#প্রণয়সন্ধি– ২২ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
রোদের তেজে শহরতলী ঘেমে-নেয়ে একাকার। শানায়ার মেজাজ খারাপ। জুবরান ওকে এক মূহুর্তের জন্যও একা ছাড়ছে না। এমন কী আজ অফিসেও যায় নি। কী একটা ফ্যাসাদে পড়ল! বাজার করে ক্লান্ত হয়ে বাসা ফিরল। তখন বারোটা বাজে শানায়া বলল
–‘ আপনি আজ অফিসে গেলেন না যে?’
জুবরান ফোনে কিছু একটা করছিল শানায়ার কথা শুনে একবার ওর দিকে তাকিয়ে বলল
–‘ কেনো পালানোর জন্য অসুবিধা করে দিলাম বুঝি?’
–‘ আমাকে এখানে রেখে কী লাভটা হচ্ছে বলুন তো! আমি আপনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি’
–‘ শোন আমি না তোকে বোঝাতে পারতেছি না। মানছি আমার ভুল হয়েছে তোকে সবার ভরসাই রেখে যাওয়া আমার মোটেও উচিত হয় নি।’
–‘ দেখেন আমি পাস্ট ভুলে গেছি আপনিও ভুলে ভালোভাবে বাঁচতে শুরু করুন নিজের পছন্দের কেউকে বিয়ে করে সুখে সংসার করুন অযথা আমার পিছনে পড়ে থেকে নিজের মূল্যবান সময়টা নষ্ট করবেন না তাছাড়া আমি আমার মতো বাঁচতে চাই আপনি সেটাতে বার বার বাঁধা সৃষ্টি করছেন’
কথাটা বলে শানায়া জায়গা থেকে প্রস্থান করল। জুবরান শানায়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। ঘ’তটা গভীর এতো সহজে যে মানাতে পারবে না সেটা বুঝতে পেরেও ধৈর্য্য ধরে আছে। এদিকে ও নিজেই জানে ওর ধৈর্য্য নেই সেখানে ওর নিজের ধৈর্য্য দেখে অবাক না হয়ে পারছে না।
শানায়া একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হলো। এখন একটু ওর মাথাটা ঠান্ডা হয়েছে। জুবরান খাবার অর্ডার দিয়ে রুমে এসে শানায়া কে আয়নার সামনে চুল ঝাড়তে দেখল। ওকে স্নিগ্ধ লাগছে যেনো সদ্য ফোটা পদ্মফুল। জুবরান ঘোরের মধ্যে শানায়ার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো ওকে দেখে শানায়াও থেমে পিটপিট করে জুবরানের দিকে তাকিয়ে রইলো। শানায়ার হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে ওর চুল মুছে দিতে দিতে বলল
–‘ জানিস তোকে নিয়ে মাঝে মাঝে এমন কল্পনা করতাম ভাবতাম। তোকে কবে এমন আমার বউ রূপে দেখবো আদেও দেখতে পাবো তো কখনো? জানিস আমার না ফাঁকা বাসায় একা একা দম বন্ধ লাগে মনে হয় এখনি দম আটকে মরে যাবো। কেউ কথা বলার নাই, খেয়েছি কীনা দেখার লোক নাই, অসুস্থ হলে পড়ে থেকে ম*রে গেলেও কেউ জানবে না। কাজ শেষে যখন বাড়ি ফিরি তখন মনটা খাখা করে চারিদিকে একটু আপনজন খুঁজি কিন্তু আপন বলে কাউকে পাই না। এখন তুই বলতে পারিস তোকে কেনো এসব বলছি তুই আমার আপন জন বলে তুই আমার বউ বলে। জানিস আমি কখন বাড়িতে এতোক্ষণ থাকি না রাতে বন্ধুদের সাথে ক্লাবে থাকি বেশিরভাগ সময়। সারাদিন কাজে ডুবে থাকি নিজের একাকীত্বটাকে ঘুচানোর জন্য… এই একাকীত্বর মাঝে তুই আসলি আমি বাসাটার মধ্যে একটু আপনজন পেলাম, শান্তি পেলাম। তবুও তুই চলে যাবি বলছিস। আমি জানি তুই থাকতে না চাইলে তোকে আমার আটকে রাখার সাধ্য নেই। সবকিছু তো জোর করে পাওয়া যায় না। শুধু একটা কথা তুই এ বাসা থেকে চলে গেলেও অফিস ছাড়িস না আমার চোখের সামনে থাকিস। তুই বললে আমি তোর জন্য এই বিল্ডিংয়ের একটা ফ্লাট দিব সেখানে তুই থাকিস। আমি চাইছি না তুই অন্যর দয়ায় অন্যর বাড়িতে থাকিস’
একসাথে এতোগুলো কথা বলে জুবরান হাঁপিয়ে গেলো। শানায়া আয়নায় তখনো জুবরানের দিকে তাকিয়ে আছে। জুবরানের চোখে পানি স্পষ্ট। শানায়া বলল
–‘ আজ আমার জন্য আপনাকে কষ্ট করে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। আমি জানি এজন্য আমার ক্ষমা হবে না। নিজের তো একটা ভুল করেইছি আমার সাথে আপনিও সেই ভুলের মাশুল দিচ্ছেন’
–‘ মানে তুই কী ভুল করেছিস?’
