যেদিন তুমি এসেছিলে ২ পর্ব -২৪+২৫

#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#সিজন_টু
#পর্ব_২৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
অর্ষার বিয়ে ঠিক হওয়ার খবর আহনাফের কান পর্যন্ত চলে এসেছে। মিজানের থেকে শুনেছিল ওর বাবার অসুস্থ হওয়ার কথা। এর মাঝে বিয়ে এলো কোত্থেকে? অর্ষা অফিসে আসছে না। ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। মিজান একবার ফোন করেছিল। প্রথমবার রিসিভ করলেও পরে আর সে কারও ফোনেরই কোনো রেসপন্স করেনি। আর ঐ প্রথমবারেই আহনাফ মিজানের থেকে জানতে পেরেছিল, অর্ষার বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাই সে আর অফিসে আসবে না। চারদিকে সে অন্ধকার দেখছিল। সবকিছু কেমন যেন হাতের নাগালে এসেও বাইরে চলে যাচ্ছে। আহিলকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, অর্ষা বিয়ের ব্যাপারে তাদেরকে কিছুই জানায়নি। আহনাফ যে সকালকে কিছু জিজ্ঞেস করবে সেটাও পারছে না। সকালও রাফিকে পড়াতে আসছে না তিনদিন ধরে। আহনাফের অবস্থা বুঝতে পেরে হাসিব আহিলকে নিয়ে ওর বাকি ফ্রেন্ডদের সঙ্গে দেখা করতে যায়। যা করার সবার সাহায্য নিয়েই করতে হবে।

সবাই গোল হয়ে বসে আছে। আহনাফ নেই এখানে। সে গেছে অর্ষার সাথে কথা বলতে। আহিলের সঙ্গে হাসিবকে দেখে লামিয়া বলে,

“এই মুলাকে কোত্থেকে নিয়ে এলি?”

হাসিব ভ্রুঁ কুঁচকে গম্ভীর হয়ে বলে,

“আমি মুলা না। আমি হাসিব।”

“হাসিব হোন অথবা পাতিহাঁস হোন তা নিয়ে তো মাথা-ব্যথা নেই। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কী করছেন?” বলল রেশমি।

হাসিব বিস্ময়ে ঢোক গেলে। আহনাফের বলা কথা মনে পড়ে যায়। এরা যে সাংঘাতিক ফাজিল তার একটু-আধটু বিশ্লেষণ সে আগেই জেনেছে। দমে গেলে চলবে না। বন্ধুর জীবন-মরণের ব্যাপার। সে একটু নড়েচড়ে বসে বলল,

“আপনাদের হেল্প প্রয়োজন।”

“চিনি না জানিনা, হেল্প করব কেন? মহা মুশকিল তো! আমরা কি হেল্প সেন্টার খুলে বসেছি?” বিরক্ত হয়ে বলল লামিয়া।

আহিল বলল,

“উনার জন্যই সবাইকে দেখা করতে বলেছি। উনি আহনাফ স্যারের বন্ধু।”

“আমাদের কী দরকার?”

“ঐযে বললাম হেল্প!” বলল হাসিব।

এরপর দীর্ঘ আলোচনা করার ভঙ্গিতে বলল,

“আমার বন্ধু আহনাফ আপনাদের ফ্রেন্ড অর্ষাকে ভীষণ ভালোবাসে। অর্ষাও আহনাফকে ভালোবাসে; যদিও এটা সে স্বীকার করতে চায় না এখন আর। মাঝখানে কিছু ভুল বুঝাবুঝি হওয়ায় অর্ষা অভিমান করে ছিল। কিন্তু সমস্যা আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। অর্ষার বিয়ে ঠিক হয়েছে অন্য জায়গায়।”

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আশিক বিস্মিতকণ্ঠে বলল,

“অর্ষার বিয়ে ঠিক হয়েছে আর আমরা জানিনা?”

