#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২৪
#Jhorna_Islam
হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সকলে।ইমন কে কারো ভালো করে দেখার সৌ’ভাগ্য হয়নি।এক ন’জরের জন্য একটু দেখতে পেয়েছিল। মাথায়, হাতে পায়ে ব্যা’ন’ডে’জ করা। জ্ঞা’ন নেই।এখনো ফিরে নি।তবে ডাক্তার বলেছে যখন নিয়ে এসেছিলো তখন অবস্থা খুবই গু’রু’ত’র ছিলো।তখনকার অবস্থা থেকে এখন একটু ভালো হলেও খুব বেশি ভালো না।
ভালো করে ইমন কে দেখার সুযোগ পাচ্ছে না। নার্স ঢুকতে দিচ্ছে না। ডাক্তারের খবর নেই।এসব হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া খুবই দু’স্ক’র। চিকিৎসা ব্যবস্থা ও তেমন ভালো না। অথচ হাসপাতাল জুড়ে রোগী আর রোগী।
ডাক্তারের থেকে নার্সের ভাব বেশি।এমন ভাব করে যেনো ওরাই ডাক্তার। ইশান এসেই এক নার্সের সাথে ঝা’মে’লা পাকিয়ে বসে আছে। প্রচুর কথা কাটাকাটি করে এমনকি নার্সের গায়ে হাত ও তুলতে যায়।
তাছলিমা বানু আর দিনা অনেক কষ্টে ধরে রেখেছে নয়তো আজ কি যে হতো।ঐ নার্স রা’গ দেখিয়ে আর এইদিকে আসেনি। অন্য নার্স পাঠিয়েছে।
এই নার্সটা আবার বেশ সুন্দরী। এসেই ইশানের সাথে স’খ্য’তা গড়ে তুলেছে। কি হেসে হেসে কথা বলছে।ইশান তো চোখ ই সরাচ্ছে না।চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে নার্সের শরীরটা কে ছুঁয়ে দিচ্ছে ।।
দিনা সবই দেখছে।কিছু বলতে পারছে না। যদি আবার এখানেই মারা শুরু করে।
দিনা তাছলিমা বানুর দিকে তাকায় এই আশায় এই মহিলা নিজের ছেলেকে হয়তো কিছু বলবে।কিন্তু না সব দেখেও না দেখার ভা’ন করে আছে।অথচ তাছলিমা বানুর চোখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে তিনি ঠিকই নিজের ছেলের ন’জর বুঝতে পেরেছেন।
দিনার আর এসব স’হ্য হলো না।ইমন ও নার্সের লু’তু’পু’তু।তাই সে বলে একা একাই বাড়ি চলে আসে।
নার্সের মাধ্যমে বিকেল বেলা ডাক্তারের দেখা পায়। ডাক্তার এসে ইমন কে ভালো করে চে’ক করে।তারপর তাছলিমা বানু আর ইশান কে নিজের চেম্বারে ডেকে নিয়ে যায়। লিমা কে দাঁড় করিয়ে রেখে দুই মা ছেলে ডাক্তারের সামনে গিয়ে বসে।
ডাক্তার জানায়,,,
দেখুন এখানে রাখতে পারবেন ঠিকই কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। উনার আ’ঘাত খুবই গু’রু’ত’র। বড় বড় পরীক্ষা করা লাগবে। আমাদের এইখানে ভালো যন্ত্রপাতি নেই।উনি মাথায় আর পায়ে গু’রু’তর আ’ঘাত পেয়েছে । মাথার থেকে বেশি পায়ের টা। অপারেশন করা লাগবে।
শহরে নিয়ে যান। বেশি দেরি করবেন না। নয়তো যা অবস্থা পা কেটে ফেলে দেওয়া লাগবে।যা করার দ্রুত করুন।।
ইশান জিজ্ঞেস করে কি পরিমাণ টাকা লাগতে পারে?