–‘ ঔ ম্যাসেজ গুলো।’
জুবরান ঢোক গিলে বলল
–‘ ওগুলো সত্যি তুই বলছিলি?’
–‘ হ্যাঁ। কিন্তু তারপরের ম্যাসেজগুলো ও ডিলিট করছে। আমি ওকে মজা করে ওগুলো বলে দেখছিলাম ওর মনে কী আছে ও কী বলতে চাই তাই ওমনটা বলছিলাম ও যে ওভাবে সবাইকে মিথ্যা বলবে, পরের ম্যাসেজ গুলো ডিলিট করবে। আমি বুঝি নি। তখন আমি আমার ফোন থেকে ম্যাসেজ দেখাতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে সুযোগটা আর এলো না তার আগে এলোমেলো হয়ে গেলো।’
জুবরান ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো। তানিয়া ঠিকি বলেছিল। চোখে দেখা বা কানে শোনা সব কিছু সত্যি হয় না তার পিছনে আরো সত্যি লুকিয়ে থাকে।
সারাদুপুর কোনো কাজ না পেয়ে শানায়া ঘুমালো। জুবরান অফিসে না যাওয়ায় কাজগুলো বাড়িতে বসেই করতে লাগলো। বিকালের দিকে তানিয়া ওর স্বামী জাকি, ওর বাচ্চা নিয়ে জুবরানের ফ্লাটে আসলো। ওদের দেখে শানায়া অস্বস্থিতে পড়ে গেলো যেহেতু ওদের সম্পর্ক সম্পর্কে কেউ অবগত না। শানায়া ভাবল তানিয়া হয়ত ওকে দেখে অবাক হবে ওর সম্পের্ক খারাপ ধারণা পোষণ করে কয়টা কথা শোনাবে। কিন্তু সেসব কিছুই ঘটল না। তানিয়া উল্টো মজা করে বলল
–‘ নিউ কাপল কেমন টোনাটুনির সংসার চলছে দেখতে এলাম। তোমরা তো আর আমাদের গরিবের ঘরে যাবে না’
জুবরান বিরক্ত হয়ে বলল
–‘ নাটক বন্ধ কর। তোর ছেলেটাকেও তোর মতো বানাবি দেখছি’
–‘ তুই চুপ থাক আমার ছেলে হিরো হবে বুঝলি। এখন থেকে তার প্র্যাক্টটিজ চলছে বুঝলি?’
–‘ বুঝলাম’
জাকি বরাবরের মতোই শান্ত হয়ে কুশন বিনিময় করে বসে আছে। জুবরান আপসোসের সুরে বলল
–‘ জাকির জন্য আমার মায়া হয় এমন শান্ত শিষ্ট ছেলের কপালে কিনা এমন মেয়ে জুটলো ‘
–‘ এমন মেয়ে দ্বারা তুই কী বোঝাতে চাইছিস?’
জুবরান ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে শানায়াকে বলল
–‘ ওদের নাস্তা দাও। দাড়িয়ে আছ কেনো?’
শানায়া এতোক্ষণ স্ট্যাচু হয়ে ছিল। তানিয়া সব জানে? প্রথম থেকেই না-কি? শানায়া জুবরানের কথায় হকচকিয়ে কিচেনে দৌড় দিল। সকালে বাজার করে আনা ফল, বিস্কিট, কফি দিল। তানিয়ার বাবুর জন্য ফ্রিজ থেকে চকলেট ও আনল। ওরা সারাসন্ধ্যা আড্ডা দিয়ে যাওয়া সময় দ্বিতীয় রোজার দাওয়াত দিয়ে গেলো।
—-
রায়হান আর পাপড়ি ডক্টরের কাছে গেছিল। অনেক গুলো পরিক্ষা নিরীক্ষা করতে দিসে সেগুলো করেওছে। রিপোর্ট কয়দিন পরে দিবে। পাপড়ির মনের মধ্যে ঝড় চলছে এক মাত্র ও ছাড়া কেউ জানে না। মনে মনে চাইছে একটা মিরাকেল ঘটুক। কিছু একটা হোক।… এই অভিসাপ্ত জীবন নিয়ে নিজের জন্য রায়হানকে ও জড়াতে দিবে না। রায়হান একটা ভালো জীবন ডির্জাব করে। এসব নানারকমের চিন্তা ভাবনা মথার মধ্যে চর্কি পাকের মতো ঘুরছে। আদেও কী মিরাকল ঘটবে? ঘটুক না ক্ষতি কী? এক মুটো সুখ, এক চিলতে হাসি, এক সমুদ্র ভালোবাসা। আসুক।
চলবে ইনশাআল্লাহ