মেঘের পালক চাঁদের নোলক পর্ব -০৪

#মেঘের_পালক_চাঁদের_নোলক
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়

বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে সম্পর্ক। সম্পর্কে বিশ্বাস চূর্ণ হলে সম্পর্কের বাঁধন ছিন্ন হয়ে যায়৷ নিধির বিশ্বাস আছে মুগ্ধ তার সাথে খারাপ কিছু করবে না৷ নিধি রুমে প্রবেশ করে মুগ্ধকে দেখতে পেল না৷ মুগ্ধর রুম সুন্দরভাবে সাজানো গুছানো দেখে নিধির চোখ আকাশ প্রাণে৷ এতোদিন যা টিভির পর্দায় দেখে এসেছে আজ নিজ চোখে দেখছে৷ মুগ্ধ নয়নে রুমের প্রতিটি সামগ্রী দেখতে ব্যস্ত। ভুলেই গেছে মুগ্ধর সাথে দেখা করতে এসেছে৷ মুগ্ধর ধ্বনি কানে আসতেই নিজ ভাবনা থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসে৷ মুগ্ধ বারান্দায় কারো সাথে যেন ফোনে কথা বলছে৷ নিধির অবাধ্য পা বারান্দায় রাখল৷ নিধির উপস্থিতি বুঝতে পেরে মুগ্ধ ফোন রেখে নিধির দিকে তাকাল৷ মুচকি হেঁসে বলল,

“দাঁড়িয়ে আছো কেন? এখানে এসে বসো।”

বারান্দায় বসার জন্য ছোটখাটো বসার ব্যবস্থা করেছে৷ মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিল৷ মুগ্ধর গায়ে কোন শার্ট বা টিশার্ট নেই৷ টু কোয়ান্টার প্যান্ট পরিহিত৷ খালি গায়ে গ্রামে অনেক মানুষকে দেখেছে তবে খারাপ লাগেনি৷ মুগ্ধকে কেন জানি খারাপ লাগছে? নিধি বিনয়ের সাথে বলল,

“আমি এখানে ঠিক আছি। আমাকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আসতে বলছিলেন। আমায় কি কাজ করতে হবে?”

মুগ্ধ নিধির দিকে তাকালে অন্য জগতে হারিয়ে যায়৷ নিজেকে সংযত করল এদিক ওদিক তাকিয়ে। গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও কেন বাঁধা পড়ছে নিধির উপর? মনের মাঝে তুমুল ঝড় বয়ে যাচ্ছে৷ মুগ্ধ কিছু বলছে না বলে নিধি নিজে থেকেই ভাইয়া বলে সম্মোধন করল৷ মুগ্ধ মাথায় ব/জ্র/পা/ত পড়ল৷ চকিত গলায় বলল,

“তুমি আমায় কি বলে ডাকলে! আমাকে ভাইয়া বলে ডাকল!”

মুগ্ধ নিজের কর্ণকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ নেত্রদ্বয়ে হাজারো প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে৷ মুখ হালকা হা করে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে৷ মুগ্ধর চাহনি নিধি বুঝতে পারল না৷ পুনরায় বিনয়ী স্বরে বলল,

“আমি আপনাকে ভাইয়া বলেই ডাকব৷ আপনি মানা করলেও আমি ভাইয়া বলে ডাকব৷ এখন মুখটা বন্ধ করেন, নয়ত মুখে মশা ঢুকবে৷”

মুগ্ধ নিজের বোকামি বুঝতে পেরে হেঁসে উঠে৷ একটু আগে যতটা খারাপ লাগছিল এখন খারাপ লাগছে না৷ কতো মধুর কন্ঠে ভাইয়া ডাক শুনতে পারল৷ ভাইয়া ডাকটা কি মুগ্ধর বাজে ভাবনাকে আড়াল করল? নেশাগ্রস্ত হচ্ছে না নিধিকে দেখে৷ অদ্ভুত ভালোবাসার টান অনুভব করল৷ মুগ্ধও চেয়েছিল তার ছোট পুতুলের মতো একটা বোন থাকবে৷ তার কি সেই আশা পূর্ণ হবে এবার? মুগ্ধ ঠোঁট প্রসারিত করে মুচকি হেঁসে বলল,

“তুমি আমাকে ভাইয়া বলেই ডাকতে পারবে৷ আমার কোন সমস্যা নেই৷ আমিও তোমাকে আজ থেকে বোনের নজরে দেখব৷ এখন কাজের কথায় আসি।”

“হুম ভাইয়া৷ আপনি আমাকে কাজ বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আমাকে কি কি কাজ করতে হবে?”

