#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব______৪০.
বেশ দামী একটা জামদানী শাড়ি পরিহিতা সুন্দরী মহিলাকে একপলক দেখলো রাদ। বয়স মোটামুটি পঞ্চাশের ঘরে। এই বয়সের মানুষদের মধ্যবয়স্কা বললেও এই সুন্দরী মহিলাকে সেই উপাখ্যান একদমই দিতে পারলোনা রাদ। কেননা, বয়সের জোয়ারভাটা একদমই পাল্টাতে পারেননি এই মহিলাকে।
রাদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সুন্দরী মহিলা তাকে হাত ইশারা করে বসতে বলল। রাদ বসলো। রাদের সঙ্গে অন্তুও আছে। রাদ ওকে বসতে ইশারা করতে সেও বসে রাদের পাশে। ভদ্র মহিলা আর কেউ নয়, মিসেস লাবনী খান।
—-” মা/ফি/য়া/র পদ থেকে সরে এলে কেন রাদ?”
প্রশ্নটা বেশ রসালো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো লাবনী খান। রাদ বুঝতে পারে, ‘মা/রা/মা/রি, খু/ন-খা/রা/বি এসবের প্রতি লাবনী খানের এক অদ্ভুত নেশা রয়েছে। যার দরুন, তিনি একজন বিজনেস ম্যানকে তার বর্তমান প্রফেশন সম্মন্ধে জিজ্ঞেস না করে প্রথমেই সেই লিস্টে নেমে গেছেন। রাদ মনেমনে বাঁকা হাসলো। তবে, এই মহিলাকে সে নিতান্তই সন্দেহের বসে ডাকেনি। একদম, শতভাগ সিওর হয়ে তবেই দেখা করতে এসেছে।
—-” লাইফে কিছু পেতে হলে এই সব কিছু পদ নিজের মাঝে আত্মস্থ করে রাখতে। বলা যায়না, কখন কোন কাজে লেগে যায়।”
—-” আপনার মতো চিন্তা করলে হয়তো পদটা ছেড়ে আমি ভুল করেছি। তবে ম্যাম, আন্ডারগ্রাউন্ডের দুনিয়ায় মিহাদ আবরিশাম রাদকে এখনোও কেউ ভুলেনি। কিংবা বলা যায়, রাদ ভুলতে দেয়নি। আমাকে ভুলে যাওয়া এতো ইজি নয়।”
রাদের এহেম জবাব হয়তো লাবনী খান আশা করেনি। উনার মুখের দাম্ভিক ভাবটা একটু হলেও ডেবে গেলো। কালো ফ্যাকাসে রঙ ধারন করলো উনার মুখটা। কয়েক লহমা চুপ থেকে ফের বলে উঠলেন,
—-” গ্রেট। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কিছু তো রেখেছো নিজের জন্য।”
—-” অনেক রিসার্চ করেছেন মনে হচ্ছে আমার ব্যাপারে!”
—-” নট লাইক দ্যাট এক্টচুয়েলি। বাই দ্য ওয়ে, আমাদের কাজটা কতদূর কি এগোলো? আমরা আর এক সপ্তাহের মতো আছি। ইংল্যান্ড থেকে প্রোপার্লি কাজের দেখাশোনাও হবেনা। তাই একটু জলদি চাচ্ছি।”
—-” জলদিই হয়ে যাবে। আর বেশি হলে ৩-৪দিন। এরমধ্যে আপনাদের বিল্ডিং রেডি থাকবে। বাই দ্য ওয়ে ম্যাম, ম্যে আই আস্ক ইউ সামথিং?”
—-” ইয়েস, অফকোর্স। বলে কি জানতে চাও?”
—-” আপনি মিশমিশ নামের কাউকে চিনেন?”
“মিশমিশ” নামটাতে যেন কেউ ব/ন্দু/ক তাক করলো লাবনী খানের দিকে। তৎক্ষনাৎ তিনি আঁতকে উঠলেন বন্দুক দেখে। চোখমুখ ঢেকে গেলো আঁধারে। “মিশমিশ” ইলহামের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। আর সেই মেয়েটির ব্যাপারে এই মা/ফি/য়া কেন জানতে চাচ্ছে?
—-” ম..মিশমিশ! ক..কে মিশমিশ?”
—-” আপনাকে এমন আ/তং/কিত লাগছে কেন? আর ইউ ওকে?”
রাদের চোখ এড়ালো না লাবনী খানের আঁ/তকে ওঠা মুখখানা। রাদ যেন এটাই চাচ্ছিলো মনে মনে। অন্তু বাঁকা হাসলো রাদের পানে চেয়ে। রাদও তাই।
—-” ঠ..ঠিকাছি। আমি কোনো মিশমিশকে চিনিনা।”
—-” ওহ, ওকে। ইট’স ফাইন। কাল তবে কাজের সাইটে গিয়ে দেখা হচ্ছে আপনাদের সঙ্গে। আজ উঠি। কেমন?”
