবে না মা। পায়ে হাত দেওয়ার কোনো দরকার নেই। তোকে নিজের অজান্তেই কখন থেকে তুই বলা শুরু করছি, নিজেও জানি না। আজ থেকে তুই আমার মেয়ে। তোর জায়গা এই বুকে। এখন থেকে তোর যা দরকার হবে তুই নিসঙ্কোচে এই বুড়ো ছেলেটাকে বলবি।

চলবে….#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব_৯
কলমে রোকেয়া পপি

তোকে নিজের অজান্তেই কখন থেকে তুই বলা শুরু করছি, নিজেও জানি না। আজ থেকে তুই আমার মেয়ে। তোর জায়গা এই বুকে। এখন থেকে তোর যা দরকার হবে তুই নিঃসঙ্কোচে এই বুড়ো ছেলেটাকে বলবি।

জলি আশ্চর্য হয়ে দেখলো প্যাকেটে শুধু মোবাইল ফোন না, বেশ বড়ো সরো প্যাকেট। ভেতরে দুটো শপিং ব্যাগ। খুলে দেখে চমৎকার দূই সেট রেডি-থ্রিপিস।

বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে বাবার দিকে চেয়ে জলি লজ্জায় লাল হয়ে বললো, বাবা এতো কিছু কি দরকার ছিল?

দরকার আছে জন্য তো আনলাম। ডাক্তারি পরবি, ভালো পোশাক দরকার না, বাইরে যাওয়ার জন্য?
কেন রে তোর কালার পছন্দ হয়নি?
পছন্দ না হলে চেঞ্জ করতে পারবি।

খুব খুব পছন্দ হয়েছে বাবা।

তাহলে একটা থ্রিপিস এখন পর। পরে আমার জন্য এক কাপ চা বানিয়ে আন।
আর বিকেলে সজীবের সাথে শপিং এ যাবি। যা যা প্রয়োজন সব কিনে আনবি তোর নিজের পছন্দে।
আমি টাকা রেখে যাবনি।

সজীবের মাথা কাজ করছে না। সে জলির রেজাল্ট আর বাবার এতো খুশি হওয়াটা মোটেও সহজ ভাবে নিতে পারেনি। জলির সাথে দেখা না করেই সে আবারো বাইরে চলে গেছে তার বাইক নিয়ে।

জলি থ্রিপিস দুটো বিছানায় ছড়িয়ে দিয়ে বসে আছে। খুব সুন্দর দুটো সেটই । গায়ে আড়ং ট্যাগ দেওয়া। কালো আর হলুদ কমলার কম্বিশনে একটা। আরেকটা নেভি ব্লু ও বেগুনি। দুটোতেই হাতের কাজের এ্যাপ্লিক করা। একটা সারে তিন হাজার। আরেকটা পাঁচ হাজার দুই শত। এতো দামী ব্রান্ড থ্রিপিস ও কখনো পরেনি। ওর সত্যিই খুব লজ্জা লাগছে, সাথে আনন্দও লাগছে। নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে উঠছে। সে বুঝতে পারছে। না। এত সুখী আল্লাহ তাকে কেন বানিয়েছেন! এই সুখ তার কপালে সইবে তো।

জলি কালো আর কমলা থ্রিপিসটা পরে ভাবলো, নতুন জামার সাথে হালকা একটু সাজাটা জরুরী। ও গাঢ় করে চোখে কাজল দিয়ে কপালে খুব ছোট একটা কালো টিপ পরলো। ঠোঁটে হালকা পিংক কালারের লিপগ্লস দেওয়ার পর, ওর নিজের কাছেই মনে হচ্ছে খুব বেশি সাজুগুজু করে ফেলেছে। এতো বেশি মানিয়েছে যে রুম থেকে বের হতেই এখন লজ্জা লাগছে।

ও কপাল থেকে টিপটা তুলে আয়নায় লাগিয়ে রেখে চা বানাতে গেলো।
ইচ্ছে করে তিন কাপ চা বানালো। উদ্যেশ্য বাবা মার সাথে বসে চা খেতে খেতে মেডিকেল ভর্তির পরিকল্পনাটা করে ফেলা।