ডাক্তার জানায় টাকা লাগবে প্রচুর। লাখের উপরে কিন্তু পরিমাণ কতো জানা নেই।
তাছলিমা বানুর ক’লিজা মো’চড় দিয়ে উঠে। এসব শুনে হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে। তার ভালো ছেলেটা কিভাবে পরে আছে। এখনও কতো কতো টাকা লাগবে।টাকার ব্যাপার না এখন যে তার ছেলেটা কষ্ট পাচ্ছে। তাদের যে এতো হ’য়’রা’নি করতে হচ্ছে।
এসব কিছু ঐ ইরহানের জন্য হয়েছে। তার ছেলেটা অসুস্থ হয়ে মৃ’ত্যু’র সাথে ল’ড়াই করছে। সব ইরহানের জন্য।
মনে মনে বলে,, তোর কোনোদিন ভালো হবে না ইরহান।কোনোদিন ভালো হবে না তোর।তোর জন্য আমার কোল খালি হয়ে যেতো।
তুই সুখের সন্ধানে ছুটিস না কেন তুই সুখ পাবি না। আমার সুস্থ সবল ছেলেটা বাড়ি থেকে বের হয়ে এখন হাসপাতালে পরে আছে। তুই যদি আমার কথা মেনে নিতি।আমার কথা মতো চলতি তাহলে কিছু হতো না।সবাই সুখে থাকতাম।
তাছলিমা বানু ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে ইমনকে এক পলক দেখে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে শহরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে। আর দেরি করা যাবে না। আরো আগেই নিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো। কেন যে এসব ডাক্তার আর হাসপাতাল কে ভরসা করতে গেলো।
ইশান সম্মতি জানিয়ে সব ব্যবস্থা করতে গেলো।
ঐদিন ও ইশান যেতে চেয়েছিলো ইরহানের ক্ষ”তি করতে। কিন্তু ইমন বলেছে নিজে যাবে।ইশানের দ্বারা নাকি কিছু হবে না। এতো এতো সুযোগ পেয়েও সে কাজে লাগাতে পারেনি।এইবার ইমন ই করবে।
ইমনের কথা শুনে প্রথমে প্রচুর রা’গ উঠে গিয়েছিল। বলেছিলো আমিই যাবো এবার দেখিয়ে দিবো।কিন্তু ইমন দেয়নি।ভাগ্যিস দেয়নি নয়তো ইমনের জায়গায় ইশান থাকতো। কথাটা ভেবেই স্ব’স্তি’র নিশ্বাস ছাড়ে ইশান।
—————————————
ইরহান চলে গেছে আজ দুইদিন হলো।গিয়েই ফোন করেছিলো যুথির কাছে কিন্তু সে ফোন ধরেনি।ইরহান ভেবেছে যুথি হয়তো ঘুমায় নয়তো ফোনের কাছে নেই এজন্য ধরতে পারে নি।
তাই দাদির কাছে ফোন দিয়ে জানায় সে ঠিক ঠাক ভাবে পৌঁছাতে পেরেছে। কোনো অসুবিধা হয়নি।
ঐ দেশে যাওয়ার একদিন পরই নতুন ফোন কিনে ইরহান। তার যুথি রানীর সাথে যে কথা বলতে হবে। এক ন’জর দেখতে হবে।নয়তো বুকের তো’লপা’ড় কোনো ভাবেই শান্ত হবে না। ঐ মেয়েটার মুখে তাকালে মন আপনা আপনি শান্ত হয়ে যাবে।
কল দেয় যুথি কে ইরহান কিন্তু বেজে বেজে কেটে যায়। যুথি রিসিভ করে না। অগনিত বার কল দিয়ে ও যুথিকে পায় না। কয়েকবার কল রিসিভ হয় ইরহান উৎসাহের সাথে কথা বলতে যায়। অপর পাশের ব্যক্তির গলা শুনে ইরহানের সব উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
যুথি কল রিসিভ করে দাদিকে ধরিয়ে দিয়ে নিজে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। যুথির দাদি বলেও ইরহানের সাথে একটু কথা বলাতে পারে না।