লাবনী খান আর জবাব দিলোনা। রাদ আর অন্তু জবাবের অপেক্ষা না করেই উঠে বেরিয়ে গেলো। তারা বেরিয়ে যেতেই বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগলো লাবনী খান। অর্থাৎ, ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো।
_________
ইলহামের বক্তব্য অনুযায়ী রনো আঙ্কেলই হলো মিমির মামা। অর্থাৎ, কুহেলিকা খানের পার্সোনাল এসিসট্যান্ট। ইলহাম বলেছিলো, তার মায়ের মৃ//ত্যু সম্মন্ধে যেন রনো আঙ্কেলকে জানানো হয়, কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত কুহেলিকা খানের মৃ//ত্যু//র কয়েকদিনের মাথায়ই রনো আঙ্কেলেরও মা//র্ডা//র হয়। আর যা নিখুঁত পরিকল্পনায় সম্পন্ন করেছে লাবনী খান।
আবদ্ধ ঘরটায় কোনো জানালা নেই। কেবল একটা দরজা। দরজাটা বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। গত ১২ঘন্টায় দরজাটা একবারের জন্যও খোলা দেখেনি লাবনী খান। যখন থেকে সে এখানে এসেছে তখন থেকেই বন্ধ পড়ে আছে জায়গাটা। আ/তং/কি/ত চোখজোড়া বারবার সেই বন্ধ দরজাতেই এঁটে যাচ্ছে লাবনী খানের। সে এখানে কি করে এলো, তাকে কারা নিয়ে এলো কিচ্ছু জানেনা সে। যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন থেকেই তিনি এক ঘোরের মাঝে তলিয়ে আছেন। যতটুকুতে নিজেকে স্বাভাবিক করতে পেরেছেন ততটুকুতেই আন্দাজ করে নিয়েছেন, তাকে কেউ কি/ড/ন্যা?প করেছে। কিন্তু, এতো বড় দুঃসাহস কার হবে? কে তুলে আনবে লাবনী খানকে?
খট করে একটা তীক্ষ্ণ শব্দে ভেসে এলো কানে। লাবনী খান চমকে উঠলো। ভ/য়া/র্ত চোখ জোড়া ছুটে গেলো বন্ধ দরজায়। কেউ দরজা খুলছে। লাবনী খান ভেতরে ভেতরে ভ/য় পাচ্ছে। তবে চোখমুখ রেখেছে ধারালো ছু/রি/র মতো। যেন শ/ত্রু পক্ষ তার এমন ভ/য়া/ন/ক চাহনিতেই কুপকাত হয়ে যায়। তবে আরেকটা চিন্তার বিষয় পুরো ঘরটা এতোটাই অন্ধকার যে, সে চাইলেও নিজের অবস্থান বুঝতে পারছে না।
কেউ দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। একটা ছায়া মানব ভাসছে লাবনী খানের অক্ষিপটে। লাবনী খান কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
—-” ক..কে! কে ওখানে?”
তার এই প্রশ্নের কোনো জবাব এলোনা। কেবল ভেসে এলো ভ/য়া/ন/ক এক শব্দ। শিষের শব্দ। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি শিষ বাজাচ্ছে। কেমন অদ্ভুত এই শব্দ। আর বড্ড চেনা। চেনা হবে নাই বা কেন? এই শিষের মাস্টার মাইন্ড যে সে নিজেই। বহুবছর পূর্বে এই শিষের সূচনা করেছিলো লাবনী খান। অবশ্য, তার নামের শেষ খানের ট্যাগটা তখনও যুক্ত হয়নি। তখন সে ছিলো লাবনী রহমান। গরীব বাবা রহমান মাস্টারের মেয়ে লাবনী রহমান।
—-” ক..কে! ক..ককে তুমি! এমন করে শিষ বাজাচ্ছো কেন? কে তুমি? সামনে এসো? সামনে এসো!”
বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলো লাবনী খান। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা বোধহয় মুচকি হাসলো। লাবনী খানকে খুশি করতে সে এক কদম সামনেও এগোলো। তবে, পূর্বের ন্যায় মুখটা তখনও আড়ালে লুকিয়ে রাখলো।
—-” লাবনী রহমান। ছোট্ট একটা গ্রাম থেকে উঠে আসা গরীব মাস্টার মশাইয়ের মেয়ে লাবনী রহমান। শহরে গ্রাজুয়েশন করতে এসে হুট করে প্রেমে পড়ে যায় একজন নামকরা সিঙ্গারের। দ্যা গ্রেট রেজা খান। তার প্রেমে পাগল প্রায় লাবনী রহমান। খোঁজ নেয় সিঙ্গারের আগাগোড়া। জানতে পারে, সে বিবাহিত। তবে হেব্বি বড়লোক। একেতো রূপ আর তারউপর টাকাপয়সা! কোনোদিক থেকেই লোভ সামলাতে পারলো না লাবনী রহমান। বিবাহিত হলে হবে, তবুও তার রেজা খানকেই চাই। তার এক সময়ের দারিদ্র্যতা তার মনে অনেক আগে থেকেই প্রতিহিংসার জন্ম দিয়েছিলো। অবশ্য সময় এবং সুযোগে অভাবে লাবনী খান টের পাননি তার মনের কথা। অবশেষে বুঝে যান নিজের মনের কথা। একবার দ্বিমত এলেও নিজেকে পূণরায় বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আদাজল খেয়ে পড়েন রেজা খানের পেছনে। রেজা খানকে হাত করতে না পারলেও লাবনী রহমান জানতে পারেন, রেজা খানের একমাত্র স্ত্রী অর্থাৎ কুহেলিকা খান সেই সময়ে রেজা খানের চেয়েও কয়েক ধাপ এগিয়ে ছিলেন সুনামে। যেটা রেজা খানকে প্রতিনিয়ত ধ্বং/সে/র দিকে ঠেলে দিতো। রেজা খান কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তার স্ত্রী তার চেয়ে বেশি ফেমাস। এই নিয়ে তিনি সর্বদা তার পত্নীর সঙ্গে তর্কে থাকতেন। লাবনী খান এর সমস্তটা ইতিমধ্যেই আয়ত্ত করে নিলেন। এখন সুযোগ বুঝে দান দেওয়ার অপেক্ষা। অবশেষে এসেও গেলো সেই সুযোগ। ইতিমধ্যে রটিয়ে পড়লো বিশিষ্ট সিঙ্গার কুহেলিকা খান প্রেগন্যান্ট। অর্থাৎ রেজা খান এবং কুহেলিকা খান বাবা-মায়ের ট্যাগ পেতে যাচ্ছেন সামনেই।”
—-” চুপ করো! চুপ করো(চেঁচিয়ে) ক..কে তুমি? কে কে? আর এসব কথা তুমি জানলে কেমন করে? কেমন করে জানলে!”