কিন্তু চা নিয়ে রুমে টোকা দেওয়ার আগ মুহূর্তে শাশুড়ির কিছু কথা কানে এসে লাগাতে ওর আনন্দিত মুখটা এক নিমেষে আনন্দ উধাও হয়ে রক্তশূন্য ফ্যাকাসে হয়ে গেল।

দিলারা বেগম বেশ উঁচু গলায় বলছেন, আমার বাড়িতে থেকে এ বাড়ির বউ‌ এক পাও বাড়ির বাইরে ফেলতে পারবে না, এটাই আমার শেষ কথা সজীবের বাপ। আপনি এতো বেশি উতলা হয়েন না সজীবের বাপ। এই মেয়ে ডাক্তার হলে কোনদিন ও আমার সজীবকে এক পয়সাও দাম দিবে না।

জলি বুঝতে পারছে না ও কি চা নিয়ে ভেতরে ঢুকবে নাকি ফেরত যাবে। খুব ইতস্তত করতে করতে ও শেষ পর্যন্ত দরোজায় হালকা টোকা দিয়ে বললো, বাবা চা এনেছি। ভেতরে আসব?

আয় মা। আমার পাশে এসে বোস।

জলি সাইড টেবিলে চায়ের ট্রে নামিয়ে রেখে শশুর শাশুড়ির হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে শশুরের পাশে বিছানায় এসে বসলো।

দিলারা বেগম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন আমি কি তোমার কাছে এখন চা চেয়েছি?
যখন তখন অসময়ে চা খাওয়ার অভ্যাস আমার নেই। বাপের বাড়ি থেকে কি আসার সময় দুধ চা পাতা সাথে করে আনছো নি? এতো বেশি দুধ, পাতা দিয়ে দিনে তিন চার বার চা বানালে তো আমাগো ফকির হইতে দুই দিন ও লাগবো না।

জলির চোখ দুটো ছলছল করছে। কেমন যেন একটা জ্বালা জ্বালা ভাব। ও খুব চেষ্টা করছে চোখের পানি চোখে শুকিয়ে ফেলতে। কিন্তু অবাধ্য চোখ দুটো বারবার ভিজে উঠতে চাইছে।

সরফরাজ খান শক্ত করে এক ধমক লাগিয়ে দিলেন দিলারা বেগম কে। তুমি আমার সামনে বসে আমার মেয়েকে এসব কথা শোনাও! দিন দিন তোমার স্পর্ধা দেখে অবাক না হয়ে পারছি না। দুধ চা পাতা কি তুমি তোমার বাপের বাড়ি থেকে এনেছিলে?
আমি চা বানাতে বলেছি যেখানে, সেখানে তুমি এতো বড়ো কথা কিভাবে বলো?

দিলারা বেগম চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে রুমের বাইরে চলে গেলেন।
কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে উচ্চ স্বরে বলতে থাকলেন, সব আমার কপালের দোষ। এতো বছর ধরে এ সংসারে আছি। কোনদিন তো বাপের বাড়ি তুলে খোটা দেয়নি। দুই দিন হলো না এ বাড়িতে ডায়নিটা পা রেখেছে।
আসতে না আসতেই আমার সংসারটা দোষখ খানা বানিয়ে ছেড়েছে।

মারে কিছু মনে করিস না। তোর শাশুড়ি অশিক্ষিত মহিলা। কোথায় কি বলতে হয় কিছুই জানে না। ওর কথা ধরিস না মা। তোর এই বুড়ো বাপ সবসময় তোর সাথে আছে।

জলি আলতো করে চোখের পানি মুছে ধরা গলায় বলল আমি কিছু মনে করিনি বাবা।

তোর চা ঠান্ডা হচ্ছে মা। চা খা।

জলির এতো দুঃখের মাঝে ও হাসি পাচ্ছে। এতো কিছু ঘটে গেলো, তারপরও ওর শশুর চা খেতে বলছে ওকে!