যুথির ব্যবহারে ইরহান খুব কষ্ট পায়।মেয়েটা কি বুঝতে পারে না তার কন্ঠ স্বর শোনার জন্য আর তাকে এক ন’জর দেখার জন্য একটা মানুষ কতোটা তৃ’ষ্ণা’র্থ হয়ে আছে।
ইরহান কল করা থামায় না।দেখবে কতো সময় তার যুথি রানী কথা না বলে অভিমান করে থাকতে পারে।
ইরহান কল দিলে যুথি এক দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইচ্ছে করে লাফিয়ে পরতে। কল রিসিভ করে তার বোকা পুরুষ কে দেখতে কিন্তু এখন দেখলে যে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না।
যতোই নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুক।যুথিতো ভালো নেই একদম ভালো নেই।
ইরহান যেদিন চলে গেছে ঐদিন থেকেই স্কুলে যায় যুথি।বাড়িতে থাকলে একদম ঠিক থাকতে পারবে না।
ইরহান চলে যাওয়ার আগে বলে গেছে যেন স্কুলে পড়ানো ছেড়ে দেয়। এই শরীরে আর কোন কিছু করতে হবে না। যুথি বলছে আরো কয়েক মাস পর ছাড়বে।
বাড়ির সব কাজ যুথিই করে।দাদি বকেও যুথিকে আটকাতে পারে না। তার সেই এক কথা তুমি কয়দিন বিশ্রাম নাও।আমি এখন করি।পরে তুমি সব করো।
আজ ও যুথি রান্না করে ঘরের সকল কাজ করে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ফোন নিতে মনে থাকে না।বাড়িতেই পরে থাকে।
—————————–
স্কুল ছুটির পর যুথি আর সীমা একসাথে গল্প করতে করতে হেঁটে আসছে। দুইজন বান্ধবী হয়ে গেছে। সব কিছু একজন আরেকজন কে শেয়ার করে।
নানান কথার মাঝে সীমা বলে উঠে,, এই যুথি জানিস আমার উনি আমাকে আজ সকাল সকাল ই ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। আজ বিকেলে বলেছে দেখা করার জন্য।
শাড়ি পরে যাবো ভাবতেছি কেমন হবেরে?
যুথি হাটতে হাটতে সীমার দিকে তাকিয়ে বলে,,ভালোই হবে শাড়ি পরেই যা।
সীমার মুখে কি উৎফুল্লতা।তার প্রিয় মানুষটার সাথে দেখা করা নিয়ে। সীমার আ’কদ করে রাখা। কয়দিন পরেই উঠিয়ে নিবে তাকে।
অনেক দিন পর দেখা হবে বুঝলি যুথি। এই ভালোবাসা দিবস নিয়ে কতো কিছু ভেবে রেখেছি।
যুথি চুপচাপ সীমার কথা শুনে।
এইই যুথি ভাইয়া তোকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানায় নি? দেশে থাকলে আজ মনে হয় তোর দিন টা খুব স্পেশাল করে দিতো।
উনি দেশে থাকতে আমার প্রতিদিন ই স্পেশাল ছিলো।আর এসব আমি পালন করি না।
প্রবাসীর বৌদের আবার ভালোবাসা দিবস?
এ’কা’কি’ত্ব’ই তাদের স’ঙ্গী।
দিনে সংসারের কাজ, রাতে অপূর্ণ কিছু স্বপ্ন ও চাওয়া নিয়ে ঘুম,
এটাই জীবন।
কথাটা বলেই যুথি জোরে জোরে হেটে গেইট পেরিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়।
সীমা ঐখানে ই দাড়িয়ে যুথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। মেয়েটা কে কি সে কষ্ট দিয়ে ফেলল?
কাল দেখা হলে আগে স’রি বলে নিবে ঠিক করে নেয় সীমা। তারপর নিজেও নিজের বাড়ি চলে যায়।
———————————-
ঘরের কাছে আসতেই যুথির দাদি যুথিকে বকাবকি শুরু করে দেয়।
কি তা’মা’সা শুরু করছস তুই ছে’রি? পোলাডারে কষ্ট দিয়া তুই ঢেং’ঢেং কইরা ঘুইরা বেড়াস?