লাবনী খানের গলা কাঁপছে। কথা বের হচ্ছে আবার বের হচ্ছে না। বুঝে কুলোতে পারছেনা তার সাথে ঠিক কি হচ্ছে। তারই সামনে একটা পুরুষালী কন্ঠ বইয়ের পাতার ন্যায় তার কালো অতীত কেমন করে চর্চা করে যাচ্ছে। কে এই মানব! কে?
—-” এখনোও তো কাহিনী বাকি ম্যাম। আরেকটু ধৈর্য্য ধরুন। সবটা শুনুন। এরপর না হয় মন্তব্য করবেন?”
লাবনী খানের শরীর ঝ/ল/সে যাচ্ছে রা/গে। কিন্তু তাতে সামনের মানুষটার কোনো মাথা ব্যাথাই নেই। সে পূণরায় বলতে শুরু করলো,
—-” ভক্তের রূপ নিয়ে অবশেষে লাবনী রহমান এসে দাঁড়ালো রেজা খানের সামনে। বিক্ষিপ্ত রেজা খান হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে গেলেন তার এমন ভ/য়া/ন/ক সুন্দরী ভক্তের দেখা পেয়ে। তিনি আরও শান্ত হয়ে গেলেন, যখন জানতে পারলেন তার এই সুন্দরী ভক্ত নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে তাকে। ওমন একটা সিচুয়েশনে রেজা খান দুর্বল হতে শুরু করলেন তার সুন্দরী পাগলা ভক্তের প্রতি। তার পাগলা ভক্তও ঝোপ বুঝে কো/প দিতে বিন্দুমাত্র দেরী করলেন না। ভালোবাসার নাম করে শুরু করে দিলেন তার উদ্দেশ্য হাসিল। কুহেলিকা ম্যামের সন্তানকে অস্বীকার এবং কুহেলিকা ম্যামকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য রীতিমতো চাপ দিতে শুরু করলেন রেজা খানকে। রেজা খানও ঠিক তাই তাই করলেন, যেটা আপনি তাকে করতে বাধ্য করেছেন। ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা একজন মহিলাকে মে/রে ধ/রে আধম/রা করে, মিডিয়ার সামনে গলা উঁচিয়ে নিজেরই স্ত্রীর নামে কুরুচিপূর্ণ শব্দগুলো ব্যবহার করতে এই আপনি, লাবনী রহমান তাকে বাধ্য করেছিলেন! এমনকি তাকে ডিভোর্সের নোটিশটাও আপনি নিজ হাতে পাঠিয়েছিলেন। এই অব্দি তো সবটা ঠিকই ছিলো মিসেস খান! এরপর এটা আপনি কি করলেন? একটা জলজ্যান্ত মানুষকে এভাবে খু//ন করলেন? নিঃশেষ করে দিলেন দুনিয়ার বুক থেকে? কেন! সে তো তার সন্তানকে নিয়ে আপনাদের থেকে অনেক অনেক দূরে চলে গিয়েছিলো, তবে কেন তাকে খু//ন করা হলো? এবার আপনি বলুন!”
—-” না!(চেঁচিয়ে) আ..আমি কাউকে খু//ন করিনি! আ..আআমি! আমি খু//ন করিনি।”
—-” করেছেন! আপনিই খু//ন করেছেন। তবে শুধু কুহেলিকা ম্যামের নয়, তার সঙ্গে আরও দুটো জান আপনি বিনা সংকোচে কেঁড়ে নিয়েছেন। এক রনো আর দুই মিশমিশ! এরা আপনার কি এমন ক্ষ/তি করেছিলো বলতে পারেন? কেন এতো গুলো নিষ্পাপ জীবন আপনি কেঁড়ে নিলেন? সামান্য কিছু লো/ভের জন্য!”
—-” ম..মমিথ্যে! সব স..সব মিথ্যে। আমি কিছু করিনি.. সব রেজা করেছে। হ..হ্যাঁ! র..রেজা করেছে। আমি কিছু করিনি!”