“আমিও জানতাম না।”

“আপনি নিশ্চয়ই মিথ্যা বলছেন। নয়তো এতকিছু হয়ে গেছে আর আমরা জানব না তা কী করে সম্ভব?” বলল জুঁই।

“আমি কোনো মিথ্যা বলছি না। আপনারা অর্ষাকে জিজ্ঞেস করলেই সত্যিটা জানতে পারবেন।”

লামিয়া বলল,

“অবশ্যই জিজ্ঞেস করব। আপনার কথায় অন্ধবিশ্বাস করব নাকি।”

আহিল জিজ্ঞেস করল,

“আপনি আমাদের থেকে কী হেল্প চাচ্ছেন ভাইয়া?”

“আমি চাই, এই বিয়েটা ভাঙতে। আহনাফ এবং অর্ষাকে এক করতে হবে।”

রেশমি বলল,

“এটা কি মগের মুল্লুক পেয়েছেন নাকি বালতির মুল্লুক? অর্ষা নিজে বিয়েতে রাজি হলে আমরা বিয়ে ভাঙব কেন?”

“অর্ষা যেহেতু আহনাফকে ভালোবাসে, সেহেতু অবশ্যই সে মন থেকে রাজি না।”

“লে! মন থেকে রাজি না তো কি মাথা থেকে রাজি?” বলল লামিয়া।

হাসিব বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। তবুও ধৈর্য নিয়ে বলল,

“আমার কথা বিশ্বাস না হলে অর্ষার থেকে শুনে নেবেন। আপনারা ওর ফ্রেন্ড, ওর কাছের মানুষ। ও কোনটা সত্যি বলছে আর কোনটা মিথ্যা বলছে সেটা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারবেন। তখন তো হেল্প করতে আপত্তি নেই?”

দিদার বলল,

“অর্ষা যদি সত্যিই আহনাফ ভাইয়াকে ভালোবেসে থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা আপনাকে হেল্প করব। তবে তার আগে সত্যতা যাচাই করব।”

“অবশ্যই।”

লামিয়া মাঝখানে ফোঁড়ন কেটে বলল,

“এক মিনিট। হেল্প করলে আমরা কী বেনিফিট পাব?”

“উম! সবাইকে একটা করে বিড়াল গিফ্ট করব।”

লামিয়া চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,

“কেন রে ভাই! আপনি কি বিড়াল কমিটির চেয়ারম্যান?”

জুঁই লামিয়াকে থামিয়ে বলল,

“আরে থাম! আগে সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নিই তারপর বেনিফিট নিয়ে ভাবা যাবে। আর তার কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে আহনাফ ভাইয়ের সঙ্গে অর্ষার বিয়ে হলে সে হবে আমাদের বেয়াই। বেয়াইকে কী করে লুট করতে হয় তা তো আর আমাদের অজানা নয় বেবি।”

হাসিব ঢোক গিলে মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়ছে।
.
.
আহনাফকে বাড়িতে দেখে অর্ষা চমকে যায়। সে তরকারি কাটছিল। সেগুলো একপাশে সরিয়ে রেখে আহনাফের কাছে আসে। আহনাফ তখন ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

“আপনি বাসায় এসেছেন কেন?” ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে অর্ষা।

রুহুল তখন বাইরে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হচ্ছিল। আহনাফকে দেখে অর্ষাকে জিজ্ঞেস করে,

“উনি কে?”

অর্ষা স্বাভাবিক শান্ত ভঙ্গিতে বলল,

“অফিসের স্যার।”

রুহুল সালাম দিয়ে বলল,

“দাঁড় করাই রাখছিস ক্যান? বসতে দে। আমি বাজার থেকে আসি। স্যার বসেন, খাওয়া-দাওয়া করে যাইয়েন।”

রুহুল চলে যাওয়ার পর আহনাফ ক্ষুব্ধ হয়ে বলল,

“আমি এসব কী শুনছি অর্ষা?”

অর্ষা ভাবলেশহীন হয়ে বলল,

“কী শুনেছেন?”

“তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে?”

