প্রাপ্তি পর্ব -১১ ও শেষ

#প্রাপ্তি_____(১১)
_____🍂_______________________________

বিয়ে হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী জীবনের চিরস্থায়ী পবিত্র বন্ধন। আলহামদুলিল্লাহ্। নববধূ রুপে হেমন্তের সামনে তার স্বদ‍্য বিবাহিত বউ। হুমায়রা, হুমায়রা পাখি। সামাজিক, ধর্মীয় স্বীকৃতি তবে পেয়েই গেল তারা। আলহামদুলিল্লাহ্। হেমন্ত পলকহীন তার পাখির দিকে তাকিয়ে আছে। যেন কত দিনের তৃষ্ণা নিবারণ করছে। হেমন্তের অনিমেষ দৃষ্টি হুমায়রাকে অস্ব’স্তিতে ফেলছে। নতুন মানুষটার এমন বেহায়া নজর যেকোনো রমনীর ভেতর তোলপাড় করে দিতে যথেষ্ট। আরও যদি হয় স্বামী, তাও বাসর ঘরে। পুরো ব‍্যপারটাই অস্বস্তি আর এক গাদা লজ্জায় মোড়ানো। রুম জুরে পিনপতন নিরাবতা বিরাজ করছে। দুই নর-নারীর শ্বাস-প্রশ্বাসের নিভু আওয়াজ ভেসে আসছে শুধু। নিরবতার অবসান ঘটিয়ে হেমন্ত বিছানার এক কোন ঘেঁষে বসলো। হালকা কেশে নিজের অস্তিত্ব জানান দিল। সে যে প্রেয়সীর নিকটে অবস্থান করেছে। বলল,
“দেখি এদিকে তাকাও? একটু ভালো করে দেখি।”

হুমায়রা বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চোখ তুলে হেমন্তের পানে তাকালো। হেমন্ত নামক মানুষটার সবকিছুই কেমন অদ্ভুত। পূর্বে থেকে আন্দাজ করা যায় না।

“দেখি কাছে আসো। এতো দুরে দুরে আছো কেন?”

হুমায়রা হালকা নড়েচড়ে বসলো। হেমন্ত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। বলল, “দুরে না থেকে কাছে আসতে বলেছি তোমাকে। তুমি কি করলে? শরীরটা একটু দোলালে। বলি, তোমাকে কি আমি শরীর দোলাতে বলেছি? কাছে আসো। একদম গা ঘেঁষে। বুঝলে?”

নাহ্! হুমায়রার মধ্যে কোন হেলদোল দেখা গেল না। সে চুপচাপ স্থী’র হয়ে বসে আসে। যেন নড়াচড়া করলেই মহা বি’প’দ।

হেমন্তের হঠাৎ আ’ক্রম’ণে হুমায়রা অবাক হওয়ার দরুণ কথা বলতেই ভুলে গেল। হেমন্ত তাকে আষ্টেপৃ’ষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। যেন পুরুষালি শরীরের সব টুকু শক্তি দিয়ে তাকে ধরেছে। হুমায়রার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। শীতল কন্ঠে হেমন্ত বলল, ” আহ্! শান্তি। বুঝলে হুমায়রা আমি অনেক শান্তি পাচ্ছি। তুমি পাচ্ছো? বহু প্রতিক্ষার ফল তুমি। আবারও বলছি তোমাকে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি। ভালোবেসে ঘরের বউ করে এনেছি। আমার সবটুকু দিয়ে তোমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করবো। আগলে রাখবো সব অশুভ থেকে। জীবনের প্রথম অনুভূতি তুমি। তুমি কি আমাকে ভালোবাসো হুমায়রা পাখি?”

হুমায়রা মুগ্ধতার সাথে হেমন্তের বলা প্রতিটা মূল‍্যবান বাক‍্যদ্বয় শ্রবণ করছিল। নেত্র যুগল হতে অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ে। এত সুখ তার মতো সাধারণ মানবীর জন্য আল্লাহ্ তায়ালা রেখেছিল। ইহা কি আদো বিশ্বাসযোগ্য?