বিকট শব্দে হেসে উঠলো মানুষটা। তার হাসির শব্দে কেঁপে উঠলো লাবনী খান। এমন ভ/য়ং/ক/র হাসির শব্দ সে এর পূর্বে কখনোও শুনেনি যেন। আবার সেই শীষের শব্দ। আবারও কেঁপে উঠলো লাবনী খান। কুহেলিকা খানকে মে//রে ফেলার পূর্বে প্রায় প্রতিদিনই তাকে এই শীষের শব্দ শুনিয়ে ভ//য় দেখানো হতো। কেউ বা কারা রোজ তার ঘরের সামনে থেকে এইরূপ শব্দ করতে করতে চলে যেতো। কুহেলিকা খান ভ//য়ে ঠিক করে ঘর ছেড়েও বের হতেন না। গোটা একটা বছর এমন করেই কেটেছে তার। অতঃপর মোক্ষম সুযোগ পেয়ে তাকে দুনিয়া থেকেই তাড়িয়ে দিলো এই নি/কৃ/ষ্ট মহিলা।
শিষের শব্দটা ক্রমশ মিলিয়ে যেতে লাগলো। হঠাৎ অন্ধকার ঘরটার দরজাটা পূণরায় বন্ধ হয়ে গেলো। ফের কেঁপে উঠলো লাবনী খান। এ কেমন
মৃ/ত্যু/পু/রী/তে রেখে গেলো তাকে!
—-” ক..কোথায় যাচ্ছো তুমি? আমাকে একা রেখে যেওনা। আমার ছেড়ে দাও! আমি কাউকে খু//ন করিনি। আমাকে যেতে দাও। রেজা, র..রেজা কোথায়? রেজাকে এ..এনে দাও আমার কাছে? ক..কোথায় গেলে তুমি? এই ছেলে!”
#চলবে#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_______৪১(শেষ পর্ব)
—-” আপনার ফাইনাল শা/স্তি শুরু হবে ঠিক তিন দিন বাদে। আর এই তিনদিন আপনি আমাদের সঙ্গে, আমার পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন। আমার প্রিয়তমা অর্থাৎ আমার স্ত্রী, আমার মা, আমার বোন এবং আমার ভাইয়ের সঙ্গে। একটা পরিবার ঠিক কতটা সুন্দর হয়, আপনি উপলব্ধি করবেন। অনুভব করবেন। এবং আপনার নি/কৃ/ষ্ট অ/প/ক/র্মে/র জন্য আপনি অনুতপ্ত হবেন। আর এটাই হবে আপনার শা/স্তির প্রথম পদক্ষেপ। আপনার শা/স্তি আজ থেকেই শুরু হলো মিস্টার খান।”
রেজা সাহেব রাদের পানে চেয়ে মলিন হাসলো। শা/স্তি কি কেবল শরীরেরই হয়? মনের হয়না বুঝি? এই যে এতোগুলো বছর অব্দি একটা স্বা/র্থপর মানুষের সঙ্গে দিনের পর দিন এক ছাদের নীচে সংসার করাটা কি কম শা/স্তির ছিলো? একটা মানুষকে বিনা অপরাধে দুনিয়ার বুক থেকে চিরতরে নিকেশ করার পর যে অপরাধবোধ তাকে দিনের পর দিন কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে, সেই শা/স্তিটাই কি কম ছিলো? সে নিজেই নিজেকে শা/স্তি দিয়ে এসেছে। হয়তো শরীরের ছিলো না বলে কেউ টের পায়নি। কিন্তু দিয়েছে তো!
—-” সেই তখন থেকে দেখছি দু’জনে আলাপচারিতা চালিয়েই যাচ্ছেন, বলছি কি বাড়িতে মেহমান আসলে যে ভালোমন্দে খাওয়াতে হয় ভুলে গেলেন? আমি আর মা যে সেই কখন থেকে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছি, সেই খেয়াল আছে কারো?”
ডাইনিং টেবিলের কাছ থেকে ইলহামের বকার সাথে হাজারও একটা অভিযোগের সুর ভেসে এলো। টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে আরেকবার পেছন মুড়ে তাকালো ইলহাম। রাদ ওর ডাক পেয়ে তাড়া দিলো রেজা সাহেবকে। জরুরি ভিত্তিতে বউ-এর হুকুম মানার দাবি করে তাকে নিয়ে সোজা চলে গেলো ডাইনিং টেবিলের কাছে।
মধ্যবয়স্ক এই লোকটিকে দেখলেই ইলহামের এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে মনের ভেতর। যেন বহুকালের পরিচিত এই মানুষটি। যেন কত আপন। তবে সেই ভাবে দেখতে গেলে মানুষটা আজই এসেছে ওদের বাড়িতে। সকালের দিকে। এখন দুপুর। মাত্র এক প্রহরেই লোকটার প্রতি ইলহামের মায়া বেড়ে গেছে। এমন স্নেহের অনুভূতি ওর আগে কখনোও কারোর জন্য হয়নি। কেন জানা নেই, এই অপরিচিত মানুষটার প্রতি ও এক টান অনুভব করছে।
—-” আঙ্কেল, আপনি যা যা বলেছিলেন মা সেই সব আইটেম রেঁধেছে আপনার জন্য। এবার আপনি টেস্ট করে বলুন, কেমন হয়েছে?”