সরফরাজ খান দুপুরের খাবার একাই খেলেন। দিলারা বেগম রুম থেকে বের হলেন না। জলি নিজের হাতে সব খাবার তুলে দিলেও, সে খেতে বসলো না। সরফরাজ খান বারবার বলেছিলেন, মারে তুই আমার সাথে বসে দুটো খেয়ে নে। ঐ মহিলার যখন খিদে পাবে খাবে। ওর জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।

জলি বিনিত ভাবে শশুরের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, বাবা আপনি খান। আমি বসছি আপনার সাথে। মাকে নিয়ে একসাথে খাবো আমরা। আপনি চিন্তা করবেন না।

সরফরাজ খান দোকানে যাওয়ার আগে পঁচিশ হাজার টাকার একটা বান্ডিল জলির রুমে রেখে গেছেন। বলে গেছেন সজীবকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলেছি। ও আসলে ওকে সাথে নিয়ে বসুন্ধরায় চলে যাস। তোর যা মন চায় তাই কিনবি।
টাকার দিকে তাকাবি না মা। ছেলেটা তো টাকা ওড়ায়, তাই সাহস করে এর বেশি দিলাম না।

পড়াশোনার জন্য যা লাগবে আমি সাথে গিয়ে কিনে দিব ভর্তির পর। আজ তুই পোশাক আর কসমেটিকস কিন।

বাবা আমার আর কিছুই লাগবে না। আপনি শুধু আমার ভর্তির ব্যাবস্থাটা করে দিন। আমি বিলাসী জীবন চাই না। আমি শুধু পড়তে চাই।

রাত এগারোটা বাজে। ক্ষুধায় জলির শরীর গুলাচ্ছে।
সকালে নাস্তা খাওয়ার পর সারাদিনে এক পিস মিষ্টি ছাড়া ওর পেটে আর কিছুই পরেনি।
দুপুরে শাশুড়ি কে দুই দুই বার ডাকতে গিয়েছিল। কিন্তু দিলারা বেগম এমন একটা ভাব নিয়ে সিরিয়াল দেখছিলেন, যেন তার সামনে জলি নামে কেউ নেই, সে কারো কথা শুনতেই পাচ্ছেন না।

তিনটার পর পুস্প কে ডেকে রুমে খাবার নিয়ে খেয়েছেন। জলি সবকিছু দেখে ও না দেখার ভান করে ছিল। ওর আর খেতে ইচ্ছে করেনি। ভেবেছিল সজীব আসলে একসাথে খেয়ে শপিং এ যাবে। কিন্তু পরপর তিন বার ফোন দেওয়ার পর তিনবারই ফোন কেটে দেওয়াতে জলির আত্মসন্মাণ বোধ বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো আরেকটি বার ফোন দিতে।

জলি কোথায় যেন পড়েছিল,
প্যাচা বৃত্তি সম্পর্কে।
এদের কাজকর্ম সবই রাতে। গৃহে প্রত্যাবর্তন করতে হবে রাত এগারটা থেকে বারটার দিকে যখন বেশিরভাগ মানুষ শুয়ে পড়ে।

রাত সারে এগারোটা বাজার পরও যখন সজীবের টিকিটার ও কোন খবর নেই, তখন ও সজীব কে প্যাচার সাথে তুলনা করে একা একাই ঠোঁট টিপে হাসছে।

সজীব ঘরে ঢুকলো ঠিক ঘড়ির কাটায় যখন সোয়া বারোটা। বাসায় সবাই শুয়ে পড়েছে অনেক আগেই। পুস্প মূল দরোজা‌ খুলে দিয়ে সজীবকে ধরে এনে দরোজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলো

জলি দেখলো সজীব ঠিক মতো পায়ের ধাপ ফেলতেও পারছে না। মুখ দিয়ে ভকভক করে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ হয়ে গেছে। ও জানে আজ রাতটা ওর জন্য কতোটা ভয়ঙ্কর। ঠিক বাসর রাতের মতোই কাল রাত…

চলবে….

অনুগ্রহ করে কমেন্ট সেকশনে জানাবেন কেমন লাগলো। আপনার একটি গঠনমূলক মন্তব্য আমার লেখায় অনুপ্রেরণা যোগাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here