“হুম।”

“এখন নিশ্চয়ই আমায় এটা শুনতে হবে না যে, তুমি এই বিয়েতে রাজি।”

“শুনতে হবে কেন? আমি তো রাজিই।”

আহনাফের মেজাজ চড়ে যায়। সে চিৎকার করে বলে,

“ফাইজলামি শুরু করছ তুমি? ভালোবাসবে একজনকে। আর বিয়ে করার সময় পরিবারের বাধ্য মেয়ে হয়ে যাবে। তাদের পছন্দেই বিয়ে করবে।”

অর্ষা নিশ্চুপ। আহনাফ রাগ সামলানোর চেষ্টা করে গলার স্বর নামিয়ে বলল,

“প্লিজ অর্ষা! অনেক তো হলো। এখনও কি আমায় ক্ষমা করা যায় না? আমি জানি, তুমি আমাকে ভালোবাসো। তাহলে কেন অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইছ বলো?”

অর্ষা এবারও নিশ্চুপ। আহনাফ আবার রেগে বলে,

“চুপ করে আছো কেন? একটা কুকুরও যদি সাথে সাথে ঘুরে মানুষের তো তার প্রতিও মায়া হয়। আর আমি যে এমন পাগলের মতো ঘুরছি, তোমার একটুও মায়া হয় না আমার প্রতি? এতটা নিষ্ঠুর হয়ে গেছ তুমি।”

“আপনি প্লিজ চলে যান!”

“চলে যাব মানে কী? আমার প্রশ্নের উত্তর চাই।”

“কোনো উত্তর নেই আমার কাছে।”

আহনাফ অর্ষার দু’কাঁধে হাত রেখে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,

“আমার দিকে তাকাও অর্ষা। আমার দিকে তাকিয়ে একবার বলো ভালোবাসো না আমায়?”

অর্ষা তাকায় না। শক্ত হয়ে থাকে। আহনাফ বলে,

“চুপ করে থাকবে না। উত্তর দাও।”

অর্ষা নিরুত্তর। আহনাফ ছেড়ে দিল ওকে। বলল,

“বেশ! তোমায় কিছুই বলতে হবে না। যা বলার তোমার বাবা-মাকে আমি বলছি।”

আহনাফ ভেতরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। পেছন থেকে হাত টেনে ধরে অর্ষা। ভেতর থেকে নিজেকে শক্ত করে বলে,

“আপনি এক্ষুণী বাড়ি থেকে চলে যাবেন।”

অর্ষার বলার ধরণে এমন কিছু ছিল যা আহনাফকে ক্ষত-বিক্ষত করে। সে ধরে রাখা হাতের দিকে তাচ্ছিল্যর দৃষ্টিতে তাকায়। হাত ছেড়ে দেয় অর্ষা। আহনাফের বাকশক্তি লোপ পেয়েছে। কিছু বলল না সে। নিরবে প্রস্থান করল অর্ষার বাড়ি।
#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#সিজন_টু
#পর্ব_২৫
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________________
ভালোবাসা হলো গোলাপের মতো। আর কাঁটা হচ্ছে দুঃখ-কষ্ট। ভালোবাসা পেতে হলে কষ্টকেও বরণ করার ধৈর্য রাখতে হবে। অর্ষাও সেই ধৈর্য ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল। প্যাটিস বসে আছে তার কাছে। আজকাল সকালের থেকে প্যাটিস তার আশেপাশেই বেশি থাকে। আগে দূর দূর করলেও এখন অর্ষা কিছুই বলে না। সে যেন হয়ে গেছে এখন নির্জীবতার উপমা।

দরজার কাছ থেকে তখন হুংকারের স্বরে ভেসে এলো,

“অর্ষা!”

অর্ষা চকিতে তাকিয়ে দেখল গ্যাঞ্জাম পার্টির সবাই এসেছে। সাথে মুনও আছে। কিন্তু প্রত্যেককেই দেখে মনে হলো তারা ভীষণ রেগে আছে। সে বসা থেকে উঠে এগিয়ে গেল। হেসে জিজ্ঞেস করল,

“কেমন আছিস তোরা?”

মুন রাগীস্বরে বলল,

“আমরা কেমন আছি তা তোর জানতে হবে না। তোর খবরখানা আগে বল আমায়!”

“আমার আর কোন খবর?”

লামিয়া বলল,

“তোর নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে?”

অর্ষা ভারী দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,

“হুম!”

“আশ্চর্য! তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে অথচ এই খবরটা তুই আমাদের কাউকে জানালি না? কেন?”