বাবাকে কেউ আঙ্কেল ডাকে রে মা?”মনটা হাহাকার করে উঠলো রেজা খানের। হায় দুর্ভাগ্য! জীবনে এতটাই অ/পক/র্ম সে করেছে যে আজ নিজের সন্তানের মুখে বাবা ডাকটা শোনারও অধিকার নেই তার। এমন ভাগ্য যেন দুনিয়ার কোনো হতভাগ্য পিতার না হয়।
—-” কি হলো, দাঁড়িয়েই থাকবেন? এই যে মশাই, আঙ্কেলকে বসান!”
ইলহাম রাদের দিকে তাকিয়ে বলল শেষোক্ত কথাটা। রাদ ইলহামের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে রেজা সাহেবের কাঁধে হাত রেখে তার ঘোর কাটালো। অতঃপর চেয়ারে বসতে সাহায্য করে বলল,
—-” স্যার, বসুন প্লিজ। এই যে দেখুন, মা নিজ হাতে সব রান্না করেছে। সত্যি বলতে আমার মা এবং বউ কারোরই রান্নার কোনো তুলনা হয়না। দু’জনেই পাকা রাঁধুনি। একবার খেলে সারাজীবন লেগে থাকবে মুখে। বাট, সরি টু স্যে, ইলহামকে এই অবস্থায় রান্না ঘরে পা রাখতে দেইনা। নয়তো এই মেয়ে যা ধুরন্ধর, বকি বলে একটু ঠিক হয়েছে। না হয়, আজকেও একটা খাবারও মাকে করতে দিতোনা।”
ইলহামের ব্যাপারে কথাগুলো শুনতে ভীষণ ভালো লাগছে রেজা সাহেবের। তিনি শুনছেন মন দিয়ে। বারবার দেখছেন তার মেয়ের পানে। ইলহাম মিটিমিটি হাসছে রাদের কথায়। যেন আজও কিছু করেছে তাকে লুকিয়ে।
ওদের কথা শুনতে শুনতে ইলহাম খাবার বেড়ে দিলো রেজা সাহেবের প্লেটে। রেজা সাহেব ইলহামের গল্প শুনছেন আর মুচকি হাসছেন। এদিকে ইলহামের বেড়ে দেওয়া খাবার আস্তেধীরে মুখে তুলে খাচ্ছেন।
খাবারের স্বাদ যে অতুলনীয় হয়েছে সেটা রেজা সাহেবের মুখ দেখেই আন্দাজ করে নিয়েছে রাদ-ইলহাম। তিনি কিছু বলবেন, এর মাঝেই একটা কল আসে রাদের। রাদ ফোনটা নিয়ে চলে যায় ওদিকে। ঠিক তখনই সুযোগ বুঝে ইলহাম কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে উঠলো,
—-” আঙ্কেল এই যে ডিম, মাংস আর পোলাও টা দেখছেন? সেটা আমিই করেছি। আপনি খেয়ে বলুন তো কেমন হয়েছে? আসলে কি বলুন তো, উনি ভীষণ রাগ করেন আমার এই অবস্থায় কিছু করতে গেলে। তবে সত্যি বলতে, আজ এতোদিন বাদে কারোর জন্য রান্না করতে পেরে মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠেছে। এমন কেন হচ্ছে জানিনা। তবে আপনাকে দেখলেই আমার ভালো লাগছে ভীষণ। একটা শান্তি হচ্ছে ভেতরে ভেতরে।”
ইলহামের টানটা হয়তো রেজা সাহেব উপলব্ধি করতে পেরেছেন। যার দরুন উনার ভেতরের হা/হাকারটা আরও তী/ব্র আকার ধারণ করছে। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নিজের সমস্ত পা/পগুলো
বি/সর্জন দিতে। কিন্তু, মানুষ চাইলেই কি পা/প
বি/সর্জন দিতে পারে!