“আমি তোমাকে কাজ দেওয়ার জন্য ডাকিনি৷ তোমার বাসা কোথায়? তোমার মা বাবা কি করেন? তোমাকে নিয়ে তাদের নিশ্চয় চিন্তা হচ্ছে। আমাকে তোমার বাসার ঠিকানা দাও। আমি তোমাকে সাবধানে পৌঁছে দিব৷”

নিধির চোখের কোণায় অশ্রু ঝলমল করে উঠল৷ চোখের পাতা বন্ধ করলেই টুপ করে গড়িয়ে পড়বে অশ্রু। ঘন ভারী পাপড়ি দ্বয় ভিজে উঠে৷ দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসল৷ হুট করেই দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। নিজেকে শান্ত রেখে বলল,

“আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই৷ আমাকে যদি বের করে দেন তাহলে আমায় রাস্তায় থাকতে হবে৷ আবার বাজে লোকগুলো ধরে নিয়ে যাবে৷ আমার বাবা পৃথিবীতে থেকেও আমার কাছে মৃত৷ বাবার হওয়ার কোন দায়িত্ব পালন করেননি৷”

মুগ্ধ নিধির চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,

“তোমাকে কোথাও যেতে হবে না৷ তুমি তোমার ভাইয়ার বাসায় থাকবে৷ তবে আমার হয়ে তোমার একটা কাজ করে দিবে৷”

নিধি উৎফুল্ল উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

“আমি সব কাজ করে দিব৷ বলেন, আমায় কি কাজ করতে হবে?”

মুগ্ধ নিজের ফোনের ওয়ালপেপারে একটা মেয়ের পিক দেখিয়ে বলল,

“আমার গার্লফ্রেন্ড। আমি কিছুতেই মাকে আমার বিয়ের কথা বলতে পারছি না৷ কিছু বলতে গেলেই শাওনের কথা বলেন৷ আমার থেকে কিছু মুহুর্তের বড় শাওন৷ সে বিয়ে করার পর আমায় বিয়ে করাবে৷ ৩০ বছর হয়ে গেল৷ শাওন বিয়ে করতে রাজি নয়৷ আমার একাকিত্ব ভালো লাগে না৷ আমার হয়ে তুমি মা’কে বুঝাব৷”

মুগ্ধকে আশ্বাস দিয়ে বলল,

“কোন চিন্তা করতে হবে না৷ নিধির কাছে এসব কাজ কিছুই না৷ আমাকে আপনার মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন৷ কিভাবে সফল হয় দেখে যান?”

মুগ্ধ নিধিকে তার মায়ের রুমে নিয়ে আসল৷ শায়লা চৌধুরী বিছানায় শুয়ে আছেন৷ মুগ্ধর দিকে না তাকিয়ে বলল,

“মুগ্ধ আজ অফিসে যাওনি কেন? অনেক বেলা হয়ে গেছে৷ শাওন একা একা সব কাজ করছে৷”

মুগ্ধ ভয়ে ভয়ে বলল,

“মা নিধি আসছে৷ আজ থেকে নিধি আমাদের সাথে থাকবে৷ নিধি আমার ছোট বোন হয়ে এ বাসায় থাকবে৷”

এক নিঃশ্বাসে চোখ বন্ধ করে মুগ্ধ কথাগুলো বলল। মায়ের চোখের উপর কথা বলার সাহস নেই৷ শায়লা চৌধুরী ছেলের দিকে দৃষ্টি মেলে তাকান৷ নেত্রদ্বয় বন্ধ। ওষ্ঠ কাঁপছে। আরও অনেক কথা বলার আছে৷ কিন্তু বলতে পারছে না৷ শায়লা চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“দুই মিনিটের মধ্যে অফিসে যাবে৷ এ নিয়ে তোমার সাথে পরে কথা বলব৷ তুমি এখান থেকে যেতে পারো৷”

মুগ্ধ নিধির দিকে তাকিয়ে শুকনো ঠুক নিল৷ চোখের ইশারায় চলে যেতে বলে৷ যেন সিংহের খাঁচায় তারা ধরা পড়েছে৷ দু’জনে চলে যাওয়ার জন্য কদম ফেলতেই রাগী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“এই মেয়ে আমি কি তোমাকে যেতে বলছি? শুধু মুগ্ধকে যেতে বলছি৷ ইশারায় অনেক কথা বলতে পারা সৃজনশীলতা৷ মুগ্ধ আমি তোমার সৃজনশীলতাকে রেসপেক্ট করি৷ এখন নিজের সৃজনশীল বুদ্ধি অফিসের কাজে লাগাও৷”