“কি হলো পাখি কথা বলবে না? আজও মুখ ফিরিয়ে নিবে?”

হঠাৎ হুমায়রা শব্দ করে কেঁদে ওঠে। হেমন্ত চমকে ওঠে। ব‍্যস্ত কন্ঠে সুধায়, “কি হয়েছে হুমায়রা? কষ্ট হচ্ছে বলো? বাড়ির কথা মনে পড়ছে?”

“না।”

“তবে কাঁদছো কেন? তুমি জেনে রাখো তোমার চোখের ওই পানিসম মুক্ত দানা গড়িয়ে চিবুকে পড়ার আগেই আমার বক্ষ’স্থলে অদৃশ্য রক্ত’ক্ষর’ণ হয়। তোমার অশ্রুসিক্ত নয়ন আমি সহ‍্য করতে পারিনা।”

“এত সুখ আমার কপালে সহ‍্য হবে তো? একটা মেয়ে কি চাই জীবনে? মনের মতো একজন জীবনসঙ্গী হোক। সৃষ্টি কর্তার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার আপনি। আপনাকে ভালো না বেসে যাবো কোথায়! শুনে রাখুন ভয়ং’ক’র সুদর্শন যুবক, আপনাতে এই যুবতী কবেই আবদ্ধ হয়ে গেছে। আপনাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি আমি। সারাজীবন এভাবেই ভালো বেসে যান প্রিয়।”

হেমন্ত যেন বহু কাঙ্খীত কথাগুলো বহু প্রতিক্ষার পর শুনতে পেল। যেন তার অবচেতন মন এটাই চাইছিল। ধুক’পুক হৃদ’পিণ্ড যেন শান্ত শীতল হলো। আহ্। এ যেন বড় প্রাপ্তি। নেত্র যুগল হতে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে চিবুক স্পর্শ করেছে। পুরুষ মানুষ সহজে কাঁদে না। অতি কষ্টে নতুবা অতি সুখে তারা কাঁদে। হেমন্তেরও আজ অনেক খুশির দিন। খুশির প্রহর। আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলল, “ভালোবাসি প্রিয়। ভালোবাসি। বুকে আসো তো।”

হুমায়রা নিঃশ’ঙ্কচে প্রিয়তমর বুকে মাথা রাখে। হেমন্ত পরম মমতাই আগলে নেয়। যেন চৈত্রের খাঁ খাঁ রৌদ্দুরে ফেটে চৌ’চির হয়ে যাওয়া মাঠঘাটে বৃষ্টির ছিটে লাগলে যেমন প্রাণ ফিরে পাই। তেমনি হেমন্তের হৃদপিণ্ড যেন দারুণ শীতলতা অনুভব করছে।

“হুমায়রা?”

“হুম।”

“আজ ভরা জোছনা। বেলকনিতে যাবে জোছনা বিলাশ করতে?”

“পরে। আগে আমার মানুষটার বুক থেকে শান্তি সুখ কুড়িয়ে নেয়। তারপর।”

“তাই হোক।”

“প্রাপ্তি বুঝেন?”

“বহু চেষ্টা সাধনার পর যখন কাঙ্খীত সফলতা পাওয়া যায় সেটাই প্রাপ্তি। আমার প্রাপ্তি তো তুমি।”

“সত‍্যি?”

“পৃথিবীতে যত সত্য আছে তারমধ‍্যে এটাও সত্য। আমার পরম পাওয়া তুমি। মহান আল্লাহ্ তায়লার নিকট কোটি শুকরিয়া।”

“শুকরিয়া। আমার মহান #প্রাপ্তি তো আপনি। আপনিময় প্রাপ্তি। ভালোবাসি প্রিয়। ভালোবাসি।”

“ভালোবাসি আমার প্রিয়তমা।”

_____________সমাপ্ত___________________

#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি(লেখনীতে)🍂
🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here