রাদ কথা শেষ করে পেছন মুড়ে তাকাতেই দেখতে পেলো ইলহাম রেজা সাহেবের কানে কানে কিছু একটা বলছে। রাদের বুঝতে বাকি রইলোনা, সে কি বলছে তার বাবাকে। যা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রাদ। মানুষ না জেনেও র/ক্তের টান গভীর ভাবেই উপলব্ধি করতে পারে।
_____________
দেখতে দেখতে দু’দিন পেরিয়ে গেছে। এই দু’দিনে বাবা-মেয়ের খুনসুটি ফ্রেমে বন্দী করার মতো ছিলো। ইতিমধ্যে রেজা সাহেবের সঙ্গে এ বাড়ির প্রত্যেকেরই একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যেমন অনন্যা, নিহা ওদের দু’জনকেই ভীষণ স্নেহ করেন তিনি। আর নিঝুম যেন তার প্রাণ। সারাদিন দাদু দাদু করে পাগল করে রাখে রেজা সাহেবকে। মান্নাত বেগম, নিহার শাশুড়ী, রাদ, অন্তু এবং প্রণয়। সবার সঙ্গে ভীষণ সহজ হয়ে গেছেন তিনি। তবে এসবের মাঝেও তার অ/প/ক/র্মে/র কথা রাদ এক মুহুর্তের জন্যও তাকে ভুলতে দেয়নি।
আজ রেজা সাহেব মনেমনে ঠিক করে নিলেন, তিনি যে করেই হোক নিজের মেয়েকে সবটা খুলে বলবেন, এবং এটাও বলবেন তিনিই ওর হতভাগা পিতা! যে ওর জন্মটাকেই অস্বীকার করেছিলো করুন ভাবে।
কিন্তু মানুষ চাইলেই যে সবটা সঠিক হয়না। আজ সেটা আরও একটা প্রমান হলো। রেজা সাহেব সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে যখন ইলহামের কাছে রওনা হলেন, ঠিক তখনই রাদ তাকে মনে করিয়ে দিলো, একজন অপরিচিত হয়েও যতটা ভালোবাসা সে ইলহামের থেকে পেয়েছে ঠিক ততটাই ঘৃ/ণা সে একই ব্যাক্তির থেকে পাবে, যখন সে জানবে এই মানুষটাই ছিলো তার মায়ের মৃ//ত্যুর কারন! তখন কি হবে, একবারও ভেবে দেখেছেন?
রাদের যুক্তিতে নিজের আবেগ,অনুভূতির কাছে হেরে গেলেন রেজা সাহেব। আর চেয়েও পারলেন না মেয়ের কাছে সত্যিটা স্বীকার করতে যেতে। কেননা, তিক্ত হলেও রাদের প্রত্যেকটা কথাই একদম ঠিক।
কাল সকালেই রেজা সাহেবকে নিয়ে যাবে পু/লিশ। পু/লিশের কাছে সমস্ত প্রমান পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যে। এখন কেবল রাদের অর্ডার পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা।
ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে। বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো অন্তু। সঙ্গে এসেছে আরও একজন। আর সে হলো মিমি। ইদানীং মিমিকে অন্তুর সঙ্গেই দেখা যায়। তাদের সারাদিন ঘোরাঘুরি, মিট করা একটু বেড়েছে ক’দিনে। বাড়ির সকলে আন্দাজ করছে, হয়তো খুব শীঘ্রই মিমিকেও বাড়ির সদস্য করে ফেলতে হবে।
—-” তোমরা সবাই কে কি খাবে বলো? আজ সবার পছন্দের নাস্তা বানানো হবে সন্ধ্যায়!”
ড্রয়িং রুমে সকলে জমজমাট আড্ডার আসর জমিয়েছে। সেখানে উপস্থিত আছে রাদ-ইলহাম, প্রণয়-অনন্যা,অন্তু-মিমি, নিহা, নিঝুম, রেজা সাহেব, রাজিয়া বেগম আর নিহার শাশুড়ী। ছোটরা এবং বড়রা কেউই গল্প বলার পারদর্শীতায় পিছিয়ে নেই। সকলেই সমান পারদর্শী। বিশেষ করে নিঝুম। উপস্থিত মহলের সবচেয়ে ছোট সদস্যের গল্পের ভান্ডার যেন ফুরোবার নয়।
মান্নাত বেগমের হাঁক পড়লো রান্নাঘর থেকে। তিনি আজ একাই সবার জন্য সন্ধ্যার নাস্তা বানাবেন। কারোর থেকে এক চুল পরিমাণও সাহায্য নিবেন না বলে জানিয়েছেন। অবশ্য রাজিয়া বেগম আর নিহার শাশুড়ীমা তাকে সাহায্য করার জন্য কয়েকবার ছুটে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনিই আবার সবাইকে পাঠিয়ে দিলেন গল্প করতে। এদিকে ইলহামের হাতপা নিশপিশ করছে কখন রান্নাঘরে যাবে, আর মাকে সাহায্য করবে।
—-” আমি নুডলস,
আমি চপ,
আমি মুড়ি মাখানো,
আমি পাস্তা!”
এরকম আরও কয়েকখানা অর্ডার শোনা গেলো ড্রয়িংরুম থেকে। মান্নাত বেগম অর্ডার গুলো নিয়ে দ্রুত চললেন রান্নাঘরের দিকে। আজ তাকে রান্নার ভূতে পেয়েছে। তাই সব রান্না একাই করবেন।
—-” শুনুন না রাদ, বলছিলাম আমি একবার যাবো রান্নাঘরে?”
পাশ থেকে রাদকে খুঁচিয়ে কাঁচুমাচু করে কথাটা বললো ইলহাম। রাদ সবার সঙ্গে গল্পে মসগুল ছিলো। হঠাৎ ইলহামের আবদার শুনে চোখ পাকিয়ে তাকালো ইলহামের পানে। কন্ঠ খাদে নামিয়ে ধমক দিয়ে বলল,
—-” তোমার কপালে না মা//র অপেক্ষা করছে! এই অবস্থায় খুব সখ হচ্ছে রান্না ঘরে যাওয়ার তাইনা? চ্যাম্প অর প্রিন্সেসকে একবার আসতে দাও! তারপর রাত দিন তোমাকে রান্না ঘরেই বন্দী করে রাখবো।”
—-” হিহিহি, ওকে।”
—-” হোয়াট! তুমি হাসছো? এতো মজা লাগছে?”