মুগ্ধ ধরা পড়া চু/রে/র মতো শায়লা চৌধুরীর দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায়। প্রতিটি মা তার সন্তানকে শাসনে রাখতে ভালোবাসেন৷ শাসনে রাখলে সন্তানরা ঠিক ভুলের বিচার করতে পারে৷ শায়লা চৌধুরী নিধিকে ভালোভাবে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

“এই মেয়ে! এভাবে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে কেন? আমার কাছে এসে বসো৷ আমি দেখতে চাই মুগ্ধর বোন কেমন?”

শাওয়ার চৌধুরীর চোখের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখের পাতা নিচু করে ফেলল৷ সামনের দিকে কদম যাচ্ছে না৷ এক একটা কদম যেন এভারেস্ট জয়ের সমান। কাঁপা কাঁপা পায়ে শায়লা চৌধুরীর সামনে দাঁড়াল। ভীতু কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

“আসসালামু আলাইকুম ম্যাম৷”

শায়লা চৌধুরী সালামের জবাব দিয়ে বলল,

“তোমার নাম কি? তোমার বাসা কোথায়? মুগ্ধর সাথে তোমার পরিচয় কিভাবে?”

মাথা নিচু করে ভীত কন্ঠে জবাব দিল,

“আমার নাম তাসফিয়া নিধি। আমি গ্রাম থেকে এসেছি৷ আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচান মুগ্ধ ভাইয়া৷ উনার সাথে আমার পরিচয় অল্প সময়ের৷”

“তোমার মা বাবা কি করেন? দেখে মনে হচ্ছে বয়স তেমন হয়নি৷ বাচ্চা মেয়েকে কিভাবে একা ছাড়েন?”

নিধি মলিন কন্ঠে জবাব দিল,

“আমার মা বেঁচে নেই৷ বাবা পৃথিবীতে বেঁচে থেকেও আমার কাছে মৃত৷ কোনদিন বাবার কর্তব্য পালন করেননি৷ যত ভালোবাসা সবই ছিল আমার বোন তিতিরের জন্য৷”

“তোমার বাবা কোথায়? উনাকে আমাদের বাসায় আসতে বল।”

শায়লা চৌধুরীর কন্ঠ স্বাভাবিক৷ কিন্তু সেই কন্ঠে হাজারো প্রশ্ন। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনার সামনে মিথ্যা বলা যাবে না৷ নিধি ভেজা গলায় বলল,

“আমার বাবা খুঁজ নিতে কখনও আসবেন না৷ আমাকে বাবা এবং সৎমা মিলে বিক্রি করে দিয়েছেন নিষিদ্ধ পল্লীতে৷ তিতির আপুর বিয়ের যৌতুকের টাকার জন্য। গতকালই আমি গ্রাম থেকে ঢাকায় আসি৷ আমাকে বলা হয় আমার লেখাপড়ার জন্য ঢাকায় আনা হয়েছে৷ পড়ার নামে জায়গা হলো নিষিদ্ধ পল্লীতে। আমার উপর দিয়ে ভয়ে গেলে কাল বৈশাখীর ঝড়৷ নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছিল৷ আত্মহত্যা মহাপাপ। সেখানে আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে শ্যামলী নামের একটা মেয়ে৷ উনার সাহায্যে আমি পুরুষের পোশাক পড়ে বের হতে পেরেছি। আমি গাড়ির ডিপিতে আশ্রয় নেয়৷ আর সে গাড়িটা ছিল মুগ্ধ ভাইয়ার৷ আমি এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে পারিনি৷ আমি এখন গ্রামে ফিরে গেলে আমায় আবার বিক্রি করে দিবে৷ সৎমা আমায় একদম সহ্য করতে পারে না৷”

নিধি কান্নায় ভেঙে পড়ল৷ নিধির কথাগুলো সন্দেহজনক মনে হলো বোনকে নিয়ে৷ নিজের জল্পনা কল্পনা বাদ দিয়ে প্রশ্ন করলেন,

“তোমার সৎ বোন তোমার থেকে বড়! তোমার সৎ বোন তোমার থেকে কিভাবে বড় হয়?”