বলি কার লাইগা গেছে সে দূর দেশে? নিজের পেটের দায়ে তো আর অন্য দেশে পাড়ি জমায় নাই।নিজের এক পেট ছিল চাইলে দেশেই পইরা থাকতে পারতো। “যেইখানে রা’ই’ত ঐখানেই কা’ই’ত।”
তোর আর নিজের পোলাপাইনের কথা চিন্তা কইরা সব মায়া ত্যা’গ কইরা গেছে।তুই কি শুরু করলি কই তুই ছেলেটার পাশে থাকবি যেনো মন খারাপ না করে সেইদিকে খেয়াল রাখবি।আর তুই কথাই বলস না।
সেই যে একের পর এক কল দিতাছে এইটা তোর শরীরে লাগে না। থাকতে মূল্য দিতে শিখ।এতো অবহেলা করিস না। পরে নয়তো আফসোস করবি।
দাদির মুখে এই কথা শুনে যুথির বুকটা ধ’ক করে উঠে। তারাতাড়ি বড় বড় পায়ে ঘরে ঢুকে।
যুথির দাদি যুথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। এবার ঠিক কল ও ধরবে আর কথা ও বলবে।এই কথা গুলো না বললে আরো কয়েকদিন মনে অভিমান পো’ষে রাখতো।এতে করে দুইজন ই ক’ষ্ট পেতো।
#চলবে,,,,,,,,
সবাইকে বসন্তের শুভেচ্ছা 💛🧡#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২৫
#Jhorna_Islam
ইমনকে ডাক্তার বলার কয়েক ঘন্টা পর ই শহরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। সব ব্যবস্থা খুব দ্রুত করা হয়েছে। আরো আগে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো। এইখানে ফেলে রাখা একদম ঠিক হয়নি।শুধু শুধু কষ্ট করেছে।
শহরে ভালো একটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ইমন কে। ডাক্তার ইমনের সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ভালো করে। এখানে ও উনি জানায় মাথারটা নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো পা নিয়ে। পায়ে অপারেশন করা লাগবে।খুবই বা;জে ভাবে আ’ঘাত পেয়েছে ডান পায়ে।
দুইদিনের ভিতরে অপারেশন করানো লাগবে।নয়তো পা কেটে ফেলে দিতে হবে। আর এই অপারেশন করেও পা ঠিক হবে কি না সেটা ডাক্তার রা সিউরিটি দিতে পারতেছে না।
অপারেশনের কয়েকমাস পর পা ঠিক হলেও হতে পারে না ও হতে পারে।ঠিক না হলে ডান পায়ে কখনো হাটতে পারবে না।
সব শুনে তাছলিমা বানু বলে,, অপারেশন করার জন্য। এতো শতো ভেবে এখন কাজ নেই আগে অপারেশন করাক পরের টা পরে দেখা যাবে।
ডাক্তার জানায় অপারেশনে অনেক টাকা লাগবে।সাথে সকল খরচ মিলিয়ে তিন লাখের মতো পরবে।এতো টাকা শুনেও তাছলিমা বানু চুপ।যতো টাকাই লাগুক এখন তো আর টাকার মায়া করলে চলবে না। আগে নিজের ছেলে পরে সব কিছু।
ডাক্তার কে বলে দেয় অপারেশনের সব ব্যবস্থা করার জন্য। ঠিক সময়ে এনে টাকা জমা দিয়ে দিবে।
এতোকিছুর মাঝে ইশান ছিলো নি’র্বা’ক।তার মাথায় ছোট খাটো একটা বা’জ পরেছে।এতো টাকা লাগার কথা শুনে। তাও যদি ডাক্তার নিশ্চয়তা দিতো যে ইমন ঠিক হবে। নিশ্চয়তা ছাড়া এতোগুলা টাকা খরচ করার কোনো মানেই খুঁজে পাচ্ছে না ইশান।
দিনা ওদের সাথে আসেনি বাড়িতেই রয়ে গেছে। লিমা কে তাছলিমা বানু ইমনের কাছে রেখে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। লিমার পরিবার ও খবর পেয়ে নাকি আসতেছে এইখানে। এতোকিছুর মাঝে লিমা তার পরিবার কে খবর টা বলতে একদম ভুলে গেছে। শহরে আসার পথে তাদের জানিয়েছে।
তাছলিমা বানু লিমার পরিবার থেকেই এসব টাকা শো’ধ তুলবে ভেবে নেয়। আপাতত নিজের থেকেই নিতে হবে। এসব নিয়ে ঝামেলা করলে এখনও চলবে না। তাই পরে এসব নিয়ে আলোচনা তে বসবে।
বাড়ি থেকে টাকা আনার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তাছলিমা বানু আর ইশান।বাসে বসে ইশান বলে উঠে,, এসবের কি দরকার মা।ডাক্তার তো কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না পা ঠিক হবে কি না। তাহলে এতো টাকা খরচ করার কি দরকার? শুধু শুধু টাকা গুলো জলে ফেলবে।
তাছলিমা বানু ইশানের কথা শুনে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে, এসব তুই কি বলছিস ইশান? ভাই হয় ও তোর।
আমি জানি ও আমার ভাই। তোমার তো আর এক ছেলের কথা ভাবলে চলবে না । আমার কথা ও ভাবতে হবে। আমার ও ভবিষ্যৎ আছে।
এখন তো সব টাকা দুইজনের ভাগ থেকে যাবে। অপারেশন হবে ভাইয়ের টাকার ভাগ তো আমার থেকে ও যাবে।
— তুই কি বলতে চাইছিস সোজা সোজি বল ইশান।
— এই যে অপারেশন দুই দিনের ভিতর করতে হবে এর মধ্যে তুমি সব ভাগাভাগি করে দাও।ভাইয়ের অপারেশন এর টাকা তার ভা’গ থেকে যাক।আমার ভা’গ থেকে কেন যাবে?