দাঁতে দাঁত চেপে পূণরায় ধমকে উঠলো রাদ। ইলহাম ধমক খেয়ে চুপসে গেলো। হাতজোড়া মুখের সামনে এনে ঠোঁট উল্টে তাকালো রাদের পানে। অতঃপর ঠিক বাচ্চাদের ন্যায় মেকি কান্না জুড়লো। যদিও সবটাই গলা খাদে নামিয়ে। যেন অন্যরা শুনতে না পায়।
ওর কান্নাটা মেকি হলেও রাদ যেন সত্যি ভড়কে গেলো। ওর সাথে এই অবস্থায় মোটেও বকাবকি করে কথা বলা উচিৎ নয়। এতে ওর বা বাচ্চার উপর প্রেশার পড়তে পারে। তাই নিজের ভুল বুঝতে পেরে ঝটপট ইলহামকে বুকে জড়িয়ে ধরলো ওর কান্না থামাতে। আচমকা রাদের বুকে জায়গা পাবে ইলহাম যেন ভাবতেও পারেনি। তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে গুটিশুটি হয়ে লেপ্টে রইলো রাদের বুকে। রাদ ওর বাচ্চামো দেখে মুচকি হেসে মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে চুমু খেলো আলতো করে।
ওদের এই খুনসুটি টুকু মনের ফ্রেমে বন্দী করে নিলো রেজা সাহেব। ইলহাম রাদের সঙ্গে ঠিক কতটা ভালো আছে, তা যে নিজের চোখে না দেখলে কোনো দিন জানতেই পারতেন না তিনি। কুহেলিকা হয়তো, দূর থেকেই দেখছে মেয়ের সুখ। কুহেলিকা পেরেছে একজন স্বার্থক মা হতে। কিন্তু তিনি কোনোদিন পারেননি একজন স্বার্থক মানুষ হতেই। তিনি মানুষ নন। মানুষের কাতারে তাকে ফেলাও যেন উপহাস করার সমান।
—-” আহহ্ মাগো!”
হঠাৎ ব্যা//থায় কুঁকিয়ে উঠলো কেউ। চমকে উঠলো উপস্থিত মহল। হঠাৎ থমকে গেলো তাদের কোলাহল। সবাই একবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো সকলের। কার কি হলো? কথাটা ভাবতেই সকলের মনে হলো ইলহামের কথা। চটজলদি ইলহামকে দেখতে নিলে ইলহাম পূণরায় বিকট চিৎকারে কাঁপিয়ে তোলে সবকিছু। রাদ আ/তং/কি/ত নয়নে তাকায় ইলহামের পানে। ইলহামের মুখটা হঠাৎ কেমন নীল বর্ন ধারণ করে। সকলের মুখে আ/তং/ক লেপ্টে যায়। বিশেষ করে রেজা সাহেবের মুখে।
—-” আ..আমার ভীষণ ক..ক/ষ্ট হচ্ছে রাদ! আ..আমি সহ্য করতে পারছিনা!”
এই বলেই জোরে জোরে নিঃশ্বাস টানতে শুরু করে ইলহাম। রাদ বুঝতে পারে শ্বাস নেওয়াতে সমস্যা হচ্ছে ইলহামের। নির্ঘাত লেবার পে/ই/ন উঠেছে। এক্ষনি ওকে হসপিটালে নিতে হবে।
অন্তু মহল ভে/ঙে রাদকে বলে দৌড়ে গেলো গাড়ি বের করতে। রেজা সাহেব ছুট্টে এলেন ইলহামের কাছে। কেমন ম/রি/য়া হয়ে উঠেছেন তিনি। মেয়ের এমন করে নিঃশ্বাস ওঠানামায় তার নিঃশ্বাসটা যেন ব/ন্ধ হয়ে যাচ্ছে করুন ভাবে। বারবার করে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন মেয়ের। এমনকি অসহায় কন্ঠে বারবার করে বলে যাচ্ছেন, “তোর কিচ্ছু হবেনা মা, তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি। তোর কিচ্ছু হবেনা!”
মান্নাত বেগম ছুটে এলেন কোলাহল পেয়ে। কি হয়েছে তার ইলহামের! মেয়েটা এই ক’টা মাস ধরে ঠিক কতটা য/ন্ত্র/না যে ভুগেছে হিসেব নেই কোনো।
—-” ম..মা! মা গো!( কাতর কন্ঠে)
—-” হ্যাঁ মা বল? বেশি ক/ষ্ট হচ্ছে। আর একটু সহ্য কর মা!”