নিধি মাথা নিচু করে ভেজা গলায় বলল,

“স্বার্থ ছাড়া কেউ কদম ফেলে না৷ আমার বাবাও স্বার্থ ছাড়া কদম ফেলেন না৷ যখন তিতিরের জন্ম হয় তখন সৎ মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ আমার মা ছিল একদম গরিব ঘরের মেয়ে৷ এক বেলা খেতে পারলে অন্য বেলা খেতে পারত না৷ তখন মায়ের উপর চোখ পড়ে বাবার৷ সৎমাকে দেখা শোনা করার জন্য মাকে বিয়ে করেন৷ মা রাজি হয়ে যান দু’বেলা দু’মুটো খাবারের জন্য। গ্রামে কারো কাছে কাজের জন্য গেলে সবাই খারাপ নজরে দেখত৷ এক প্রকার বাধ্য হয়েই স’তী’নে’র সাথে ঘর করতে রাজি হয়ে যান৷ দুই বছর পর মায়ের কোল আলো করে আমি আসি৷ আমাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারলেও তিনি আর পৃথিবীর আলো দেখতে পারলেন না৷ জন্ম দিয়েই মারা গেলেন। আমার স্থান হলো নানীর বাসায়৷ অনেক কষ্টে আমায় মানুষ করেন৷ একদিন মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকেও নিয়ে গেলেন৷ স্থান হলো সৎ মায়ের ঘরে। শুরু হলো শারীরিক মানসিক অত্যচার৷ তবুও সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করে নিয়েছি৷ সব সীমা অতিক্রম করে আমাকে শেষ পর্যন্ত বিক্রি করে দিলেন নিষিদ্ধ পল্লীতে৷”

নিধি আর কিছু বলতে পারল না৷ চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ কোন বাঁধা মানছে না৷ হাসিখুশি মেয়েটার জীবনের উপর দিয়ে অনেক কাল বৈশাখীর ঝড় বয়ে গেছে৷ প্রতিবারই ভেঙে পড়েছে। ঠিক তখন মহান সৃষ্টিকর্তা কারোর মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ নিধি কান্না করতে হিঁচকি উঠে যায়৷ পুরানো কথাগুলো গায়ে কাঁটা দিল৷ শায়লা চৌধুরী আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললেন,

“এখানে তোমার কোন ভয় নেই৷ তুমি এখানে মুগ্ধর বোন এবং আমার মেয়ে হয়ে থাকবে৷ তোমার স্বপ্ন হলো নিজেকে গড়ে তোলা। মানুষকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে হবে৷ পাপীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷”

নিধি কোন কথা বলতে পারছে না৷ একটা ঘোরের মধ্যে রয়ে গেছে৷ ভয়ে সব সত্য কথা বলে দিয়েছে৷ সত্য যতই তিক্ত হোক মেনে নেওয়া উচিত৷ মিথ্যার মায়াজালে সত্যকে ঢেকে রাখে যায় না৷ একদিন না একদিন সামনে আসতেই হলো৷ প/তি/তা বলে দূরে ঠেলে দিবে কি? নিষিদ্ধ পল্লীতে কারো সাথে বিছানা শেয়ার করেনি৷ তবু্ও কি তার গায়ে ক’ল’ঙ্কে কালী লাগবে? মানব সমাজ মানুষকে টেনে নিচে নামাতে পারে৷ যদি হয় মেয়ে তাহলে কোন কথা নেই। কখনও কাউকে ভালোর নজরে দেখতে পারে না৷ নিধি এখনও কান্না করে যাচ্ছে৷ শায়লা চৌধুরী কি বলবে বুঝতে পারছেন না? একটা নিষ্পাপ মেয়ের সাথে কত বড় দূর ঘটনা ঘটে গেছে। ভাবতেই নিজের চোখের পাতা ভিজে এলো৷ ইচ্ছা করছে শক্ত করে বুকের মধ্যে আগলে রাখতে৷ মায়ের কোমলতা লুকিয়ে গম্ভীর রাগী গলায় বলল,

“কান্না বন্ধ করো৷ আমার সামনে অহেতুক চোখের জল ফেলবে না৷ পাপীদের যদি শাস্তি দিতে চাইলে চোখের চোখের জল মুছে ফেলো৷ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও৷ হাতে তুলে নিতে হবে ধ্বংসের হাতিয়ার৷”

নিধি চোখের অশ্রু মুছে ফেলল৷ তবুও অশ্রু বাঁধা মানছে না৷ সবকিছু যেন কিশোরীর মনে প্রতিচ্ছবি হচ্ছে৷ মেয়েদের দুর্বলতা চোখের অশ্রু। আর সে কান্না করবে না৷ ভেজা গলায় বলল,