“আহা! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কথা বলবি? ভেতরে এসে আগে বোস।”

ওরা সবাই ভেতরে গিয়ে বসল। অর্ষা বলল,

“আমি চা নিয়ে আসি।”

রেশমি হাত টেনে ধরল,

“চা পরে খাওয়া যাবে। আগে আমাদের সাথে কথা বল। বোস এখানে।”

অর্ষা মিথ্যে হাসি দিয়ে বলল,

“তোরা এত সিরিয়াস হয়ে আছিস কেন? বিয়েটা তো এখনও হয়নি। পরে তোদের অবশ্যই জানাতাম।”

“হয়েছে। জানিয়ে একদম উদ্ধার করতি আমাদের। তোকে কিছু প্রশ্ন করব। সত্যি সত্যি উত্তর দিবি।”

“তোদের আবার মিথ্যা বললাম কবে?”

“বলিসনি। তাই আশা করব, আজও বলবি না। তুই এই বিয়েতে মন থেকেই রাজি?” জানতে চাইল জুঁই।

“এই প্রশ্ন করার মানে কী?”

আহিল বলল,

“মানে আছে অর্ষা। বিয়ে তো প্রতিটা মেয়ের জীবনেই আলাদা একটা স্বপ্ন। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হোক, অথবা লাভ ম্যারেজ হোক; প্রতিটা মেয়েই তার পছন্দমতো বিয়ে করে। খুশির খবরটা বন্ধুদের দেয়। তুই তো তোর জব হওয়ার কথাটাও আমাদের সেদিনই জানিয়ে দিয়েছিলি। আর সেখানে বিয়ের মতো এত বড়ো একটা ব্যাপার ঘটে গেল, অথচ তুই একদম নিরব, নিশ্চুপ। কেন? তোর মাঝে তো আমরা কোনো আনন্দ দেখতে পাচ্ছি না।”

“ধুর! বাদ দে তো।”

মুন বলল,

“বাদ দিতে আসিনি। আমরা জানতে এসেছি। তুই এই বিয়েতে মন থেকে রাজি কিনা বল।”

“মন থেকে রাজি কি রাজি না তাতে কী আসে যায়? এই বিয়েটা আমায় করতেই হবে।”

“কেন? মন থেকে না চাইলে তুই কেন করবি এই বিয়ে?”

“তোরা বুঝবি না।”

দিদার বলল,

“আমরা বাচ্চা নই অর্ষা। বুঝিয়ে বল আমাদের। শেয়ার কর সব।”

“শেয়ার করার মতো কিছু নেই।”

“তুই আমাদের থেকে কিছু লুকাচ্ছিস।”

“কী লুকাব?”

লামিয়া অর্ষার কাঁধ ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

“তুই আহনাফ ভাইয়াকে ভালোবাসিস?”

দৃষ্টি নামিয়ে নিয়েছে অর্ষা। ওর নিরবতাই ওর উত্তর। আশিক বলল,

“আহনাফ ভাইয়াকে ভালোবাসলে কেন অন্য কাউকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলি দোস্ত? মানুষটা তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে।”

“আমার কিছু করার নেই।”

“কিন্তু আমার আছে!”

কথাটা ভেসে এলো দরজার বাইরে থেকে। সবাই সেদিকেই তাকাল। ওমর রহমান আর সেলিনা বেগম বাহির থেকে ভেতরে এলো। গ্যাঞ্জাম পার্টি অর্ষার রুমে আসার আগেই মুনকে নিয়ে তাদের রুমে গিয়েছিল। সবটা বলেনি। শুধু বলেছিল, অর্ষা বিয়েতে মন থেকে রাজি নয়। সত্য মিথ্যা যাচাই করার জন্য এবং নিজ কানে তাদের শোনানোর জন্য ওরাই তাদেরকে ঘরের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল।

অর্ষা চমকে উঠে দাঁড়ায়। ওমর রহমান বললেন,

“রুহুল যখন বলল, তোফায়েল তোকে পছন্দ করে। বিয়ে করতে চায়। তুইও রাজি। তখন আমি ভেবেছিলাম, তুইও হয়তো তোফায়েলকে পছন্দ করিস। কিন্তু তোর মনের কথাটা বুঝতে পারিনি। আজ যদি ওরা না আসতো, তাহলে তো অনেক বড়ো ভুল হয়ে যেত মা। আমাদের জন্য আর কত ত্যাগ করবি তুই?”