মান্নাত বেগম কান্না করছেন ইলহামের অবস্থা দেখে। ওরা পৌঁছে গেছে হসপিটালে। ডক্টর জরুরি ভিত্তিতে ওটিতে নিলো ইলহামকে। এদিকে সবার অবস্থা
শো/চনীয়। গতবারের চেয়েও এবারের অবস্থা বেশি ক্রি/টিকাল ইলহামের। মান্নাত বেগম, রাজিয়া বেগম আর নিহার শাশুড়ীমা তিনজনেই ছুটে গেলেন নামাজ পড়তে। এমন ক্রি/টিকাল মুহুর্তে আল্লাহ ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।
অনন্যা কাঁদছে ভ/য়ে। নিহা আর মিমি ওকে স্বান্তনা দিচ্ছে। মা হতে গেলে কি এতোটা ক/ষ্ট সহ্য করতে হয়? তাহলে ও কোনোদিন মাই হতে চায়না। একদম না।
রেজা সাহেবের অবস্থা সবার চেয়ে শো/চ/নীয়। তিনি না পারছেন কিছু বলতে আর না কারছেন কিছু সহ্য করতে। এর ভবিষ্যৎ কি, জানেনা সে! সে কি কোনোদিনই নিজের মেয়ের সামনে বাবার পরিচয়ে আসতে পারবেনা? তার মেয়েটাকে একবারের জন্যেও বাবার অধিকারে বুকে জড়িয়ে রাখতে পারবে না? কে জানে!
_____________
পাঁচ বছর পর।
শা করে ছুটে আসা গাড়িটা হঠাৎ থামলো বড় স্কুলটার সামনে। গাড়ি থেকে নামলো এক স্বল্প বয়সী মেয়ে। সঙ্গে নামলো ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে। বয়স তিন বছর। ছোট্ট মিষ্টি মেয়েটাকে দেখতে কোনো পরীর চেয়ে কম নয়। স্বল বয়সী মেয়েটা বাচ্চা মেয়েটাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাত ধরে আস্তেধীরে পা বাড়ালো স্কুলের দিকে। সঙ্গে বাচ্চা মেয়েটি তার ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েটার পিছু পিছু। ওরা স্কুলের ভেতর চলে গিয়েছে। কতক্ষন বাদে আবার ফিরেও এলে। তবে এবার সঙ্গে এলো আরও একজন। একটা পাঁচ বছরের বাচ্চা ছেলে। স্কুল ড্রেস পড়নেও ভীষণ সুন্দর লাগছে তাকে। হয়তো তাকে স্কুল থেকে নিয়ে যেতেই এসেছে মেয়েটি। বাচ্চা ছেলেটির নাম জাইন। জাইন স্বল বয়সী মেয়েটার উদ্দেশ্য অস্পষ্ট কন্ঠে বলল,
—-” ফুপপি? মা আছেনি কেন?”
—-” মা একটু বিজি, বাবা। তাই আসতে পারেনি।”
—-” কেন বিজি?”
—-” জাইনের জন্য তার ফেভারিট চিকেন ফ্রাই করছে। জাইন বাসায় গিয়ে খাবে তো?”
—-” তাই? ছত্তি?”
—-” হ্যাঁ, সত্যি।”
“অনন্যা?”
জাইনকে আর বাচ্চা মেয়েটিকে গাড়িতে তুলতে গেলে হঠাৎ কেউ পিছু ডাকে স্বল্প বয়সী মেয়েটাকে। মেয়েটা পেছন মুড়ে তাকায়। তাকায় জাইন আর নিতুনও। অনন্যার মেয়ে ও। ওর নাম নিতুন। ওদের থেকে খানিক দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক পরিচিত লোক। অনন্যা তাকে চেনে। আর খুব ভালে করেই চেনে। লোকটা ইলহামের বাবা। রেজা সাহেব।
—-” আঙ্কেল?”
—-” কেমন আছো মা?”
—-” দাদুভাই?”
জাইন আমোদিত কন্ঠে বেশ জোরেশোরেই ডাকলো রেজা সাহেবকে। রেজ সাহেব হো হো করে হেসে উঠে হাত বাড়িয়ে দিলেন জাইনের দিকে। জাইন দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরলো রেজা সাহেবকে।
—-” তুমি এতোদিন আছোনি কেন দাদু?”
জাইনকে কোলে তুলে নিলেন রেজা সাহেব। হাস্যজ্বল কন্ঠে নাতিকে আদর করতে করতে বললেন,
—-” একটু কাজ ছিলো দাদুভাই! তাই তো আসতে পারিনি। তবে দেখো, আজ এসে গেছি।”
—-” তোমরা ছব্বাই এতো বিজি থাকো কেন? এতো কাজ কেন তোমাদের?”
হাসলেন রেজা সাহেব। কি জবাব দিবেন ভেবে পেলেন না। গত ২বছর ধরে নাতির সঙ্গে সে এভাবেই দেখা করেন মেয়েকে লুকিয়ে। পাছে মেয়ে তার সত্যিটা জেনে বরাবরের মতো হারিয়ে যাবে সেই ভ/য়ে। রাদ অবশ্য কিছু বলেনি আর এই বিষয়ে। সবাই জানে এই মানুষটাই ঐ হতভাগীনির বাবা। কেবল ইলহাম ব্যতীত। হয়তো আর কোনোদিন ওর জানা হবেনা, তার আসল বাবার মুখ। হয়তো কিছু মানুষ পরিচয় বিহীনই সুখী। যেমন ইলহাম। ইলহামের খুশির জন্য হয়তো রেজা সাহেবও কখনোও নিজের পরিচয়টা দেবেন না মেয়েকে। হয়তো এভাবেই কাটবে তার গোটা জীবনটা। হয়তো এটাই তার সবচেয়ে বড় শা/স্তি।
_________________সমাপ্ত_____________________