— বাহ্ এই না হলে ভাই।বড় ভাই অসুস্থ হয়ে পরে আছে। আর তার চিকিৎসার জন্য টাকা নিতে হবে তার ভা’গ থেকে।
— টাকার কাছে সবাই পর মা।তাছাড়া আমার কথাটাও তো ভাববে একবার। আমার ও ভবিষ্যৎ আছে।
— তাছলিমা বানু ইশানের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভাবে। তারপর ইশানকে বলে,,,,
ঠিক আছে তুই কাগজ পত্রের ব্যবস্থা কর আমি তোদের দুইজনের নামে সমান করে লিখে দিচ্ছি। আর অপারেশনের টাকা না হয় ইমনের ভাগ থেকেই যাবে।
কথাটা শোনা মাত্র ইশানের মুখে হাসি ফোটে উঠে। টাকার টেনশনে এতোসময় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছিল।এখন স্ব’স্তি! এখন আর নিজের ভা’গ থেকে একটা টাকা ও যাবে না।
—————————-
ঘরে ঢুকে যুথি তার বোরখা না খুলেই ফোন নিয়ে বসে। কিন্তু একি লাস্ট কল এসেছে আরো আধা ঘণ্টা আগে। প্রায় অনেক সময় ফোনের দিকে তাকিয়ে রয়। কল না আসায় ফোন টা বিছানায় রেখে উঠে দাঁড়ায় তারপর ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই বোরখা খুলে।
এখনো ফোনে কল না আসায় তারাতাড়ি করে যায় হাত মুখ ধোঁয়ার জন্য। হাত মুখ ধোঁয়ার পর এসে আবার ফোন হাতে নেয়। কিন্তু ইরহান ফোন দেয় না। নিজেও দিতে পারছে না হাত পা কেমন কাঁপছে। যুথি বুঝে গেছে নিজে থেকে দিতেও পারবে না।
ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবলো ইরহান কল দিতে দিতে একটু সাজুগুজু করে নেক।উঠে গিয়ে মাথাটা ভালো করে আছড়িয়ে নেয়।
চোখে কাজল দেয়। ঠোঁটে হালকা একটু লিপস্টিক দেয়। তারপর আবার মোবাইল হাতে নিয়ে বসে।কিন্তু কিসের কি ইরহানের কল তো আসছে না।
দুই ঘন্টা ধরে বসে ভিতরে অ’স্থি’র’তা কাজ করতে থাকে যুথির ভিতর।তার বোকা পুরুষ এখন আর কল কেন করছে না।তার উপর কি রা’গ করেছে?
এরই মধ্যে যুথির দাদি ঘরে ঢুকে দেখে যুথি ফোন হাতে নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিরে যুথি কথা হয়েছে নাত জামাইর সাথে?
যুথি ছলছল নয়নে তাকায় তার দাদির দিকে। ধরা গলায় বলে, দাদি উনি আর কল দিচ্ছে না কেন?
কথা হয় নাই?
না।
মনে হয় কাজে আছে। চিন্তা করিস না ঠিক হাতে সময় হলেই কল দিবে।এসে খেয়ে নে।
তুমি খেয়ে উঠো আমি উনার সাথে কথা বলে পরে খাবো।
এখন বুঝতে পারছিস অপেক্ষা করেও না পেলে কেমন লাগে?