“আমাকে গ্রামে পাঠিয়ে দিবেন না৷ আমি বাসার সব কাজ করে দিব৷ তার বিনিময়ে আমাকে এক কোণায় ঠায় দেন৷ গ্রামে ফিরে গেলে আমার নামে ক’ল’ঙ্ক ছড়িয়ে দিবে৷ আমার এত বড় ক্ষতি করবেন না৷”

“তোমাকে গ্রামে যেতে হবে না৷ তুমি এখানেই থাকবে৷ তোমার কাজের বিষয়ে তোমার সাথে পরে কথা হবে৷ এখন তুমি আসতে পারো৷”

নিধি কথা না বাড়িয়ে চলে গেল৷ তিথি আপুর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে শায়লা চৌধুরীর জন্য গরম তেল নিয়ে আসল৷ গরম তেল মালিশ করলে ভাঙা পায়ের অবস্থা উন্নতি হবে৷ শায়লা চৌধুরী চোখা পাতা বন্ধ করে শুয়ে আছেন৷ নিধি ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে বলল,

“আমি আপনার পায়ে তেল মালিশ করে দিব ম্যাম৷ তেল মালিশ করলে অনেকটা উন্নতি হবে৷ আপনার পা ঠিক করার দায়িত্ব আজ থেকে আমার৷”

শায়লা চৌধুরী কিছু বলতে নিয়েও বলল না৷ তিনি তো জানেন পা নিয়ে কত কষ্টে আছেন৷ অবশ্য নিজের অলসতার জন্য ঠিক হয়নি৷ কাউকে সঙ্গী হিসেবে পাইনি হাঁটার জন্য। কেউ সাহস জোগায়নি৷ শায়লা চৌধুরীর সম্মতি পেয়ে নিধি পরম সুখে পায়ে তেল মালিশ করে দিল৷ ব্যথা পেলেও সহ্য করে নিল৷

শাওন অফিস থেকে ফিরে নিধিকে ডাইনিং রুমে দেখতে পেলে৷ বাচ্চাদের মতো কার্টুন সিরিজ দেখছে৷ নিধির দিকে তাকিয়ে দেখল সে এখনও শার্ট প্যান্ট পরিধান করে আছে৷ বুঝতে বাকী রইল না তার পড়ার জন্য কিছুই নেই৷ শাওন চৌধুরী নিধির সামনে দেয়ালের মতো দাঁড়াল৷ নিধিকে কিছু বলার সু্যোগ না দিয়ে রিমোট নিয়ে টিভি বন্ধ করে দিল৷ নিধি কিছু বলার আগে শাওন বলল,

“আমার সাথে চলো৷ তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাব৷”

শাওনের কথা শুনে নিধির অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। তার সাথে খারাপ কিছু করবে না তো? নিধির উত্তরের পরোয়া না করেই নিধির হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসে৷ ভয়ে নিধি কথা বলতে পারছে না৷ কাঁপা কাঁপা ওষ্ঠে অস্পষ্টভাবে বলল,

“আমি আপনার সাথে যাব না স্যার৷ আমাকে আপনি… ”

নিধিকে থামিয়ে চোখ বড় করে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“কোন কথা নয়৷ চুপচাপ বসো৷”

নিধি গাড়িতে বসে আল্লাহর নাম স্মরণ করছে৷ বিপদে একমাত্র ভরসা মহাল আল্লাহ তায়ালা৷

চলবে…..

প্রশ্ন-১: খুব সহজেই কিভাবে নিধি নিষিদ্ধ পল্লী থেকে বের হলো?
উত্তর: নিষিদ্ধ পল্লী থেকে কোন মেয়েই বের হতে পারে না৷ বের হতে হলে হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বের হয়৷ একজন পুরুষ বের হতে পারে সহজে৷ তাকে কেউ আটকায় না৷ নিধি ছদ্মবেশ বের হয়েছে৷ ভাগ্যক্রমে গাড়ির ডিপি আনলক পায়৷

প্রশ্ন-২: বাসায় যেতে রাজি এবং জমজের পার্থক্য?
উত্তর: দেয়ালে পীঠ ঠেলে গেলে আশ্রয়ের জন্য সবকিছু করতে পারে৷ মুগ্ধ কাজের অফার করেছিল৷ যার জন্য রাজি হয়ে যায়৷
দু’জনের বর্ণণা এক দিলেও গায়ের রং একটু ভিন্ন বলছি৷ যার জন্য বুঝতে পেরেছে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here