অর্ষা মাথা নিচু করে রেখেছে। তার কাছে জবাব নেই। ওমর রহমান রুহুলকে ফোন করে তৎক্ষণাৎ বাড়িতে আসতে বললেন। সেলিনা বেগমকে বললেন ওদের জন্য নাস্তা-পানির ব্যবস্থা করতে। তারপর তিনি গিয়ে বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসলেন। রুহুলের বাড়ি আসতে আসতে প্রায় দশ মিনিট লেগে গেছে। সে আরেকটা চেয়ারে বসে বলল,

“এত জরুরী তলব কেন আব্বা?”

ওমর রহমান নির্লিপ্তস্বরে বললেন,

“বাড়ি ছেড়ে চলে যা।”

রুহুল বিস্ময় নিয়ে বলে,

“এসব কী বলো আব্বা? তোমার শরীর ঠিক আছে।”

“শরীর, মাথা সবই ঠিক আছে।”

রুহুল জোরে ডাকল,

“মা! অর্ষা?”

সেলিনা বেগম, অর্ষা, গ্যাঞ্জাম পার্টি সবাই রুহুলের ডাক শুনে বেরিয়ে এলো। রুহুল বলল,

“আব্বা এসব কী বলতাছে? তার কি মাথায় সমস্যা হইছে?”

সেলিনা বেগম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। ওমর রহমান বললেন,

“তোকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছি।”

“বাড়িতে আনার জন্য কান্নাকাটি করো। এখন আবার বলো বাড়ি থেকে চলে যেতে। পাগল-টাগল হয়ে গেছ নাকি? আর হইছেটা কি সেটা তো বলবা কেউ?”

“তখন তো বুঝিনি তুই কতটা স্বার্থপর। তুই চলে যা বাড়ি থেকে। আমার মেয়েকে তোফায়েলের সঙ্গে বিয়ে দেবো না।”

“মানে? কেন আব্বা? হঠাৎ কী হলো?”

“অর্ষা যাকে চাইবে তার সাথেই ওর বিয়ে হবে।”

“ও এই বিয়েতে রাজি।”

“তুই বাধ্য করেছিস ওকে। তোকে থাকতে হবে না আমাদের সঙ্গে। চলে যা।”

“যাব। কিন্তু অর্ষার বিয়ে তোফায়েলের সঙ্গেই হবে। ও আমার বোন। আমার কথাই শুনবে।”

“ও আমাদের মেয়ে। তোর বোন হয় এই কথা আর বড়ো মুখে বলিস না। বোন কী চায় সেটা বুঝিস না?”

রুহুল নিশ্চুপ। বাবা বললেন,

“সাফ সাফ যা বলার বলে দিয়েছি। তোফায়েলের সঙ্গে অর্ষার বিয়ে কিছুতেই হবে না।”

“কার সাথে ওর বিয়ে হবে, না হবে আমি বুঝব। ও আমার বোন। চলে গেলে ওকে নিয়েই যাব।”

অর্ষা বলল,

“আমি তো তোমার সাথে যাব না ভাইয়া।”

“তুইও পল্টি নিলি?”

“একদম না। বিয়ের সাবজেক্ট তো পরের ব্যাপার। বাবা-মাকে রেখে আমি কখনও-ই তোমার সাথে যেতাম না।”

“আচ্ছা বেশ! কিন্তু তোফায়েলকে বিয়ে করতে তো কোনো আপত্তি নাই তোর?”

ওমর রহমান অর্ষার হাত ধরে বললেন,

“আমার মেয়ে আমার সাথে থাকবে। তোফায়েলের সঙ্গে ওর বিয়ে দেবো না আমি।”

মৌনতা সম্মতির লক্ষণ। রুহুল বুঝে যায়, অর্ষা বাবার কথার বিরুদ্ধে যাবে না। তোফায়েলকেও বিয়ে করবে না। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। প্রচণ্ড জিদ্দে চেয়ারে লা’ত্থি মেরে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here