এরমধ্যেই যুথির ফোন টা বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে জ্বল জ্বল করছে বোকা পুরুষ লিখা নামটা। যেটা যুথি নিজেই দিয়েছে ইরহানের নতুন নাম্বারে।
যুথির দাদি বুঝতে পেরেছে ইরহান কল দিয়েছে। তাই যুথি কে চোখের ইশারায় কথা বলতে বলে বেরিয়ে যায়।
যুথি কাঁপা কাঁপা হাতে কল রিসিভ করে গলা শুকিয়ে গেছে। কল টা রিসিভ করতেই ইরহানের হাস্যজ্জল মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
যুথি ফোনটা হাতে নিয়ে ইরহানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বালিশে মাথা রেখে শোয়।
প্রথম কয়েক মিনিট নীরবতার সাথে দুইজন দুইজনের দিকে অপলকে তাকিয়ে রয়।
কিছু সময় পর ইরহান নীরবতা ভেঙে বলে উঠে,,, “বাচ্চার আম্মু! ”
—————
এই বাচ্চার আম্মু!
—————–
ও আমার যুথি রানী!
ইরহানের আদুরে ডাক শুনে যুথির চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে নীরবে।
কিছু বলবা না?
“আমার সোনার ময়না পাখি চোখে কাজল ধোঁয়া পানি।
সে আমার জন্য কাঁদে জানিরে আমি জানি।
দূর প্রবাসে পইরা থাকি একলা লাগে খুব
চোখের সামনে ভাইসা উঠে সোনাপাখির মুখ।
তার লাইগা ছটফট করে আমার পোড়া বুক!”
যুথি আর চুপ করে থাকে না। তার বোকা পুরুষ কে আর সে কষ্ট দিবে না।
কেমন আছেন আপনি বোকা পুরুষ?
— আহ্ এতো সময় কেমন ছিলাম নিজেও জানিনা। কিন্তু এখন আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি। আমার বাচ্চার আম্মু কেমন আছে?
— দেখে কি মনে হচ্ছে? ভালো করে দেখে বলুন কেমন আছি।
— রাতে ঘুমাও না চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
কেউ একজন আমাকে ঘুমের মধ্যে রেখে চলে গেছে। তাই ঘুমের সাথে আ’ড়ি করেছি।
ঘুমের মধ্যে না রেখে আসলে আমি আর এই জনমে এই দেশে আসতে পারতামনা। সে যাই হোক এখন থেকে ঠিক সময় ঘুমাবা আর খাবার খাইবা।বেলা তো অনেক হয়েছে দুপুরের খাবার খেয়েছো?
উহু পরে খাবো।
পরে না এখন খাবার নিয়ে আসো যাও।আমি লাইনে আছি। মোবাইলের টা বালিশের মাঝে সুন্দর করে রাখো। আর গিয়ে খাবার নিয়ে আসো খেতে খেতেই কথা বলতে পারবা।
যুথি আর অমত করেনি আসলেই প্রচুর খিদে লেগেছে তার।গিয়ে খাবার নিয়ে এসে বসে।খেতে খেতে ইরহান কে জিজ্ঞেস করে আপনি সকালে খেয়েছিলেন?
হ্যা।
যুথি খাওয়া শেষ করে এসে আরেকটা বালিশ এনে শোয়।মোবাইলের বরাবর হয়ে।
এবার চোখ বন্ধ করে ঘুমাওতো।এই কয়দিন ঘুমাওনি ঠিকমতো।
না আমি ঘুমালে আবার আপনার দেখা কখন পাবো জানিনা।
আমি কল কাটবো না তুমি ঘুমাও।তুমি ঘুমাইলে পরেই কল কাটবো।
তারপর যুথি ইরহানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা সময় ঠিকই ঘুমিয়ে পরে।ইরহান স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। তারপর কল কেটে কাজে লেগে পরে।
#চলবে,,,,,,
কালকে একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়ে গেছে। প্রত্যেক পেশাতেই ভালো খারাপ মিলিয়েই আছে।আমি নার্সদের ছোটো করতে চাইনি।আমি এটা বোঝাতে চেয়েছিলাম ওরা খা’রাপ ওদের সাথে ও গিয়ে ওরকমই পরেছে।আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এটার জন্য তাড়াহুড়ো করে এরকম একটা ভুল হয়ে গেছে। আশা করি সবাই ব্যাপারটা বুঝবেন।আবারও স’রি। 😊